অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৮ম পর্ব
কি যেন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেলো রাহীর। চোখ খুলতেই সামনে আঁচল কে দেখতে পেলো। আঁচল তো কাল ঐ রুমে ঘুমিয়েছিল। হয়তো রাতে আসছে। জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আবছা আলোর আভা আসছে ।
মেয়েটা গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। রাহী কাথাটা আঁচলের গায়ে মুড়িয়ে দিয়ে ছাঁদে চলে আসলো।
কখনো ১০ টার আগে ওঠা হয় না। আজ যখন এতো সকালে ঘুম ভেঙে গেলো তাই সকালের মনোরোম আবহাওয়া টা হাতছাড়া করতে চাইলো না রাহী।
ছাঁদে এসে দুই হাত মেলে দাঁড়ালো। মুক্ত বিহঙ্গ। ইশশ যদি উড়তে পারতাম তবে এক পলকে এই মৃত শহরের এক পাশ থেকে অন্য পাশ ছুয়ে আসতাম ।
অনেক দিন বুক ডাউন দেওয়া হয় না। আজ দেখি কয়টা দিতে পারি। কিন্তু না তিনবার দেওয়ার পর ওখানেই শুয়ে পড়লো রাহী। এগুলো প্রতিদিন অনুশীলনের ব্যাপার হঠাৎ হবে না ।
” আপনার চা।
কথাটা শুনে রাহী রিতীমত ভয় পেয়ে গেছে। পিছনে তাকিয়ে দেখে আঁচল চা হাতে দাঁড়িয়ে আছে ।
” আপনি কখন উঠলেন?
” যখন আপনি উঠেছেন।।
” ওহহ। সকালের পরিবেশ টা সুন্দর না?
” হুম ।
” চলুন না হেঁটে আসি একটু।
রাহী কথাটা বলে আঁচলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে তার অভয় পাওয়ার জন্য।
আঁচল মুচকি হেঁসে বললো- আচ্ছা চলুন।
ব্যাস্ত শহর ঘুমের কোলে। রাস্তার কুকুরটিও তার পরিবার নিয়ে অঘোরে শুয়ে আছে । মাঝে মাঝে দুই একজন মানুষের দেখা মেলছে তারাও হয়তো তাদের মতো হঠাৎ ভোরের সাথী নয়তো বহুমূত্র রোগ বহন কারী।
শেষ কলেজ জীবনে এভাবে ভোরে রাস্তা দিয়ে হেঁটেছি। রাহী কথাটা বলে আঁচলের দিকে তাকালো।
” এরপর আর কখনো হাটেন নি?
” না। কলেজ জীবনে একটা মেয়ের পিছনে পিছনে আসতাম তাই ভোরে উঠে তার পিছু নিতাম। তখন সে প্রাইভেট যেতো।।
কথাটা শুনে আঁচলের কেন জানি একটু খারাপ লাগছে । রাহী কেন অন্য মেয়ের পিছনে পিছনে যাবে?
আসলে মেয়ে জাতি দুঃখিত মেয়ে জাতি না। ভালোবাসা জিনিসটাই এমন, যার প্রতি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা আছে তাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করা অসম্ভব। সেটা হোক অতীত বর্তমান বা ভবিষ্যৎ।।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও আঁচল জিজ্ঞেস করলো – তারপর ।।
” মেয়েটার সাথে প্রেম ও হয়ে যায়। ওটা ছিলো আমার জীবনের প্রথম আর শেষ প্রেম। এরপর তো আপনাকে বিয়ে করলাম ।।
” ছাড়াছাড়ি হলো কিভাবে?
” আমি ওকে বলেছিলাম কখনো এটা ভেবে আমার সাথে সম্পর্ক কন্টিনিউ করবা না যে তুমি চলে গেলে আমি কষ্ট পাবো। ততদিন পর্যন্ত ভালোবাসবা যতদিন তোমার মনে আমার জন্য ভালোবাসা থাকবে । আর যদি কখনো তোমার জীবনে অন্য কেউ আসে তবে তুমি প্রথম আমায় জানাবে।
‘ “তারপর
” তারপর একদিন সে এসে বললো তার আমার সাথে থাকা সম্ভব নয়। সে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
” আপনি তাকে আটকান নি?
” না।
” কেন?
” কারণ জোর করে আটকালে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। আর আমি ব্যার্থ ছিলাম তাকে পর্যাপ্ত ভালোবাসা দিতে পারি নি তাই জন্য হয়তো সে অন্য কারো ভালোবাসায় মায়া জড়িয়েছে ।।
” ওহ।
” তবে সে আমায় ছেড়ে গেছে এটাতে আমার কোনো দুঃখ নেই কিন্তু সে টাকার জন্য আমায় ছেড়ে গেছে এটাতে আমার খুব কষ্ট হয়। যদি সে ভালোবাসার জন্য আমায় ছেড়ে যেতো তবে আমি হাসি মুখে তাকে আজও স্বরন করতাম।
” ওহহ। তাহলে এটাই আপনার প্রাক্তনের প্রতি অভিযোগ?
” উহু। অভিযোগ না।। এটা অভিমান বলতে পারেন।। ভালোবাসায় অভিযোগ বলতে কিছু হয় না।। যা হয় সেটা অভিমান আর অনুভব। আর যদি অভিযোগ থাকে তবে সেটা ভালোবাসার সম্পর্ক হতে পারে না।
” কেন? প্রিয় মানুষটার উপর তো অভিযোগ থাকতেই পারে।
” না, পারে না । অভিযোগ কেবল অপরাধীর উপরেই থাকে।
” হুম
” আচ্ছা আমার কথা বাদ দিন। আপনার স্বপ্ন কি?
” আমার নিজের কোনো স্বপ্ন নেই। তবে যদি কখনো সুযোগ পাই তাহলে পতিতা-দের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। যাদেরকে সমাজ পতিতা হতে বাধ্য করেছে ।
” কি করতে চান?
” তাদের বসবাসের জন্য আবাসস্থল এবং তাদের জন্য কর্মস্থল।
” আচ্ছা । আমি আপনাকে সাহায্য করবো ইনশাআল্লাহ।
” এটা করতে অনেক টাকা লাগবে। আপনি এতো টাকা কই পাবেন?
রাহী আঁচলের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো।
আঁচল শুধু রাহীর রহস্যময় হাসির দিকে চেয়ে থাকলো। হসিটার মাঝে গভীর রহস্য দেখতে পেলো রাহী। একটু পরেই সে রহস্য টা বাদ দিয়ে শুধু হাসিটা নিয়ে ভাবতে লাগলো। এই ছেলে হাসি দিয়ে হাজারো মন ঘায়েল করতে পারবে।
একটু পরে যখন সূর্য উঁকি দিয়ে তাকালো। আঁচল ও রাহী বাসায় ফিরে আসলো।
এসে দেখে অধরা আর আরসি বসে টিভি দেখছে।
” তোমরা কখন উঠলা?
“একটু আগেই।
আরসি আঁচলকে বললো- আপু ক্ষুধা পাইছে
রাহীও আরসির সাথে বললো- আমারও ক্ষুধা পাইছে কিন্তু।
আঁচল রাহীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বাচ্চাদের সাথে তাল দিতে দেখে।
” তোমরা টিভি দেখো আমি রান্না করছি।
সকালের খাওয়া শেষ করে রাহী আঁচল অধরা আর আরসি কে নিয়ে বাইরে গেলো। সারাদিন ঘুরলো আসার আগে আগে রাতের খাবার বাইরে খেয়ে শপিং করে বাসায় আসলো।
রাহী এর মাঝে একটা খাটও নিয়ে নিয়েছে যেটাতে চারজন একসাথে থাকতে পারবে।
আরসি আর অধরা শুয়ে পড়ছে। সারাদিন ঘুরাঘুরির জন্য শরীর খুবই ক্লান্ত তাই শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়ছে।
” আপনি ঘুমাবেন না?
” এখন না। আপনি ঘুমান আমি একটু আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করে আসি।
আঁচল আর কিছু বললো না । রাহী চলে গেলো।
রাহীর পিছনে পিছনে আঁচল ও ছাঁদে চলে আসলো।
” আপনি কি প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকেন?
” হুম। আব্বু আম্মুর সাথে দেখা করি।।
” হুম ।
” আচ্ছা আপনি কি আমায় মন থেকে স্বামী হিসাবে মেনে নিয়েছেন?
” হুম । কেন?
” তাই জিজ্ঞেস করলাম ।। আমি যদি আপনার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করি তবে কি আপনি সেটা মন থেকে মেনে নিবেন নাকি স্বামী জন্য মেনে নিবেন?
” মন থেকেই। আবার স্বামী হিসাবেও। কিন্তু এসব জানতে চাচ্ছেন কেন?
রাহী কিছু বললো না। আঁচলের দিকে তাকিয়ে আঁচলের কাছে চলে আসলো। আঁচলের এতটাই কাছে চলে আসলো যে আঁচলের নিঃশ্বাসের শব্দ রাহীর কানে আসছে।