অতঃপর ভালোবাসি পর্ব-০৩

0
2364

#অতঃপর_ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৩য় পর্ব

আঁচলের দুচোখ দিয়ে অঝোরে পানি ঝাড়ছে। আজ বুঝি তার জন্য তার দুই নিষ্পাপ বোনের জীবনেও আধার নেমে আসে । পৃথিবীতে কেউ ভালো না। সবাই দিনের আলোয় পবিত্র দিন ফুরাইলে বোঝা যায় সবার আসল চরিত্র ।

রাহী দরজার কাছে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখলো আঁচল মাথা নিচু করে আছে। মনে হচ্ছে একটা মূর্তী দাঁড়িয়ে আছে । রাহী আবার বললো- আসতে ভুল হয় না যেন।
দরজার থেকে কিছুটা দূরেই সেই পিচ্চি মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে – তোমার নাম কি?
” আরসি।
” তোমার আপুর সাথে আজ আমার বাসায় এসো। তোমাদের দাওয়াত রইলো কেমন?
রাহী কথাটা বলেই আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে চলে গেলো।
আঁচল ততক্ষণে বের হয়ে আসছে। রাহীর কথা শুনে মনে মনে ভাবছে সবাই ভালো মানুষের মুখোশ পড়া। আর যাই হোক আমার কারণে আমার বোনের জীবনে আধার আসতে দিবো না। কিন্তু আমি কি করবো? দরকার পড়লে তার পায়ে ধরবো তবুও আমার বোনের জীবনে আধার আসতে দিবো না । ওনার যত চাহিদা সব আমায় দিয়েই পূর্ণ করুক তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই।

সারাটি দিন আঁচলের মনমরা হয়ে কেটে গেলো। কি করবে সে? কিছুতেই ভেবে কোনো কূল পায় না। এখন সূর্যটাও ডুবে গেলো। যাবে নাকি যাবে না সেই চিন্তা এখন আবার নতুন করে জায়গা করে নিলো। সে তো পুলিশ যদি না যায় আর যদি আঁচল কে বেআইনি কাজের জন্য এসে ধরে নিয়ে যায়? তবে সমাজ কি বলবে সে চিন্তা সে করে না। কিন্তু তার বোনরা কি করবে? কোথায় যাবে? কি খাবে?
অবশেষে সকল চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দুই বোনকে সাথে নিয়ে রওনা দিলো রাহীর বাসার উদ্দেশ্যে।

দুই বার কলিং বেল বাজানোর পর রাহী এসে দরজা খুলে দিলো।- ওহহ আপনারা? আসুন। কেমন আছো অধরা আরসি?
অধরা বললো- ভালো, আপনি?
” আমি ভালোই আছি। আসো ভিতরে আসো।

ভিতরে এসেই অধরা আর আরসি সোফায় বসে পড়লো। আঁচল পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। – কি হলো আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন? বসুন।
” হুম ।
টিভিটা অন করে অধরা আর আরসি কে দেখতে বললো।
” আপনি আমার সাথে আসুন – আঁচল কে বললো।
আঁচল মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কারণ সে জানে তার সাথে এখন কি হতে যাচ্ছে ।
রাহী আঁচল কে নিয়ে রান্না ঘরে আসলো। আঁচল অবাক হয়ে রাহীর দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে এখানে কেন তাকে নিয়ে আসলো?

” ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস গুলো বের করুন।
রাহীর কথায় আরও অবাক হয়ে তাকালো আঁচল । লোকটা কি বলে? লোকটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি?
” কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?
” আপনি কি বলছেন? আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।
” ফ্রিজ থেকে মুরগির মাংস গুলো বের করুন।
” কিন্তু কেন?
” রান্না করবো। না মানে আপনি রান্না করবেন আমি আপনাকে সাহায্য করবো। খাওয়া করতে হবে তো।
” হুম।
আঁচল আর কথা না বলে রান্না করতে শুরু করলো। রাহীও তাকে সাহায্য করছে আর এদিকে অধরা আর আরসি বসে টিভি দেখছে।

রান্না শেষ করে সবাই মিলে বসে খাওয়া শেষ করলো। আঁচল খাওয়ার মাঝে মাঝে রাহীর দিকে তাকাচ্ছে। লোকটা চাচ্ছে কি? তার চাওয়া তো শারীরিক তৃপ্তি কিন্তু সে আমাদের এভাবে আপ্যায়ন করছে কেন? নিশ্চই এর পিছনে মতলব আছে। নইলে লোকটা কে যতই দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। সে আসলে কি করতে চাচ্ছে? আজকাল তো সিরিয়াল কিলারের অভাব নেই । তবে কি উনিও আমাদের এভাবে খাইয়ে পরে হত্যা করবে?
নানান চিন্তা ভর করলো আঁচলের মাথায়। ভাত যেন তার গলা দিয়ে আর নামছে না। শরীর টাও হিম শীতল হয়ে আসছে।

” হি হলো আপনি খাচ্ছেন না কেন?
রাহীর কথায় ভাবনায় ছেদ ঘটলো। কিছুটা চমকে উঠে বললো- আমি আর খাবো না আমার খাওয়া শেষ।
” অধরা আরসি কেমন লাগছে?
অধরা বললো- খুবই ভালো। আপনি খুব ভালো ভাইয়া।
” আরসি কথা বলো না কেন?
আঁচল এবার বললো- ও অপরিচিত কারো সাথে কথা বলে না।
” আপনার বোন গুলো কিন্তু খুবই মিষ্টি।
আঁচল রাহীর দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো একটু পরেই আমাদের জীবনের শেষ হতে চলছে। মনে মনে বোনদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নিলো। ক্ষমা করে দিও বোন আমার জন্য অকালে তোদের জীবন ঝরে গেলো।

খাওয়া শেষ হতেই আরসি বললো – আপু আমার খুবই ঘুম পেয়েছে।
আরসির কথার সাথে তাল মিলিয়ে অধরাও বললো।
” ওদের যখন ঘুম পেয়েছে তাহলে ঐ রুমটায় ওদের শুইয়ে দিন।
আঁচল, অধরা আর আরসি কে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রাহী টিভি দেখছে। টম জেরি কার্টুনটা খুবই প্রিয় তার। প্রতিটি এপিসোড তার মুখস্থ। তবুও সে দেখে। এক অন্য রকম আনন্দ কাজ করে।

প্রায় ত্রিশ মিনিট পরে আঁচল রাহীর সামনে এসে দাঁড়ালো। রাহী লক্ষ করলো আঁচলের চোখ লাল হয়ে আছে । – আপনার চোখ গুলো এতো লাল হলো কিভাবে?
” আরসির আঙুল লেগে ।
” ওহহ। ছাঁদে যাবেন?
আঁচল কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো।

দুজনেই ছাঁদে । চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাহী একটু সামনে আর আঁচল পিছনে ।
আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে রাহী। হঠাৎই সে খেয়াল করলো আঁচল এসে তার পা জাপ্টে ধরে কান্না করছে।
” কি করছেন আপনি এসব?
” আপনার যত চাহিদা মেটানোর ইচ্ছে আপনি আমায় দিয়ে মেটান। আপনি যেভাবে বলবেন আমি সেভাবেই আপনাকে প্রশান্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো। কিন্তু প্লিজ আমার বোনদের কোনো ক্ষতি করবেন না। প্লিজ।
” আপনি উঠুন। উঠুক বলছি।
” আপনি প্লিজ তাদের কোনো ক্ষতি করবেন না।
” আচ্ছা করবো না। এবার পা ছাড়ুন।

আঁচল পা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। রাহী পকেট থেকে টিস্যু বের করে এগিয়ে দিলো আঁচলের দিকে। – কান্না করলে মন ফ্রেশ থাকে তাই বলে এতো কান্না করা ঠিক না।

আঁচল কিছু বললো না। টিস্যু দিয়ে চোখ মুছলো।
” আচ্ছা একটা কথা বলি? আমার খুবই জানতে ইচ্ছে করছে
” জ্বি বলুন।
” আপনি ভেবেছিলেন আমি আপনার বোনদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করবো তাহলে ওদের নিয়ে আসছেন কেন?
” আপনি পুলিশ যদি আমাদের কোনো ক্ষতি করেন তাই।
” আমি পুলিশ আপনাকে কে বললো?
” আপনি তো গতকাল রাতে বলেছিলেন।
আঁচলের কথা শুনে রাহী একটু শব্দ করেই হেঁসে দিলো।
রাহীকে হাসতে দেখে আঁচল অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ।
” আপনি হাসছেন কেন?
” আমি ওসব পুলিশ টুলিশ কিছু না। ঐদিন আপনাকে বাঁচানোর জন্য উপস্থিত বুদ্ধির প্রয়োগ করেছি। আচ্ছা ভালো কথা, আপনি যদি দেহকর্মী হয়ে থাকেন তাহলে কেন গতকাল তাদের থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিলেন? তারা তো আপনাকে মোটা অংকের টাকা দিতো।

আঁচল মাথা নিচু করে বললো- আমি মাত্র সাত দিন হলো এসব নোংরা কাজে নিজেকে জরিয়েছি। তাই আমার সহ্য করার ক্ষমতা এখনো এতটা হয় নি যে চারটা হিংস্র খাদকের হাতে নিজের শরীর টা সপে দিবো।
” যে কাজ আপনার এবং আপনার পরিবারের খাদ্য যোগান দেয় সে কাজকে বাজে বলছেন? বাহ্
” যেটা বাজে সেটাকে তো বাজেই বলবো। পৃথিবীতে বাঘ সিংহ ভাল্লুক এদের থেকে যে বড় খাদক পুরুষ জাতি তা এই কদিনে বুঝতে পেরেছি। চাহিদার টানে কাছে টানে কিন্তু যে তার চাহিদা মেটাচ্ছে তার কতটা কষ্ট হচ্ছে সেটার দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। আর সে খেয়াল করবেই বা কেন? সে তো এমনি এমনি আসে নি টাকা দিয়ে নিয়ে আসছে এতে সে বাচুক বা মরুক তাতে তার কি। তার টাকা উসুল হলেই হলো।

চারদিকের আবছা আলোয় আঁচলের চোখের পানি চকচক করছে।
” এই বাজে পথটা বেচে নেওয়া টা কি খুবই জরুরি ছিলো?
এবার আঁচল মাথা তুলে রাহীর দিকে তাকালো।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে