#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
সূচনা পর্ব
লাল বেনারসী পড়ে রাতবিরাতে কোনো মেয়েকে যদি ছাদে অবাধে বিচরণ করতে দেখে; সেই মেয়েকে নির্ঘাত সবাই পাগল ভাববে। বিয়ের শোকে এমনই একটি পাগলপ্রায় অবস্থা হয়েছে মেহেরের। কই এসেছিলো নিজের বেস্টুর বিয়ে খেতে আর এখন নিজেরই বিয়ে হয়ে গেলো। তাও আবার কাকে বিয়ে করলো? ওই কুত্তিটার ভাইকে।
এটা ভাবতে ভাবতেই ছাদের একপাশ থেকে অন্যপাশে পায়চারি করে যাচ্ছে আর বিড়বিড়িয়ে কিছু একটা বলছে। আজ বিশ্ব উল্টে গেলেও ওই আদ্রাফ এহসানের ঘরে সে যাবে না।
.
—নিচে আসছো না কেন?
.
আদ্রাফের কন্ঠ শুনে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে মেহেরের । পেছনে ফিরে আদ্রাফকে দেখতেই তার জান যেন যায় যায় অবস্থা । সে নিজের উদ্দেশ্যেই বিড়বিড়িয়ে বলে ওঠে……
.
—এখন ভয় পাওয়ার টাইম না মেহের। এই ব্যাটারে কিছুতেই সুযোগ দেওয়া যাবে না।
.
আদ্রাফ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে মেহেরের দিকে। পরনে সাদা শেরওয়ানী যা ওর শরীরে মারাত্নকভাবে ফুটে উঠেছে। উপরের ঠোঁটটা নিচের ঠোঁটে চাপ দিয়ে এমনভাবে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে যে মেহেরের এমন উদ্ভট কাজে প্রচুর বিরক্ত সে।আমতা আমতা করে মেহের বলে ওঠে…….
.
—আ…আমি নিচে যাবো না।
আদ্রাফ কড়া গলায় তাকে প্রশ্ন করে,
.
—নিচে যাবা না মানে?
.
এবার বিরক্ত হয় মেহের। এই ছেলে কি বুঝে না কোনো কিছু? কোমড়ে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে……
.
—তেলাপোকায় কামড়াইসে আমারে যে আমি তোমার সাথে ড্যাং ড্যাং করে চলে যাবো? কচি খুকি না আমি । সব বুঝি যে আজ কি রাত?
.
আদ্রাফ এবার হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। এই মেয়েরে জব্দ করতে হবে। তাই ধীরপায়ে মেহেরের খুব কাছে এগিয়েই অদ্ভুদ স্বরে প্রশ্ন করে……….
.
—আমি তো জানিনা আজ কি রাত?
.
হঠাৎ আদ্রাফের এমন কাছে আসাতে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গিয়েছে মেহের। আদ্রাফের ঘন নিঃশ্বাস ওর মুখে আছড়ে পড়াতে যেন অস্বস্তির চরম শিখরে পৌছে গিয়েছে সে।আয়াতের গহীন কালো চোখে সে ডুবে যেতে চাচ্ছে না তাই পরিস্থিতিটা সামলানোর জন্য কড়া গলায় বলে ওঠে……
.
—আহারে ! কচি খোকা। যেন কিছুই বুঝে না।আজ আমি তোমার সাথে যাবোনা। দরকার পড়লে সারারাত ছাদে পড়ে থাকবো। তবুও তোমার সাথে যাবো না।
.
—কিন্ত কেন?
.
—তোমারে দিয়ে ভরসা নাই। বউ হয়ে গিয়েছি দেখে কি না কি করে বসো…….
.
মেহেরের প্রতিটা কথা শুনলে যে কেউ রেগে ভস্ম হয়ে যেতো কিন্ত আদ্রাফ তার ব্যতিক্রম। সে নীরবেই ওর প্রতিটা কথা শুনে যাচ্ছে যেন সে জানতো এই পাগলীটা এরকম কিছুই করবে। মেহেরও পড়েছে বিপাকে। ওর মূল উদ্দশ্যই ছিলো যে আদ্রাফকে রাগাবে আর রাগের বশে সে যেন চলে যায়। কিন্ত ব্যাটায় তো পুরা পাল্টি মারলো। আদ্রাফ একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে আবারো বলে ওঠে………
.
—দেখো মেহু ? লক্ষী মেয়ের মতো আমার সাথে চলো। তোমায় আমি একা রেখে যেতে পারবো না। তাছাড়া বাড়িতে আব্বু-আম্মু সবাই আছে। বিষয়টা ভালো দেখাবে না।
.
—তারা কি তোমার ঘরে গিয়ে উকিঝুকি মারবে যে আমি আছি কি না?আর আমি তোমার কোন জনমের মেহু লাগি? আমার নাম মেহের এই নামেই ডাকবা। এত আলগা পিরিত দেখাতে হবে না।
.
আদ্রাফের এবার ধৈর্যের বাঁধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে……..
.
—লাস্টবার জিজ্ঞেস করছি তুমি যাবে নাকি যাবে না?
.
মেহেরও এবার কটাক্ষ গলায় বলে ওঠে………
.
—যাবোনা……….যাবোনা………যাবোনা।
.
মেহেরের এই উত্তরটা শোনার সাথে সাথেই হুট করে ওকে কোলে তুলে নেয় আদ্রাফ।এই মেয়ে সোজা কথার মানুষ না। আর মেহের তো ওর বুকে পিঠে কিলঘুষি মারতে মারতে নিজের অবস্থা আধমরা করে ফেলেছে তবুও আদ্রাফ যেন তার দিকে প্রবল। হঠাৎই মেহের এক ভয়ঙ্কর কাজ করে বসলো যা ছিলো আদ্রাফের কল্পনার বাইরে।
.
মেহের আচমকা আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় যার কারনে স্তব্ধ হয়ে যায় আদ্রাফ।মেহের চোখবন্ধ করেই আদ্রাফের ঠোঁটে নিজের স্পর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ঘটনারচাপে হুট করে মেহেরকে ছেড়ে দিতেই মেহের নিচে পড়ে যায়। ব্যস মেহেরকে আর পায় কে? হালকা একটু ব্যথা পেলেও সে উঠে আদ্রাফের কাছ থেকে নিরাপদ দুরুত্বে চলে আসে…….
.
—ভালোয় ভালোয় চলে যাও। আমি দস্যুরাণী মেহের। এত সহজে কারও পাল্লায় পড়ি না।
.
আদ্রাফ না পারছে এই যন্ত্রণা সইতে আর না পারছে এড়িয়ে নিতে। কেন যে বাবার কথা শুনে এই মেয়েকে বিয়ে করতে গেলো?সবাই ওদের বিয়েতে মহাখুশি থাকলেও ও বুঝে গিয়েছে যে ওর বিবাহিত জীবনে এই দস্যুরাণী বউ জীবনটা ঝাল্লাপাল্লা করে দেবে।
.
.
.
.
~চলবে~