অনুভূতি পর্ব ৪৮

0
1998

অনুভূতি
পর্ব ৪৮
মিশু মনি
.
৭৭.
খাবার টেবিলে বাবা চারটা কার্ড দেখিয়ে বললেন, “ইনভাইটেশন কার্ড। ডিজাইন গুলো মিশুকে দেখিয়ে একটা সিলেক্ট করিস।”
মেঘালয় চমকে উঠলো কার্ড দেখে। একদিনের মধ্যে বাবা কার্ডও পছন্দ করে ফেলেছে! আসলে বাবা মা ওকে খুবই ভালোবাসেন,তাই ছেলেকে সারপ্রাইজ দিতেও ভালোবাসেন। কিন্তু মিশু তো এখনি কিছুতেই বিয়ে করতে চাইছে না, এটা বাবা মাকে কিভাবে বলা সম্ভব?
বাবা বললেন, “আমি এদিকে যা যা করতে হয় সবই ভেবেচিন্তে ঠিক করে ফেলবো। যেহেতু আমাদের আর নিজস্ব লোক নেই,আমাদেরকেই সব ব্যবস্থা করতে হবে। তোর কাজিনদের ডাকবি, আমি তোর চাচা আর মামাদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি। এখন তোর প্রথম কাজ হচ্ছে একজন ভালো ওয়েডিং প্লানারকে সিলেক্ট করা।”
মেঘালয় অবাক হয়ে বললো, “আব্বু! এসব কি বলো? এত দ্রুত এতকিছু করে ফেলেছো?”
বাবা বললেন,”হুম। কারণ আমার একটাই ছেলে,কিন্তু আমাদের রিলেটিভ আর ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক। বিয়ে তো একবার ই হবে,আমি চাই আগামী দুদিনের মধ্যেই সব আত্মীয় স্বজন আমাদের বাসায় চলে আসুক। এক সপ্তাহ ধরে আনন্দ চলুক বিয়ের। আকাশ আহমেদের ছেলের বিয়ে বলে কথা। এক সপ্তাহ বাসায় লাইট জ্বলবে,হৈ চৈ হবে। তবেই না বিয়ে বাড়ি বিয়ে বাড়ি মনেহবে।”
মেঘালয়ের বুকটা চিনচিন করতে শুরু করেছে। মিশু যদি আগের মত থাকতো তাহলে আজকের এই কথাগুলো শুনলে ওর সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করতো। বাবা মা ওকে নিজের মেয়ের মত মনে করে। ওনারা কত কিছু প্লান করে ফেলেছেন। এখন কিভাবে বাধা দেবে মেঘালয়? কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। বাবার আরো দু একটা প্লান শুনে মেঘালয় নিজের রুমে আসলো। এসেই কল করলো মিশুকে।
বাবার সমস্ত প্লানের কথা শুনে মিশু বললো, “এতকিছু কেন ব্যবস্থা করে ফেললো? এত তাড়াতাড়ি আমি বিয়ে করতে চাইনা।”
– “বিয়ে তো হয়েই গেছে। এমন ভাব করছো যেন তোমাকে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে আমার সাথে?”
– “ব্যাপার সেটা নয়। সংসার আর এত বড় একটা ওয়েডিং প্রোগ্রামের জন্য মেন্টাল প্রিপারেশন দরকার। হুট করেই হয়না।”
– “মিশু,প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে এরকম ধুমধাম করে খুব আয়োজন করে বিয়ে হোক। বাবার মত শ্বশুর পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তুমি শ্বশুর শ্বাশুরি নয়,নতুন বাবা মা পেতে চলেছো।”
– “মেঘ,একটু বোঝার চেষ্টা করো প্লিজ।”
মেঘালয় বললো, “আমার ভাই হিমালয়কে হারিয়ে মা আমাকে বুকে আগলে রেখে বড় করেছে। তাদের কত স্বপ্ন আর আশা আমাকে নিয়ে। আমার পছন্দ ওরা মেনে নিয়েছে। তোমাকে ভালোবাসি কথাটা শুনে ওরা তোমার পরিচয় জানার ও প্রয়োজন মনে করেনি। মেনে নিয়েছে তোমায়। এখন ওদের করা প্লান গুলোকে আমি চুরমার করে দিতে পারিনা। তোমার আপত্তি থাকলে তুমি নিজে কথা বলো ওদের সাথে।”
মিশু একটু থেমে বললো, “আমিই বাবার সাথে কথা বলবো।”
– “কিহ! তুমি বাবার সাথে কথা বলবে তবুও বিয়ে করবে না?”
– “একটু সময় নিবো কিছুদিন। অন্তত দুইমাস।”
– “তারমানে আমাকে আরো দুইমাস তোমাকে ছাড়া থাকতে হবে? আমি পারছি না মিশু। আমার কষ্ট হয়।”
মিশুর জবাব পাওয়া গেলো না। কলটা হুট করেই হোল্ড হয়ে গেলো। মেঘালয় তিন মিনিট ফোন কানে ধরে রইলো, কল হোল্ড। ও রাগে ফোনটা গায়ের জোরে ছুড়ে মারলো। ফোনটা দেয়ালে লেগে ব্যাটারি খুলে বিছানার উপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। মেঘালয় মেঝেতে বসে রাগে নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে লাগলো। আজকে দিনে মিশুকে কাছে পাওয়ার পর ওভাবে সরিয়ে দিয়েছে সেই আঘাতটা এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মেঘালয় ও তো মানুষ, কত সহ্য হয়?
ও সায়ানকে কল দিয়ে বললো, “দোস্ত কই তুই? খাওয়ার মত কিছু আছে?”
– “মানে? কি খাবি?”
– “মাল খাবো মাল। মেজাজ খুব গরম, কিছু আছে?”
– “এত রেগে আছিস কেন? মিশুর সাথে কিছু হয়েছে?”
মেঘালয়ের বুকে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ার মতন প্রশ্নটা এসে লাগলো। কিভাবে এর উত্তর দিবে ও? কতটা দহনে দগ্ধ হচ্ছে সে শুধু মেঘালয়ের ভেতর টাই জানে। বাবা মায়ের করা প্লানগুলোকে কিভাবে ধুলিসাৎ করবে ভেবে আরো খারাপ লাগছে। দুপুরে মিশুর কাছ থেকে তাচ্ছিল্য হওয়ার পর মেজাজ চরম খারাপ হয়ে আছে। মিশু কি ভেবেছে ওকে? ও কি বনের জন্তু? কিন্তু সায়ানকে কিছু বলতে পারলো না।
সায়ান বললো, “কি হইছে আমাকে বলবি না?”
– “বাসায় আংকেল আন্টি আছে?”
– “না। দুজনেই সিলেটে আছে। দুদিন থাকবে।”
– “আমি আসছি তোর বাসায়।”
মেঘালয় ওর বাবা মায়ের রুমে এসে বাবাকে বললো, “আব্বু, আমি সায়ানদের বাসায় যাচ্ছি। কখন আসবো বলতে পারছি না। আমার ফোন আছাড় দিয়েছি, দরকার হলে সায়ানের নাম্বারে কল দিও।”
বাবা মা অবাক হয়ে তাকালেন মেঘালয়ের দিকে। কি বলছে কিছুই বুঝতে পারছেন না ওনারা। মেঘালয়ের কি হলো হঠাৎ করে? এমন তো কখনো করেনা ও। ফোন আছাড় দেয়ার মত বাজে অভ্যাস ওর কখনোই ছিলোনা। ওনারাও চিন্তায় পড়ে গেলেন।
মেঘালয় বললো, “আমি একটু একা থাকতে চাইছি দুটো দিন। মিশু ফোন দিলে কি বলে শুনিও। আর মিশুকেই জিজ্ঞেস করো ও এখন ই বিয়ের জন্য প্রস্তুত কিনা?”
বাবা কিছু একটা বলতে যাবেন কিন্তু তার আগেই মেঘালয় এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো, “টেনশন করোনা আমার জন্য। শুধু দোয়া করো একটু। আমার মনের উপর দিয়ে খুব ঝড় বয়ে যাচ্ছে।”
আর কিছুই বললো না। সোজা বেড়িয়ে এসে গাড়ি নিয়ে সায়ানের বাসায় চলে এলো।
সায়ানকে সব কথা খুলে বলে অনেকটা হালকা লাগছে মেঘালয়ের। সায়ান নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। চেয়ে আছে মেঝের দিকে। ওর বিশ্বাস ছিলো দুনিয়া উলটে গেলেও মিশু কখনো বদলাবে না। সেই মিশুই বদলে গেছে ব্যাপারটা কিছুতেই ও মেনে নিতে পারছে না। ভেতরে দহন শুরু হয়ে গেলো ওর ও। এটা কিভাবে সম্ভব!
মেঘালয় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সায়ান বললো, “নিশ্চয় ভালোমতো ঘুমাস না। আজকে আমার সাথে ঘুমা তো। আমাকে একটু ভাবতে দে। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ মাইন্ডে একটা আলোচনা করা যাবে।”
মেঘালয় কিছু বললো না। ওর মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। গত একটা মাস ধরে একটু একটু করে মিশুর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। প্রথমে বুঝতে পারেনি ও। বুঝতে পারার পর অনেকবার করে মিশুকে বলেছে তুমি আর আগের মত নেই। মিশু হেসেই উড়িয়ে দিয়েছে। আর এখন বললে অস্বীকার করছে কথাটা। কি করতে পারে ও এখন? চিন্তায় ঘুম আসবে না। তাই বেশ কয়েকটা স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। মাথাটাও একটু বিরতি চাইছিলো। শোয়ার পরপরই ঘুম এসে গেলো।
মেঘালয়ের ঘুম ভাংলো পরেরদিন দুপুর দুটার পর। সায়ান জানালো ওর আম্মু একবার ফোন দিয়ে খোজ নিয়েছে। মেঘালয় আশা করেছিলো মিশু একবার ফোন দেবে। কিন্তু মিশুর ফোন না পেয়ে একটু মন খারাপ ই হলো ওর। সায়ান খাবার নিয়ে এসে বলল, “আগে খা তারপর কথা বলি।”
মেঘালয় সায়ানের অনুরোধে একটু খাবার খেলো। তারপর দুই বন্ধু মিলে আলাপ করতে লাগলো কিভাবে মিশুকে সবকিছু বুঝিয়ে বলা যায়। সায়ান বললো, “যেভাবে পারিস ওকে একবার ট্যুরে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে ঘুম পারিয়ে হলেও ওকে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টেমে একবার ট্যুরে নিয়ে গেলে দেখবি একান্ত তোকে পেয়ে সব ভূলে গেছে।”
আইডিয়াটা বেশ পছন্দ হলো মেঘালয়ের। মিশুকে যেভাবে পারে ট্যুরে নিয়ে যেতে হবে। দরকার হলে মিথ্যে বলে নিয়ে যেতে হবে। কারণ প্রকৃতির কাছে গেলে ও একদম বদলে যায়। সেই বাচ্চা স্বভাবটা চলে আসে ওর মাঝে। এখন ওকে নিয়ে কোথাও একাকী ভাবে ঘুরতে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। একান্তভাবে পেলে সবকিছু বুঝিয়ে বলা সম্ভব। তারপর বিয়েতেও রাজি করানো যাবে।
কোথায় যাওয়া যায় এসব নিয়েও প্লান করে ফেললো। এখন কিভাবে মিশুকে ট্যুরে নিয়ে যাবে সেটা ভাব্বার বিষয়। এটা নিয়েই চিন্তা করতে লাগলো দুই বন্ধু মিলে। মেঘালয়ের ফোন তো বাসায় পড়ে আছে, মিশু কি একবার ফোনও দেয়নি? খুব জানতে ইচ্ছে করছে। তবুও মনটাকে শান্ত করে বসে রইলো ও।
সারাদিন কোথাও বের হলোনা। রাতে বের হয়ে পূর্ব, আরাফ ও সায়ানের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটু আড্ডা দিলো। কাজের চাপে অনেক দিন বন্ধুদেরকে সময় দিতে পারেনি। অনেকদিন পর সবার সাথে কথা বলে বেশ ভালো হয়ে গেলো মনটা। কিন্তু সায়ান ছাড়া কাউকেই জানালো না মিশুর এই অদ্ভুত পরিবর্তনের কথা।
রাতে সায়ানের বাসাতেই ফিরলো। বাড়িতেও কল দিলোনা। সায়ানকে জানিয়ে রাখলো মা ফোন দিলে যেন কথা বলে রেখে দেয়। ও একটু একা থাকতে চায়। রুমে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে মনে করছে সেই প্রথম দিনের কথাগুলো। রাতারগুলে গিয়ে পাগলিটা চাটনি বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছিলো। কত সুন্দর ছিলো মিশু পাগলীটা। এখনকার মিশুটাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মেঘালয়। বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যেতে চাইছে।
এমন সময় সায়ান এসে বললো, “মেঘ, Rj প্রয়াসের মান্থলি ইনকাম কত হয় রে?”
মেঘ একটু ভেবে বললো, “ও তো অনেক রকমের কাজ করে। এই দুই লাখের মত আসে।”
সায়ান হেসে বললো, “বাহ! আর তোর মাসে কত আসে?”
– “আমি তো সেভাবে হিসেব করিনি। সবকিছু শুধু দেখাশোনা করি। যখন যা লাগে বের করে নেই। ইনকামের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবিনি কখনো।”
সায়ান এসে হাসতে হাসতে বললো, “এটাই স্বাভাবিক না? প্রয়াসের অনেক নাম যশ। হ্যান্ডসাম, সেলিব্রেটি, ফিল্ম টিল্ম করে। আরো কত কি!”
– “মানে? হঠাৎ ওর কথা জিজ্ঞেস করছিস কেন?”
সায়ান ওর ফোনটা এগিয়ে দিলো মেঘালয়ের দিকে। ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকানো মাত্রই মেঘালয় দেখতে পেলো প্রয়াসের আইডি থেকে ছবি আপলোড করা হয়েছে। সেই ছবিতে মিশু ওকে কেক খাইয়ে দিচ্ছে আর আশেপাশে অনেক লোকজন হাত তালি দিচ্ছে। ক্যাপশনে লিখেছে, “এই পুতুল বালিকাকে ছাড়া আমার বার্থডে একদম অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।”
মেঘালয়ের মাথায় রক্ত উঠে গেলো যেন। ও সায়ানের ফোনটাই আছাড় মারতে যাচ্ছিলো। সায়ান ওকে থামালো। মেঘালয় কিছুতেই আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। বিছানার উপর একটা পাওয়ার ব্যাংক ছিলো সেটা নিয়েই মেঝেতে ছুড়ে মারলো।
সায়ান মেঘালয়কে ধরে বলল, “কি পাগলামি করছিস?”
মেঘালয় ডুকরে কেঁদে উঠলো এবার। সায়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, “আমি আর সহ্য করতে পারছি না রে। আর পারছি না। একটা মাস ধরে আমাকে এভোয়েড করে যাচ্ছে মিশু। আমি সহ্য করতে করতে আর নিতে পারছি না। এতদিন তবুও নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি। কিন্তু এটা দেখার পর আর পারছি না।”
সায়ান বললো, “কষ্ট পাস না। হতে পারে ওদের মাঝে কোনো রিলেশন নেই। মিশু হয়ত জাস্ট ফ্রেন্ডলি মেশে। যেহেতু একসাথে কাজ করে,একটা ভালো বন্ডিং ক্রিয়েট হতেই পারে। তুই মন খারাপ করিস না। ও তো তোর বউ।”
মেঘালয় চোখ মুছে বললো, “আমার এতটুকু বিশ্বাস আছে যে মিশু আর কারো সাথে এফেয়ারে জড়াবে না। কিন্তু আমি যে ওকে কোনো ছেলের সাথে দেখলে সহ্য করতে পারিনা। আমার মাথা খারাপ হয়ে যায়। এটা কি মিশু জানেনা? তবুও কেন প্রয়াসের সাথে মিশতে যাবে ও?”
সায়ান কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পেলোনা। মেঘালয়কে সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “টেনশন করিস না। হয়ত এমনিতেই দাওয়াতে গেছে,প্রয়াসই হয়ত ওকে পছন্দ করে। এটা নিয়ে মন খারাপ করিস না।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “মানলাম তোর কথাই ঠিক। কিন্তু অন্য কারো সাথে আমি ওকে মানতে পারিনা একদম ই। তুই কি জানিস আমাদের বিয়ের প্রথম রাতেই ওকে আমি থাপ্পড় মেরেছিলাম? ও তোদের সাথে ডান্স করেছিলো বলে। তোরা আমার সবচেয়ে আপনজন, তবুও আমি মেনে নিতে পারিনি। বাসর রাতে ঘরে ঢুকেই ও আমার থাপ্পড় খেয়েছে।”
সায়ান অবাক হয়ে তাকালো মেঘালয়ের দিকে।
মেঘালয় একটু থেমে আবারো বললো, “সায়ান রাগ করিস না। আমার প্রোগ্রামের দিন তোকে ওর হাত ধরে বসে থাকতে দেখে আমি সহ্য করতে পারিনি। অনেক কষ্টে গান গেয়েছিলাম। ওকে নিয়ে বাইরে আসার সময় তুই ওর কাঁধে হাত রেখেছিলি এটা দেখে আমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। আমি কি করেছি জানিস? বাইরে বের হয়ে পাগলের মত বিহ্যাভ করছিলাম মিশুর সাথে। একবার বলছিলাম মেডিকেলে যাবো, একবার রিক্সা নিয়ে শিল্পকলা। আমার মেজো খালামণির সাথে চরম খারাপ আচরণ করেছিলাম সেদিন। বাসায় গিয়ে মিশুকে গলা টিপে মেরে ফেলতে চাইছিলাম শুধুমাত্র তোর সাথে ওভাবে দেখে। ওর জিভ বেড়িয়ে এসেছিলো এত জোরে টিপে ধরেছিলাম। ভাবতে পারিস?”
সায়ান অবাক হয়ে বললো, “মেঘ! তুই ওকে কতটা ভালোবাসিস আমাদের কারো অজানা নয়। ও ছোট মানুষ, হুট করেই নতুন পরিবেশ পেয়েছে তাই এরকম করছে। তুই প্লিজ মন খারাপ করিস না।”
– “আমি মরে যাবো রে ওকে ছাড়া। ও ছাড়া আমার দুনিয়াটা অন্ধকার।”
– “কিন্তু এখন ওকে এই ব্যাপার নিয়ে সিন ক্রিয়েট করে কোনো লাভ হবেনা। বরং ও আরো রেগে যাবে। যে বদলে যায়,তার মধ্যে কখনো এসব ন্যায় নীতি বোধ কাজ করেনা।”
মেঘালয় একটু ভেবে বলল, “আমি ওকে কিভাবে বুঝাবো? কি বললে বুঝবে ও?”
সায়ান কিছুক্ষণ গালে হাত দিয়ে বসে চিন্তা করলো। তারপর বললো, “ওকে বুঝাতে গেলেও ও ক্ষেপে যাবে। তখন উলটা তোর উপর রিয়েক্ট দেখাবে। বলতেও পারে আমি সেপারেশন চাই।”
– “কিহ!”
মেঘালয় দুহাতে মাথার চুল টেনে ধরে কান্না করে ফেললো। বললো, “আমার জগতের পুরোটাই ওকে দিয়ে দিয়েছি। সবখানে শুধু মিশু রাজত্ব করে। ওকে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে? আমাকে খুন করে ফেললেও এতটা কষ্ট হবেনা যতটা ওকে ছেড়ে দিতে হবে। আমি কি করবো এখন? কিছুই মাথায় আসছে না।”
সায়ান মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুক্ষণ। প্রখর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মেঘালয় আজ নিতান্তই নিঃস্ব হয়ে গেছে। বড্ড অসহায় দেখাচ্ছে ওকে। এই মেঘালয় একজন সত্যিকার প্রেমিক,একজন সত্যিকার ভালোবাসার মানুষ। যে তার ভালোবাসা ছাড়া অসহায়। কিভাবে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। সায়ান নিজে একবার কথা বলবে কি মিশুর সাথে?
মেঘালয় বললো, “আমার মাথা কাজ করছে না। কিছু খেতে হবে। ড্রিংকস করবো।”
– “পাগলামো করিস না তো। ভাব আর একটা উপায় বের কর। সবকিছুর আগে জানতে হবে মিশু প্রয়াসের সাথে কোনো রিলেশনশিপে গেছে কিনা।”
– “প্লিজ এই কথা বলিস না। প্রয়াসকে খুন করে ফেলবো আমি।”
– “শান্ত হ দোস্ত।”
মেঘালয় কে অনেক সান্ত্বনা দিচ্ছে সায়ান। তবুও মেঘালয় কিছু বুঝতে চাইছে না। ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। মিশুকে ছাড়া কিচ্ছু ভাবতে পারছে না ও।
মেঘালয় বললো, “আম্মু আব্বুকে এটা কিছুতেই বলা যাবেনা। ওরা ওদিকে বিয়ের প্লান করছে। আমি বলেছিলাম দশ দিনের মধ্যে এরেঞ্জ করতে। সেজন্য মামা চাচাদেরকেও ফোনে জানিয়ে দিয়েছে। সবাই এসে যাবে দুদিনের মধ্যে। কি করি এখন বল? এখন যদি মিশু বলে দেয় আরো সময় চাই,তখন বাবা মা কষ্ট পাবেনা?”
– “তা তো পাবেই। এটা তো আর রিলেশন নয় যে ব্রেকাপ করবি।”
মেঘালয় বললো, “রিলেশনের ব্রেকাপ হয়, স্বামী স্ত্রীর ডিভোর্স হয়। কিন্তু ভালোবাসার কখনো ব্রেকাপ হয়না রে। এটা আজীবন থাকে। আমি ওকে ভালোবাসি, প্রচণ্ড ভালোবাসি।”
সায়ান নিশ্চুপ। এরকম পরিস্থিতি আসবে সেটা ভেবে ও আগেই ভয় পেয়েছিলো। তবে ও ভেবেছিলো মেঘালয় বদলে যাবে। মিশু বদলে যাবে এটা ওর কল্পনাতীত ছিলো। এখন মেয়েটার মনে কি চলছে বুঝে আসছে না ওর।
মেঘালয় হঠাৎ উঠে বাথরুমে চলে গেলো। ফ্রেশ হয়ে এসে বললো, “আমি একটু বের হবো।”
-“কই যাবি?”
মেঘালয় কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ বসে ভাবতে লাগলো। কি যেন ভাবছে গভীর মনোযোগ দিয়ে। সায়ান ওর দিকে বারবার তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। মেঘালয় উঠে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো, “আমি মিশুর কাছে যাচ্ছি।”
সায়ান চমকে উঠলো- “এত রাতে?”
– “হুম।এবার আমি কি করি তাই দ্যাখ। আমার অবহেলা সহ্য হচ্ছেনা।”
সায়ান তাকিয়ে রইলো মেঘালয়ের দিকে। মেঘালয়ের চোখেমুখে যেন আগুন ঝরছে। ও বাসা থেকে বেড়িয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত মিশুর বাসার দিকে রওনা দিলো।
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে