#পর্ব৬
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
–“আদিল এর বলা নির্মম কথাগুলো শুনে রোজার দু-চোখ দিয়ে অশ্রুপাত ঘটলো আপনা -আপনি। এ যেনো তার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে। বুকের ভিতর টা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে! যতই হোক একসাথে কতোগুলো বছর সংসার করেছে তারা দু’জনে। রোজার বাচ্ছার বাবা আদিল। কতোইনা ভালো ভালো সৃত্বি রয়েছে আদিল এর সাথে । সে সবকিছুই একসাথে এখন তার মনে পড়ছে! কিন্তু সে যার জন্য কষ্ট পাচ্ছে, সেটা শুধু এখন বৃথা কারন আদিল এখন রিনিতে মেতে রয়েছে। তবে সেও যদি কোনোভাবে রিনির কাছ থেকে প্রতারিত হয় তাহলে বুঝবে পারবে যে রোজার কতোটুকু যন্ত্রনা হয়েছে! সে রিনির ভালোবাসায় এতোই অন্ধ হয়ে গেছে যে রোজাকে ডির্বোস দিতেও পিছপা হয়নি! পরিশেষে দু-হাত দাড়া দু’চোখের পানি গুলো মুছে ফেলে, সে চললো আদিল এর রুমে তাদের খাবার জন্য ডাকতে “।
” আদিল খেতে এসো মা ডাকছে তোমাদের। রিনিকে নিয়ে খেতে আসো “।
আদিলঃ উফঃ রোজা দিন দিন কি হচ্ছে তোমার? কারো রুমে এলে নক করে ঢুকতে হয় জানো না তুমি? এভাবে হুট করে কখনো রুমে ঢুকবে না দিত্বীয় বার। যখনি ঢুকবে নক করে ঢুকবে এর আগে নয়। মনে রেখো কথাটা।
–” আদিল এর কথা শুনে রোজা আর কিছুই বললো না। সে চলে গেলো নিঃশব্দে ডাইনিং টেবিলে সবাই খাবার পরিবেশন করার জন্য। এ রাতটুকুনিই তারপরে সে চলে যাবে সবার থেকে। আদিল আর রিনিকে তার জন্য আর বিরক্ত হতে হবে না। সাধারণত রুমে ঢোকা নিয়ে ও আমাকে এতোগুলো কথা শোনাতে আটকালো আদিল এর! রিনি দু’দিন এ বাড়িতে আসতে না আসতেই এতো পরিবর্তন! হয়তো এখানে থাকলে সামনে আরো ভয়ংকর পরিস্থিতি আসবে এর চেয়ে চলে যাওয়াই শ্রেয়”।
–“সবার খাওয়া দাওয়া শেষে, নিজের মেয়েগুলোকে খাইয়ে দিয়ে সবকিছু গুছানো শেষ করে রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়াচ্ছিলো রোজা তখনি শিলা ওর হাতে ধরে হ্যাচকা টান মেরে সিঁড়ির আড়ালে নিয়ে আসলো।রোজা প্রশ্ন করার আগেই শিলা বলতে লাগলো”।
–“ভাবী আমি জানি যে কাল সকাল হতেই তুমি চলে যাবে। তাই এখনি আমার কথা মন দিয়ে শুনো। এই কাগজটাতে একটা ফোন নম্বর রয়েছে আর একটা বাড়ির ঠিকানা দেওয়া আছে তুমি সিএনজি ধরে সকালবেলা এই ঠিকানায় চলে যাবে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে এই নাম্বারে ফোন করে বলবে বুঝেছো “?
রোজাঃ না আমি তোমার কোনো কথাই বুঝিনি শিলা! কার বাড়ি? কার ফোন নম্বর? খোলসা করে বলো এতো তাড়াহুড়ো না করে।
–“ভাবী তুমি আমার বান্ধবী সৃষ্টিকে তো চিনোই ও ছোটোবেলা থেকেই তো আমাদের বাড়িতে আমার সাথে প্রায়ই আসতো। তোমার সাথে ও তো গল্প করতো, তোমার সাথে ভালোই মিশে যেতো ও। ওর তো মা ছাড়া কেউই নেই ওর বড়ো ভাই বাহিরে জব করে ডে কারনে বাড়িতে আসতে পারে না। তাই শুধু সৃষ্টিদের বাড়িতে সৃষ্টি আর ওর মা থাকে। আমি চাচ্ছি তুমি ক’দিন সৃষ্টিদের বাড়িতে গিয়ে থাকো, মানে যতোদিন না পর্যন্ত কোনো ভালো বাসা খুঁজে পাচ্ছো ততদিন তো তোমাকে ওয়েট করতে হবে। আর আলো, মিষ্টি ওদের নিয়ে কি তুমি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে নাকি? এর চেয়ে ভালো ক’দিন সৃষ্টিদের বাড়িতে থেকো বাসা হলে চলে যেও “।
–“বাচ্চা মেয়েটাও হুট করে বড়ো হয়ে গিয়েছে যেনো, তার ভাবীকে নিয়ে কতো ভাবছে! এটাই হয়তো ভাবীর প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা। রোজা অবাক না হয়ে পারছে না যেখানে তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটিই ছেড়ে চলে গেছে, সেখানে এই মেয়েটিই তাকে আগলে রাখছে! কোনো অসুবিধা যাতে না হয় সেটাও খেয়াল রাখছে। ভাবতেই অসংখ্য শ্রদ্ধা এসে উকি দিচ্ছে শিলার জন্য। দু-চোখ থেকে অশ্রুপাত হচ্ছে, তবে এটা যেনো শিলার মতো বোন প্রাপ্তির সুখের কান্না “।
রোজাঃধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোটো করবো না। তবে তুমি আমার যা করেছে সেটা হয়তো অন্য কেউ হলে করতো না। তোমার এতো এতো উপকার আমি কোনোদিন ও ভুলবো না। আল্লাহ তোমার সবসময় ভালো করুক। ভালো করে থেকো, আর পরিবারের সকলের খেয়ালতো তোমাকেই রাখতে হবে আমার অবর্তমানে তাই না? সবটা মন দিয়ে করো। নিশ্চয়ই তুমি জিবনে অনেক বড়ো হবে।
–“ভাবি তুমি ও ভালো থেকো নিজের যত্ন নিও। আর হ্যাঁ আমাকে ফোন করতে কিন্তু ভুলবে না? তোমাকে যে ঠিকানা দিয়েছি ওখানে যাবে ওখান থেকেই সৃষ্টি তোমাকে ওদের বাড়ি নিয়ে যাবে”।
রোজাঃ তোমাকে ফোন করার কথা সেটা আমাকে আর বলে দিতে হবে না তোমার! তুমি এতো চিন্তা করো না আমি ঠিকভাবে পৌঁছে যাবো সৃষ্টিদের বাসায়। এবার তুমি ঘুমুতে যাও তো।
–“শিলার কাছ থেকে বিদায় দিয়ে রুমে যাবে রোজা। এ রাত টুকু শেষ এবাড়িতে তার কাটানো। কিন্তু এর আগে তো তাকে পুরনো সব বন্ধন থেকে মুক্ত হতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে এর কোনো পিছুটান না থাকে। সেই মোতাবেক সে চললো আদিল রুমে আদিল এর তৈরী করা ডির্বোস পেপারে সই করতে, শুধুমাএ একটা সই করে আদিলকে মুক্তি দিয়ে দিবে সারা জীবনের জন্য যাতে সে রিনির সাথেই বাকি জিবন কাটাতে পারে। আর রোজার জিবনে যাতে আদিল এর কালো ছায়া আর না পড়ে “।
–” আস্তে করে রমের দরজাটা খুলে রুমে প্রবেশ করলো রোজা। আদিল এর বুকে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে রিনি আবছা আলো সেটা বুঝতে কষ্ট হলো না রোজার! যেখানে রোজা থাকতো ঠিক সেখানেই রয়েছে রিনি। কি সুন্দর করে রোজার তৈরী করা জায়গাটুকু সে এসে এক নিমিষেই দখল করে বসে আছে। কষ্ট হলেও রোজা আর সেসব পাওা দিলো না। সে ড্রয়ার থেকে ডির্বোস পেপার বের করে সেখানে সই করে পেপার রেখে চলে গেলো। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! একটা মাএ কাগজে সই করার কারনে আজ থেকে আদিল নামক মানুষটার কোনো অস্ত্বিত্বই রইলো না আর রোজার জিবনে। ডির্বোস নামক শব্দটি তাদের দু’জন কে আলাদা করে দিয়েছে।অবশ্য মনের দিক দিয়ে তো কবেই তাদের ডির্বোস হয়ে গেছে! এখন শুধু কাগজে কলমে হলো। আদিল নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে ডির্বোস পেপারে সই করা দেখে। কিন্তু মেয়েদের জন্য কি তার কোনো কষ্ট হবে? হয়তো না! কারন এ দু’দিন বলতে গেলে আদিল ভুলেই গেছে যে তারও দুটো মেয়ে আছে! রোজা চলে যাচ্ছে সারাজিবনের জন্য আদিল কাছ থেকে দূরে সরে। সাথে একটি চিঠিও রেখে গেলো আদিল এর জন্য”।
–“সকালবেলা মেয়েদের কে হালকা পাতলা কিছু খাইয়ে বেরিয়ে পড়ছে রোজা তার এতোবছরের বাড়ি ছেড়ে। আলো আর মিষ্টি প্রশ্ন করাতেই রোজা উওর দিলো সে তাদের নিয়ে নতুন জায়গায় যাবে। মেয়েদুটোও মায়ের কথা বুঝে সাথে চলতে লাগলো। প্রথমে সিএনজিতে ওঠলো শিলার দেওয়া ঠিকানা দেখিয়ে ড্রাইভারকে। ঢাকায় থাকলেও প্রয়জোন ব্যতীত কখনো বাহিরে আসা হয়নি রোজার। আর যতোবারই এসেছে আদিল বা তার শাশুড়ির সাথে। বলতে গেলে এখনো অনেককিছু অচেনা আছে এই মস্ত বড়ো শহরটার। সিএনজি চলছে রোজা আর তার মেয়েরাও গাড়িতে বসে আছে। হঠাৎই দেখলো সে ড্রাইভার কেমন একটা শুনশান রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে! যেটা জনমানবশূন্য রাস্তা বললেই হয়। রোজা বিপদ বুঝতে পেরে ড্রাইভার কে বললো গাড়ি থামাতে কিন্তু রোজার কথা সে শুনলো না। তৎক্ষনাৎ গাড়িতে জোরে গান চালিয়ে দেয় যাতে চিৎকার করলেও কেউ শুনতে না পারে। রোজা বুঝতে পারছে তার সামনে বড়ো সড়ো বিপদ অপেক্ষা করছে, সে বার বার গাড়ি থামাতে বলছে কিন্তু ড্রাইভারের যেনো সেটা কানেই যাচ্ছে না “।
–“রোজা সৃষ্টিকর্তা কে মন প্রান দিয়ে ডাকছে যেনো আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা পায় “।
হঠাৎই আলো আর মিষ্টি দুজনে মিলে ড্রাইভারের দু’পাশে বেশ জোড়ে সোড়ে দু’টো করে দু’জনে মিলে………
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।