#অন্ধকারে_এক_চিলতে_আলো
#লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব-১
আমার বাবাকে নিজের মায়ের হাতে খুন হতে দেখেছি। আমার বয়সটা সেদিন অল্প ছিল। সাত বছরের ছোট্ট একটা মেয়ে ছিলাম। চুপচাপ ছিলাম খুব। ছোট বেলা থকেই বাবা মায়ের মধ্যে ঝগড়া চলত। মা পরকিয়ায় আসক্ত ছিল। আর বাবা সেটা মেনে নিতে পারত না। মাকে বারবার বললে মা উল্টো বাবার সাথে ঝামেলা শুরু করে দিত। মায়ের পরকিয়ার মূল কারণ ছিল টাকা। মা খুব উচ্চাভিলাষী ছিল। বাবার স্বল্প আয়ে মায়ের মনটা সবসময় ফিকে হয়ে যেত। বাড়তি টাকার জোগান দেওয়া বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই মা একের পর এক পরকিয়া করত টাকার জন্য। বাবা মাকে কিছু বললেই মায়ের মুখে একটা কথায় আসত
– কিছু দেওয়ার তো মুরোদ নেই শুধু বড় বড় কথা। আমি যা ইচ্ছা তাই করব তোমার তাতে কী?
এসব নিয়ে মা আর বাবার মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া চলত। প্রতিদিন বাসায় কোনো না কোনো আংকেল আসত। আমার জন্য চকলেট আইসক্রিম নিয়ে আসত। আমি ছোট ছিলাম বুঝতাম না। তবে এখন বুঝতে পারি ছোট বেলায় যাদের আমি আংকেল বলে ডাকতাম তারা সত্যিকার অর্থে কে ছিল।
সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। আমি ঘরে বসে বাবা আসার অপেক্ষা করছিলাম। বাবা একটা সময় আসেও, এসেই মাকে একটা চড় কষিয়ে দেয় আর বলে
– নষ্টামির মাত্রা এতই বেড়ে গেছে যে এখন মানুষ পর্যন্ত আমার কাছে তোমাকে নিয়ে যা তা বলে। আর তুমি আমার বন্ধুর সাথে নষ্টামি করছো? আমি যা পারি তোমাকে সব দেওয়ার চেষ্টা করি। আর সে তুমি কী না আমারেই বন্ধুর সাথে ছিঃ,ছিঃ।
মা ছিল বেপোরোয়া। পাল্টা জবাবে বলল
– কী এমন দাও তুমি। আমার যা ইচ্ছা আমি করব। তোমার বন্ধু তোমার অফিসের মালিক আর তুমি সাধারণ কর্মচারী ভুলে যেও না। আমার সাথে ঝামেলা করলে চাকুরীতে টান পড়বে তোমার।
বাবার বিষয়টা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ চাকুরিটা বাবার প্রয়োজন ছিল। চাকুরী চলে গেলে দাদা,দাদীর কাছে টাকা পাঠাতে পারবে না। সেদিন বাবা বিষয়টা জেনেও নিজের বুকে পাথর চাপা দিয়ে নীরবে সবটা সহ্য করে। আর আমি চুপচাপ ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে এসব শুনতে থাকি। আমার জন্মদিন সেটা এত ঝগড়ার মধ্যে ভুলে যাই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কাঁদতে থাকি। তারপর ঘরে গিয়ে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাই।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে বাবা আর মায়ের চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে। আমি ঘুম থেকে উঠেই বাবা মায়ের কাছে যাই। দুজনেই বেশ ঝগড়া করছে।বাবা মায়ের শরীরে হাত তুলছে আর মা বাবার শরীরে। দুজনেই বেশ দস্তাদস্তি করতে লাগল। একটা পর্যায়ে দরজার কলিং বেল বাজলো। মা দৌঁড়ে দরজা খুলল। বাবার বন্ধু হাসান সাহেব এসেছেন। যার সাথে মায়ের পরকিয়া চলছে আর যার অফিসে বাবা কাজ করে।হাসান সাহেব আসতেই বাবা তার কলারটা ধরে বলল
– নিজের বন্ধুর বুকে ছুরি মারতে তোর বিবেকে বাঁধল না?
হাসান সাহেব কলারটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললেন
– আমার কলার ধরেছিস তোর এত বড় সাহস? তোর মতো কাপুরুষের তো বিয়ে করায় ঠিক হয়নি। নিজের বউয়ের শখ আল্লাদ পূরণ করতে পারিস না আর আসছিস আমাকে যা তা বলতে। তোর বন্ধু বলেই তো তোর হয়ে তোর বউয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করছি।
কথাট শুনেই বাবা রেগে গেল। বাবা রেগে গিয়ে হাসান সাহেবকে মারতে নিলেই মা এসে বাবাকে গলা চেপে ধরে বলল
– প্রতদিন তোর সাথে অশান্তি একদম ভালো লাগছে না। আজকে একেবারেই তোকে শেষ করে দেবো।
তারপর হাসান সাহেবকে বলল
– ওর হাত পা ধরো।
হাসান সাহেবও মায়ের কথায় বাবার হাত পা চেপে ধরল। আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। একদম স্থির আর স্তবির হয়ে গেছিলাম। চুপ করে সবটা দেখতে লাগলাম। চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। মুখ দিয়েও কথা বের হচ্ছিল না। মা বাবার গলাটা চেপেই ধরে রেখেছে। আর আমার বাবা ছটফট করছে। বাবার গলা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসলো। একটা পর্যায়ে বাবা ছটফট বন্ধ করে দিল। হ্যাঁ আমার বাবা মারা গেছে।
বাবার লাশটা কী করেছিল জানি না। তবে সেদিনের ঘটনার পর থেকে আমরা সেই বাসা ছেড়ে অন্য বাসায় চলে যাই। বাবাকে আর দেখতে পারিনি। বাবার লাশ কোথায় ছিল বা লাশটা দাফন করা হয়েছিল কী না তাও জানি না। এখনও মাঝে মাঝে বাবার মুখের অবয়বটা ভেসে আসে চোখে।বাবার ছটফটানির দৃশ্যটা এখনও চোখে ভাসলে মনটা অস্থির হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কষ্ট এটাই এত অন্যায়ের পরও আমার মা বেশ রমরমা জীবনযাপন করছে। বাবা মারা যাওয়ার পর যেন মা আরও সুন্দর হয়ে গেছে। সে সাথে মায়ের পরকিয়ার সঙ্গীও বাড়তে লাগল। আগে একজন আসত।আর এখন অনেকজন আসে। ছোট থেকেই মায়ের এসব দেখে বড় হয়েছি আমি।
মায়ের জীবনটা মায়ের মতো করে সে নিজে সাজিয়ে নিয়েছিল। তবে আমার সে নরকে দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগল। মাকে ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না।আর আত্নহত্যা সেটা তো একটা নিছক কল্পনা কেবল।চাইলেও আত্নহত্যা করার সাহস ছিল না। তবুও যেভাবে জীবন যাচ্ছিল নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। তবে আমার বয়স যখন বারো হয় তখন আমার জীবনে সবচেয়ে বড় নরক নেমে আসে। মায়ের খুব কাছের একজন সেদিন বাসায় এসেছিল। মা তার সাথে রুমে বেশ অন্তরঙ্গতার সহিত শুয়ে ছিল। দুজনেই তখন মদের নেশায় ডুবে আছে। আমি তখন ডাইনিং টেবিলে পানি খতে যাই। পানি খেয়ে আসার সময় দরজাটা খোলা থাকার দরুণ আমার চোখ পড়ে লোকটার চোখে। আর মায়ের সাথে এভাবে দেখে লজ্জায় কষ্টে আমার ভেতরটা ফেটে যায়। আমি তাড়াহুড়ো করে চোখটা নামিয়ে নিজের রুমে চলে আসি। লোকটা আমাকে দেখে মাকে কী বলেছিল জানি না। আমি রুমে এসে খাটে হেলান দিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম কবে এ নরক থেকে বের হতে পারব।
এসব ভাবতে ভাবতেই যখন চোখটা বন্ধ হয়ে আসে ঠিক তখন নাকে একটা বিশ্রি গন্ধ আসতে লাগল। বুঝতে পারছিলাম মদের গন্ধ। এ গন্ধটা আমার সহ্য না হলেও এ গন্ধের সাথে আমি পরিচিত। কারণ মা প্রায়ই এটা খায়। ভেবেছি মা হয়তো পাশে এসেছে। তাই চোখটা খুললাম। চোখটা খুলতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠল একি! এটা তো মায়ের পাশের লোকটা আমার দিকে হিংস্র হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে লালসার ছায়া ভেসে উঠছে।আমি উনাকে দেখে নড়েচড়ে বসলাম। উনার থেকে একটু দূরে গিয়ে বললাম
– আপনি আমার রুমে কেন?
– মামনি তুমি তো আমার মেয়ের মতো তোমাকে একটু আদর করে দিয়ে যেতে এসেছি। আমার কাছে এসো সোনা মা আমার।
কতটা ঘৃনিত ছিল সে চাহনি। লোভী চোখে তাকিয়ে মা ডাকছে। আমি সেদিন বলিষ্ঠ গলায় বলে উঠলাম
– আপনি আমার রুম থেকে যান বলছি।
কিন্তু লোকটা আমার কথার পাত্তা না দিয়ে আমার হাতটা টেনে ধরে তার কাছে এনে বলল
– যেতে তো আসেনি মামনি। তোমার মা কে তোমার জন্য এক লাখ দেবো বলেছি। তোমাকে রেখে কী করে যাই বলো। তোমার শরীরের গন্ধ যে পাগল করে দিচ্ছে আমায়।
বয়স অল্প হলেও উনার কথার মানে আমি বুঝতে পেরেছিলাম। আর আমার মা টাকার জন্য নিজের মেয়েকেও ভোগের পন্য বানাতে দ্বিধা করলো না। আমি নিজেকে সামলে নিয়ে লোকটা থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলে লোকটা আমাকে ঝাঁপটে ধরে। আমার অস্বস্থির পরিমাণ বেড়ে যায়। জোরে একটা চিৎকার করে উঠি। পাশের রুম থেকে মা ছুটে আসে। ভেবেছি মা হয়তো আমাকে কষ্ট পেতে দিবে না। তবে আমার ভাবনাটা মিথ্যা প্রমাণিত হলো তখন যখন মা এসে বলল
– একদম চেঁচাবে না। আংকেল যা বলে করো। প্রথম একটু কষ্ট হবে। পরে ঠিক হয়ে যাবে।
মায়ের কথার প্রতিবাদ করে বললাম
– মা আমি এসব পারব না। আমাকে মাফ করো। দয়াকরে এত কষ্টে ফেলো না।।তুমি যা মন চায় করেছো আমি নীরবে সহ্য করেছি কখনো তোমাকে কিছু বলি নি। তবে আজকে আমার সাথে এত বড় অন্যায় করো না। আমাকে মুক্তি দাও দয়াকরে।
আমার এমন কথা শুনে লোকটা মাকে উদ্দেশ্য করে বলল
– তোমার মেয়ে এভাবে চেঁচালে চলবে নাকি।
– আরে চিন্তা করো না। ওকে একটু মদ খাইয়ে দিচ্ছি ঠিক হয়ে যাবে ডার্লিং।
বলেই মা আমার পাশে এসে মদের বোতলটা নিয়ে জোর করে মুখ চেপে খাওয়ায়ে দিল। আর লোকটা আমার শরীরের উপর হামলে পড়ল। আর মা আমাকে রেখে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। লোকটা আমার শরীরটাকে খুবলে খুবলে খেতে লাগল। পুরুষ মানুষ সে যে কতটা ভয়ানক সেদিন বুঝতে পেরেছি। মা মা ডেকে ডেকে আমার শরীরটাকে খুবলে খেয়েছে। আমি ব্যথায় কাঁতরাতে কাঁতরাতে নিস্তেজ হয়ে গেলাম।
সকাল বেলা উঠেই দেখলাম আমার শরীরে কোনো কাপড় নেই। বিছানায় রক্তে মেখে আছে। পেটে ভীষণ ব্যথা হচ্ছে। মাথাটা বেশ ঝিমুচ্ছে। সারা শরীরে নীল নীল দাগ ছোপ ছোপ হয়ে গেছে। কষ্টে বুকটা ফেটে গিয়েছিল সেদিন। নিজের অসহায়ত্বের মাত্রাটা টের পেয়েছিলাম। নিজের মা এমন করবে সেটা আশা করি নি। মায়েরা নাকি সন্তানের জন্য সব করতে পারে৷ তবে আমার মা সে যে এমন করবে বুঝতে পারিনি। বিছানায় শুয়েই কাঁদতে লাগলাম।
সেদিনেই যদি আমার যন্ত্রণার পরিসমাপ্তি ঘটত তাহলে হয়তো স্বস্থি মিলত। যন্ত্রণার শুরুই ছিল সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে স্তবির হয়ে গেলাম। মা আমার রূমে আসলো। মাকে দেখে ঘৃনায় বুকটা ফেটে যেতে লাগল। মা এসে আমার উলঙ্গ শরীরটা ঢেকে দিয়ে যা বলল তা শুনে রিতীমতো আমার শরীরটা কাঁপতে লাগল। কারণ মা বলল-
চলবে