#গল্পের_নাম_অনূভুতি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৪
আবরারের সামনে দাড়িয়ে আছে অবনি সে এখনো হতবিহ্বল তার ভাইয়ের কান্ডে।আবরার ফোনটা বিছানায় ফেলে দিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,
~অবনি এসব কী হচ্ছে।
অবনি ভাইয়ের রাগ বুঝতে পেরে আমতা আমতা করে বললো,
~ভাই আসলে আমি
পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আবরার বললো,
~অবনি সবকিছু সময়ের হাতে ছেড়ে দেও।তুমি পড়াশোনায় মনোযোগ দেও
আবরার নিজের কথা শেষ করে রুম থেকে বের হয়ে আসলো।অবনি ভাইয়ের মনের অবস্থা বুঝতে পারলো।তাই অবনি ঠিক করলো সে আরফিকে ফোন করবে না যা হওয়ার তাই হবে।
আরফি সোফার রুমে বসে আছে আর নিশ্চুপ হয়ে মা আর ভাইয়ের কথা কাটাকাটি শুনছে।তার কাছে ব্যাপারটা বড্ড খারাপ মনে হচ্ছে আরফান সায়েদা বেগমকে নিজের যথাযথা যুক্তি দিয়ে বুঝাচ্ছে কিন্তু সায়েদা বেগম তা শুনতে নারাজ।সায়েদা বেগম নিজের অতীতে এতোটা বেশি কষ্ট পেয়েছেন যে সে ভাবছে তার মেয়েও হয়তো একই কষ্টের মধ্যে দিন পার করবে।আরফান বললো,
~মা কথা বোঝার চেষ্টা করো আমি মানছি আবরার স্যার ছেলে হিসেবে ভালো কিন্তু তার বয়স টা আমাদের আরফির জন্য ঠিক না। আর সবচেয়ে বড় কথা আমি চাই না আরফিকে এখন বিয়ে দিতে।
আরফানের এমন বচন শুনে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো সায়েদা খানম সে রেগে বললেন,
~আরফান আমি চাই আরফি আর আবরারের বিয়ে হোক।আবরারের মতো ছেলেই আমাদের আরফির জন্য পার্ফেক্ট।
শাশুড়ির কথায় এবার রুকাইয়া বলে উঠলো,
~মা আরফির মতামতেরও একটা কথা আছে ওকে একটু সময় দিতে হবে।
রুকাইয়ার কথায় সায়েদা খানম একটু ঠান্ডা হয়ে বললেন,
~ঠিক আছে সব কিছু তাহলে আরফির উপর নির্ভর করে।আরফি যদি তার মায়ের খুশি চায় তাহলে সেভাবেই মতামত দিবে।
আরফান মায়ের কথা শুনে বললো,
~তুমি কী আরফিকে থ্রেট করছো?
সায়েদা খানম বললেন,
~শুধু মনের কথা বললাম এটা যদি থ্রেট মনে করিস তাহলে বেশ তাই করেছি।
কবির আহমেদ এবার চুপ থাকতে পারলেন না জোরে ধমক দিয়ে বললেন,
~তোমরা দুজনই চুপ করবে বাসার ভিতর এসব কী শুরু করেছো।সব পাগল হয়েছো
বাবার এমন ধমকে আরফি নিজেকে সামলাতে পারলো না ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আরফির কান্নার আওয়াজ শুনে রুকাইয়া ওর পাশে বসে বললো,
~আরফি কান্না করো না।
আরফি ফুঁপিয়ে কান্না করছে সায়েদা খানম মেয়ের কান্না শুনে অস্থির হয়ে বললেন,
~আরফি কাঁদবি না একদম
আরফি কান্না করতে করতে বললো,
~এসব কথা বন্ধ করো তোমরা আমি এখন এসব কথা শুনতে চাই না।
এতটুকু বলে সে দৌড়ে তার রুমে চলে গেলো।আরফান বোনের এমন কথা শুনে অনেকটাই কষ্ট পেলো মেয়েটার মনে কতো বড় ঝড় চলছে সেই জানে।আরফানও আর কথা বাড়ালোনা চুপচাপ তার রুমে চলে আসলো আর অফিসের কাজ নিয়ে বসে পরলো।
জাবেদা বেগম আবরারে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আবরার চুপ করে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।দুজনই নিরবতা পালন করছে জাবেদা বেগম সে নীরবতা ভেঙ্গে বললেন,
~আবরার মাথা থেকে সব দুশ্চিন্তা বের করে ফেলো।কাজে মনোযোগ দেও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
আবরার চোখ বন্ধ রেখে মায়ের কথা শুনছে জাবেদা বেগম বললেন,
~জীবনে এমন এক সময় চলে আসে যেখানে আমরা মনের কাছে হেরে যাই।কারণ আমাদের মনের সুক্ষ্ম অনূভুতি গুলো আমাদের একটা আলাদা জালে বেঁধে ফেলে।কিন্তু সেই জাল থেকে বের হয়ে আমাদের বাস্তবতাকে বুঝতে হয় সবারই অধিকার আছে নিজ জীবন সুন্দর করে গড়ার।তেমনি আরফিও কিছু স্বপ্ন আছে সেও নিজেকে সেভাবেই গড়তে চায়।আর আরফানও তার বোনের সুখ চায় যেমন তুমি অবনিকে ভালোবাসো তেমনি আরফানও তার বোনকে ভালোবাসে।তাদের দৃষ্টিকোণ দিয়ে ভাবতে শুরু করো দেখবে সব কিছু স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।জাবেদা বেগম একনাগাড়ে কথা গুলো বলে ফেললো।আবরার মায়ের প্রতিটি কথা শুনলো সে জাবেদা বেগমের কোল থেকে মাথা তুলে তার দিকে তাকালো আর বললো,
~মা আমি আরফির কোনো স্বপ্ন ভাঙ্গতে দিবোনা আমি শুধু ওর স্বপ্নে একটু অংশীদার হতে চাই।ওর সাথে পথ চলতে চাই এটা কী ভুল?আমি কী স্বামী হিসেবে খারাপ হবো?আরফির জন্য কী আমি পারফেক্ট না?
আবরার কথা গুলো অনেক কষ্টের সহিত বললো জাবেদা বেগম ছেলের কথা বুঝতে পারলেও তার কিছু করার নেই তার হাতে শুধু একটাই উপায় আছে সায়েদা খানম সে আবার দেখা করবে বুঝিয়ে বলবে সব গুলো কথা।দরকার পরলে আরফিকেও বুঝাবে কিন্তু এর চেয়ে বেশি আর কিছুই করতে পারবে না।কাউকে তো জোর করে একটা সম্পর্কে বাঁধা যায় না।
আবরারের মাথা হাত বুলিয়ে জাবেদা বেগম বললেন,
~সব ঠিক হয়ে যাবে।নামাজের সময় হয়েছে যাও নামাজ আদায় করে এসো।
আরফি নামাজ শেষ করে জায়নামাজ ঠিক জায়গায় রেখে মায়ের কাছে চলে গেলো।রুমের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো তার সায়েদা খানম শুয়ে আছে।আরফি চুপচাপ তার পাশে শুয়ে পরলো সায়েদা খানম কারো উপস্থিতি বুঝতে পেরে ওপাশ ফিরে তাকালো আরফিকে দেখতে পেয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পরলো।আরফি মায়ের অভিমান বুঝতে পারলো কিন্তু কিছু বললো না নীরবতা অনেক সময় অনেক কিছু বলে দেয়।আর মায়েদের তো কিছু বলতে হয় না সে তো সন্তানের মুখ দেখলেই বুঝতে পারে তার মনের অবস্থা।আরফি বললো,
~মা তোমার কী সত্যি মনে হয় আরফান ভাই আমার সাথে তাই করবে যা মামা তোমার সাথে করেছিল?
মেয়ের কথায় সায়েদা বেগম উঠে বসলেন আরফিও বসে পরলো তার পাশে।সায়েদা বেগম জানালার দিকে তাকিয়ে সেই বিশাল আকাশের দিকে দৃষ্টি রাখলো রাতের আকাশ কিন্তু কোনো তারা নেই হয়তো মেঘলার কারণে।সায়েদা বেগম সেখান থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বললেন,
~তোর মামার মতো করুন কেউ হতে পারবে না যে নিজের মা আর বোনকে রাতের অন্ধকারে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিতে পারে সে কখনো মানুষ হতে পারেনা।
বাবা মারা যাওয়ার আগে সব ঠিক ছিল ভাই-ভাবি সবাই মিলে সুখী পরিবার কিন্তু একটা ঝড় সব লন্ডভন্ড করে দেয়।বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই বদলে যায়।আমাদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় একদিন বাসা থেকেই বের করে দেয় আমরা সেসময় কী করবো বুঝতে না পেরে আমার মামার বাসায় চলে যাই তারা আমাদের দূরে ঠেলে দেয়নি।তারা যদি না থাকতো তাহলে হয়তো
মা আর বলতে পারলোনা হুহু করে কেঁদে উঠলো।আরফি নির্বাক সে এই ঘটনা আগেও শুনেছে কিন্তু এতোটা কষ্ট হয়নি নানী তাদের সবই বলেছে।মায়ের মুখ থেকে শুনে আরো কষ্ট লাগছে।
রাতটা যতো গভীর হচ্ছে আরফির মনের অবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে।কেন জানি আবরারের চেহারাটা সে দেখতে পাচ্ছে চোখ বন্ধ করলে আবরারের উপস্থিতি সে টের পাচ্ছে।এটা যে তার একটা ভ্রম তা সে বুঝতে পারছে তবুও ভাবনা সেখানেই যাচ্ছে।
আরফি বিছানা থেকে উঠে তার ডায়রিটা বের করে কলম টা হাতে নিলো ভাবছে কী লিখবে?তখনই আজব একটা ঘটনা হলো নিজের অজান্তেই সে আবরারের নামটা লিখে ফেলে।আসলে আমাদের মনে যেটা থাকে আমরা সেটাই করি আর আরফি বেলাও সেই জিনিসটা হয়েছে।আরফি ডায়রির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে যায় সে ডায়রি বন্ধ করে ফেললো আর ভাবলো,
~এই জীবনে যার অবস্থানই নেই তার নাম এই ডায়রিতে কেন লিখেছে সে?
আরফি এই প্রশ্নের জবাব জানে না সে আবারও বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো চোখ বন্ধ করে ফেললো হয়তো ঘুমের দেখা পাবে সে।
সকালের তেজ রশ্নি ঘরে প্রবেশ করলো বাহির থেকে জাবেদা বেগমের কন্ঠ শুনে ঘুম ভাঙ্গে আবরারের।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকাল ৮টা সে তাড়াহুরা করে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো।আরফি কলেজের জন্য বের হয়ে পরবে তাকে একনজর দেখতে পাবে আবরার কারণ এই সময়টাই আরফি একা থাকে। আবরার রেডি হয়ে নিচে নেমে পরলো হাত ঘড়ি পরতে পরতে জাবেদা বেগমকে বললো,
~মা আমি বের হচ্ছি।অফিসের জন্য নাস্তা বাহিরে করে নিবো।
জাবেদা বেগম কিছু বললেন না শুধু টিফিন বক্সটা সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,
~সাবধানে যাবে।
আবরার কিছু না বলে টিফিন বক্সটা নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
আরফি কলেজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে মাথাটা একটু ভার ভার কালকে রাতে তার ভালো ঘুম হয়নি এই কারণে হয়তো।আরফি রাস্তায় দাড়িয়ে আছে রিক্সার অপেক্ষা করছে অবশেষে একটা খালি রিক্সার দেখা পেলো সে।আরফি হাত বাড়িয়ে যেই না রিক্সাটাকে ডাকতে যাবে তখনই সামনের দিকে তার চোখ পরে।
আরফি হাত নিচে নামিয়ে ফেললো আরফির বুকটা ধুকপুক করছে।
এই মানুষটি এখানে কী করছে?তার কী কোনো বাজে মতলব আছে তাহলে।আরফির কেন যেন ভয় হচ্ছে একা আসাটা ঠিক হয়নি রাস্তার অপরপাশে আবরার দাড়িয়ে আছে আজ সে লুকিয়ে তার প্রেয়সীকে দেখতে আসিনি বরং সে আজ সবার সামনে তার প্রেয়সীর সাথে কথা বলবে।আবরার রাস্তা পার হয়ে আরফির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো এতে আরফি আরো ভয় পেয়ে গেলো।
আবরার শুধু এতটুকু জানতে চায় আরফি তাকে একটা সুযোগ দিবে কি না?কিন্তু আরফি তো আবরার কে ভুল বুঝছে আরফি তাড়াতাড়ি একটা রিক্সায় বসে পরলো আর রিক্সা চালককে তাড়াতাড়ি চালাতে বললো।আবরার আরফির কাজে হতভম্ব আরফি তাকে ভয় পেয়ে চলে গেলো।আবরার হতাশ হলো না সে আবার আসবে আরফির কাছে এবার একা নয় একজনকে সাথে করে নিয়ে আসবে। যাকে দেখে আরফির ভয়টা কমে যাবে এবং নিশ্চিন্তে কথাও বলতে পারবে।
চলবে
(ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading🤗🤗)