অপ্রাপ্তি পর্ব-১৩

0
939

#অপ্রাপ্তি 💔
#ইবনাত_আয়াত
~ পর্ব. ১৩

পূর্ণিমা রাত। আকাশে অজস্র তারার মাঝে পূর্ণ থালার চাঁদটি আলোকিত করছে অন্ধ’কারা’চ্ছন্ন আকাশ টা’কে। পুরো শহর ঘুমে মগ্ন। বারান্দায় দুই মানব মানবীর অবস্থান। নেই কারো মুখে কোন কথা। দুই’জন দুই প্রান্তে। নিস্তব্ধতা নিরাজমান চারদিকে। নিরবতা ভাঙিয়ে তাহসিন বললেন, ‘তোমাদের ডিভোর্স কেন হয়েছিল বলবে?’

ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে রইলাম কিছুক্ষণ। চন্দ্রের দিকে মুখ করে শুধালাম, ‘ও আমায় ধোঁকা দিয়েছিল।’

‘মানে?’

কণ্ঠে তার অস্থিরতা বিদ্যমান। বললাম, ‘ও.. ও পরকীয়ায় আসক্ত ছিল। অন্য মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়েছিল।’

‘ডিভোর্স কী ও নিজে দিয়েছে?’

‘নাহ্। আমিই দিয়েছি। কী দরকার এমন ফ্যামিলিতে পড়ে থাকার যেখানে প্রতিপদে শুধু অত্যাচারের শুধু অত্যাচারের শিকার হবো।’

‘অত্যাচার? মানে?’

‘ওরা আমায় অত্যাচার করত।’

‘কী বলছো এসব?’

‘হ্যাঁ। সবসময় খাঁটাতো। রিশান পাশে ছিল বলে সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু শেষে ওই আমার পর হয়ে গেল।’

তাহসিন চুপ করে রইলেন। সাথে আমিও। তিনি একটু পর বললেন, ‘তো? কী ভাবছো? কী করবে?’

ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘মানে?’

‘মানে ওরা এত কিছু করল। কোন মামলা করলে না?’

‘মামলা করে লাভ নেই তো। ঠিক’ই টাকার জোড়ে ছাড়িয়ে নেবে। আর এত কিছু করল মানে? আপনি কী করে জানলেন এত কিছু করল? আমি তো বলিনি।’

‘জেনেছি কোন এক ভাবে।’

কিছু বললাম না। তাহসিন বললেন, ‘যা হওয়ার তা হয়েই গেছে। ভার্সিটি লাইফে গিয়ে এই ভুল করেই ফেলেছো তা নিয়ে আর অনুশোচনা করে লাভ নেই। এখন এগিয়ে যাও। আর কিছু করে দেখাও।’

তার দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘মানে?’

‘মানে তুমি চাকরি টা করবে।’

‘চ-চাকরি করব? মানে?’

‘এত মানে মানে করছো কেন আজব? মানে তুমি আর কিছুদিন পর থেকেই ওই স্কুলের জব টা কন্টিনিউ করবে।’

মুচকি হেসে বললাম, ‘ধন্যবাদ।’

‘এতে ধন্যবাদের কী আছে? সবে তো শুরু। আরো অনেক কিছু হতে চলেছে। তার জন্য রেডি থেকো হৃদরাণী।’

‘মানে? কী বললেন আপনি?’

‘যাক এত কিছু ভেবে মাথায় প্রেশার নিও না মিসেস.। ঘুমিয়ে পড়ো অনেক রাত হয়েছে।’

বলেই নাক ধরে টান দিয়ে হেসে চলে গেলেন। বোকা বনে গেলাম। কী করলেন এটা? কিছুক্ষণ বোকার মতো বসে রইলাম। তারপর উঠে রুমে গেলাম। পরণে গাউন। তার আদেশেই ভারী শাড়ি খুলে লম্বা গাউন টা পড়েছি। তিনি সোফায় শুয়েছেন। চোখে হাত দিয়ে চিৎ হয়ে আছেন৷ সোফা টা তার সাইজের না। পা হ্যান্ডেলের উপর উঠে এসেছে। পরণের পাঞ্জাবী টা এখনো খুলেন নি। হয়তো ক্লান্ত। একবার বিছানার দিকে তাকালাম। ইতস্তত লরে বললাম, ‘ইয়ে.. আপনি কী.. ওখানে শু’বেন?’

তিনি সেভাবে থেকেই উত্তর দিলেন, ‘হুম।’

আমতা আমতা করে বললাম, ‘কষ্ট হবে না?’

‘নাহ্!’

‘কী করে বলতে পারছেন?’

‘মানে?’

‘মানে সোফায় কীভাবে শু’বেন? বিছানায় শুয়ে পড়ুন।’

‘তুমি শোও। আমি পারব থাকতে।’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, ‘থাকতে হবে না। এখানে আসুন।’

‘দরকার নেই ইবনাত তুমি শুয়ে পড়ো।’

‘আমি বলছি আসুন।’

তিনি হাত চোখ থেকে সরিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি বললাম, ‘ওভাবে দেখার দরকার নেই। আর পাঞ্জাবী টা খুলে ফেলুন। গরম লাগবে না?’

‘হুম তা তো লাগবে।’

‘তাহলে? তবু পড়ে আছেন কেন?’

হেসে ফেললেন তিনি। বললেন, ‘ফ্রেন্ডদের থেকে অনেক কিল ঘুষি খেয়েছি। তাই ইচ্ছে করছে না চেঞ্জ করতে।’

‘কেন? মার খেলেন মানে?’

‘আরে ওরা এমনই। বেধরক মারা শুরু করে যাওয়া মাত্রই।’

‘আজব তো।’

‘কেন তুমি ফ্রেন্ডদের থেকে কখনো মার খাও নি নাকি?’

‘ন-না তা খেয়েছি।’

‘হাহা। আচ্ছা যাও তুমি শুয়ে পড়ো।’

‘আপনি?’

কিছু না বলে তিনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। নির্বিকার তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। একটু পর টি-শার্ট পরিহিত অবস্থায় বের হলেন তিনি। আমাকে এভাবে দেখে ভ্রু কুঁচকালেন, ‘কী ব্যাপার তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো? রাত কত হয়েছে দেখেছো?’

কিছু না বলে বিছানায় থাকা কোল বালিশ টা বিছানার মাঝে রেখে একপাশে শুয়ে পড়লাম। অন্য পাশে ফিরে আছি। একটু পর বিছানা আরেকটু ভারী হলো। বুঝলাম উনি শুয়েছেন। অনবরত কেঁপে যাচ্ছি। একটু পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলছি। এই প্রথম রিশানের পর কারো পাশে শুয়েছি। কোনমতেই ঘুম আসছে না। প্রায় আঁধঘন্টা পেরিয়ে গেছে। এবার আস্তে করে পাশে ফিরলাম। তাহসিনের ক্লান্তিমাখা ঘুমন্ত চেহারা টা চোখে পড়ল। কী মায়াবি চেহারা টা! একদম আগের মতো। যেমন টা দু’বছর আগে দেখেছি। নিষ্পাপ চিত্তে ঘুমিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। দুই টা বছর তাকে দেখিনি। যেখানে তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন উঁকি মারতাম। স্কুল লাইফ, কলেজ লাইফ আর ভার্সিটি লাইফ পুরো টাতেও আমার ক্রাশ ছিলেন তাহসিন ভাইয়া। আস্তে করে তার সিল্কি চুলগুলোতে হাত বুলালাম। ডুব দিলাম কিছু বছর আগের সেই স্মৃতিময়ী দিন গুলোতে।

ক্লাস এইটে পড়তাম। খুব দুষ্ট ছিলাম তখন। বন্ধু বান্ধবীদের সঙ্গে হাসি মশকরায় দিন কাটত। একদিন নাছিমা ম্যাম এর ক্লাস চলছিল। তখন’ই ক্লাসে প্রবেশ করে কিছু ছাত্র। তিনজন ছিল। পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয়ে এ কথা বলতে এসেছিল ম্যাম এর সঙ্গে। তার মধ্যে একটা ছেলের মাঝে চোখ আটকে যায়। তার সঙ্গেই ম্যাম কথা বলছিল। আর বাকি দু’জন দাঁড়িয়ে ছিল। সে কিছুক্ষণ পর পর চুল স্লাইড করছিল। মন তো চাইছিল শুধুই চেয়ে থাকি। পাশে থাকা সাদিয়াকে বলি, ‘আমাদের ক্লাসের আর অন্য ক্লাসের মেয়েরা বিটিএসের জন্য পাগল হয়ে যায়৷ আমি তো বলব বাংলাদেশের ছেলেগুলোই আসল সুন্দর। বিশেষ করে আমাদের স্কুলের গুলো। তাই না রে?’

সাদিয়া বলে, ‘হ্যাঁ ঠিক বলেছিস।’

‘দেখ এই টাকে। কী হান্ডু। এটা কে রে?’

‘কেন চিনিস না একে? পুরো স্কুলের ক্রাশ। পেছনের মেয়েগুলো এর জন্য পাগল।’

‘কী বলিস? আমাদের মেয়েগুলো তলে তলে এত কিছু করে?’

‘হুম সবাই।’

‘কেন বিটিএস ছেড়ে দিয়েছে নাকি?’

‘আরে ওদিন তাহা কে বলেছিলাম, বিটিএস ছেড়ে স্কুলের গুলোকে ধরলি? সে বলে, ওরা আলাদা আর এরা আলাদা।’

‘আচ্ছা সেসব বাদ। কে এই ছেলে টা?’

‘ওর নাম নাকি তাহসিন।’

‘কোন ক্লাসে?’

‘ওল্ড টেন।’

‘বাপ রে। অনেক সিনিয়র। তার মানে.. আর তিন মাস পরেই চলে যাবে?’

‘হুম সেই দিন টা হবে দিয়ার জন্য সবচেয়ে দুঃখের দিন। দিয়া তাহসিন ভাইয়ার পাগল।’

‘একটুখানি মেয়ে এসব কী?’

‘আরে ওরা এমনই বাদ দে। পড়। ম্যাম পড়া ধরবে।’

কিন্তু মন বসাতে পারিনা। চেয়ে রইলাম তার দিকে। সে তার কার্য সম্পন্ন করে বিদায় নিল। যতক্ষণ তাকে দেখা যায় ততক্ষণই দেখেছি।

এরপর দিন তারা তিনজন ক্লাসে আবারো আসে। আবারো দেখি তাকে। দেখেই থাকি। সাদিয়া কে বললাম, ‘তোর কী ওকে ভালো লাগে?’

‘কী সব বলিস এসব?’

‘না মানে ক্রাশ খেলি নাকি?’

‘আরে না। তুই খেয়েছিস নাকি? যেভাবে তাকিয়ে থাকিস?’

‘আ-আরে না। কই তাকিয়ে থাকি ধুর।’

দু’মাস কেটে যায়। দিন যত যায় তাহসিন ভাইয়ার প্রতি ভালোলাগা বাড়তে থাকে। ক্রাশ বলে কথা। ক্লাসে আসলে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম। টিফিন পিরিয়ডে খাওয়া দাওয়া শেষে রেলিং ধরে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতাম দু’তলা থেকে তার দিকে। সে তার ফ্রেন্ডসহ ক্লাস সিক্স সেভেনের কচি বাচ্চাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতো আর তাদের শেখাতো। মাঝে মাঝে মশকরাও করতো। হাসতাম এসব দেখে। আর মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। তার মধ্যে একটা জিনিসই বেশি ভালো লাগত। তার চুল। হ্যাঁ এটা আমার খুব পছন্দের ছিল। হঠাৎ একদিন তার সামনা সামনি হই। মাথা নিচু করে চলে আসি। কিন্তু তার তাকানো টা ভুলতে পারছিলাম না। কখনো ক্রাশ নামক জিনিস টার সাথে পরিচিত ছিলাম না। কিন্তু তাহসিন কে দেখে ক্রাশ না খেয়ে পারলাম না। আরো একমাস কেটে যায়। এস’এস’সি পরীক্ষার পর আর তাকে দেখতে পাই নি। সাদিয়া বলেছিল দিয়ার জন্য দিন টা দুঃখের হবে। কিন্তু এখন আমার জন্যই দিনটা দুঃখের হয়ে গেল। ক্লাস এইট শেষ করে নাইনে উঠলাম। শুনলাম সে কলেজে ভর্তি হয়েছে। ভাগ্যবশত সে আমাদের স্কুলের সামনের কলেজেই ভর্তি হয়েছে। এরপর অনেকদিন পর মুখখানা দেখতে পাই তার। মন যেন জুড়িয়ে গেল। আবারো সেই একি দুই বন্ধুর সঙ্গে। বুঝলাম খাঁটি বন্ধুত্ব। দিয়া, নুসরাত, ইভা, নাফিজা এদের মাধ্যমে জানতে পারি তার পুরো নাম তাহসিন আহমেদ। তার ছোট ভাইও আছে তার চেয়ে তিন বছরের ছোট। বর্তমানে নাইনে, মানে আমার সাথেই পড়ে কিন্তু বয়সে এক বছরের বড়। তার ফ্রেন্ড দু’জন আদিল ভাইয়া আর জেমি ভাইয়া। তাহসিন ভাইয়া এতই দুষ্ট ছিলেন তখন যে, এসবের ছলে আদিল ভাইয়াকে রাইট হ্যান্ড আর জেমি ভাইয়াকে লেফট হ্যান্ড হিসেবে পরিচয় দিত সবাইকে। অনেক মশকরা করতেন তখন।

তার কলেজ লাইফ শেষ হলে আর দেখতে পাই না তাকে। এরপর আমি কলেজে উঠি। এসবের মাঝে তিন বছর তার সঙ্গে দেখা হয়নি। মাঝে মাঝে খুব মনে পড়ত তার কথা। ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। এর মাঝে দু একদিন কেটে যায়। হঠাৎ একদিন তাহসিন ভাইয়াকে দেখে চোখ মার্বেলের মতো গোল গোল হয়ে যায়। কত্ত বড় হয়ে গেছেন তিনি। সে’দিন শুধু অগোচরে উনাকেই দেখেছি। তিনি তখন অনার্স থার্ড ইয়ার এ। একদিন ফ্রেন্ডদের উসিলায় তার সঙ্গে প্রথম কথা হয় আমার। তবে তিনি তেমন কথা বলতেন না। আদিল ভাইয়া আর জেমি ভাইয়াই আমাদের সঙ্গে মশকরা করতেন, কথা বলতেন ভালোভাবে। একবছর এভাবেই কাঁটে। কিন্তু তার অনার্স শেষ হলে তিনি অন্য ভার্সিটিতে চলে যান। সাথে তার ফ্রেন্ডও। মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। আর হয়তো দেখতে পাব না। এর মাঝেই আমার দেখা হয় রিশানের সঙ্গে। সে আমার চেয়ে দুই বছরের সিনিয়র ছিল। তারপর সে আমায় প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি হইনি। পরে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে প্রেমে ফেলে আমাকে। তার সঙ্গে সম্পর্ক হয় আমার। ইতোমধ্যে তাকে পেয়ে তাহসিন ভাইয়াকে ভুলেই যাই। অনার্স শেষ হলে আমরা বিয়ে করি। কিন্তু কে জানতো একদিন উনার সঙ্গেই আমার বিয়ে হবে। অবিশ্বাস্য। যে স্কুল লাইফ থেকেই আমার ক্রাশ ছিল সেই এখন আমার স্বামী। কী ভাগ্যের খেলা?

স্মৃতির পাতা থেকে বেরিয়ে এলাম। তার চুলগুলো আগের মতই আছে। সিল্কি আর লম্বা। যদিও এত লম্বা না। চোখ পর্যন্তই আসে। আর ললাট সবসময় ঢাকা থাকে তার চুলে। আস্তে আস্তে চোখ লেগে এলো। তলিয়ে গেলাম নিদ্রার রাজ্যে।

.

শেষ রাতে চোখ টা লেগে এসেছিল। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। চারপাশে তাকিয়ে বুঝলাম ভোর হতে চলেছে। উঠে বসলাম। তাহসিন এখনো ঘুমিয়ে আছেন। উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ওজু করে আসলাম। আচ্ছা উনি কী নামাজ পড়বেন না? ইতস্তত করে ডাক দিলাম, ‘এই যে, উঠবেন না?’

তার কোন হেলদোল নেই। আমিই ছোট করে ডেকেছি। এবার একটু জোরেই ডাকলাম, ‘এই যে ড. তাহসিন সাহেব। উঠবেন না নাকি?’

তিনি নিভু নিভু চোখ খুললেন। আমার দিকে এক পলক দেখলেন। আশেপাশে তাকালেন। পাশে থাকা মোবাইল তুলে টাইম দেখে উঠে বসলেন। বললেন, ‘থ্যাংক ইউ।’

ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘কেন?’

কিছু না বলে তিনি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন। আমি জায়নামাজ বিছিয়ে পেছনের টাতে দাঁড়ালাম। তিনি বেরিয়ে এলেন। টুপি পড়ে নামাজে দাঁড়ালেন। দু’জন নামাজ শেষ করলাম। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি জায়নামাজ ভাজ করে রেখে বারান্দায় এসে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন।

‘এই সময়ের পরিবেশ টা খুব সুন্দর তাই না?’

তার কথায় মাথা নেড়ে বললাম, ‘হুম।’

কিছুক্ষণ নিরবতা। পরক্ষণে বলে উঠলাম, ‘আচ্ছা আদিল ভাইয়া আর জেমি ভাইয়া কোথায়?’

‘এতদিনে ওদের কথা মনে পড়ল? ওরা তো প্রায় তোমার কথা বলে। যে ইবনাত দুষ্ট মেয়েটা না জানি কোথায় আছে।’

‘আমি দুষ্ট?’

‘তখন তো কম দুষ্ট ছিলে না।’

‘হাহা।’

‘এই তো অনেকদিন পর তোমায় হাসতে দেখলাম।’

তার দিকে তাকালাম। সে সামনে তাকিয়ে আছে। একটু পর সেভাবে থেকেই বলে উঠেন,’রিশানের কথা মনে পড়ে না?’

চমকালাম। মনে পড়ে তো। কিন্তু তাকে মনে করে কী লাভ? বললাম, ‘বেইমানের কথা মনে করে কী লাভ? কিছু কী পাব?’

‘ভালোবাসো না ওকে?’

‘ওকে ভালোবাসব তাও এসবের পর? অসম্ভব।’

দীর্ঘ তপ্ত শ্বাস বেরিয়ে এলো তার। অনেক্ষণ কাটল। ভোরের আলো ফুঁটতে শুরু করেছে। তাহসিন বললেন, ‘আট টা বেজে গেছে৷ আপু ডাকতে আসবে। আমি যাচ্ছি।’

চটপটে প্রশ্ন করলাম, ‘কোথায় যাচ্ছেন?’

‘আজ কী জানো না?’

বোকার মতো প্রশ্ন করলাম, ‘কী?’

তিনি আশাহত হলেন, ‘আরে আজ তোমাকে দেখতে আসবে জানো না? মেহমানে তো ভরেই যাবে। সাথে তোমার আদিল ভাইয়ারাও আসবে।’

থতমত খেয়ে গেলাম। তাহসিন হেসে বেরিয়ে গেলেন। বোকামির জায়গা পাই না নাকি ধুর। সত্যি সত্যি একটু পর তনিমা আপু রুমে প্রবেশ করল। এসে হেসে বললেন, ‘এই যে মিসেস. ভাবী। কেমন আছেন? ঘুম কেমন হলো?’

‘জ-জ্বী ভালো।’

‘নাও রেডি হয়ে নাও। এই শাড়িটা পড়ো।’

‘আব.. শাড়ি তো পড়তে পারি না।’

‘কী বলো?’

‘হুম।’

বিয়ের প্রথম থেকে যতবার শাড়ি পড়েছি নিশাত আপু বা রিশানের কাছেই পড়েছি। যদিও শাড়ি মোট চারবার পড়েছিলাম। তনিমা আপু বললেন, ‘আচ্ছা আমি পড়িয়ে দিব।’

ফ্রেশ হয়ে এলাম। আপু শাড়ি পড়িয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পর আপু আমায় নিচে নিয়ে যায়। চারদিকে বিয়ের তোরজোড় চলছে। মেহমানে ভরে গেছে। সবাই দেখে গেল।

.

প্রায় দুপুর গড়িয়ে এসেছে। মেহমানদের আমাকে দেখাদেখি শেষ। কী অসহ্য! আপু আমাকে উপরে দিয়ে আসেন। রুমে ঢুকতেই যাব তার আগেই হঠাৎ তাহসিন কোত্থেকে এসে বললেন, ‘ছাদে চলো।’

‘মানে?’

‘মানে আবার কী? ছাদে চলো।’

‘কেন?’

‘আরে গেলেই দেখতে পাবে চলো।’

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ্]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে