#অপ্রিয়_প্রিয়জন
#Fiza siddique
#পর্ব-10
বৃষ্টির জ্ঞান ফেরার খরব পাওয়া মাত্রই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে মেঘ। কিছুক্ষন কেবিনের বাইরে পায়চারি করেও সাহস জোগাতে পারলনা ভিতরে যাওয়ার। বারবার মন বলছে বৃষ্টির কিছু হয়নি, আবার অন্যদিকে মনে হচ্ছে যদি ভুলে যায় তাকে। যদি ভুলে যায় তার সাথে কাটানো সময়গুলোকে। যদি অস্বীকার করে তার ভালোবাসা? তাহলে কি করবে সে?
মেয়ের সুস্থতার কথা শুনে আশরাফ হোসেন আর রাবেয়া বেগম প্রথমে কেবিনে প্রবেশ করেন। মেয়েকে এমন অবস্থায় বেডে শুয়ে থাকতে দেখে কেঁদে দেন রাবেয়া বেগম। আশরাফ সাহেবও ভীষণ ভেঙে পড়েন। বড্ড আদরের মেয়ে তাদের, কখনও একটুও আঁচড় লাগতে দেননি। ছোটো ছেলের থেকেও মেয়েটাকে বেশি আগলে বড়ো করেছেন। আর সেই বৃষ্টিকে জীবন বড়ো দুটো আঘাত দিলো। ফারহানের মত একজন ছেলেকে ভালোবেসে তাদের চঞ্চল, দুষ্টু, পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখা মেয়েটা একেবারে সর্বশান্ত হয়ে গেছিলো। কতগুলো বছর অপেক্ষা করেছিলো আগের বৃষ্টিকে ফিরে পাওয়ার জন্য।
আসতে আসতে চোখ খুলে নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে বৃষ্টি। উঠে বসার চেষ্টা করতেই মাথায় ভীষণ ব্যাথা অনুভব করে। এক হাতে মাথা চেপে ধরে আস্তে করে উঠে বসার চেষ্টা করতেই দুটো হাত এগিয়ে এসে বেডটা অ্যাডজাস্ট করে দিয়ে মাথার পিছনে বালিশ দিয়ে আধশোয়া করে বসায় তাকে। হাতের মালিকের দিকে তাকিয়েই ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে ওঠে বৃষ্টির। একটা মানুষ যে কতটা ভালো হতে পারে সেটা মেঘকে না দেখলে জানতেই পারতোনা বৃষ্টি।
এখন কেমন লাগছে বৃষ্টি? মাথা কি খুব বেশি ব্যাথা করছে? শরীরে আর কোথাও লেগেছে কি? মেঘের এমন করে উদগ্রীব হয়ে যাওয়ায় ফিক করে হেসে ওঠে বৃষ্টি। মেঘকে নিজের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে বৃষ্টি বলে,
আচ্ছা, এমন করে একসাথে এত কথার পাহাড় আমার উপর চাপিয়ে দিলে আমি বাঁচবো তো? মানুষ একটা একটা করে জিজ্ঞাসা করে তো নাকি?
এখন তো খুব হাসি পাবে। তোমাকে ওই অবস্থায় দেখে আমার যে কি হয়েছিল সেটা তো বুঝবেনা তুমি। তুমি জানো আমি যদি ঠিক সময় মতো অপারেশন শুরু না করতাম তাহলে কি হতো?
আজ প্রথমবারের মতো বৃষ্টি মেঘের চোখে পানি দেখলো। দেখলো প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলার বেদনা। যদিও মেঘ সন্তর্পনে নিজের চোখের পানি মুছে নিয়েছে, কিন্তু তবুও বৃস্টির চোঁখ এড়ায়নি।
এই যে ডাক্তার সাহেব নিজের দিকে দেখেছেন একবার? দেখে তো মনে হচ্ছে আপনার বউ মারা গেছে। আজ প্রথমবারের মতো মেঘকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো বৃষ্টি। উস্কোখুস্কো চুল, পরনে একটা ঢিলা প্যান্ট আর টিশার্ট, হয়তো জামা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখান থেকে এটা পড়েছে। জোড়া ভ্রু, বড়ো বড়ো দুটো চোখ যেটা লাল হয়ে আছে। নাকের উপর ঘেমে গিয়ে চিকচিক করছে। হালকা গোলাপি ঠোঁট, শেভিং এর পর হালকা খোচা খোঁচা দাড়ি, একদম বিদেশিদের মতো ভুত ফর্সা না তবে এই ফর্সা ভাবটা দারুন মানিয়েছে। আচ্ছা! এই মানুষটা এত সুন্দর তারপরও তাকে কেনো এত ভালোবাসে? সে তো তার মতো ফর্সা নাহ। আর নাহ অতি সুন্দরী। তবে কেনো এই মানুষটা তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে? আদৌ কি এত সুখ তার কপালে ছিল? যে মানুষটাকে নিজের আইডিয়াল মনে করতো আজ সেই তাকে পাগলের মতো ভেঙ্গেচুরে ভালোবাসে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তার জ্ঞ্যান না ফেরা পর্যন্ত কান্না করেছে।
বৃষ্টির এসব ভাবনার মাঝেই বাটিতে করে সুপ নিয়ে আসে মেঘ। অনেকক্ষণ হলো বৃষ্টি কিছু খায়নি, আর খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো যাবেনা, তাই হালকা করে সুপ নিয়ে আসে। তারপর বেডের পাশে বসে আস্তে আস্তে করে ফু দিয়ে সবটা সুপ খাইয়ে দেয়। টিস্যু দিয়ে মুখট মুছিয়ে দেওয়ার সময় মেঘ বৃষ্টির কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে, “সুপ খেলে নাকি আমাকে পুরো গিলে খেলে বলোতো, আমি পুরোটা তোমারই, অবশ্য চাইলে টেস্ট করতেই পারো।”
মেঘের এমন লাগামহীন কথা শুনে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে বৃষ্টির। ইশ্ এভাবে কেউ লজ্জা দেয় নাকি? অবশ্য বৃষ্টির এই লজ্জামাখা চেহারাটা ভীষণ উপভোগ করছে মেঘ। তাই লজ্জাটা আরও গাঢ় করতে আবারও বলে,”সামনে এমন লাল টমেটো হয়ে বসে থেকোনা, মনে হয় টুপ করে খেয়ে ফেলি। আমার আবার টমেটো ভীষণ পছন্দের।”
এবার লজ্জায় বিছানার চাদর খামচে ধরে বৃষ্টি। তারপর আস্তে করে চাদর দিয়ে মুখটা ঢেকে নেয়। বৃষ্টির এমন বাচ্ছামো দেখে হুহ হাহ করে হেসে দেয় মেঘ। বুঝতেই পারে আজ মেয়েটা চরম লেভেলের লজ্জা পেয়েছে।
এইভাবে দুষ্টু মিষ্টি খুনসুটির মাঝে কেটে গেছে পনেরো দিন। আজ বৃষ্টিকে নিয়ে মেঘ একটু বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে। বৃষ্টির যে শর্ট টাইম মেমোরি লস হয়েছে এটা জানা গেছে, তবে সে যে মেঘকে ভুলে যায়নি এটার জন্য হাজারও শুকরিয়া আদায় করে মেঘ। তবে অ্যাক্সিডেন্টের পর থেকে বৃষ্টিকে একটু আল্ড লাগে। ভীষণ প্রনোজ্জ্বল, দুষ্টু মিষ্টি অনুভূতিতে ভরা। তবে সেদিনের পর থেকে সবুজ রংটা ভীষণ অপছন্দ করে মেঘ, একপ্রকার যুদ্ধ করেও কখনও না তাকে সবুজ রঙের কিছু পরানো যায় আর না বৃষ্টিকে পড়তে দেয়।
আগামী মাসে মেঘ আর বৃষ্টির বিয়ে ঠিক হয়েছে। মেঘের আপু বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়াতে সেটেল। আর পাঁচদিন পর উনি চলে আসবেন। তারপর থেকে শুরু হয়ে যাবে বিয়ের তোড়জোড়। আর তার মধ্যে আর আলাদা করে বৃষ্টিকে নিয়ে সময় কাটাতে পারবেনা মেঘ, তাই আজ দুজনে বেরিয়েছে একটু একান্ত সময় কাটাতে।
এই বিয়েতে তুমি রাজি তো বৃষ্টি? মন থেকে মেনে নিয়েছো আমাকে? জানিনা কেনো জানো আমার মনে হচ্ছে তুমি মন থেকে আমাকে মেনে নাওনি।
মেঘের কথা শুনে বৃষ্টি নিরবে মেঘের কাঁধে মাথা রেখে ডান হাতটা নিজের দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
আপনি কি জানেন আপনি আমার কাছে আইডিয়াল একজন মানুষ। আপনার মতো মানুষকে কাছ থেকে দেখাটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। এই যে আপনাকে ছুঁয়ে দিতে পারছি, এটা অনেক বড়ো কিছু পাওয়া আমার কাছে। আপনি ঠিকই বলেছেন আমি আপনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারিনি, কারন আমার মন অনেক আগে থেকেই আপনাকে মেনে নিয়ে বসে আছে।
কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলে, আমিও আপনাকে ভালোবাসি মেঘ। ভীষণ ভালোবাসি। আমার হৃদয়ের ক্যানভাসে রংতুলি দিয়ে আঁকা আছে এক কোমল ছবি আপনার।
মেঘ কখনও স্বপ্নেও ভাবেনি বৃষ্টি এভাবে ওকে ভালবাসার কথা প্রকাশ করবে। আবেগে আপ্লুত হয়ে মেঘ ছুটে গিয়ে একটা ঘাসফুল ছিঁড়ে আনে। তারপর বৃষ্টির সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে বলে,
আমি পারিনা কবিদের মত ভালবাসার কবিতা লিখতে, অগোছালো কিছু ভাষা আর অনুভূতিই আমার ভালবাসার প্রকাশের মাধ্যম। ভালবাসা বলতে আমি জানি একধরণের আকর্ষণ যাকে সে নিজের সুখে-দুঃখে কাছে রাখতে চায়। আমি যখন এমন কাউকে ভাবি শুধু তোমার ছবি ভেসে উঠে হৃদয়ে। ভালবাসা সেই অমূল্য উপলব্ধির নাম যা একজনকে অতীতের সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয় আর নতুন আনন্দে নিজেকে খুশি রাখতে সাহায্য করে। ভালবাসা মানে একজনের সব দোষগুলো জেনে যাওয়া এবং সেগুলোর জন্যে তাকে আরো বেশী করে ভালবাসা। প্রিয়তমা আমার অবস্থা ঠিক এমনই। তোমাকে আমার জীবনে পেয়ে আমার সমস্ত অতীতের দুঃখগুলো যেনো ম্লান হয়ে গেছে, তোমার সবকিছুরই প্রেমে পড়ছি বারংবার। আমার সমস্তটা দিয়েই তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি, তোমাকে ছাড়া আজকাল বাঁচার কথা কল্পনাতেও আসে না। আমার সমস্ত স্বপ্নে, বাস্তবে, ভবিষ্যতে শুধু তোমারই বসবাস। আমি প্রেমে পড়েছি তোমার মনের। তোমার মনের শুদ্ধতা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে বেধে চলেছে কেবল। তোমার প্রেমের শুদ্ধ অনলেই পুড়তে চাই সারাটি জীবন। সুযোগ দিও মনের ঘরের বাসিন্দা হতে মন-সুন্দরী।
তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনই জেনেছিলাম তুমি আমার। সময়ের বোবা টানেলের লম্বা পথ পেরিয়ে আজ এসে দাড়িয়েছি তোমার সামনে। আজ আমার সমস্তটা জুড়েই তোমার বসবাস। ভালবেসে গ্রহণ করো এ অধমকে, তোমার জন্যেই দেওয়ানা রয়ে যাবো আমি আজীবন কথা দিলাম।
মেঘের বাড়ানো হাতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে বৃষ্টি। আজ নিজেকে ভীষণ সুখী একজন মানুষ বলে মনে হচ্ছে তার। এই যে তার সামনে বাড়ানো একটা হাত তাতে রয়েছে ঘাসফুল দিয়ে বানানো রিং। এই মানুষটাকে যতই দেখে নতুন করে আবিষ্কার করে। এইরকম ব্যাক্তিত্বের মানুষটা একজন প্রকৃত প্রেমিক পুরুষও হতে পারে ত কল্পনাতীত ছিলো বৃষ্টির। আস্তে করে নিজের হাতটা বাড়িতে মেঘের দিকে। মেঘও আর একমুহুর্ত অপেক্ষা না করে রিংটা পরিয়ে দিয়ে আলতো করে অধর ছোঁয়ায় বৃষ্টির হাতে। আর তখনই টুপ করে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে বৃষ্টির চোখ হতে। তবে মেঘের অলক্ষ্যেই খুব সন্তর্পনে তা গোপন করে ফেলে বৃষ্টি।
দুজনের এই সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলো এই আকাশ, বাতাস, মাঠ ভরা ঘাস আর একজোড়া প্রেমিক প্রেমিকা।
___________________
আজ মেঘ, বৃষ্টি, আশফি (বৃষ্টির ভাই), মেঘলা (মেঘের আপু) আর দুলাভাই এসেছেন বিয়ের কেনাকাটা করতে। সবাই মিলে শপিংমলে বিয়ের বেনারসির শোরুমে যায়। এত এত বেনারসি দেখেও একটাও পছন্দ হয়না মেঘের। প্রত্যেকটাতে কিছুনা কিছু খুঁত খুঁজে বের করে, মেঘের এমন ব্যাবহারে বিরক্ত হয়ে মেঘলা ধমক দিল মেঘ মাথা চুলকে মিনমিন করে বলে,”বিয়ে তো একটাই করবো আপু, ভালো করে দেখে শুনে পছন্দ না করলে হয়? পরে তো আবার এক্সচেঞ্জও করা যাবেনা বউ। না মানে বউয়ের জিনিসপত্র।”
মেঘের এমন কথা শুনে হাসির রোল পড়ে গেলো সবার মধ্যে। তারপর বেশ কিছুক্ষন ঘাঁটাঘাটি করে একটা জাম আর হলুদ রঙের মিশ্রনে শাড়ি পছন্দ করে মেঘ। যার পাড়টা সোনালী রঙের। অসম্ভব সুন্দর শাড়িটা। সবার এতক্ষনের অপেক্ষা যেনো সার্থক, এত সুন্দর শাড়িটা দেখে। মেঘলা বৃষ্টিকে একবার ট্রায়াল রুম থেকে শাড়িটা পড়ে আদর জন্য বলায় জান ফিরে পায় সে। এতক্ষন যেনো দম বন্ধ করা অনুভুতি হচ্ছিলো। ইদানিং মেঘের আশেপাশে থাকলেই এমন অনুভুতি হয় বৃষ্টির।
হটাৎ করে সামনের দিকে চোখ পড়তেই মেঘের মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায়। শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে সবার কাছে আসে বৃষ্টি। ফর্সা শরীরে রংটা দারুন মানিয়েছে। কোনো আলো, সাজ ছাড়াই এই শাড়িটা বৃষ্টিকে দেখে আজ মেঘের যা অবস্থা বিয়ের দিন যে কি হবে আল্লাহই ভালো জানেন। বৃষ্টির প্রশংসায় সবাই পঞ্চমুখ। সবার এত এত প্রশংসা আর মেঘের হা করে তাকিয়ে থাকা দেখে বৃষ্টি মাথা তুলে তাকাতে পারছেনা।
তারপর সবাই মিলে হলুদের জন্য শাড়ি নেয়। সবশেষে আসে রিসেপশনের জন্য লেহেঙ্গা নেওয়ার পালা। একটা টুকটুকে লাল রঙের লেহেঙ্গা পছন্দ করে মেঘ। এটাও অসম্ভব সুন্দর লাগে সবার। মেঘলা আপু এবারে লেহেঙ্গাটা পরে আসার কথা বললে মেঘ বারণ করে। বাকিরা নিজেদের জন্য কেনাকাটা করতে যখন ব্যাস্ত তখন মেঘ বৃষ্টির কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
আজকে কি আমাকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো নাকি বৃষ্টিপাখি? বেনারসীতে দেখেই আমার অবস্থা শেষ, আর লাল টুকটুকে লেহেঙ্গাতে দেখলে তো আজ নিশ্চয়ই হার্টঅ্যাটাক করতাম। তারপর হালকা হেসে তাকিয়ে থাকে প্রিয়সীর লজ্জারাঙা মুখের দিকে, আজকাল মেঘের ভীষণ ভালো লাগে বৃষ্টিকে লজ্জাতে ফেলতে।
তারপর সবাই মিলে বাকি কেনাকাটা করে, খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফেরে সবাই। তারপরবৃষ্টিকে আর আশফিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে বেশ কয়েকটা শুপিং ব্যাগ হাতে ধরিয়ে দেয় মেঘ। তারপর বেরিয়ে পড়ে নিজেদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে।
_________________
কাল মেঘ আর বৃষ্টির গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। যেহুতু মেঘের পরিবার বলতে শুধুই মেঘলা আপু আর দুলাভাই, তাই সব অনুষ্ঠান একসাথে করার সিদ্ধান্ত নেয়। সব অনুষ্ঠানের জন্য একটা বড়ো রিসর্ট বুক করা হয়েছে।
আজ অনেক ম্যানেজ করে মেঘ বৃষ্টিকে নিয়ে বেরিয়েছে একটু। দুজনে মিলে একটা পার্কে গিয়ে বসে। বিকেলের সময় হওয়ায় বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাইকেই দেখা যায় পার্কে। মেঘের সাথে কথা বলার মাঝে দূর থেকে কাউকে দেখে ভীষণ পরিচিত বলে মনে হয় বৃষ্টির। তাই আস্তে আস্তে সেদিকে যায়। সৃজাকে এভাবে একটা বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে থাকতে দেখে ভীষণ অবাক হয় বৃষ্টি। তাদের কাছে গিয়ে বৃষ্টি বলে,
তুই বিয়ে কবে করলি সৃজা। কতদিন তোর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। কেমন আছিস তুই? কোনো এক কারনে আমরা এখানে ছিলে আসি তারপর তুই একবারও কল করিসনি আমাকে। আর ফারহান, সোহেল এরা কেমন আছে রে? ওদের সাথেও আর কোনো কথা হয়নি।
বৃষ্টিকে এমন সাবলীলভাবে ফারহানের কথা জিজ্ঞাসা করতে দেখে ভীষণ অবাক হয় সৃজা। আর বৃষ্টির কথায় আরও অবাক হয়, কারন একমাস আগেই ফারহানের সাথে তার দেখা হয়েছে। তন্নীর ডেলিভারি নিজেই করেছে বৃষ্টি। তাহলে এত তাড়াতাড়ি কিভাবে সব ভুলে গেলো বুঝতে পারছেনা সৃজা। এতক্ষনে মেঘের কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টিকে গাড়িতে ফোন ফেলে এসেছে বলে সেটা আনতে পাঠায় আর এই সুযোগে সৃজাকে সবটা খুলে বলে মেঘ। এটাও বলে যেনো বৃষ্টিকে আর এই বিষয়ে কিছু না জানায়। বৃষ্টির মেমোরিতে বন্ধু ফারহান আছে কিন্তু প্রেমিক ফারহান আর বেইমান ফারহান হারিয়ে গেছে। যে কালো অধ্যায়ের জন্য বৃষ্টি এতগুলো বছর কষ্ট পেয়েছে সেটা ভুলে যাওয়াই ভালো। এজন্যই বৃষ্টি এত সাবলীল ভাবে মেঘের কাছে নিজের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পেরেছে। থেকে যাক ফারহান বৃষ্টির মনের একটা অপ্রয়োজনীয় কোণে #অপ্রিয়_প্রিয়জন হয়ে।
সৃজার থেকে মেঘ জানতে পারে ফারহানের কাহিনী। আর জানে যে ফারহানের মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তাই ফারহান আর তন্নীর মেয়ের দায়িত্ব সৃজা নেয়। নিজের মেয়ের মতো করে বড়ো করতে চায়। তারপর বৃষ্টি ফিরে আসে এসে ওদের বিয়ের দাওয়াত দেয়, আর অবশ্যই আসার জন্য বলে।
চলবে?