অনুভূতি পর্ব-০৮

0
1533

#গল্পের_নাম_অনুভূতি
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ৮
জাবেদা বেগম, অবনি,আর আবরার একসাথে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে আর টুকটাক কথা বলছে।জাবেদা বেগম গম্ভীরমুখেই বসে আছে আবরার বুঝতে পারছেনা মায়ের রাগ কীসের উপর?সে কী কোনো ভুল করলো?খাবার মুখে দিচ্ছে আর একথাটি ভাবছে সে হঠাৎ জাবেদা বেগম গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
~আবরার তোর খালা আর আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করেছি।তোর যেদিন অফিস নেই সেদিন গিয়ে মেয়েটাকে দেখে আসিস।
আবরারের খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো অবনি ড্যাবড্যাব করে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে জাবেদা বেগমেরে তাতে কোনো হেলদোল হলো না সে নিজের খাবার খেয়ে যাচ্ছে।আবরার খাবারের প্লেট হাত দিয়ে ঠেলে দূরে পাঠিয়ে দিলো জাবেদা বেগম ছেলের দিকে একপলক তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগী হলেন।আবরার শান্তস্বরে বলে উঠলো,
~বিয়ে আমি করবো না মা
জাবেদা বেগম কোনো কথা বললেন না আবরার তার কথা শেষ করে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো এরপর নিজ রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জাবেদা বেগম বললেন,
~অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়ে লাভ নেই এতে ক্ষতিটা তোমারই হবে।
আবরার পা থামিয়ে ঘুরে দাড়ালো তারপর মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
~তাহলে তুমিও তো আমাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছো যে মেয়েটার সাথে তোমরা আমাকে বেঁধে দিতে চাইছো তাকে কী আদৌ আমি মেনে নিবো?
এতটুকু বলে আবরার রুমে চলে গেলো অবনি মায়ের আর ভাইয়ের কথার মাঝে একটা নীরবতা বজায় রেখে গেলো।জাবেদা বেগম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো তারপর টেবিল গুছাতে শুরু করলো।
আরফি বারান্দায় দাড়িয়ে আকাশ পাণে তাকিয়ে আছে তার মাথায় এখন একটা নামই বিচরণ করছে। নামটা হচ্ছে আবরার মানুষটার ব্যবহারে ইদানিং সে মুগ্ধ হচ্ছে।আবরারের কেয়ারিং স্বভাবটা সবচেয়ে বেশি তার পছন্দ তার কথা গুলো শুনে আজ অনেক ভালো লেগেছে এসব ভাবতেই আরফির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।আরফি পাশে থাকা দোলনায় বসে পরলো গুনগুন করে গান গাইছে তখনই রুকাইয়া এসে উপস্থিত হলো আরফির গানের আওয়াজ পেয়ে বারান্দার দরজার সামনে দাড়ালো।আরফি রুকাইয়াকে দেখে চুপ হয়ে গেলো এরপর হাসি মুখে বললো,
~ভাবি তুমি?ঘুমাও নি
রুকাইয়া হালকা হেসে বললো,
~তোমার ভাই কিছু কাজ করছে তার জন্য চা বানাতে রান্নাঘরে গিয়েছিলাম তখন দেখলাম তোমার ঘরের দরজা খোলা তাই ভাবলাম একটু আড্ডা দিয়ে যাই।
আরফি বললো,
~আসো বসো।
রুকাইয়া চেয়ারে বসে পরলো আর বললো,
~কী ভাবছিলে?
আরফি বললো,
~কিছু না ভাবি আকাশটা দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে তাই ভাবলাম আজ এই সৌন্দর্যটাকে একটু উপভোগ করি।
রুকাইয়া বললো,
~হুমম কখনো কখনো প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতেও ভালো লাগে।আজ অবনির সাথে দেখা করে ভালোই লাগলো
আরফি বললো,
~হুমম অনেক ভালো লেগেছে অবনি আপু অনেকই ভালো মেয়ে।তার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে
রুকাইয়া বললো,
~আর আবরারের সাথে?
রুকাইয়ার কথায় আরফি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকালো

রুকাইয়া হেসে বললো,
~এভাবে চোখ বড় করে কী দেখছো?আমার প্রশ্নের জবাব দেও।
আরফি বললো,
~কী বলছো তুমি এসব?
রুকাইয়া বললো,
~কী বললাম আমি তো শুধু আমার মনের কথাটা জিজ্ঞেস করলাম।
আরফি রুকাইয়ার মজা নেওয়াটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো আরফি হালকা হেসে বললো,
~খুবই দুষ্টমি হচ্ছে এখন।
রুকাইয়া ভ্রুকুচকে বললো,
~কোথায় দুষ্টামি করলাম?আমি তো সাধারণ একটা প্রশ্ন করলাম।
আরফি বললো,
~ভাবি যদি বলি আবরারের সাথে দেখা করে ভালো লেগেছে আমার মনের কোণে একটা সুক্ষ্ম অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তাহলে কী করবে?
আরফির মুখ থেকে প্রতিটি শব্দ শুনে রুকাইয়ার মুখের হাসি চওড়া হয়ে গেলো সে খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
~অনুভূতিটার নাম কী ভালোবাসা?
আরফি বললো,
~কী বলছো ভাবি?তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমার। সে একজন বন্ধু হিসেবে ভালো এরচেয়ে বেশি কিছুই না।
রুকাইয়া বললো,
~আরফি সময় নেও ভাবো এই অনুভতিটাকে নিয়ে কারণ সবার জীবনে দ্বিতীয় সুযোগ আসে না।
রুকাইয়া কথা শেষ করে উঠে দাড়ালো আরফি এখনো বসে আছে তার মাথা নিচু অবস্থায় আছে
রুকাইয়া আরফির মাথায় হাত বুলিয়ে বারান্দা থেকে চলে গেলো আরফি এখনো সেভাবেই বসে আছে।তার মনের ভিতর ঝড় বইছে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে আবরার রেডি হচ্ছে আয়নার সামনে দাড়িয়ে শার্ট ঠিক করছে হাতে ঘড়িটা পরে।আয়নার সামনে থেকে সরে টেবিলে রাখা ফাইলটা হাতে নিলো ভ্রুকুচকে ফাইলটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে।তখনই অবনি রুমে ডুকলো আবরার ফাইলটার দিকে তাকিয়ে বললো,
~কিছু বলবি অবনি?
অবনি বললো,
~মা কষ্ট পেয়েছে ভাই
আবরার ফাইল রেখে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,
~মা কষ্ট পায়নি খালা তার মাথাটা ওয়াশ করেছে ছোট থেকেই তো দেখছিস খালা কেমন?
অবনি বললো,
~এই জন্য মাকে আমি খালার কাছে যেতে দেইনা।আজ মনে হয় খালা আসবেন।
আবরার বললো,
~আমার ক্লাস নিতে আসবে।তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।
অবনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
~তাই যেন হয় ভাই।
আরফি আনমনে হাঁটছে রাস্তা দিয়ে আজ সে রিক্সা নেয়নি।এই রাস্তাটা দিয়ে তার হেঁটে যেতে মন চাইছে আশেপাশে গাড়ির আওয়াজ কোলাহল সম্পূর্ণ পরিবেশ।আরফি হাঁটছে তখনই তার সামনে আবরার এসে দাড়ালো আরফি আবরারকে দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও নিজেকে সামলে বললো,
~আপনি এখানে?
আবরার হাসি মুখে বললো,
~এখান দিয়ে যাচ্ছিলাম তোমাকে দেখলাম তাই দেখা করতে চলে আসলাম।কোনো প্রবলেম?
আরফি বললো,
~কোনো প্রবলেম না।
তারা দুজন হাঁটতে লাগলো আবরার বললো,
~এতো উদাসীন কেন আজ তুমি?
আরফি বললো,
~একটা বিষয় নিয়ে ভাবছি
আবরার বললো,
~কোন বিষয়?
আরফি বললো,
~ভালোবাসার অনুভূতিটা কেমন হয়?
আবরারের পা থেমে গেলো সে ওভাবেই দাড়িয়ে পরলো আরফি নিজের পাশে আবরারকে না দেখল পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আবরার হ্যাবলার মতো দাড়িয়ে আছে।

আরফি আবরারের কাছে গিয়ে বললো,
~কী হয়েছে এভাবে দাড়িয়ে আছেন কেন?
আবরার আরফির কথা শুনে নিজেকে সামলে নেয় তারপর বলে,
~আরফি ভালোবাসার অনুভূতিটা এত সুন্দর যে তুমি ভাবতে পারবেনা।এতে অস্থিরতা থাকলেও শান্তি পাওয়া যায় দিনশেষে ভালোবাসার মানুষটিকে একপলক দেখতে পেলে যে শান্তি পাওয়া যায় তাতে সারাদিনের ক্লান্তি তুমি ভুলে যাবে।ভালোবাসা সেই সুক্ষ্ম অনুভূতি যা তোমার মনে আলাদা এক শিহরণ বয়ে আনবে।ভালোবাসার অনুভূতি কোনোদিন পুরোনো হয় না বরং দিন দিন এটার নতুনত্ব প্রকাশ করে।
আবরারের প্রতিটি কথা আরফি মনোযোগ সহকারে শুনলো তারপর বললো,
~কলেজের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে আমি আসি।
বলেই রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পরলো আরফি চলে গেলো তার গন্তব্যে। আবরার একবার আরফির যাওয়ার দিকে তাকালো তারপর ঘন কালো আকাশের দিকে তাকালো আজ বৃষ্টি হবে সেই বৃষ্টির পানির স্রোতে হয়তো আবরারকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।
আরফান অফিসে বসে কাজে ব্যস্ত কাল ছুটি নেওয়ার কারণে আজ কাজের চাপটা একটু বেশি।আরফান মনোযোগ সহকারে কাজ করছে তখনি তার ফোন বেজে উঠলো আরফান বিরক্তি নিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো রুকাইয়ার ফোন।আরফান হাতের কলমটা টেবিলে রেখে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রুকাইয়া অস্থির আর কান্নারত কন্ঠে বলে উঠলো,
~আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসেন বাবার অবস্থা ভালোনা যত দ্রুত সম্ভব বাসায় চলে আসেন।
এতটুকু বলে রুকাইয়া ফোন খট করে রেখে দিলো আরফান কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা কান থেকে নামিয়ে দৌড়ে অফিস থেকে বের হয়ে আসলো রাতুল আরফানকে এভাবে যেতে দেখে তার পিছন পিছন বাহিরে এসে আরফানের সাথে চলে আসলো আর বললো,
~কী হয়েছে আরফান সব ঠিক আছে?
আরফান বললো,
~বাবার শরীর অনেক খারাপ এখনই বাসায় যেতে হবে।
রাতুল বললো,
~ওয়েট করো আমি আর আবরার গাড়ি নিয়ে আসছি।
রাতুলের কথায় আরফান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না তার নিজেকে অনেক ছন্নছাড়া লাগছে। বাবার কী অবস্থা কে জানে?কিছুক্ষন পর আবরার আর রাতুল গাড়ি নিয়ে আসলো আবরার বললো,
~আরফান তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসো।
আরফান কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে পরে।
আবরার আরফানকে বললো,
~সব ঠিক হয়ে যাবে।
আরফান কিছু বললো না সে নিজের মনে সাথে যুদ্ধ করতে লাগলো।হঠাৎ আরফানের ফোন আবার বেজে উঠলো আরফান ফোন উঠাতেই রুকাইয়া বললো,
~আমরা হাসপাতালে যাচ্ছি আপনি সেখানেই চলে আসেন।
আরফান বললো,
~বাবা কেমন আছেন?
রুকাইয়া বললো,
~আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসেন।
আরফান আর কিছু বললো না আবরারের দিকে তাকিয়ে বললো,
~হাসপাতালে যেতে হবে।
আবরার হাসপাতালের দিকে গাড়ি ঘুরালো।

আরফান,আবরার,রাতুল হাসপাতালে পৌছে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানতে পারে কবির আহমেদ ২য় তলায় আছে।আরফান দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে যায়।উপরে গিয়েই দেখতে পায় সায়েদা খানম আর রুকাইয়া বসে আছে দুজনই কান্না করছে।আরফান তাদের কাছে গিয়ে দাড়াতেই সায়েদা খানম ছেলের বুকে মাথা রেখে হুহু করে কেঁদে উঠে।রুকাইয়া তাকে সামলাতে ব্যস্ত রাতুল আর আবরার পিছনে দাড়িয়ে আছে।সায়েদা খানম বললেন,
~দোকান থেকে ফিরেই বলছিলেন তার কেমন জানি লাগছে আমি তাকে ঘুমাতে বলে রান্নাঘরে চলে গিয়েছিলাম।তখনই কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ পাই রুমের ভিতরে গিয়ে দেখি তোর বাবা
আর কিছু বলতে পারেনা সায়েদা খানমকেঁদে উঠে জোরে জোরে।রুকাইয়াও কেঁদে উঠে তখনই আবরার বললো,
~ডাক্তার কিছু বলেছে?
রুকাইয়া বললো,
~প্রেসার অনেক নিচে নেমে গেছে আর বাবার হয়তো হার্টের সমস্যা হয়েছে তাই কিছু টেস্টের জন্য নিয়ে গেছে।
আবরার বললো,
~রাতুল চল আমরা ওদিকটা দেখে আসি।
আবরার আর রাতুল কবির আহমেদের কাছে চলে গেলো।আরফান আর রুকাইয়া সায়েদা খানমকে সামলাতে লাগলেন।
আরফি কলেজ শেষ করে বাসায় পৌছে দেখে বাসায় তালা ঝুলানো সবাই এই সময় কোথায় যেতে পারে তাই ভাবছে সে।তখনই প্রতিবেশি এক মহিলা আরফিকে দেখে বললো,
~আরফি তুমি এখানে?তোমার বাবা তো হাসপাতালে ভর্তি তুমি সেখানে যাওনি।
ওনার কথা শুনে আরফির মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো তার কাছে তো মোবাইল নেই মোবাইল তো তার রুমে। সে এখন কী করবে?বাবার কী অবস্থা কে জানে?
ভাবিও তো বাসায় নেই আরফির চোখের সামনে সব ঝাপসা হতে লাগলো চোখ দিয়ে নোনা পানি পরতে লাগলো।আরফি ব্যাগটা শক্ত করে ধরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে বাসার বাহিরে চলে আসলো তারপর হাটা শুরু করলো। আজ যেমন পথ ফুরাচ্ছে না আরফির হাসপাতালের রাস্তা কী অনেক বড় হয়ে গেছে।সে জানে বিপদের পথ লম্বা হয় তাহলে কী কোনো বিপদের পথে চলতে যাচ্ছে তার পুরো পরিবার।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে