অনুরাগ
৩য় পর্ব
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
সিঁড়ি ভেঙে ওঠার সময় শ্রুতি বার বার কথা বলার চেষ্টা করছে পুলকের সঙ্গে। মুখটা বেঁধে রাখার জন্য মুখের শব্দটা কেমন যেন গোঙানির শব্দের মত শোনাচ্ছে।
পুলক ধমক দিয়ে বলল,
-‘ এই চুপ এত কথা কিসের? একদম নিচে ফেলে দিব কিন্তু।এমনিতেই জানটা বেরিয়ে আসার উপক্রম।দিন দিন খেয়ে আটার বস্তা হচ্ছে।বাপরে বাপ মিনিমাম পঞ্চান্ন কেজি তো হবেই।শরীরের অনেক মেদ জমে গেছে না?এর জন্য স্বামীকে স্বামী বলে গ্রাহ্য করতে ইচ্ছে করেনা।আজকেই মেদ একদম কমিয়ে দিব। ‘
পুলকের কথাগুলো শুনে শ্রুতি একদম চুপ করে গেল।বুকটা ফেঁটে কান্না আসছে ওর। পুলক এত বাজে ব্যবহার ওর সঙ্গে করতে পারছে?ও না হয় একটু রাগ দেখিয়ে তুই তুকারি একটু গালাগাল দিয়েছে।তাই বলে পুলক ওর সঙ্গে এত নোংরা ব্যবহার করবে।এমন ব্যবহার সহ্য করার থেকেই ওর মরে যাওয়াই ভালো।ছাদে উঠে চিলেকোঁঠার ঘরে চলে এল পুলক।তারপর শ্রুতি কে কাঁধ থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল।দুজনেই প্রচন্ড ঘেমে গেছে। চিলেকোঁঠার জানালাটা খুলে দিল আগে। চাঁদের আলোর জন্য ঘরের অর্ধেকটাই আলোকিত লাগছে। তারপর ফ্যানটা ছেড়ে রুমের লাইট অফ করে দিয়ে ছাদের মাঝে গিয়ে দাঁড়াল।চাঁদনিরাত তাই বিছানাতে বসেই শ্রুতি পুলককে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে।বাহিরে কিছুটা ঝিরিঝিরি বাতাসও বইছে।কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে পুলক ঘরে ঢুকল।শ্রুতি বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে পুলকের দিকে।দরজাটা বন্ধ করে পুলক শ্রুতির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল, ‘ তো তুমি রেডি? ‘
শ্রুতি মুখের ভঙ্গিতে বোঝাচ্ছে, ‘ কিসের জন্য রেডি হবো? ‘
পুলক বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘ কী বলো?বুঝিনা তো। ‘
চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে শ্রুতি পুলকের দিকে।অবশ্য সেটা পুলক ঠিক বুঝতে পারছেনা।
-‘ ওউ স্যরি।ওয়েট। ‘
তারপর মুখের বাঁধনটা খুলে দিয়ে পুলক বলল, ‘ এবার বলো। ‘
শ্রুতি মুখের বাঁধন খোলার সাথে সাথে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিতে থাকল।সেটা দেখে পুলক বলল, ‘ সিড়ি ভেঙে কাঁধে করে নিয়েলাম আমি। আর হাঁপাচ্ছো তুমি?সে যাই হোক তুমি রেডি তো? ‘
ঝাঁঝালো কন্ঠে জিজ্ঞেস করল শ্রুতি, ‘কিসের জন্য?মরার জন্য? ‘
-‘ না। ‘
-‘ এই তুমি কী করতে চাইছো বলো তো?”
-‘ রেপ করব। ‘
-‘ কীহ্? ‘
-‘ হুম।হাত পা বেঁধে জোড় করে ধর্ষণ করে দেখোনি টিভিতে?আমিও তাই করব। তারপর উঁচু করে ছাদ থেকে ফেলে দিব। ‘
কথাগুলো শেষ করে পুলক পাঞ্জাবীটা খুলে ফেলল।সেটা দেখে শ্রুতি চিল্লিয়ে বলল, ‘ দেখো তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো। আমার হাত পা খুলে দাও বলছি। ‘
কে শোনে কার কথা।পাঞ্জাবীটা খুলেই শ্রুতিকে একরকম ধাক্কা দিয়েই বিছানায় শুইয়ে দিল।শ্রুতির হাত দুটো সামনের দিক করেই বেঁধে রেখেছিল পুলক।বাঁধা হাতের ফাঁকা দিয়ে শ্রুতির উপর উঠে এল।তখন শ্রুতির বাঁধা হাতদুটো পুলকের ঘাড়ের ওপর পড়ল।মনে হচ্ছে পুলকের ঘাড় দুহাত দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে।পুলক জিজ্ঞেস করল, ‘ গরম লাগছে খুব? ‘
ইনোসেন্ট মুখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁবোধক উত্তর দিল শ্রুতি।
-‘ বলবে তো সেটা। ‘
পুলক শ্রুতির হাতের ফাঁক বেরিয়ে এসে শাড়ির আঁচলটা টেনে খুলে ফেলল ওর গা থেকে।তারপর ওকে বলল, -‘ দু’মিনিট সময় দিচ্ছি শাড়িটা খোলার জন্য।কোথায় কী ব্রুজ না সেফটিপিন লাগিয়েছো।সেগুলো তাড়াতাড়ি খুলো। আমি খুললে কিন্তু টেনে টুনে ছিড়ে ফেলব। ‘
শ্রুতি রাগ দেখিয়ে আর উঠলোনা।
ওভাবেই শুয়ে থাকল।পুলক ওকে টেনে উঠিয়ে দাঁড় করিয়ে শাড়ি খুলতে শুরু করল।শ্রুতি একদম তাজ্জব বনে গেল পুলকের কান্ড দেখে।এত ভদ্র ছেলেটা এই এক রাতের ভিতর এত অসভ্য হয়ে গেল কী করে?
-‘ তুমি কী পাগল হয়ে গেলে?ছিড়ে যাবে তো শাড়ি। ‘
-‘ ছিড়ুক। ‘
-‘ রেপিস্টদের মত করছো কেন? ‘
-‘ আমি এই মুহূর্তে একজন প্রফেশোনাল রেপিস্ট।শুনেছো তুমি?’
শাড়িটা খুলে নিচে ফেলে দিল।তারপর শ্রুতির কোমড় টেনে ধরে একদম কাছে নিয়ে এল।শ্রুতি কিছু বলতে গেলে পুলক ও ঠোঁটের ওপর আঙুল রেখে বলল,
-‘ অনেকক্ষণ ধৈর্য রেখেছি।আর পারছিনা রাখতে। ‘
-‘ কিসের ধৈর্য্য? ‘
কথার জবাব না দিয়ে শ্রুতির লাল ঠোঁটজোড়া একদম টেনে নিল ওর ঠোঁটজোড়ার মাঝে।কতসময় ধরে যে শ্রুতির ঠোঁটজোড়া চেঁপে রেখেছিল তা ঠিক খেয়াল নেই পুলকের।ঠোঁটজোড়াকে নিজের ঠোঁটের মাঝ থেকে মুক্তি দেওয়ার পর শ্রুতিকে বলল, ‘ এটার জন্য।সেই এক ঘন্টা আগে থেকে নিজেকে কন্ট্রোল রেখেছি। ‘
শ্রুতি দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল, ‘ তাই? ‘
-‘ হুম। ‘
-‘ হয়ে গেছে? ‘
-‘ না এখনো বাকি। ‘
-‘ তাহলে শুরু করো। ‘
-‘ আল্লাহ্! এই মেয়ে কী যেচে পড়ে… ‘
-‘ খাল্লাস হতে এসেছি। ‘
পুলকের গলা জড়িয়ে ধরে বলল শ্রুতি। পুলক ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাসি রেখে বলল, ‘ আজ তো তুই সত্যিই শ্যাষ। ‘
”
”
”
তানিয়াঃ হা হা হা…কী দুর্দান্ত একটা ঘটনা।উহ্ আমি হাসতে হাসতেই একদম শ্যাষ।
মেঘলাঃ ইশ আমাদের এই ইনোসেন্ট পুলকটা এত্ত রোমান্টিক সেটাই তো বিশ্বাস হচ্ছেনা।তোদের বিয়ের পর ভেবেছিলাম যে গাঁধাটাকে রোমান্স শেখাতে গিয়ে তুই বুড়িই হয়ে যাবি।
তানিয়াঃ আর এটাও মজা করে বলেছিলাম যে শেষমেশ দেখা গেল পুলকটাই না প্রেগনেন্ট হয়ে যায়।
শ্রুতিঃ এই শয়তানের ডিম চুপ কর।আমি গতকাল রাতে ওর ব্যবহারে কতটা অবাক হয়েছিলাম জানিস?আর ভয়টাও পেয়েছিলাম খুব।
মেঘলাঃ তো ভ্যালেন্টাইন আর বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কী গিফ্ট পেলি?
শ্রুতিঃ বিবাহবার্ষিকীর গিফ্টটা সিক্রেট আপাতত।ওটা কিছুদিন পর জানাবো তোদের।আর ভ্যালেন্টাইনের গিফ্টটার কথা আমি সারাজীবনেও ভুলব না।
তানিয়াঃ এই কী গিফ্ট রে? বল না।
মেঘলাঃ হুম,তুমি তো শুধু পারো কম্পেয়ার করতে।তোমার রবিনের থেকে বড় বা দামী কোনো গিফ্ট দিলো কিনা।
তানিয়াঃ মেঘলা তুই কিন্তু….
শ্রুতিঃ জানিনা এই গিফ্টটা বড় বা দামী কোনো গিফ্টের সঙ্গে কম্পেয়ার করা যাবে কিনা।ইভেন আমি কম্পেয়ার করতেও চাইনা।ছোটবেলা থেকে যে ছেলেটা বাবা-মা আপনমানুষ গুলো ছাড়া একা একাই বড় হয়েছে জীবন যুদ্ধে একাই সংগ্রাম করে এতদূর এসেছে।সেই মানুষটার জীবনে আমি একটু সুখের আভাস দিতে চেয়েছি সবসময়।বিয়ের পর ভেবেছিলাম আমার বাবা-মা’র আদর,স্নেহ আর ভালোবাসা পেয়ে নিজের বাবা-মায়ের ভালোবাসার ঘাটতি পূরণ হবে।কিন্তু বিধাতা সেই কপাল বোধহয় ওর রাখেনি। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে ওর একটুও আক্ষেপ নেই যে ও ওর শ্বশ্বুড়বাড়ি আদর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত।আমি কখনো মন খারাপ করে থাকলে ও কেমন যেন ভয় পেয়ে যেত।ভাবত আমি যদি আমার বাবা-মা কে ছেড়ে না থাকতে পারলে ওকে ছেড়ে যদি চলে যাই?তার জন্য কখনো ইমোশোনাল হয়েও আমাকে বলেনি, ‘ শ্রুতি প্লিজ আমাকে ছেড়ে কখনো চলে যেয়োনা। ‘ তার পরিবর্তে সবসময় আমার সামনে শক্ত মনের মানুষ হয়ে চলাফেরা করত।আর আমার মাথায় হাত রেখে বলত, ‘ এই বাচ্চাটা খুব মন খারাপ করছে বাবা-মায়ের জন্য?তাহলে যাও বাবা-মায়ের কাছ থেকে ঘুরে এসো।যেদিন ইচ্ছা হয় সেদিন আমার কাছে এসো।আমি এগুলো নিয়ে কখনোই অভিযোগ করবোনা।’
তানিয়াঃ তুই যে তোর বাবা-মায়ের কাছে কখনো ফিরে গেলে তারা যে তোকে কোনোদিনও ওর কাছে ফিরে আসতে দিতোনা সেটা কী ও বুঝতোনা?
শ্রুতিঃ বুঝতো।আর বুঝেও এই কথাগুলো বলতো শুধু আমার ভালো থাকার জন্য। নিজের ভালো থাকার জন্য ও কখনো অন্য কারোর ভালো থাকা বা সুখকে কেড়ে নিতে পারেনা।কথাগুলো হাসিমুখে বললেও ওর চোখে যে কী পরিমাণ ভয় থাকত আমাকে হারিয়ে ফেলার সেটা কেবল আমিই দেখেছি।জানিস আমাদের মাঝে এত ভালোবাসা থাকার পরেও আমি ওকে মাঝে মাঝেই রাতে বেলকোনিতে বসে কাঁদতে দেখেছি।আর তারপর আমার কাছে এসে ঘুমের মধ্যে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলত,
‘ এই হৃদপিন্ডটা কে আমার বুক থেকে ছিনিয়ে নিওনা মাবূদ।আমি আর সইতে পারবোনা।
একজনকে আমার থেকে চিরতরের জন্য কেড়ে নিয়েছো।আমি চুপচাপ সয়ে গেছি।কিন্তু ও আমার থেকে দূরে চলে গেলে আমি অন্ধকারে তলিয়ে যাব। ‘
এই কথাগুলো শোনার পর আমার বুকের বা পাশটাতে কী পরিমাণ ধাক্কা লাগে তা তোদের বোঝাতে পারবোনা।
তানিয়াঃ তার মানে তুই ওর জীবনে আসার আগে ও আরো একজনকে ভালোবাসতো?
শ্রুতিঃ হ্যাঁ।
মেঘলাঃ কিন্তু এমন কারো কথা তো আমরা কখনো শুনিনি।আর ভার্সিটিতে ওকে অনেক মেয়েই পছন্দ করতো।কিন্তু সম্পর্কের ব্যাপারটাতে এগিয়েছিল শুধুমাত্র তোর সঙ্গেই।আর তার একটামাত্র কারণ ছিল শুধু তোর গান।
তানিয়াঃ তুই এরপর জানতে চাসনি যে সে কে ছিল?
শ্রুতিঃ না।কেন জানতে চাইব?ও আমাকে যখন নিজে থেকে কিছু বলতে চাইছেনা তখন আমি কেন ওকে অযথা ফোর্স করব।ও তো কখনোই কোনোকিছুতে আমাকে ফোর্স করেনা।আর সব থেকে বড় কথা যদি এমন কেউ থেকেও থাকে ওর জীবনে সেটা ওর অতীত।আর আমি ওর বর্তমান।এমন তো না ও আমাকে ঠঁকিয়ে যাচ্ছে।আর যে ছিল সে ওর জীবন থেকে চিরতরের জন্য চলে গেছে।
মেঘলাঃ হুম বুঝলাম।জানিস তো শ্রুতি, মাঝে মাঝে তোদের দুজনের এত বোঝাপড়া এত বিশ্বাস,ভরসা আর ভালোবাসা দেখলে বড্ড হিংসে হয় আমার।তোরা দুজন দুজনের কাছে কতোটা পরিষ্কার।খুব সুখে থাকরে তোরা।
তানিয়াঃ কিন্তু তোর গিফ্টটা কী ছিল? সেটা তো বললিনা।
শ্রুতিঃ অনেকদিন পর ওর পুরোনো খুশিটা।
তানিয়াঃ মানে?
শ্রুতিঃ কাল রাতে ও আমাকে বলল, ‘ অনেকদিন পর আমার জীবনের একটা পুরোরো খুশি ফিরে পেতে চলেছি। ‘