অচেনা শহর পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
3427

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩২

আদ্র আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। তারপর দরজাটা আটকে কঠিন চোখ করে আমার দিকে তাকায় আর বলে,, তোমার রুম কোনটা?
আমি বিষ্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছি না।হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। আদ্র এখানে কি করছে? এখানে এলোই বা কিভাবে?
আদ্রর কথায় আমার ঘোর কাটে।

“আপনি এখানে কি করছেন? আমার বাসায় কেন এসেছেন হাত ছারুন। এটা কেমন অসভ্যতামি। আবার আমার রুম জিজ্ঞেস করছেন।”
একদমে কথা বলে থামলাম। হাত ছারানো চেষ্টা করছি আর কথা বলছিলাম। হঠাৎ আদ্রর দিকে তাকিয়ে আমার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠলো।
ভয়ংকর রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে আদ্র আমার দিকে।যেন চোখ দিয়েই গিলে খাবে আর একটা প্রশ্ন করলে আমি আদ্রর এমন রাগী চেহারা দেখে চুপসে গেলাম।

শুকনো একটা ঢোক গিললাম,,
আদ্র আমার হাত শক্ত করে ধরে নিজেই রুম খুজতে লাগলো। প্রথমে বাবার রুমের কাছে গেল সাথে সাথে আঁতকে উঠলাম,, আর মৃদু চিৎকার করে বললাম,,

“আরে আরে কোথায় যাচ্ছেন এটা বাবার রুম।”

আদ্রর রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,, ” এতোক্ষণ মুখ অফ রেখে এখন বলার কি ছিলো আমি তোমার বাবার কাছেই যাব। তার সাথে আমার কথা আছে।”

বাবার সাথে কথা আছে মানে কি বাবাকে কি বলবে আদ্র,,

“কি সব বলছেন বাবার সাথে কথা আছে মানে বাবাকে কি বলবেন?”

শয়তানি হাসি দিয়ে,,,,”কি বলবো গেলেই দেখতে পাবে।”

“না না প্লিজ আমার রুমে চলুন। ওইদিকে যাবেন না।”

বলে আমি আদ্রর হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলাম কিন্তু আদ্র নরছে না আমি টানছি কিন্তু নরাতে পারছি না।
অসহায় মুখ করে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“কি হলো আসুন।”

“বললাম না তোমার বাবার সাথে আমার কথা আছে।”

“প্লিজ না।আর তাছাড়া বাবা তো কথা বলতে পারে না। আপনি কি কথা বলবেন বাবার সাথে। অযথা…

“সেটা আমি বুঝে নেবো।”

বলেই আদ্র আমার হাত ধরে টেনে বাবার রুমে প্রবেশ করে। শত চেষ্টা করেও তাকে থামাতে ব্যর্থ হয়।
বাবা কথা বলতে না পারলেও বুঝতে পারে সব আদ্রর সাথে আমাকে দেখলে কি ভাববে ভেবেই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
শক্ত করে হাত ধরে আছে নিজের সব শক্তি দিয়ে হাত ছুটাতে চাইছি পারছিনা।
রুমে পা রাখবো এমন সময় আদ্র থেমে যায়। আর আমার দিকে তাকায়। আস্তে করে বলি,

“প্লিজ যাবেন না বাবাকে অন্যরকম ভাববে। আর বাবা কষ্ট পাবে‌।”

আদ্র আমার একদম কাছে এসে মাথা নিচু করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে ,,,
“সরি সুইটহার্ট তোমার কথাটা রাখতে পারবোনা।এটা তোমার পার্নিশমেন্ট আমার কথার অবাধ্য হওয়ার।”

আদ্রর মুখে সুইটহার্ট শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তার উপর এভাবে এতো কাছে আসাতে আমার হার্টবিট বেড়ে যায়। হতদম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আদ্র কথা শেষ করে সরে দাঁড়ায়,,,
“তবুও নিজেকে সামলে বলি,,,,,” এবারের মতো ক্ষমা করেন আই প্রমিজ আর কখনো এমন করবো না সারাদিন আপনার সাথে কথা বলবো প্রমিজ।”

“তোমাকে বিশ্বাস করতে পারছি না।”

“এইবারের মতো বিশ্বাস করেন না।”

“এতো কিউট ফেস করে বলতে নেই আমি মানা করতে পারি না।যাও এবার মাফ করলাম কিন্তু তাঁর জন্য…

“জানি জানি শর্ত দিবেন তো আমি সব শর্ত রাজি।”

“বাব্বাহ ওকে চলো তোমার রুমে যাই। তারপর বলি। আমি খুব টায়ার্ড তোমাকে।”

আমি তারাতাড়ি আমার রুমে এলাম আদ্র ও পেছনে এলো।বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে দাঁড়ালাম রুমে এসে কি ডেন্জারাস ব্যাপার।

আদ্র রুমে এসেই চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো বিছানায়।
আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি বিছানায় শুয়ে থাকা আদ্রর দিকে।

“একি আপনি শুয়ে পরলেন কেন?”

চরম অবাক হয়ে বললাম,,

“দেখ ডোন্ট ডিস্টার্ব মি ওকে। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। তোমার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারি নাই। এখন ঘুমাবো আর তোমার শর্ত হলো আমার জন্য খাবার তৈরি করা ঘুম থেকে উঠে আমি ব্রেকফাস্ট করবো। তৈরি থাকে যেন।খুব নাইট।”

কিছু বলতে গেলে বাবার রুমে যাবে বলে হুমকি দেয়।আমি ভয়ে চুপ করে যায়।
আদ্র চোখ বন্ধ করে আছে আর আমি অসহায় মুখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি হবে আর একে কিছু বললে আবার বাবার কাছে যাবে থাক ঘুমাক আমি বেরিয়ে এলাম রুমে থেকে।

বাইরে এসে ভাবতে লাগলাম কি খেতে দেওয়া যায়‌ বলেছে যেহেতু না খেয়ে যাবেনা।ভাত তো শেষ রানীকে নিয়ে খেয়েছি। এই যন্ত্রনার থেকে কিভাবে যে রক্ষা পাবো আল্লাহ জানে।এতো দিন ফোনে সীমা বদ্ধ ছিল আজ বাসায় চলে এসেছে। আবার খাবার ও চাইছি ।রাগে দুঃখে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। এখন আবার রাঁধতে হবে লাকসাহেবের জন্য অসহ্য।

ভাজি ও নাই।আবার রান্না করতে হবে নয়টা বাজে রান্না বসাতে হবে আবার রান্না ঘরে ঢুকলাম।কি রাধবো কপি ছাড়া তো কিছুই নাই। আর দুইটা আলো আছে। তার উপর তেল ও নাই। কপি ভাঁজতে পারতাম কিন্তু তেল ছাড়া কিভাবে ভাজবো।
এইগুলো কি ওনার মুখে রুশবে না রুশলে নাই‌। আমার কি আমি কি ওনাকে দাওয়াত করেছি নাকি।করিনি তো যা আছে তাই দেবো। কিন্তু তেল আনতে হবে পঞ্চাশ টাকা আছে এখানে থেকে ওষুধ ত্রিশটাকায় এনে আর টাকায় তেল নিয়ে আসি।

বাসা থেকে বেরিয়ে বিশটাকার তেল নিয়ে এলাম।
ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে এসে দেখি আদ্র জেগে গেছে আমাকে দেখেই সামনে এসে দাঁড়ালো,,

ভ্রু কুঁচকে,,,”কোথায় গিয়েছিলে?”

“সেটা না জানলেও চলবে আপনার খাবার দরকার সেটা পেলেই হলো কোথায় গিয়েছিলাম জেনে কি করবেন। আর আপনি না ঘুমালেন এতো তারাতাড়ি ঘুম শেষ।”

“না তুমি আবার রান্না করছো কিনা দেখতে জেগে গেলাম। তোমার তো কথার দাম নাই ।”

“আমার কথার দাও আছে ওকে।”

“তাই তাহলে কথা দিয়ে ও রাখলে না কেন?”

কিছু বললাম না আদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম রান্না ঘরে।

আদ্র পেছনে এসে আবারো জিজ্ঞেস করল,,” বললে না।”

“আপনার খাবারের ব্যবস্থা করার জিনিস আনতে।”

বলেই তেলের বোতল দেখালো।আদ্র আর কিছু বলল না।সরে দরজার কাছে চলে এলো।
দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আমার রান্না দেখতে লাগলো,,
হঠাৎ পেছন তাকিয়ে দেখি আদ্র এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অসস্থি লাগছে আমার।

“আপনি এখন ও দাঁড়িয়ে আছেন কেন? রুমে যান রান্না শেষ হলে থাকবো নি।”

“নো আমি এখানেই থাকবো। তোমার সাথে।”

আদ্রর এমন কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম,,

“কি বললেন?”

আদ্র কি বলছে বুঝতে পেরে থতমত খেয়ে যায়।

“কিছু না।”

“কিন্তু আমি তো স্পস্ট…

“কথা বাদ দিয়ে রান্না শেষ করো আমার খিদে পেয়েছে। আর আমি এখানে থেকেই তোমার রান্না করা দেখবো । তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না হতে পারে রেগে খাবার বাজে করে রান্না করলে আমাকে কষ্ট দিতে।”

কটমট চোখে তাকালাম আদ্রর দিকে আদ্রর সেদিকে খেয়াল নেই সেতো তার প্রিয়সীকে দেখতে ব্যস্ত। রেগে মনে মনে হাজার টা গালি দিলাম তারপর কাছে মন দিলাম। আদ্র দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে স্নেহার কাজ দেখছে মুগ্ধ হয়ে।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই আমি খাবার নিয়ে এলাম।আলু ভর্তা, ফুল কপি ভাজি করেছি।
আদ্রর সামনে দিতেই একবার আমার দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। খাবার খাচ্ছে আর একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে। খাচ্ছে কিন্তু তার থেকে বেশি পানি খাচ্ছে। ভ্রু কুঁচকে তার খাওয়া দেখছি।আমি পাশে দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ খেয়াল হলো আদ্রর চোখ মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে।

“আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে আপনি ঠিক আছেন তো‌।”

কথা বলল না আবার পানি চাইলো হাত বাড়িয়ে গ্লাস বাড়িয়ে দিলো জগ থেকে পানি গ্লাসে রাখলাম।
পানি খেয়ে নিলো।
আদ্র আবার খেতে লাগলো আচ্ছা আদ্র জ্বাল খেতে পারে তো আমিও খুব একটা জ্বাল খেতে পারি না। কিন্তু আজকে রান্না সময় আদ্রর ওইভাবে নজর রাখাতে মরিচের গুঁড়া বেশিই পরে গেছিলো।
কিন্তু অতটা ও টাও না আদ্র জ্বাল খেতে পারে হয়তো তাই আর চিন্তা করিনি। কিন্তু এখন তো দেখছি ইনি আমার সোমান জ্বাল ও খেতে পারে না।

“আপনার কি জ্বাল লাগছে বেশি।”

“মিষ্টি কিছু হবে প্লিজ আমি জ্বাল খেতে পারিনা।”

যা ভয় পেয়েছিলাম তাই হলো।
” আগে বলবেন না আর এতো জ্বাল লেগেছে তাও কেন খেলেন বাসায় তো মিষ্টি জাতীয় কিছু ই নাই‌। এখন কি হবে।”

রুনা আপুর থেকে নিয়ে আসি ভেবেই ছুট লাগালাম। তারাতাড়ি আপুর বাসায় গিয়ে কলিং বেল চাপলাম।
রানী দরজা খুলে দিল।
ওর কাছে চাইলাম তারাতাড়ি করে এনে দিতে বললাম।

আমাকে এমন অস্থির দেখে আপু জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। কিছু না বলে চিনি নিয়ে তারাতাড়ি চলে এলাম।আদ্রর অবস্থা কাহিল।
পানি খাচ্ছে আর পাইচারি করছে।
দৌড়ে গিয়ে চিনি তার হাতে দিলাম। আদ্রকে সহ্য করতে না পারলে ও এই অবস্থা দেখে সত্যি খারাপ লাগছে।
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩৩

চিনি পানি খেয়ে ঝাল কিছুটা কমাতে পেরেছে। চোখ মুখ এখন ও লাল হয়ে আছে। এমন ঝাল হয়েছে তাহলে খাওয়ার কি ছিলো কিন্তু আমি মনে মনে এখন একটা জিনিসই ভাবছি আর আনন্দ পাচ্ছি।
আমাকে জ্বালানির শাস্তি এটা হু এতোক্ষণ খারাপ লাগাটা নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। আদ্রর ঝাল দেখে এখন আমার পৈশাচিক আনন্দ হচ্ছে।
বাসায় এসে কি জ্বলানিই না জ্বালালো এ জন্য ই এমন হলো।

“এভাবে হাসলো কেন? আমার কষ্ট দেখে কি তোমার আনন্দ হচ্ছে।”
আদ্র বিষ্ময় চোখ তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,

আদ্রর প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় আমি ভেবে ভেবে হেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি‌।ভয় না পেয়ে সাহস সঞ্চয় করে বললাম,,
” তা তো ভাব‌ই আমাকে জ্বালানোর শাস্তি পাচ্ছেন যে। আনন্দ হবে না আবার‌”

আমার কথা শুনে আদ্র চোখ মুখ কঠিন করে তাকালো।
আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছি।

ভ্রু কুঁচকে সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল,,,
“এই তুমি আবার আমাকে ইচ্ছে করে এমন জ্বাল খাবার দাও নি তো? আমার তোমাকে সন্দেহ হচ্ছে সত্যি করে বলো।”

“সত্যি আপনাকে আমার একটা শিক্ষা দিতে ইচ্ছে হয়েছিল কিন্তু এই বিষয়টা মাথায় ছিলো না থাকলে আর ও বেশি ঝ্বাল দিতাম কিন্তু ফাটা কপাল আমার আমি এইসব ভাবিই নাই একাই এমন ঝাল হয়েছে। আর আমার কাজ করে দিয়েছে।”

আদ্র রেগে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

” কি বললে তুমি ইচ্ছে করে এমন করতে?”

“হ্যা করতাম এখানে এসে এমন হেন‌ওস্তা করার জন্য।ভয় দেখানোর জন্য আর আমার তো আপনাকে আর…

আদ্রকে বিছানায় ছেড়ে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে চমকে গেলাম সাথে আমার কথাও অফ হয়ে গেল। কঠিন মুখ করে আসছে যেন চোখ দিয়েই ভষ্স করে দেবে। আমি ভয়ে আমতা আমতা করে বললাম,,

“আ–পনি আমার দিকে এভাবে আসছেন কেন?”

এগিয়ে আসতে আসতে,,,”কি বললে তুমি কি করতে আমার সাথে?”

আমি হাত বাড়িয়ে বললাম,, “থামুন আর এগুবেন না। আমি কিছু বলি নি।”

“তাই কিছু বলো নি।”

“না মানে সরি।”

আদ্র কিছু বলল না আমি পিছন ফিরে দেখলাম দেয়ালে লেগে গেছি। আদ্র আমার গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরল এটা দেখে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।

“কি করছেন সরুন আমাকে টাচ করতে মানা করছিলাম।”

এটা শুনে আদ্র রেগে গেলে কিন্তু আমাকে কিছু বলল না একটু পিছিয়ে গেল এখন আর আমার শরীরের সাথে তার টাচ লাগছেনা। আমি ভাবছি চলে যাবে হয়তো কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে আরো দুইপা এগিয়ে এসে দেয়ালের দুপাশে হাত রেখে আমার সাথে লেপ্টে দাঁড়ালো।
বিষ্ময়ে আমার মুখটা হা হয়ে গেল।

কি ভাবলাম আর কি হলো এতোক্ষণ একটু লেগেছিলো এখন একটু না একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়েছে।অবাক হয়ে আদ্রর রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
আদ্রর দৃষ্টি গভীর আমি তাকিয়ে ই একটা ঢোক গিললাম।
ইশ কেন যে ওই কথা গুলো বলতে গেলাম। আমার হাত কাঁপছে অদ্ভুত ভাবে।
কাঁপা গলায় বলতে গেলাম। সাথে হাত বাড়িয়ে আদ্র কে নিজের থেকে সরানোর জন্য ধাক্কা দিতে চাইলাম।
“ক–কি

কিন্তু পারলাম না।আদ্র একহাত দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়েছে।সাথে আমার কথা বন্ধ হয়ে গেছে। স্তব্ধ হয়ে হয়ে গেলাম সাথে ছুটাছুটি করতে লাগলাম,,
আদ্র ছারছে তো নাই উলটো রেগে শক্ত করে ধরে আছে এখন আমি ছুটাছুটি ও করতে পারছিনা।

প্রচন্ড রেগে বললাম,,,”কি করছেন কি আপনি ছারুন।”

আমার কথার উত্তর দিলো না । ওইভাবেই মাথাটা নিচু করে বললো,,
“আমাকে কষ্ট দিয়ে তুমি আনন্দ পাও।”

নিচু কন্ঠে বলল আদ্র অদ্ভুত ব্যাপার কথাটা শুনে আমার মনে হচ্ছে না আদ্র রেগে আছে।
কিন্তু আদ্রর নিচু হ‌ওয়াতে আমার যে চরম অসস্থি হচ্ছে। কারণ এখন আদ্রর মুখ আমার মুখমুখি ওর নিঃশ্বাস আমার চোখে মুখে বারি খাচ্ছে।
হার্টবিট বেড়ে গেছে এভাবে থাকা যায়।আদ্রকে ঠেলেও সরাতে পারছিনা।ও কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমি সেই দিকে তাকাতে পারছি না।অজানা ভয়ে হাত-পা কেঁপে উঠছে।
কোন কথাও যেন মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না অনেক কষ্টে কিছু বলতে নেব ওমনি থেমে গেলাম।আদ্র হাত উঠিয়ে আমার গালে রেখেছে আদ্রর ছোঁয়া পেয়ে থমকে গেলাম।
বোকা চোখে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিলাম।আদ্র কি করতে চাইছে ওনি কি খারাপ কিছু করবে।

কিভাবে থামাবো ভেবেই মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ দেখি আদ্রর ধরা হাত আলগা হয়ে আসছে।
আদ্রর মুখ আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম তারপর নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে আদ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফেললাম।
কিছু টা সরে গেল আদ্রর আমি সুযোগ পেয়ে বারান্দায় গিয়ে দরজা আটকে ফেললাম।
বুকে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিচে বসে পরলাম। হার্টবিট এখনো জোরে জোরে লাফাচ্ছে।

রাগে দুঃখে কাঁদতে লাগলাম এই ছিলো মনে। ছিঃ এজন্য এখানে এসেছিলো।
এদিকে আদ্রর স্নেহার কাছে গিয়ে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছিল তাই কি করতে যাচ্ছিলো বুঝতে পারেনি।স্নেহার ধাক্কায় ওর হুস আসে।
তাঁরা তারি করে বারান্দায় দরজার সামনে এসে ধাক্কা দিলো।

এদিকে
চোখ বন্ধ করে আদ্রকে নিয়ে তীব্র ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে।
এতো দিন আদ্র বিরক্ত করলে রাগ হতো খারাপ লাগতো না আর আজ কষ্ট পাচ্ছি। একটু হলেও আদ্রকে ভালো ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম উনি আমাকে জালালেও কখনো এমন কিছু করবে না কিন্তু আজ।

আদ্রর বাক কানে ভেসে এলো। দরজা ধাক্কা দিচ্ছে আর ডেকে যাচ্ছে।

“স্নেহা ওপেন দ্যা ডোর, আই অ্যাম সরি প্লিজ ওপেন দ্যা ডোর।”

আমি নিরব হয়ে আছি।আদ্রর আবার বলল,,

“স্নেহা আই এ্যাম এক্সট্রিমলি সরি আমি ইচ্ছে করে এমনটা করিনি। বিলিভ মি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি দরজা খোল না।”

আদ্রর কোন কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না। তবুও বললাম,,,

“আপনি চলে যান।”

“প্লিজ দরজা খোল।”

“আপনি না গেলে আমি দরজা খুলবোনা। আপনি এমন টা কি করে করতে পারলেন ছিঃ।”

“আচ্ছা নিজের ক্ষতি করোনা প্লীজ আমি চলে যাচ্ছি।”

“আমাকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না।আর আমি নিজের ক্ষতি ভুলেও করবো তাই এসব না বাবাই ভালো।”

“আচ্ছা টেক কেয়ার।”

“আপনি খুব খারাপ।”

“শুধু তোমার জন্য। আর তুমি শুধু আমার এটা মাথায় রেখো।”

আদ্রর কথাটা শুনে চমকে উঠলাম। ‘তুমি শুধু আমার’ কথাটা কানে বাজছে।
বাইকের আওয়াজে বারান্দায় থেকে মাথাটা উঠিয়ে দেখালাম আদ্র চলে যাচ্ছে।

কিন্তু আমি বিস্মিত হয়ে বসে আছি।এটা আদ্র কি বলে গেল। এইটা কেন বলল,,
আচ্ছা আমি কি ঠিক শুনছি নাকি ভুল।
এমন কথা আদ্র কেন বা বলবে।আদ্রকি আমাকে ভালোবাসে,,
ছিঃ কি ভাবছি। আদ্র আমাকে কেন ভালোবাসবে তাহলে আমি ভুল শুনছি।
উঠে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম।
ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। বারবার আদ্রর শেষের কথাটা মনে পরছে।

ভুল নাকি সত্যি এই দুটানায় পরলাম।সাথে আদ্রকে নিয়ে তীব্র ঘৃণার জন্ম হচ্ছে।এই ছিল তার মনে সব ছেলেরা ই এক সবাই।
বাবার রুমে আসতেই চমকে গেলাম বাবার চোখে পানি বাবা কি কিছু বুঝতে পেরেছে।

আমাকে দেখে বাবা তাকিয়ে র‌ইল। অদ্ভুত বাবাকে খুশি দেখাচ্ছে কিন্তু তাহলে চোখে পানি কেন?
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি বাবার দিকে।
পাশে গিয়ে বসলাম বাবা কিছু বলার চেষ্টা করলো পারলো না। আমি ও কিছু বুঝলাম না বাবার কষ্ট হচ্ছে বুঝে কথা বলতে মানা করলাম।

.
পরপর দুইদিন ভার্সিটিতে গেলাম না।আদ্রর মুখোমুখি হতে চাইনা আমি।আর একদিন পর এক্সাম।তাই ফিস দিতে ভার্সিটিতে গেলাম।

আর সামনে পরলো আদ্র।এতো চারপাশে তাকিয়ে আসলাম তবুও কোথা থেকে চলে এসেছে আল্লাহ জানে।
সামনে এসে দাড়ালো আমি সাইটে সরে চলে যেতে চাইলে আমার হাত ধরে আটকে ফেললো। রেগে একবার হাতের দিকে তো একবার আদ্রর দিকে তাকালাম কিন্তু তার সেদিন খেয়াল নেই।

রেগে বললাম,,,”আপনি আবার অসভ্যতামি করছেন আমার সাথে।”

“আমার ফোন রিসিভ করছো না কেন আর দুইদিন আসো নি কেন?”

আমার কথার উত্তর তো দিলোই না উল্টো এসব বলছে।এতো কিছুর পর ও ফোন রিসিভ করতে বলছে। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি‌। আদ্রর দৃষ্টি অশান্ত কেমন উষ্কখুষ্ক লাগছে। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে যেন কতো রাত ঘুম হয়না।চুল গুলো এলোমেলো কিন্তু আগে কখনো এমন অগোছালো দেখিনি। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।

“ওইদিন ওমন বিহেভের পর ও ভাবছেন আমি আপনি সাথে কথা বলবো বা ফোন রিসিভ করবো।”
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি

#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ৩৪

কথার প্রেক্ষিতে আদ্র কিছু বলল না।
গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
আমি বুঝতে পারছিনা আদ্র কি করবে হঠাৎ আদ্র আমার হাত ছেড়ে দিলো। তারপর সোজা অন্যদিকে ফিরে চলে গেল। আমি ভ্রু কুঁচকে আদ্রর যাওয়া দেখছি।
আদ্র আর পেছনে ফিরে তাকালো না কিন্তু আমি তাকিয়ে র‌ইলাম। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি আদ্র কিছু বলল না এটা ভালো লাগছে না। আদ্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে অফিস রুমে গেলাম। মুখটা মলিন করে।
অন্তরা আগেই ফিস দিয়েছে এজন্য ও আজ আসবে না। আমার জন্য আসতে চেয়েছিল কিন্তু আমি ই না করেছি কাল এক্সাম আজ পড়া উচিত।

অফিস রুমের কাজ শেষ করে বেরিয়ে এলাম। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। কিন্তু মাঠে নাই সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চারপাশে তাকালাম মাঠে এসে আদ্রর থাকার জায়গায় ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম কেউ নাই।
সব সময় তো এখানেই থাকে আজ নাই কেন? না চাইতেই ভাবনায় এলো তারপর নিজের কাজে অবাক হয়ে দৃষ্টি সামনে রাখি‌। আমি আদ্রকে খুঁজছি কেন আর সে যেখানে খুশি সেখানে থাকুক আমার কি।

আর কোন দিক না তাকিয়ে সোজা গেটের বাইরে চলে আসি। অটো করে যাব না হেঁটে যাব। তাই আর না দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলাম হঠাৎ আদ্রর বাইক থামলো সামনে এসে আচমকা বাইক সামনে আসাতে ভয়ে দু পা পিছিয়ে যায় আমি।
বিষ্ময় চোখে আদ্রর দিকে তাকালাম,,

“উঠো!”

উঠো শুনেই চমকে উঠলাম। আদ্র ঘাড় ঘুরিয়ে উঠতে বলছে। তার শান্ত চাহনী আমি বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি। কিছু বলবৈ তার আগেই আদ্রর মুখের শান্ত চাহনি কঠিন হয়ে উঠলো এবার চিৎকার করে উঠল,,,

“উঠতে বলছিইই।”
আদ্রর চিৎকার কন্ঠ শুনে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
আর কিছু না ভেবে সুরসুর করে বাইকে উঠে বসলাম।

উঠে বসতেই বাইক চলতে লাগলো একটুর জন্য পরে যাই নাই।উঠে হ্যান্ডেল ধরার আগেই চলতে শুরু করেছে তাই তারাতাড়ি করে আদ্রর শার্ট খামচে ধরে পরার হাত থেকে বেঁচে ছি‌।

আদ্র বাইক স্পিডে চালিয়েছে এজন্য পুরো রাস্তা আতংকে আস্তে হয়েছে বাইক থামতে বড় একটা নিঃশ্বাস ফেললাম।

“নামো।”

বসা থেকেই ভ্রু কুঁচালাম একবার উঠো একবার নামো কি শুরু করেছে এই লোকটা। না নেমে চিন্তা করছি আদ্র আবার বলে উঠলো,,,

“কি হলো নামছো না কেন? উঠতে বললে উঠানো যায় না আবার নামতে বললে নামো না তুমি চাও টা কি বলতো সব সময় আমার কথার উল্টা করতে।”

রাগে গজগজ করতে করতে নেমে দাঁড়ালাম।এটা তো রেস্টুরেন্ট এখানে কেন এনেছে।বিষ্ময় হয়ে আদ্রর দিকে তাকালাম,,,

“এখানে কেন এনেছেন?”

আদ্র নেমে দাঁড়ালো তারপর বাইক পার্ক করলো। আমি যে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলাম তা কানেও নিলো না।
যে কিছু শুনতেই পারেনি‌। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আদ্রর কান্ড কারখানা দেখছি‌।

এগিয়ে আসতে দেখে বললাম,,,

” কি হলো বলছেন না কেন? এখানে নিয়ে এসেছেন কেন।”

কোন কথা না বলে আমার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো,,

“আরে টানছেন কেন? দেখুন কাল আমার পরিক্ষা আমার বাসায় যেতে হবে আপনি আমাকে রেস্টুরেন্টে এনেছেন কেন?”

সোজা রেস্টুরেন্টের ভেতরে এসে বসে আমাকে ও জোর করে বসিয়ে দিলো তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,,

“রেস্টুরেন্টে মানুষ কেন আসে?”

অবাক হয়ে বললাম,,,”মানে।”

“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।”

“হাত ছারুন। আর দূরত্ব বজায় রাখুন।”
আদ্রর আমার হাত ধরে ছিলো আমার কথা শুনে ছারলো। কিন্তু সরলো না।

“কালকের জন্য অনেক বার সরি বলেছি কিন্তু এজন্য তোমার কথা মেনে চলবো ভেবো না। আমার যেটা ইচ্ছে সেটাই করবো। আর এখন খাবার খাবো দুদিন ধরে খাইনা ঠিক মতো প্রচন্ড খিদে পেয়েছে আমার।”

বলেই ওয়েটারকে ডেকে খাবার অর্ডার করলো। আমি হাঁ করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। বিষ্ময়ে মুখটা হা হয়ে আছে।

“তো আপনার খিদে লেগেছে খেয়ে নিন আমাকে নিয়ে এসেছেন কেন?”

“কারণ তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে তাই।”

‘কিহহহ।”

“ইয়েস তোমার জন্য আমার হাতের এই অবস্থা এজন্য খেতে পারছি না। এখন তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।”

বলেই হাত উঁচু করে দেখালো দেখেই চমকালাম আদ্রর ডান হাত ব্যান্ডেজ করা।
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি‌। এতোক্ষণ একসাথে ছিলাম তবুও খেয়াল করিনি।আর আদ্র আমার হাত ওর বাম হাত দিয়ে ধরে ছিলো তাই আরো খেয়াল করিনি।

হালকা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,”আপনার হাতে ব্যান্ডেজ কেন কি হয়েছে হাতে?”

“জেনে কি করবে আমি কষ্ট পেলে তো তুমি আনন্দ পাও। এখন ও আনন্দ উপভোগ করো।”

আদ্রর কথা চরম অবাক হলাম।
পিটপিট করে তাকিয়ে আছি আদ্রর দিকে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আর কোন কথা বললাম না চুপ করে র‌ইলাম একটু পর খাবার চলে এলো।

“খাইয়ে দাও।”

“আমি পা…

“দেখ না করে লাভ নেই তোমাকে খাইয়ে দিতেই হবে তাই ঝামেলা না করে শুরু করো। ”

“দেখুন আমাকে এভাবে হেরাজ না করলে হয় না আপনার তাইনা। আমার জন্য আপনার এই অবস্থা আমি কখন আপনার এই অবস্থা করলাম।”

“তারাতাড়ি করো কাল না তোমার এক্সাম। ”

“আমি পারবো না।”

“খাইয়ে তো তোমাকে দিতেই হবে অযথা টাইম নষ্ট করছো এতে ই তোমার ই ক্ষতি কারন তুমি মত র
লেট করবে তোমার বাসায় যেতে ততই দেরী হবে।”

কিছু ক্ষন চুপ করে র‌ইলাম।

“দেখো রেস্টুরেন্টে অনেক মানুষ সবার সামনে আমাকে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করোনা।”

বাধ্য হয়ে খাইয়ে দিতে লাগলাম লজ্জায় আসে পাশে তাকাতে পারছি না। আসে পাশের করো অবশ্য আমাদের দিকে নজর নেই যে যার মতো আছে। তবুও সবার মাঝে আদ্রকে খাইয়ে দিচ্ছে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আদ্রর দিকে ও তাকাতে পারছিনা।ও কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন চোখের পলক পরছেনা।
চরম অসস্থি নিয়ে খাওয়াচ্ছি।

নিজে খেয়ে এবার আমাকে খেতে বাধ্য করলো আর খেতে হলো কিছু খাবার প্যাকেট ও করে নিয়ে এলো।জানি না কি জন্য ইশারাতে আবার বাইকে উঠতে বলল উঠলাম।
বাসায় সামনে এনে থামতেই নেমে চলে যেতে লাগলাম পেছনে থেকে আবার ডেকে উঠলো,,,

“কি সমস্যা আবার ডাকছেন কেন?”

আদ্র বাইক থেকে নেমে খাবারের প্যাকেটটা আমার হাতে দিলো আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি।

“তোমার জন্য না আন্কেলের জন্য।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে গেল। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছে তার যাওয়ার দিকে আমার তাকিয়ে থাকার মাঝেই আদ্রর বাইক চলে গেল।
কি আর করবো না চাইতেও খাবার রুমে নিয়ে এলাম আদ্রকে যে ফিরিয়ে দেবো তার সুযোগ‌ই পাইলাম না।

.
পরদিন যথারীতি আমাদের পরিক্ষা শুরু হলো এক্সাম বিকেলে এজন্য সকালে টিউশনি করাই।
এখন আর আদ্রর ডিস্টার্ব সহ্য করতে হয়না ওকে দেখি না বন্ধ মনে হয়।
নিশ্চিন্তে পরিক্ষা দেয় কিন্তু তবুও চারপাশে আদ্রকে খুঁজি।

কিন্তু অন্য একটা ছেলে জ্বালিয়ে খায় নতুন আগে কখনো দেখিনি তাকে। ছেলেটাকে খুব বখাটে লাগে আমাদের বাসায় কিছু টা আগে তিন চার জন চায়ের দোকানে বসে থাকে । এক্সাম দিয়ে সন্ধ্যায় দিকে বাসায় যায় তাই তার নজরে পরেছি প্রথম কয়েকদিন দূরে থেকেই আজেবাজে কথা বলেছে। কিন্তু আজকে একদম সামনে এসে প্রপোজ করে বসেছে তার নাম্বার বলে বলে মাথা খারাপ করে দিয়েছে কোন ভাবে পালিয়ে বেঁচেছি ছেলে গুলো কে একদম সুবিধার লাগেনা।

আজকেও ভয়ে ভয়ে আসছি টাকা থাকলে কখনো এই রাস্তায় হাটতাম না। কাছাকাছি আসতেই হাঁটার গতী বারিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের হাত থেকে বাঁচতে পারলাম না।সেই সামনে এসে দাঁড়ালো।সেই ছেলেটা।

“ও সুন্দরী আমাদের সাথে কথা না বলেই চলে যাচ্ছিলে নাকি। তা তোমার নাম্বারটা তো দিলে না।”

“দেখুন আমার পথ ছারুন। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।”

“তুমি তো সন্ধ্যাই আসো এসেই যাই যাই করো কেন আসো একটু প্রেম করি তোমাকে আমার এক দেখাই ই সেই লেগেছে।”

তিনজন আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
ওই ছেলেটা আমার হাত থেকে টান মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো।

“কি করছেন ফোন নিচ্ছেন কেন?”

ছেলেটা ফোন চাপতে লাগলো আমি চাচ্ছি কিন্তু দিচ্ছে না।এদিকে আযান ও পরে গেছে। হঠাৎ ছেলেটা আমার হাত ধরলো আমি চমকে গেলাম।

“কি করছেন হাত ছারুন?”

ছেলেটা হাত ছেড়ে দিলো তারপর ফোন দিয়ে দিলো আমি কাঁপতে কাঁপতে দৌড়ে সেখানে থেকে চলে এলাম চোখে দিয়ে টপটপ করে পানি পরছে।
বাসায় সামনে এসে থামলাম বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
কান্না এসে ঠেকছে গলায়।মুখে হাত দিয়ে কাঁদছি এমনটা হবে ভাবিনি। দারোয়ান কাকা এগিয়ে জিগ্যেস করল কি হয়েছে আমি কিছু না বলে দৌড়ে ভেতরে চলে এলাম।
চলবে♥️
® তানজিনা আক্তার মিষ্টি

(ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

Tanjina Akter Misti

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে