অনুভূতিরা শব্দহীন পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
524

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

ঊনপঞ্চাশৎ পর্ব (৪৯ পর্ব)

রাত নয়টা, রাস্তার জ্যামের কারণে বাসায় পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে মৃত্তিকার । বাসায় এসে দরজা খোলা দেখে বুঝতে পারে ইমতিয়াজ ইতিমধ্যে বাসায় চলে এসেছে। মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে দরজা খুলতে গিয়ে বুঝলো ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো।

বাধ্য হয়ে কলিং বেল বাজায় মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ বোধহয় দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিল, সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে দেয় সে।

ইমতিয়াজ মাথা হেলিয়ে বলে,
“আসো।”

মৃত্তিকা ধীরে ধীরে ভিতরে আসে। ইমতিয়াজ শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ভিতরে আসে। মৃত্তিকা বেডরুমে যাওয়ার সময় ইমতিয়াজ বলে,
“দাঁড়াও।”

মৃত্তিকা থমকে দাঁড়ায়, তবে ফিরে তাকায় না। ইমতিয়াজ একটু শ°ক্ত ভাষায় বলল,
“কোথায় গিয়েছিলে?”

মৃত্তিকা আবারো ঢোক গিলে। ফিরে দাঁড়িয়ে বলল,
“আশেপাশেই ছিলাম, একটু ঘুরাঘুরি করেছি। একই জায়গায় বসে থেকে আর ভালো লাগছে না।”

ইমতিয়াজ হেসে এগিয়ে আসে। বলে,
“আমাকে বলতে পারতে, ঘুরতে নিয়ে যেতাম।”
“কোথায় নিয়ে যেতেন?”

ইমতিয়াজ ঠোঁট উলটে মাথা নেড়ে বলল,
“চট্টগ্রামে, আমার গ্রামে ঘুরে আসতে।”

মৃত্তিকা এগিয়ে এসে দুই হাতে ইমতিয়াজের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“তবে কি আগামী মাসে যাওয়া হতে পারে?”
“এ মাসে কি সমস্যা?”
“তেমন কিছু না, তবে পরে হলে ভালো হয়।”
“ঠিক আছে।”

ইমতিয়াজ একটু সি°গা°রেটের গন্ধ পায়। মৃত্তিকার হাতটা কাছে আসতে গন্ধটা পেয়েছে সে। নিজের অনুমান যাচাই করার জন্য সে মৃত্তিকার দুহাত টে°নে হাতের তালুতে চুমো দেয়। এ সময় আরো তীব্রভাবে গন্ধ অনুভব করে।

“কি হচ্ছে এসব?”

মৃত্তিকার কথায় ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে বোঝায়, কিছু না। মৃত্তিকা ফ্রেশ হতে চলে যায়।

ইমতিয়াজ এখনো স্থির দাঁড়িয়ে আছে। নিজে নিজেই বলে,
“কি করছো তুমি?”

আবারও সে ফাহাদের নাম্বারে ডায়াল করে। সারাদিনে কয়েকবার চেষ্টা করেও ফাহাদের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ করতে পারেনি সে। শুধু আজ নয় গত তিনদিন থেকে ফাহাদ লা°পাত্তা। না ফোন ধরছে, আর না কল ব্যাক করছে।

এবার সে বাধ্য হয়ে কল দেয় শরীফকে। সবটা জানানোর পর শরীফ বলে,
“আচ্ছা আমি ফাহাদের সাথে কথা বলছি।”
“আমার সাথে জলদি দেখা করতে বলুন। আমি চাই না মৃত্তিকা নতুন করে কোনো ভুল করুক।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে শরীফ বলে,
“ওর ভুল আমারও কাম্য নয়।”
______________________________________

আহনাফ কোনো একটা বিষয় নিয়ে ব্যস্ত আছে। কলেজের কয়েকজন স্যার ম্যাডামের সাথে ফোনে কথা বলেছে। সারাহ্ কয়েকবার ওর আশেপাশে ঘুরে গেল, কিন্তু কারণটা বুঝতে পারলো না।

“ঐশী?”

আহনাফের ডাকে সারাহ্ রুমে আসে। বলে,
“কি?”
“তুমি কি কিছু বলবে?”
“না তো।”
সারাহ্ মাথা নেড়ে জবাব দিল।

আহনাফ হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,
“কাছে আসো।”

সারাহ্ সরে দরজার কাছে চলে গেল। বলল,
“কি বলবেন বলেন?”

আহনাফ হো হো করে হেসে উঠে,
“আরে, ভ°য় পাচ্ছ কেন?”
“কারণ আপনি লোক ভালো না।”

আহনাফ উঠে এসে ওকে টে°নে কাছে এনে বলল,
“তোমার ছুটির ব্যবস্থা করছিলাম।”
“ছুটির ব্যবস্থা? আমি বললাম তো এতো তাড়াতাড়ি ছুটি দেওয়া হয় না।”

সারাহ্ চেঁ°চিয়ে উঠলে আহনাফ ওর মুখ চেপে ধরে। আহনাফ বলে,
“চেঁ°চামেচি করবা না।”

সারাহ্ নিচুস্বরে বলল,
“মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাসের হয়, আর এখন আমার মাত্র সাড়ে তিন মাসের কিছু বেশি চলছে। এখন থেকে ছুটি শুরু হলে কতদিন আমার ছুটি শেষ হবে? সে খেয়াল আছে?”

আহনাফ ডানহাতের তর্জনী আঙুল দিয়ে সারাহ্ কপালে গালে স্পর্শ করে বলে,
“খুব খেয়াল আছে। সেটার জন্য কথা বলছিলাম। দ্বিতীয়বারে নেওয়া সম্ভব কিনা? যতটুকু জানা গেছে কিছুদিন বেশি নেওয়া যাবে।”

সারাহ্ ওর আঙুলে কা°ম°ড় দেয়। আহনাফ “এই” বলে আঙুল সরায়। সারাহ্ হেসে বলে,
“কিছুদিন-টিছুদিন আমার হবে না। আমি আরো পরে ছুটি নিবো। (একটু থেমে) প্রয়োজনে আমি চাকরি ছেড়ে দিবো।”

আহনাফ কপাল কুঁচকে তাকালে সারাহ্ বলে,
“মায়েরা সন্তানের জন্য সব করতে পারে। আর আমি তো সামান্য চাকরি ছাড়বো। এটা কোন ব্যাপার না আমার জন্য।”

আহনাফ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সারাহ্-র দিকে। এ এক অচেনা সারাহ্।
______________________________________

সকালে অফিসে না গিয়ে ইমতিয়াজ বাসার কাছেই একটা চায়ের দোকানে বসে থাকে। উদ্দেশ্য মৃত্তিকা কোথায় যায়, কি করে তা দেখা।

মৃত্তিকাকে বাসা থেকে বের হতে দেখে সে বুঝতে পারে তার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পথে। হেঁটে কিছুদূর গিয়ে মৃত্তিকা দোকান থেকে এক প্যাকেট সি°গা°রেট কিনে। ইমতিয়াজ আগ্রহ নিয়ে তাকায়। মৃত্তিকা সি°গা°রেট খায় তা এতদিনে সে টের পায়নি। হঠাৎ করে এ অভ্যাস শুরু হওয়ার কোনো কারণ নেই।

মৃত্তিকা আবারও বাসায় চলে যায়। ইমতিয়াজ শরীফকে কল দেয়।
“ফাহাদের কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?”
“না, আমার কল রিসিভ করেনি।”

ইমতিয়াজ মাথা নেড়ে জিজ্ঞাসা করে,
“মৃত্তিকা সি°গা°রেট খায়?”

ইমতিয়াজের প্রশ্নে শরীফ খুব অবাক হয় এবং অবাক হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। মেয়েকে এতটা খারাপ অভ্যাসের দিকে ছুঁ°ড়ে ফেলার মতো মানুষ তো রিপা বেগম ছিলেন না। তবে মৃত্তিকা এটা কেন করবে?

শরীফ একটু বি°ভ্রা°ন্তি নিয়েই উত্তর দেয়,
“আমার জানামতে তো না।”
“আমি মাত্র ওকে সি°গা°রেট কিনতে দেখেছি।”

শরীফ চুপ থাকে। কিছু বলার মত অবস্থায় সে নেই, এতোটাই অবাক হয়েছে সে। ইমতিয়াজ আবারও জিজ্ঞাসা করে,
“ফাহাদ কি আপনাকে বোকা বানানোর কোনো সম্ভাবনা আছে?”
“সে অনেক বছর ধরে আমার সাথে আছে। এরকম কিছু সে কখনোই করেনি। আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মানুষ ফাহাদ। এজন্যই মিউকোর সাথে আমি ওকে পাঠিয়েছি।”
“বুঝেছি, তাহলে এখন যা করার আমাকে করতে হবে।”

ইমতিয়াজ ফোন রাখে। এবারে নিরবে মৃত্তিকার উপর নজর রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় সে খুঁজে পায় না। সে তো আর শরীফের মত মা°ফি°য়া নয় যে নিজের লোক লাগিয়ে দিবে। তার হাতে মৃত্তিকার জন্য বিশ্বস্ত লোক একমাত্র সে নিজে।
______________________________________

দুইদিন পার হয়, জামিলকে সিআইডি হেড কোয়ার্টারে না রেখে নিজের বাসায় রেখেছে গালিব। নিয়মিত প্রচন্ড মা°র°ধর আর ক্ষুধার য°ন্ত্র°ণায় শেষ পর্যন্ত সত্য বলতে রাজি হয় জামিল। আহনাফকে এজন্য খবর দেয় গালিব, আহনাফের সামনেই সত্য প্রকাশ পাওয়া উচিত।

সকাল সকাল খবর পেয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আহনাফ৷ যতদ্রুত সম্ভব ঢাকায় আসা দরকার, অথচ আজই রাজ্যের জ্যাম রাস্তায় পড়েছে। সামান্য দাউদকান্দির অংশ পার হতেই ঘন্টার পর ঘন্টা সময় যাচ্ছে।

বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে আছে আহনাফ। আর কোনো উপায় না দেখে গালিবকে কল দেয় সে।

“রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। মনে হয় না আমি বিকালের আগে ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো। এক কাজ করেন আপনি সব কথা জেনে নেন। বলা তো যায় না কখন তার মত পাল্টে যায়।”

আহনাফের প্রস্তাবটা খুব একটা খারাপ নয়। গালিব তাই করবে। ফোন রাখতেই তার বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে।

গালিব দরজা খুলে দেখে তার খবর দেওয়া দুজন সহকর্মী চলে এসেছে। একজনের সাথে ক্যামেরা আছে। এমনসময় সামনের বাসায় প্রচন্ড চেঁ°চামে°চি শুরু হয়। তিনজনে বেরিয়ে যায়। গালিব বেশ ভালো করেই দরজায় তালা দিয়ে যায়। একটা নয়, দুটো নয়, তিনটা তালা দিয়েছে। ঘরের বাকি দরজা জানলা আগে থেকেই বন্ধ করা। এক কথায় পুরো বাসা সিল করে দিয়েছে।

সামনের বাসার গ্যারেজে আ°গুন লেগেছে। সেটা নেভানোর জন্যই লোক জড়ো হয়েছে আর শোরগোলের উৎস এটাই। ওরাও আ°গুন না নেভানো পর্যন্ত সেখানে থাকে।

তারপর বাসায় ফিরে এসে ওরা অবাক হয়। তিনটা তালা ভা°ঙা, ভেতরে জামিল নেই। জামিল যতদিন বাসায় ছিল, বাসায় এভাবেই তালা দিয়ে অফিসে যেতো গালিব। কোনোদিন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আজ কেন?

গালিবের বুঝতে বাকি থাকে না সামনের ঐ আ°গুন পরিকল্পিত। শুধুমাত্র ওদেরকে বাসা থেকে বের করে নেওয়ার জন্য এটা একটা শান্ত মস্তিষ্কের পরিকল্পনা।

“গালিব, ইউ ফুল।”
রাগে নিজেকেই গা°লাগা°লি করছে সে।

এদিকে জামিলকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছে শাফিন। জামিল শাফিনকে বলে,
“অনেক ধন্যবাদ। ওরা আমাকে যে পরিমাণ মা°রছিল, তাকে আমি ম°রেই যেতাম।”

নিজের চোখ ইশারা করে জামিল বলে,
“এই যে দেখো আহনাফ কি করেছে? আমার চোখটাকে সারা জীবনের মতো অ°ন্ধ করে দিয়েছে।”

শাফিন শান্তভাবে ওর কথা শুনে বলে,
“কিছু বলে দাও নি ওকে?”
“আরে না, তেমন কিছুই বলিনি।”
হাত নেড়ে জবাব দেয় জামিল।

শাফিন ওকে বলে,
“ঠিক আছে, তবে এখন কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকো।”

জামিল কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে শাফিনকে জড়িয়ে ধরে,
“সত্যি তোমার এই ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না।”

সুযোগটা শাফিন হাতছাড়া করতে চায়নি। ধা°রা°লো ছু°ড়ি জামিলের ঘাড়ে ঢুকিয়ে দেয়, তারপর একই স্থানে ঘুরাতে থাকে। জামিল চিৎকার করে উঠলে, শাফিন তাকে ধা°ক্কা দিয়ে সরিয়ে সেই ছু°ড়িটাই আবার তার গলায় ঢুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ ছটফট করে শান্ত হয় জামিল। আবারো নড়ে ওঠে। গলা দিয়ে একটা চিকন শব্দের সাথে কিছু পরিমাণ র°ক্ত মুখ ও কা°টাস্থান দিয়ে বের হয়ে আসে।

শাফিন ছু°ড়িটা ফেলে হেসে বলল,
“নিজেকে বাঁচাতে বন্ধুকে মা°রাও অপরাধ নয়। সুতরাং আমি কোনো অপরাধ করিনি।”
______________________________________

দুপুর তিনটা বাজে গালিবের বাসায় এসে সবকিছু শুনে আহনাফ প্রচন্ড রেগে যায়। বেশ উচ্চস্বরে গালিবকে বলে,
“এতোটা বোকা আর কেয়ারলেস কেন আপনারা? ঠিক যে কারণে আমি ওকে আমার বাসায় রাখিনি, সেই ভুলটাই আপনারা করেছেন। আমি আপনাকে বলেছি ওকে বাঁচাতে কেউ আসতে পারে, আমার কথা কি বুঝেননি?”

নিজের বোকামির জন্য নিজেই অনুতপ্ত গালিব। সে এতটা কখনোই ভাবেনি। প্রতিদিন যে অবস্থায় জামিলকে বাসায় রেখে যায়, সে অবস্থায় রেখেছিল। সে কি করে জানবে সামনের ওই ঘটনা পরিকল্পিত?

“আপনাকে সিআইডি অফিসার বানিয়েছে কে? মাথায় গোবর নিয়ে এত উচ্চপদে কিভাবে এসেছেন? লজ্জা থাকলে পদত্যাগ করা উচিত।”

কথা শেষ করে আহনাফ চুপচাপ বের হয়ে যায়। গালিব সত্যিই অনুতপ্ত, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে পদত্যাগ করবে এবং তারপর জামিলকে খুঁজে বের করবে। সাথে এটাও খুঁজে বের করবে জামিলকে পালাতে সাহায্য করেছে কে কে?

আহনাফ বাইরে এসে ইমতিয়াজকে কল করে সকল ঘটনা জানায়। ঘটনা শুনেই ইমতিয়াজ বেরিয়ে পরে আহনাফের সাথে দেখা করার জন্য। গালিব আর তার সহকর্মীরা এখনো কোনো একটা চিহ্নের আশায় হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তবে কোনো চিহ্ন শাফিন রেখে যায়নি।
______________________________________

গত দুইদিন মৃত্তিকা বাসা থেকে কোথাও যায়নি, এমনকি অফিসেও না। নিজেকে সে ঘরব°ন্দী করে রেখেছে। কারণ ওর অনুমান যদি ভুল না হয়, তবে ইমতিয়াজ ওকে সন্দেহ করছে।

এ সন্দেহ দূর না হওয়া পর্যন্ত সে কোথাও যাবে না। ফাহাদ ভালো করে অপরূপার উপর নজর রাখছে এ বিষয়ে সে একশ শতাংশ নিশ্চিত। তাই ওদিকে চিন্তা খুব একটা তার নেই। তার সমস্ত চিন্তা ইমতিয়াজকে নিয়ে।

অবশেষে আজ বাসা থেকে বের হয়। ইমতিয়াজ আহনাফের সাথে দেখা করতে গেছে। এরচেয়ে বড় সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। দুপুরের সময় হওয়ায় রাস্তায় খুব একটা জ্যাম ছিল না, খুব সহজেই ধানমন্ডি চলে আসে মৃত্তিকা।

বাসায় এসে অপরূপাকে ফ্লোরে শুয়ে ঘুমাতে দেখে। ওর সামনে বসে ফোনে গেমস খেলছিলো ফাহাদ। মৃত্তিকাকে দেখে ফোন রেখে চটপট উঠে যায় দাঁড়ায় সে।

মৃত্তিকা তাকে বলে,
“অন্য রুমে যাও।”
“জি।”
বলে ফাহাদ চলে যায়।

একমগ পানি এনে অপরূপার মুখে ছুঁড়ে মা°রে মৃত্তিকা। হুড়মুড় করে উঠে বসে অপরূপা।
“কে? কে?”

মৃত্তিকা মগ ফেলে দিয়ে বলে,
“কেন হবে তোমার ভাগ্নি ছাড়া? (ব্য°ঙ্গ করে) মামানি।”

“ডোন্ট কল মামানি।”

অপরূপার কথায় মৃত্তিকা হাসে। বলে,
“বিয়ে করেছে মামাকে, তবে মামানি বলবো না? (একটু থেমে) বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কে? তোমার পরিচয় কি?”

অপরূপা মৃত্তিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। মৃত্তিকা ওর পরিচয় জানতে চাইছে। ও তো একটা পাখি, সুন্দর পাখি, যে সারাটা জীবন টাকার পেছনেই কা°টিয়ে দিয়েছে। নিজের এই রূপ, এই সৌন্দর্য, সবকিছু টাকার জন্য বিলিয়ে দিয়েছে।

“আমার পরিচয় গোপন রাখতেই আমি পছন্দ করি।”

মৃত্তিকা সি°গা°রেটের প্যাকেটটা বের করে সামনে রেখে বলল,
“দেখো, আমার কাছে কিছুই যে গোপন রাখতে পারবে না তা তুমি ইতিমধ্যে বুঝে গেছো। তবে কেন আবার গোপন করতে চাইছো?”

সি°গা°রেট দেখে শুকনো ঢোক গিলে অপরূপা। মৃত্তিকা আবারো হয়তো এগুলো জ্বা°লিয়ে ঘাড়ে, গলায় বা হাতে য°ন্ত্র°ণা দিবে।

“আমি বলবো। তবে আগে একটু পানি দাও।”

মৃত্তিকা বলে,
“একটু আগেই পানি ছুড়ে মে°রেছিলাম। পারলে ওটাই চেটে চেটে খাও।”
“এত নি°ষ্ঠু°র কেন তুমি?”

মৃত্তিকা ফিক করে হেসে বলে,
“আমি নি°ষ্ঠু°র? আর তোমরা কি করেছ? ব°র্ব°রতার সর্বোচ্চ স্তরে চলে গিয়েছো। তোমাদের জন্য এটা কিছুই না। সুতরাং যা জানতে চাইছি, তা না বললে পানির পরিবর্তে আ°গুন পাবে।”

চলবে…..

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

পঞ্চাশৎ পর্ব (৫০ পর্ব)

“আমি একজন প্র°স্টি°টিউট ছিলাম। আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা মায়ের ডি°ভো°র্স হয়ে গিয়েছিল। আমাকে কেউ সাথে নেয়নি। কাকার বাসায় ছিলাম আমি, ভালোই ছিলাম।”

অপরূপা একটু বিরতি নিয়ে আবারো বলা শুরু করে,
“ক্লাস নাইনে যখন প্রথমবার নাসির আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় তখন আমি রাজি হয়ে যাই। তাকেও যে আমার খুব ভালো লাগতো। আমাদের পাশের বাসার ছেলে ছিল সে। একটু একটু করে আমরা কাছে আসতে থাকি, (একটু থেমে) শারিরীক সম্পর্ক হয়েছে বহুবার। (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) ইন্টার পরীক্ষার পর বিয়ের কথা বলে আমাকে বাসা থেকে বের করে আনে আর আমি তার সাথে এসে আমার জীবনকে শেষ করে দিই।”

মৃত্তিকা মনোযোগ দিয়ে শুনছে অপরূপার জীবনের গল্প। প্রত্যেকের জীবনে নিজস্ব একটা গল্প থাকে। এই গল্পের গভীরতার পরিসর শুধুমাত্র ব্যক্তি নিজেই বলতে পারে।

অপরূপা বলছে,
“সামান্য কিছু টাকার জন্য সে আমাকে বিক্রি করে দেয়। আমি হয়ে যাই একজন স°স্তা…”

কথার মাঝে হুট করে থেমে যায়। অপরূপার গলা চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। কিন্তু তার মায়াবী চোখদুটো স্থির, তাতে কোনো ভাষা নেই, কোনো কান্না নেই, দুঃখ নেই।

“আমার জীবন এভাবেই চলছিলো। ১৮ বছর থেকে ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত ওই একটা বদ্ধ জায়গায় আমি কাটিয়েছি। কি বলো তোমরা তাকে? অন্ধ°কার°নগরী? অনেক মানুষ আমার কাছে এসেছে-গিয়েছে। একদিন তোমার মামা, শাফিন এসেছিল। তারপর থেকে সে ব্যতীত আর কেউ আমার কাছে আসেনি। পরিচয়ের কিছুদিন পরই সে আমাকে ওখান থেকে বের করে আনে এবং বিয়ে করে।”

অপরূপা থেমে যায়। মৃত্তিকার দিকে তাকায় সে। মৃত্তিকা এখনো বাকি কথা জানার জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। অপরূপা মুচকি হেসে বলে,
“এবারে কি কিছু পানি দেওয়া যাবে?”

মৃত্তিকা ওর দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। অপরূপার হাত বাধা, হাতের দিকে ইশারা করলে মৃত্তিকা ওর মুখের সামনে পানি গ্লাস ধরে। মুখে না বললেও কার্যকলাপে বুঝিয়ে দেয় সে এখনো অপরূপাকে বিশ্বাস করে না এবং করবেও না।

পানি পান শেষে অপরূপা আবারও বলতে শুরু করে,
“ভেবেছিলাম হয়তো বন্দি দশা থেকে মুক্তি পাবো, কিন্তু আমি মুক্তি পাইনি। খোলা হাওয়ায় থেকেও আমি বন্দি ছিলাম। ঠিক যেভাবে যেভাবে শাফিন আমাকে চলতে বলেছিল, সেভাবেই চলেছে। কেন জানো? কারণ শাফিনের যে অর্থগুলো, তার লোভে পড়েছিলাম আমি। (একটু থেমে) তবে শাফিন কিন্তু আমাকে কম কিছু দেয়নি, বিলাসী জীবন পেয়েছি। এমন মূল্যবান কিছু নেই, যা আমার জীবনে পাইনি। দেলোয়ারা বা সুরভি এসব পায়নি। এজন্য শাফিনের সব কথা শুনেছি, তার সব কাজে আমি বিশ্বস্ত সহকারি ছিলাম।”

একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বলে,
“বুঝে নিয়েছিলাম জীবনে ভালো থাকতে হলে শুধু টাকা লাগে, আর কিছু না।”

মৃত্তিকা বলে,
“একবারও মনে হয়নি ভুল করছো? জীবনে তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছো, এটা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু তুমি যা করেছো, তা কি অ°ন্যায় ছিল না?”

অপরূপা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। বলে,
“আমার জীবনে কোনো ইমতিয়াজ আসেনি।”

মৃত্তিকার মুখটা একটু চুপসে যায়। হ্যাঁ, ইমতিয়াজ এসেছে ওর জীবনে। ওকে অনেকটাই পাল্টে দিয়েছে সে। অগোছালো মৃত্তিকাকে গুছিয়েছে ইমতিয়াজ। অথচ আজ ইমতিয়াজকে লুকিয়েই এসব করছে সে। ভালোবাসার মানুষটার কোনো ক্ষতি যে সে চায় না।

এমন সময় অপরূপার ফোন বেজে উঠে। মৃত্তিকা ফোন হাতে নিয়ে দেখে শাফিনের নাম্বার। অপরূপাকে বলে,
“শাফিনকে বলবে তুমি মৃত্তিকার উপর নজর রাখছো।”

মৃত্তিকা কল রিসিভ করে, ফোনের স্পিকার অন করে দেয়। শাফিন বলে,
“জামিলকে মে°রে ফেলেছি। এখন তুমি কোথায় আছো?”

অপরূপা মৃত্তিকার দিকে তাকায়। মৃত্তিকা কথা বলতে ইশারা করলে, অপরূপা বলে,
“আমি সন্দেহজনক একজনের উপর নজর রাখছি।”
“কে?”
“ইমতিয়াজ।”

মৃত্তিকার হাসিটা বন্ধ হয়েছে। কল কে°টে ফোনটা ছুঁ°ড়ে ফেলে অপরূপার গলা চে°পে ধরে বলে,
“ইমতিয়াজের নাম কেন নিয়েছো?”

অপরূপা হো হো করে হেসে ওঠে বলে,
“এখন শাফিন তোমার ইমতিয়াজের পেছনে যাবে। তুমি ওখানে যাও, পারলে বাঁচাও তোমার ইমতিয়াজকে।”

অপরূপার নাকে মুখে এলোপা°থারি ঘু°ষি দিয়ে ওকে ফেলে দেয় মৃত্তিকা। উঠে দাঁড়িয়ে ফাহাদকে ডেকে বলে,
“আমি না বলা পর্যন্ত একে পানি পর্যন্ত দিবে না। বেশি বিরক্ত করলে গলায় আ°গুন ঢে°লে দিও।”

অপরূপার তাতে তেমন কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে শান্তভাবে বলে,
“আমি জীবনে সুখ পাইনি, কাউকে সুখ পেতেও দিবো না।”

মৃত্তিকা আর কিছু না বলে বের হয়ে আসে। রাগে সমস্ত শরীর তার জ্ব°লে পু°ড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে এখনই অপরূপাকে শেষ করে দিতে। কিন্তু এডভোকেট বিথীর সমস্ত খবরাখবর না পেয়ে অপরূপাকে মেরে ফেলা বিশাল বড় বোকামি হবে, যা মৃত্তিকা চায় না।

নিজের ভিতরের হিং°সা থেকে অপরূপা শাফিনকে সাহায্য করেছে। এ তো এখন দিনের আলোর মতো সত্য। হিং°সা কতটা যে ভয়াবহ তা তো আর বলার দরকার নেই। ওর হিংসার আ°গুনে এ পর্যন্ত বহু মানুষ জ্ব°লেছে আর না জ্ব°লুক।

গাড়িতে বসে মৃত্তিকার মনে একটাই কোরআনের আয়াত ঘুরপাক খাচ্ছে- ‘আর (আমি আশ্রয় চাই) হিং°সু°কের অ°নিষ্ট থেকে, যখন সে হিং°সা করে।’ (সূরা ফালাক-৫)
______________________________________

“ঐশী, আমি রাতারাতই ফিরে আসবো। চিন্তা করো না তুমি।”
“চিন্তা কি আর করতে চাই? এতো তাড়াহুড়োর মধ্যে ঢাকা গেলেন, আবার কিছু বলেও তো গেলেন না। আমি..”

সারাহ্-র কথার মাঝে আহনাফ হেসে উঠে বলে,
“জামিলের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
“কি বলেছে?”
সারাহ্-র কন্ঠ কেঁপে ওঠে।

আহনাফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“দেখা পাইনি, সে পালিয়েছে।”
“পালিয়েছে? কিভাবে পালাতে পারে?”
“দেখো ঐশী, কারণ এখানে অনেক লম্বা। ফোনে বলা যাবে না, আমি বাসায় এসে জানাবো।”

সারাহ্ ঢোক গিলে বলল,
“আচ্ছা, সাবধানে থাকবেন। জামিলের কথা শুনে আমার আরো বেশি চিন্তা হচ্ছে।”
“কিছু না এসব। আমাদের সাদাব-সাইদার কথা ভাবো।”

সারাহ্-র কন্ঠ আরো ক্ষী°ণ হয়,
“প্লিজ, তাড়াতাড়ি আসবেন।”
“আচ্ছা, এখন রাখছি।”

ফোন রেখে আহনাফ ঘড়িতে দেখে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। ইমতিয়াজের সাথে কথা বলতে বলতে সময় কে°টেছে। ওর সমস্ত ঘটনাই বিস্তারিতভাবে ইমতিয়াজকে জানানো হয়েছে। তবে ইমতিয়াজ নিজের সন্দেহ বা মৃত্তিকার অদ্ভুত আচরণ সম্পর্কে কিছুই জানায়নি।

“আমার বাসা খুব কাছেই, বাসায় আসো।”

ইমতিয়াজের কথায় আহনাফ মৃদু হেসে বলে,
“না, এখন বাসায় গেলে দেরি হবে। এমনিতেও ঐশী চিন্তা করছে।”

ইমতিয়াজও হেসে বলে,
“আচ্ছা, ঠিক আছে। সময় করে একদিন বাসায় এসো।”
“ইনশাল্লাহ।”

দুজনের বিদায় পর্ব শেষে চলে আসতে নিলে ইমতিয়াজের পেছন থেকে মৃত্তিকার কন্ঠ পাওয়া যায়,
“ইমতিয়াজ দাঁড়ান।”

চমকে উঠে ফিরে দাঁড়ায় ইমতিয়াজ। মৃত্তিকা দৌড়ে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন ঘটনায় ইমতিয়াজ একটু বি°ব্রত হয়। আহনাফ কারো ডাক শুনে ফিরে দাঁড়ায়। মৃত্তিকাকে দেখে মুচকি হেসে সে আবারো নিজের রাস্তায় রওনা দেয়।

একহাতে মৃত্তিকা কে আগলে নিয়ে ইমতিয়াজ বলল,
“এখানে কি করছো?”

মৃত্তিকা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। অপরূপার ওই কথাগুলো এখনো তার কানে বাজছে। শাফিন যে ইমতিয়াজের পিছু নেবে।

“মৃত্তিকা, এটা রাস্তা। ছাড়ো, মানুষ আমাদের দেখছে।”

মৃত্তিকা তবুও শোনে না, বরং দুহাতের বাঁধন আরো শক্ত করে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইমতিয়াজ ওকে জোর করেই দূরে সরায়।

রিকশা করে দুজনে বাসায় আসে। বাসায় এনেই মৃত্তিকাকে এক ধ°মক দেয় ইমতিয়াজ,
“বাইরে কি করছিলে তুমি? তুমি কি করো, কোথায় যাও, কিছু তো আমাকে জানাও না, জানানোর প্রয়োজনও মনে করো না।”

মৃত্তিকা মাথায় নিচু করে আড়চোখে ইমতিয়াজের দিকে তাকায়।

“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই তো। (একটু থেমে) তুমি সি°গা°রেট খাও?”

মৃত্তিকা বুঝতে পারে সি°গা°রেট কেনার বিষয়টা ইমতিয়াজ দেখেছে, আর সে কারণে ওকে সন্দেহ করছে। মৃত্তিকা হার মানার পাত্রী না। সে একটা নিরীহ চেহারা করে ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে যায়।

ইমতিয়াজের দুগালে হাত দিয়ে নিজের ওষ্ঠজোড়া ইমতিয়াজের ওষ্ঠে স্পর্শ করিয়ে বলে,
“কোনো গন্ধ আসছে? আসছে না, তবে কেন সি°গা°রেট খাওয়ার কথা বলেছেন? অন্যকারণেও কিনতে পারি।”

ইমতিয়াজ ওকে কোলে তুলে বলল,
“কি এমন কারণ যে সি°গা°রেট কিনতে হবে।”

মৃত্তিকা ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
“যে জিনিস মামকে পু°ড়িয়েছে তা আমি মনের খুশিতে ক্রয় করিনি।”

ইমতিয়াজ ওকে আর তেমন কোনো প্রশ্ন করে না। মৃত্তিকা দুহাতে শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরে৷ মৃত্তিকা যে কিছু লুকাচ্ছে তা স্পষ্ট। এভাবে প্রশ্ন করে বা ধ°মক দিয়ে ওর থেকে কথা বের করা যাবে না।
______________________________________

সাতদিন পর জামিলের ম°র°দেহ উদ্ধার করে গালিব ও তার টিম। আহনাফের ছোট ফুপ্পি আম্বিয়া আর তার ফুপাতো ভাই দেহ গ্রহণ করেছে।

খুব নি°ষ্ঠু°রভাবে খু°ন করা হয়েছে তাকে। দেহেও তাই প°চন ধরে গেছে, দেহের অনেক অংশ খুইয়ে খুইয়ে পড়ছে। মাংসগুলো কালো হয়ে তী°ব্র গ°ন্ধ বের হচ্ছে। বেঁচে থাকতে যে কু°কর্ম সে করেছে, তার প্রত্যেকটা হিসাব কেয়া°মতে হবে। কিন্তু কিছু শা°স্তি মৃ°ত্যুর সময় সে পেয়ে গেছে।

আহনাফ ঢাকায় আসেনি, তবে খবর সে পেয়েছে। ইমতিয়াজ খবর পেয়ে লা°শ দেখতে গিয়েছিল, তবে ভ°য়া°বহতা বেশি থাকায় সবাইকে দেহের কাছে আসতে দিচ্ছে না।

গালিবকে জবাব দিতে হবে, জবাবদিহিতা না দেওয়া পর্যন্ত ডিপার্টমেন্ট থেকে আর কোন কেস তাকে দেয়া হবে না।

ক্লাস শেষ করে সারাহ্ টিচার্স রুমে চলে এসেছে। সপ্তাহে এখন ওর একটা বা দুইটা ক্লাস থাকে। বেশিরভাগ দিন কলেজে না আসলেও তার চলে, আর আসলেও বসে বসে দিন যায়। এই কাজ আহনাফের, সরকারিভাবে এত তাড়াতাড়ি ছুটি পাবে না বলে প্রিন্সিপালকে অনুরোধ করে ক্লাস রুটিন বদলে দিয়েছে।

আব্বাস সাহেব ওকে কল করে। সারাহ্ রিসিভ করে,
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম, তুমি কি কোন খবর পেয়েছো?”

সারাহ্ কপাল কুঁচকে বলে,
“কি খবর বাবা?”
“জামিল মা°রা গেছে।”

সারাহ্ ভ°য় পেয়ে আশেপাশে তাকায়। নিচুসুরে বলে,
“কিভাবে?”
“কেউ মে°রে ফেলেছে। ভ°য়ং°কর খু°ন, আর বুঝতেই তো পারছ এ কাজ শাফিনের।”
“কথায় বলে না, যার জন্য চু°রি করি সেই বলে চো°র। উনার অবস্থা তাই হয়েছে।”

আব্বাসের মাথা নেড়ে বলল,
“তুমি কি এখন বাসায় আসবে না আহনাফের সাথে একবারে আসবে?”
“কিছুক্ষণ পরে চলে আসবো।”
“একা বের হয়ো না, আমি গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসবো।”

সারাহ্ জানে এখানে রাজি না হয়ে আর কোন উপায় নেই। তাই সে রাজি হয়ে যায়।

আব্বাস সাহেব আসলে সারাহ্ কলেজ থেকে বের হওয়ার সময় রাস্তার অপরপাশে ডাক্তার আরিফাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। এই ডাক্তার আরিফার উপর তার প্রচুর সন্দেহ। সেদিন উনি বলেছিলো তোমার মা কেমন আছে, সেদিন থেকেই সন্দেহ। এখন আবারও উনি এখানে দাঁড়িয়ে আছে, তারমানে ওর উপর নজর রাখতে এসেছে।

সারাহ্ দ্রুত অটোতে উঠে পড়ে। অটো চলতে শুরু করলে, আবারো মাথায় হেলিয়ে দেখে ডাক্তার আরিফা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। একটু ঘাবড়ে গিয়ে ঢোক গিলে। তবে যেকোনো কিছুর জন্য সে নিজেকে প্রস্তুত রেখেছে। যেহেতু জামিলকে মা°রতে পেরেছে, সুতরাং ওদেরকে মা°রা শাফিনের পক্ষে কোনো ব্যাপারে না।
______________________________________

দুপুরের পর আবারো ধানমন্ডিতে আসে মৃত্তিকা। অফিসের জরুরী মিটিং-এ ইমতিয়াজ ব্যস্ত আছে।

গত কয়েকদিন ধরে অপরূপার কাছ থেকে মা°দ°ক এক প্রকার দূরে রেখেছো মৃত্তিকা। ওকে খেতে দিচ্ছে না, কিন্তু ওর সামনে ঝুলিয়ে রেখেছে। মানসিক অত্যাচার যাকে বলে, তাই করছে সে।

কারণ একটাই এডভোকেট বিথীর ঠিকানা জানতে চায়, আবার সাথে ডাক্তার আরিফার সম্পর্কেও জানতে চাচ্ছে।

অপরূপা ক্রমাগত ছটফট করলেও, সে মুখ খুলছে না। অপরূপা পণ করেছে সে মৃত্তিকাকে আর কিছুই বলবে না। মৃত্তিকার একই অ°ত্যা°চার সে সয়ে গেছে।

মৃত্তিকা এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“আর কত সহ্য করবে এবার তো বলো।”

অপরূপা মাথা নাড়ে আর ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে বলে,
“আমি কিছুই বলবো না। আমাকে মে°রে ফেললেও না।”

“মে°রে ফেললে কিভাবে বলবে?”
হাঁটুতে হাত দিয়ে নিচু হয়ে ওর দিকে ঝুঁ°কে কথাটা বলে মৃত্তিকা।

“আমি ভয় পাই না তোমাকে। আমি কিছুই বলবো না। তোমার যা করার তুমি করে নিতে পারো।”
চেঁ°চিয়ে চেঁ°চিয়ে কথাগুলো বলে অপরূপা।

“ফাইন।”
ভ্রূ উঁচিয়ে সোজা হয়ে এইটুকু বলে মৃত্তিকা ভিতরে রুমে চলে যায়। অপরূপাকে ভিন্ন কোনো শাস্তি দিতে হবে।

শাফিনের শোবার রুমে থাকা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে বড় সুই ও মোটাসুতা নিয়ে বাইরে আসে। মৃত্তিকা অপরূপার সামনে বসে সুতা খুলে সুইয়ের মধ্যে গাঁথতে থাকে।

অপরূপা এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মৃত্তিকা ঠিক কি করতে চাইছে তা ও বুঝে উঠছে না।

মৃত্তিকা দাঁত দিয়ে সুতা ছিঁ°ড়ে সুতার রিলটা নিচে ফেলে বলে,
“তুমি যেহেতু কিছু বলবেই না, তবে তোমার মুখটা খোলা রেখে কি লাভ? সেলাই করে দেই। খুব সুন্দর একটা উপায়, তাই না?”

কথাটা বলেই একটা সুন্দর হাসি দেয় মৃত্তিকা। ওর চেহারায় একটা হিং°স্র রূপ চলে এসেছে।

মৃত্তিকা বলে,
“সবাই আমার শান্তর রূপটা দেখেছে, ইনোসেন্ট চেহারাটা দেখেছে। কিন্তু আমার দ্বিতীয় যে রূপটা আছে সেটা হাতেগোনা কয়েকজন দেখেছে, তুমি খুব লাকি।”

চলবে….

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

একপঞ্চাশৎ পর্ব (৫১ পর্ব)

অপরূপার মুখের সামনে সুই সুতা ঝুলিয়ে রেখে মৃত্তিকা বলে,
“জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট আজ তুমি পাবে৷ যে রূপের অ°হং°কার তোমার এতোদিন ছিল, তা শেষ করবো আমি।”

বড় সুইটা অপরূপার দুই ঠোঁটে ঢু°কিয়ে দিয়েছে মৃত্তিকা। অপরূপার ঠোঁট ক্রমাগত কাঁপছে, প্রচুর ভ°য় পেয়েছে। ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়া শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা আবারো সুইটা বের করে নেয়। অপরূপা হাফ ছেড়ে বাঁচে।

রান্নাঘর থেকে খুন্তি এনে তা অপরূপার মুখে ঢুকিয়ে জোর করে মুখ হা করায় মৃত্তিকা। তারপর ওর ডান গালে সুই ঢু°কিয়ে দিয়ে বলে,
“এভাবে হা করে থাকবে, মুখ বন্ধ করলে এই সুই তোমার জিহ্বা চি°ড়ে দেবে। না তুমি তোমার মুখ বন্ধ করতে পারবে, আর না তুমি তোমার জিহ্বা নাড়তে পারবে। আপাতত এটাই তোমার শা°স্তি। পরে তোমাকে পাকাপাকি কিছু একটা ভেবে দেখবো।”

অপরূপাকে ভ°য়ং°কর দেখা যাচ্ছে। কপালে ক্ষ°তের চিহ্ন, গালে সুই ঢু°কানো, ঠোঁটে ক্ষ°ত, গলায় পো°ড়া দাগ।

উঠে আসার সময় মৃত্তিকা বলে,
“ডাক্তার আরিফাকে কিভাবে খুঁজে বের করতে হবে তা আমি ভালো করে জানি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলকে একটু বাঁকা করতে হয়।”

মৃত্তিকা বাইরে এসে দোকান থেকে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ কিনে নেয়। তারপর এগুলো নিয়ে বাসায় চলে আসে।

ইমতিয়াজ এখনো অফিসে আছে। তাই এর মতো সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। মৃত্তিকা সবগুলো ওষুধ খুলে ব্লেন্ডারের গুঁড়ো করার জারে নিয়ে নেয়। সুন্দর মতো গুঁড়ো করে সবগুলোকে একটা বক্সে নেয়।

বক্সটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“ডাক্তার আরিফা, তৈরি হয়ে যান।”
______________________________________

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর সারাহ্ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সে ডা. আরিফার এই চাহনির কথাই স্ম°রণ করছে। ওর মা ওকে যা যা বলেছে, তার অর্থ করলে এতো বছর পর শাফিন ওর পিছু নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। শ°ত্রু°তার পরিসর আরো অনেক বড়, যা মা ওকে বলেনি নাকি তাহসিনার সাথে আহনাফের সম্পৃক্ততা থেকে সারাহ্-র পিছু করা?

“ঐশী?”

ডাক শুনে পিছন ফিরে আহনাফকে দেখে মুচকি হাসে সারাহ্। তারপর বলে,
“আজ বোধহয় একটু দেরি হয়েছে।”

আহনাফ মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, একটু দেরি হয়েছে।”

সারাহ্ হুট করে আবারো চুপ হয়ে যায়। আহনাফ বলে,
“তুমি কি কোনো বিষয় চিন্তিত?”

সারাহ্ বোধহয় ওর কথা শুনেনি। সে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ এসে ওর পাশে দাঁড়ায়। আলতো করে ডাকে,
“ঐশী।”

সারাহ্ চমকে উঠে বলল,
“জি।”
“কি চিন্তা করছো?”

সারাহ্ আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাতে বারান্দার রেলিং ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মা আমাদের সাথে মিথ্যা বলছে নাকি অন্য কারণে শাফিন আমার পিছু করছে? বুঝতে পারছি না আমি।”

“তুমি কি করে বলছো যে মা মিথ্যা বলেছে?”

“আজ ডাক্তার আরিফাকে দেখেছিলাম। রাস্তায়, এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।”

আহনাফ কপাল কুঁচকে বলল,
“ডাক্তার আরিফা কে?”

সারাহ্ ওর দিকে তাকায়। একটু অবাক হয়ে বলে,
“আপনি চেনেন না? কলেজে এসেছিল যে সাইক্রিয়াটিস্ট আরিফা।”

আহনাফ একটু ভেবে বলে,
“সে তো অনেক আগে।”
“হ্যাঁ, সেদিন উনি সেশনের মাঝখানে আমাকে বলেছিল আপনার মা কেমন আছেন, আবার উনি আমাদের বেবির কথা জানতেন।”

আহনাফ চিন্তায় পড়ে যায়। এখন তো জামিলও নেই যে জানতে পারবে ডাক্তার আরিফা আসলে কে? নিজের চিন্তা গোপন করে সারাহ্-কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলে,
“ভ°য় পেয়ো না, আমি আছি তো।”

সারাহ্ ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“এজন্যই তো আমি এখনো নিশ্বাস নিতে পারছি।”

আহনাফও দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ধন্যবাদ, এতোটা বিশ্বাস করার জন্য।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারাহ্ বলে,
“আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবেন?”
“কোথায়?”
“রোমি আন্টির বাসায়।”
“রোমি আন্টি?”
“হু, ঢাকায় থাকেন। নিয়ে যাবেন?”
“আচ্ছা, কয়েকদিন পর।”
______________________________________

সন্ধ্যায় মৃত্তিকা মমতাজ বেগমের সাথে দেখা করতে তানজিমদের বাসায় এসেছে। তানজিম বা লুৎফর রহমান কেউই বাসায় নেই।

অনেকক্ষণ দুজনে বসে গল্প করে। নানা বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয় দুজনের মাঝে, তবে মৃত্তিকার কথা বেশ ধা°রালো লাগলো মমতাজ বেগমের।

কথার মাঝে মৃত্তিকা হঠাৎ করে বলল,
“চা বানিয়ে আনবো? চা খাবে বড়মণি?”
“হ্যাঁ, আনো।”

মৃত্তিকা উঠে যায়। চটপট দুইকাপ চা বানিয়ে মমতাজ বেগমের কাপে ঘুমের ওষুধের গুড়া মিশিয়ে দিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“শুধু কি সাইক্রিয়াটিস্ট হলেই সাইকোলজি সম্পর্কে জ্ঞান থাকে?”

চা নিয়ে মমতাজ বেগমকে দিয়ে বলে,
“বড়মণি, তোমার চা।”

মমতাজ বেগম হাসিমুখে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
“বেশ ভালো হয়েছে।”

মৃত্তিকা মুচকি হেসে নিজের কাপ নিয়ে বসে। মমতাজ বেগম একটু হায় হু°তাশ করে বলে,
“তাহমিনার সাথে ইমতিয়াজের বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করেছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা আর তোমাকে দিলো চার লক্ষ টাকা। এজন্যই বলে পুরুষ মানুষ রঙ বদলায়।”

মৃত্তিকা আড়চোখে তাকায় উনার দিকে৷ উনি ঠিক কি বোঝালো তা নিয়ে ওর সন্দেহ আছে।

মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে বলে,
“আমি এতো টাকা নেই নাই।”
“সে তোমার ইচ্ছা, কিন্তু নির্ধারণ তো হয়েছে। (একটু থেমে) তবে তাহমিনার সাথে ওর যে সম্পর্ক ছিল সেটা তোমার সাথে হবে না।”

মৃত্তিকা এবারে একটু রেগে যায়। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
“বড়মণি, সম্পর্ক যা আছে আলহামদুলিল্লাহ।”

মমতাজ বেগম এক ঢোক চা গিলে বলে,
“হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ তো হবে। তবে ওই বলে না যে প্রথম সে প্রথমেই থাকে, ওই প্রেম আর কারো নয়।”
“মানে?”

মমতাজ বেগম হেসে বলল,
“রিপা থাকলে কথাটা বুঝিয়ে দিতো। আমি তো আর বোঝাতে পারবো না। তবে সত্যি বলতে, রিপা থাকলে ইমতিয়াজের সাথে তোমার বিয়েও হতো না।”
“হ্যাঁ, কারণ তখন তাহমিনা থাকতো।”

মমতাজ বেগম চায়ে চুমুক দিতে নিয়েও দিলেন না। মৃত্তিকার মুখের দিকে তাকালেন উনি। মৃত্তিকা নির্বিকার হয়ে আছে।

মমতাজ বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলেন,
“তোমার মনে হয় ইমতিয়াজ তোমাকে তাহমিনার স্থান দিবে?”
“চাই না তো ওই স্থান।”

মমতাজ বেগমের কাছে এসে মৃত্তিকা বলে,
“তুমি কি আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও খাদিজা (রা.) এর ঘটনা শুনোনি? তারপর হযরত মুহাম্মদ (স.) ও আয়েশা (রা.) এর মিষ্টি সম্পর্কের ব্যাপারে জানো না?”
“সবাই কি মহামানব?”
“না, তবে আমাদের নবীজি (স.) তো আমাদের আদর্শ। আর তাছাড়া এসবের উপরের আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”

কাপ হাতে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্তিকা বলে,
“যদিও মনুষ্য সমাজ এটা বুঝে, পশু সমাজ নয়৷ পশুকে তো আর ধর্মের কথা বোঝানো যাবে না। হালাল-হা°রা°মের পার্থক্য কি আর পশু বুঝবে? যেমন দুলাল, শাফিনসহ আরো অনেকে।”

মৃত্তিকা হনহনিয়ে চলে যায়। পরোক্ষভাবে সে মমতাজ বেগমকেও পশু বলে গেছে। চা খাওয়ার পর থেকে ঘনঘন হাই তুলছে মমতাজ বেগম। তবে ওষুধের পরিমান কম থাকায় উনি ঘুমান না। উনি ধরে নেন, সারাদিনের ক্লান্তিতে বোধহয় ঘুম পাচ্ছে।

মৃত্তিকা উনাকে হাই তুলতে দেখে মুখ বাঁ°কিয়ে আলতো হাসে। সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে ওর মস্তিষ্ক বাধ্য নয়। ও বাধ্য করবেও না। চিন্তামুক্ত থাকলেই তো এদেরকে শা°স্তি দিতে পারবে।
______________________________________

দুইদিন পর, সকাল সকাল ঢাকায় এসেছে আহনাফ-সারাহ্। রোমি খন্দকারের সাথে দেখা করতে এসেছে। উনার বাসার ঠিকানা সারাহ্ জানে।

দরজা খুলে রোমি খন্দকার অবাক হন। তবুও মুচকি হেসে বলেন,
“ভিতরে আসো।”

সারাহ্ ভিতরে আসতে আসতে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো সারাহ্?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”

সোফার দিকে ইশারা করে বলল,
“বসো তোমরা। (আহনাফকে বলে) তুমি কেমন আছো?”
“জি, ভালো আছি।”

সারাহ্ গলা ঝে°রে বলল,
“আন্টি, আসলে আমরা একটা কথা জানার জন্য এসেছি?”

রোমি খন্দকার কপাল কুঁচকে বলল,
“কি কথা? তাও আমার কাছে?”
“জি, কারণ ঘটনার সাথে আপনি জড়িত।”
“কোন ঘটনা?”

সারাহ্ একবার আহনাফের দিকে তাকায়, তারপর বলে,
“শাফিনকে চেনেন?”

রোমি খন্দকারের মুখের হাসিটা যেন মলিন হয়ে গেল। শাফিনের নাম শুনতেই ওনার চোখ দুটো চঞ্চল হয়। কি যেন এক ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন।

সারাহ্ বুঝতে পারে, ঘটনা এখানে অনেক কিছু আছে। কথায় একটু জোর এনেই বলে,
“আন্টি, চেনেন আপনি শাফিনকে?”

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রোমি খন্দকার বলেন,
“সে অনেক আগের ঘটনা। এখন কেন জানতে চাইছো?”
“তারমানে আপনি চেনেন?”
“হ্যাঁ, চিনি।”

আহনাফ হাতের ইশারায় সারাহ্-কে চুপ থাকতে বলে। নিজে উঠে দাঁড়িয়ে দুহাত পিছনে নিয়ে বলে,
“শাফিনের সাথে আপনার আর ঐশীর মায়ের কি শ°ত্রু°তা?”

রোমি খন্দকার জানেন না ওরা কতটুকু জানে। তাই উনি বানিয়ে বানিয়ে মি°থ্যা আগডুম বাগডুম শোনানোর চেষ্টা করে। আহনাফ এতে বেশ অনেকটা রেগে যায়।

বয়সে বড়, প্রায় মায়ের সমবয়সী একজন মানুষ, তাই নিতান্তই ভদ্রতা বজায় রাখতে শান্ত মেজাজে আহনাফ বলে,
“আপনি মিথ্যা বলছেন।”

সারাহ্ পাশ থেকে বলল,
“মা আমাকে দুটো খু°নের কথা বলেছে। শাফিনের একটা বড় প্রবলেম আছে, সে প্রেগন্যান্ট মেয়েদের সাথে কি রকম বিহেভ করে তা আপনি জানেন। এইটুকু পর্যন্ত, শুধুমাত্র এইটুকু পর্যন্তই আমরা জানি। আরেকটা যেটা জানি, তা হলো রাহা সুলতানার ঘটনা। (একটু থেমে) তবে এতো পুরনো ছোট ছোট ঘটনার রেশ ধরে, আজ এত বছর পর আমার আর আমার সিস্টারের উপর কারো নজর পড়তে পারে। এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না।”

সারাহ্ বেশ শান্তভাবে, স্পষ্ট ভাষায় কথা বললেও ওর কথায় বেশ জোর ছিল। রোমি খন্দকার একটু চুপ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রোমি খন্দকার বলেন,
“তুমি ঠিক ধরেছো, সারাহ্। তোমাদের কাছে যেটা এইটুকু ঘটনা, সেটা আমাদের কাছে অনেক বড় কিছু ছিল। তবে এরজন্য শাফিন তোমার পিছু করেনি, কারণ ভিন্ন। ও তোমাদের কাজে লাগিয়ে নার্গিসকে দুর্বল করে নিজের প্রতি°শোধ নিতে চাচ্ছে। (একটু থেমে) আর আমার মেয়েকে তো অনেক আগেই মে°রে ফেলেছে, ছেলেকেও সারাজীবনের মতো প°ঙ্গু করে দিয়েছে। আমার ছেলের একটা পা নেই, শাফিনই এটা করেছে।”

“কিন্তু কেন?”
হুট করে প্রশ্ন করে বসে আহনাফ।

রোমি খন্দকার নিজের চশমা চোখে দিয়ে নিজের শোবার রুমে চলে যায়। আলমারি খুলে একটা ফাইল নিয়ে আসে। ওদের সামনে ফাইলটা রেখে বলে,
“তোমরা ভেবেছো শাফিন আজকাল থেকে এরকম। কিন্তু না, অনেক আগে থেকে ও এরকম কাজ করে আসছে। নিজের কুকর্মের প্রমাণ লো°পাটের জন্য, নিজের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে মে°রে ফেলেছিল। ওর অনেক কাজের সাক্ষী আমি আর প্রমাণ এই ফাইলে আছে।”

আহনাফ-সারাহ্ একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। আহনাফ বলে,
“প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চুপ করে বসে আছেন কেন?”

“কারণ মুখ খুলেও কোনো লাভ নেই। তাই বলে খুলিনি ব্যাপারটা তা নয়। শাফিন জে°লেও গিয়েছিল, তবে ছাড়া পেয়ে গেছিলো। (একটু থেমে) কিন্তু শাফিন তো মা°রা গেছে, ফাঁ°সি হয়ে ওর।”
“শাফিন বেঁচে আছে, কবর দেয়ার পরও সে বেঁচে বেরিয়েছে। এসবের কোনো রিপোর্ট হয়নি আর হয়েও কিছুই হবে না।”

দাঁড়ানো থেকে সোজা বসে যায় রোমি খন্দকার। বুকে হাত দিয়ে বলে,
“কবরও তাকে আ°টকাতে পারেনি।”
______________________________________

গত কয়েকদিন ধরেই অপরূপার প্রতি মায়া হচ্ছে ফাহাদের। হওয়াটা স্বাভাবিক, মুখে একটা সুই ঢু°কানো। খাবার খাওয়ানো যাবে না, মৃত্তিকার কড়া হুকুম। ড্রপার দিয়ে অল্প অল্প করে পানি দেয় ফাহাদ। মেয়েটা থেমে থেমে ছটফট করে।

এখন আবারো পানি খাওয়াচ্ছে সে। অপরূপার চোখের দিকে তাকায় সে। একটা আলাদা মায়া আছে, বড়বড় চোখ দুটো হরিণীর মতো। সুন্দর গড়নের শরীর, কালো চোখের মণি পানিতে ঝলমল করছে।

ফাহাদ সুইয়ে হাত দিয়ে আবারো হাত সরিয়ে নেয়। ভ°য় হচ্ছে তার, যদি সুই খুলতে গিয়ে র°ক্ত°পাত শুরু হয়।

অপরূপার ঘন ঘন আন্দোলিত হওয়া চোখের পাপড়ি দেখে ফাহাদের আবারো মায়া বাড়ে। আলতো করে বাম গালে হাত ছোঁয়ায় সে। দুজনের চোখ একে অপরকে দেখছে।

টিস্যু দিয়ে ধরে এক টা°নে সুই খুলে ফেলে ফাহাদ। অপরূপা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
“একটু হাত খুলে দাও, আমার প্রচুর য°ন্ত্র°ণা হচ্ছে।”

ওর কথায় ভিন্ন একটা জাদু আছে। নরম কন্ঠ, ঘন নিঃশ্বাস, যেন এক ঘোর লাগা বিষয়। ফাহাদ ওর হাত খুলে দেয়। অপরূপা দুহাত সামনে এনে কয়েকবার মুষ্টিবদ্ধ করে হাতকে স্বাভাবিক করে।

খোলা চুলগুলো খোঁপা করে নিয়ে ধা°ক্কা দেয় ফাহাদকে। ফাহাদ একটু দূরে গিয়ে পড়ে বলে,
“এই কি করছো?”

“যা আমার কাজ।”
অপরূপা উঠে এসে কাঁচের টি টেবিলটা ফাহাদের উপর ফেলে। ফাহাদ গড়িয়ে সরে গেলেও কাঁচের কয়েকটি টুকরা তার পিঠে ঢুকে যায়। ব্য°থায় অ°স্ফুটস্বরে কিছু শব্দ করে সে। তবুও ফাহাদ উঠে দাঁড়ায়।

সোফায় থাকা ড্রা°গের প্যাকেট এনে মুখ দিয়ে ছিঁ°ড়ে অপরূপা। একমুঠো ফাহাদের নাকে মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়, নে°শায় একপ্রকার বুদ হয়ে থাকে ফাহাদ। ওর গাল চেটে কিছুটা ড্রা°গ অপরূপা নিজে খায়।

“এবার মৃত্তিকা বুঝবে, এই অপরূপা কি করতে পারে? (একটু থেমে) মৃত্তিকার জা°হা°ন্নাম আমি দেখেছি, এবার আমার জা°হা°ন্নাম মৃত্তিকা দেখবে।”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে