অনুভবে
পর্ব-১৬
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
“যে দৃশ্য দেখে তোমার কষ্ট হয়, সে দৃশ্য দেখার প্রয়োজন তোমার নেই। তোমার আশেপাশে উদাসীনতা মানায় না।”
সভ্য ইনারার হাত ধরে তাকে সিঁড়ি ঘরের দিকে নিয়ে যায়। ইনারা তখনো তাকিয়ে ছিলো জোহানের দিকেই। পিছনের দিকে হেঁটে যায় কিন্তু তার দৃষ্টি সরায় না।
সিঁড়িঘরে সাধারণত কেউ আসে না। সকলে লিফট দিয়েই উঠা-নামা করে। তাই এখানে কারও আসার সম্ভাবনা খুব কম থাকে। সভ্য ইনারাকে এদিকে নিয়ে আসে কারণ সে ভালো করেই জানে রিহার্সাল রুমের ভেতরে ঢুকলে সকলে নানান ধরনের প্রশ্ন করবে।
ইনারাকে সিঁড়ি ঘরে এনে দরজা আটকে দেয় সভ্য। আর রাগান্বিত স্বরে বলে, “জানো দৃশ্যটা দেখে কষ্ট পাবে। তাও তোমার সেখানে দাঁড়িয়েই থাকা লাগবে?”
ইনারা তার দিকে তাকায় নম্র দৃষ্টিতে। চোখে অশ্রু জমে আছে তার। সে ঠোঁট উল্টে বাচ্চাদের মতো করে তাকাল সভ্যের দিকে।
সভ্য খানিকটা বিচলিত হয়। মুহূর্তে তার সব রাগ হাওয়ার সাথে মিশে যায়। পকেটে হাত ভরে সে গলা পরিষ্কার করে বলে, “জোহানের সাথে দীপার সম্পর্ক আছে তা সম্পূর্ণ দেশ জানে। তুমি জানতে না?”
এবার কান্নাই করে দেয় সে, “আমি….আমি তো ভেবেছিলাম এমনিতেই গুজব।”
“আমি তোমাকে বলেছিলাম ওর থেকে দূরে থাকতে। দেখেছ, কষ্ট পেলে তো।”
“আপনি আমাকে বকছেন কেন?”
“আমি তোমাকে কোথায় বকা দিচ্ছি।”
“এই’যে ধমক দিয়ে কথা বলছেন?”
সভ্য বিরক্ত হয়। তবুও দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে। এক হাত ইনারার মাথায় রেখে, হাত বুলিয়ে বলে, “থাক কান্না করার প্রয়োজন নেই। তুমি আরও ভালো কাওকে পাবে।”
অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলো। ইনারা কান্না করতে করতেই জড়িয়ে ধরে সভ্যকে। সভ্য চমকে উঠে। ঠিক কি হলো সে বুঝে উঠতে পারেনি। ইনারা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, “আমার জোহানকেই লাগবে। উনি কেন এমন করল? আমার অপেক্ষা করল না কেন উনি?”
সভ্যের ইনারার বাচ্চামির উপর রাগ উঠা উচিত ছিলো। জোহান যে দিপার সাথে কেবল খ্যাতির জন্য আছে তা ভালো করেই সে জানে। এর আগেও জোহান এমন কিছু অভিনেত্রীদের সাথে সম্পর্কে গেছে। ব্যাপারটা অনুচিত, তাও সে জানে। কিন্তু ইনারাও এখন যা করছে তাও সম্পূর্ণ অবুঝের মতো কাজ। কারও ভক্ত হলেই যে সে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে তার হস্তক্ষেপ করার অধিকার পেয়ে যায় এমনটা নয়। এছাড়া এমন তো নয় যে জোহান তাকে আগের থেকে চিনে অথবা তাদের কোনো সম্পর্ক আছে। কাওকে মোবাইলে দেখে অথবা তার গান শুনে তাকে পছন্দ করা যায়। কিন্তু তার থেকে এত বড় কিছু আশা করাটা তো বোকামি। এমন বোকামি দেখে সভ্যের প্রায় রাগ উঠে। কিন্তু আজ ইনারাকে এ বিষয়ে কিছুই বলে না। সম্ভবত মেয়েটা তেমন ভাবে মা বাবাকে কাছে পায় নি এজন্য। এ কারণেই হয়তো মেয়েটা যাকে কাছের ভাবে তাকেই দূরে যেতে দেখে তাহলে কষ্ট পায়। হয়তোবা এ জন্যই!
হঠাৎ করে তার বুকেতে ইনারা ঝাঁপিয়ে পরাতেও সে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কেমন যেন অনুভূতি হয় তার। বুকের ভেতর কেমন যেন করে উঠে। এই অনুভূতিটাও তাকে দ্বিধায় ফালিয়ে দেয়। সে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। এভাবে কান্না করার প্রয়োজন নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
সে সান্ত্বনার জন্য ইনারার পিঠে হাত রাখতে নিলেই সে উঠে যায়। যত দ্রুত উঠে ঠিক তত দ্রুত যেয়ে সিঁড়িতে বসে মুখ ফুলিয়ে বলে, “সাহস কি করে হলো উনার এমনটা করার? আমার…আমার অনেক রাগ উঠছে। ইচ্ছা করছে উনাকে আর ওই দিপাকে একসাথে নৌকাতে বেঁধে ডুবায় দেই। না একসাথে দিব না। আবার সে নষ্টামি করবে। তার সাহস কত বড় আমি থাকতে অন্যমেয়ের সাথে…। আর আমার কথা বাদ দিলাম। করিডরে এসব কে করে? খবিশগুলা। আর আপনিও একটা জিনিস। আমি কান্না করছি দেখছেন। কোথায় দৌড়ে যেয়ে চকোলেট আইস্ক্রিম নিয়ে আসবেন। তা না। আপনি তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না দেখছেন। জ্ঞান বুদ্ধি আছে আপনার?”
সভ্য প্রথম চোখ দুটো গোল গোল করে তাকায় তার দিকে। মেয়েটা এক মুহূর্ত আগেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। আর এখন তার এমন পরিবর্তন? সে হাসবে না মেজাজ খারাপ করবে নিজেও দ্বিধায় পড়ে যায়। সে ইনারার পাশে যেয়ে বসে হতাশ হয়ে বলল, “তুমি একটা জিনিসও বুঝছো? তুমি মাত্র না কান্না করছিলে? তাহলে এত জলদি তোমার মুড কীভাবে পরিবর্তন হয়ে গেল?”
“আমার প্রথমে কষ্ট লাগছিল। পরে চিন্তা করলাম আমি কষ্ট পেলে তাদের কী আসবে যাবে? তাই এখন আমার রাগ উঠছে। একবারে উচিত শিক্ষা দিব।”
চরম বিরক্ত হয় সভ্য, “তুমি যাস্ট ইম্পসিবল। নিজের এতটা সময় তোমার পিছনে ব্যয় করেছি। তোমার জন্য না’কি আমার খারাপ লাগছিল!”
সভ্য উঠে যেতে নিলেই ইনারা তার হাত ধরে নেয়। আবদারের সুরে বলে, “আমার ভালো লাগছে না। একটু এসে পাশে বসুন না।”
এতটুকু কথায় সভ্যের মন গলার কথা না। কিন্তু ইনারার এমন কাঁপা-কাঁপা কন্ঠ শুনে তার মন নরম হয়ে যায়। কিন্তু সে ইনারার পাশে যে বসে না। তার হাত ছাড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে থাকে। আর বলে, “আমার পিছনে আসো।”
ইনারাও কথা মেনে যায়। পিছু যায় সভ্যের।
ছাদে যায় দু’জন। বিশাল এক উদ্যান। চারপাশে খোলা জায়গা। আশেপাশে তেমন কোনো বিল্ডিং নেই। উঠে সভ্য স্বাভাবিকভাবে এগুলোও ইনারার অবস্থা খারাপ। সে গভীর নিশ্বাস ফেলতে থাকে, “ভাই লিফট থাকা সত্ত্বেও আপনি আমাকে এত কষ্ট করে পাঁচতলা উঠাইছেন। আসলে কি দয়া মায়া আছে আপনার?”
সভ্য রেলিং-এ হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। হাত আড়া-আড়ি ভাঁজ করে বলে, “লিফটে উঠতে কেউ দেখে নিলে সমস্যা হতো। বিশেষ করে গ্রুপের বা স্টাফদের মধ্যে। এছাড়া তোমার প্রিয় জোহানও তো সেখানে দাঁড়িয়ে দিপার সাথে…”
“হয়েছে।” ইনারা সভ্যের কথা থামিয়ে বলে, “হয়েছে বুঝতে পেরেছি।”
ইনারা সভ্যের পাশে যেয়ে দাঁড়ায়। দু’হাত রেলিং এ রেখে তাকায় সামনের দিকে। আকাশ লালচে হয়ে গেছে। সূর্য ডোবার আগের দৃশ্য। কী সুন্দর! চারপাশে বাতাসের ছড়াছড়ি। কেন যেন আজ এই বাতাসের মাঝেও বিষাদ ছড়ানো। সে কখনো জোহানের জন্য এত কষ্ট পাবে ভাবে নি। প্রায় দুই বছর ধরে সে জোহানের পরিকল্পনা বুকে নিয়ে বেঁচে আসছে। তার সাথে হাজারো স্বপ্ন সাজাচ্ছে। আচ্ছা জোহান কী জানে না তাদের বিয়ের কথা? জানলে কীভাবে করতে পারে এমনটা? আচ্ছা তার কীসে বেশি কষ্ট লাগছে? জোহানের এমনটা করায় না’কি তার মা’য়ের স্বপ্ন পূরণ না করায়?
অনেকসময় ধরে নীরবতা ছড়িয়ে রইলো। তারপর হঠাৎ করে সভ্য জিজ্ঞেস করল, “তুমি কী সত্যি খুব কষ্ট পেয়েছ?”
“খানিক সময়ের জন্য পেয়েছিলাম।”
“এখন আর কষ্ট লাগছে না?”
“না।”
“আমি বুঝতে পারছি না তোমার কষ্ট পাওয়ার কারণটা কি? এমনও না যে জোহানকে তুমি আসল জীবনেই চিনতে।”
“আপনি বুঝবেন না। ছোট বেলা থেকেই আমি কারো সাথে স্বপ্ন সাজালে, তা ভেঙ্গে যায়। ছোটবেলায় ভেবেছিলাম বড় হয়ে মা-বাবার সাথে সুন্দর একটা পরিবার হবে, হলো না। তারপর ভেবেছিলাম একদিন আমার মা’য়ের মতো …. ” কথার তালে তালে ভুল কথা বলতে যেয়ে সতর্ক হয়ে যায় ইনারা। তার কথাটা সঠিক করে বলে, “আমার মা’য়ের ইচ্ছা ছিলো আমি অভিনেত্রী হবো। তাও মানা করে দিলো। কিন্তু আমার আপুকে ঠিকই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এখন আবার জোহান। আপনার জীবনে হয়তো সবাই আছে। তাই আপনি কখনো আমার পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারবেন না।”
“আমিও কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আমার পরিবার থেকে দূরে থেকেছি।” ইনারা হতভম্ব হয়ে তাকায় সভ্যের দিকে। সভ্য না’কি কখনো নিজের মনের কথা কাওকে বলে না। কখনো তো তার বন্ধুদেরও বলে নি। তাহলে আজ কীভাবে?
সভ্য আবারও বলে, “এমন না যে আমার কেউ নেই। সবাই আছে। কিন্তু তবুও তাদের থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। সবসময়ই। প্রথমে সুরক্ষার উদ্দেশ্যে। তারপর পড়াশোনার জন্য। এরপর আমার ক্যারিয়ারের জন্য। তাই তোমার কষ্ট সম্পূর্ণ না হলেও একটু হলেও বুঝতে পারব।”
ইনারার এমন বিস্মিত মুখ দেখে ফিক করে হেসে দেয় সভ্য, “এভাবে মুখ করার প্রয়োজন নেই। আমি জানি তুমি আমার পরিবারের সম্পর্কে জানার জন্য কত কাহিনী করেছ। সুযোগ পাও নি। আজ আমি নিজেই জানালাম। এটা জানার চেষ্টা করো না যে তারা কে! তা তোমার জানার প্রয়োজন নেই। আর প্রয়োজন হলে সময় আসলে নিজেই জানতে পারবে। আচ্ছা তোমার মা’য়ের খুব কাছের ছিলে না তুমি?”
মা’য়ের কথা শুনতেই ইনারার সব বেদনা যেন হাওয়ায় মিশে গেল।
“অনেক। আজও তার জন্মদিনে আমি তার পছন্দের জায়গায় যাই। শ্রীমঙ্গলে।”
“আর কী পছন্দ ছিলো তোমার মা’য়ের?”
“সব। রান্না, নাচ, গান শোনা। মা আমাকেও প্রতি উইকেন্ডে নাচ শেখাত।”
“তুমি নাচ পারো?”
“আবার জিগায়। সেই লেভেলের নাচ পারি।”
“দেখে তো মনে হয় না।”
“এত বড় কথা! আপনি গান ছাড়েন আমি নেচে দেখাচ্ছি।”
“প্রয়োজন নেই।”
“আছে। আপনি কীভাবে আমার নাচে প্রশ্ন তুলতে পারেন? আমি নেচে দেখাবোই।”
ইনারা ভেংচি কেটে সভ্যের পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিজেই গান ছাড়ে। টপ’স, জিন্স এবং স্কার্ফ পরা ছিলো সে। এ গানের পঙক্তির সাথে এ পোশাকে নাচ একদমই মিলে না তার। তবুও সে গান ছেড়ে ছাদের ঠিক মাঝখানে এসে নাচতে শুরু করে।
যাও বলো তারে, মেঘের ওপারে,
বৃষ্টি বন্দনা, জুড়ে ধরণীতল ।
যাও বলো তারে, শ্রাবণ আষাঢ়ে,
মেঘের শতদলে ছুঁয়েছি ভেজা জল ।
মাতাল হাওয়ার ধ্বনি, বৃষ্টি কি শোনে না,
ময়ূর পেখম তোলে, ধিমতানা দেরে না ।
ধিমতানা, বাজে ধিমতানা, বাজে ধিমতানা, দে রে না
ধিমতানা, বাজে ধিমতানা, বাজে ধিমতানা, দে রে না
সভ্য ভাবলো ইনারার কথাটা এমনিতেই। সে কেবল সভ্যকে ভুল প্রমাণ করার জন্য নাচ প্রদর্শন করছে। সূর্যোস্তের সময় হয়েছে। তাই সে পিছনে ফিরে তাকাল সূর্যোস্ত দৃশ্য উপভোগ করার জন্য। সে ইনারাকেও ডাকতে নিলো যেন সে এসব পাগলামো বাদ দিয়ে এই সুন্দর দৃশ্যটা উপভোগ করতে আসে। কিন্তু পিছনে ফিরেই সে স্থির হয়ে যায়। দৃষ্টি ফেরানো যেন দায়। নামিয়ে নেবার পর সে কিছু মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে যায়। গানের তালে তালে তার নাচের চেয়ে বেশি মনোমুগ্ধকর মুখের খুশিটা। গানের তালে ইনারার এই নাচের প্রদর্শন মুগ্ধ করল তাকে। তার স্বর্ণোজ্জ্বল কেশ পিঠ ছড়িয়ে গেল। অপরূপ দেখাচ্ছিলো তাকে। সভ্য বেহায়ার মতো তাকিয়ে রইলো তার দিকে। এই প্রথম সে একটা মেয়ের উপর এতটা আকর্ষণ বোধ করছে। তাও এতবার। কী আছে এই মেয়ের মাঝে?
সে পা বাড়াল। আকস্মিকভাবে সে নাচের মাঝেই ইনারার হাত ধরে নেই। তাকে থামায়। তার বাহু ধরে কাছে টেনে নেয় তাকে।
ইনারা চমকে উঠে সভ্যের এমন কান্ডে। সে বুঝে উঠতে পারে না কি হচ্ছে। সূর্যোস্তের লালচে আলো পড়ছিলো সভ্যের উপর। অন্যরকম দেখাচ্ছিলো তাকে। সূর্যের লাল রঙে আরও আকর্ষণীয় লাগছিল তাকে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় তার চোখদুটো। কেমন মুগ্ধতায় ভরা! কেমন মোহময়!
চলবে…..
অনুভবে
পর্ব-১৭
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা
সূর্যের লাল রঙে আরও আকর্ষণীয় লাগছিল তাকে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় তার চোখদুটো। কেমন মুগ্ধতায় ভরা! কেমন মোহময়!
সে সভ্যের দিকে তাকিয়ে থেকেই মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করে, “হঠাৎ এভাবে ধরলেন কেন?”
“হুঁ?” সভ্যের ঘোর ভাঙে। সে আশেপাশে তাকিয়ে ছেড়ে দেয় ইনারাকে, “ওহ, এই’যে বেঞ্চ ছিলো। পা’য়ে লাগলে পড়ে যেতে।”
ইনারা বেঞ্চের দিকে তাকিয়ে মুখ বানায়, “পাঁচহাত দূরে ওগুলো।”
“যেভাবে বান্দরের মতো লাফাচ্ছিলে পরতে বেশি সময় লাগতো না।”
“আমি বান্দরের মতো লাফাচ্ছিলাম? আমাকে বান্দরের মতো দেখা যায়?”
“তো কি?”
“আপনি আসলে একটা অসভ্য বুঝলেন? আমার মন খারাপ কোথায় আমাকে সান্ত্বনা দিবেন উল্টো আমাকে বান্দর ডাকছেন। থাকবো না আপনার সাথে।”
ইনারা মুখ ফিরিয়ে হাঁটতে শুরু করে। সে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নিলেই দেখে সভ্য লিফটে উঠছে। সে দৌড়ে যেয়ে লিফট থামিয়ে বলে, “আপনি সত্যি এক অসভ্য বুঝলেন? আমাকে ডাকলেনও না, নিজে লিফটে উঠে যাচ্ছেন।”
চুপ করে থাকে সভ্য। কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারে না। এমন সময় তার নিশ্চয়ই রাগ করা উচিত ছিলো কিন্তু কেন যেন তার রাগ উঠলো না।
.
.
নিচে রিহার্সাল রুমে ঢুকে জোহান এবং সামি নাচের প্রাক্টিস করছিলো। আর দীপা সোফায় বসে গালে হাত দিয়ে দেখছিলো তাকে। দীপাকে নতুনদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর অভিনেত্রী মানা হয়। তার সৌন্দর্যের কারণেই সে অনেক কম সময়ে এত বিখ্যাত হয়ে পড়ে।
দীপা চোখ ঘুরিয়ে সভ্যকে দেখতেই উঠে আসে।
“আরে সভ্য কেমন আছো তুমি। কতদিন পর দেখা হলো….” বলে সভ্যকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই সভ্য তার পাশ কাটিয়ে চলে যায় এবং উওর দেয়, “ভালো। আর আমাকে যেকেউ জড়িয়ে ধরুক, এটা আমার পছন্দ না। এতদিনে তোমার একথা জানা উচিত।”
সে যেয়ে বসে সোফায়। ইরফানের পাশে।
অন্যদিকে দীপার মুখ অপমানে থমথমে হয়ে যায়। কত পুরুষরা তার জন্য পাগল অথচ সভ্য তাকে বারবার এভাবে এড়িয়ে যায়। তাও সকলের সামনে। ব্যাপারটা আসলেই লজ্জাজনক! হয়তো সভ্যের এই অন্যরকম ভাবটাই তাকে আকর্ষণ করে বেশি। সভ্য যে সকলের থেকে আলাদা।
দীপা এবং সভ্যের এই ছোট ঘটনাতেই সকলের দৃষ্টি তাদের উপর যেয়ে আটকায়। নাচের প্রাক্টিস বন্ধ করা হয়। সোহেল গানও বন্ধ করে দেয়। দীপা এমন অপমানিত দৃশ্যে নিজেকে আকর্ষণীয় করতে চায় না। তাই সে বলে, “হ্যাঁ তুমি বলেছিলে। আমিও না ভুলে গেছি।”
“আমি আগে বলিনি। কিন্তু বারবার ইগনোর করলে তোমার বুঝা উচিত।” সভ্যের এমন সরাসরি কথায় পরিস্থিতিটা কেমন বিশ্রী হয়ে দাঁড়ায়। দীপা সভ্যের এই কথা এড়িয়ে যেতে ইনারার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমাকে আগে দেখি নি। তুমি কে?”
ইনারার কিছু বলার আগেই জোহান তার পাশে এসে দাঁড়ায়। দীপার কোমরে হাত দিয়ে তাকে বলে, “ও হলো আমাদের গ্রুপের নতুন পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট।”
“ও তুমি বলেছিলে তোমার অনেক বড় ভক্ত। সারাদিন তোমার পিছু নিয়ে প্রশংসা করে, সে?”
“এমনই কিছু। আজ জানলাম আমার ফ্যানগ্রুপের মেম্বার না’কি ও?” তারপর সে ইনারার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আগে তো বলোনি।”
ইনারার কপাল কুঁচকে তাকায় জোহানের হাতের দিকে। দীপার কোমরে তার হাত দেখে সে বিরক্ত হয় খুব। তারপর বলে, “আচ্ছা আপনি এখন তো জানেন, আপনার ভয় হচ্ছে না আমি আপনাদের সম্পর্কের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গ্রুপে জানাতে পারি?”
কথাটা শুনতেই দীপার কোমর থেকে হাত সরিয়ে নেয় জোহান। তাদের সম্পর্ককে নাম দেবার বিশেষ ইচ্ছা তার নেই। কেননা এই সম্পর্ক কেবল নামের। আর টাইমপাসের জন্য। তাদের সম্পর্ক কনফার্ম হলে ভবিষ্যতে নানান সমস্যায় জড়াতে পারে সে। এছাড়া সম্পর্কের নাম দিলে অন্যকারও সাথে গুজবে জড়াতেও তার সমস্যা হবে। এতে তার বাবা ভীষণ নারাজ হবে। তাই যে করেই হোক, তাদের সম্পর্কের নাম দেওয়া যাবে না।
জোহান ইনারাকে বলে, “কোম্পানির কোন তথ্য বাহিরে দেওয়া মানা। তোমার চাকরির প্রতি ভালোবাসা থাকলে এমন কিছু তুমি করবে না। বড় অংকের জরিমানা দিতে হতে পারে।”
ইনারা বিড়বিড় করে বলে, “শালা আমি এতদিন ধরে ওই অসভ্যকে সহ্য করছি উনার জন্য আর উনি আমাকে চাকরি থেকে বের করে দেবার হুমকি দিচ্ছে? আমি পিছনে ঘুরাঘুরি করি তাইনা? এখন আমি আপনাকে আমার পিছনে ঘুরিয়েই ছাড়বো।”
ইনারাকে বিড়বিড় করে কথা বলতে দেখে জোহান জিজ্ঞেস করে, “কি বলছো শুনতে পাচ্ছি না। জোরে বলো।”
“আপনার শোনা লাগবে না। আমার যা ইচ্ছা আমি তাই করবো। দেখি আমার কে কি করতে পারে।”
ইনারা ভেংচি কেটে তার পাশ কাটিয়ে যেতেই জোহান তার হাত ধরে নেয়, “আমার কত সম্পূর্ণ হয়নি। তুমি আমার সম্পূর্ণ কথা না শুনে কিভাবে যেতে পারো। আর প্রতিদিন তো পিছুপিছু ঘুরে বেড়াও। আজ তোমার হঠাৎ এত ভাব আসলো কেন?”
“আমার ভাব, আমার ইচ্ছা, আমি দেখাব, আপনার এত জ্বলে কেন?”
সভ্য বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। ইনারার ব্যাগ হাতে নিয়ে বলে, “এটা কী কাজ করার সময় না নাটকের?” সে ইনারার কাছে যেয়ে তার অন্যহাতে ব্যাগটা দিয়ে বলল, “তোমার কারণে আজ সকলের রিহার্সাল নষ্ট হয়েছে দুইবার। আজকের মতো তুমি বাড়ি যাচ্ছ। সকলে যেন প্রাক্টিসে ধ্যান দিতে পারে। আসো।”
সভ্য ইনারাকে আসতে বললেও সে এগোয় না। সভ্য দেখে এখনো তার হাত জোহানের হাতে। তার কপাল কুঁচকে যায়। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জোহানের দিকে তাকিয়ে ইনারার হাত ধরে এক টান দিয়ে ছাড়ায় এবং তার পিঠের দিকের গেঞ্জি টান দিয়ে বলে, “আসো তো।”
ইনারাকে কিভাবে পিছন থেকে টেনে নিয়ে যাবার কারণে তার মেজাজটা খুব খারাপ হয়। সে বকতে শুরু করে সভ্য কে, “আমি কী গরু ছাগল নাকি আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন? দেখেন মিঃ অসভ্য ছাড়েন আমাকে। ভালো হচ্ছে না কিন্তু। ইনারাকে চিনেন আপনি। আমার মেজাজ খারাপ হলে ঘুমের মধ্যে আপনার চোখে মরিচ ডইলা দিব। আপনার ব্যাঙের ছাতা জ্বালায় দিব দেখেন।”
সভ্যের কানে যেন কথাগুলো যায়-ই না। সে চুপ করে তার কাজ করতে থাকে।
বাকি সবাই হা করে তাকিয়ে থাকে। সভ্যকে এমন ভাবে দেখার অভ্যাস কারও নেই। সকলেই হতভম্ব।
.
.
সভ্য এবং ইনারা গাড়িতে পাশাপাশি বসা। সভ্য যখন গ্যারেজে বসে ইনারাকে তার বাসায় পৌঁছে দেবার কথা বলে। তখনই ইনারা অনেক ঘাবড়ে যায়। সে নিজের আসল পরিচয় দিতে পারবে না। তাই বাহানা বানায় তার মন খারাপ এজন্য নিজের বান্ধবীর বাসায় থাকবে আজ। অর্থাৎ সুরভীর বাসায়। ইতিমধ্যে সে সুরভীকে মেসেজ করে দিয়েছে যে, “তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। আধা ঘন্টার মধ্যে বাসার বাহিরে এসে দাঁড়াবি।”
সভ্য কাওকে না বলেই এসে পড়ল ইনারার সাথে। অনেকক্ষণ ধরে সে খেয়াল করছে ইনারা চুপ করে বসে আছে। এমন মানুষ সে নয়। সারাক্ষণ তার মুখ চলতেই থাকে। তাহলে আজ এই জাদু কীভাবে?
“কী হলো মুখ ফুলিয়ে রেখেছ কেন?”
সভ্যের জিজ্ঞেস করতে দেরি ইনারার বকা দিতে দেরি নেই, “আপনার সাহস কত বড় সবার সামনে এভাবে আমাকে টেনে হিঁচড়ে এনেছেন আপনি। সভ্যতা বলতে কিছু আছে আপনার মধ্যে? মনে হয় আমার সাথে আপনার জনম জনমের দুশমনি চলে। তা বের করছেন।”
ইনারা ভেংচি কেটে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
সভ্য আর কথা বাড়ালো না। সে একটি নোটবুক বের করে নিজের কাজ করতে শুরু করে। আবার মুহূর্তে ইনারা চিৎকার করে উঠে, “মানে জ্ঞান বুদ্ধি বলতে তো কিছু নেই আপনার। এই আমি রাগ করলাম আর আপনি আমার রাগ ভাঙানোর জায়গায় এই কচুর বই খুলে বসে আছেন।”
ইনারার এই উঁচু স্বরে ভয় পেয়ে যায় সভ্য। সে বুকে হাত রেখে বলে, “তোমার গলা না মাইক? এত জোরে কে কথা বলে। আর এটা বই না নোটপ্যাড। আর এই কচুর সাথে বইয়ের সম্পর্ক কী? কচু তো খাবার জিনিস।”
“আহা আমি কোন জ্বালায় পরলাম! ব্যাটায় বাংলা ভাষাও বুঝে না।”
“ব্যাটা? এই ব্যাটা আবার কী?”
“উফফ বুঝাতে পারব না বিরক্ত করেন না তো।”
“আমি বিরক্ত করছি? তুমি কোথা থেকে এই আজব ভাষা আনো কে জানে?”
“আমি ভাষা আনি?” ইনারা সামনের সিটে বসা ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে, “মামা আপনি বলেন তো এসব ভাষা কি আজব?”
ড্রাইভার পরে যায় আরেক দ্বিধায়। সভ্যের থেকে ভয় পেয়ে কিছু বলতে পারছে না সে। উওর না পাওয়া ইনারা আবার বলে, “আঙ্কেল বলেন তো। এই অসভ্য আপনাকে কিছু বলবেনা।”
ড্রাইভার বলে, “না এটা স্বাভাবিক কথা। আমিও বলি। স্যারের সাথে মেপে তোলে বলি কেবল।”
ইনারা আবার নিজের সিটে হেলান দিয়ে বলল, “দেখলেন তো আমার সাথে আপনার এই অবস্থা। প্রিয়’র মা-বোনের কথা শুনলে তো আপনি পাগল হয়ে যেতেন।”
“প্রিয়টা কে?”
“আমার বন্ধু। আমার দুইটা বেস্ট ফ্রেন্ড আছে সুরভী এবং প্রিয়।”
“ওহ।”
“বন্ধু বলতে যাস্ট বন্ধু। আপনার আর ওই জোহানের মতো না। বন্ধুর নামে প্রেম করে বেড়ায়।”
“আমি কার সাথে বন্ধুর নামে প্রেম করে বেড়ালাম?” কপাল কুঁচকে নেয় সভ্য।
“দেখেন আপনি বলেন না, এর মানে এই না যে আমি বুঝি না। ঐশি আপুর সাথে যে আপনার কী চলে সব-ই বুঝি।”
সভ্য শীতল গলায় বলে, “তোমার বন্ধু জাস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে। ঐশি আমার যাস্ট বান্ধবী হতে পারে না?”
“থাক থাক লুকানো লাগবে না। আপনাদের তো একসাথে ভালোই মানায়। লুকিয়ে কি লাভ বলুন। চুপি চুপি আমাকে বলে দেন। আমি কাওকে বলব না।”
এবার সভ্যের ভালোই রাগ উঠে যায়। সে রাগান্বিত সুরে ড্রাইভারকে বলে, “গাড়ি থামান।”
গাড়িটা সাথে সাথেই থেমে যায়। সে ইনারাকে বলে, “নামো।”
“কী!” ইনারার চোখ দুটো যেন কোটর থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সে এটা আশা করে নি।
সভ্য আবারও রাগান্বিত স্বরে বলে, “গাড়ি থেকে বের হও।”
“আজব তো আমি এই মাঝরাস্তায় কীভাবে নামি? এমন হলে গাড়ি করে দিয়ে আসবেন বললেন কেন?”
“নামতে বলেছি।”
“আপনি যাবেন বলে আমার বান্ধবীকে স্যারপ্রাইজ দিব বলেছি। এখন এমন করলে ও কষ্ট পাবে।”
“এটা তোমার ব্যাপার। এসব না বুঝে কথা বলার আগে ভাবা উচিত ছিলো।”
এবার ইনারারও রাগ উঠে। সে জেদে গাড়ি থেকে নেমে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। সে ভাবে সভ্য আবার তাকে ডাকবে। ডাকে না। গাড়িটা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যায়। এর মধ্যেই শুরু হয় বৃষ্টি। সে ভিজে একাকার। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে, “আজকের দিনে আসলেই ঠাডা পরসে আমার সাথেই এমন হতে হবে কেন? উফফ বিরক্তিকর!”
.
.
রাত নয়টা বাজে। সভ্য বসে ছিলো বারান্দায়। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। স্বভাবগত ভাবেই সে গিটার বাজাচ্ছে। আর গুনগুন করে গান গাচ্ছে। তার নতুন এলবামের গানের জন্য আগামীকাল সকলের পরামর্শ দেবার কথা। তাই গানের প্রাক্টিস করা,
“প্রেম চাহিনা তোমার কাছে,
চাই একটুখানি তোমায়,
প্রেম করার মতো প্রেমিক আছে অনেকেই
কিন্তু ভালোবাসার সায়রে ডুবে না কেউ….”
এমন সময় হঠাৎ করে কল আসে তার ফোনে। আসি এঁকে উঠে সভ্যের ঠোঁটে। সে কল ধরে বলে,
“মা, বলো।”
“কেমন আছিস তুই? রাতে খেয়েছিস? কী খেয়েছিস?”
“মা আস্তে-ধীরে তোমার প্রশ্নের ভান্ডার খুলো। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না কোথাও।”
“সারাদিনে তো এই এক সময়তেই পাই তোকে, নাহলে সারাদিন তুই ব্যস্ত। সারাদিনে এই একসময়েই তোকে কল দেওয়ার অনুমতি আছে। আজ কী করলি সারাদিনে?”
“বলো না মা, তোমাকে এক ইন্দুরনীর কথা বলেছিলাম না? সারাদিন কানের নিচে ক্যাঁচক্যাঁচ করতেই থাকে। পাগল একটা। আজ রাগ উঠে গিয়েছিল ওর উপর।”
“কেন?”
“বলো না, প্রথমে মেয়েটা জোহানকে দিপার সাথে দেখে যে কান্না করলো, তারপর একদম হঠাৎ পরিবর্তন। রাগে পারলে জোহান এবং দিপাকে খুনই করে ফেলে।”
“তারপর?”
“তারপর মেয়েটা ওর মা’য়ের কথা বলল। বলল ও নাচতেও পারে। আমি তো ভেবেছি এমনিতেই বলছে। এর একটু আগেও সে আমার সাথে নাচছিলো। হায় খোদা আমার পা গেলে ফেলছে। কিন্তু পরে যখন নাচলো তখন অনেক মুগ্ধময় দেখাচ্ছিলো তাকে। কেমন মোহনীয়। বিশেষ করে ওর হাসিটা। ওর নীলাভ চোখ জোড়া। সবকিছু।”
দৃশ্যটা মনে করতেই কেমন এক ঘোর লেগে যায় সভ্যের। সে ঘোর ভাঙে ফোনের ওপাশের থেকে আসা খিলখিল হাসির শব্দে, “তাই না’কি? তো মেয়েটা ছবি দিস তো।”
“ছবি দেখে কি করবে তুমি?”
“ও’মা এতদিন ধরে আমার ছেলের মুখে যে এক মেয়ের কথা শুনে যাচ্ছি তাকে দেখার ইচ্ছা জাগবে না?”
সভ্য অবাক হয়। সে কী আসলেই এতদিন ধরে কেবল ইনারার কথা তার মা’কে বলছে? এখনো সে ইনারাকে ঘিরে রিহার্সাল রুমের এবং গাড়ির ঘটনা বলতে নিয়েছিলো। সাবধান হয়ে যায় সে। মা’কে আর ইনারার কথা বলা যাবে না। অন্যকিছু বলে কথা ঘুরাতে হবে। এখন দ্বিধায় পড়ে যায় সে। সারাদিনে তার মজার, রাগের, বিরক্তির যা হয় সবই ইনারাকে ঘিরে। সত্যিই কী সে আজকাল কেবল ইনারার কথা বলে বেড়ায়। তার মাথায় কী শুধু তার কথাই ঘুরে? না, এটা তো ভালো লক্ষ্মণ নয়।
চলবে…..