#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৪৯
সরি আসলে আমি এমনটা করতে চাইনি।
আপনি আমার ইচ্ছে ছাড়া কিছু করবেন না বলেও।
স্নেহা ওটা এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে বিলিভ মি। তোমার কি আমার উপর বিশ্বাস নেই আমি কি এতো টাই খারাপ।
আমি ঘুমাবো।
বলেই আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। বুকের ভেতর টা হাতুড়ি পেটা হচ্ছে মনে হয়। আদ্রর সামনে থাকতে পারছি না ওকে তো আমি ও ভালোবাসি কিন্তু এমন হয় কেন? এই কেমন অনুভূতি না দূরে থাকতে পারি আর না কাছে। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের আবার বারান্দায় চলে গেছে।
আমি আর উঠি নাই ওইভাবে ঘুমিয়ে পরেছি যখন চোখ খুললাম তখন সকাল। তাকিয়ে আমার চোখ চরকগাছ।
আদ্র আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে। রাতে তাহলে আদ্র এভাবে ছিলো ও কি কিছু করেছে আমার সাথে চমকে নিজেকে দেখলাম না জামা ঠিক আছে তার মানে কিছু করেনি।
একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কি অপূর্ব লাগছে দেখতে নিষ্পাপ লাগছে। আমি হাত বাড়িয়ে আদ্রর গালি স্পর্শ করলাম কেন করলাম জানিনা। করতে ইচ্ছে হলো কেন জানি হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি হঠাত করে চোখ মেলে তাকাল আদ্র আমি তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম। কি লজ্জা?
আমি কিন্তু অনেকক্ষণ ধরে জেগে ছিলাম।
আদ্রর কথায় চমকে ওর মুখের দিকে তাকালাম। আদ্রর মুখে মিটিমিটি হাসি।
তাহলে ঘুমের ভান করে ছিলেন?
রেগে বললাম আদ্র কে।
হ্যাঁ দেখলাম তুমি কি করো?
আপনিতো খুব অসভ্য লোক আর আমাকে ভাবে জাপ্টে ধরেছেন কেন ছাড়ুন?
ছটফট করতে লাগলাম।আদ্রর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম।
আদ্র ও উঠে বসলো তারপর বললো,,
জাস্ট জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছি। এটা আমি করবোই প্রতিদিন তোমার ভালো লাগলে লাগবে না লাগলে না লাগবে।
বলে আবার ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পরলো আমি হাঁ করে তাকিয়ে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম। তারপর বিছানায় কোনায় বসে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলাম কি করবো বুঝতে পারছি না।
বাইরে যাব কিনা ভাবছি কেউ তো আমাকে সহ্য করতে পারে না কারণ কাছে যাব ভাবতে ভাবতে বারান্দায় গেলাম।
বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি কিছু ছোট ছোট বাচ্চা রা স্কুল ড্রেস পরে বাবা মায়ের হাত ধরে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে ভাবছি কালকে ও আমার পাশে কেউ ছিলো না এই শহরে একা ছিলাম পরিচয় হীন আজকেই আমার পরিচয় হলো আদ্রর স্ত্রী যার এতো বড় বাড়ি আছে। এতো ধনী পরিবারের বউ আদ্র ধনী হবে আগে ভেবেছিলাম কিন্তু এতটা ভাবেনি।
দুদিন আগেও আমি থাকার জন্য রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম আজকে এত বড় একটা বাড়িতে আমার জায়গা হল। এসব কি সত্যি আমার ভাগ্য ভালো বলে পেলাম নাকি সবই মরিচিকা। এত তাড়াতাড়ি পাওয়া সুখ কি আমার কপালে সইবে।
অজানা ভয় পেতে লাগলাম ভেতরে ভেতরে। আদ্র তো আমাকে খুব ভালোবাসে আর আমি ভালোবাসি তাহলে এত ভয় কেন পাচ্ছি। কিন্তু ওর ফ্যামিলি পরিবার কেউ তো আমাকে মেনে নেয়নি। মেনে নেয়নি মানাতেই তো হবে। দরজা খুলে বাইরে এলাম।
কেউ উঠে নি শুধু কাজের লোক যারা তাদের কাজ করছে আমার দিকে একবার তাকিয়ে নিজেদের কাজ করতে লাগলো। আমার হঠাৎ রান্নার করার ইচ্ছে হলো একজন ডেকে জিজ্ঞেস করলাম।
সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল আমি নিজের যেতে বললাম,,
আপনি কিচেনে গিয়ে কি করবেন?
আমি বললাম,, ” রান্না করবো?”
কি বলেন আপনাকে কেউ এমনিতেই সহ্য করতে পারে না আপনি রান্না করলে কেউ খাবো না।
সহ্য যেন করতে পারে তাই তো করতে চাইছি প্লীজ হেল্প করেন বোন।
মেয়েটার বয়স খুব বেশি না। বোন বলাতেই গলে গেল আর রাজি হয়ে গেল রান্না ঘরে নিয়ে গিয়ে সব বুঝিয়ে দিলো রান্না করার লোক আছে তাছাড়া মাঝে মাঝে আদ্রর মা রান্না করে বা ওর চাচি। মেয়েটা সব দেখিয়ে দিল আমি রান্না করতে লাগলাম মনোযোগ দিয়ে শশুর বাড়ী প্রথম রান্না ভালো করে করতে হবে।
রান্নাঘরে কাজ শেষ করে রুমে চলে এলাম।কেউ উঠে নি রুমে এসে আদ্রকে দেখলাম না। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হবো তাই গিয়ে দেখি লক করা আদ্র হয়তো একটু পর আদ্র বেরিয়ে এসে বলল,,
” কোথায় গিয়েছিলে?”
“আমি রান্না করেছি।”
আদ্র হা করে দিকে তাকিয়ে আছে।
কিভাবে কখন আর রান্না কে করতে বলেছে আম্মু তোমাকে করতে দিলো।
উনী তো ছিলেন না।
উনি বলছো কেন আমার আম্মু এখন তোমার ও আম্মু ওকে আম্মু বলবা। আর ছিলেন না কেউ তোমাকে রান্না করতে দেখেনি।
না কেউ তো ছিলো না।
ওহ যাক ভালোই করেছো রান্না ভালো হলে তোমার প্রতি সবাই খুশি হবে।
বলেই বিছানায় গিয়ে বসলো।
আমি কিছু না বলে ওয়াশ রুমে চলে গেলাম।
খাবার টেবিলে পরলো হইচই। খাবার খেয়ে সবাই মুগ্ধ হয়ে প্রশংসা করছিল আমার খাচ্ছিল। আদ্রর বাবা বলল,,
আজকে তো খাবারের টেস্ট একদম আলাদা হয়েছে আগে তো এমন হতো না। কে রান্না করছে খেতে খুব ভালো হয়েছে। কতোদিন পর এতো ভালো গ্ৰামের খাবার খাচ্ছি।
আমি তাদের প্রশংসা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে ছিলাম আদ্র ও হঠাৎ ওই মেয়েটা নাম ফারিয়া ফট করে বলে দিলো। রান্না আমি করেছি আর শেষ খাওয়া দাওয়া অফ করে সবাই অগ্নি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো আমি সবার তাকানো দেখে ভয়ে ঢোক গিললাম,
ঘাড় বাঁকিয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম আদ্রর ও সবার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই খাওয়া ছেড়ে উঠে গেল চোখের পলকে। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি তাদের যাওয়ার দিকে। আদ্রর মা বসে ছিলো তিনি কাঠ কাঠ গলায় বললো,,
” নেক্সট আর কখনো যেন তোমাকে আমার রান্না ঘরে ঢুকে রান্না করতে না দেখি। তোমার মতো চরিত্র হীন লোভী মেয়ের হাতের ছোঁয়া জিনিস আমরা খেতে চাইনা। এখানে আছো জাস্ট আদ্রর জেদের জন্য নাহলে তোমার মুখ জীবনে দেখতাম না। তোমার জন্য সবার খাওয়া নষ্ট হলো।”
মাথা নিচু করে বসে আছি চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
আমি হুংকার দিয়ে উঠলো,,
” আম্মু তুমি এভাবে স্নেহাকে অপমান করছো কেন? আর এতো বাজে কথা কেন বলছো? এসব বললে…
চুপ।
আদ্রর মা চিৎকার করে উঠল।
তোমার কথায় একে বাসায় এলাও করেছি তাই বলে ওকে আমার সংসার ওরে ঢুকাতে এসো না।
বলেই গটগট করে চলে গেল।
আদ্রর আমার কাছে এসে বললো,,
প্লীজ কান্না করো না তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না। আম্মু এমন কেন করছে বুঝতে পারছিনা কিন্তু খুব তারাতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো আম্মু খুব ভাল।
আমার জন্য সবার খাওয়া নষ্ট হলো।
বাদ দাও আমি খাব আর কেউ না খাইলেও। আমার বউয়ের হাতের রান্না শুধু আমি খাব।
বলে খেতে লাগলো।
ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি আদ্রর খাওয়ার দিকে এই মানুষটা আমাকে এতো কেন ভালবাসে এর ভালোবাসার যোগ্য কি আমি। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে। আদ্র তৃপ্তি করে খাচ্ছে যা দেখে আমার প্রানটা ভড়ে যাচ্ছে আদ্র ঘুরে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,
প্রথম দিন তো ঝাল খাইয়ে মারতে বসছিলে আজ তো ঝাল ঠিক আছে। অসাধারণ হয়েছে ইয়ামি।
বলে আবার একটু খেয়ে আমাকে খাইয়ে দিলো।
কাঁদছো কেন?
কিছু না বলে আদ্রর হাতে খেতে লাগলাম।এই একজন মানুষ পাশে থাকলে আর কাউকে দরকার নেই আমার।
.
বিকেলে আদ্রকে নিয়ে সেই বাড়ি এলাম আর আমার জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে এলাম। আদ্র আমাকে জোর করে শপিং মলে নিয়ে গিয়ে থ্রিপিস শাড়ি কিনে দিলো না করলাম তবুও শুনলো।
এই জামা গুলো না কিনলে ও চলতো শুধু শুধু কিনে টাকা খরচ করলেন।
টাকার কথা তোমাকে ভাবতে হবে না সেটা আমাদের অনেক আছে।
হুম জানি কিন্তু আপনার নিজের নেই।
মানে।
ঠিকই তো বললাম এসব তো আপনার বাবার টাকা নিজের তো না তাই এতো খরচ না করাই ভালো।
খোটা দিচ্ছো খুব তারাতাড়ি নিজেই টাকা কামানো শুরু করবো দেখো। বউ কে নিজের টাকায় ই খাওয়া বো।
আদ্র রাস্তায় একহাতে আমার বাম হাত শক্ত করে ধরে নিলো।
বাসায় এলে সবার কালো মুখ দেখে মাথা নিচু করে আদ্রর সাথে রুমে চলে এলাম।
অন্তরা পরদিন বাসায় এলো আমার সাথে দেখা করতে।
তুই এখানে?
তুই তো ফোন রিসিভ করিস না তাই দেখা করতে চলে এলাম।
ফোন যে কোথায় আছে?
বুঝছি নতুন নতুন বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছ আমাকে আর কতো মনে থাকবে। সবাই তোকে খুব ভালোবাসে তাইনা।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব খুলে বললাম ওকে।
চিন্তা করিস না ভাইয়া সবাইকে মানাবে দেখিস। আর একটা খুশির খবর আছে।
কি?
নিশাত বিয়ে ক্যানসেল করে দিয়েছে? আর আমি বাসায় হৃদয়ের কথা বলে দিয়েছি।
বলিস কি সবাই কি বলেছে?
সবাই তো রেগে ফায়ার হয়ে গেছিল ভয়ে আমি শেষ কিন্তু নিশাত ভাইয়া সামলে নিয়েছে সবাইকে অনেক কষ্টে মানিয়েছে আব্বু হৃদয়ের পরিবার কে আসতে বলেছে।
সত্যি।
হুম এখন ওর পরিবার কি বলবে সেই চিন্তায় আছি।
আল্লাহ সব ভালো করবে দেখিস।
হুম দোয়া করিস।
আদ্র বাসায় নাই এখন। আমাদের কথার মাঝে চলে আসে আর অন্তরাকে দেখে অবাক হয় তারপর গল্প করে আমি অন্তরা কে কিছু খেতে দিতে পারিনা আসলে কারো সাথে আমার কথা হয়না।
আদ্রর খাবারের ব্যবস্থা করলো অন্তরা সন্ধ্যায় দিকে চলে গেল।
বউ,
আমি বিছানায় বসে ছিলাম আদ্র বিছানায় বসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল। আমি চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকালাম,,
উফ বউ এমন করে তাকাও কেন একটু রোমান্টিক হয়ে তাকাতে পারো না।
নাহ।
কি আনরোমান্টিক বউ পেলাম। খালি চোখ বড় করে ভয় দেখায় একটু ও রোমান্স করতে দেয় না। কি দুঃখ আমার কপালে যে কতো দুঃখ আছে সামনে আল্লাহ ই জানে।
ফালতু কথা বার্তা বাদ দিবেন আপনি।
বউ একটা চুমু খায় তোমাকে প্লীজ।
আদ্রর কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। হতদম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে আদ্রর কথা বলেই একদম আমার মুখের কাছে চলে এলো।
কি সব বলছেন দূরে যান? আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করবেন না বলেছিলেন।
একটা চুমু খাব জাস্ট ঠোঁটে আর কিছু করবো না তো।
ফাজিল লোক তো আপনি। সরুন আমার কাছে থেকে।
প্লীজ। আমার খুব ইচ্ছা করছে।
আদ্রর এমন লজ্জা হীন কথাবার্তা শুনে আমার রাগ লজ্জা দুটোই হচ্ছে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরানোর জন্য হাত উঠানোর আগেই আদ্রর আমার হাত ধরে নিলো ঢোক গিলে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার চোখে মুখে ভয়। আদ্রর চোখে নেশা নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আদ্রকে একদম অন্যরকম লাগছে।
চলবে♥️