#পর্ব৯
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
–এখন কি বা’ই বলবে মেয়েদেরকে রোজা! ওরা ওদের জায়গায় দাড়িয়ে যা বলছে সবটাই ঠিক ওরা কি করলো! কিন্তু ওরা অবুঝ আমিতো আর অবুঝ না তাই সবটা ঠান্ডা মাথায় বোঝাতে হবে।
“মামুনিরা শোনো ভালো করে দু’জনে, আচ্ছা ধরো তোমাদের আব্বু যদি তোমাদের ভালো না বাসে, তোমাদের কে বকা দেয়, মার ধর করে তখন কেমন লাকবে তোমাদের ? তোমাদের যদি আর আগের মতোন কাছে টেনে আদর না করে, সবসমসয়ই বকা-ঝকা করে তাহলেও তোমরা তোমাদের আব্বুর কাছে থাকতে?
–আলো আর মিষ্টি দু’জনেই মায়ের কথা শুনতে লাগলো মনোযোগ সহকারে। তার পর দু’জনেই বললো
–“আম্মু আব্বু যদি সত্যিই এরকম করে তাহলে তো আব্বু পঁচা আব্বু হয়ে যাবে।আর পঁচা আব্বুর সাথে আমরা কিছুতেই থাকতে চাই না। তুমি ঠিক করেছো আব্বুকে আমাদের সাথে না নিয়ে এসে। ওরকম পঁচা আব্বুর আমাদের লাগবে না। এমনিতেও ওই আন্টি টা যখন আমাদের মারলো তখন তো আব্বু কিছুই বললো না। আব্বু থাকুক একা একা আমরা তোমার সাথেই থাকবো আম্মু”।
“আরো একটা কারন আছে মামুনি সেটা তোমরা বড়ো হলে বুঝতে পারবে তবে এখন কিছুটা হলেও শোনো । শুনলে তোমাদের জীবনে লক্ষ্য এ আগাতে পারবে”।
আলোঃ আমাকে বলো আম্মু আমি বুঝতে পারবো মিষ্টি এখনো অনেকটাই ছোটো।
রোজা বলতে লাগলো মামুনিরা তোমাদের যে বললাম মাএ তোমাদের আব্বু তোমাদের ভালোবাসবে না বকা ঝকা করবে। সেগুলোতো করতোই সাথে আরো বকতো তোমরা মেয়ে বলে।
“আলো আর মিষ্টি দু’জনেই বলতেই লাগলো মেয়ে দেখে বকবে কেনো? আব্বু তো আমাদের ভালোবাসে”।
রোজাঃ মেয়েদের বড়ো হলে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় সেটা তো জানোই দু’জনে। আর ছেলেদের বড়ো হলে বিয়ে দেওয়ার আগে, তাদের নিজেদের কে সাবলম্বি মানে চাকরি বাকরি করায় যাতে তারা নিজেদের পায়ে দাড়ায় এবং বাবা- মায়ের পাশে দাড়ায়। তারপরে তারা বিয়ে করে।
মেয়েরা বলতে লাগলো,
–“আম্মু আমরা তো লেখাপড়া করছি ভবিষ্যতে আমরাও তো এরকম চাকরি করতে পারবো। তারপরে তোমাদের পাশে দাড়াবো”। এটা আর এমন কি?
রোজাঃ না মামুনিরা তোমার আব্বু মনে করে তোমরা যদি ছেলে হতে তাহলে এ সবকিছু করতে পারতে। মেয়ে হয়েছো বলে কিছুই করতে পারবে না। আরো একটা কারন আছে তোমার আব্বুর তোমাদের ভালো না বাসার কারন সেটা বড়ো হলে তবেই বলবো তোমাদের। এখন তোমরা বলো তোমাদের কি উচিত না জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়া, তোমাদের আব্বুকেও দেখিয়ে দিতে পারবে যে তোমরা বলে কোনো কিছুতে আটকে থাকো নি সবটাই করতে পেরেছো। তোমাদের নিজের জন্যই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত হওয়া খুব দরকার মামুনিরা। এখন তোমরা বলো তোমরা কি সেটা করতে চাও না? নিজের পায়ে দাড়াতে চাও না, যাতে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হতে না হয়। জবাব দিতে চাও না তোমাদের আব্বুকে?
দু’জন মেয়েই বললো, হ্যাঁ আম্মু আমরা নিজেদের পায়ে দাড়াবো দু’জনেই। তোমার পাশেও দাড়াবো। আর আব্বুকেও দেখিয়ে দিবো, আমরা কোনো অংশে কম নই কোনো কিছুতেই।
রোজাঃ এটাই যদি করতে চাও তাহলে তোমরা দু’জনেই আজ থেকে মন দিয়ে পড়ালেখা শুরু করবে। একটুও ফাকি দিবে না। মায়ের সব কথা শুনবে। মনে মনে গেথে নাও জীবনে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন।
“আমরা সব করবো আম্মু সব করতে পারবো। তুমি যেমনি বলবে তেমনটিই করবো ”
–“রোজা এতটুকুই চাইছিলো তার মেয়েদের মনের মধ্যে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জেদ জাগিয়ে দিতে। যাতে ভবিষ্যতে আদিল বুঝতে সে মেয়েদের সাথে কতো বড়ো অন্যায় করেছে। একরকম টায় যেমন মেয়েরা তাদের সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারবে, তেমনি আদিল ও তার সমুচিত জবাব পাবে”।
রহিমা খালাঃ তোমরা মা, মাইয়্যারা গোসল করছোনি সবাই? করলে তাড়াতাড়ি নিচে খাইতে আহো আমি খাবার বাইড়া রাখছি তোমরা হক্কলে খাইবার আহো।
–রোজা কাল বিলম্ব না করে তার মেয়েদের নিয়ে নিচে চলে গেলো খাবার খেতে। খাবার খাওয়া শেষ করে উপরে এসে মেয়েদের কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে বলেছে। আর রোজা বারান্দায় এসে ভাবছে য়ে রওশন এর বউ বাচ্চা তারা কই? আর আংকেল কেও মানা করতে হবে আদিল কে যাতে কিছু না বলে রোজাদের এখানে থাকার কথা। সব মিলিয়ে রাএেবেলা আংকেল আসলে সব কথা বলতে হবে আংকেল কে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসব কিছুই ভাবছে রোজা ।
তখন মেয়েদের বিশ্রাম নিতে বললেও দুষ্টু মেয়েরা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখতে দেখতে হঠাৎ একটা ঘরে ঢুকলো। ঘরটা খুব সুন্দর দেখে তারা ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলো।
ওদিকে রওশন বাড়িতে চলে আসে তাড়াতাড়ি তার শরীর খারাপ লাগার কারনে। এসেই দেখতে পেলো তার রুমে দু’টো ছোটো ছোটো বাচ্চা মেয়ে তার বেডের উপর বসে তারই ঘরে নিয়ে দু’জনে খেলছে। রওশন তাদের কে চিনতে অসুবিধা হলো না কারন রওশনইতো ওদেরকে এ বাড়িতে নিয়ে এসেছে।
রওশন বাচ্চাদের বলতে লাগলো, হেউ লিটেল প্রিন্সেস! হোয়াট আর ইউ ডুয়িং নাও?
–“হঠাৎই রওশন কে দেখে বাচ্চারাও ভয় পেয়ে যায়! সাথে সাথে দু’জনে রওশনের সব ঘড়ি রেখে দিয়ে দু’জনে রওশনের সামনে কান ধরে দাড়িয়ে স্যরি বলে ওঠে”।
রওশন এর খুব হাসি পায় বাচ্চাদের এই ভর্য়াত মুখ গুলো দেখে। তাই আর কাল বিলম্ব না করে সে বাচ্চা দের কপালে দুটো করে চুমো দিয়ে দিলো। অথচ এই বাচ্চা র কারনেই রওশন এর জীবন আজ ছন্নছাড়া!
বাচ্চারা ও অবাক! তারা ভেবেছিলো হয়তো আংকেলটা তাদেরকে বকবে। কিন্তু সে যখন তাদেরকে আদর করলো তখন মেয়েরা বলে ওঠলো,
আংকেল ইউ আর স্যরি! আর এরকম হবে না। আমরা তোমার রুমটা ঘুরে দেখছিলাম কোনো কিছু নষ্ট করেনি। প্লিজ আংকেল আমাদের আর বকা দিও না তুমি!
রওশনঃ আমিতো কিছুই বলছি না তোমাদের। তাহলে অযথা ভয় পাচ্ছো কেনো তোমরা? তোমরা কতে মিষ্টি বাচ্চা। এখানেই বসো তোমরা তোমাদের যতোক্ষণ ইচ্ছে হয় ততোক্ষণই খেলো তোমরা।
মেয়েরা খুশিতে খেলতে লাগলো রওশনের ঘরে। কিছুক্ষণ পর রওশন ও ফ্রেশ হয়ে খেলতে লাগলো বাচ্চাদের সাথে। তার যে একটু আগে শরীর খারাপ করছিলো সে যেনো সব ভুলে গিয়ে আনন্দে বাচ্চাদের সাথে খেলছে।
ওদিকে রোজা তো মেয়েদের খুঁজছে সব জায়গায় খুজেছে একমাএ রওশন এর ঘর বাদে। তাই সে এখনো মেয়েদের খুঁজে পাচ্ছে না!
ও বাড়িতে ___________________
রিনিঃ আদিল সেই কোন সকালবেলা একটু বিরিয়ানি খাইয়েছো আর তো কিছুই খাওয়ালে না! এখন দুপুর হয়েছে বলি এখনো কি কিছু খাবো না আমি? এখন তো আরো বারবার ক্ষিদে পাচ্ছে আমার। তাড়াতাড়ি আমার খাবার ব্যবস্থা করো বলছি।
আদিলঃ আমিতো তোমাকে সকালেই বললাম যে আমি রান্না করতে পারি না। তাই তো সকালবেলা হোটেল থেকে অর্ডার করে তোমাকে খাওয়ালাম। এখন কি তুমি নিজে একটু রান্না টুকু করতে পারছো না? সামান্য রান্নাই তো করবে তাও যদি করতে না পারো তাহলে আর আমি কি করবো বলো? তোমাকে কি বারবার আমি হোটেল থেকে খাবার অর্ডার করে খাওয়াবো নাকি?
রিনিঃ এই তোমার ভালোবাসার নমুনা আদিল? সামান্য রান্না করে খাওয়াতে পারছো না আমায়! এখন কি তাহলে আমি না খেয়ে থাকবো নাকি? এটা তো কিছুতেই হয় না। তুমি এক্ষুনি গিয়ে আমার জন্য রান্না করবে। আর হ্যাঁ আজকে একটু চিকেন রান্না করো আর একটু পায়েস রান্না করো আমার খেতে খুব মন চাচ্ছে। যদি তুমি রান্না না করো আদিল তাহলে বলে দিলাম আমি আমি যে আমার বাপের বাড়িতে যাবো আর কোনোদিনও ফিরবো না তোমার কাছে।
রিনির এহেনো কথা শুনে বাধ্য হয়ে আদিল গেলো রান্না ঘরে রান্না করতে। ইউটিউব দেখে দেখে রান্না করতে হবে তার এটাই এখন শেষ ভরসা! তাই কাল বিলম্ব না করে রান্না করা শুরু করতে লাগলো।
রোজা যখনি দেখলো বাচ্চা গুলো রওশনের সাথে খেলছে তখনি হুট করে রোজা ওদের…..
#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।