অনুরাগ
৫ম পর্ব
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
শ্রুতি বেশ চমকে উঠে তাকাল পুলকের দিকে।আর ঈষাণ অনেকটা ঘাঁবড়ে গেল পুলকের এই ব্যাপারটাতে।গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে পুলক ঈষাণের দিকে। শ্রুতির বাহু চেঁপে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তারপর আচমকা ঈষাণের পেটে ঘুষি দিয়ে বলল,
-‘ এই শালা তুই আমার বউয়ের হাত ধরে কী করছিলি রে? ‘
শ্রুতি বুঝতে পারল যে পুলক ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়নি।তখন শ্রুতি ওর কনুই দিয়ে পুলকের পেটে গুতা দিয়ে বলল,
-‘ তুমি যে কী ভয়ানক কাজ করো আজকাল!এভাবে কেউ টেনে ধরে?ফাজিল ছেলে।ফ্রেশও তো হওনি।যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।আমি তোমাদের ডিনার রেডি করছি।’
-‘ আরে না।আগে দু কাপ কফি পাঠাও। আজ আমি আর ঈষাণ একটু আড্ডা দিই।’
-‘ মাত্রই তো খেলাম আমরা কফি।আবার?’
-‘ তোমরা দুজন খেয়েছো।আমি তো আর খাইনি।তোমাকে আর খেতে হবেনা।তুমি বরং আমাদের দুজনের জন্য পাঠাও।’
-‘ আচ্ছা ঠিকআছে।বসো নিয়ে আসছি।’
ঈষাণ মুখটা শুকনো করে বলল,
-‘ নারে… আমাকে এগারোটার আগে ফিরতে হবে।আজ আর গল্প নয়।অন্য কোনোদিন আসব।’
-‘ অন্য কোনোদিন?তার মানে বর্তমান একটু ফ্রি সময় পাচ্ছিস তাই তো?আরে কাল তো তোদের সাথে কথাই হয়নি ঠিকমত।একটু বস তারপর না হয় ডিনার করে চলে যাস।’
-‘ এই ঈষাণ বস না?আমার কফিটা কিন্তু মন্দ না সেটা নিশ্চই খেয়ে বুঝেছিস। তাই আর এক মগ যে খাওয়া অসাধ্যকর এমনটা কিন্তু নয়।’
ঈষাণ শুকনো মুখের একটা মুচকি হাসি দিল মাত্র।সেটা দেখে পুলক বলল,
-‘ থাক জোড় করে বেচারাকে কফি গেলানোর কোনো মানে হয়না।ও যে এত ব্যস্ততার মাঝে এটুকু সময় বের করে আমার বাসায় আসতে পেরেছে এতেই আমার ভালো লেগেছে।চল ডিনার করে যাবি।’
-‘ হুম চল।’
ডিনার শেষ করেই ঈষাণ আর এক সেকেন্ডও বসেনি।বিষয়টা দেখে শ্রুতি বেশ অবাক হলো।
**************
-‘ আজ এত জলদি জলদি শুয়ে পড়লে যে?’
-‘ খুব ক্লান্ত গো।তাড়াতাড়ি এসো তো।ঘুম আসছেনা তোমাকে ছাড়া।’
পুলকের কথা শুনে মুচকি হেসে দিল শ্রুতি।চুলটা বিনুনি করে পুলকের পাশে এসে শুয়ে পরল।পুলক বলল,
-‘ তুমি বসে আগে আমার চুলগুলো নেড়েচেড়ে দাও।আমি তোমার কোলের ওপর মাথা রেখে শুবো।’
শ্রুতি সেটাই করল।পুলক ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ওর কোলের ওপর মাথা রেখে বুকে ভর দিয়ে শুয়ে আছে।আর শ্রুতি ওর চুলগুলো নেড়েচেড়ে দিচ্ছে।
-‘ ঘুমিয়ে পরলে? ‘
-‘ উহু।চোখ বন্ধ করে আছি।তবে না ঘুমানো পর্যন্ত তুমি শুবেনা। ‘
-‘ এই তখন খেয়াল করেছিলে ঈষাণকে? ডিনার করে আর একটা মুহূর্তও বসলোনা।কিরকম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল। ‘
শ্রুতির কথা শুনে পুলক চোখ খুলল। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
-‘ পুলিশ মানুষ।কোন আসামির কথা মনে পরেছে তাই তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে গেছে। ‘
-‘ হুম।হয়তোবা। ‘
পুলক খুব ভালো করেই জানে ঈষাণ কেন ওভাবে চলে গেল।ঈষাণের সামনে যখন পুলক শ্রুতিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে তখন ঈষাণের মুখটা একদম শুকিয়ে যায়।পুলকের ব্যবহারটা শ্রুতির কাছে ওইসময় স্বাভাবিক মনে হলেও ঈষাণ ঠিকই বুঝতে পেরেছে পুলকের চোখের চাহনি দেখে।তাই ওর আর ইচ্ছা করেনি পুলকের সামনে থাকতে। তারপর খেতে বসে যখন পুলক শ্রুতিকে টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে বলছিল,
-‘ আজ আর আমি হাত দিয়ে খেতে পারবোনা।তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে এভাবে আমার কোলে বসেই।’
এই দৃশ্যগুলো দেখে ঈষাণের ভাত হজম করতে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল।তাই খাওয়া শেষ করে আর এক সেকেন্ডও বসেনি।এর সবটাই পুলক ইচ্ছে করে করেছে।আর ঈষাণ নিজেও তা বুঝতে পেরেছে।পুলক হঠাৎ শ্রুতির দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ এই তুমি আজ হোয়াইটটা পরেছো কেন? ‘
-‘ তো কী হয়েছে?একটা পরলেই হলো। ‘
-‘ না একটা পরলেই হলোনা।তুমি আজকে ব্ল্যাকটা পরবে।যাও এটা খুলে ব্ল্যাকটা পরে এসো।’
-‘ কী অদ্ভুত!নাইটি তো নাইটিই।সেটা ব্ল্যাক আর হোয়াইট কী? ‘
-‘ উফ তুমি কী যাবে নাকি আমি গিয়ে নিয়ে আসব? ‘
-‘ আমি নিজেই যাচ্ছি।আচ্ছা নাছোড়বান্দা তুমি। ‘
নাইটি চেইঞ্জ করে পুলকের সামনে এসে দাঁড়াতেই পুলক হ্যাঁচকা টানে ওর বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো শ্রুতিকে।তারপর চেঁপে ধরে শ্রুতির ঠোঁটে চুমু খেয়ে বসল।
-‘ তুমি যে কত বড় লুচু…. ‘
-‘ লুচুর মত কী করলাম তোমার সাথে? ‘
-‘ আমি বুঝিনি কিজন্য তুমি এটা পরতে বলেছো? ‘
-‘ বলো কিজন্য পরতে বলেছি? ‘
-‘ এটা যে খুব শর্ট।হাঁটুর উপরে উঠে থাকে একদম। ‘
শ্রুতিকে বুকের ওপর নিয়ে শুয়ে পরে বলল,
-‘ এখন আর হাঁটুর ওপরেও থাকবেনা।ওয়েট…..’
এমনকরেই সুখে দিনগুলো পার করছিল ওরা।ছোট্ট সংসারে দুটি মানুষের মধ্যে ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলনা। ওদের দুজনের ভালোবাসা নিজেদের কাছে সবসময় কম মনে হতো।পুলক ভাবত শ্রুতির তুলোনায় পুলক হয়তো ওকে কম ভালোবাসে।আর শ্রুতি ভাবত পুলক ওকে বেশি ভালোবাসে নিজের ভালোবাসার তুলনায়।পরিবারের অমতে বিয়ে করেছিল বলে শ্রুতির বড় বোন ইতি ওকে অভিশাপ দিয়েই বলেছিল, ‘যে ভালোবাসার জন্য নিজের পরিবার ত্যাগ করলি সেই ভালোবাসায় একদিন তোর কাছে বিষ মনে হবে।সেই বিষ সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসতে হবে আব্বা আম্মার পায়ের কাছে।’
এই কথাগুলো যখন পুলক শুনেছিল তখন শ্রুতিকে সে বলেছিল, ‘আমার ভালোবাসা যদি কোনোদিন সত্যি বিষে পরিণত হয় তাহলে আর কিছু ভাববেনা শেষ করে দেবে আমাকে।’ কথাগুলো তখন শ্রুতির কাছে আবেগী মনে হলেও পুলক যে কথাগুলো অনেক কষ্ট পেয়ে মন থেকেই বলেছে তার প্রমাণ শ্রুতি তার কিছুদিন পরই পেয়ে গিয়েছিল।পুলক যত ব্যাংক ব্যালেন্স তৈরি করেছে তার চাকরি জীবনে তার সবটায় শ্রুতির নামে ট্রান্সফার করে দিয়েছে।আর ভবিষ্যতেও যা হবে তার সবটাই শ্রুতি পাবে।যদিও তা শ্রুতির বাবার বাড়ির সম্পত্তির তুলনায় কম। তবুও শ্রুতি অনেক অবাক হয়েছিল।রেগে গিয়ে পুলককে বলেছিল,
-‘ ব্যাংক ব্যালেন্স প্রপাটি এইসব হাবিজাবি দিয়ে তুমি ভালোবাসার প্রমাণ দিচ্ছো? এগুলোর জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করেছি? ‘
পুলক সেদিন শ্রুতিকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলেছিল,
-‘ সবটাই যদি আবেগ দিয়ে বিচার করা যেত তাহলে তোমার আমার সম্পর্কটাও তোমার বাবা-মা আবেগ দিয়ে বিচার করে আমাদের মেনে নিতো।তারা আমাকে কেন মেনে নেয়নি সেটা তো তুমি জানোই।শুধুমাত্র আমার সামর্থ্যের জন্য। তাই ভালোবাসাতে যেমন আবেগটাও খুব জরুরি তেমন ভালোবাসাকে আর নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য এই টাকা পয়সাটাও জরুরি।তুমি যতই সবার সামনে নিজেকে সুখি প্রমাণ করো তবুও তারা জানতে চাইবেই আমি তোমাকে কী দিয়েছি?তোমার দেনমোহর কত দিয়েছি? বিবাহবার্ষিকীতে আমি তোমাকে কী উপহার দিয়েছি তাছাড়াও আমি ইনকাম করে তোমাকে কতটুকু কী খরচ দিই আরো নানানরকম কথা জিজ্ঞেস করবে তোমাকে।তখন যদি তুমি বলো শুধু ভালোবাসা দিলেই হবে তখন সেটা তোমার কাছে মিষ্টি শোনালেও ওদের কাছে তেঁতো লাগবে।আড়ালে তোমাকে নিয়ে তোমার স্বামীকে নিয়ে ওর কানাকানি করবে অপমানজনক কথা বলবে।তখন তুমি ভেতরে ভেতরে কতটা কষ্ট পাবে তোমার আইডিয়া নেই।আর এমন কিছু জায়গা থেকেই শত ভালোবসার মাঝে দুজনের মধ্যে ছোট খাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়।’
-‘ তার মানে তুমি বলতে চাইছো আমি এগুলো নিয়ে তোমার সাথে ঝামেলা করব?’
-‘ নারে বাবা আমি কী সেটা বলেছি? এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে আপনাআপনিই নিজেদের মধ্যে ঝুট ঝামেলা তৈরি হয়ে যায়।এসব পরিস্থিতির মাঝে না পরলে তুমি বুঝতে পারবেনা আমি তোমাকে কেন এগুলো বলছি।আর আমাদের বিয়েটা তো বাকিসবার মত স্বাভাবিকভাবে হয়নি।তাই এমন বিয়েতে মেয়েদের বাবার বাড়িতে বন্ধুবান্ধবদের কাছে নানানরকম কথা শুনতে হয়। তুমি কিছুটা শুনেওছো।আর যাতে এমন কিছু না শুনতে হয় তার জন্য এই ব্যবস্থা। তুমি যেমন চাইবেনা তোমার স্বামীকে কেউ ছোট করে কথা বলুক তেমন আমিও চাইনা আমার বউটাকে কেউ অপমান করুক।’
এতকিছুর পর এই মানুষটার ভালোবাসা যে কখনো বিষ হতে পারেনা শ্রুতি তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।এর মাঝে হঠাৎ শ্রুতি খুব অসুস্থ হয়ে পরে।প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং শুরু হয় ওর।সেটা দেখে শ্রুতি চিৎকার করে কান্না শুরু করে।পুলক ওকে দ্রুত হসপিটালাইজড করে জানতে পারে শ্রুতি কনসিভ করেছিল কিন্তু বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।পরে জানতে পারল শ্রুতির জড়ায়ুতে সমস্যা হয়েছে।মাসখানেকের মত ওদের ফিজিকালি এটাচ্ড হওয়া যাবেনা। বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যাওয়াতে শ্রুতি খুব উদাস হয়ে পরে।ওর খালি বারবার মনে হচ্ছে ওর বাবা-মায়ের দেওয়া অভিশাপ গায়ে লেগেছে হয়তো।মেন্টালি সিক হয়ে পরছে দিন দিন শ্রুতি।এদিকে পুলকটাও আজকাল খুব কম সময় দিচ্ছে শ্রুতিকে। যতটুকু সময় ওর পাশে থাকে ততটুকু সময় খুব কেয়ার করে ওকে।কিন্তু আজকাল আগের মত আর পুলক বাইরে থাকলে তেমন কথা বলেনা ফোনে। আবার বাড়িতেও ফিরে রাত বারোটা একটার সময়।মাঝে মাঝে রাতে খাওয়া দাওয়া না করেই এসে ঘুমিয়ে পরে। আবার খুব সকালে উঠে বেরিয়ে যায়। পুলকের এমন পরিবর্তনটা শ্রুতি ঠিক মেনে নিতে পারছিলোনা।দেখতে দেখতে প্রায় এভাবেই দুটো মাস কেটে যায়। শ্রুতির চেহারাও দিন দিন ভেঙে পরছিল। পুলকটাও আজকাল শ্রুতিকে সেই আগের মত হূরপরীও বলে ডাকেনা।ও সুস্থ হওয়ার পর পুলক নিজে থেকে কখনোই শ্রুতির সঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করেনা।যার জন্য শ্রুতিও কখনো ওর কাছে যেচে পরে যায়না।কিন্তু মনের মধ্যে তোলপার হয়ে যায় ওর।একদিন সকালে খেতে বসে পুলক শ্রুতিকে বলে,
-‘ তুমি বাসায় একা থাকতে পারবে তো? ‘
-‘ একা থাকতে হবে কেন?তুমি কী কোথাও যাবে? ‘
-‘ হুম।অফিসের কাজে দুদিনের জন্য একটু ঢাকার বাইরে যেতে হবে।’
-‘ ও কোথায় যাবে?’
-‘ টাঙ্গাইল।তোমার যদি অসুবিধা হয় তো মেঘলাকে এসে থাকতে বলি তোমার সঙ্গে দুদিনের জন্য।’
-‘ খারাপ লাগলে আমি নিজেই বলব।তুমি কী আজই যাবে?’
-‘ হ্যাঁ।অফিস করেই চলে যাব।বাসায় আর আসব না।’
-‘ আচ্ছা সাবধানে যেও।পৌঁছে ফোন দিও একটু।’
শেষের কথাটা শুনে পুলক শ্রুতির দিকে তাকাল।ওর হাতের ওপর হাতটা রেখে একটা মুচকি হাসি দিল।আজকাল খুব কম সময় দিচ্ছে শ্রুতিকে সে সেটা পুলকের আজ খেয়াল হলো।আজ সারাটা রাত শ্রুতি বেলকোনিতে বসে কেঁদে পার করেছে।তার কাছে যেন আর কিছুই ভালো লাগছেনা।দম বন্ধ লাগছে এই ঘরের পরিবেশটাকে।আগে তো এমন কখনো লাগেনি।পুলকটা এভাবে পাল্টে যাবে সেটাও কখনো ভাবেনি শ্রুতি। পরেরদিন রাত নয়টার সময় ঈষাণ এসে হাজির হলো।বিস্ময় চোখে তাকিয়ে শ্রুতিকে দেখে ঈষাণ প্রশ্ন করল,
-‘ এটা কে? ‘
-‘ কেমন আছিস? ‘
-‘ আমি যে খুব ভালো আছি তা আমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।তোর শরীরের কী অবস্থা এটা?ওয়েট লস করছিস নিশ্চই? তাই বলে এরকম শুকনা কাঠির মত শরীর বানানোর কোনো মানেই হয়না শ্রুতি।চেহানার কী অবস্থা দেখেছিস?পুলক কিছু বলেনা তোকে? ‘
-‘ এই তুই এত কথা একসাথে বলিস কীভাবে রে?আয় বস আগে। ‘
-‘ সিরিয়াসলি তোকে দেখে আমার একটুও ভালো লাগছেনা।কী হয়েছে বল তো? চোখ মুখ একদম শুকিয়ে গেছে।মনে হয় কতকাল খাসনা ঘুমাসনা। ‘
-‘ আরে এমনিতেই।বয়স হচ্ছে তো।
চিরকালই কী একইরকম থাকব? ‘
-‘ একটা থাপ্পর খাবা।তুমি আমাকে বয়স দেখাচ্ছো।আমাকে বল কী হয়েছে?শরীর ঠিক আছে তোর? ‘
-‘ হুম একদম ঠিক আছি।তো এতদিন পর মনে পরলো আমাদের কথা? ‘
-‘ আমাদের কথা না শুধুমাত্র তোর কথা। পুলককে তো আজকাল ফোন করলেও পাওয়া যায়না।তোর কথা আর জিজ্ঞেস করবো কীভাবে?তাই তোকে দেখতে চলে এলাম।আজ নিশ্চই ওর এমন সময় বাইরে থাকার কথা নয়।আজ তো ফ্রাই ডে। ‘
-‘ অফিসের কাজে টাঙ্গাইল গেছে।আজ ফেরার কথা ছিল।কাল ফিরবে।একা মানুষ তাই আর তেমন কিছু রান্না করিনি।বল কী খাবি? ‘
-‘ এই থাম তো আসলেই শুধু খাওয়া খাওয়া।আমি তোর দিকে তাকাতে পারছিনা। ‘
-‘ তোকে তাকাতে হবেনা।তুই বস আমি আসছি। ‘
শ্রুতি উঠে রান্নাঘরে চলে গেল।তখনই শ্রুতির ফোনটা বেজে উঠল।পুলক ফোন করেছে।ঈষাণ ডাকতে গিয়েও শ্রুতিকে ডাকলনা।তার বদলে ফোনটা সাইলেন্ট উল্টে রাখল।এর মধ্যে মিনিমাম চারবার ফোন করেছে পুলক।শ্রুতি এসে ঈষাণের হাতে কফির মগ ধরিয়ে দিয়ে বলল,
-‘ তো বল বিয়ে কবে করছিস? ‘
-‘ চল্লিশ পার হোক তারপর ভেবে দেখব। ‘
-‘ এসব পাগলামী বাদ দিয়ে জলদি একটা বিয়ে টিয়ে কর। ‘
ঈষাণ শ্রুতির কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বসল ওকে।
-‘ তুই ভালো নেই তাইনা? ‘
-‘ কী শুরু করেছিস বল তো আসার পর থেকে। ‘
-‘ তুই কিছু হাইড রাখতে চাইছিস।আচ্ছা বলতে না চাইলে থাক।জোড় করবনা। আমি তাহলে উঠি।পুলকের সাথে তো আর দেখা হলোনা। ‘
-‘ উঠবি মানে?ডিনার করে তারপর যাবি। ‘
-‘ ফরমালিটিস পালন না করলেও চলবে। আসি, নিজের খেয়াল রাখিস। ‘
ঈশাণ যাওয়ার জন্য বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে শ্রুতি বলল,
-‘ তোর সাথে আমি ফরমালিটি করব কেন?আমার সাথে কী তোর ফরমালিটির সম্পর্ক?বসে যা না। ‘
ঈশাণের নিজেরও যেতে ইচ্ছা করছিল না।খুব মায়া লাগছে শ্রুতির মুখটা দেখে ওর।শ্রুতির পাশে গিয়ে বসল ঈশাণ।
-‘ মনে তো হচ্ছেনা ঠিকমত খাওয়া-দাওয়া করিস।আমারও খিদে পেয়েছে চল তো খেয়ে নিই। ‘
এক চিলতে হাসি দিয়ে শ্রুতি ডিনার রেডি করতে চলে গেল।দুজনে একসঙ্গে বসে খাবার শেষ করে আবার গল্প জুড়ে বসল।গল্পে গল্পে শ্রুতি ওর সংসার জীবনে নানারকম গল্পও করল।আজকাল পুলকের পরিবর্তনের বিষয়টাও শ্রুতি ঈশাণকে জানাল।
-‘ পুলককে যতদূর জানি সেই হিসাবে ওর এমন পরিবর্তনের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা।ওর কাছের বন্ধু বলতে তো জানি আমরা পাঁচজনই।আর অফিস কলিগদের সাথে তো এত ভালো সম্পর্ক কারো সাথে আছে বলে মনে হয়না।কারণ ও সবসময় কম মিশুক ছিল মানুষের সাথে।আর সবসময় নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সবসময় সচেষ্ট।তাহলে আড্ডাবাজি নিয়ে মেতে থাকার কোনো কোনো কারণ দেখছিনা আমি।তুই ওর সঙ্গে এই বিষয়ে ক্লিয়ার করে কথা বল। ‘
-‘ ইচ্ছে করেনা রে। ‘
-‘ শ্রুতি তোর সমস্যা কী বল তো।তুই একটু বেশিই চাপা।এত চাপা স্বভাব নিয়ে পুরুষ মানুষের মন জুগিয়ে চলা খুবই কষ্টকর।তোকে তো শক্ত থাকা উচিত। তোদের সম্পর্ক নিয়ে অনেকেই এখনো কানাঘুষা করে।সেখানে পুলকের এমন পরিবর্তন দেখা দিলে তোর বাবা-মাও বলা বাদ রাখবেনা।তারা আরো সুযোগ পাবে এটা নিয়ে। ‘
ওদের কথার মাঝেই শ্রুতির মেসেঞ্জারে মেসেজ আসার শব্দ পেল শ্রুতি।ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল পুলক বেশ কয়েকবার ফোন করেছিল।অনেকটা খুশি হয়ে কল করতে গেল কিন্তু হোমস্ক্রিণে রবিনের কনভার্সেশন দেখে আগে সেখানে ঢুকল। কিছুক্ষণ পরই শ্রুতির চোখ থেকে টুপ টুপ করে পানি পরতে থাকল।স্তব্ধ হয়ে বসে আছে শ্রুতি।
-‘ কী হয়েছে শ্রুতি?কাঁদছিস কেন? ‘
‘(নিশ্চুপ)’
-‘ কী হয়েছে বলবি তো? ‘
শ্রুতি নিশ্চুপ হয়ে ফোনের স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখদুটো ঝাপসা হয়ে আসছে ওর রবিনের মেসেজগুলো দেখে।