#গল্প_পোকা_চিঠি_প্রতিযোগিতা_২০২০
চিঠি নং:- ০২
[খামের উপরে লেখা :- আমার এই চিঠি ডাকঘরে যাবে না। হয়তো মৃত্যুভয়ে কেউ ছুঁবে ও না। তবুও লিখছি…! যদি কোন সাহসী ব্যক্তি পারে, সে যেন সুহাসের আম্মুর ঠিকানায় আমার চিঠিটা পাঠিয়ে দেয়।]
১৩-০৮-২০২০
অজ্ঞাতপাড়া, অচিনপুর।
প্রিয় অর্ধাঙ্গিনী,
ঘড়ির কাটায় ঠিক বারোটা বাজে এখন। রাত বারোটা। তবু অন্ধকার এই গৃহে আমার সেটা অনুভব হয় না জানো? আমার কাছে রাতদিন সমান মনে হয়। হবেই বা না কেন? সেই যে বাইরের দরজায় খিল এঁটে দিয়ে চলে গেলে আর তো এক মূহুর্তের জন্যেও আকাশ দেখিনি আমি। জানো, আমার প্রায় মনে হয় এই বুঝি দরজার বাইরে কারো পদধ্বনি শুনতে পাবো। এই বুঝি কেউ চেঁচিয়ে বলবে, “অফিস যাওয়ার সময় হয়েছে যে কারো কী খেয়াল আছে?” কল্পনায় শুনতে পাওয়া সেই শব্দেরা আমার কর্ণকুহরে পৌঁছায় না। আমি অধির আগ্রহে তবু অপেক্ষা করি। দেয়ালে হেলান দিয়ে মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রই। যেন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এই চার দেয়ালে আটকে আছে সেও। জীবনচক্র যেন এই গণ্ডির ভিতরেই ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে ঝুলে থাকা ফ্যানের মতো। জানো, সুহাসের আম্মু? এই সংসার নিয়ে যখন ভেবে মরতাম। রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতাম। তখন আমার মনে হতো প্রিয়জনদের জন্যেই তো করছি। তোমার জন্য আর আমাদের সুহাসের জন্য। আমার খারাপ সময়টাতে আর কেউ না থাকুক তোমরা ঠিক পাশে থাকবে। কিন্তু, দেখো.. আমাকে ভুল প্রমাণিত করে দিয়ে তোমরা দূরে চলে গেলে। মরণব্যাধি ভাইরাসের সাথে আমাকে যে একাই লড়তে হচ্ছে। এই এতটুকুন ভরসা দেওয়ার মতো কেউ নেই আমার। কেউ নেই যে বলবে, “একদম চিন্তা করবে না, ক’দিন বাধেই সুস্থ হয়ে উঠবে তুমি।” জানো পল্লবী? গরম পানি কিংবা লেবুর চা বানাতে গিয়ে আমার হাত কেঁপে উঠে। শরীরে জোর পাই না তবু, নিজের জন্য খাবার বানাতে হয়। প্রথম প্রথম খুব চেষ্টা করেছি। আমি নিজেকে ভরসা দিতাম, তোমরা ঠিক ফিরে আসবে। তোমাদের জন্য আমাকে সুস্থ হতেই হবে। গত দুইদিন ধরে আর কোনো চেষ্টা করছি না। হাল ছেড়ে দিয়েছি আমি। কাদের জন্যেই বা বেঁচে থাকবো বলো? বেঁচে গিয়ে তোমাদের স্বার্থপর বানানোর ইচ্ছে নেই আমার। তার চেয়ে বরং…। তোমরা চলে গেলে আজ ৭ দিন হলো! ভীষণ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে জানো? হয়তো আর বেশি লিখতে পারবো না। প্রিয় সুহাসের আম্মু, “মৃত্যু আমার প্রাণ কেড়েছে সপ্তাহ খানেক পরে। তার আগেই মরেছি আমি, যেদিন গেলে ছেড়ে।” শেষ বেলায় একটাই অনুরোধ, আমার সুহাসকে দেখে রেখো। নিজের ভালোর জন্য আমায় ছেড়ে গেলে, ওকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ…
ইতি,
মৃত্যুপথযাত্রী