অনুভবে
পর্ব-২২
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
ইনারা তো ঘুমন্ত। নিদ্রার জগতে হারানো। তার কপালে একখানা চুমু খেলে কী বিরাট বড় কোনো অপরাধ হয়ে যাবে?
আবেগের ঢেউয়ে ভাসার পূর্বেই সভ্য সামলে নিলো নিজেকে। এভাবে আবেগে ভেসে সে কাউকে তার প্রথম চুমু প্রদান করতে পারে না। প্রথম সবকিছুই তো বিশেষ হয়। তাই তার প্রথম চুমু দেওয়া মানুষটাও তার জন্য সবচেয়ে বিশেষ হওয়া প্রয়োজন। হয়তো ইনারার প্রতি সে আকর্ষণবোধ করছে, তার জন্য আবেগ বাড়ছে, মায়া বাড়েছে। কিন্তু সে কি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হয়েছে?
সভ্য উঠে দাঁড়ায়। ইনারার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে মৃদু হেসে যেয়ে বসে তার চেয়ারে। কিছু সময়ের বিরতির পর আবারও ইন্টারভিউ কন্টিনিউ হবে।
“ভাই তোর সাথে আমার কিছু কথা….” সামি কথা বলতে বলতে রুমে ঢুকতে নিয়েছিলো কিন্তু এর পূর্বেই সভ্য দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে ইশারায় তাকে চুপ করতে বলে। আর তাকে নিয়ে বের হয়ে বলে, “কী করছিস তুই? দেখছিস না ইনারা ঘুমাচ্ছে?”
সামি ভ্রু কপালে তুলে বলে, “বাহ! একমাস আগে যার ঘুম নষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলি তার জন্য এখন এত চিন্তা। বাহ!”
“কি কাজে এসেছিস তা বল।”
“বাহিরে যে কান্ডটা ঘটেছে না? তা নিয়ে সকলে বলাবলি করছে। আর তুই মিডিয়ার অফিসের সামনেই এই কান্ড ঘটালি। ইনারাকে রুম থেকে বের হবার পরপরই কোথাও পাঠিয়ে দিবি। যেন ওকে কেউ না দেখতে পারে।”
“ভালো কথা বলেছিস তো।”
“এবার তুইও একটা ভালো কথা বল। ইনারাকে কি তোর মনে ধরেছে? আজ এত বড় ঝুঁকি নিলি তুই ওর জন্য। কালকের নিউজে কত লবণ মরিচ দিয়ে ঘটনাটা আসবে তুই জানিস?”
“আই ডোন্ট ইভেন কেয়ার।”
“আই নো। বাট তুইও ব্যাথা পেতে পারতি। কেন তুই ওর জন্য এত বড় রিক্স নিলি?”
সভ্য দেয়ালে হেলান দিয়ে দুই পকেটে হাত ভরে কিছু মুহূর্ত চিন্তা করল। আসলেই তো। কেন সে ইনারার জন্য এত বড় ঝুঁকি নিলো?
সে বলল, “জানি না। তখন কিছু মাথায় আসে নি। ওকে আশেপাশে না পেয়ে ভয় লাগছিলো, তাই ছুটে গেলাম।”
“ব্রো তুই ওকে লাভ করিস? ইউর ফার্স্ট লাভ!”
“ভালোবাসা না’কি জানি না। ভালোবাসা কীভাবে হয় তাও জানি না। কিন্তু ওর সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগে এটা সত্য। মেয়েটা একটু পাগল টাইপের তো। মজাই লাগে। বিরক্তও লাগে। তাও ভালো লাগে। কেন যেন! আমি কখনো ভাবি নি ওর পাগলামোগুলো আমার ভালো লাগবে। যতক্ষণ ওর সাথে থাকি, কথা বলি, আমার ভালো লাগে। মনে হয় জীবনটা আর একঘেয়েমি নেই। ওর ব্যক্তিত্ব ভালো লাগে। সাজানো না, লোক দেখানো না। ও যেমন আসলে নিজেকে তেমনই প্রদর্শন করে। ওর কথা শুনতে ভালো লাগে, ওর চোখ দুটোয় ডুবে থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে, ওর এলোমেলো চুল যখন ওকে বিরক্ত করে তা দেখতে ভালো লাগে।”
“এটাকে ভালোবাসা বলে না?”
“কী জানি! তবে আমার মতে যখন আমি কারও জন্য নিজের সব বিলিয়ে দিতে এক মুহূর্তের জন্য ভাববো না তখন আমি তাকে প্রকৃত ভাবে ভালোবাসবো। এমনকি নিজেকে বিলিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করব না। এখন এমনটা নেই। হয়তো পছন্দ করি, ভালো লাগে ওকে। কিন্তু সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি নি।”
“ব্রো…” সামি জলদি যেয়েই সভ্যকে জড়িয়ে ধরে। তারপর ছেড়ে বলে, “আমি তোর জন্য অনেক হ্যাপি। অবশেষে তোর প্রথম প্রেমের অনুভূতি তো হলো। যদিও আমি ভাবি নি মেয়েটা ইনারা হবে। কেননা ও যা কাজ করে সব তোকে বিরক্ত করার মতো। বাট ও একদম পিউর হার্টের মেয়ে। তোর জন্য একদম পার্ফেক্ট।”
“উফফ বিরক্ত করিস না তো। বিয়ে করতেছি না যে তুই এত খুশিতে লাফাচ্ছিস।”
“বাট তুই প্রেমে পড়েছিস অথবা পড়তেছিস এটাও অনেক। আমার তো বিলিভই হচ্ছে না।”
“তুই ইনারার সাথে থাকা বন্ধ কর। ওর মতো হয়ে যাচ্ছিস। বিরক্তিকর!”
“বাহ! ওর এসব ব্যবহারে তোমার ভালোবাসা আসে। আর আমি করলে তা বিরক্তি! হিন্দি ওই গানের লিরিক্সটা মনে পরলো, ‘দোস্ত দোস্ত না রাহা…” সভ্য সামির থেকে বিরক্ত হয়ে রুমের দিকে রওনা দেয়। সামি তবুও তার পিছন ছাড়ে না। তার পিছু যেয়ে বলে, “আমিও একটা এমন গান লিখবো ভাবতেছি,
‘আমার বন্ধু প্রেমে পইড়া আমারে ভুলে গেল,
যার প্রেমে পড়লো তার উপর আসে ভালোবাসা
আমার উপর সে বিরক্ত,
যার প্রেমে পড়লো তার উপর আসে ভালোবাসা
আমার উপর সে বিরক্ত…”
সভ্য সামির মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।
দরজার শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ইনারার। সে ঘুমঘুম চোখে তাকায় সভ্যের দিকে। চোখ কচলে বলে, “আপনি আমার রুমে কি করেন? শব্দ করেন কেন? দেখছেন না ঘুমাচ্ছি।”
“এক পাগলের পাল্লা ছাড়িয়ে এসে অন্য পাগলের পাল্লায় পড়লাম।” বিড়বিড় করে বলে সভ্য। তারপর ইনারাকে বলে, “মহারাণী সাহেবা আপনার ঘুম পূরণ হলে এবার উঠুন। আপনার এখান থেকে বের হতে হবে।”
ইনারা ঘুমঘুম চোখেই উঠে এসে সভ্যের সামনে দাঁড়ায়। ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে সভ্যের গাল টেনে বলে, “ঘুম মনে হয় ভাঙে নাই আমার। এখনো স্বপ্ন দেখছি। নাইলে ওই রাক্ষসের বাবাজি খাক্ষস আমার সাথে এত নরম সুরে কথা বলে কীভাবে?”
সভ্য এবার ধমক দিয়ে উঠে, “মানে তোমার সাথে ভালো করে কথা বলাটাও দোষ তাইতো। ঠিকাছে তোমার সাথে এভাবেই কথা বলতে হবে বুঝলাম।”
ধমক শুনে লাফিয়ে উঠে ইনারা। বুকে হাত রেখে বলে, “আপনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না আমার সাথে?”
“তোমার সাথে ভালো করে কথা বললে তো তোমার স্বপ্ন মনে হয়। সবকিছুতেই দোষ। এখন সুন্দর করে তৈরি হয়ে নেও। আর বের হও।”
“এহ আমি কোথাও যাব না। আমি ইন্টারভিউ দেখবো।”
ইনারা যেতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়। এ মুহূর্তে সে ইনারাকে এখানে থাকতে দিতে পারে না। যদি তার সাথে কোনো খবর ছড়িয়ে যায় তাহলে ইনারার সমস্যা হতে পারে। তাই তাকে পাঠাতে হবে জলদি।
সভ্য ইনারার সামনে যেয়ে কঠিন চোখে তাকায় তার দিকে। বলে, “যদি চাও তোমার এবং জোহানের কথোপকথন নিয়ে কোন প্রশ্ন আমি জিজ্ঞেস না করি তাহলে চুপচাপ আমার কথা মেনে নেও। আপাতত যাও এখান থেকে। বুঝেছ?”
ইনারা আহত দৃষ্টিতে তাকাল তার দিকে। সে কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো। প্রস্তাবটায় ক্ষতি মনে হলো না তার। তাই সে বলে, “ঠিকাছে। আমি যাচ্ছি।”
সভ্য ইনারাকে বের করার ব্যবস্থা করে নিজে ইন্টারভিউ দিতে গেল।
.
.
পরেরদিন ইনারার ঘুম ভাঙে সুরভির ফোনে। সে ঘুমঘুম চোখে তার নামটা দেখে ফোন ধরে, “সকাল সকাল তোর বিয়া লাগছে? কল দিলি কোন দুঃখে?”
“সভ্যের কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে রে?”
“সভ্যের? তুই ওই অসভ্যের খোঁজ নেওয়ার জন্য আমার ঘুম ভাঙছিস? আর ওই অসভ্যের সাথে কোন ছাগলে প্রেম করবো?”
“তাহলে কাল কাকে সে এভাবে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নিয়ে গেল?”
কথাটা শুনেই লাফিয়ে উঠে বসে ইনারা, “গতকাল?”
“হ্যাঁ, তুই তো তার সাথে কাজ করিস একারণেই তোকে আস্ক করছিলাম। মেয়েটা কে জানার জন্য আমার পেটে গুড়গুড় লাগছে। তোর তো জানার কথা বল না।”
“ওই ভীড়ের মধ্যে যে নিয়ে গেছিল ওই মেয়ে?”
“হ্যাঁ। মেয়েটার প্রতি আমার যে হিংসা হচ্ছে। সভ্যের এত কাছে ছিলো মেয়েটা বুঝতে পারছিস? বকতেও মন চাচ্ছে। সাহস কি করে হলো তার? তারপর দেখি আমার আগে কমেন্টে কতজনে বকে দিয়েছে। তাই মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছিলো। তাই আর আমি কিছু বলি নি।”
“মেয়েটা আমি।”
“কী!”
” কেউ আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলো। আর আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। তাই চোখ বন্ধ করে সেখানেই বসেছিলাম। সভ্য এসে যাস্ট হেল্প করছিলো আর ওটাকে কি বানিয়ে দিলো সবাই!”
“বোইন কেউ তোকে দেখে নাই তো? তোকে কত বকতেছে সবাই জানোস না। তুই খবরদার কোনো মিডিয়াতে ঢুকবি না।”
“কেন?”
“আমি বলছি না ঢুকবি না।”
“আচ্ছা বাবা ঠিকাছে। ফোন রাখ। আমি উঠে দৌড় মারি,নাহলে তোমাদের জাতীয় ক্রাশ অসভ্য আমার বারোটা বাজায় দিবে।”
কথাটা মুখে বললেও ফোন রাখার সাথে সাথেই সে ফেসবুকে ঢুকে। ঢুকতেই দেখে সভ্যের সাথে তার ছবি সকল জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। যদিও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু কমেন্টগুলো দেখেই তার কান্না পেল। অনেকে তাকে বকা দিচ্ছে। অনেকে অকথ্য ভাষায় গালি দিচ্ছে। আবার অনেকে বদদোয়া দিচ্ছে। পজিটিভ কমেন্টও কিছু আছে। কিন্তু তা অনেক কম। এসব দেখে ইনারা খুব কষ্ট পেল। সে যতই শক্ত হোক তার মন তো এখনো এক কিশোরীরই। তবুও নিজেকে সামলে নিলো। যে মেয়ে নিজের বাবা থেকে এত কটুবাক্য শুনতে পেরেছে তার কাছে এসব তো কিছুই না। সে উঠে তৈরি হয়ে রওনা দিলো অফিসের উদ্দেশ্যে।
অফিসে গেল সে ফুরফুরে মন নিয়েই। সামি ও ঐশি দুইজনেই তার অবস্থা বারবার জিজ্ঞেস করছিলো। সম্ভবত তার উপর এত নেগেটিভির কোনো প্রভাব পড়েছে না’কি তা পরোক্ষভাবে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছে। কিন্তু সে এমন ব্যবহার করল যেন কিছুই হয় নি। সভ্য বাহিরে ছিলো। সে আসতেই সামি জিজ্ঞেস করে, “ব্রো আজ তোর এত দেরি হলো কীভাবে? তুই তো কখনো দেরি করিস না।”
“কিছু কাজ ছিলো। শেষ করে এসেছি।” সে আবার ইনারার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোমার কাছে কোনো গাউন আছে?”
“আমার কাছে? কেন?”
“ঐশি এত জলদি দুইটা নাচ শিখতে পারবে না। তাই তোমার আমার সাথে নাচ প্রদর্শন করতে হবে।”
কথাটা শুনতেই ইনারার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল। তার মনে পড়ে গেল সেদিন সভ্যের কাছে আসাটা। তার হাতের স্পর্শ, তার নিশ্বাসের উষ্ণতা, তার ছোঁয়াটা। ভাবতেই এক ঢোক গিলল ইনারা। সে দ্রুত মাথা নাড়িয়ে বলে, “না, না, আমার মানুষের সামনে অনেক লজ্জা লাগে।”
“তোমার লজ্জা লাগে? কোথায় সারাক্ষণ বান্দরের মতো লাফাতে তো তোমার লজ্জা লাগে না।”
ইনারা মুখ ফুলিয়ে নেয়, “আমাকে আপনার বান্দর মনে হয়?”
“একদম সেম টু সেম।”
“তাইলে আপনি…আপনি….” ইনারার কথা শেষ হবার পূর্বেই সভ্য তার হাতে একটি খাম দিয়ে বলল, “পরে ভেবে জানিও। এটা তোমার পার্টিতে এন্ট্রির পাস। তিনটা এক্সট্রা পাস আছে। কোম্পানির আন্ডারে সকল সেলিব্রিটিকে দেওয়া হয়। বন্ধু বা পরিবারকে দেবার জন্য। আমার তো কেউ নেই, তুমি কাওকে নিয়ে এসো।”
ইনারা পাসগুলো পেয়ে লাফিয়ে উঠে, “আল্লাহ আমি আপনাদের সাথে পার্টিতে যাব? আমি সুরভি আর প্রিয়কে নিয়ে আসব। ওরা আপনাদের অনেক বড় ফ্যান। দুইজনে এত্তগুলা খুশি হবে। ওরা খুশি বলে আমি ডাবল খুশি। এত্তগুলা থ্যাঙ্কিউ আপনাকে।” বলে ইনারা খুশিতে সভ্যকে জড়িয়ে ধরে।
সভ্য হতভম্ব। ইনারা হঠাৎ এমন কিছু করবে সে ভাবে নি। সবার সামনে এমনটা করায় খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু তার তেমন ভালোও লাগে। সে ইনারাকে ধরতে যাবে এর পূর্বেই ইনারা তাকে ছেড়ে দেয়।
ইনারার হুঁশ ফিরে সভ্যকে জড়িয়ে ধরবার পর। নিজেই বোকা হয়ে গেল। খুশির চোটে কি করে ফেলল নিজেই বুঝলো না। সাথে সাথে সে সভ্যকে ছেড়ে তার দিকে তাকায়। চোখে চোখ পড়ে। লজ্জায় মাখা মাখা হয়ে যায় সে। সাথে সাথে দূরে সরে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকাতেও তার লজ্জা লাগতে শুরু করে। ইশশ সবার সামনে অবুঝের মতো কী কান্ড করে বসলো সে!
সামি বলে উঠে, “পুরাই সিনেমার সিনের মতো লাগতেছে তাই না ঐশি?”
সভ্য ইনারার মিষ্টি মুখে লজ্জার আভা স্পষ্ট দেখতে পায়। মুচকি হাসে সে। কিন্তু সামিকে ইনারার সাথে মজা নিতে দেয় না। সে কঠিন চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে ভয় দেখায়। আর তার উপর কারও কথা বলার সাহস তো নেই।
হঠাৎ এক মেয়েলী শব্দ আসে দরজা থেকে। সামির কথা উওর হিসেবে, “একদম। ভালোই সিনেমা চলছে।”
সভ্য তাকায় দরজার দিকে। জোহান ও দীপা দাঁড়ানো। দীপাকে রাগান্বিত দেখাচ্ছে। গতবার তাকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করার জন্যও এতকিছু শুনতে হলো অথচ আজ সে ইনারাকে কিছুই বলল না? এ ব্যাপারটা সহ্য হলো না তার। সে ইনারার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে, “গতকাল আমাকে এত জ্ঞান দিয়ে এলে। অথচ আজ দেখি তুমি আরও সকলকে লাইভ সিনেমার দৃশ্য দেখাচ্ছ। যাই হোক, তুমি যদি এই মুহূর্তে সকলের সামনে আমার থেকে ক্ষমা চাও আমি ক্ষমা করে দিব।”
ইনারা কপাল কুঁচকে নেয়, “আর আমি আপনার থেকে ক্ষমা চাইব কেন?”
“ক্ষমা চাইবে কেন মানে? গতকালের ভুলের জন্য। এতক্ষণেও কি তোমার বুদ্ধি আসে নি? নিজের ভালো চাইলে ক্ষমা চেয়ে নেও, নাহলে তোমার সাথে আমি কি করবো নিজেও জানি না।”
“আমিও জানতে চাই তুমি ওর সাথে কি করবে।” সভ্য বলল। তার কন্ঠ রাগান্বিত। দীপা সভ্যের দিকে তাকিয়েই কথার ধরণ পরিবর্তন করে নিলো। নরম সুরে বলল, “সভ্য তুমি আমার কথা শুনো। ও আমার সাথে গতকাল কত বাজে ব্যবহার করেছে বুঝাতে পারবো না। আমার এত অপমান করেছে যে…”
ইনারা দীপার কথা কেটে বলল, “আর কেন করেছি তাও বলেন? আপনি কী বলেছিলেন জোহানকে পছন্দ করার পূর্বে আমার নিজেকে আয়নায় দেখতে হবে। আপনি যেমন কথা বলেছেন তেমন উওর পেয়েছেন।”
“ভুল কি বলেছি? তোমার দেখি পোশাকের সাথে সাথে চরিত্রেও সমস্যা আছে। একবার জোহানের উপর মন আসে তো একবার সভ্যের উপর।”
ইনারা অতি শান্ত গলায় উওর দিলো, “একবার শুনেছিলাম, যে যেমন সবাইকে তেমনই ভাবে। আপনার নামে উড়ন্ত অনেক গুজব শুনেছি। তার হিসাব দিব? এক্টর, প্রডিউসার এবং ডিরেক্টরদের সাথেও আপনার চরিত্র নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তা নিয়ে তো আমিও এই মুহূর্তে কতগুলো গল্প শুনাতে পারি। কিন্তু আমি কিছু বলছি না। কারণ এক মেয়ের চরিত্র খুবই মূল্যবান। আর না জেনে কারও চরিত্র নিয়ে আলোচনা করার অভ্যাস আমার নেই।”
“তোমার সাহস কত বড় আমার সাথে এভাবে কথা বলার?”
“আপনি যেমনি কথা বলেছেন আমিও তেমনি উওর দিয়েছি।”
“তুই আর আমি কী এক? তোর মতো একশোজনকে আমি কিনতে পারবো। তোর সাহস কত বড় আমাকে এভাবে অপমান করার?” দীপা ইনারাকে থাপ্পড় দেবার জন্য হাত তুলতেই কেউ একজন তার হাত ধরে নেয়।
জোহান!
জোহান দীপার হাত ধরে নেওয়ায় সকলে অবাক হয়। সাধারণত জোহান দীপাকে কিছু বলে না। সবাইকে আরও বিস্মিত করে সে দীপাকে কঠিন গলায় বলল, “আর তোমার সাহস কি করে হয় ওর সাথে এমনভআবে কথা বলার? এখনই ওকে সরি বলবে তুমি।”
চলবে…..
অনুভবে
পর্ব-২৩
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
সবাইকে আরও বিস্মিত করে সে দীপাকে কঠিন গলায় বলল, “আর তোমার সাহস কি করে হয় ওর সাথে এমনভাবে কথা বলার? এখনই ওকে সরি বলবে তুমি।”
দীপা হতভম্ব। সে বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকায় জোহানের দিকে, “তুমি এই মেয়ের জন্য আমার সাথে এভাবে কথা বলছ?”
“হ্যাঁ, বলছি। তুমি ভুল করলে আবার বলব। আমি হয়রান হয়ে গেছি তোমার এসব বাজে কথা সহ্য করতে করতে। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে এতদিন এসব সহ্য করেছি। কিন্তু তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারো না।”
দীপা এক ঝটকায় জোহানের হাত সরিয়ে নেয়। দাঁতে চেপে বলে , “হোয়াট দ্যা হেল। তুমি এই সামান্য এসিস্ট্যান্ট এর জন্য আমার উপর কথা বলেছ? ভালো করোনি তুমি জোহান। এই কান্ড নিয়ে তোমার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।”
দীপা রাগে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।
দীপা যাওয়ার পর জোহান ইনারার দিকে তাকিয়ে বলে, “ওর পক্ষ থেকে আমি সরি বলছি। ওর মেজাজ গরম থাকে। তাই কখন কি বলে নিজেও বুঝে না। তুমি কথাগুলো মনে নিও না।”
ইনারা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো তার দিকে। গতকালের তার কথাগুলো মনে পড়ে। একদম কীভাবে সে পরিবর্তন হতে পারে?
হঠাৎ ঐশি এসে জোহানকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। সে হাসিমুখে বলে, “ভাইয়া তুমি এতদিন পর সঠিক কাজের পক্ষ নিলে। আমি অনেক খুশি। একদম ঠিক করেছ তুমি। দীপার ব্যবহার ইনারার প্রতি আজ অনেক বাজে ছিলো। আমি খুশি যে তুমি আগের মতো সঠিক এর পক্ষ নিচ্ছো।”
জোহানকে প্রথমে অবাক হয়। ঐশির এমন করে তাকে ধরে বলে। শেষ কবে তার বোন তার সাথে এমন সুন্দর করে কথা বলেছিলো মনে নেই। যখন সে ঐশিকে কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ঠিক ততটুকুর উওরই ঐশি দেয়। অথচ তারা ছোট থেকে সারাক্ষণ একসাথে থেকে, খেলাধুলা করে বড় হয়েছিলো। এতদিন পর জোহানের ঐশির আগের মতো ব্যবহার দেখে ঠোঁটের কোণে গাঢ় হাসি ফুটে ওঠে।
ইনারা কপাল কুঁচকে জোহানকে জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু আপনি না উনার সাথে গতকাল তাল মিলাচ্ছিলেন? আজ হঠাৎ কি হলো আপনার?”
“কাল রাত জেগে আমি ভাবলাম দীপা আসলে যা বলেছিলো তা ভুল। ও আমার গার্লফ্রেন্ড বলে ভুল জিনিসেও ডিফেন্ড করাটা তো অনুচিত।”
ইনারাও খুশি হয়ে যায়। গতকাল থেকে সে বারবার ভাবছিলো জোহানকে নিয়ে। তার দুর্ব্যবহার নিয়ে। যাক তা ভুল প্রমাণিত হলো। জোহান একদম তেমন যেমন সে প্রথমে ভেবেছিলো। খুশিই হয় সে। এতদিনের মন খারাপটা দূর হয়ে যায়। তারপর সে সব ভুলে ঘুরতে থাকে, কাজ করতে থাকে।
সকলে ব্যস্ত হয়ে পরে। এ সাপ্তাহে অনেক ব্যস্ত সবাই। নতুন গান তৈরির কার্যক্রম, নাচের প্রাক্টিস, লাইভ পার্ফোর্মেন্সের প্রাক্টিস ইত্যাদি নিয়ে। দুপুরের খাবারের সময় সবাই একটু আরাম করে। সবাই একসাথে ক্যান্টিনে খেতে যায়। জোহান একটু কাজ ছিলো বলে সে থেকে যায়। তার জন্য সাথে থেকে যায় সামিও।
“তোর মাঝে হঠাৎ এমন পরিবর্তন দেখে ভালো লাগলো।”
জোহান মোবাইলে একটু কাজ করছিলো। তার ভবিষ্যতে সিঙ্গেল এলবাম বের হবার কথা। এ নিয়েই। সামির কথা শুনে সে চোখ তুলে তাকায়। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কী নিয়ে বলছিস?”
“ইনারাকে নিয়ে। কিন্তু তোর হঠাৎ কি হলো তা বুঝলাম না। আই মিন ক’দিন আগেও তুই ইনারাকে নিয়ে বাজে বকছিলি।”
তাচ্ছিল্য হাসে জোহান, “ভাবলাম ইনারার মনে আমাকে নিয়ে যে অনুভূতি আছে তা একটু কাজে লাগাই। গতকাল তোর আর সভ্যের কথা শুনলাম। সভ্যের কারণে বাবার কাছে অনেক ছোট হয়েছি আমি। বারবার। সভ্য কি ভাবে সে যা চাইবে তাই তাকে স্বর্ণের থালায় পরিবেশন করা হবে? একদম না। ব্যান্ড শুরু হবার পর থেকে ওর সাথে কেবল তুলনা হচ্ছে আমার। ও সবকিছুতে আমার থেকে বেটার, এই কথাই শুনে আসছি। সবদিক থেকে ও আমার থেকে এগিয়ে আছে। এবার না। ও সব পাবে না। সব কিছুতে প্রথম হবার শখ তার। তার এই শখ মেটাচ্ছি আমি। সে ইনারাকে পাবে না। কিছুতেই পাবে না। আমি পেতে দিব না। ওকে ভেঙে ছাড়ব আমি। এমনটা না করলে আমার নামও জোহান না।”
জোহান কথাগুলো বলে উঠে দাঁড়াতেই অনুভব করে কেউ সজোরে তার গালে ঘুষি মেরেছে। আকস্মিকভাবে সে সামি। সে হতভম্ব। বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয় সে সামির দিকে। বুঝে উঠার পূর্বেই সামি তার কলার ধরে সোফায় বসিয়ে আবারও ঘুষি মারে অন্য গালে। জোহান তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে, “কি করছিস? পাগল হয়ে গেলি না’কি তুই?”
“তোর ভূত বের করছি। তোর মাঝে কীসের ভূত ঢুকেছে বুঝতে পারছি না।”
“সামি সর, নাহয় আমার হাত উঠে যাবে।” জোহান সামিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আবারও বলে, “তোর মাথা নষ্ট হয়েছে? কী আবল তাবল বকছিস তুই? ওই সভ্যের জন্য তুইও ভুলে গেলি আমি তোর ভাই হই?”
” ভাই? সভ্যও তো এককালে তোর ভাই হতো। তার সাথে আজ তোর দুশমনি চলে। এর কারণ কি কেউ জানে না। সভ্যও না। তোকে মাঝমধ্যে চিনতে পারি না আমি। তুই সে মানুষটা যে এককালে তার আপনদের জন্য প্রাণ দিতে দ্বিধাবোধ করতো না। অচেনা মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্যও কতটা কষ্ট করতি তুই। কারও জন্য কোনো খারাপ কথাও তোর মনে আসতো। আর আজ…..। আমাদের দলের সবচেয়ে ভালো মনের, নম্র মানুষটা তুই ছিলি। আর আজ কি করে নিলি তুই নিজেকে? আগে গান গাইতি তুই অন্যের ঠোঁটে হাসি ফুটানোর জন্য। তোর জন্য আমি গান গাওয়া শুরু করেছিলাম আর আজ এই গানটাকে তুই প্রতিযোগিতা করে নিলি। তোর অহংকার জয় করার জন্য, তোর ক্ষোভ মেটানোর জন্য এক পিচ্চি মেয়ের অনুভূতি নিয়ে খেলা করবি। তাও তোর ভাইয়ের মতো বন্ধুকে কষ্ট দেবার জন্য! এ কথা ভাবতে বুক কাঁপে নি তোর?”
জোহান কথাগুলো শুনে চোখ মেলাতে পারে না সামির সাথে। সে রাগে কটমট করতে করতে বেরিয়ে পরে। দরজায় সে দেখতে পারে সভ্য দাঁড়ানো। তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি তাকিয়ে বলে,”এখানে লুকিয়ে কথা শুনা হচ্ছে?”
সভ্য শান্ত গলায় উওর দেয়, “লুকিয়ে? আমার মনে তো খোঁট নেই। তাই আমার লুকিয়ে দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।”
“ভালোই হলো তুই জেনে গেলি। আমারও এসব লুকানোর ইচ্ছা নেই। আমি খোলাভাবে বললাম তোকে ইনারাকে কিছুতেই পেতে দিব না। ওকে আঙুলের ইশারায় নাচাবো আমি।”
“ওকে। যা করার কর। তোর ইচ্ছা। আমি কিছুই বলব।”
সামিও আসে সেই জায়গায়। সভ্যের কথা শুনে সে বলে, “এসব কি বলছিস তুই? ইনারার ফিলিংস নিয়ে খেলা করার কথা শুনেও তুই ওকে কিছু বলবি না? ”
সভ্য হাতের ইশারায় থামায় সামিকে। আর জোহানকে উদ্দেশ্য করে বলে, “তোর যা ইচ্ছা তুই তাই করতে পারিস। আমিও দেখি ইনারাকে কীভাবে নিজের আঙুলের ইশারায় নাচাতে পারিস তুই।”
“চ্যালেঞ্জ করিস না। ও এমনিতেই আমার প্রতি দুর্বল মনে আছে তো?”
“ধর চ্যালেঞ্জই করলাম। দেখি তুই কি করিস।”
জোহান বিরক্তি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
সামি সভ্যের কথা শুনে না তাকেও রাগান্বিত সুরে বলে, “তুই কীভাবে ওর কথা মানতে পারিস? আর ইনারা কি কোনো জিনিস না’কি যে তোরা ওকে এমন করছিস। তুই এবং আমি দুজনই জানি যে ইনারার ওর প্রতি দুর্বলতা আছে। অনেক হয়েছে। আমি এখনি যেয়ে ইনারাকে বলে দিচ্ছি।”
সামি যেতে নিলেই সভ্য তাকে থামায়, “প্রয়োজন নেই।”
“প্রয়োজন নেই মানে? এখানে তোর ওকে প্রটেক্ট করা উচিত। আর তুই…”
“কারণ আমি জানি ইনারা জোহানের সাথে এমন কোনো সম্পর্কে জড়াবে না। জোহান এখন যতই ওর সামনে ভালো সাজুক না কেন ইনারা ওর দিকে এগোবে না। এতদিনে আমি ইনারাকে যতটুকু চিনতে পেরেছি ও কখনো এমন কারো সাথে সম্পর্কে জড়াবে না যে অন্যকারো সাথে সম্পর্কে জড়ানো।”
“কিন্তু জোহানের প্রতি দুর্বল ও। আমার তো মনে হয় ওর এই জব করার কারণও কেবল সে।”
“হোক। কিন্তু ও কখনো দুইজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে আসবে না এটা আমি নিশ্চিত।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামি, “তাই যেন হয়। ও কষ্ট না পেলেই হলো।”
.
.
রাত বারোটা বাজে। সভ্য তখন বারান্দায় বসে নতুন গান লেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার মন বসছে না। সারাক্ষণ
কেবল মনে পরছে ইনারার কথা। তাই না পেরে সে কল দেয় ইনারাকে।
ইনারা বসে বসে কেক খাচ্ছিলো এবং কার্টুন দেখছিল। হঠ্যাৎ এত রাতে তার কল দেখে সে অবাকই হয়। কপাল কুঁচকে বলে, “এই অসভ্য এত রাতে আমারে কল দেয়! নিশ্চয়ই তার মাথায় কোনো কুবুদ্ধি ঘুরে। রেডি হয়ে যা ইনারা বাঁশের জন্য।”
সে কল ধরে বলে, “কি মিঃ অসভ্য আজ আমাকে কেন মনে করলেন?”
“কেন মানে? তোমাকে মনে করতে দোষ না’কি?”
“আপনি মনে করলে দোষ। মনে করলেই বাঁশ খেতে হয়।”
“এবার তো একশত ভাগ দিব।”
“দিলেন তো আমার ব্লু-বেরি কেকের স্বাদ নষ্ট করে।”
“তুমি জানো রাতের খাবার আটটার আগে শেষ করা অনেক ভালো। দুপুর বারোটার পর মিষ্টি খেতে নেই। আর তুমি কেক খাচ্ছো?”
“ধ্যুর এইসব ফালতু কথা। যারা খেতে পারে না তারা এসব বানিয়েছে বুঝলেন। দেখে, জ্বলে, লুচির মতো ফুলে। হি হি। গোপাল ভাড় দেখতেছি তো। ডায়লগ একটা মেরে দিলাম।”
“তোমার সাথে কথা বলা আর নিজের মাথায় হাতুড়ি মারাটা একদম সেম।”
“তো কে বলল আপনাকে নিজের মাথায় হাতুড়ি মারতে? কি কাজ তা বলেন।”
সভ্য এবার পড়লো বিপদে। কি বলবে সে? সে তো বিনা কাজেই কল দিয়েছে। তার খুব করে ইনারার কন্ঠ শুনতে মন চেয়েছিলো তাই। কিন্তু এটা তো বলা যাবে না। তাই সে হঠাৎ করেই কিছু না পেয়ে বলল, “আমি একটা গান লিখেছিলাম। তা কেমন হয়েছে বুঝতে পারছি না। সবাই ব্যস্ত তাই কাওকে শোনাতে পারছি না। তাই তোমাকে শুনাচ্ছি। তুমি একটু বলো কেমন হয়েছে।”
লাফ দিয়ে উঠে ইনারা, “বলেন কী! আমি সবার আগে গান শুনবো। শুরু করেন। গান শুরু করেন।”
সভ্য পরলো আরেক বিপদে। কিছুই লেখে নি সে। কি শুনাবে? তার সামনের ডায়েরিতে এক খালি পৃষ্ঠা। তবুও সে চেষ্টা করল। গিটারটা হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করল। সাথে সাথে তার চোখের সামনে ভেসে উঠে ইনারার হাসিমাখা চেহেরাটা, তার নীলাভ নয়ন, তার লজ্জায় ডুবে থাকা মুখখানা। গিটারের সুর ধরল সে। সাথে গানের তাল মেলালো,
ও প্রিয়তমা, শুনোনা, শুনোনা আমার এই বায়না
ও প্রিয়তমা, তোমার মাঝে আমার আয়না
এই অবেলায় মন যে হারায়,
এই অবেলায় তোমার সাথী হতে চায়,
এই নিঝুম রাতে তোমার আমার হবে প্রেমকথন….
চলবে…..