অপূর্ণতা পর্ব-২৪+২৫

0
1278

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৪_২৫

নিলয় আর কিছু না বলে রেগে সেখান থেকে চলে গেল।পিছন থেকে অথৈ অনেক বার ডাকলো কিন্তু নিলয় একবারের জন্যও ফিরে তাকালো না। অথৈ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে নিলয়ের যাওয়ার দিকে। সে ফ্লোরে বসে পড়লো।ভালোবাসার মানুষের কাছে প্র্যাতাখ্যান হওয়া এতটা কষ্টের আর যন্ত্রণার তা আগে কখনো বুঝতে পারিনি।আসলে জীবনে কোন কিছু চাওয়ার আগেই তা নিজের হাতের কাছে পেয়েছি তাই কোন জিনিস চাওয়া পরেও না পাওয়ার কষ্ট কেমন হয় তা জানতাম না। কিন্তু আজ আমি এই কষ্টটা হারে হারে তের পাচ্ছি।আমার মা- বাবা পর্যন্ত কখনো আমার সাথে উঁচু গলায় কথা বলেনি আর এই নিলয়ের সাহস কি করে হয় আমাকে এইভাবে অপমান করার? আমার ভালোবাসাকে রিজেক্ট করার আর এই সব কিছুই হয়েছে শুধুমাত্র অদ্রিতার জন্য! আমি কাউকেই ছাড়বো না। এর ফল তাদের দুই জনকেই ভোগ করতে হবে। আমিও দেখবো আমার ভালোবাসাকে গ্রহন না করে নিলয় আর অদ্রিতা কি করে নিজেদের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেয়। আমি যখন নিলয়কে নিজের করে পাই নি এই অদ্রিতাও কখনো তাকে নিজের করে পাবে না।আমি ঠিক যতটুকু কষ্ট পয়েছি তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি কষ্ট তাদেরকে সহ্য করতে হবে।just wait and see,,,,,,,,,,,,,,

আজ অদ্রিতাকে এইভাবে কান্না করতে দেখে অথৈ এর অনেক ভালো লাগছে। সে তার অপমানের প্রতিশোধ নিতে পেরেছে, এইভেবে নিজের মনের ভিতর অসম্ভব শান্তি লাগছে তার। তবুও পরিপূর্ণ তৃপ্তি পাইনি সে, এখন শুধু অপেক্ষা নিলয়ের ফিরে আসার।নিজের ভালোবাসার মানুষের কাছে অপমানিত হওয়ার, নিজের ভালোবার মানুষের কাছে ঘৃণার মানুষ হয়ে থাকা কতটা কষ্টের আর যন্ত্রণার তা নিলয় এইবার হারে হারে তের পাবে।তখনি আমার প্রতিশোধ পূর্ণ হবে।এই ভেবে মুখে শয়তানি হাসি দিয়ে অদ্রিতাকে সেখানে রেখে অথৈ চলে যায়।

অদ্রিতা তখনো সেখানে বসে অঝোড়ে কান্না করতে থাকে। কেন জানি তার মন বলছে নিলয় তার সাথে এমনটা করতে পারে না কিন্তু চোখের দেখা কি করে ভুল হতে পারে? তাছাড়া অথৈই বা তাকে মিথ্যা কথা কেন বলবে? সে যতই এইসব ভাবছে তার বুকের ভিতরে জ্বলে – পুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবনে তো সে কম কষ্ট পায়নি।কালো হওয়ার জন্য তাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে, অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। ছোট বেলায় তার দাদা- দাদি যখন তার ভাই আর বোনের জন্য সুন্দর সুন্দর ড্রেস আনতো, তাদের নিয়ে ঘুরতে যেত, তখন সেও বায়না ধরতো তাকে সুন্দর ড্রেস কিনে দেওয়ার জন্য, তাকেও তাদের সাথে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তখন তারা বলতো সে নাকি অনেক কালো,তাকে এইসব ড্রেসে মানাবে না আর বাহিরে ঘুরতে নিয়ে গেলে মানুষ নাকি হাসাহাসি করবে তার থেকে ভালো বাড়িতে থাকা।তখন তার খুব খারাপ লাগতো কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এইসব কিছুই তার সয়ে গেছে।

কিন্তু আজ নিলয়ের দেওয়া কষ্টটা কিছুতেই ভুলতে পারছে না।যদি জানা থাকতো কাউকে ভালোবাসলে এতটা কষ্ট পেতে হয় তবে সে কখনো কাউকে ভালোই বাসতো না।জীবনে তার না পাওয়ার খাতায় আরেকটি নতুন জিনিস যোগ হলো।সে এখন কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তার মন চাইছে সে এতক্ষন যা দেখেছে যা শুনেছে তার সব কিছুই যেন কোন দুঃস্বপ হয় যাতে ভোরের আলো ফোঁটার সাথে সাথে সব কিছুই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু জীবন তো আর কোন সিনেমা না যে সে যা চাইবে তাই হবে। জীবনের প্রতেক ক্ষেএেই থাকে বাস্তবতা দিয়ে গেরা আর এই বাস্তবটা অনেক কঠিন আর যন্ত্রণাদায়ক।মানুষের জীবনে যেমন সুখ থাকে তেমনি দুঃখ ও থাকে কিন্তু সুখ যত তাড়াতাড়ি জীবন থেকে হারিয়ে যায় দুঃখ তত তাড়াতাড়ি হারিয়ে যায় না।আর মানুষের মন ভেঙে গেলে যে কষ্ট হয় তা শুধু সেই বুঝতে পারে যার মন ভেঙেছে।

এখন তার নিজেকে অনেক অসহায় বলে মনে হচ্ছে। আজ তার কি আর বা করার আছে শুধু কান্না করা ছাড়া।মনে মনে ভাবছে…..
সে কেন কান্না করছে?এমন এক মানুষের জন্য যার কাছে তার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই, তার জন্য যে তাকে ঠকিয়েছে, তার জন্য যে শুধু তার মন নিয়ে খেলেছে। এমন কারো জন্য কান্না করা, কষ্ট পাওয়া সত্যিই তার সাজে না।নিজেকে অনেক কষ্ট করে শান্ত করে সে বাসায় চলে যায়। সারাদিন কিছু খায়নি বাসায় গিয়েও কিছু না খেয়ে রুমে গিয়ে দরজা লক করে শুয়ে পরে তার মা তাকে অনেক ডাকাডাকি করার পরেও সে কিছু খায়নি।বিছানায় শুয়ে সে আবারও কান্না করতে থাকে।সে নিজেকে যতোই বুঝানো চেষ্টা করোক না কেন মনকে তো আর বুঝানো যায় না। একদিনে তো আর সবকিছু ভুলা যায় না, তার জন্য তো সময়ের প্রয়োজন।

অদ্রিতাকে এইভাবে গভীর ভাবনায় ধুবে থাকতে দেখে নিলয় একটু জোরেই বলে,,,

কি হয়েছে তোমার?এইভাবে কান্না কেন করছো? আমি তো তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তার উওর দেও?প্লিজ টেল মি… what did i do?
.
.
.
চলবে……..,

#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২৫

কি হয়েছে তোমার?এইভাবে কান্না কেন করছো? আমি তো তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছি তার উওর দেও? please tell me….what did i do?

নিলয়ের কথা শুনে অতীত থেকে বের হলাম।অনেক কষ্ট করে আমি নিজেকে সামলিয়েছি, সব কিছু ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করেছি। আমি চাই না অতীতে করা কোন ভুলের জন্য আমার বর্তমান আর ভবিষ্যতে কোনো পবলেম হউক।আমি আরিয়ানের বিবাহিত স্ত্রী আর আমি চাই না আরিয়ান আমাকে কোন কারণে ভুল বুঝক।ওনী এখন মানুক আর নাই মানুক আমি ওনার বিবাহিত স্ত্রী এবং আমার উপর এখন শুধু তারই অধিকার আছে অন্য কারো নয়।আমার বিশ্বাস আমার ভালোবাসা দিয়ে একদিন নিশ্চয়ই আমি ওনার মন জয় করে নিব।

অদ্রিতা গম্ভীর স্বরে বলে, “আমি আপনার কোনো প্রশ্নের দিতে বাধ্য নই।আপনি কে যে আপনাকে আমার জবাবদিহি করতে হব? Don’t cross your limit, আমি আপনার সাথে ভদ্রভাবে কথা বলছি কিন্তু তাই বলে আমার ভদ্রতাকে কোনো ভাবে আমার দূর্বলতা ভাবার ভুল করবেন না। তবে এর ফল অনেক খারাপ হবে।আপনি কি করছেন তা আপনি ভালো করেই জানেন। আমার মুখ থেকে তা শুনার কোন দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়ান,,, আমাকে এখন যেতে হবে আমার স্বামী আমার জন্য ওয়েট করছে,,,,,,,,,,

এই বলে অদ্রিতা নিলয়কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

নিলয়ও আর কোনো কথা বলেনি শুধু অদ্রিতার যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। অদ্রিতার ব্যবহারে আজ সে অনেক কষ্ট পেয়েছে। তার নিজের অজান্তেই তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সাধারণত শত কষ্ট হলেও ছেলেদের চোখ দিয়ে পানি পরে না তারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে কিন্তু আজ নিলয় নিজেকে কোনভাবেই সামলাতে পারছে না। কোনভাবেই অদ্রিতার করা অপমানগুলোকে ভুলতে পারছে না।সে তো এমন কোন বড় ভুল করেনি যার জন্য অদ্রিতা তাকে এইভাবে অপমান করলো। তার চরিত্র নিয়ে এইভাবে বাজে কথা বললো। এতদিন সে কোথায় ছিল? কি অবস্থার মধ্যে ছিল তা জানার কোন চেষ্টা করেনি?আজ তার অদ্রিতার উপর অনেক রাগ হচ্ছে।অদ্রিতা এতদিনে আমাকে এই চিনলো? এই বুঝলো সে আমাকে। সে কি করে ভাবতে পারলো আমি কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারি?
তুমি কোনো চিন্তা করো না। আমি কখনো তোমার আর আরিয়ানের মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি করবো না, আমি এততাও খারাপ না যততা খারাপ তুমি আমাকে ভাবো। আমি তোমার সামনে কোনদিনও আসবো না।
দূরে থেকেই তোমাকে ভালোবাসবো। কাউকে ভালোবাসার মানে এই নয় তাকে নিজের করে পেতেই হবে আমি চাই তুমি যেখানেই থাকো না কেন ভালো থাকো। তবেই আমি ভালো থাকবো।আমি চাই না তুমি আমাকে খারাপ ভাবো তাই আমার সম্পর্কে তোমার যা ভুল ধারণা আছে তা আমাকে ভাঙতেই হবে। তুমি তো আমাকে কিছু বলবে না আর সত্যি না জানা পর্যন্ত আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবো না।
নিজেকে নির্দোষ প্রমান করা না পর্যন্ত আমি আর তোমার সামনে আসবো না।ভালো থেকো তুমি,,,

নিলয় সেখানে আর একমুহূর্ত না দাঁড়িয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

অন্যদিকে আরিয়ানের অদ্রিতার জন্য টেনশন হচ্ছে। অনেকক্ষন তো হলো ওয়াশরুমে গেছে,এখনো কেন আসছে না?গিয়েকি একবার দেখবো।
আরিয়ান চেয়ার থেকে উঠে অদ্রিতাকে আনতে যাবে এমন সময়ই দেখে অদ্রিতা আসছে তাই আর না উঠে চেয়ারেই বসে থাকে…….

অদ্রিতা তার হাতের রুমাল দিয়ে চোখ- মুখ মুছে টেবিলে গিয়ে বসতেই আরিয়ান জিজ্ঞেস করে,,,,,

এতক্ষন লাগে সামান্য একটু বোরকা পরিস্কার করতে। সবার খাওয়া শেষ, সেই কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি। অনেক রাত তো হলো বাড়িতে যাবে না… নাকি,,,,এই রেস্টুরেন্টে থাকার কোনো ইচ্ছে আছে…..

অদ্রিতা আরিয়ানকে দেখেই বুঝে যায় সে রেগে আছে, কিন্তু কিছু বলতে পারছে না,না জানি বাড়িতে গিয়ে আবার কি করে।সে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,”হুমম, যাবো তো।সরি,, একটু লেট হয়ে গেছে।”

মাহিরা মজা করে বলে দুলাভাই দেখছি এখনি আমার আপুকে চোখে হারায়।একদিনই তো আমাদের সাথে আছে কাল থেকেই তো আপনার সাথে থাকবে। একদিন না হয় আমরা গল্প করেই কাটিয়ে দিবো। আপনার যদি কোন আপত্তি না থাকে ভাইয়া। ভাইয়াকে দেখে মনে হলো একটু রেগে আছে তাই একটু মজা করে বললাম।

মহিরার কথা শুনে আরিয়ান আর কিছু বললো না। হয়তো একটু লজ্জা পেয়েছে। তাই শুধু বললো…
আজ অনেক গল্প করেছি আবার অন্যদিন করবো।অনেক রাত হয়েছে এখন চলো যাওয়া যাক।এই বলে আরিয়ান গাড়িতে গিয়ে বসলো এবং তার পিছনে সবাই গিয়ে গাড়িতে বসলো।

প্রায় আধা ঘন্টা পরে তারা বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালো।
দরজায় নক করার সাথে সাথেই তার মা দরজা খুলে দিলো।

মা আরিয়ানাকে দেখে বললো,,,, যাও বাবা, গিয়ে ফ্রেস হয়ে রেস্ট নাও।

আরিয়ানঃ হুমম….. ( আর কিছু না বলে সোজা অদ্রিতার রুমে চলে গেল)

এতক্ষন তোরা কোথায় ছিলি সেই বিকালে বের হইছোট আর এখন রাত ১০ টা বাজে। সেই কখন থেকে তোদের জন্য অপেক্ষা করছি ফ্রেস হয়ে খেতে আয়।

মাহিরা কান্ত স্বরে বলে, “আমরা খেয়ে এসেছি আর এখন ঘুমাবো আমাকে আর ডাকবে না।এই বলে সে নিজের রুমে চলে যায় আর রোহিতও কিছু না বলে তার নিজের রুমে চলে যায়।”

অদ্রিতাঃ মা,,,,, তুমি আর বাবা খেয়ে নাও। আর আমরা কাল সকালেই চলে যাবো।আসলে ওনার অফিসে কোন দরকারি কাজ আছে তাই তার থাকতে পারবো না।

অদ্রিতার মা মন খারাপ করে বলে,”তাই বলে আর একদিনও থাকবি না।তুই তো থেকে যেতে পারস্। জামাইয়ের সাথে আমি কথা বলবো।”

তা হয় না। অন্য কোনো সময় না হয় আবার আসবো……….
.
.
.
চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে