অধিকার পর্ব-২+৩

0
6163

#অধিকার
#দ্বিতীয়_প্রহর_এবং_তৃতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha #Fatha

কোনো মেয়ে হঠাৎ করে যদি একটা অচেনা ছেলের বুকে আছড়ে পরে বাচ্চাদের মত কান্না করতে থাকে,, এতে যে কোনো মানুষেরই অবাক লাগবে, আর যদি এটা নিজের সাথে ঘটে তাহলে তো আর কিছু বলারই বাকি থাকেনা,
আমি আপাতত বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছি।
এবং মেয়েটি আমাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধরে রেখেছে,, তার হাত পা কাপছে,, তাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো কিন্তু তার সুযোগ ও নেই,, কারণ কান্না করতে করতেই কিছু মুখে শব্দ করছে,, সে কি যেন বলতে চাচ্ছে,,
কিন্তু এত কান্নার মাঝে সব যেন অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। যার ফলে আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। হঠাৎ করে সে অজ্ঞান হয়ে গেলো আমার বুকে থাকা অবস্থাতেই।
আমি ভেবে পাচ্ছিনা কি করবো ২-৩ মিনিটের মাথায় কি থেকে কি ঘটে গেলো। এমতাবস্থায় আমি মেয়েটিকে ভেতরে নিয়ে এসে একটা গেস্ট রুমে শুইয়ে দিলাম। মেয়েটার চেহারা একদম গোলাপি হয়ে আছে,, তার গায়ের সমস্ত কাপড় ভেজা। মেয়েটা যে একদম ফর্সা বুঝা যাচ্ছে কিন্তু হাতে গলায় অনেক গুলো লাল দাগ কিছু কিছু দাগ একদম নীল বর্ণ ধারণ করেছে।
বুঝা যাচ্ছে কেউ তাকে অনেক বেশি পরিমাণে মেরেছে। সে যখন আমাকে ধরে রেখেছিলো তখন তার গা একদম গরম ছিলো হয়তো অনেকক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজার ফলে তার জ্বর এসেছে।

তাকে বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পেলাম না,, তার সেন্স নেই একবারেই।
এমন অবস্থায় আমি পরে গেলাম মহা মুশকিলে,,
তার জ্বর বাড়ছে ক্রমাগত,, বাইরে বৃষ্টি ও যেন থামার নাম নিচ্ছেনা, কিছুক্ষণ পড়ে মনে পড়লো পাশের বাসায় এক বয়ষ্ক দম্পতি থাকেন তারা উভয়ই ডাক্তার দাদা ভাই আব্দুল্লাহ , আর সুরাইয়া দাদু।
তারা আমাকে ছোট থেকেই অনেক ভালোবাসেন, আমার আর মাহিরার বিয়েতেও উনারা অভিভাবকের মত সব করেছিলেন,, এবং আমার এই দুর্দিনে, মাহিরা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পরে,, কেউ খোঁজ না নিলেও দাদু আর দাদা আমার খোঁজ ঠিকি রেখেছিলেন।
আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে সুরাইয়া দাদুকে ডেকে আনাই শ্রেয়।
যেই কথা সেই কাজ,
মেয়েটিকে বাসায় লক করে এই বৃষ্টির মধ্যেই আমি প্রায় দৌড়ে গেলাম দাদুর বাসায়..

দরজায় নক করতেই সুরাইয়া দাদু নিজে এসে দরজা খুললেন.. চশমা পরতে পরতে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে চিনতে পেরেই একটা হাসি দিয়ে দাদু বললেন

-আরে দাদু ভাই যে,,
সে কি? তুমি তো একদম ভিজে গিয়েছো! তাড়াতাড়ি ভেতরে আসো !
-দাদু আমার সাথে একটু বাসায় চলুন,, অনেক জরুরি দরকার,
-কেন? কি হয়েছে?
দাদুকে পুরো ঘটনা বললাম।
-দাদু আগে চলুন প্লিজ।
-দাড়াও ছাতাটা আর কিছু ঔষধ নিয়ে আসি, আর হ্যাঁ সাথে টুনিকেও (দাদুর কাজের লোক) নিয়ে যাই,
মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম।

দাদু রুমে ঢুকে মেয়েটার অবস্থা দেখে আমার দিকে একবার তাকায় আর একবার মেয়েটার দিকে।
তারপর মেয়েটার গায়ে হাত দিয়ে দেখে আমাকে বললেন
-দাদুভাই, এর অনেক জ্বর,, জামা পালটে দিতে হবে,, কোনো জামা আছে বাসায়?
– হ্যাঁ ঘরে পরার কিছু জামা আছে মাহিরার,, সে ওগুলো রেখে গিয়েছে,,
-এনে দাও আমাকে।

একটা বাসন্তি রঙের সালোয়ার-কামিজের সেট আর হেয়ার ড্রাইয়ার নিয়ে দাদুর হাতে দিয়ে আমিও রুমে
এসে চেঞ্জ করে নিলাম।

.

ইতি মধ্যে মেঘের বিরাট বর্ষন কমে গেছে, বাইরে হিমেল হাওয়া বইছে,, তবে হালকা হালকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে ,, পরিবেশে এক প্রকার শান্তি বিরাজ করছে,, মনে হচ্ছে সব ধরনের আবর্জনা স্তূপ মুছে গেছে,, সব পরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে,, সব কিছু এখন সঠিকভাবে হবে,, কি যেন আজকের আকাশ বাতাস কিছু বলতে চাইছে,,

কিছুক্ষণ পরে নিচে এসে দাদুকে দেখি মেয়েটাকে ঠিকঠাক করে দিয়েছেন, টুনি পাশে বসে মাথায় জ্লপট্টি করে দিচ্ছে।

-ইরাদ, ওর অনেক জ্বর দাদুভাই, জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত জলপট্টি করা লাগবে।
আর মেয়েটাকে দেখে যা বুঝলাম মনে হচ্ছে সে ভালো ঘরের,, চেহারাটাও কত নিষ্পাপ।

ইরাদ শুধু মনোযোগ দিয়ে দাদুর কথা গুলো শুনে ভেদটা বুঝতে চেষ্টা করছে। সে তো মেয়েটার দিকে দরকারের খাতিরে শুধু তাকিয়ে দেখেছিলো একবার,,
আসলে তার দেখার কোনো ইচ্ছেও নেই, মাহিরা ছাড়া যে ইরাদের মনে কোনো চেহারা কখনো ধরেনি। আর সে নিজে থেকে কাউকে দেখতেও চায় নি, এমনকি আজও চায় না।

-খেয়াল করেছো দাদুভাই ওর কানে গলায় খুব মার্জিত আর রুচিসম্মত গহনা। গলায় একটা চেইন, কানে টোপের মত এর ছোট ঝুমকা করে ২ জোড়া দুল, ২ হাতে ৩টা করে একদম পাতলা স্বর্ণের আংটি
গহনা গুলো পুরোনো দিনের… খাটি স্বর্ণের এই ডিজাইন গুলো। এবং পায়ের নূপুর গুলো দেখো এই ডিজাইন আমাদেরও আগের সময়ের।

ইরাদ দাদুর সাথে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি দিলো,,
এর কিছুক্ষন পর মনে হলো দাদুকে অনেক ক্ষন ধরে রেখে দিয়েছে, উনার তো বাসায় যাওয়া উচিত বয়ষ্ক মানুষ, দেরী হয়ে যাচ্ছে,,

– আচ্ছা দাদু আমি আছি,, চলুন আপনাকে আমি দিয়ে আসি বাসায় এরপর আছি এখানেই চিন্তা করবেন না।
-ঠিক আছে। কিছু দরকার পরলে আমাকে কল দিও, বোকার মতন কষ্ট করে আসতে হবেনা।
-জ্বি অবশ্যই দাদু।

রাত প্রায় ১১টা বেজে গেছে আমি মেয়েটার রুমেই খাটের পাশে ইজি চেয়ারে বসে আছি,, এতক্ষণ জ্বলপট্টি করছিলাম। মনের যন্ত্রণা অনেক বড় যন্ত্রণা
মনে পরে গেলো মাহিরার যখন শরীর একটু খারাপ হতো আমি সারা সারা রাত জেগে থাকতাম। ওকে কত যত্ন করতাম। কত ভালোবেসে আগলে রেখেছিলাম। আমার বাচার অবলম্বন ছিলো আমার বউটা।
.
মেয়েটা একটু নড়েচড়ে উঠলো, তার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম,, এখন জ্বর কমে গেছে , দাদু বোধহয় তাকে ইঞ্জেকশন দিয়েছে এইজন্যই কমে গেছে,, কিন্তু আমার মাথাটা খুব ব্যাথা করছে, হঠাৎ মনে পড়লো আমি কালরাত থেকে আজ সারাদিন না খাওয়া হয়তোবা এইজন্যই এমন লাগছে। আর এমনিতেই আমার মাইগ্রেন এর ব্যাথা আছে। সব মিলিয়ে খুব অসহ্য লাগছে। মাসের বাজার কেয়ার টেকার ছেলেটা এসে করে দিয়ে যাচ্ছে প্রতিমাসেই কিন্তু কিছু করে খাওয়ার মত এনার্জি পাচ্ছিনা তাই উঠে ফ্রিজ থেকে ব্রেড নিয়ে বাটার দিয়ে খেয়ে ঔষধ খেয়ে নিলাম।
মেয়েটিকে এসে আরো ২বার ডাক দিলাম কিছু খাওয়ার জন্য কিন্তু এতক্ষণে মনে হচ্ছে সে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডাক দিলাম না।
টেবিলে ব্রেড, বাটার আর জ্যাম রেখে দিলাম।
আর পাশে ইজি চেয়ারটায় বসে পরলাম কখন যে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম নিজেও বলতে পারিনি।

ঘুম ভাংলো সকাল ৮টায়, ঝলমলে আকাশ, সোনালী রোদ যেন ঝিকঝিক করছে, আলাদা একটা সৌন্দর্য্য আজকের দিনে মিশে আছে।
মাথাটা বেশ হালকা লাগছে,, তবে শরীরটা ব্যাথা ব্যাথা করছে,, হঠাৎ নিজেকে চেয়ারে আবিষ্কার করে একটু হকচকিয়ে যাই, পরক্ষণেই মনে পড়ে রাতের কথা।
তখনই বিছানায় তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই, খাবারের জায়গায় খাবার রাখা। জ্বলপট্টিটা আমার মাথায় দেওয়া। তারপর মনে হলো স্বপ্ন দেখেছিলাম কি না?

কিন্তু সব জিনিস পত্র দেখে মনে তো হচ্ছেনা আমি স্বপ্ন দেখছিলাম তাহলে মেয়েটি কোথায় গেলো?
ওয়াশরুমে ঢুকে দেখলাম নেই এখানেও তারপরে ফ্রেশ হয়ে বেড় হলাম।
তারপর ঘরের সাথের ব্যালকনিটায় গেলাম তোয়ালেটা নেড়ে দেওয়ার জন্য,,
পেছন থেকে ঝুনঝুন শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে ইশারা দিয়ে ডাক দিচ্ছে তার সামনে আসার জন্য।

এই ঘরটার দরজার উল্টো দিকে বড় গ্লাস দেওয়া ব্যালকনি আমি সেখানেই দাঁড়িয়ে,, আজকের বাইরে ঝলমলে রোদটা সম্পুর্ণ দরজার দিকে পরছে আর মনে হচ্ছে ঘুমো ঘুমো চোখে একটা হলদে পরি দাড়িয়ে আছে। মেয়েটা অসম্ভব পরিমাণে সুন্দর। যাকে একবার দেখলে পরের বার মানুষ ফিরে তাকিয়ে দেখবে,, লম্বা লম্বা চুল, দৈর্ঘ্য আঁখি পল্লব, বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট চেহারা, দুধে আলতা গায়ের রঙ। যে কোনো পুরুষ মানুষের মনে তোলপাড় তৈরি করার জন্য এই মেয়ের চোখের চাহনি যথেষ্ট। তবে ইরাদের মনে এরকম কিছু হচ্ছেনা। কারণ সে তো মন ভাংগা একজন মানুষ। যে এখন অনুভূতি শুন্য।

.

আমি কিছু না বলে তার সামনে যেতেই,, সে হেটে হেটে ডাইনিং এ চলে এসেছে, চেয়ার টেনে আমাকে বসতে বলে নিজেও অন্য একটা চেয়ারে বসলো। টেবিলে তাকিয়ে দেখি হরেক রকমের নাস্তার আয়োজন করে রেখেছে মেয়েটা। পরোটা, ভাজি, অমলেট, চা এগুলো দেখে আমি আবারও অবাক।
সে কখন ঘুম থেকে উঠলো আর এগুলো করলো?
আমিতো কিছুই জানিনা, যদিও আমার ঘুম অনেক পাতলা কিন্তু অনেক দিন পরে কাল ঔষধ খেয়ে ঘুমানোর কারণে মনে হয়ে জাগনা পাইনি। আমি এসব ভাবছিলাম তখন,,
সে আমাকে ইশারা দিয়ে খেতে বলছে।
এতক্ষণে আমি বুঝতে পারলাম এই মেয়েটা হয়তো কথা বলতে পারেনা। মনে মনে খুব খারাপ লাগছে একটা মানুষ কথা বলতে পারে না, না জানি কত কষ্ট হয়। যাক এসব ভেবে কাজ নেই তাকেও আমি খেতে বললাম। দেখি সে খাবার নিচ্ছেনা। চোখ দুটো ছলছল করছে,, আমি তার প্লেটে খাবার দিলাম।
-আপনার এখন খেতে হবে,, নাহয় কালকের মত জ্বর হবে।
মেয়েটি কিছু বলছেনা।
আমার খাওয়ার ইচ্ছে নেই একদমই তবে এখন না খেলে আবার মাথাটা ধরে বসবে, অফিসে যাওয়াটা মিস হয়ে যাবে তাহলে। এটা আমি কোনো ভাবেই করতে পারিনা,,
খাবার খুবই সুস্বাদু হয়েছে, সে খাচ্ছিলো না তারপরেও বার বার বলে খাওয়ালাম।
আমরা উভয়ই খাওয়া শেষ করলাম।

এরপর মেয়েটা উঠে যাচ্ছিলো কিচেনের দিকে আমি অবাক হচ্ছি তার কর্মকাণ্ড দেখে তার ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছে এই বাড়ি, এই পরিবেশ, আমি সবই তার চিরচেনা,, তাকে আমি বাধা দিলাম।
বসতে বললাম এবং তার ঔষধ এনে দিলাম খেতে।
সে খেয়ে নিলো,,

-আমি একটা কাগজ আর কলম নিয়ে তার সামনে দিয়ে বললাম আপনি কে? কোথা থেকে এসেছেন পরিবারের কারো ফোন নাম্বার থাকলে এখানে লিখুন। আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যাবস্থা করছি।
কিছুক্ষন মেয়েটা নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো,, বুঝলাম সে কান্না করছে, তার নাক গাল একদম লাল হয়ে গেলো।

মেয়েটা এবার আমাকে আরো অবাক করে কিছুক্ষন পরে বলে উঠলো
-আমি কি কিছু দিন আপনার বাসায় থাকতে পারি?
সব কাজ করে দিবো বিনিময়ে।

এবার আমি শক খেলাম একটা বড় ধরনের।

(চলবে, নেক্সট না লিখে কেমন হয়েছে সেটা জানাবেন প্লিজ)

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ কপি করবেন না কেউ, এবং কপি পোস্ট দেখলে আমাকে জানাবেন প্লিজ

#অধিকার #তৃতীয়_প্রহর
#Yasira_Abisha #Fatha

-আমি কি কিছু দিন আপনার বাড়িতে থাকতে পারি? বিনিময় সব কাজ করে দিব।
.
একরাতের পরিচয় যদি হঠাৎ করে কোন রূপবতী মেয়ে এমন প্রস্তাব দিয়ে বসে একটা যুবককে এতে যে কেউ তখন অপ্রস্তুত হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা যেই মেয়েকে এতক্ষণ ধরে বাকপ্রতিবন্ধী ভাবছিলাম আমি সেই মেয়ের মুখেই এমন একটা কথা শুনে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম।
সে মুখ ফুটে আমাকে এমন কিছু বলবে আমি একদমই আশা করিনি।
রাত থেকে মেয়েটা আমাকে একটার পর একটা শক দিয়ে চলছে,, আর এখন আমি প্রতিত্তোরে কি বলবো তাই বুঝে পাচ্ছিনা।

আমার মনে অনেক গুলো কথা ঘুরপাক খাচ্ছে,,
প্রথমত, একজন অপরিচিত মানুষকে কোনো মতেই বাড়িতে থাকতে দেওয়ার মত বিশ্বাস করা যায় না, তার ওপরে একে দেখে কোনো রকমেই কাজের মেয়ে বা নিম্নবিত্ত পরিবারের মনে হচ্ছেনা।
আর এসব ভাবতে ভাবতেই আমি পরে গেলাম মহা বিপাকে।
এদিকে মেয়েটি নিঃশব্দে কাঁদছে।
হতেও পারে সে আসলেই বিপদে, কিন্তু যদি এমন কিছু না হয়, যদি তার মতলব ভিন্ন থাকে?
শহরে এখন ভিন্ন ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে চোরের, ডাকাতেরা তাদের মতলব সিদ্ধ করে থাকে।
.
আপাতত ডাইনিং স্পেসের পরিবেশটা বেশ থমথমে হয়ে আছে। একদম পেনড্রপ সাইলেন্ট হয়ে আছে সব। মেয়েটি একবার ও চোখ তুলে তাকাচ্ছেনা।
কিছুক্ষণ পরে সে বলে উঠে
-দেখুন, আমি চোর বা ডাকাত নয়, আমি সত্যিই কাজ করবো সব আপনার বাসার এর বিনিময়ে শুধু আমাকে থাকতে দিবেন। টাকা পয়সা লাগবেনা। আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ও নেই। আমার বাইরে বেড় হওয়ার ও কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি যখন বেড় হবেন তখন আমাকে তালাবদ্ধ করে রেখে গেলেই হবে।

এক নিঃশ্বাসে সব গুলো কথা সে বলে শেষ করলো।
এবার আমার জবাবের অপেক্ষায় সে অসহায় দৃষ্টিতে বাচ্চাদের মত তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
তাকে একদম একটা ছোট্ট বাচ্চা মনে হচ্ছে।
একটু আগেও তার ঘুমের রেশ কাটে নি। কিন্তু এখন দেখে মনে হচ্ছে তার চোখে কোনো ঘুম নেই,, একটা জবাবের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে।

মাথায় অনেক কিছুই ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, যদি সে আসলেই বিপদে পড়ে থাকে আর আমি এই মুহূর্তে তাকে বেড় করে দেই, তাহলে তার অনেক বড় ধরনের বিপদের সম্মুখীন ও হতে পারে,, আর আমার আগে পিছে তো কেউই নেই,, আমাকে কি করেই বা ক্ষতিগ্রস্ত করবে??
আগে মাহিরা ছিলো মনের মধ্যে একটা ভীতি ছিলো, তাকে আগলে রাখতে হবে, তার জন্যে হলেও আমার বাচতে হবে। কিন্তু এখন এমন আর কিছুই নেই। আর বেশি থেকে বেশি কি হবে? ডাকাতি, আমাকে মেরে ফেলা? আসল কথা হচ্ছে
যদি আমি মারাও যাই কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে তাতেও দুঃখ থাকবেনা। তার একমাত্র কারণ হলো আমার মনটা আরো ৩ মাস আগেই মরে গেছে।
এখন একটা জীবন্ত লাশ হয়ে বেচে আছি।
এই দেহের মৃত্যু হয়ে গেলেও ভালো।

– আপনি থাকতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই,,
কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো। এবং সে চেয়ার থেকে উঠে কিছু না বলে প্লেট গুলো নিয়ে সোজা রান্না ঘরে চলে গেলো,, আমি থম ধরে টেবিলেই বসে আছি,, এর মাঝে এসে সে সুন্দর করে টেবিল গোছালো, আমি তাকে দেখে একটু অবাক হই।
কেমন যেন এক ভিন্ন প্রজাতির মানুষ মেয়েটি।
হঠাৎ ঘড়িতে টিংটং আওয়াজ হচ্ছে তাকিয়ে দেখি ১০টা বেজে গেছে। আমার মিটিং আছে একটা ১০ঃ৩০ টা বাজে।
তাড়াতাড়ি করে উঠে চলে গেলাম উপরে,, আমার ঘরে,, মেয়েটি রান্না ঘরে ছিলো আমি তাকে নিচে রেখেই এসেছি।
তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে তোয়ালে আনতে ভুলে গেছি। আমার এই বদঅভ্যাস আর ভালো হলো না,, প্রায় প্রতিদিনই এমন হয়।
আলরেডি আমি শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে আছি এখন কি আর করার?
একবারে গোসল শেষ করেই বাথরুম থেকে বেড় হতে হবে।
শাওয়ার শেষ হওয়ার পরে
বাথরুমের দরজা খোলার সময় দেখি হ্যান্ডেলের মধ্যে তোয়ালেটা ঝুলিয়ে রাখা।
বুঝতে পারলাম মেয়েটি রেখে গেছে হয়তো।
কারণ ছুটা বুয়া তো ৩দিনের ছুটিতে গেছে।

শরীর মুছে তোয়ালে পরে ঘরে আসলাম দেখি খাটের ওপরে আমার নেভি ব্লু কালারের একটা শার্ট, ব্লাক ফর্মাল প্যান্ট আর ব্ল্যাক একটা টাই রাখা।
অনেক গুলো কাপড় আয়রণ করিয়ে আনানোর পরে নিচেই রয়ে গিয়েছিল ওখান থেকেই, বেছে এই কাপড় গুলো এনে দিয়েছে সে।
এবার আর অবাক হলাম না।
তার কারণ হলো সে আমাকে অবাক করার কর্মকাণ্ড করছে প্রায় ১৮-২০ ঘন্টা ধরেই।
রেডি হয়ে নিচে নেমে এলাম। মেয়েটিকে আশেপাশে কোথাও দেখছি না, হয়তোবা রেস্ট করছে।
এমনিতেই তার শরীর বেশ খারাপ ছিলো।
মেইন গেট দিয়ে বের হবো ঠিক তখনই পেছন থেকে চামচ জাতীয় কিছু পরার শব্দ হলো।
তাকিয়ে দেখি হলদে পরী হাতে একটা টিফিন বক্স নিয়ে দাড়িয়ে আছে তার হাত থেকেই চামচটা পরেছে।
মুখে একটা প্রশস্ত হাসি ফুটিয়ে সে আমার দিকে এগিয়ে এসে টিফিন বক্সটা আমার হাতের সামনে ধরে বললো
-বাইরে যাওয়ার সময় ডাক দিতে হয়না, তাই অভিনব একটা পদ্ধতি দিয়ে ডাক দিলাম। আই হোপ আপনি মাইন্ড করেন নি।
-না,ঠিক আছে।
-অফিসে যাচ্ছেন?
-হুম
-এটা নিয়ে যান
-কিন্তু এটা?
-দুপুরের জন্য খাবার।
-দরকার ছিলো না।
-নিন, ধরুন। বেশি কিছুই করিনি। কাল থেকে আর এমন হবেনা।
-আমি বাইরেই খাই ক্ষুধা পেলে, আর কখনোই লাঞ্জ বাসা থেকে নিয়ে যাইনা।
মনে মনে বললাম মাহিরা থাকতে দুপুরে লাঞ্চ কখনো বাসা থেকে নেওয়া হতো না, অভ্যাস আছে আমার।
-এখন থেকে নিবেন।
আমি আর কথা বাড়ালাম না।

আর শুনুন, গেইটটা তালাবদ্ধ করে যান। আমি তার দিকে একবার তাকালাম তারপর গেইট লক করে বেড় হয়ে গেলাম।

.

মিটিং আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো হয়েছে, দুপুর ১টার মত বাজে সবাই লাঞ্চ ব্রেকে গেছে,,
আমি আমার কেবিনে বসে কাজ করছিলাম এরই মধ্যে লাঞ্চ বক্সটির দিকে নজর পরলো,,
খুলে দেখি বক্সের মধ্যে এগ স্যান্ডউইচ আর ২পিস চিকেন ফ্রাই সাথে একটা চিঠি।
সেই কাগজের মধ্যে লিখা, যেটা আমি সকালে মেয়েটির সামনে রেখেছিলাম।

“অনেক অনেক ধন্যবাদ মিস্টার …… আমাকে আপনার বাসায় আশ্রয় দেবার জন্য। আর সরি আজকে এরকম লাঞ্চ দেওয়ার জন্য। আসলে অল্প সময়ের মধ্যে করেছি তো, কাল থেকে ইনশাআল্লাহ সব ঠিকঠাক হবে।”

চিঠি দেখে মনে পরলো তার নামই তো জানা হলো না এখনো। আর মিস্টার লিখার পর এতগুলো ডট ডট দেখে মনের অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো আমার মুখে।
অনেক দিন পরে দুপুরে খাবার খেলাম, আর মেয়েটার হাতের রান্না এক কথায় প্রশংসনীয়

২ঃ৩০ মিনিটের দিকে সুরাইয়া দাদুর কল আসলো।
– আসসালামু আলাইকুম দাদু
-ওয়ালাইকুম আসসালাম ইরাদ, ভালো আছো দাদুভাই?
-জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ দাদু। আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ ভালো
-দাদুভাই শুনো, মেয়েটির জ্ঞান ফিরেছে? তাকে একটা ইঞ্জেকশন দিতে হবে নাহয় আবার জ্বর বাড়তে পারে রাতে। সে তোমার এখানে আছে এখনো?
-জ্বি, দাদু।
এরপর দাদুকে সব কথা বললাম।
-দেখো দাদুভাই এভাবে সবাইকে বিশ্বাস করা ঠিক না, তবে আমি তো আর এভাবেই বুড়ি হয়ে যাইনি। ডাক্তারি করে জীবনে বহু মেয়ে ছেলে দেখেছি এখন কথা বললেই কিছুটা আচ করতে পারি কে ভালো? আর কে মন্দ?
তাই তুমি চিন্তা করো না একটু পরে তোমার বাসায় যাচ্ছি তখন বুঝা যাবে মেয়েটি কি রকম?
আমারও জরুরি কাজ শেষ করে বাকি গুলো পি.এ. বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
আমি আসতে আসতেই দেখি দাদুও এসে হাজির।

বাড়ি ঢুকে দেখি কি সুন্দর তকতকে ঝকঝকে করে সুন্দর ভাবে বাড়ি গুছিয়ে রেখেছে মেয়েটা। যেন পরী এসেও এতটা পরিষ্কার আর গোছানো দেখে মনের খুশিতে নেচে উঠবে।
দাদু মিটিমিটি হাসছে হয়তো তার কাছে ভালো লাগছে এরকম দেখে।
-আমি ফ্রেশ হয়ে আসি দাদু।
-আচ্ছা, আমি মেয়েটার সাথে কথা বলি।

আমি ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ উপরেই ছিলাম, প্রায় আধা ঘণ্টা পরে নিচে এসে দেখি গেস্ট রুম থেকে হাসির শব্দ আসছে,
দরজার কাছে গিয়ে আমি স্তব্ধ হয়ে যাই,,
কারণ দাদুকে দেখলাম সে বিছানায় বসা এবং মেয়েটা তার পায়ে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে হাসছে,, খিলখিল করে। আমি যে কতক্ষণ ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি এটা না দাদু, না মেয়েটির চোখে পড়লো। কারণ তারা একে অপরের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। যদিও দাদুই বেশি বলছে আর মেয়েটা বাচ্চাদের মত ইনোসেন্ট লুক দিয়ে হাসছে আর কথা গুলো শুনছে।
আর দাদু তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সে শুধু ঘরের কাজেই পরিষ্কার নয়, বরং নিজেও যথেষ্ট পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে তাকে দেখে আচ করত
এ পারলাম,, কেননা সে হলদে পরী থেকে এখন আবার বেগুনী পরী হয়ে গেছে। অর্থাৎ তার কালকে পরে আসা জামাটা, চেঞ্জ করে আবার পরে নিয়েছে,, হয়তো কাজ শেষ করে গোসল সেড়ে ফেলেছে।

আমাকে দেখে দাদু বলে
– ইরাদ, দাদুভাই আমি চলে যাই তাহলে এখন,, তুমি আমাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দাও।
আর মাঝেই আমাকে দেখে মেয়েটা উঠে বসে পরে।
-জ্বি দাদু।
আমি বুঝেছি দাদু কেন আমাকে ডাক দিলো গেইট পর্যন্ত।

গেইটের কাছে এসে দাদু আমাকে বললো,
– মেয়েটা আসলে দেখতে যেমন মন থেকে তেমন না।
বরং এর থেকেও বেশি ভালো।
তাকে নিঃসন্দেহে আমার মনে হয় বাড়িতে জায়গা দেওয়া যায় দাদুভাই। তুমি তাকে রেখে ভালো করেছো।
তবে ও এখনো অনেক বেশি দুর্বল। আমি ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি।
দাদুকে বিদায় দিয়ে তার ঘরে আসলাম,,

বাইরে আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমেছে,, পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে আছে,, ব্যালকনির দরজাটা খোলা,, হিমেল হাওয়া এসছে,, সব কিছুতে এক অদ্ভুত ভালোলাগা আর স্বস্তি নিয়ে এসেছে।
ব্ল্যাংকেট গায়ে পেচিয়ে দেখি সে ঘুমিয়ে আছে।
সিল্কি চুলগুলো কিছু কিছু চোখে মুখে পরে আছে,, মেয়েটাকে অপরূপ দেখাচ্ছে, এমন ইনোসেন্ট লাগছে কারোই তাকে ঘুম থেকে জাগাতে ইচ্ছে করবে না কিন্তু
সে খেয়েছে কি না তা তো জানাও হলো না,,
এই জন্য আস্তে আস্তে ডাক দিলাম,,

-এইযে শুনছেন?
আপনি খেয়েছেন?
-……….
কোনো সাড়া শব্দ নেই…
-এইজে??
-রুহি,
আমার নাম রুহি।
এইজে বলে ডাকবেন না। নাম ধরে ডাক দিবেন কেমন?
এই বলেই একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে সে উঠে বসলো

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে