অন্যরকম তুমি পর্ব-১০+১১+১২

0
1374

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা

“ও মা মা
আমি যাবো না মা।
প্লিজ আমাকে ওখানে পাঠিও না মা। ওনাদের ফোন করে বলো না আমি ওনার কাছে যেতে চাই না। আমি তোমাদের সাথে থাকতে চাই। প্লিজ মা বলো না।

ছোঁয়া মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে। নাজমা বেগমের চোখেও পানি। সিমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মা আর বোনের দিকে। কোলে এখনো পরি। পরম শান্তিতে ঘুমচ্ছে।

” এমন করে না সোনা। ওটা তোমার শশুড় বাড়ি। তোমাকে তো ওখানেই থাকবে হবে।

মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন তিনি।
ছোঁয়ার কান্নার গতি বেরে যায়।

“ওই বাড়িতে কেউ আমাকে ভালোবাসে না। শশুড় আর পরি ছাড়া ওখানে কেউ নেই আমার। সাদি তো সুযোগ পেলেই বকে দেয়। ঠাস ঠাস মেরে দেয়। দেখো এখনো গাল লাল হয়ে আছে। আমি কি করে থাকবো? আমাকে কেনো বিয়ে দিলে তোমরা?
আমি কি অতশত বুঝি না কি? একটু ভুল করলে কেউ সুধরে দেয় না। শুধু বকা দেয়।
কান্না করলেও ধমক দেয়।

বুকটা কেঁপে ওঠে সিমির। বোনটা তাহলে ভালো নেই। নাজমা বেগম কি বলে মেয়েকে শান্তনা দেবে বুঝে উঠতে পারছে না।

দরজা কাছে দাঁড়িয়ে শফিক রহমানও চোখের পানি মুছছে। মেয়ে এসেছে শুনে হাত ভর্তি বাজার নিয়ে দোকান বন্ধ করে চলে এসেছে। কিন্তু মেয়ের এমন হৃদয় কাঁপানো কথা শুনে ভেতরে প্রবেশ করার সাহস হয় না ওনার।

ছোঁয়া বুঝে গেছে মাও আর ওকে রাখতে চায় না। তাচ্ছিল্য হাসে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে নেয়।

” শুধু আজকের রাতটা থাকার পারমিশন নিয়ে দাও না। তোমাদের সাথে একটা রাত থাকি। তারপর না হয় কালকে চলে যাবো শাশুড়ীর ছেলের কাছে?

মায়ের হাত ধরে বলে ছোঁয়া। নাজমা বেগম নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে। মেয়ের মুখের দিকে তাকানোর সাহস নেই।

“বোন তোকে আজ আমি কোথাও যেতে দেবো না। আমি কথা বলবো তোর শাশুড়ীর সাথে।

সিমি বলে। ছোঁয়া খুশি হয়ে যায়।

” সত্যি বলবি?

“হুমম বলবো। তাছাড়া তোর শাশুড়ীকে কল করার কি দরকার। তোর ভাসুর আর ননদ তো আসছেই। ওনাদের বুঝিয়ে না হয় রেখে দেবো।

ছোঁয়া খুশিতে লাফিয়ে উঠে সিটির গলা জড়িয়ে ধরে। ছোঁয়ার চিৎকারে পরির ঘুম ভেঙে যায়।
শফিক রহমান লম্বা শ্বাস টানে।

” আমার ছোঁয়া মনি এসেছে বুঝি?

এক গাল হেসে বলেন উনি। ছোঁয়া এক দৌড়ে গিয়ে বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে ওড়ে।

পরি কেঁদে দেয়। ঘুম থেকে উঠার পর সিমির মুখ দেখেছে। সিমিকে চিনতে না পেরেই কেঁদে ওঠে।
সিমি হকচকিয়ে যায়। পরিকে সোজা করে কোলে নেয়।

“মা দুধ না আনতে বললাম তোমায়?

বাবাকে ছেড়ে রাগী গলায় বলে ছোঁয়া।

” এখুনি আনছি মা।

নাজমা বেগম হুরমুর করে চলে যায়। সিমি পরিকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। আমি পরি চুপ করে যায়। গলা জড়িয়ে ধরে সিমির। মাথা রাখে সিমির কাঁধে।

“বাবা এসো। তোমার নাতনি ও। কোলে নাও ওকে।আদর করে দাও।

বাবার হাত ধরে টেনে সিমির সামনে দাঁড় করায়। সিমির কোল থেকে পরিকে নিতে গেলে পরি যায় না। মুখ লুকায় সিমির বুকে। কেঁপে ওঠে সিমি।
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মনে পড়ে যায় অতীত। যেখানে নয়টা মাস বাচ্চার অস্তিত্ব অনুভব করেও তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারে নি। সে বেঁচে আছে কি না সেটাও জানা নেই।

আজকে এই বাচ্চাটা সিমির শূন্য বুক টাকে শীতল পরস দিলো। মনে করিয়ে দিলো জঘন্য স্মৃতি। যা এতোদিন কড়া পাওয়ারের ঘুমের ঔষধের সাথে বিলিন করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলো অসহায় সিমি।

” ওকে নিস না ছোঁয়া। থাক না আমার কাছে একটু। আমিও একটু অনুভব করি সুখ টাকে।

অনমনে বলে সিমি। শফিক রহমান মেয়ের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না

“ওকে নিলাম না। থাক তোমার কাছে। খায়িয়ে দিও ওকে। আমি আর বাবা গিয়ে শাশুড়ীর ছেলে মেয়েকে রিসিভ করে আসি।
নাহলে আবার শাশুড়ী ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে দেবে।

ছোঁয়া বাবাকে টেনে নিয়ে যায়। অনেক কথা জমে আছে বাবার সাথে।

ওরা যেতেই সিমি হু হু করে কেঁদে। পরির মুখে অজস্র চুমু খায়।

সিমির কান্না দেখে পরি চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে থাকে। পর চোখেও পানি টলমল করছে।

” খাবো

অস্ফুরণ কন্ঠে বলে পরি।
সিমি কান্নার মাঝে হেসে ফেলে। অন্য বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে বায়না করে। আর এই বাচ্চাটা নিজেই খেতে চাইছে।

চোখ মুছে পরিকে খাওয়াতে থাকে সিমি।

সাবিনা বেগম স্বয়ং এসেছে। এটা দেখে ছোঁয়ার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। এই মহিলা এসেছে মানে এখনি চলে যাও।
শফিক রহমান ভীষণ খুশি হয় ওনাদের দেখে।

সালাম দিয়ে ভেতরে নিয়ে আসে। ছোঁয়া গোমড়ামুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

“পরি কোথায়?

সিফাত চেয়ার টেনে বসতে বাসতে বলে।

” আমার বড় মেয়ের কাছে। খাওয়াচ্ছে ওকে।

শফিক রহমান একটু হেসে বলে।

“রান্না বান্না শেষ হয়েছে?

সাবিনা বেগম জিজ্ঞেস করে গম্ভীর মুখে। ওনার কথা শুনে শফিক রহমান একটু ভরকে যায়। তনু মায়ের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

” এতদিন পর মেয়ে এসেছে নিশ্চিয় ভালো ভালো রান্না করছেন। তো তাই জিজ্ঞেস করলাম রান্না শেষ হয়েছে না কি?
হলে তারাতাড়ি খেতে দিন। আমরা এখনি চলে যাবো।

শফিক রহমানের হাসি মুখটা চুপসে যায়। ছোঁয়া আসহায় দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়।

ছোঁয়ার কাকিমার কোনো সন্তান নেই। কাকা বিদেশ থাকে। দাদা বেঁচে নেই। দাদিমা বেঁচে আছে।
তিনজন মিলে অনেক পদ রান্না করেছে। সবাই খাচ্ছে। ছোঁয়া শুধু খাবার নারাচারা করছে।

সিমি স্পষ্ট বলে দিয়েছে ওনাদের সামনে আসবে না। পরি সিমির কাছেই আছে। সিফাতের কাছে নিয়ে এসেছিলো ছোঁয়া কিন্তু থাকে নি।

খাওয়া শেষ হলে শাশুড়ী সবাইর কাছ থেকো বিদায় নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। ছোঁয়াকে পাঁচ মিনিট সময় দিয়ে যায়।
ছোঁয়া বাবা মা কারো সাথে কথা বলে না। সিমির সাথেও কথা বলে না। পরি সিমির কোল থেকে যাবে না। ছোঁয়া টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে যায়। সিমির গাল বেয়ে দুফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। বুকটা আবারও ফাঁকা হয়ে যায়।

তনু ছোঁয়ার বাবা মায়ের কাছে হ্মমা চায় ছোঁয়াকে এভাবে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর কথা দিয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি নিয়ে আসবে ওকে।

ছোঁয়া জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। পরি কেঁদেই যাচ্ছে। সিফাত ওর কান্না থামাতে পারছে না।

সিমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো বড় গাড়িটার দিকে। পরির কান্নার আওয়াজ সিমির কানে বারি খাচ্ছে।

মুহুতেই শো শো করে গাড়িটা চলে যায়। নাজমা বেগম শব্দ করে কেঁদে ওঠে। সিমি ফ্লোরে বসে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে।
পরির জন্য কাঁদছে নাকি ছোঁয়ার জন্য কাঁদছে জানা নেই ওর।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১১
#তানিশা সুলতানা

বারো তালার বিল্ডিং এর দশ তালার ১১২ নং রুমের সামনে ঘাপটি মেরে বসে আছে ছোঁয়া। সিফাত কোমরে হাত দিয়ে কপাল কুঁচকে অনবরত কল করে যাচ্ছে সাদিকে। কিন্তু বেচারি কলটা রিসিভও করছে না। তনু পরিকে কোলে করে বসে আছে। চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি। ইচ্ছে করছে সাদির মাথা ফাটাতে। পরি এখনো ফ্যাচফ্যাচ করে কেঁদেই যাচ্ছে। তাতে সিফাতের বিরক্তি আরও বেরে গেছে। কে সেই মেয়ে যাকে এক পলক দেখেই পরি তার মায়ায় পড়ে গেছে? মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগছে সিফাতের।
কোনো দিন তো সিফাত ছাড়া আর কারো কাছে যাওয়ার জন্য বায়না ধরে নি মেয়েটা। তাহলে আজ কি হলো? কি এমন দেখলো ওই মেয়েটার মধ্যে?
ভেবে পায় না সিফাত।
তনু বিরক্ত হয়ে এখন আর পরির কান্না থামানোর চেষ্টা করছে না। কাঁদুক যতখন খুশি।
ছোঁয়ার ভীষণ খারাপ লাগছে। কি এমন হলো আজকের রাতটা থেকে আসলে? মহা ভারত অসুদ্ধ হয়ে যেতো? না কি শাশুড়ীর মাথায় বাজ পড়তো?

“মাম্মা আমার কাছে এসো তো।

ছোঁয়া হাত বারিয়ে দেয়। পরি চলে আসে ছোঁয়ার কোলে। ছোঁয়া ফোন বের করে। শাশুড়ী আসার সময় দামি একটা ফোন দিয়েছে। গাড়িতে বসে সিফাত ইমু ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম সব ইনস্টল করে দিয়েছে ছোঁয়াকে।

ছোঁয়া ভিডিও কল করে সিমিকে।

” এই তো মাম্মা কল করে দিয়েছি। তুমি এবার কথা বলবে। একদম কান্না কাটি করবে না। তাহলে কিন্তু আন্টি কথা বলবে না কেমন?

ছোঁয়া মিষ্টি করে হেসে বলে। পুরি এক গাল হেসে ছোট ছোট হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে নেয়।
রিং হওয়ার সাথে সাথে সিমি কল রিসিভ করে। যেনো এই কলেরই অপেক্ষায় ছিলো।

কল রিসিভ করতেই পরির হাসি মুখটা ভেসে ওঠে। প্রাণ ঠান্ডা হয়ে যায় সিমির। নিজেও আলতো হাসে।

“আপি কি জাদু করেছো তুমি আমাকে মেয়েকে? তোমার জন্য কান্নাকাটি করছে।

ছোঁয়া হেসে বলে। ছোঁয়ার কথা শুনে সিমিও হেসে ফেলে। সিমির হাসির শব্দটা সিফাতের কানে যায়। মোচর দিয়ে ওঠে বুকের ভেতর। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। এই হাসির শব্দটা যে খুব চেনা লাগছে৷ কিন্তু এটা কি করে সম্ভব?

চোখ বন্ধ করে জোরে শ্বাস নেয় সিফাত। মনের ভুল ভেবে পাত্তা দেয় না।

” আমি রিসেশনের গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসি।

বলেই সিফাত চলে যায়। সিমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে। সে ওখানে কি করছে? এতটুকু বুঝতে দেরি হয় না সিটির এটাই সিফাত।
কন্ঠ শুনেই চিনে গেছে। মনের ভুল না এটা। এটাই সিফাত।

জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে সিমি।

“কে কথা বললো রে?

সিমি জিজ্ঞেস করে।

” আমার ভাসুর। পরির বাবা।

বলে ছোঁয়া। বুকটা ধক করে ওঠে সিমির। পরি সিফাতের মেয়ে। তার মানে বিয়েও হয়ে গেছে।
তাচ্ছিল্য হাসে সিমি।

“পরি আমি বিয়ে করছি। আজকেই দেখতে আসবে। ঠিক হয়ে গেলে চলে আসবি তুই। আর হ্যাঁ পুরো পরিবার নিয়ে এক সপ্তাহ আগেই চলে আসবি কেমন?

পরি সোনা এখন রাখি পরে কথা বলবো। সাজুগুজু করতে হবে তো আমায়।

মিষ্টি করে হেসে বলে সিমি।
ছোঁয়া চোখ ছোটছোট করে তাকায়। বিয়ে করবে?

খট করে কলেজ কেটে দেয় সিমি। ছোঁয়া এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। এটা কি বললো আপু?

ছোঁয়ার ভাবনার মাঝেই সাদি চলে আসে।
বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়া সাদির দিকে। সাদা শার্টটা ঘেমে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। হাতে অফিস ব্যাগ। কলারে লাল কিছু একটা লেগে আছে।

” ভাইয়া তুই কি রে? কখন থেকে বসে আছি। এতোটা কেয়ারলেস কেনো তুই?

তনু বিরক্তি নিয়ে বলে।

“আসবি বলিস নি তো।

সাদি ছোট করে উওর দিয়ে দরজা খুলে। ফিঙ্গার পিন দিয়ে দরজা কল করা ছিলো।
পরি খুশি হয়ে সাদির কোলে উঠার জন্য দুই হাত এগিয়ে দেয়।

” মা গায়ে ময়লা। ফ্রেশ হয়ে আসি।

বলেই চলে যায়। পরির হাসি মুখটা কালো হয়ে যায়। ছোঁয়া সাদির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে পরিকে কেলো তুলে নেয়।
তনু লাগেজ নিয়ে গটগট করে ভেতরে চলে যায়।
ছোঁয়া ভেতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে সিফাত ডাকে।

“ছোঁয়া শোনো

ছোঁয়া দাঁড়িয়ে যায়।

” কিছু বলবেন ভাইয়া?

“তখন কার সাথে কথা বলছিলে?

সিফাত আমতা আমতা করে বলে।

” আমার আপির সাথে। নাম সামান্তা সিমি। আপনি চিনবেন না। বিয়েতে ছিলো না।

বলেই ছোঁয়া চলে যায়। সিফাত রোবটের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। চোখ দুটো টলমল কারছে। কন্ঠ নালি কাঁপছে। চার বছর পর নামটা শুনলো। দীর্ঘ তিন বছর যাকে পাগলের মতো খুঁজে গেছে তাকেই খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু মনের মধ্যে কোথাও একটা খচখচ করছে।
ভয় করছে।

ছোঁয়া গালেজ নিয়ে সাদির রুমে চলে আসে।
আন্দাজ করেছে এটাই সদির রুম হবে। চারটা রুমে এই ফ্লাইটে। একটা কিচেন আর একটা ড্রয়িং রুম আছে।

রুমে ঢুকেই শিওর হয়ে যায় এটাই সাদির রুম। ইচ্ছে করে আসে নি ছোঁয়। একটা রুমে তনু গেছে অন্য রুমে সিফাত। তাহলে ছোঁয়াকে সাদির রুমেই আসতে হবে।
তনু কারো সাথে রুম শেয়ার করে না।

সাদি তোয়ালে দিয়ে চুল মুছছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
ছোঁয়া সাদির দিকে এক পলক তাকিয়ে লাগে খুলে জামাকাপড় বের করতে থাকে।

“কেনো এলো?

সাদি আয়নার মধ্যে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে বলে।

” আপনার শার্টে রক্ত কেনো ছিলো?

ছোঁয়া নিজের কাজে মনোযোগ দিয়ে বলে
সাদি চোখ ছোটছোট করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

“তোমাকে বলার প্রয়োজন মনে করি না।

চোয়াল শক্ত করে বলে সাদি।
ছোঁয় মুচকি হাসে। জামাকাপড় নিয়ে সাদির পেছনে দাঁড়ায়। সাদি পেছন ফিরে ছোঁয়ার দিকে তাকায়।

” দজ্জাল শাশুড়ী জোর করে পাঠিয়েছে। আমার রুচি এতোটাও নরমাল না যে একটা করলার জুসের কাছে ইচ্ছে করে আসবো।

ভেংচি কেটে বলে ছোঁয়া।

“ইডিয়েট
সাদি বিরবির করে বলে।

” সাদা বিলাই

“তোমাকে তো আমি
সাদি দাঁত কটমট করে ছোঁয়ার দিকে আসতে নিলেই ছোঁয়া এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।

” বজ্জাত বর, হনুমান, রাহ্মস, করলার জুস, গোমড়ামুখো

ছোঁয়া দরজা বন্ধ করে চিল্লায়ে বলছে।

সাদি দাঁতে দাঁত চেপে এগিয়ে যায় ওয়াশরুমের দরজার কাছে।

“একবার বেরিয়ে এসো। ছাঁদ থেকে যদি ফেলে না দিয়েছি না তাহলে আমার নাম সাদমান

সাদির বলা শেষ হওয়ার আগেই ছোঁয়া বলে

” তাহলে আপনার নাম সাদা বিলাই।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১২
#তানিশা সুলতানা

কোমরে হাত দিয়ে ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদি। ছোঁয়া বের হবে ঠাস ঠাস দুই গালে দুইটা চর মারবে দেন এখান থেকে নরবে। বড্ড সাহস বেরে গেছে পুঁচকে মেয়েটার। সাহস কতবড় সাদিকে সাদা বিলাই বলে ডাকে। আজকে দেখাবে সাদা বিলাই কেমন হয়।

আধ ঘন্টা হয়ে গেলো এখনো বের হচ্ছে না। ওয়াশরুমেই কি থাকার ব্যবস্থা করেছে না কি?

সাদি এবার বিরক্ত হয়ে পায়চারি করতে থাকে। দরজা ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

“ভাইয়া তুই ওইখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

তনু রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে। তনুকে দেখে সাদি একটু হকচকিয়ে যায়। একটু নরেচরে দাঁড়ায়।

” আমি কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবো সেটাও তোকে বলতে হবে?

কর্কশ গলায় বলে সাদি।

“সেটা কখন বললাম?
এনিওয়ে খাবো কি? খাবার মতো কিছুই দেখছি না কয়েকটা করলা ছাড়া।

বিরক্ত হয়ে বলে তনু।

” কিছু নেই।
সোজাসাপ্টা বলে দেয় সাদি।

“তো বাজারে যা। খাবার নিয়ে আয়। খাবো তো। আমি খিধে সয্য করতে পারি না।

” পারবো না আমি। তোদের আসতে কে বলেছে?

বিছানায় বসে বলে সাদি।

“যা না ভাইয়া। মরেই যাবো এবার আমি।

কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে তনু।

” শান্তিতে একটু থাকতে দিবি না আমায়। ডিসগ্রাসটিং

ড্রেসিং টেবিলের ওপর থেকে ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায় সাদি। তনু মুচকি হেসে নিজের রুমে চলে যায়।

ছোঁয়া দরজায় কান লাগিয়ে শুনছিলো। সাদির চলে যাওয়ার শব্দে হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।
“যাক বাবা এযাএায় বেঁচে গেছি।

সিফাত পরির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। কি করবে বুঝতে পারছে না। যে অন্যায় সিমির সাথে করেছে তারপর আর ওর সামনে যাওয়ার মুখ নেই সিফাতের। আর সিমির আত্নসম্মান প্রখর। ও কিছুতেই সবটা ঠিক করবে না। বরং যদি জানতে পারে পরি ওর মেয়ে তাহলে যে করেই হোক পরিকে নিজের কাছে নিয়ে যাবে।

এটা ভাবতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পরিকে। মুখটা ভয়ে চুপসে গেছে। কিছুতেই পরিকে ছাড়া বাঁচতে পারবে না
পরিকে হারাতে পারবে না। কিন্তু কি করবে এখন?
সিমির খোঁজ পেয়েও লুকিয়ে থাকবে? না কি সিমির পা জড়িয়ে হ্মমা চাইবে? আরও একটা সুযোগ চাইবে?

চোখ দুটো টলটল করে ওঠে সিফাতের। জীবনটা এতো জটিল কেনো? কেনো আল্লাহ সুখ দিয়ে আবার ছিনিয়ে নেয়? কেনো মানুষকে এতো পরিহ্মার মধ্যে ফেলে?

” বাবা

পরি সিফাতের দুই গালে হাত দিয়ে আদুরী গলায় বলে।

“হ্যাঁ সোনা বল।

সিফাত একটু হাসার চেষ্টা করে বলে।

” মাম্মার কাছে যাবো।
অধো অধো গলায় বলে।

সিফাত ছেড়ে দেয় পরিকে। এক গাল হাসে পরি।

“লাভ ইউ বাবা

বলেই এক দৌড়ে চলে যায়। সিফাত মুচকি হাসে। এই মেয়েটাই ওর একমাত্র অবলম্বন। ভালোবাসা ধরে রাখতে পারে নি। তবে মেয়েটাকে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে প্রাণপণ দিয়ে।

ছোঁয়া সাদির রুমটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। নতুন নিয়েছে রুমটা। তবুও গোছালো। কয়েকঘন্টায় নিজের মতো করে গুছিয়ে নিয়েছে। মুখ বাঁ কায় ছোঁয়া।

” এই মেয়ে

সাদি ডাকে চমকে ওঠে ছোঁয়া। পেছনে তাকায় না।

“তোমার সাথে কথা আছে আমার।

সাদি বিছানায় বসে বলে। ছোঁয়া বুক ভরে শ্বাস টানে।

” আগে আমি কিছু বলবো।

সাদির পাশে গিয়ে বসে পড়ে। লম্বা শ্বাস টেনে বলতে শুরু করে।

“দেখুন আমি সাইন্সের স্টুডেন্ট। প্রচুর পড়ালেখা করতে হবে আমাকে। অনেক বড় স্বপ্ন আমার। মস্ত বড় ডাক্তার হবো। বাবার ঘাম ঝড়ানো টাকায় পড়ালেখা করে আসছি। বরাবরই খুব ভালো স্টুডেন্ট আমি।

বিয়ে হয়েছে সাত দিন হয়ে গেলো। এই সাত দিয়ে এক ঘন্টাও পড়তে পারি নি। শাশুড়ীর টর্চার। আপনার ধমক সব মিলিয়ে আমার ক্যারিয়ারের ভীষণ হ্মতি হচ্ছে।
আপনার মা বলেছে স্বামীকে ধরে রাখতে পারলে পড়ালেখা পরেও করা যাবে।
তাই আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে।
এবার আমি কি করবো বলেন? একটা সাজেশন দিন আমায়। এভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে আমি ক্লান্ত।

সাদির দিকে তাকিয়ে বলে ছোঁয়া।

” তো বিয়ে করাটা আগে ক্যারিয়ারের কথা মনে ছিলো না?

সাদি কপাল কুচকে বলে।
ছোঁয়া দাঁতে দাঁত চেপে ধরে।

“আমার সাজেশন একটাই। বাড়ি চলে যাও। আর বলে দাও সম্পর্কটা তুমি রাখতে পারবে না।

সাদি এরকম সাজেশন শুনে ছোঁয়া তাচ্ছিল্য হাসে।

” এই যে মিস্টার আপনার ওপর আমার কোনো ইন্টারেস্ট নাই। মন তো একটাই। আর সেটা অনেক আগেই নেইমারকে দিয়ে ফেলেছি।
এবার বিরপুরুষের মতো নিজে গিয়ে কথা গুলো বলবেন আপনার বাবা মাকে।

মুখ বাঁকিয়ে বলে ছোঁয়া।

“পবলেম তোমার তো তুমি বলবে।
আমার তো কেনো পবলেম নেই।

ছোঁয়ার এবার কান্না পাচ্ছে। এতো ত্যাড়া কেনো লোকটা? আস্ত একটা বদমাইশ। ইচ্ছে করছে এক ঘুসিতে নাকটা ফাটিয়ে দিতে। কিন্তু সেটা করলে তো নিজের নাকটাও থাকবে না।

উঠে যায় সাদি। ছোঁয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ভীষণ কান্না পাচ্ছে।

” এখানে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে দেবো।

দরজার কাছে গিয়ে আবার পেছন ঘুরে বলে সাদি। ছোঁয়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে। অতোটাও খারাপ না লোকটা। একটু একটু ভালো।

বিরিয়ানি এনেছে সাদি। তনু তো খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। ও ভেবেছিলো করলা ভাজি না নিয়ে আসে।
প্লেটে প্লেটে বিরিয়ানি সার্ভ করে ছোঁয়া আর সিফাতকে ডাকে তনু।

শাশুড়ী লাগেজ গুছিয়েছে। সেখানে শুধু শাড়ি আর শাড়ি। আর প্রত্যেকটা শাড়ির ওপর চিরকুট দিয়ে লেখা কখন কোন শাড়িটা পড়বে। এটা দেখে ছোঁয়া হেসে ফেলে।

তনু আর ছোঁয়া আয়েশ করে খাচ্ছে। ছোঁয়া পরিকে খাওয়াচ্ছে আর নিজে খাচ্ছে। সিফাত খাবার নরাচরা করছে। গলা দিয়ে খাবার নামছে না।

সাদি করলা ভর্তা দিয়ে সাদা ভাত খাচ্ছে। বিরিয়ানি খায় না সাদি।

“ভাইয়া খাচ্ছেন না কেনো?

ছোঁয়া জিজ্ঞেস করে সিফাতকে।
সিফাত চমকে ওঠে।

” খাচ্ছি তো।
মেকি হেসে বলে। তনু ছোটছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে সিফাতের দিকে। বিরিয়ানি হলে যে একটাই পুরোটা সাবার করে দেয়। সেই ছেলেটা এখন খেতে বসে ঝিমাচ্ছে। নিশ্চয় কিছু হয়েছে।

খাওয়ার মাঝেই ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। স্কিনে আপি নামটা লেখা। ভিডিও কল করেছে। ছোঁয়া মুচকি হেসে কলটা রিসিভ করে।

“ছোঁয়া আমি বিয়ে করছি।

চিল্লিয়ে বলে ওঠে সিমি। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায়। সিফাতের খাবার গলায় আটকে যায়। সাদি আড় চোখে তাকিয়ে আছে।

” কেনো বিয়ে করছো?

ছোঁয়া বোকার মতো প্রশ্ন করে বসে।

“ইডিয়েট একটা
সাদি বিরবির করে বলে।

” মন চাইছে বিয়ে করতে। সামনে সপ্তাহেই কিন্তু বিয়ে। তুই কিন্তু কয়েকদিন আগেই আসবি।

সিমির ঠোঁটের কোনায় ঝুলে আছে এক চিমটি হাসি।
সিফাতের অবস্থা খুব বাজে। চোখ মুখ দেখলে যে কেউ বলে দেবে এখনই ও কেঁদে ফেলবে।

“রাখছি হ্যাঁ। হিমু এখনে যায় নি। ওকে একটু সময় দিতে হবে।

বলেই খট করে ফোন কেটে দেয় সিমি। ছোঁয়া বোকার মতো তাকিয়ে আছে। হলোটা কি?

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে