#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা- শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-৮
গেটটা খোলার সাথে সাথে এক ঝলক আলোক রশ্নি এসে আলোর মুখে থুবরে পড়ল। সে সাথে হালকা মৃদু মন্দ বাতাস গায়ে এসে লেপ্টে গেল। আলোর মধ্যে একটা শীতলতার অনুভূতি কাজ করছে। ভেতরটা প্রশান্ত লাগছে। ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখল পুরো ছাদটায় সবজি,ফুলের বাগান দিয়ে সাজানো। হুট করে বন্দি জীবন থেকে এমন মনোরম পরিবেশ দেখে নিজেকে সামলাতে না পেরে দৌঁড়ে গেল ছাদের দিকে। আলোর এমন ছটফট স্বভাব দেখে তানভীরের কেমন জানি সন্দেহ হয়। মাঝে মাঝে আলোকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে করে। তার মনে হয় মেয়েটা হুট করে পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়েছে। তবে এ মুহূর্তে আলোর মুখের এক চিলতে হাসির কাছে সবকিছু ফিকে হয়ে গেছে। আলোকে যে সে কিছু বলবে সেটার উপায়ও নেই। আলোকে যতই দেখছে ততই কেন জানি না তানভীরের মনে ভালোলাগার একটা সুক্ষ্ম রেখা জাগছে। আলো ছাদের কার্নিশ ঘেসে দাঁড়িয়ে নিজের মুখটা সূর্যের দিকে তাক করে আছে৷ কতদিন রোদ পোহানো হয় না। এ রোদের সুমিষ্ট তাপ আলোর মরীচিকা ধরা শরীরটা যেন সতেজ করছে। পেছন থেকে তখন তানভীর এসে আলোর কানে বলল
– পাগলা গারদে কী রোদ পোহাতে পারেন নি?
কথাটা আলোর কানে যেতেই আলো চট করেই তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল
– এরকম টা বললেন কেন?
– কারণ আপনার কাজকর্ম দেখে মনে হয় পাগলা গারদ থেকে পালিয়ে এসেছেন। কারও মাথা টাথা ফটিয়ে পালিয়েছেন না তো আবার?
তানভীরের এমন কথা শুনতেই আলোর বুকটা ধুক করে উঠল। ভাবতে লাগল তানভীর কী, সব জেনে গিয়েছে। নাহয় ঐ লোকটার মাথা ফাটিয়ে এসেছে তানভীর জানলো কী করে। হাস্যজ্জ্বল মুখটা ক্রমশেই মলিন হয়ে গেল। অবচেতন মনে বলে উঠল
– আপনি জানলেন কী করে?
আলোর এমন জবাবে তানভীরও চমকে গেল।তাহলে কী আলো সত্যিই কারও মাথা ফাটিয়ে এসেছে? তানভীর এবার নড়ে চড়ে দাঁড়াল। কিছুটা জোর গলায় বলল
– তার মানে কী সত্যিই এ কাজ করেছেন?
তানভীরের অনিশ্চয়তা মাখা প্রশ্ন শুনে আলো বুঝতে পারল যে, সে আন্দাজে ঢিল মেরেছে।আলোও এবার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বলল
– আপনাকে একটু বাজিয়ে দেখছিলাম আর কী।কতটা বোকা আপনি। যা বলি তাই বিশ্বাস করে ফেলেন। মাথা ফাটানো কী এত সোজা? বললাম আর ফাটিয়ে আসলাম।আমি একটু চঞ্চল স্বভাবের। এর বাইরে কিছু না। আচ্ছা এবার বলুন জেল কেন খেটেছিলেন?
– সে এক লম্বা কাহিনি। আরেকদিন বলব।
– আজকেই বলুন না। জানার অনেক আগ্রহ জাগছে।
– পরে কোনোদিন বলা যাবে। আজকে বলব না।
– তাহলে আপনার ভাই কেন অভিমান করেছে সেটা বলুন।
– ভাইয়ার অভিমানের পেছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পারিবারিক বিষয় বলতে চাচ্ছি না।
– আমাকে বললে এমন কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারণ বিষয়গুলো আমি কাকে বলব? আমি আপনার আশে পাশের কাউকে চিনি না। সুতরাং বলতেই পারেন।
কথাগুলো বলে আলো তানভীরের চোখের দিকে তাকাল। তানভীরের, আলোর চোখে চোখ পড়তেই কেন জানি না নিজের ভেতরে থাকা সমস্ত কিছু বলে দিতে মন চায়ছে । নিজেকে সে সামলাতে পারল না। অবচেতন মনে বলে ফেলল
– আচ্ছা বলব তবে বিষয়টা আপনার আর আমার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন। পারবেন তো?
– অবশ্যই পারব।
– তাহলে শুনোন। প্রায় চার বছর আগে আপনার মতোই একজনকে এ বাসায় নিয়ে এসেছিলাম রাস্তা থেকে । মেয়েটার নাম ছিল রুশি। মেয়েটাও বেশ অসহায় দাবি করেছিল৷ তখন আমি ইন্টার পাশ করি। আর আমার বড় ভাই অনার্স কমপ্লিট করে। আমার মা স্বাভাবিকভাবে জটিল হলেও সরল মনের। মেয়েটার মা, বাবা কেউ ছিল না ফুফার কাছে মানুষ কিন্তু সেখানে তাকে অত্যাচার করা হতো তাই পালিয়েছিল। আমরাও বিষয়টা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে ওকে থাকতে দিই। বেশ ভালোই যাচ্ছিল সময়। মেয়েটাও খুব মিশুক ছিল। অল্পতেই মায়ের মন জয় করে ফেলে। রুশি আমার এক বছরের ছোট ছিল। দুজনের মধ্যে ভালোই বন্ধুত্ব ছিল । বেশ ভালোই যাচ্ছিল সময়। সব কিছু ঠিকঠাকেই ছিল। ভালোও লাগত কিছুটা। তবে প্রেমিক বা বউ হিসেবে না একজন বন্ধু হিসেবে।
“পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর সম্পর্ক হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিষাদময় অধ্যায়গুলোও আলোকিত হয়ে যায়”।
রুশির সাথে আমার সম্পর্কটা ঠিক ঐ ধরণের ছিল। কিন্তু একটা সময় পর রুশির মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করি। আগের চেয়ে আনমনা। কিছু নিয়ে চিন্তিত। ব্যপারটা বুঝতে পারতাম না কেন? তবে তাকে বেশ অগোছাল মনে হত। অনেক বার জিজ্ঞেস করার পরও তেমন কিছু বলত না। চুপচাপ থাকত। আনমনা হয়ে থাকত। অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়লে যেমনটা হত ঠিক তেমনটা। আমি ওকে কাছে থেকে চিনেছি তাই তার পরিবর্তন টা কারও নজরে না আসলেও আমার নজরে পড়ে।
আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলাম সে আমার বড় ভাই সানীর সাথে বেশ আন্তরিক হচ্ছে। বড় ভাই পেইন্টিং করলে সেখানে বসে থাকত। বড় ভাইয়ের আশে পাশে ঘুরঘুর করত। বুঝতে পেরেছিলাম তাদের মধ্যে কিছু একটা চলছে। একটা সময় বেশ পরখ করে বুঝলাম সানী ভাইয়ার সাথে তার প্রেমটা জমে গেছে। আমার কেন জানি না একটু খারাপ লাগত। বুকের বা পাশটায় ব্যথা অনুভব করতাম।
তানভীরের এ কথাটা শুনে তানভীরের কথায় ব্যাগরা দিয়ে আলো বলে উঠল
– আপনি কী রুশিকে পছন্দ করতেন?
তানভীর নিজের জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলল
– ছিঃ কী সব বলছেন? ওকে আমি নিজের বন্ধু মনে করতাম। আমার কষ্ট লাগত কারণ ও আমাকে কেন জানি না এড়িয়ে যেত। তেমন কিছুই শেয়ার করত না।ওর বড় ভাইয়ের সাথে প্রেম চলতেই পারে বিষয়টা বেশ স্বাবাভিক। তবে আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। আমাকে বললেই পারত। এমন একজনকে ভাবী হিসেবে পেলে আমিও খুশি থাকব। তবে তার এড়িয়ে যাওয়ার কারণটা আমাকে বিব্রত করত।
– আচ্ছা দুঃখিত এমন কথা বলে আপনাকে বিচলিত করার জন্য। তারপর কী হলো বলুন।
– তারপর বিষয়টা আরও পরিষ্কার হয় যখন সানী ভাই রুশিকে বিয়ে করার কথাটা মাকে বলে। আর মা ও সানী ভাইয়ের পছন্দে অমত করেনি। তাদের বিয়েও ঠিক হয়। কিন্তু রুশিকে কেমন জানি লাগত।মনে হতো কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তিত।আমরা বিষয়টা বুঝতেও পারতাম না। তবে সানী ভাই বেশ উৎফুল্ল থাকত। দুজনের দুরকম ব্যবহার আমার নজর এড়িয়ে যায়নি। তবে রুশিকে কিছু জিজ্ঞেস করার তেমন সাহস পেলাম না। তাকে দেখে মনে হতো তার মনে কোনো চাপা কষ্ট ব্যাগরা দিয়ে বসেছে। শুধু ভাবতাম রুশি তো সানী ভাইকে ভালোবাসে তাহলে তার মন এত আনমনা কেন? ভাবনাটা এড়িয়ে যেতে চাইলেও পারতাম না। মনের গহীনে তাকে ঘিরে কতগুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতই।
আস্তে আস্তে বিয়ের তারিখ ঘনিয়ে আসলো। মা রুশির ফুফা ফুফির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল তবে রুশি চাইনি বলে আর এগুই নি বিষয়টা। রুশি আর সানী ভাই রোজ শপিং এ বের হতো এটা ওটা কিনত। কিন্তু রুশির মুখ অবয়ব দেখে কেন জানি না আমার মনে হত সে খুশি না। ভাবতে লাগলাম রুশি কী চায় না সানী ভাইকে। তবে পরক্ষণে আবার ভাবতাম রুশি সানী ভাইকে না চাইলে তো বিয়েটা এগুতো না। আস্তে আস্তে রুশির সাথে আমার দূরত্ব বাড়তে লাগল।
বিয়ের ঠিক আগের দিন আমি বেশ আনমনা হয়ে কী যেন ভাবছিলাম। এমন সময় দরজায় নক করার আওয়াজ পেলাম। দরজা খুলেই দেখলাম রুশি। রুশির চোখ বেশ ফুলা ছিল। অনেকক্ষণ ধরে কেঁদেছিল বুঝায় যাচ্ছিল। আমি দরজাটা খুলতেই সে রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগল। আমি বেশ কয়েকবার জিজ্ঞেস করলাম
– কাঁদছো কেন? কী হয়েছে?
রুশি কোনো উত্তর দিল না। শুধু বলল
– আমার কিছু ভালো লাগছে না।
– তুমি কি এ বিয়েতে রাজি না? সানী ভাইকে কি তুমি ভালোবাসো না?
রুশি মাথা নেড়ে নেড়ে উত্তর দিল
– হ্যাঁ বাসি। ভালোবাসি বলেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছি। কিন্তু?
– কিন্তু কী?
– নাহ কিছু না।
কথাটা বলেই রুশি রুম থেকে বের হয়ে গেল। বুঝতে পেরেছিলাম সে আমাকে কিছু বলতে গিয়েও পারছিল না। আমি বিষয়টা নিয়ে কিছুক্ষণ ভেবে চুপ হয়ে যাই। তারপর নিজের মতো করে ঘুমিয়ে যাই।
সকাল বেলা মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গে। আমি তাড়াহুড়ো করে ঘুম থেকে উঠে রুম থেকে বের হই। লক্ষ্য করলাম কান্নাটা রুশির রুম থেকে আসছে। আমি দৌঁড়ে সেখানে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে যাই। কারণ….
কথাটা বলেই তানভীর থেমে যায়। তার চোখে অশ্রুজল টলমল করতে থাকে। আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল
– কী হলো থেমে গেলেন কেন? তারপর কী হলো বলুন?
তানভীর এবার কান্নাটা আটকাতে পারল না। চোখ দিয়ে তার পানি পড়তে লাগল। কান্না জড়িত কন্ঠে জবাব দিয়ে বলল
– কারণ দেখলাম রুশি সিলিং ফ্যানে ঝুলছে। পাশে একটা ডায়রি ছিল সেখানে শুধু আমার নামটায় লিখে রেখেছিল। হয়তো আরও কিছু লিখতে গেছিল তবে পারে নি।
রুশির এ অবস্থাটা দেখে সানী ভাই পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়ে। পুলিশ আসে। রুশির ডায়রিতে আমার নাম দেখে সবাই ভেবে নেয় যে রুশি আত্নহত্যা করেছে আমার জন্য। পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। সে সাথে আমার বড় ভাই ও আমাকে ভুল বুঝে। সেই যে সে বিদেশ গিয়েছে আর দেশে আসে নি।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো রুশি এক মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তবে ডি এন এ টেস্ট করে জানা গেছে সে বাচ্চাটা আমার বা সানী ভাইয়ের না। তাই আমি জেল থেকে ছাড়া পাই। তবে আজও জানতে পারলাম না রুশি সেদিন কী বলতে এসেছিল। তার মনে কী চলছিল। কেন সে আত্নহত্যা করল। তার পেটের বাচ্চাটা কার ছিল। সব মিলিয়ে বিষয়টা এখনও গোলক ধাঁধায় আছে। আর ঠিক এ জন্য মা আপনাকে এত প্রশ্ন করছিল। কারণ সেদিন রুশিকে আমিই নিয়ে এসেছিলাম এ বাড়িতে। রুশির পরিবারের ঠিকানা এখনও জানি না। অনেক খুঁজ নেওয়ার পরও জানতে পারেনি। কোথায় থেকে এসেছিল সে জানে। সব মিলিয়ে বিষয়টা অস্পষ্ট। বড় ভাইয়ের ধারণা রুশির আত্নহত্যার পেছনে পরোক্ষভাবে আমি দায়ী। যার কারণে সে ঘটনার পর আমাদের বাসায় আর আসেনি। এখনও ভেবে পাই না রুশি কেন এমন করল।
কথাগুলো বলেই তানভীর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
– হয়তো আকাশে আছো তুমি। কিন্তু একটা বার বলে যেতে পারতা তোমার কী হয়েছিল। তাহলে এত অপবাদের গ্লানি নিজের কাঁধে বয়ে বেড়াতে হত না। এ গ্লানি বহন করা বড্ড কষ্ট রুশি। একটাবার বলে যাও কে তোমার সাথে এত ঘৃনিত কাজ করেছে। তোমাকে আত্নহত্যা করতে বাধ্য করেছে।
বলেই কাঁদতে লাগল। আলো তানভীরের কথা শুনে একদম চুপ হয়ে গেল। রুশির মৃত্যুর রহস্যটা যেন আলোকেও ঘিরে ধরেছে। আলোও নীরব। কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। দম বন্ধ লাগছে। তানভীরের কষ্টটা উপলব্ধি সে করতে পারছে। কারণ মিথ্যা অপবাদের গ্লানি বহন করা খুব কষ্ট দায়ক।
“পৃথিবীতে সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক ভারী বস্তু হচ্ছে মিথ্যা অপবাদ। যা মানুষের কাঁধে আসলে বহন করা দুষ্কর হয়ে উঠে।”
তানভীরকে সাত্ত্বণা দেওয়ার ভাষা আলোর নেই।
“পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষেই তার নিজের জায়গায় কোনো না কোনো বিষয়ে দুঃখী। কারও বেশি কারও কম। দুঃখ আছে বলেই সবাই সুখের মর্ম বুঝে”
দুজনের মধ্যেই এখন নীরবতা বিরাজ করছে। নীরবতার অবসান ঘটিয়ে আলো তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলল
– হয়তো কোনো একদিন আপনার মনে জমে থাকা সকল প্রশ্নের উত্তর মিলবে। এ মিথ্যা অপবাদের গ্লানি থেকে মুক্তি পাবেন। চলেন ঘরে যাওয়া যাক। এখানে আর ভালো লাগছে না। আপনারও বিশ্রামের প্রয়োজন।
তানভীর নিজেকে সামলে নিয়ে আলোকে উত্তর দিল
– চলুন।
এরপর দুজন ঘরে আসলো। ঘরে এসেই ড্রইং রুমে দুজন বসলো। তানভীর টিভিটা অন করল। আলো টিভির পর্দায় তাকাতেই ভয়ে চুপসে গেল। তার বুক ধুকধুক করতে লাগল নীলার গলা কাটা লাশটা টিভির পর্দায় দেখে। কিছু মানুষ তাকে ধর্ষণ করে গলা কেটে ফেলে রেখেছে। আলোর হাত পা কাঁপতে লাগল। তার মানে নীলা তার গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই কাটা লাশ হয়ে গেছে। কি নির্মম এ দুনিয়া। আলো জোরে জোরে দম নিতে লাগল। হুট করেই চেঁচিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
– ওহ! আল্লাহ! এ কী হলো?
আলোর চিৎকার তানভীরের কানে পৌঁছাতেই তানভীর আলোর পাশে এসে বলল
– কী হয়েছে আপনার? আপনি কী মেয়েটাকে চিনেন? মেয়েটার লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আছে। চিনলে বলুন ঐ থানায় যোগাযোগ করি।
আলো কী বলবে বুঝতে পারছে না। এ মুহূর্তে নীলাকে চিনে বললে আলোয় বিপদে পড়ে যাবে। কারণ ঐ লোকটার বিষয়টা সবাই জেনে যাবে। সে সাথে আবার আলোকে অন্ধকার গলিতে ডুবে যেতে হবে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আলো তানভীরকে নীলাকে চেনার কথাটা বলতে পারল না। মাথা নেড়ে না বলল শুধু। তবে নীলার মৃত্যুটাও আলো নিতে পারছে না। মাথাটা বেশ ঘুরপাক খেতে লাগল। চোখগুলো বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। এ কষ্টটা বুকটা চেপে ধরে রেখেছে আলোর। সে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেল।
একটু পর যখন আলোর জ্ঞান ফিরল। তানভীর আলোর কাছে এসে যা বলল তা শুনে রীতিমতো আলোর গা, হাত, পা আবার কাঁপতে লাগল।