#অধিকার
#পঞ্চদশ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)
ভোর ৫ঃ০৩ আরিশা , সুরাইয়া বা আব্দুল্লাহ কারো চোখেই ঘুম নেই,, ওরা সবাই ইরাদের বাসায় আছে,, দুঃসময়ের বন্ধু বলতে এই মানুষ গুলো বরাবরই ইরাদকে সহযোগিতা করেছে,, তাই আজকেও ওরাই পাশে আছে,, সুরাইয়া আর আরিশা ভাবছে রুহি কোথায় যেতে পারে,,
-দাদু আমার মনে হচ্ছে রুহি আশেপাশে কোথাও আসে, কারণ বাসস্টপ বা ট্রেনে কোথাও গেলে আদনান ভাই খবর জানতো,,
– হ্যাঁ আমার ও তাই মনে হচ্ছে,, কিন্তু ইরাদ পিয়াল ওরা তো ওকে পাচ্ছেনা।
-সুরাইয়া আজকে তুমি বলছিলে না রুহি কে নিয়ে ইরাদের করা আশ্রমটা দেখাবে,, ওকে আস্তে আস্তে ইরাদের ভালো মানুষী সম্পর্কে অবগত করে একটা সময় ওদের বিয়ের কথা তুলবে?
আব্দুল্লাহ কথা গুলো বলে উঠলেন পাশের সোফা থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে।
– হ্যাঁ বলেছিলাম কিন্তু ওটা ইরাদের এখনো জানাইনি।
– রুহি ওখানেই গেছে সুরাইয়া
– দাদু আপনি সিউর কিভাবে?
– বুড়ো তো এভাবে হইনি দাদুভাই,, আর তা ছাড়া সাইক্রাইটিস্টরা একটু আচ তো করতেই পারবে তার পরিচিত মানুষদের নিয়ে,,
কারণ রুহি যেরকম সেন্সেটিভ আর বাহারি দুনিয়া কম বুঝে ওর মত একটা মেয়ে বেশি দূর পর্যন্ত এত রাতে যেতে পারবে না,,
সুরাইয়া মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন,, কারণ তার স্বামী কে সে ভালোভাবেই চিনেন,,
কোনো ব্যাপারে খুব বেশি একটা ধারণা বা আগে থেকে কথা আব্দুল্লাহ বলেন না,, অনেক ভেবে আর বুঝে সব সময় কথা বলে,, তাই সাথে সাথে সুরাইয়া আশ্রমে ফোন করলো,, ৪বার রিং হওয়ার পরে রহিমা ফোন ধরলো,
– আসসালামু আলাইকুম খালাম্মা
– ওয়ালাইকুম আসসালাম রহিমা কেমন আছো?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো,, আপনি?
– আমিও আলহামদুলিল্লাহ,, শোন এই সময় ফোন করলাম একটা দরকারে।
– বলেন খালাম্মা।
– তোমাদের ওখানে কি কোনো মেয়ে আসছে আজকে রাতে??
– হ্যাঁ আসছে সুন্দর মতন একটা মেয়ে বয়স ২৩-২৪ হতে পারে। নাম বললো রুহি,,
কথাটা শুনে সুরাইয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে একটা হাসি দিয়ে আরিশা আর আব্দুল্লার দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো পেয়েছে।
– ওকে যেতে দিও না কোনো ভাবেই।
– কেন খালাম্মা মেয়েটা কোনো খারাপ কাজ করছে?
– আরে না ও তোমাদের ইরাদ স্যারের ওয়াইফ।
– স্যারের বউ?
– হুম,, ওদের একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে ওকে বলো না কিছুই এখন। আমরা আসতেসি একটু পর। ম্যাডামকে যেতে দিও না কোনো মতেই।
– আচ্ছা খালাম্মা।
সুরাইয়া ফোনটা রাখলো,,আব্দুল্লাহ একটা গর্বিত হাসি দিলো,,
সাথে সাথেই আরিশা খুশিতে “- ইয়েস,, দাদাভাই ইউ আর গ্রেট ” বলেই পিয়াল কে কল করলো,,
এবং বললো রুহির খোঁজ পাওয়া গেছে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে।
ইরাদ সোজা রুহিকে আনতে যেতে চাচ্ছিলো কিন্তু আরিশা মানা করলো,,
একটা প্ল্যান বানালো আরিশা, রুহি যেহেতু সুন্দর করে চাইছিলো ইরাদকে প্রপোজ করবে তাহলে সুন্দর ভাবেই করা হোক,,
-দাদু ইরাদ একটা গাধা,,
সুরাইয়া হেসেদিলো
– কেন?
– যেই শাড়ি এনেছিলো রুহির জন্য সেখানে ওর নামটা লিখলেই পারতো,, আরে তুই যখন প্রপোজ করবি প্রিপারেশন তো ভালোমতো নিবি। গাধা একটা,,
-দোষ ওর না,, মাহিরাই এমন সময় আসছে,,
– হ্যাঁ ও আবার কেন আসছিলো কে জানে? ভালো হয়েছে দাদু এখন চলে গেছে
– যায় নি।
– কি বলেন দাদু?
– হুম আমাদের বাসায় ও।
– ওর লজ্জা হবেনা? এতকিছু করার পর আবার চলে আসছে ওদের জীবনে অশান্তি করতে।
“তোমরা যাই করো আজকে ইরাদকে এগুলো বইলো না,,” কথাটা আব্দুল্লাহ বললো
সুরাইয়া আর আরিশা সম্মতি দিলো,,
ইতিমধ্যে ইরাদ ও চলে এসেছে,,
কেমন বিদ্ধস্ত দেখাচ্ছে ইরাদকে এক রাতেই চোয়াল ভেংগে গেছে,, চোখ মুখ কালো দেখাচ্ছে। চুল উশকো খুশকো হয়ে আছে,
-পুরো দেবদাস দেখাচ্ছে,,
-আরিশা দেখ সবসময় মজা ভালো লাগেনা, রুহি কোথায় বল? ওকে নিতে যাবো।
-এখন বলবো না,, এমন শুকনো মুখে নিতে যাবি?
যত গুলো দুঃখ দিয়েছিস ওত গুলো খুশি দিয়ে আনতে যাবি। আজকে মেয়েটা এমনিতেই কত নার্ভাস ছিলো,,
-নার্ভাস কেন?
– ও আজকে তোকে প্রপোজ করতে চাচ্ছিলো কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো,,
– প্রপোজ?
– হ্যাঁ তোকে রুহি ভালোবাসে। আজকে সকালেই এই নিয়ে আমাদের কথা হয়েছিলো, সন্ধ্যা বেলায় ও তোকে বলতো মনের কথা।
কিন্তু ওই সুযোগটাই পেলো না।
– ড্যাম ইট
বলেই ইরাদ একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো,
-আরিশা বল কিভাবে কি করতে পারি? আমি ওকে কিছু স্মরনীয় মুহুর্ত উপহার করতে চাই।
– এই না আসলি ট্রাকে,, এখন আমার কথা সবাই শুনেন,,
আশেপাশে ভালো কোনো রেস্টুরেন্টে একটা পাশ রিজার্ভ করতে হবে,, কোথায় করা যায়?
– শাফিন ভাই,, আমার পরিচিত উনি কাছেই উনার রেস্টুরেন্ট সেখানেই বুকিং দিয়ে দেই।
সুরাইয়া – না এমন কিছু করো না,, রুহি যদি বুঝতে পারে ও হয়তো চলে যাবে,, তাই আমাদের এমনভাবে সব করতে হবে যাতে ও সারপ্রাইজ পায়।
আরিশা- তাহলে দাদু?? কিভাবে কি করা যায়?
সুরাইয়া -আমি ওদের কে কল দিয়ে বলি আজকে তাদের যে কারো একজনের জন্মদিন,, এইজন্য ছাদে একটা ছোট অনুষ্ঠান করে সবাই কেক কাটবে ওখানে।
পিয়াল- হ্যাঁ আর আমরা এদিকে থেকে লোক পাঠাতে পারবো যাতে সুন্দর করে ছাদটা ওরা ডেকোরেশন করে দেয়।
আরিশা- হ্যাঁ আর রুহিকেও ড্রেস পাঠিয়ে দিবো যেটা পরে ও ছাদে আসবে।
পিয়াল -তারপর ইরাদ ভাবীকে প্রপোজ করবি।
ইরাদ – ঠিক আছে। অনিককে ফোন করে বলছি তাই করতে,, কিন্তু রুহি কোথায় আমাকে কেউ তো বলবেন?
আব্দুল্লাহ- তোমার আশ্রমে,,
ইরাদ সাথে সাথে দাড়োয়ানকে ফোন করে বললো কাউকে যেন আজ আশ্রম থেকে বেড় হতে না দেয়। আর ডেকোরেশন এর জন্য লোকজন পাঠিয়ে দিলো
আর সুরাইয়া ফোন করে রহিমা কে শিখিয়ে দিলো সব কিছু,,
ইরাদ- আরিশা পিয়াল একটা হেল্প কর
পিয়াল – বল
ইরাদ – রুহির জন্য একটা শাড়ি আর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে ওকে দিয়ে আসবি? আমি গেলে আসলে দেখা না করে থাকতে পারবো না এখন
আরিশা- ঠিক আছে,,
ইরাদ – এই নে ক্রেডিট কার্ড,,
আরিশা- নিবো না তোদের বিয়ের কোনো গিফট ও দেইনি এখনো,,
ইরাদ- আজকে না ,, আমি চাই আমার বউ আজকে আমার তরফ থেকে দেওয়া কোনো কিছু পরুক।
আরিশা- ঠিক আছে তাহলে,,
বেলা ১০টা বেজে গেলো সব প্ল্যানিং করতে করতে,,
নাস্তাও বানিয়ে ফেলেছে কাজের মহিলাটা সবাই নাস্তা করে নিলো,, ইরাদের গলা দিয়েই শুধু খাওয়া যাচ্ছে না,, সবাই এটা খেয়াল করলো কিন্তু কিছুই বললো না,, কারণ কারো কথাই ইরাদকে শান্তি দিতে পারবেনা,, তবুও ইরাদের জোরাজোরিতে সবাই নাস্তা করে নিলো এবং আরিশা পিয়াল বেড় হয়ে গেলো ওরা ঠিক করেছে শপিং করে সোজা রুহিকে জিনিস গুলো আশ্রমের রহিমার হাতে দেওয়াবে এরপর বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একবারে বিকেলে চলে যাবে ইরাদের সাথে রুহিকে আনতে।
সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ও সারারাত ঘুমায় নি তাদের ও রেস্ট দরকার। তারাও বাসায় যাবে এখন বিকেলে ইরাদের সাথেই রুহিকে আনতে যাবে,, কারণ রুহিকে তারাও খুব আদর করেন৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাহিরা,, এই মেয়েটাকে আগে সুরাইয়া আদর করতো খুব,, তার আচরণ গুলো সর্বদাই স্বার্থপর ছিলো তারপরেও, ইরাদের মত একটা স্বামী থাকার পরেও পরকিয়ার মত একটা জঘন্য কাজ করার কারণে আব্দুল্লাহ আর সুরাইয়া দুজনের মন থেকে উঠে গেছে মেয়েটা,, এখন মাহিরা ওদের জীবন থেকে দূরে থাকলেই সবাই শান্তি অনুভব করে।
ইরাদ- দাদা দাদু আপনারা ও বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রাম করে নেন,, অনেক বেলা হয়ে গেছে।
সুরাইয়া- হ্যাঁ দাদুভাই
আব্দুল্লাহ – তুমি একটু ঘুমিয়ে নাও দাদা ভাই।
– জ্বি আচ্ছা। আপনাদের অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেললাম আমি।
– এমন কিছুই না,, পাগল ছেলে। আমরা আছি সবসময় তোমার জন্য।
গেইট থেকে বেড় হতে হতে সুরাইয়া বললো,,
-মাহিরাকে বলা যাবেনা রুহির কথা।
-নাহ,, বলবো এখনো খোঁজ হয়নি।
-নাহলে আশান্তি সৃষ্টি করবে।
এদিকে মাহিরার মন অনেক খুশি সকাল থেকেই,, রাতে যদিও ঠিক মত ঘুম হয়নি,, তাতে কি? মাহিরা বুঝতে পারছে রুহি নামক বাধাটা বোধহয় আর নেই ইরাদের জীবনে,, ওকে পাওয়া গেলে তো দাদা দাদি সকালেই ফিরে আসতো,, নিশ্চয়ই ওকে আর পাওয়া যায়নি,,
(চলবে)