#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৭
#Devjani
নিজের রুমে চিন্তামগ্ন হয়ে বসে আছে শ্রেয়ান।আরাদ্ধার বিষয়টা তাকে দারুণভাবে ভাবাচ্ছে।শ্রেয়া আর সে টুইন। মোহিনী তাদের কলিজার টুকরা বোন ছিল। পনের বছর আগে রোড এ্যাক্সিডেন্টে হারিয়ে ফেলেছে তাকে।ধরা হয়েছে সে মারা গেছে। যদিও ডেড বডি পাওয়া যায়নি।
সেদিন কলেজে যখন প্রথম দেখা হয়েছিল তখন তার মনে হচ্ছিল মোহিনী তার খুব কাছে আছে।সে কলেজের বারান্দা দিয়ে হাঁটছিল। হঠাৎ দেখে একটা মেয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।হয়ত কিছু খুঁজচ্ছে। কিন্তু চোখেমুখে খুশির আভা।শ্রেয়ান তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনি কি কিছু খুঁজছেন?
মেয়েটা হাসতে হাসতে বলে,আসলে আমি ক্লাসটা খুঁজে পাচ্ছিনা।
শ্রেয়ানের একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল মেয়েটা হয়ত পাগল।নাহলে টেনশনের পরিবর্তে হাসছে কেন?শ্রেয়ান অবাকের সুরে বলে,আপনি হাসছেন কেন?
মেয়েটার হাসি নিমিষেই উড়ে যায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,তো কান্না করবো নাকি?আমার অনেকদিনের ইচ্ছা আজকে পূরণ হলো। মেডিকেলে আমি চান্স পেয়েই গেলাম।হাসব না!
শ্রেয়ান আস্তে করে বলে,ওহ্ আচ্ছা।আমি ভাবছিলাম,,,,,,
— কি?
শ্রেয়ান মেকি হেসে বলে,পাগল!বাই দা ওয়ে নাম কি তোমার?
মেয়েটা ভেংচি কেটে বলে,আরাদ্ধা!
শ্রেয়ান মনে মনে রিপিড করে নামটা,আরাদ্ধা!
গলা ঝেড়ে বলে, আচ্ছা চলো তোমাকে ক্লাস খুঁজতে সাহায্য করছি,চলো!
সেই থেকে প্রায়ই কথা হতো আরাদ্ধার সাথে।মাঝে মাঝে মনে মোহিনীর সাথে কথা বলছে। মোহিনী ওর খুব কাছে আছে।ওর সাথে কথা না বলতে পারলে খারাপ লাগে।ওর সাথে এসব কথা শেয়ার করতে গিয়েও সংকোচ হয়। কিন্তু আজকে আরাদ্ধার সম্পর্কে কথাটা শুনে মনে হলো মোহিনীকে পেয়ে গেছে।
এখন আরাদ্ধার ডিএনএ তার সাথে মিল গেলেই বোঝা যাবে ও মোহিনী না অন্য কেউ।ওরা ভাইবোন হলে অবশ্যই ওদের ডিএনএ মিলবে। কিন্তু কিভাবে বলবে তাকে এই বিষয়টা ভাবাচ্ছে তাকে।
আজকাল অদ্রির ব্যাপারটাও বেশ ভাবায়। অদ্রি আগের মতো তার সাথে মেশে না।আগে তার সাথে মিশতে আসলে বিরক্ত হতো। কিন্তু এখন বকলেও ব্যাপারটা বেশ এনজয় করতো।তবে এখন তার ব্যাচমেটদের সাথে কথা বলে ঠিকই কিন্তু তাকে ইগনোর করে।আজ ইন্টার্নির একজন স্টুডেন্টের সাথে কথা বলতে দেখে খুব রাগ হয়েছিল। ইচ্ছে করছে গিয়ে ধমক দিক। কিন্তু তার ইগো তাকে বাধা দিয়েছে।
শ্রেয়ান ফোনটা হাতে নিয়ে আরাদ্ধাকে কল করে।
☆☆☆
আরাদ্ধা নিজের রুমে বসে আছে।একটু আগে রোদ্দুররা তার বাসায় এসেছে।আরাদ্ধার এসব অসহ্য লাগছে। নিজের রুম থেকে মার্জিয়ার আদিক্ষেতাগুলো রাগিয়ে তুলছে তাকে।একটু আগে লোক দেখানোর জন্য তাকে ডাকতে এসে দুচারটা বাজে কথা শুনিয়ে গেছে মার্জিয়া।
হুট করে আরাদ্ধার ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে শ্রেয়ানের নাম ভেসে উঠছে।আরাদ্ধার ফোন তুলতে অসহ্য লাগছে। তবুও তুলে কানের কাছে নেয়।শ্রেয়ান বলে,আরু কি করছিস?
আরাদ্ধা চড়া গলায় জবাব দেয়,এটা জানার জন্য ফোন করেছেন?
শ্রেয়ান সংকোচ নিয়ে বলে,না।
আরাদ্ধা বুঝতে পারে শ্রেয়ানের সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি।শান্ত গলায় বলে,সরি!যেটা বলার জন্য ফোন করেছেন সেটা বলুন।
শ্রেয়ান গলা ঝেড়ে বলে,আমার সাথে আজ দেখা করতে পারবে? সন্ধ্যায়!আমি গাড়ি নিয়ে তোমার জন্য তোমাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে অপেক্ষা করবো।
আরাদ্ধা প্রত্যুত্তরে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।শ্রেয়ানের সাথে একা কোথায় যাওয়া ঠিক নাও হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,আমি যাবো। কিন্তু একা না। অদ্রিও যাবে সাথে।
শ্রেয়ান আরাদ্ধার কথার মানে বুঝে। হাসিমুখে বলে,ঠিক আছে।তাই হবে। তুমি অদ্রিকে বলে দাও।
আরাদ্ধা ছোট করে জবাব দেয়,হুম!রাখছি।
আরদ্ধা ফোন কেটেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে।কি ঝামেলা!এখন আবার এর সাথে দেখা করে সময় নষ্ট করতে হবে তার। সামনে পরীক্ষা।এখন এমনেই পড়ায় মন বসে না। সবকিছুতে কেমন বিষন্নতা খুঁজে পায়। রোদ্দুর অবশ্য বলেছিল পড়া না বুঝলে তার কাছে যেতে। কিন্তু এখন হয়ত সেটা দৃষ্টিকটু লাগতে পারে।আর তার দাদি তো আছেই!
আরাদ্ধার ফোনটা আবারও বেজে উঠে।আরাদ্ধা বিরক্তি নিয়ে ফোনটা কেটে দেয়।
সাথে সাথে একটা মেসেজ আসে তার ফোনে। অদ্রি মেসেজ করেছে।
“তোর একজন পরিচিত রোগী মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। রোদ্দুর স্যার আছে।বলেছেন,লিভার শেষ। ওনার লিভার এনজাইম এসজিপিটি সাতশ’ ছাড়িয়ে গেছে।রোগী তোকে খুঁজছে। স্যার ফোন করেছে তোকে তুই ধরিস নি।মেডিসিন ইউনিট থ্রি-এর একজন ইন্টার্নি ডাক্তার ভাইয়া আমাকে বলেছে।”
আরাদ্ধার বুক ধক করে উঠে।তার পরিচিত রোগী কে?আরাদ্ধা চোখ বন্ধ করে একবার ভাবার চেষ্টা করে কে হতে পারে। কিন্তু তেমন কাউকেই মনে পড়ছে না। তাছাড়া রোদ্দুর ওখানে কিভাবে? রোদ্দুরের তো এখানে থাকার কথা!আরাদ্ধা রুম থেকে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করে।বসার রুমে সোফায় রোদ্দুরের মা বাবা আর কিছু আত্মীয় স্বজন বসে আছে।আর আছে সুমাইয়া। লজ্জায় নেতিয়ে বসে আছে।
তার মানে রোদ্দুর এখানে ছিল না। ভুল ভেবেছিল সে।সবাইকে নিয়ে অশুভ চিন্তা তাকে ঘিরে ধরেছে।ব্যাগ থেকে কিছু টাকা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায়। নিজের গাড়িতেই যাবে। তবুও প্রয়োজন হতেও পারে।
সবার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দাদি তাকে প্রশ্ন করে,কই যাচ্ছিস এই অসময়?
আরাদ্ধা ভদ্রভাবে জবাব দেয়,কাজ আছে।
দাদি আবার চড়া গলায় বলে,কি কাজ শুনি।আমার বাড়িতে আমি যখনতখন এভাবে যাওয়া আসা এলাউ করবো না।
আরাদ্ধা বিরক্তিতে উত্তর দেয়, তুমি থাক তোমার বাড়ি নিয়ে।থাকবো না এখানে আমি।ঠিক আছে?
রোদ্দুরের মা শাসনের সুরে বলে,ছিঃ আরু মা!এসব বলে না গুরুজন হয় তোমার!
আরাদ্ধার মা চোখ রাঙিয়ে বলে,দিনে দিনে অনেক বাজে আচার আচরণ শিখেছিস।ভাব দেখাচ্ছিস?যা তোর যেখানে ইচ্ছা সেখানে যা।
দাদি ধমক দিয়ে বলে, শুধু মুখেই বড় বড় কথা কাজের বেলায় কিচ্ছু নাই!যাই হোক না কেন এখানেই তো মাটি কামড়ে পড়ে থাকিস।আবার কথা শোনাচ্ছে সবাইকে।
মার্জিয়া আরাদ্ধার সামনে গিয়ে মুখ টিপে হাসে। আফসোসের সুরে বলে,কার না কার রক্ত এর গায়ে বইছে। রক্তের স্বভাব নামে একটা বিষয় আছে না,,,,!
আরাদ্ধার চড়া গলায় বলতে ইচ্ছে হলো,তোমার মা বাবা আর আপু তো অনেক ভালো।মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করে। তাদের মেয়ে তুমি এমন কর কিভাবে এমন কথা বলো?তোমার রক্তের স্বভাব তো এরকম না।তাহলে,,?
কিন্তু আরাদ্ধা বলল না। ব্যাপারটা খারাপ দেখাবে। মনের কথা মনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
দাদি মার্জিয়াকে সমর্থন করে বলে,এই বিষয়টা আগে ভাবিনি বলে খোকাকে নিষেধ করতে পারিনি। প্রয়োজনে নিঃসন্তান থাকত। তবুও কার না কার বাচ্চা বলা তো যায় না।ছেলে হলেও চলত। কিন্তু,,,,,,
রোদ্দুরের মা বাধা দিয়ে বলে,থাক না মামীমা। বাচ্চা মেয়ে।
আরাদ্ধার চোখ পানিতে টলমল করে উঠে। করুণ দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকায়। ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখটা কালো হয়ে গেছে।আরাদ্ধার চোখে চোখ পড়ায় সেখান থেকে চলে যায়।
আরাদ্ধার কাঁদতে ইচ্ছা করছে। তবুও সে ইচ্ছে মাটি চাপা দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে,