অতঃপর ভালোবাসি পর্ব-০৭

0
2030

অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৭ম পর্ব

আজ আঁচল আর রাহির বিয়ে। আঁচল শুধু একটা কথাই ভাবছে এটা কি সত্যি নাকি তার স্বপ্ন? তার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে আজ তার বিয়ে।

সারাদিন কিভাবে যেন কেটে গেলো। এখন রাত প্রায় ১০ টা। আঁচল ঘরে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে। তখন ও তার মনে একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে সত্যি কি আমার বিয়ে হয়ে গেলো?
হঠাৎ তার মনে পড়লো অধরা আর আসরির কথা। রুম থেকে মাথা বের করে উঁকি দিয়ে দেখে রাহি, আরসি আর অধরাকে নি তার সকল বন্ধু কে বিদায় জানাচ্ছে । আঁচল আবার এসে বসে পড়লো।

একটু পরেই রাহী অধরা আর আসরি কে নিয়ে রুমে আসলো – আরসি আর অধরা কি এখানেই ঘুমাবে নাকি অন্য রুমে?
রাহীর কথা শুনে আঁচল রাহীর দিকে তাকালো। আঁচলের এখন কি বলা উচিত সত্যি সে জানে না।
আঁচলকে চুপ থাকতে দেখে রাহী বললো- তোমরা কি এখানে ঘুমাবে?
আরসি বললো- আমি আপুর সাথে ঘুমাবো।
আঁচল কিছু বলছে না, আরসি আর অধরা কে কাছে ডেকে নেওয়ার সাহস ও পাচ্ছে না ।
হঠাৎই রাহী বললো- একপাশে সরে বসুন এরা ঘুমাবে।
আঁচল একপাশে সরে বসলো। অধরা আর আরসি শুয়ে পড়ছে। আঁচল শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রাহীর দিকে নিজের বাসররাতে সে তার বোনদের প্রতি যে ভালোবাসা দেখালো সেটা যদি সব সময় থাকে তবে তার জীবনে রাহীর কাছে আর কিছু চাওয়ার থাকবে না ।
” আপনি ওদের ঘুম পাড়িয়ে দিন আমি ড্রয়িংরুমে আছি।
রাহী ড্রয়িংরুমে এসে টিভি অন করলো।
একটু পরেই রুম থেকে মাথা বের করে আঁচল ডাকলো- আসুন ওরা ঘুমিয়ে গেছে ।
রাহী টিভি বন্ধ করে চলে আসলো।
আঁচল রাহীর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর রাহী আরসি আর অধরার দিকে তাকিয়ে আছে – এই বিছানায় তো চারজনের জায়গা হবে না।
” হুম ।
” এখন কি করবো?
আঁচল কোনো কথা বললো না।
” ছাঁদে যাবেন? এখানে কথা বললে ওরা জেগে যাবে।
” হুম ।
আঁচলকে অবাক করে দিয়ে রাহী আচলকে কোলো তুলে নিলো। আঁচল এটার জন্য একেবারে প্রস্তুত ছিলো না ।

ছাঁদে এসে নামিয়ে দিলো। রাহী আজই প্রথম আঁচলকে লজ্জা পেতে দেখলো। নয়তো এতদিন শুধু লজ্জা লুকিয়ে নিজেকে বেহায়া প্রমাণ করতে ব্যাস্ত ছিলো।
লজ্জায় আঁচলের গালে হালকা লাল স্তরন পড়ে গেছে যেটা রাহীকে নিমিষেই মুগ্ধ করে দিচ্ছে ।

” আপনি লজ্জা পেলেও আপনাকে ভালো দেখায় সেটা জানেন কি?
” উহু।
” কেন আপনার আপনিকে সব সময় লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন?
” জানিনা। আপনি যে একজন যৌনকর্মী কে বিয়ে করলেন যখন সবাই জানতে পারবে আপনার লজ্জা করবে না?
” নাহ তো।
” কেন?
” লজ্জা হচ্ছে নারীর ভূষণ। সেটা যদি আমি পাই তবে নারী আর আমার মাঝে পার্থক্য থাকলো কি?
” এরমানে আপনি লজ্জা পান না?
” না। কারণ আমি সেই কাজটা করি যেটা আমার ভালো লাগে।
” বুঝলাম না ঠিক আপনার কথাটা?
” আমি কোনো কাজ করার আগে বা পরে আমি নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি নিজের কাজ নিয়ে নিজেই সমালোচনায় মেতে উঠি। যদি এতে আমার মন থেকে কোনো অনুতাপ বা অনুসূচনা না আসে তবে সেই কাজটা নিঃসন্দেহে সঠিক । আর এমন কখনো হয় নি যে আমার কাছে নিজের কাজের জন্য আমার হৃদয় কেঁপে ওঠে। আর লজ্জা তো সেই পুরুষ পায় যে জানে সে যে কাজটা করছে সেটা সঠিক নয়। আমি তো সঠিক কাজটাই করেছি তবে লজ্জা পেতে হবে কেন?
” একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
” হুম বলুন।
” বিয়েতে তো অনেকেই আসলো৷ সবাই শুনি আপনার বন্ধু।
” হুম
” আপনার বাবা মা?
” ওনারাও ছিলো তো।
” কই দেখলাম না তো।
রাহী আকাশের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলো – ঐ যে ঐখানে।
” মানে?
” মানুষ যখন সবার কাছে প্রিয় হয়ে যায় তখন আল্লাহ ও তাকে নিজের প্রিয় করে নিজের কাছে ডেকে নেন। যেমন আব্বু আম্মুকে নিয়ে নিয়েছে ।

আঁচল আর কিছু বলতে পারলো না। আঁচল শেষ তার বাবাকে কান্না করতে দেখেছিলো যখন সে ক্লাস নাইনে। এরপর আজ রাহীকে কান্না করতে দেখছে সে।
আঁচল কাঁপা কাঁপা হাতে রাহীর চোখ মুছে দিতে যেই গালে স্পর্শ করলো আবার রাহীর শরীর কাটা দিয়ে উঠলো।
” কাঁদবেন না। জানেন তো ছেলেদের কাঁদতে নেই।
আঁচলের কথা শুনে রাহী আঁচলের হাত ধরে নামিয়ে দিলো।
” কেন? ছেলেদের কাঁদতে নেই কেন?
” ছেলেদের কান্না মানায় না.
” কেন? ছেলেদের কি মন নেই? ছেলেদের কি আবেগ অনুভূতি নেই। মেয়েদের থেকে ছেলেদের আবেগ অনুভূতিটা একটু বেশি। কিন্তু তারা কখনো প্রকাশ করতে পারে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তারা প্রকাশ করে না। সমাজে যখন একটা নারী কান্না করে তখন তাকে নিয়ে কোনো মজা করা হয় না। কিন্তু একজন পুরুষ কান্না করলেই তাকে নিয়ে মজা করা হয়। তামাশা করা হয়। দেখো ছেলেটা মেয়েদের মতো কান্না করছে। কেন? ছেলেদের কষ্ট হয় না? যেখানে নারী কান্না করলে সহানুভূতি দেখানো হয় সেখানে পুরুষ কান্না করলে তামাশা । কিন্তু নারীরা অল্পতেই কান্না করে পুরুষ তখনেই কান্না করে যখন তার পিঠ দেয়ালে ঠেকে যায়। তবুও সে কোনো সহানুভূতি পায় না।
” হুম।
” জানেন বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন সুইসাইড করছে। যার মাঝে ৭৫% পুরুষ । এর কারণ শুধু একটাই । নারীরা কান্না করে নিজের মনটাকে হালকা করতে পারে কিন্তু পুরুষ সেটা পারে না। কান্না লুকিয়ে হাসতে থাকা যে কতটা কষ্ট সেটা খুব কম সংখ্যক নারী জানে। কিন্তু প্রতিটা পুরুষ প্রতি নিয়ত এই কাজটা করে। যখন সে নিজের মাঝে নিজেই দুমড়ে মুচড়ে যায় তখন সে বাধ্য হয়ে নিজের জীবন থেকে নিজেই নিজেকে মুক্তি দেয়। প্রতিটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো এক সময় একবার হলেও নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে থেকে অনেকেই ফিরে আসতে পারে আবার অনেকে মৃত্যু কে কাছে টেনে নেয়।
” কিন্তু সুইসাইড তো কখনো কোনো সমাধান হতে পারে না তাই না?
চোখের পানি এখনো শুকায় নি তবুও আঁচলের কথায় হেসে দিলো রাহী।
” আপনি এই কথা বলছেন? আপনি নিজেও সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আঁচল আর কিছু বললো না ।
” আল্লাহর দেওয়া শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে জীবন। সেটা মানুষ কিভাবে নিজের হাতে শেষ করে দেয়? আজ খারাপ যাচ্ছে কিন্তু আগামী কাল সূর্য তো উঠতেও পারে। সারাদিন বৃষ্টি ঝড় হওয়ার পর যখন সবাই ভাবে আগামী কয়েকদিন সূর্যের দেখা পাওয়া দায় সেখানে বিকেলেই আবার শরীর পোড়ানো রোদের দেখা মেলে। আজ হয়তো আল্লাহ কষ্ট দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে। কিন্তু তাই জন্য এটা নয় যে সারাজীবন একরকম থাকবে। আমাদের বাবা মা যারা আমাদের পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে তারা আমাদের ভালোবেসে কতো কিছু করে তবে যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি আমাদের কতটা ভালোবাসতে পারেন একবার কল্পনা করা দরকার । তাই আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো পরবর্তী জীবনে যতই কষ্ট আসুক না কেন কখনো সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিবেন না।
” আপনি সব কিছু এতটা সহজ ভাবে কি করে নেন?
” কারণ জীবন আমার সহজ ভাবে সব কিছু নিলে জীবন সহজ হয়ে যাবে আর কঠিন করে নিলে জীবন কঠিন হয়ে যাবে তাই কি দরকার জীবন কঠিন করার।
” হুম। ঘুমাবেন না?
” আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। ওখানে তো চারজনের জায়গা হবে না। আমি না হয় অন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পড়বো।
” আচ্ছা ।
আঁচল চলে গেলো। একটু পরে রাহীও চলে আসলো।
একবার রুমের দিকে উঁকি দিয়ে দেখলো আঁচল চোখ বুজেছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পাশের রুমে চলে আসলো।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে