#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৩
#Devjani
হাতে টিস্যু নিয়ে আধ ঘন্টা ধরে কেঁদে যাচ্ছে আরাদ্ধা।পাশে টিস্যুর বক্স নিয়ে আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে আছে রোদ্দুর।আরাদ্ধা সেখান থেকে টিস্যু নিচ্ছে না। তবুও রোদ্দুর নিয়ে বসে আছে।
আরাদ্ধা তেজি গলায় বলে,সব হয়েছে ওই টাইগারের জন্য। ফালতু কুকুর।কাজ কর্ম নাই।
রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,তোর সাহস কম না আমার সামনে আমার টাইগারকে কুকুর বলছিস!
আরাদ্ধা রাগী গলায় বলে,ওই কুকুরটার জন্য আমার এই অবস্থা।আমি বিয়ে করবো না।
রোদ্দুর ছোট ছোট চোখ করে তাকায়। আস্তে করে বলে,বিয়ে হয়ে গেছে।আর তুই আমার রুমে বসে আছিস।তাও বউ সেজে।
আরাদ্ধা রেগে গিয়ে বলে,কে বউ। কিসের বউ।আমি আপনার বউ নই। আপনার বউ সুমাইয়া।
— ওহ আচ্ছা।আমি ভুলে গিয়েছিলাম। সুমাইয়া আর কাঁদিস না।আরাদ্ধাকে আমি বকে দিব। খুব খারাপ মেয়ে ও।
— মানে?আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
— মানে এই যে তুই বলেছিস আমার বউ সুমাইয়া।আর তোর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।তাই তোর কথার মানে তোর নাম সুমাইয়া।আর তুই যেহেতু সুমাইয়া হয়ে গেছিস। সুমাইয়া নিশ্চয়ই আরাদ্ধা হয়ে যাবে।
আরাদ্ধা অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় রোদ্দুরের দিকে।বলে,আপনি ফান করছেন? আচ্ছা টাইগার নামক খারাপ কুকুরটার সাথে আরেকটা যে কুকুর আছে ওইটা কে?
রোদ্দুর মেকি হাসি দিয়ে বলে,ওটা টাইগারের লাইফ পার্টনার অলি।কালই এনেছি ওটাকে।বেচারা টাইগার একা একা থাকে তাই ভাবলাম,,,,,,,
আরাদ্ধা রোদ্দুরকে থামিয়ে দিয়ে বলে, বুঝতে পারেছি।
আরাদ্ধা উঠে গিয়ে রোদ্দুরের পড়ার টেবিলে বসে পড়ে।মাথা কাজ করছে না।তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটার জন্য বাজেভাবে রিয়েক্ট করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কার সাথে করবে সবাই তার থেকে বড়।তার উপর একটা ব্যাপার তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।সেটা হলো সুমাইয়া কোথায়? কেন চলে গিয়েছে এভাবে?যদি বিয়েই না করতে চায় তবে বিয়েতে রাজি হলো কেন?
আরাদ্ধা রোদ্দুরের স্টেথোস্কোপটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে একটু আগের ঘটনাগুলো ভাবছে।
টাইগারের পাশ কাটিয়ে যেতেই টাইগার বাজেভাবে চেঁচিয়ে উঠে।সে ভয়ে পেছনে চলে যেতেই রোদ্দুরের মা হাসিমুখে এসে তাকে জরিয়ে ধরে বলে,আমি জানতাম আরু মা,তুই আমার কথা ফেলবি না। অদ্রি, শ্রেয়া তোরা ওকে একটু রেডি করিয়ে দে তাড়াতাড়ি।
আরাদ্ধা বারবার বলেছিল, টাইগারের ভয়ে সে এসেছে। কিন্তু রোদ্দুরের মা কানে না নিয়ে উল্টা বলে,সে লজ্জা পেয়ে এসব বলছে।
আরাদ্ধার ভাবতেই রাগে চোখে পানি চলে আসে।তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সব হয়েছে।
আরাদ্ধা টেবিলের মাথাটা রাখে। হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল। কিন্তু আসল মা তো তার কিছুই জানে না।খারাপ লাগছে ব্যাপারটা।
মুখ তুলে রোদ্দুরকে উদ্দেশ্য করে বলে, শুনুন!কাল আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবেন?আসল মায়ের কাছে?
— নিয়ে যাব। শুনেছি উনি নাকি অসুস্থ।কি হয়েছে ওনার?
— প্যারালাইসিস।কথাটা বলতেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে আরাদ্ধা চোখ থেকে।
রোদ্দুর আর কোনো প্রশ্ন করলো না।
আরাদ্ধা খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলে,আমি কোথায় ঘুমাবো?
রোদ্দুর ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়, বিছানা আছে, সোফা আছে, এতো বড় মেঝে আছে যেখানে পারিস ঘুমা।বাই দা ওয়ে,এখন ঘুমানোর কথা আসছে কোথা থেকে।মাত্র নয়টা বাজে, এগারোটা পর্যন্ত পড়বি।সামনে পরীক্ষা!
— আজকের দিনে পড়বো?আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
রোদ্দুর ছোট ছোট করে বলে,আজকের দিন বলতে কি মিন করছিস?
— কিছু না।
আরাদ্ধা বই খুলে পড়া শুরু করে।
♡♡♡
জানালার কাচ ভেদ করে তীব্র রোদের আলো আরাদ্ধার চোখে পড়তেই আরাদ্ধা খানিকটা নড়েচড়ে উঠে। ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে,নরম কিছুকে আঁকড়ে ধরে আছে সে।বেশ আরাম লাগছে।আরাদ্ধা জিনিসটাকে আরো কাছে টেনে শক্ত করে আকড়ে ধরে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করে।
হঠাৎ ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে আঁকড়ে ধরা জিনিসটা হালকা নড়াচড়া করছে।সাথে অদ্ভুত আওয়াজ আসছে।আরাদ্ধা হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে জিনিসটা কি হতে পারে। কিন্তু আকৃতি অনুসারে বুঝতে পারছে না কি হতে পারে।হালকা চোখ খুলে তাকায় জিনিসটা দেখার জন্য।
— আম্মুউউউউ,,,,,,,
ঘুমের মধ্যে গায়ের সব শক্তি একসাথে করে চিৎকার করে দূরে সরে যায় আরাদ্ধা। বিছানা থেকে ধপ করে নিচে পড়ে যায়। সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপছে।
আরাদ্ধার চিৎকার শুনে দৌড়ে রুমে আসে রোদ্দুর আর তার মা।দেখে আরাদ্ধা নিচে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।এক পর্যায়ে কেঁদে দেয়।
আরাদ্ধার বুক ধড়ফড় করছে। বিছানার উপর থেকে অলি নামক কুকুরটা এখনো তার দিকে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ঘুম থেকে উঠে এমন পরিস্থিতির সে মোটেও আশা করেনি।এই প্রথম কোনো কুকুর এত কাছ থেকে দেখছে। শুধু দেখেনি। জড়িয়ে ধরেছে।
রোদ্দুর এসে আরাদ্ধার মাথাটা বুকে চেপে ধরে শান্ত করার চেষ্টায় বলে,ভয় পেয়েছে পিচ্চিটা। কিছু হয় নি। কান্না বন্ধ কর।
রোদ্দুর মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,আম্মু তুমি কুকুরটাকে বাইরে নিয়ে যাও।
আরাদ্ধা এখনো কাঁপছে ভয়ে। রোদ্দুরের শার্ট শক্ত করে ধরে আছে।অলি দেখতে ততটাও ভয়ঙ্কর না।সাদা লোমশ তুলতুলে কুকুর। তবুও হঠাৎ এই ঘটনায় বেশ ভয় পেয়েছে। কিন্তু আজ যদি টাইগার থাকতো সে নিশ্চিত হার্ট অ্যাটাক করতো।
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে কোলে তুলে বিছানায় বসিয়ে দেয়।বলে,অলি চলে গেছে।ভয় পাস না কিছু হবে না। ওদের এতো ভয় পাস কেন? কিছু করবে নাতো ওরা।
রোদ্দুর টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা আরাদ্ধার দিকে এগিয়ে দেয়। প্রচুর হাসি পাচ্ছে তার। কিন্তু আরাদ্ধার সামনে হাসতে পারছে না। পরিস্থিতি অন্যদিকে চলে যেতে পারে।
আরাদ্ধা এক নিঃশ্বাসে সমস্ত পানি খেয়ে ফেলে।এখন কিছুটা ভয় কমেছে। কিন্তু এখনো বুক ধড়ফড় করছে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলছে, আল্লাহ্!এমন বাজে ঘটনা যেন আর কখনো না ঘটে।
♡♡♡
কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে তার বাবা দাদিকে গাড়িতে তুলেছে।দেখে মনে হচ্ছে কোথাও যাচ্ছে।আরাদ্ধা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, আব্বু তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
— তোর দাদি একটু অসুস্থ। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।
আরাদ্ধা দাদির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মৃদু কন্ঠে বলে,দাদি কেমন আছ? তুমি নাকি অসুস্থ!
দাদি রেগে গিয়ে বলে,কথা বলবি না একদম।তোর মুখ দেখতেই ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা তুই কি করে পারলি সুমাইয়ার সাথে এমন করতে?তোর তো নিজের বোনের মতো ও!
— দাদি তুমি ভুল বলছো।আমি কিছু করিনি।আমি তো অতিথি হিসেবে এসেছিলাম।এমন হবে জানলে আসতাম না।
— এভাবে একটা কথা বানিয়ে বানিয়ে বলবি আর আমি বিশ্বাস করব ভাবচ্ছিস?তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত একটা কাজও তোকে করানো যায় নি।আর তোকে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করিয়ে দিল?
আরাদ্ধা এবার কোনো উত্তর দিল না।কি উত্তর দিবে মনে মনে খুঁজছে।আসলে দাদির কথায় যথেষ্ট যুক্তি আছে। কালকে ঘটনাটায় যে তার একটু হলেও ইচ্ছে ছিল সেটা ভালোভাবে উপলব্ধি করছে।
মৃদু গলায় বলে,আসলে কুকুরটার ভয়ে ভিতরে গিয়েছিলাম।সবাই ভেবেছে আমার ইচ্ছে আছে লজ্জায় বলতে পারছি না।
— কেন রে? কুকুরকে এতো ভয় পাস কেন?তোকে খেয়ে খেলবে নাকি? তীক্ষ্ণ গলায় বলে দাদি।
— দেখ দাদি একই প্রশ্ন যদি তোমাকে করি, তেলাপোকা দেখলে দূরে সরে যাও কেন?ওটা তো কুকুরের থেকেও ক্ষুদ্র প্রাণী।
— তোর সাহস তো কম না আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস?
আরাদ্ধা গিয়ে শক্ত করে দাদিকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,আমার সাথে সবসময় এমন করে কথা কেন বল দাদি?কি করেছি আমি?
— ছাড় আমাকে। ব্যাথা পাচ্ছি।
আরাদ্ধা জেদ ধরে বলে, উহুম,,,,ছাড়বো না আমি।বলো আমার সাথে এমন কেন কর?আগে তো কত আদর করেছো,আর এখন,,,!
— ছাড়বি!
আরাদ্ধার বাবা এতক্ষণ ফোনে কথা বলছিল।ফোন রেখে আরাদ্ধাকে ধমক দিয়ে বলে,ছেড়ে দে আরু,মা অসুস্থ!
আরাদ্ধা ছেড়ে দেয়। দাদির গালগুলো টেনে বলে, অসুস্থ বলে ছেড়ে দিয়েছি। সুস্থ হয়ে আসো এরপর দেখছি,,,কথাটা বলে আরাদ্ধা উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করে।
কিন্তু মাথায় দাদির কথাগুলো ঘুরছে।যেভাবে তার বিয়ে হয়েছে মনে হচ্ছে সবটাই পরিকল্পিত।হঠাৎ তার ফোনে একটা মেসেজ আসে।
আরাদ্ধা মেসেজটা দেখে অবাক হয়। সুমাইয়া পাঠিয়েছে। অভিনন্দন জানিয়েছে তাকে।
— আরু গাড়িতে উঠে বোস!
রোদ্দুরের ডাকে ফোনের উপর উপর থেকে চোখ সরিয়ে রোদ্দুরের দিকে তাকায়।
ধীর পায়ে রোদ্দুরের কাছে গিয়ে তীক্ষ্ণ গলায় প্রশ্ন করে,কাল যেসব হয়েছে সেগুলো আপনি ইচ্ছে করে ঘটিয়েছেন!আমি কি ঠিক?
রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তুই যা ভাববি!
আরাদ্ধা রাগ হয়। চেঁচিয়ে বলে, আপনি কেন এসব করেছেন?জীবনটাকে খেলা পেয়েছেন নাকি?যদি আমাকেই আপনার বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল তাহলে সুমাইয়া আপুকে কেন ঠেকালেন?এটার কি খুব দরকার ছিল। সুমাইয়া আপুর মা বাবার মান সম্মান নষ্ট হয়েছে শুধু আপনার জন্য।আমি,,,আমি আবার সবার কাছে অপরাধী হয়ে গেলাম শুধু আপনার জন্য। কেন করেছেন আপনি এসব?আমাকে আপনার জীবনের সাথে জড়ানোর আগে আমার মতামতটা জানার চেষ্টাও করলেন না। অসহ্য লাগে আপনাকে আমার।
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে ধরতে আসতেই আরাদ্ধা দূরে সরে যায়।রাগী গলায় বলে, ধরবেন না আমাকে। আমি কি উত্তর দেব সুমাইয়া আপুর মা বাবাকে বলতে পারেন?আজ নয়তো কাল সত্যিটা তো ওনারা জানবেন,তখন কি বলবেন ওনাদের?
রোদ্দুর এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আরাদ্ধার কথাগুলো শুনছিল।আরাদ্ধা থামতেই,,,,,,,,,
চলবে,