অপূর্নতার সংসার পর্ব-১৩

0
2629

#পর্ব১৩
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

“মেঘে ঢাকা কালো আকাশে যেমন বৃষ্টির পর যেমন সচ্ছ ও সুন্দর দেখায়। ঠিক তেমনি ভাবে রোজার জীবনটা ও শান্তিতে কাটছে”।

–“হলুদ রঙের পরিহিতা শাড়ি, আর দু’হাত ভর্তি হলুদ চুড়ি, মাথায় খোপার ফুল টাও হলুদ সব মিলিয়ে রোজাকে একদম হলুদ পরীর মতন দেখা যাচ্ছে। যেনো আকাশ থেকে নেমে আসা কোনো এক হলুদ পরী। যার থেকে দৃষ্টি সরানো বড্ড কঠিন। তবুও রওশন নিজের দৃষ্টি সংযত করে ফেললো। কারন সেই হলুদ পরী তো তার নিজের একান্ত ব্যক্তিগতো সম্পদে রুপান্তরিত হয়নি। হয়তো হবে কোনোদিন একদিন। সেটা সময়ের অপেক্ষা”!

“রোজার পেটের অপারেশন টাও ঠিকঠাক ভাবে হয়ে গেছে। রোজা এখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে গেছে। সেই খুশিতেই রওশন সবাইকে নিয়ে তার রেস্টুরেন্টে ডিনার করতে যাচ্ছে”।

রওশনঃ রোজা আপনার হয়েছে নিশ্চয়ই? তাহলে চলুন য়াওয়া যাক? আর বাচ্চারা কোথায়?

–বাচ্চাদের কথা বলতে বলতে সঙ্গে সঙ্গেই হাজির হয়ে গেলো দুই বোন! তারপর তারা সবাই মিলে আনন্দ সহকারে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

রোজা রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখতে পেলো রেস্টুরেন্টটা খুব সুন্দর দেখতে। চারপাশ টা অনেক সুন্দর সুন্দর ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। গেস্টদের জন্য অনেক ভালো ভালো জায়গা রেখেছে। হরেক রকম আলে জ্বলছে। কিন্তু সব রকম সব কিছু দেখতে পেলেও রোজা সেখানে বাঙালী খাবার দেখলো না বললেই চলে।
তাই সে মনে মনে ঠিক করলো যে কাল থেকেই কিছু ভালো ভালো বাঙালী রান্না করবে। অন্ততোএটুকু তো করতেই পারে রোজা রওশন দের জন্য।

রেস্টুরেন্ট থেকে ফিরে আসার সময় তারা দেখতে পেলো একটি বাচ্চা মেয়ে বসে কাঁদছে কেউ নেই পাশে তাই রোজা মেয়েটিকে হোটেলের ভিতরে এনে খাইয়ে দাইয়ে বাইরে একটি দোকানের ভিতরে বসিয়ে রেখেছে। তখনি বাচ্চাটির মা এসে বললো,

“ম্যাডাম আপনে আর আপনার স্বামী বড়ো ভালা মানুষ। আমার মাইয়াডারে কতো যত্ন করলেন। আমি মন খুলে দোয়া করতাছি আপনারা আপনাগো মাইয়াগো রে নিয়া বহুত সুখে থাকবেন”।

ভদ্রমহিলার মুখ থেকে রওশন কে নিজের স্বামী শুনে কেমন জানি লাগলো রোজার। রওশন চুপচাপ ভাবে দেখলো সবকিছু কিছুই বললো না! যতোই হউক সে তো এ বাড়ির আশ্রিতা। তাই রওশনের স্ত্রী হওয়ার ও কোনো যোগ্যতা তার নেই। আর রোজাও চায় না আদিল এর মতোন আর কারো কাছ থেকে এরকম নরক যন্ত্রনা পেতে।

এক মাস যাওয়ার পর _________________________

এখন রোজা যেমন রওশনের পরিবারের সকলের খেয়াল রাখে যত্ন করে ঠিক তেমনি করিম সাহেব, রওশন সবার সর্বক্ষেএেই রোজাকে ছাড়া এখন তাদের চলে না! এভাবেই বাড়ির প্রতিটি সদস্যের খেয়াল রাখছে রোজা। নিজের মেয়েদের নিয়ে কোনো চিন্তাও নেই এখন। তারা স্কুলে যাচ্ছে পড়াশোনা করছে। একজন ভালো মানুষ হয়ে ওঠছে আর কোন কিছুই চায় না রোজা।

রওশনঃ রোজা আপনার খাওয়ার গুলো কিন্তু খুব খুব ভালো হচ্ছে। আগে আমার রেস্টুরেন্টে বাঙালী খাবার কেউই খেতো না বলতে পারেন! এখন তো বেশির ভাগ অর্ডারই আসছে বাঙালী খাবারের। সত্যি রোজা আপনি না থাকলে আমার রেস্টুরেন্টে টা এতো ভালো চলতো না! আর হ্যাঁ মনে আছে তো আপনার দায়িত্ব? আজকে কিন্তু একটা জন্মদিনের পার্টিতে প্রায় দু’শো বিরিয়ানির অর্ডার এসেছে। আপনি যখন দায়িত্ব নিয়েছেন তখন তাড়াতাড়ি করে ফেলুন তো দেখি আপনার হাতের জাদু!

হ্যাঁ এখন রোজা বাড়ির সবার খেয়াল রাখার পাশাপাশি রওশন এর রেস্টুরেন্টের কাজেও হাত লাগিয়েছে। আর রোজার হাতের রান্না অনেক মানুষ পছন্দ ও করছে। রোজা মনে করে এভাবে শুধু শুধু ঘরে বসে না থেকে রান্নাটুকুও করলে রওশনের রেস্টুরেন্টের যেমন একটু উপকার হবে তেমনি রোজারও ভাল্লাগবে এই পরিবারের জন্য কিছু করতে পেরে।

বিকেলে বাচ্চাদের সাথে গল্প করার সময় হঠাৎই মিষ্টি তার মা’কে প্রশ্ন করে ওঠলো,

“আম্মু আজকে কতোদিন হয়ে গেলো অথচ আব্বু আমাদেরকে একটা ফোনও করেনি কিংবা একটু দেখাও করেনি বলো? আমি তো আব্বুকে খুব মিস করছি”!

রোজা জানতো বাচ্চারা এতো সহজে আদিল এর কথা ভুলতে পারবে না। যতোই হউক তাদের আব্বু তো!

মিষ্টি মামুনি তোমাদের না আম্মু বলেছিলো মনে নেই তোমাদের? তোমাদের আব্বু এখন আর তোমাদের ভালোবাসে না। তাই তো দেখছো না কতোদিন হয়ে গেলো অথচ তোমাদের আব্বু দেখা করতে এসেছে তোমাদের সাথে? আসেনি তো কারন সে তোমাদের কে আর ভালোবাসে না। মিস ও করে না তোমাদের কেও!

মায়ের কথা যেনো একটু হলেও বুঝেছে মিষ্টি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে সে রোজাকে বললো,

হ্যাঁ আম্মু তুমি ঠিকই বলেছো। আব্বু আমাদের কে আর ভালোবাসে না। না মিস করে? এর চেয়ে তো ভালো আমাদের আংকেল। কতো সুন্দর করে খেলে আমাদের সাথে, কথা বলে, কতো আদর করে আমাদের। আংকেল যেভাবে আমাদের ভালোবাসে আব্বুও কোনদিন সেভাবে ভালোবাসেনি আমাদের! আংকেল খুব খুব খুব ভালো আম্মু। আমরাও আর মনে রাখতে চাই না আব্বুকে। আব্বু পঁচা।

রোজা জানতো হয়তো মিষ্টি এগুলাই বলবে।” বাচ্চারা যার কাছ থেকে ভালোবাসা পায় ঠিক ততোটুকুই ভালোবসা তাদেরকে ফেরত দেয়”।
_________________________________

রিনির এখন আট মাস চলছে প্রেগন্যান্সির। তবুও তার এটা চাই, ওটা চাই লেগেই আছে আদিল এর কাছে থেকে। এইতো সেদিন শপিং করতে গেলো, এ অবস্থায় আার পার্লারও গিয়েছে। আবার কদিন পরপর পার্কেও যায় সে। আদিল থামাতেও পারছে না রিনিকে। রিনির সব আবদার মুখ বুঝে সহ্য করছে। রোজা যাওয়ার পর থেকে কেনো জানি আদিল এর এখন রোজার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে আগের একসাথে কাটানো দিনগুলোর কথা। ইদারা বেগম ও মাঝে মাঝে বলেন মেয়েটা থাকলে ভালো হতো।

আদিল এর সাথে রিনির দেখাটা হয়েছে, আদিল যখন বাসার উদ্দেশ্য ফিরছিলো তখনই রিনি আদিল এর সামনে এষে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। আদিল ও বিপদ বুঝতে পেরে রিনিকে বাসায় নিয়ে যায়। সেদিন রোজা বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে গেছিলো সামনের পার্কে। ব্যস তারপর থেকেই আদিল এর সাথে ফোনে কথা বলা। আস্তে আস্তে সখ্যতা গড়ে ওঠা দু’জনের মাঝখানে। তারপর সর্বশেষে ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আদিল এর সাথে বিয়ে করে আদিল এর বাড়িতে এসে ঝাঁকিয়ে বসেছে রিনি রোজার জায়গায়!

রিনিঃ আদিল আমার না একটুও ভাল্লাগছে না তুমি একটা গান শোনাও আর আমার মাথায় বিলি কেটে দাও।
আদিল হাসিমুখে রিনির আবদার পুরন করছে।

একটু পরে আবার রিনি বলছে,

রিনিঃ আদিল আমাকে একটু প্লিজ কালকে পার্লারে নিয়ে যাবে। দেখোনা আমার হাতগুলো কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে।

এবার মাথা গরম হয়ে গেলো আদিল এর, রাগাত্নিক স্বরে সে রিনিকে বলতে লাগলো,

তুমি কি পাগল রিনি? এই অবস্থায় বারবার বাহিরে যেতে চাচ্ছো যখন তখন? বেবির কোনো চিন্তা নেই তোমার নেই তোমার মাথায়? পার্লারে না গেলে কি তোমার আহামরি অসুবিধা হয়ে যাবে?

রিনি ও যেনো ক্ষেপে গেলো আদিল এর কথা শুনে,

এই বলেছিলে তুমি আমাকে আদিল? তুমি তো বলেছিলে আমার সব আবদার তুমি পুরন করবে। বলেছো যখন তখন সব করতেই হবে তোমাকে।

এবার রাগের চোটে আদিল গিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেনো নিজের পায়ে কুড়োল টা নিজেই মেরেছে!

ওদিকে রওশন রোজাকে কবে থেকে একটা কথা বলবে বলে বলেও বলতে পারছে না! আজকে ভাবছে যখন বাচ্চারা স্কুলে থাকবে তখন রোজাকে বলতেই হবে তার না বলা কথাটি।

সঙ্গে সঙ্গে সে সবকিছু জোগাড় করতে চললো । কারন একটু সারপ্রাইজ দিতে চায় রোজাকে। তাই সে খুশি মনে বাজারে চললো সবকিছু আনতে।

কিন্তু রোজা কি আদৌ রওশন এর কথা শুনবে?

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে