অধিকার পর্ব-০৭

0
3542

#অধিকার #সপ্তম_প্রহর
#লিখাঃ #Yasira_Abisha (#Fatha)

বেশ কিছুক্ষণ ইরাদের বুকে মুখ গুজে রুহি কান্না করলো,, এই কান্না কোনো সাধারণ কান্না নয় বরং,,
এক ঝাটকায় নিজের পরিবারকে হারানোর, এই কান্না এক জোর পুর্বক অধিকার আদায়ের দাবিতে একটা মেয়েকে তার স্বাভাবিক হাসিখুশি জীবন থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার কান্না,,
ইরাদ বুঝতে পারছে এই মেয়েটা ছোট থেকেই সব কিছু হারিয়ে আসছে,, তার মনের মাঝে অনেক ব্যাথা লুকিয়ে আছে যা সে হয়তো প্রকাশ করতে পারেনা। যা কিছু ঘটে গেছে তাতে তার তো কোনো দোষ নেই, সে কেনো ভয় নিয়ে বাচবে? তাকে একটা স্বাভাবিক জীবন ইরাদ দিবে। তাকে সব রকম দুঃখ থেকে ইরাদ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে বাচিয়ে রাখবে। কেন এমন লাগছে ইরাদ জানে না কিন্তু এই অনুভুতিটা মন্দ না। বরং একটা দ্বায়িত্ব আর সুখ দিচ্ছে ওকে। বেচে থাকার একটা টান লাগছে এই দুনিয়ায়।

.

রুহির কান্না কমে এসেছে কিছুটা, তবুও ইরাদের বুকে লেপ্টে আছে ও,, কেন যেন কথা গুলো বলতেও ওর ভয় হয়,,
ইরাদ আলতো করে রুহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই জিজ্ঞেস করলো,,
-শপিং মলের ছেলেটা কে ছিলো?
-সে ছেলেটা আমাকে পছন্দ করতো কলেজে থাকতে। আমার ওকে একদম পছন্দ ছিলো না কখনো যদিও দাদা বেচে থাকতে আমাকে বিরক্ত করার সাহস পেতো না কিন্তু দাদা মারা যাওয়ার পরে আমাকে কল দিয়ে বিরক্ত করতো। আমি চাচুর কাছে বিচার দিতে পারতাম কিন্তু ওর মত আরো অনেকে ছিলো যারা পছন্দ করতো,, এদের নামে বিচার দেওয়া মানেই এক্সট্রা এটেনশন দিয়ে ফেলা,, যা আমি কখনো করতে চাইনি। নাহয় আমার বাড়ি থেকে বেড় হওয়াই বন্ধ করে দিতো। কারণ আমার বাসায় অনেক রেস্ট্রিকশন ছিলো, আর আমাকে নিয়ে সবাই অনেক টেনশনে থাকতেন।
-হুম বুঝতে পেরেছি বলেই ইরাদ নিজের বাহুডোরের বাধন হালকা করে দিলো,, রুহি সরে বসলো,,
এমন সময় মাগরিবের আযান পরতে শুরু করলো চারিদিকে।
রুহি- ইশশ! আযান দিচ্ছে আমরা এখনো শাওয়ার ও নেইনি।
ইরাদ- হ্যাঁ,, আমি যাচ্ছি একবারে নামাজ পরে তারপর তৈরি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নামছি। আপনি ও ফ্রেশ হয়ে নেন।
এই বলেই ইরাদ চলে গেলো

.

রুহি আগে ওজু করে নামাজ পরে,,
তারপরে গোসল সেড়ে এসেছে একটা লাল রঙের জর্জেট শাড়ি পড়ে।
ফর্সা ধবধবে শরীরে লাল রং একদম এগুনে তৈরি কোনো পরীর মত লাগছে,,
গিসারে হঠাৎ প্রব্লেম হওয়ায় ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ফলে গাল গুলো গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে,, কোমর অবধি ভেজা চুল গুলো খোলা অবস্থায় সামনে দিয়ে ডান পাশে এনে রেখেছে, যা আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে রুহিকে।বেশ মনোযোগ দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক মিনিট ধরে ব্লাউজের ব্যাকের হুকটা লাগানোর চেষ্টা করছে সে,, কিন্তু কিছুতেই পারছেনা। এমন সময় ইরাদ আসে ওর ঘরে, এমন সুন্দরী দেখে যে কেউ একবার থেমে ওকে দেখতে থাকবে, হোক সে পুরুষ বা নারী। ইরাদ একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো রুহির থেকে। এই প্রথম রুহিকে শাড়িতে দেখলো সে,, তাও লাল শাড়িতে। একদম মনে হচ্ছে বউ বউ। বেশ করে নাকের একপাথরের বড় একটা স্টোনের নোসপিন আর নাকের সেই পাশের তিলটা চেহারাকে আরো বেশি উজ্জ্বল করে তুলেছে,, কে এই অপরূপার সৌন্দর্য বেশি বৃদ্ধি করেছে তা একটা প্রতিযোগিতা করেও হয়তো স্থির করা যাবেনা।
ইরাদ তাড়াতাড়ি নিচের দিকে তাকিয়ে বললো -হয়েছে আপনার??
-না, এই হুকটা লাগাতে পারছিনা। একটু হেল্প করবেন।
ইরাদ রুহির ব্লাউজের হুকটা লাগিয়ে দিতে এগিয়ে এসলো,,
ইরাদের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই রুহি কেমন যেন কেপে উঠলো। এই হাতের স্পর্শ তো ওর হৃদয়ের স্পন্দন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়,, কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে,, যখন রুহি তাকিয়ে আয়নায় একসাথে ওদের দেখলো কেমন যেন পূর্ণতা লাগছে দেখতে। এক হয়ে গেলে কি মন্দ লাগবে ওদের ২জন কে? মনে তো হচ্ছেনা। আয়না তো বলছে বেশ লাগছে একসাথে। ইরাদ অন্য দিকে তাকিয়েই হুকটা লাগিয়ে দিলো।
-আমাকে নেকলেসের হুকটাও একটু লাগিয়ে দিবেন??
না চাইতেও রুহির ঘাড়ে, গলায় ইরাদের তাকাতে হলো, একটু অস্বস্তি লাগছে তবুও চেইনটা লাগিয়ে দিয়ে পেছন ফিরে রুহিকে বললো
-আজকে ওভাবে জড়িয়ে ধরার জন্য আমাকে মাফ করবেন।
-হুম, ঠিক আছে।
-আপনি আস্তে ধীরে রেডি হন সমস্যা নেই আমি ব্যাগ গুলো গাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছি ড্রাইভারকে দিয়ে। আমরা একবারে এশার নামাজ পরে রওনা দিবো।
রুহি আয়নায় নিজেকে দেখতে আর ভাবছে ইরাদের কত ফর্মালিটি,, একদম ঢং,,
ওকে ধরেছে বলে সরি বলছে। কিন্তু ওর মনে যে একদম গেথে গেছে ও। কোনো পারমিশন ছাড়াই এটা কি ঠিক করেছে? এই অধিকার কি রুহি ওকে দিয়েছিলো?? তাহলে সেই হিসেব কে করবে? রুহির জীবনে ইরাদই প্রথম পুরুষ যে ওকে এভাবে স্পর্শ করেছে আর ও স্বেচ্ছায় তা গ্রহণ করেছে।৷ আজকে আয়নায় এভাবে ব্লাক সুটে ইরাদকে ওর সাথে দেখে ও বুঝে গেছে ওদের জুটিতে ও মানায়।মনে হচ্ছে এত দিনে নিজের স্বপ্নের পুরুষের দেখা মিলেছে এই ছেলেটাকে ছাড়া ওর জীবনটা চলবে না। ওকে যে নিজের স্বামী হিসেবে চাই রুহির। এই নাটকে নিজেকে ইরাদের স্ত্রী হিসেবে বলতেই ওর এত ভালো লাগছে তাহলে বাস্তবে এমন হলে কতই না ভালো লাগবে। কথা গুলো ভেবে একা একাই লাজুক হাসি দিচ্ছে রুহি। মন যেন নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে ইরাদকে নিয়ে। এই স্বপ্ন অনেক বেশি রঙিন,, যার গাঢ় রঙ হৃদয়কে রঙিন করে তুলেছে অদৃশ্য এক রংধনুতে।

এশার নামাজ শেষ করে রুহি ঘর থেকে বেড় হলো বেশ সুন্দর করে সেজেছে আজকে,, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, গালে হালকা ব্লাশঅন, চোখে মাশকারা,, লম্বা সিল্কি চুল গুলো খোলা,, নাকে হোয়াইট সেই নোস্পিনটাই আছে,, গলায় পাতলা একটা চেইন কানে সুন্দর ২টা টপ পরেছে, এক হাতে একটা ঘড়ি আর এক হাতে একটা হোয়াইট ব্রেসলেট,, মেয়েটার সাজের ধরন এত সুন্দর,, অন্য কোনো ছেলে যদি ইরাদের জায়গায় থাকতো এতদিন রুহির সাথে কাটিয়ে রুহির প্রেমে হাবুডুবু খেতো। কিন্তু ইরাদ ওকে এমন কিছুই বলেনা। বরং এত খেয়াল রাখার পরেও একটা দুরত্ব রেখে চলার চেষ্টা করে। রুহিকে বেড় হতে দেখে একটা স্মাইল দিলো ইরাদ
কিন্তু রুহি ইরাদকে দেখছে,, ব্লাক সুট পরেছে ও ব্যাকব্রাশ করা চুল জেল দিয়ে রেখেছে ফর্সা চেহারা,, খোচাখোচা দাড়ি,, মোবাইলে কি যেন দেখছিলো সে,, রুহিকে আসতে দেখে একটা স্মাইল দিয়ে আবারো ফোনে মনোযোগ দিলো। আবার একটু পর বাকা হয়ে উল্টোদিকের সোফায় বসে পরলো,,
রুহি দাঁড়িয়ে ভাবছে কিছু একটা করা দরকার এই ছেলেটার মুখে নিজের একটু প্রশংসা শুনতে খুব করে ইচ্ছা করছে। কি করা যায়? রুহি এগিয়ে গিয়ে ইরাদকে বললো,,
-আপনাকে মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে।
-ধন্যবাদ
এই বলেই মোবাইলটা রুহির দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
-এটা আপনার নিউ ফোন,, এত দিন বাসায় থাকতেন তখন ফোন নিতে চাননি আমি কিছু বলিনি,, কিন্তু এখন নিতে হবে।
-ফোন দিয়ে কি করবো?
– আমার সাথে কথা বলবেন।
কথাটা শুনে রুহি ইরাদের দিকে তাকালো
ইরাদ নিজের কথায় নিজেই অপ্রস্তুত হয়ে বলে
-আই মিন বাসার বাইরে যাচ্ছি দরকার হতেই পারে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
রুহি মুচকি হাসলো কথাটা ওর ভালো লেগেছে।

গাড়িতে বসে আছে ইরাদ আর রুহি,,
রুহি মনে মনে বলছে,, মানুষ না চাইতেও কত কম্পলিমেন্ট দিতো আমাকে আর এদিকে উনি আমার দিকে ঠিক মত তাকিয়েও দেখেনা। কঠিন একটা। রুহি একটু একটু রাগ ইরাদ বুঝতে পারছে কিন্তু কারণটা ধরতে পারছেনা ঠিকভাবে।
তবে ড্রাইভারের সামনে কিছু জিজ্ঞেস না করাটাই ইরাদের কাছে ঠিক মনে হলো,,

শাহিনদের পরিবারের সবাই অনেক ভালো ইরাদকে অনেক পছন্দ করে এই সুবাদে রুহিকেও তাদের পছন্দ হয়েছে অনেক, তাদের বাসায় ডিনার করে ইরাদ রুহি হেলিকপ্টারে করে মাত্র ২৮ মিনিটের মাথায় সিলেটে এসে পরলো। ঢাকার তুলনায় শ্রীমঙ্গল খুব সুন্দর,, গাছগাছালির সমারোহ,, বেশ ঠান্ডাও পরে গেছে এখানে একটা স্নিগ্ধ সুষমা ভরা পরিবেশ,, থেমে থেমে দমকা হাওয়া বইছে,, যেন চারিদিকের সবকিছু একত্রে নতুন জুটিকে বরণ করে নিচ্ছে এবং হোটেলে ঢুকতেই ওরা স্পেশালি দুইজনকে বরণ করে নিলো। ম্যানেজার যখন বললো “ওয়েলকাম মিস্টার & মিসেস ইরাদ”
রুহির খুব ভালো লাগলো
“মিসেস ইরাদ” শব্দটা বার বার মনে হচ্ছে কানে বারি খাচ্ছিলো।
সব গুলো ফর্মালিটি কমপ্লিট করে যখন ওরা রুমে যাবে লবি থেকে তখনই ইরাদের ছোট বেলার স্কুলের বন্ধু আরিশা আর পিয়ালের সাথে দেখা হয়,, ওরা কলেজে থাকতে প্রেম করে বিয়ে করেছিলো আজ তারাও ভ্যাকেশনে এই হোটেলে উঠেছে ,, এভাবে দেখা হওয়ায় তিন জনই খুব খুশি হয়ে যায়। রুহির সাথেও পরিচয় করে নেয় আরিশা নিজে থেকেই
আরিশা-মেয়েটা কে? তোর ওয়াইফ?
রুহি- হুম
ইরাদের আগেই রুহি উত্তর দিয়ে দেয়।
আরিশা আর পিয়াল অনেক খুশি হয় খবরটা শুনে।
আরিশা- মেয়েটা অনেক মায়াবী ইরাদ।
ইরাদ- থ্যানক্স দোস্ত
পিয়াল- তোরা কোন রুমে উঠেছিস?
ইরাদ- ৫০৪ এ আর তোরা?
পিয়াল- হানিমুন সুইটে রাইট?
ইরাদ-হুম
আরিশা-তোমার নাম কি ভাবী? আর বিয়ে কবে হয়েছে?
রুহি- আমার নাম রুহি,, আজ সকালেই।
পিয়াল আরিশা একসাথেই বলে উঠে
“ওয়াও”
আরিশা শোন কিছু কথা বলার আছে এই বলেই পিয়াল একটানে সাইডে নিয়ে গেলো ওকে।
কিছুক্ষন পরে দুইজন হাসতে হাসতে বললো
পিয়াল- ইরাদ তোদের রুমটা দেখে তারপর আমরা চলে যাই কি বলিস??
ইরাদ বুঝেছে ওরা কোনো দুষ্টুমি করতে পারে কিন্তু আবার ভাবলো এখন কিই বা করবে,, মনে কিছু প্রশ্ন থাকলেও ওদের সাথে করে নিয়ে গেলো
ইরাদ- হ্যাঁ আয়।
চার জন মিলে ইরাদদের রুমে গেলো
খুব সুন্দর করে রুমটা সাজানো হয়েছে,, ফুল হোয়াইট একটা রুম,, রাউন্ড বেড,, একটা সোফা,, টিভি বার সব কিছুই আছে এখানে,, এর ওপরে রেড রোজ দিয়ে সাজানো,, একদম রোমান্টিক একটা আমেজ তৈরি হয়ে আছে,, যে কারোই নেশায় ধরে যাবে এই ঘরে আসলে।
পিয়াল ইরাদকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো ও মাহিরার সাথে ইরাদের ডিভোর্স এর কথা জানতো কিন্তু রুহির ব্যাপারে কিছুই জানে না তবে এই ব্যাপারে কিছু জানতে না বরং,, আর আজকে যেহেতু ওদের ফুলসজ্জা এই রাতটা যেন সুন্দর করে কাটায় এই বুদ্ধি দিতেই মূলত ইরাদকে পিয়াল এনেছে। আর আরিশা এদিকে রুহির সাথে সোফায় বসেছে
রুহি মাথায় হাত দিয়ে রেখেছে,, কারণ রুহির ডিনারের পর থেকেই মাথায় হালকা ব্যাথা অনুভব হচ্ছিলো
-কি হয়েছে ভাবী?
– আপু মাথাটা হালকা ঝিমঝিম করছে, দেখি উনি ফ্রী হলে একটা ফ্রেনজিট এনে খেতে হবে তাহলে ঠিক হয়ে যাবো।
-আমার কাছেই তো আছে,, পিংক মেডিসিনটা না?
-জ্বি
-দাড়াও দিচ্ছি।
রুহি আরিশার কাছ থেকে নিয়ে মেডিসিনটা খেয়ে নিলো নাম না দেখেই।
এবার আরিশা বলতে শুরু করলো
-ভাবী ইরাদকে আমরা ছোট থেকে চিনি,, ও অনেক কোমল মনের একটা ছেলে ওকে কখনো কষ্ট দিও না। ও অনেক ভালো। ভালোবেসেই মাহিরাকে ও বিয়ে করেছিলো,, মাহিরা ওকে ছেড়ে যাওয়ার পরে আমরা ভেবেছিলাম ও মনে হয় জীবনটা আর গুছাতে পারবেনা। মাহিরা তামিম নামের এক ছেলের সাথে বিবাহিত থাকা অবস্থায় পরকিয়া করতো,, এমন একটা পাগলের মত ভালোবাসে যে স্বামী তাকে রেখে। শুধু মাত্র ইরাদ ওকে সময় দিতে পারতো না দেখে।
জানো ইরাদের মুখেও এগুলো শুনিনি। মাহিরা নিজেই এই কথা ডিভোর্স এর সময় অভিযোগের সুরে বলেছিলো। মাহিরার প্রতি একটা নোংরা মনোভাব কারো হোক ইরাদ ডিভোর্স এর সময় ও এটা চায় নি,, এমন কেয়ারিং ছেলে কে ফেলে ও চলে যায়,,
যারা ওদের পার্সোনালি চিনতাম সবাই শুধু বলেছিলাম মাহিরার থেকেও যেন আল্লাহ পাক ভালো কাউকে ইরাদের জীবনে এনে দেয়। তোমাকে আল্লাহ পাক পাঠিয়েছে। তুমি ওকে অনেক ভালোবাসা দিও,, ও তোমাকে অনেক ভালো রাখবে ভাবি।
কথা গুলো শুনে রুহির কাছে ইরাদের ডিভোর্স এর ব্যাপারটা পুরো ক্লিয়ার হয়ে গেলো।
এখন তো ইরাদের ওকে দূরে ঠেলে দেওয়ার কারণটাও মাথায় ঢুকছে,, হয়তো ইরাদ ভয় পায়,, সম্পর্কের প্রতি হয়তো একটা ভয় বাসা বেধে গেছে ওর মনে। কিন্তু রুহির মনে কোনো ভয় নেই আর।
ইরাদ ভালো,, ওর মনটা ভালো।
ও কোনো অন্যায় করেনি যার ফলে ওর ওয়াইফ চলে গেছে।
বরং ওই মেয়ে না গেলে হয়তো আজকের এই ইরাদকে রুহি পেতো না।
আরিশার হাত ধরে রুহি বললো
-আমি আপনার বন্ধুকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসা দিয়ে রাখবো। ইনশাআল্লাহ অনেক যত্নে রাখবো। তার জীবনের কালো অধ্যায় গুলো ভুলিয়ে দেওয়ার আপ্রান চেষ্টা করবো।
-শুনে অনেক খুশি হলাম,, আচ্ছা ভাবী তোমার কি ওর সাথে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়েছিলো? নাকি ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছো?
-ধীরে ধীরে প্রেমে পড়েছি, আর আজকে বুঝতে পেরেছি তাকে আমি অসম্ভব পরিমাণে ভালোবাসি।
এই বলেই রুহি একটা লাজুক হাসি দিলো।
এরপর রুহি আর আরিশা ফোন নাম্বার এক্সচেঞ্জ করে নিলো।
এদিকে পিয়াল আর ইরাদ চলে এসেছে।
আরিশা- পিয়াল সময় হয়ে গেছে এসে পরো ডার্লিং।
ইরাদ- যা যা তোর বউ ডাকছে।
পিয়াল- কাজ হইসে আরিশা?
আরিশা- একদম,, এবার চল।
পিয়াল যাওয়ার সময় ইরাদকে বেস্ট ওফ লাক বলে চলে গেলো,,
রুহি লজ্জায় একদম কুকড়ে যাচ্ছিলো পিয়াল আর আরিশায় দুষ্টুমিতে।
ওরা যাওয়ার পরে
ইরাদ রুহিকে বললো
-আপনি চেঞ্জ করে নেন
– আমি এখন চেঞ্জ করবো না একটু ঘুমাই,,
-তাহলে আমি চেঞ্জ করে আসি,, আপনি বিছানায় শুয়ে পরুন, আমি সোফায় থাকছি।
-সমস্যা নেই মাঝে কোল বালিশ দিয়ে দিচ্ছি আপনি ওপাশে শুয়ে পরুন। সোফায় শুয়ে ঘুম হবেনা ঠিক মত।
-না সমস্যা নেই।
-যা বলেছি তাই করবেন। এই বলেই রুহি গিয়ে শুয়ে পরলো।
ইরাদ ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসেছে রুহি কাত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ওপাশে মুখ করে,, ইরাদ ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল, এমন একটা পরিবেশে এই মেয়েটার সাথে কেমন যেন লাগছে,, মনের ভিতর আনচান করছে। রুহির প্রতি ওর একটা মায়া কাজ করে এটা ইরাদ বুঝে কিন্তু আজকে ওকে বার বার তাকিয়ে দেখতেই ইচ্ছে করছে সেই সকাল থেকেই, বেশ করে বিকেলে সবটা শুনার পর থেকেই মেয়েটার প্রতি যত্ন আর টানটা চক্রবৃদ্ধি আকাড়ে যেন প্রতি সেকেন্ডে বেড়ে চলছে,,
মনে মনে নিজেই নিজেকে বলা শুরু করলো
“এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছে না ইরাদ,, এভাবে মেয়েটাকে দেখা ঠিক না। রাতে যখন ও রেডি হয়ে এসেছিলো ঠিক সোকেজের গ্লাসে রুহিকেই দেখে যাচ্ছিলি তুই,, মেয়েটা যদি বুঝতে পারে তোকে কি ভাববে? বিশ্বাস করেছে তোকে আর তুই কি না ওকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখিস,, কিন্তু না চাইতেই তো এমন হচ্ছে ইরাদ তো ইচ্ছে করে এমন করেনা”
এসব ভাবতে ভাবতেই মনে হলো
” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ঘুমাই এখন বাকিটা কাল ভাববো”
লাইট অফ করে ড্রিমলাইট অন করে দিলো ইরাদ,, বিছানায় গিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই বুকে নরম কিছু অনুভব করতে পারলো ইরাদ তাকিয়ে দেখলো
রুহি হাত রেখেছে ওর বুকে
আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, ড্রিমলাইটের আবছা আলোতে রুহির চেহারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে।
ইরাদ কিছু না বলে আস্তে করে হাতটা সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে ফিরতে চেষ্টা করে তখন রুহি ওকে হাত দিয়ে টেনে ধরে বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করে,,
ঠোঁট ভেটকিয়ে জিজ্ঞেস করে
– দেখতে ভাল্লাগেনা আমাকে? অন্য দিকে ফিরছো কেন? বলো?
রুহির কথা শুনে ইরাদ ভেবাচেকা খেয়ে যায়।
চোখ বড় বড় করে তাকায় ওর দিকে…

(কেমন হচ্ছে জানাবেন, চলবে…)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে