অপূর্নতার সংসার পর্ব-১৪

0
2787

#পর্ব১৪
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

“মানুষ যখন তার ভালোবাসার মানুষের জন্য কিছু তৈরী করে তখন সেটার সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে যায় ” আলতো পরশে সে তার প্রেয়সীর জন্য আনানো জিনিসগুলো দিয়ে পুরো ঘরটা সাজাচ্ছে। যাতে তাতে কোনো বিন্দু পরিমান ও খুঁত না থাকে।

–“প্রথমেই পুরো ঘরটাকে বেলুন আর কিছু তারা দিয়ে সাজিয়ে দিলো। তারপরে রোজার জন্য রোজার প্রিয় ফুচকা নিজের হাতে তৈরী করেছে রওশন! খুব যত্ন করে তৈরী করেছে। একটা টেবিলের উপর গোল করে অনেক গুলো লাল, সাদা রঙের গোলাপ ফুল দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছে। গোলাপ ফুলের মাঝখানে রয়েছে অনেকগুলো হলুদ রঙ মিশ্রিত সুন্দর গাধা ফুল,তার মাঝখানে রয়েছে কতোগুলো নীল রঙের অর্ধপ্রস্ফুটিত গোলাপ ফুল! সবকিছুর মাঝখানে রেখেছে রওশন একটি নীল চিরকুট যেখানে তার ইচ্ছের কথা লিখা আছে। আর তার পাশেই একটা জায়গায় তার হাতের তৈরী ফুচকা রেখেছে রোজার জন্য। আর রোজাকে তার জীবনে আমন্ত্রিত করবার জন্য দরজার সামনে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানিয়ে দিলো। যাতে এই গোলাপের মতই সুন্দর হয় তার সাথে রোজার আগামী পথ চলা।

–“হ্যাঁ রওশন এই পুরো ঘরটা এতো যত্ন করে সাজাচ্ছে শুধুমাএ রোজার জন্য। কারন রোজার উপর তার একটা মায়া পড়ে গেছে যে মায়া কখনোই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এক কথায় বলতে গেলে ভালোবেসে ফেলেছে রওশন রোজাকে। এখন শুধু সেটা রোজার কাছে প্রকাশ করার পালা”।

সবকিছু আয়োজন শেষ করে সে রোজাকে একটি লাল রং মিশ্রিত খুব সুন্দর একটি শাড়ি দিলো পড়ার জন্য। সাথে সাথে ম্যাচিং করে কানের দুল, গলার হার আর মাথায় দেওয়ার জন্য সুন্দর একটি গাজরা এনেছে। সবকিছু রোজার হাতে দিলো পড়ার জন্য।

“রোজা যদিও প্রথমে না করেছিলো কিন্তু পরে রওশন এর কথা ফেলতে পারেনি হুট করে। তাই সে পড়তে রাজি হয়ে যায়”।

সবকিছু পড়ে তৈরী হয়ে যায় রোজা। রওশনের রুমে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই,

কতোগুলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি এসে পড়লো রোজার সারা গায়ে! তারপর যখন ঘরে প্রবেশ করলো গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানানো। সেই পথ দিয়েই রোজা সামনে আগালো। সামনে এগিয়ে দেখতে পেলো রওশন টেবিলে বসে আছে। রোজা সেখানে বসলো। তার চোখ আঁটকে গেলো মনোমুগ্ধকর টেবিলটি দেখে! ফুলের সু’গন্ধে সুবাসিত করলো নিজেকে। তারপর রওশনের চিরকুট টি খুললো, তাতে লেখা রয়েছে,

“অর্ধপ্রস্ফুটিত গোলাপে লুকিয়ে আছে ভালোবাসা”
“আমার সেই ভালোবাসা শুধু তোমারই জন্য”

“ভালোবাসি তোমার ওই মায়া মুখটিকে মায়াবতী”
“সাথে তোমার ওই মায়া ভরা মেয়েদের কেও ”

“যদি তুমি সুযোগ দাও তোমার ওই হাতটি ধরার”
“কথা দিচ্ছি সুখ বই কষ্ট দিব না কোনদিন আর”

চিরকুট টা পড়ে রোজার কাছে সবটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, রওশন কেনো এতো সুন্দর করে পুরো আয়োজন করেছে! রওশন বলতে লাগলো,

দেখো রোজা, তোমাকে স্পষ্ট করেই বলছি আমি,” আমি তোমাতে ভালোবেসে ফেলেছি”। হ্যাঁ তোমার মেয়েদের শুরুতেই নিজের মেয়ের মতন ভালোবেসেছি কারন আমার নিজেরই কোনো সন্তান নেই! ওদের পেয়ে যেনো আমার শুকনো মরুভুমিতে একটু পানির দেখা মিলেছে! এরকম মনে হয়েছিলো আমার। এই এতো গুলো দিন তোমার সাথে, আশেপাশে থাকতে থাকতে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও বলতে পারবো না রোজা! শুধু চাই যে তুমি আর মেয়েদের নিয়ে আমি বাকিটা জীবন সুন্দর ভাবে কাটাতে চাই মৃত্যুর আগ অব্দি। কথা দিচ্ছি কখনো কষ্ট পেতে দিবো না তোমায়!

রোজাঃ আমি সবটা বুঝতে পারলেও, আপনার সিদ্ধান্ত টা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না কিছুতে। আমি আর ঠকতে চাই না নতুন করে, না কোনো কষ্ট পেতে চাই। কিচ্ছু চাই না আমি কিচ্ছু না! মেয়েদের নিয়ে ভালো থাকতে পারবো বাকি জিবন আমি। জানেন রওশন,

“জীবন হলো অনেকটা জ্যামিতির উপপাদ্যের মতন, চিত্র দেখলে মনে হয় কত সহজ, কিন্তু প্রমাণ করতে গেলে বোঝা যায় কতটা কঠিন”!

রওশনঃ কিন্তু পরিশেষে তোমার একটি ছায়ার প্রয়জোন ছিলো, মেয়েদের ও। আমি ভেবেছিলাম তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকবো। ছায়া যেমন কখনো দূরে যায় না ঠিক তেমনি আমিও কখনো দূরে সরে যাবো না। জানোতো রোজা,

“অস্থায়ী জীবনে চিরস্থায়ী হল মানুষের সুন্দর ব্যবহার, যা মৃত্যুর পরেও সবার স্মৃতিতে থাকে”

“আমি না হয় তোমার আর মেয়েদের সাথে কাটানো সেই সৃত্বি নিয়েই থাকবো। জোর করবো না তোমায় কোনোদিনও তুমি চাইলে আসতে পারো আমার মনের গহিনে যেখানে শুধু তোমার বসবাস”।

রওশন বুঝতে পারলো, রোজার এসব কথা শুনে মন খারাপ করেছে, তাই সে এসব কথা বাদ দিয়ে কাজের কথা বলতে লাগলো,

রোজা, তাহলে এখন চলো মেয়েদেরকে স্কুল থেকে নিয়ে আসা যাক? আমি ওই রাস্তায়ই যাবো চলো একসাথে যাওয়া যাক?

রোজাও আর কথা বাড়ালো না রওশনের সাথে মেয়েদেরকে আনার জন্য বেড়িয়ে গেলো!
____________________________

আদিলঃ রিনি অনেক তে হলো এবার এসব বাদ দাও? বাদ দিয়ে চলো এখন বিশ্রাম নাও। তোমার তো কিছুই করা লাগে না! খালি খাবে আর ঘুমাবে। মাঝখান দিয়ে আবার এসব পার্লার টার্লার যাওয়ার কোনো দরকার নেই বুঝেছো?

রিনিঃ সারাদিন শুয়ে বসে থাকতেও ভাল্লাগে না। তাই তো বলছি চলো পার্লার থেকে বেরোবার পর আমরা আজকে অনেক জায়গায় ঘুরবো।

রিনির কথার কাছে আদিল হার মেনে চললো রিনির কথা মতন রিনির সঙ্গে।

রিনি প্রথমে পার্লারে গেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আদিল ওয়েট করছে রিনির জন্য । অবশেষে পার্লার থেকে বেরিয়ে রিনির বায়না পূরনের জন্য আদিল রিনিকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে। সে মানা করেছিলো রিনিকে এসব খাওয়া থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু রিনি কি আদৌ আদিল এর মানা শুনে নাকি? তাইতো আদিল রিনির কথা মতো চললো ফুচকা খাওয়াতে।
____________________________

স্কুলে আজকে এক্সর্টা ক্লাস চলছে। রোজা সেটা জানতো না বিধায় এখন রোজা আর রওশন দুজনকেই ওয়েট করতে হচ্ছে।

অবশেষে নিরবতা কাটিয়ে রওশন রোজাকে বললো যে “সামনে একটি পার্ক রয়েছে সেখান থেকে একটু ঘুরে আসা যাক”?

রোজা বারন করতে চাইলেও পারলো না! কারন একটু আগের ব্যবহারে রওশন এর মন খারাপ কয়ে আছে। সেটা রওশন স্বীকার না করলেও রোজা তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে! তাই সে রওশনের সাথে গেলো সামনের পার্কটাতে হাটতে।

“নীরবতা এবং হাসি দুটোই জীবনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। হাসি যেমন সমস্যা মেটাতে সাহায্য করে নীরবতা সেই সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে চলতে শেখায়”।

ঠিক তেমনি ভাবে নিরবে দু’জন হেঁটে চলছে। হাঁটতে হাঁটতে রোজার চোখ গেলো সামনের ফুচকাওয়ালার দিকে, যেখানে সে আদিল এবং রিনিকে দেখতে পেলো!

রিনির হাতে ফুচকার প্লেট সেখান থেকে রিনি ফুচকা খাচ্ছে রিনি খাচ্ছে বললে ভুল হবে আদিল রিনিকে খাইয়ে দিচ্ছে, আর রিনিও আদিলকে খাইয়ে দিচ্ছে। ওদের কে দেখে মনে হচ্ছে যে যেনো পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ তারা দু’জনে। হঠাৎই রোজার মনে হলো, আদিল কখনো ফুচকা খেতে চায়নি! রোজার মন খারাপ হতো বলে বাধ্য হয়ে তখন খেতো আদিল। তাও অল্প কয়েক! আর এখন দেখে মনে হচ্ছে আনন্দে তৃপ্তি করে রিনির সাথে খাচ্ছে। সত্যি ই আদিল পাল্টে গেছে! সবদিক দিয়ে পাল্টে গেছে সে, আদিলকে দেখে মনেই হচ্ছেই না যে আদিল এর স্ত্রী সন্তান নিখোঁজ। হয়তো তাদের নিয়ে কোনো ভাবান্তরও নেই আদিল এর মধ্যে। যদি থাকতো তাহলে সে চেষ্টাটুকুনি করতো ওদেরকে ফিরিয়ে আনার! না চাইতেও অঝোর ধারায় অশ্রু নির্গত হচ্ছে অক্ষিজোড়া থেকে!

দূর থেকে সবটা রোজার সাথে সাথে রওশন ও দেখতে পেলো। সবটা বুঝে শুনে সে রোজাকে বলতে লাগলো,

“আমাদের এমন কারো জন্য কষ্ট পাওয়া কখনোই উচিত নয় যার কাছে আমাদের কোনো মুল্যই নেই”
শুধু শুধু যার কাছে তোমার মূল্য নেই তার জন্য চোখের পানি ফেলাও বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। কারন তার কাছে তোমার মূল্যই নেই কোনো সে তোমার চোখের পানির দাম দেবে এটা ভাবাও একধরনের মুর্খামি।
তাই বলছি এগিয়ে যাও জিবনে। আদিল নামে কেউ ছিলো ভুলে যাও সে কথা একেবারে।
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে