#অধিকার #চতুর্দশ_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)
ইরাদের মাথায় একটাই চিন্তা ঘুরছে এখন রুহি কোথায় গেলো এই সময়? রাতের বেলায় তো একা একটা মেয়ের জন্য রাস্তাঘাট নিরাপদ ও না। এর ওপরে মাহিরার আজেবাজে কথা ইরাদের ভয় লাগছে,, ইরাদ সাথে সাথেই আরিশাকে ফোন করলো,,
-রুহি তোদের বাসায়?
-এত রাতে আমার বাসায় কেন আসবে?
-ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেসে
-কি? কেন?
ইরাদ ওদের সবটা বলল,, কথা গুলো বলতে বলতে ইরাদের গলা ধরে আসছিলো।
ওর অতীত আজকে ওর বর্তমান নষ্ট করে দিলো না তো এই একটা ভয় কাজ করছে, আর রুহি ঠিক আছে কি না এই চিন্তায় ও শেষ,,
সুরাইয়া দাদু কেও ইরাদ আজকের ঘটনা জানালো ফোন করে,, কিন্তু ইরাদ জানেনা মাহিরা ওর বাসায় না গিয়ে এখন সুরাইয়ার বাসায় বসে আছে,,মাহিরা খুব জেদি ধরনের,, ওর যেটা চাই সেটা চাই,,
এই স্বভাবটা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা ওর ধারণাতে নেই,, ওকে সুরাইয়া অনেক বুঝালো যেন নিজের বাসায় চলে যায়,,
তবে মাহিরা যে উনার কথক শুনবে না তা আব্দুল্লাহ ভালোই বুঝতে পেরেছেন তাই সুরাইয়া কে বললেন
“ও থাকুক আসো আমরা একটু গিয়ে আসি”
তারাও কিছুক্ষনের ভিতর বাসায় আসলেন,, ইতিমধ্যে পিয়াল আরিশা ও চলে এসেছে,,সুরাইয়া আর আব্দুল্লাহ ওদের বিয়ের ব্যাপার কিছুই জানতেন না,, আরিশার থেকে সবটা জেনে নিলেন,,
পিয়াল- আরিশা তুমি থাকো আমি ও বেড় হই ভাবীকে খুজতে।
আরিশা- হ্যাঁ যাও ইরাদের সাথে,, ওকে সামলে রেখো।
ইরাদ এদিকে ওর খুব কাছের বন্ধু আদনান যে একজন ওসি তাকে রুহির ছবি মেইল করে দিয়ে বলেছে খুজে বেড় করতে,,
আর নিজেও বসে নেই বেড় হয়ে গেছে রুহিকে খুজতে,, রাতের বেলা না হলে ইরাদের এত ভয় করতো না,, মেয়েটা এত ইনোসেন্ট,, ওর কোনো ক্ষতি যদি হয় ইরাদ কখনো মাহিরাকে মাফ করতে পারবেনা,, মাহিরা ওর সাথে যা করেছে এইজন্য মাহিরাকে কিছুই বলেনি ও,, কিন্তু রুহির সাথে কিছু হলে যে ইরাদ সহ্য করতে পারবেনা,, নির্দোষ মেয়েটা জীবনে কম কষ্ট সহ্য করেনি,, আজ আবার ইরাদের জন্য তার এই রকম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে এই জিনিসটা ইরাদ মেনে নিতে পারছেনা।
রুহি ঢাকা শহরের কিছুই চিনেনা,, ইরাদের সাথেই বেড় হয়েছে যতবার দরকার পরেছে,, নাহয় ড্রাইভার সাথে ছিলো,, কিন্তু এখন রাতের বেলায় ভয় হচ্ছে অনেক। কোথায় যাওয়া যায় এই কথা ভাবছে ও,, তখনই হঠাৎ মনে পরলো সুরাইয়া দাদু বলেছিলেন ওদের বাসার থেকে পরের রোডে একটা আশ্রম আছে বাচ্চা ও বৃদ্ধা মহিলাদের থাকার,, উনি প্রায় সময়ই ওখানে যান,, এই সময়ে থাকার জন্য কোনো জায়গা রুহির মাথায় আসছেনা,, ঢাকায় অনেক আত্নীয় স্বজন ও আছে ওর কিন্তু কারো বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে বা তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার ইচ্ছে কোনোটাই রুহির নেই,,
তাই আজ রাতটা ওখানে থাকলেই ভালো হবে। কাল হয়তো এই শহর ও ছেড়ে দিবে ও,, কারণ যেখানে ইরাদের স্মৃতি আছে সেখানে থাকলে ও কখনো স্বাভাবিক থাকতে পারবেনা,, কত গুলো স্মৃতি আছে, কত গুলো অপূর্ণ স্বপ্ন আছে এই শহরে,, এগুলো সব পিছনে ফেলে রেখে আগে বাড়তে হবে, শুধু মাত্র ইরাদের সুখের জন্য।
রুহিকে একদম বিদ্ধস্ত লাগছে,, আশ্রমে যাওয়ার পরে তারা ওর এমন অবস্থা দেখে ওকে থাকতে দিলো। বেশ করে রহিমার খুব মায়া হলো ওকে দেখে,,
রুহি তেমন কিছু বললো না,, সেখানকার সবকিছু দেখেশোনা রহিমাই করেন,, আর তিনিই রুহিকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছেন,, সাথে করে নিয়ে ওকে দেখিয়ে দিলো পূর্ব দিকের একটা বিছানা সেখানে ও থাকতে পারবে,
-খালা,, একটা জায়নামাজ হবে??
রুহির কথা শুনে রহিমা ওকে একটা জায়নামাজ দিলো আর বাথরুমের রাস্তা দেখিয়ে দিলো,, রুমের লাইট অফ ছিলো,, রুহি এসে প্রায় ঘন্টা খানিক নামাজ পরে মুনাজাতে আল্লাহর কাছে খুব কান্না করলো, আওয়াজ নাহলেও রুহির কান্না ঘরে যে আরো একজন বৃদ্ধা আছেন তিনি ঠিকি বুঝেছেন,, কিছুক্ষন পরে খাটের এক কোণায় বসে হাটুর মধ্যে মাথা গুজে রুহি নিঃশব্দে কাঁদছে,, কোনো ভাবেই মনকে শান্ত করতে পারছেনা ও,, এক নিমিষেই ওর দুনিয়া,, কত শত স্বপ্ন,, সব শেষ হয়ে যাবে ও তা কখনো ভাবতেই পারেনি। কলিজার পোড়ানি কমছেনা কোনো মতেই,, মাথাটাও ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে,,
রুহির চুপচাপ কান্নাটা বৃদ্ধার চোখে পরলো,, তার কেন যেন ইচ্ছা করলো রুহির সমস্যা শুনতে,, মেয়েটার কিছু নিয়ে অনেক মনের পীড়া আছে তা উনি ভালোই বুঝতে পারছেন।
রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত গলায় তিনি বললেন,,
-কি হয়েছে বোন তোমার?
রুহির মাথায় হাত রেখে এভাবে জিজ্ঞেস করায় ওর কেন যেন এই অচেনা বৃদ্ধাকে খুব আপন লাগলো,,
-দাদু আমার সব শেষ হয়ে গেছে আজকে,, ভুল করেছিলাম,, ভালোবাসার মত ভুল।
-প্রথম থেকে বলো দাদু,,
রুহি খুলে বললো সব কিছু,,
মহিলা বললেন,,
– হ্যাঁ তুমি আসলেই ভুল করেছো,,অনেক বড় ভুল,, নিজের স্বামী কে রেখে আসার মত ভুল করেছো তুমি।
-দাদু উনি তো আমাকে ভালোবাসেই না তাহলে আমি কেনই বা থাকবো ওখানে?
-ছেলেটা তোমাকে ভালো না বাসলে বিয়ে করতো না,, এত দিন একসাথে থেকেছো কখনো তোমাকে ছুয়েও দেখেনি। কেউ যদি কাউকে ভালো না বাসে তাহলে এরকম করতে পারে না। দুনিয়া দেখে আসছি তোমাদের থেকে অনেক বেশি,, বাস্তব জীবন সিনেমা না, পুরুষ মানুষের নিয়ত খারাপ হয় কতটা তোমার ধারণার বাইরে,, আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তোমার জামাই তার আগের বউকে চায় না।
-কিন্তু দাদু আমি নিজ কানে শুনেছি,, আর সেই শাড়ি আর চিরকুট? সেগুলো আমি বলতে পারছিনা, কিন্তু তোমার একবার সামনা-সামনি কথা বলে বের হওয়া দরকার ছিলো,,
আর আইনানুসারে সে তোমার স্বামী এখন। তার প্রাক্তন স্ত্রী কে যদি তার পেতেও হয় তোমাকে ছেড়ে তারপর আবার বিয়ে করতে হবে।
-তার মুখ থেকে আমি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা সহ্য করতে পারতাম না দাদু।
-রুহির এই অসহায় কান্না দেখে নাজমা বেগমের খুব খারাপ লাগলো,,
তার মেয়ে যদি ২৫ বছর আগে ক্যান্সারে মারা না যেতো তাহলে হয়তো রুহির মত একটা নাতনি থাকতো তার।
উনি বুঝতে পারছে একবার ইরাদের সাথে রুহির কথা বলা দরকার। এরকম ভুল বুঝাবুঝির মাধ্যমে একটা বৈবাহিক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে তা উনি চান না।
-তোমার স্বামীর নাম কি?
-ইরাদ আহসান।
-আহসান বিল্ডার্সের এমডি?
রুহি অবাক হয়ে তাকালো নাজমার দিকে,,
ইরাদকে উনি কিভাবে চিনতে পারলো তাই ভাবছে ও।
-তোমার স্বামী আমাদের এই আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা, খুব ভালো মানুষ,, তার প্রাক্তন কে চিনতে পারছি এখন। উনি একটু রাগি ধরনের ছিলো,, তবে তোমার স্বামী অনেক মানিয়ে রাখতে চেষ্টা করতো। অনেক যত্নে রাখতেন।
-হুম উনি অনেক ভালো মানুষ, তাই যাকে নিয়ে ভালো থাকবেন তার সাথেই থাকুক।
এখন নাজমা আর কিছু বলছেন না কারণ তিনি চিনেন ইরাদ কেমন মানুষ,, আর মাহিরাকে কত ভালোবাসতেন তা ইরাদের আশেপাশে যারা থাকতেন বা ওকে দেখেছেন সবাই বুঝতে পারতেন।
প্রায় সারারাত ধরে রুহিকে সব গলিতে মেইন রোডে ইরাদ আর পিয়াল খুজে ফেলেছে,,
প্রায় ভোরের সুর্য ফুটে উঠতে চলেছে,, ইরাদের আর সহ্য হচ্ছেনা,, আদনান ও পেলো না রুহিকে,, কোথায় যেতে পারে ও?? আযান পরতে শুরু করেছে চারপাশে।
ইরাদ সেখানে ঢুকে গিয়ে নামাজ পরে নিলো,
মুনাযাতে আল্লাহকে বললো,,
-আল্লাহ আপনি আমাকে আমার মা বাবা থেকে দূর করে দিয়েছেন আমি মেনে নিয়েছি। আপনি মাহিরাকে আমার জীবনে রাখেন নি আমি মেনে নিয়েছি,, আমি কখনো বাবা হতে পারবো না তাও মেনে নিয়েছি,, আমি তো সব মেনে নিয়েছি। কিন্তু সহ্যের তো একটা ক্ষমতা থাকে। রুহিকে তো আমি খুজি নি,, আপনিই আমার জীবনে পাঠিয়েছেন। আজকে এভাবে হঠাৎ করেই যদি রুহিকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে নেন তাহলে আমাকেও আপনার কাছে নিয়ে যান,, আমি আর অপ্রাপ্তি নিতে পারছিনা।
পিয়ালের খুব খারাপ লাগছে ইরাদের এই অবস্থা দেখে,,, মনে মনে আল্লাহ কে বলছে রুহির যেন খোঁজ পাওয়া যায় তাড়াতাড়ি,,
এমন সময় আরিশা ফোন করে পিয়ালকে,,
পিয়ালের চোখে মুখে খুশি দেখা যাচ্ছে,,
ইরাদ নামাজ শেষ করতেই পিয়াল ওকে ধরে বলে
-দোস্ত আরিশা কল দিলো মাত্র,, ভাবীর খোঁজ পাওয়া গেছে।
– ও ঠিক আছে?
– হ্যাঁ একদম
ইরাদ আল্লাহকে স্মরণ করে আলহামদুলিল্লাহ বললো।
এদিকে মাহিরা ও সারারাত না ঘুমিয়ে জেগে আছে আর ভাবছে রুহিকে না পেলেই ভালো হবে,, ইরাদের জীবনে ও নিজের অধিকার আবারো ফিরে পাবে তাহলে…
(চলবে..)