#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৭
আদ্র বাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে অবাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। এভাবে দেখে কিছুটা না অনেকটাই অবাক হয়েছে যা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।একেতে ব্যথা শরীর অসাড় হয়ে আসছে । তার উপর আবার এভাবে চোখের সামনে আদ্রকে দেখে আমার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। লোকটাকে এখন আমার সামনে আসতে হল।
এমনিতেই সব সময় আমাকে অপমান করে লোকটা কিছু হলেই। আজকে আবার এভাবে রাস্তা এভাবে পড়ে থাকতে দেখেছে। এটা নিয়ে আমাকে কত কথাই না শোনাবে আল্লা মাবুদ জানে। কিন্তু উনি এখানে কি করছে?
এই সাত সকালে।
উনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে ঘুম থেকে উঠে চেঞ্জ করে নাও এভাবে ছুটে চলে এসেছে। গায়ে একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার। হলুদ গেঞ্জি। আজকে ওনাকে গেঞ্জিতে দেখলাম তাও হলুদ রঙের। উনার চোখে ঘুম ঘুম ভাব।আমি কিছুটা অবাক হলাম। উনী এভাবে এখানে কোন জরুরী কাজে চাচ্ছিলাম মনে হয়।
“আপনি এখানে?”
আমতা আমতা করে কথাটা বললাম।
আমার জবাবের উত্তর না দিয়ে উনি আমাকে বলল,
“সাতসকালে তুমি রাস্তার মাঝে বসে কি করছো?”
ওনার কথা শুনে আমি হতবাক। আমার উত্তর না দিয়ে উল্টা আমাকে প্রশ্ন করছে কত বড় অসভ্য লোক। বিরবির করে উনাকে বকে উঠে দাঁড়াতে গেলাম।
কিন্তু উঠতে পারলাম না সাথে সাথে আবার বসে পড়ল।পায়ের ব্যাথাটা গুরুতর হয়েছে। এমন ভাবে পড়েছি আল্লাহ পা দুটো আমার ভেঙ্গে গেল। একদিকে বাবাকে নিয়ে চিন্তা এদিকে আমার এই অবস্থা যখন বিপদ আসে চারদিক থেকে আসে। তার উপর আবার সামনে আদ্র।
আমাকে এভাবে পড়ে যেতে দেখে আদ্র অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
“কি হয়েছে এভাবে বসে পড়লে কেন?”
“আমাকে একটু ধরেন প্লিজ আমার তে পারছিনা।”
বলেই হাতটা এগিয়ে দিলাম এখন তাড়াতাড়ি ওঠার দরকার। উঠে আস্তে আস্তে হাঁটতে হবে তারসর বাবার কাছে যেতে হবে। এখন আদ্রর সাথে তর্কে যেতে পারবো না যে কারণে এসে থাকো আই ডোন্ট কেয়ার।
আদ্র হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে এই কথাটা হয়তো হজম করতে।
“কি হল এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? একটু আমার হাতটা ধরেন না। আমি উঠতে পারছিনা দেখতে পাচ্ছেন না।”
“পড়তে পারছো না কেন নাকি এক্টিং করছে আমার হাত ধরার জন্য। আর তোমার হাত আমি কেন ধরতে যাব তোমাকে সাহায্য কেন করব।আমি কাউকে সাহায্য করি না ওকে। তুমি এখানে কি করছো বললেনা তো?”
আদ্রর কথা শুনে আমার রাগ উঠে গেল এমন খারাপ লোক আমি আমার জীবনে দুটো দেখিনি।সাহায্য করবে না সাহায্য করেনা সে আবার আমাকে জিজ্ঞেস কর আমি এখানে কি করছি? আমি কেন বলতে যাবো।
“দরকার নাই আপনাকে।আমি একাই উঠবো”বলে উঠে দাঁড়িয়ে এক পা এগোতে ঠাস করে যেতে নিলাম।
এবার আমি শেষ কিন্তু আল্লা বাঁচিয়ে আমি পরি নাই।
এটা কিভাবে সম্ভব কেউ আমাকে ধরে রেখেছে শক্ত করে। সে আর কেউ না আদ্র। আদ্রকে দেখে মেজাজটা গরম হয়ে গেল। একটু আগেই আমি হাত ধরতে বললাম ধরলোনা এখন আবার আমাকে ধরেছে। একে বোঝা মুশকিল।
তবুও রাগ দেখিয়ে বললাম,
“আপনি আপনি আমাকে ধরেছেন কেন? ছারুন, একটু আগেই তো আপনি বলেছেন কাউকে সাহায্য করেন না এর আগে বলেছিলেন। তাও কেন জানি বারবার আপনাকে সাহায্য করতে বলি বুঝি না আসলে দোষ আমার না দোষ আপনার। আমি বিপদে পড়লে সব সময় আপনি আমার সামনে আসেন কেন বলেন তো।আমাকে আপনার ধরা লাগবে না আপনার ধরা থেকে আমি নিচে পড়ে যাওয়া ভালো।”
কথাটা বলে আদ্রর দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে যায় একটা শুকনো ঢোক গিলি। আদ্রর চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে। এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে দিবে।
আদ্রর দিকে তাকাতেই আমি ঠাস করে নিচে পড়ে গেলাম। নিচে পড়ে ওমাগো বলে চেঁচিয়ে উঠলাম।
“এটা আপনি কী করলেন এভাবে কেউ ফেলে আমার মাজার টা গেলো। এতক্ষণ পায়ে ব্যথা ছিল এখন মাজাটা ভেঙে গেল বোধহয়।”
বলে চিৎকার করে কান্না করতে লাগলো।
“স্টপ ইট। একদম কান্না করবেনা।”
“ব্যথা পেয়েছে এখন আবার কান্না করতে পারবেন না। আসলে আপনি একটা রাক্ষস।”
“আজেবাজে কথা বলে কিন্তু তোমাকে কি হাল করতে পারি । তুমি খুব ভালো করেই জানো।”
“অসভ্য লোক একটা। সব সময় থ্রেট দেওয়া।”
“আরেকবার তোমার মুখ থেকে আর একটা বাজে কথা বের হলে। আমি কিন্তু ধরে আর একটা আছাড় মারবো তোমাকে।”
বিরক্ত হয়ে আদ্র দিকে তাকিয়ে ভেংচি কাটল স্নেহা। তারপর বলল,” দেখুন আপনার সাথে আমি ঝগড়া করতে চাই এখন। এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেল আপনার জন্য আমার অবস্থা একদম খারাপ। এবার আমার থেকে সরে যান। নিজের রাস্তা নিজে জান আমাকে আমার রাস্তায় যেতে দিন।”
বলে স্নেহা কষ্ট করে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো খারাপ লাগলো এখন তাড়াতাড়ি ফার্মাসিতে যেতে হবে। ওইদিকে বাবা একা বাসায় আছে আবার কি না কি করতেছে। ঘুম ভাঙার আগে আমার বাসায় পৌঁছাতে হবে।
আদ্র দিকে আর না তাকিয়ে সামনে এগোতে লাগল। সারা শরীর ব্যথায় অসার হয়ে আসছে। এক পা এগানোর শক্তিটুকু ও নাই এখন আর। চোখ বন্ধ করে বড় শ্বাস নেই দুর্বল ভাবে।
“বাইকে ওঠো।”
আদ্রর গম্ভীর কণ্ঠে আসতেই চমকে পিছনে তাকায়।গম্ভীরভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বাইক ছেড়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে গিয়েছিলাম। ও বাইকে বসে বাইক কথাটা বলে। আমি তাকাতেই বাইক স্টার্ট করে। আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আবারঝ কই কথা বলে উঠলো,
“কি আমি আপনার বাইকে কেন উঠবো?”
“কথা বলতে বলিনি বাইকে উঠে বলছি। বড্ড বেশি কথা বল তুমি। তাড়াতাড়ি করে এমনি আমার হাতে বেশী সময় নাই।”
“সময় নাই তো এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন? আমি আপনাকে কি আমি বলছি আমার জন্য দাড়িয়ে থাকেন। আর আমি আপনার বাইকে কেনো উঠবো”
“তোমার দরকার উঠবে।”
“আমার দরকার আপনার বাইক করতে যাব কেন? আমি আপনার বাইকে উঠবো না।”
“প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি উঠ। আমি তোমাকে হেল্প করার জন্য বাইকে উঠতে বলছি না। আর না তোমার সাথে লং ড্রাইভে যাওয়ার জন্য বলছি।আমি আঙ্কেলের জন্য বলছি এখন যদি না যাও তাহলে সত্যি অনেক লেট হয়ে যাবে। আর তুমি যদি তোমার বাবার ক্ষতি চাও তাহলে ওঠো না।এতে আমার কিছুই হবে না সে বাসায় একা আছে তারই প্রবলেম হবে তার। তার ভালো চাইলে ওঠো না হলে থাক আমি যাই।”
স্নেহা হা করে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হ্যা না কিছুই বলতে পারছ না ওর মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। বের হবে কিভাবে ওতো হতভম্ব হয়ে আছে। আদ্র জানলে কিভাবে বাবা বাসায় একা আছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও এতটাই শক হয় ছে যে নড়াচড়া করছে না।
আদ্র স্নেহার এমন মুখ্য ভঙ্গিতে দেখে রেগে চিৎকার করে বলে,,
” এভাবে তাকিয়ে থাকবে নাকি যাবে হ্যাঁ, না কিছু একটা বলো। ওকে বুঝতে পেরেছি যাবে না ঠিক আছে না গেলে।”
আদ্রর কথায় ধান ভাঙ্গে স্নেহার আদ্র গাড়ি স্টার্ট করতে যাবে এটা দেখেই স্নেহা টনক নড়ে। নানা আদ্রকে এভাবে যেতে দেওয়া যাবে না ওর হেল্প নিতে হবে আমাকে। এই শরীর নিয়ে সত্যি আমার খুব দেরি হয়ে যাবে এখনো অর্ধেক রাস্তা পেরোতে পারি নাই। তার থেকে বরং আদ্রর হেল্পটাই নেই।ও যেমনই হোক যতই ঝগড়া করি যতই ঘৃণা করি না কেন? বাবার জন্য ওর হেল্প আমাকে নিতেই হবে।
এদিকে আদ্রর বাইকে স্টার্ট হয়ে গেছে চলে যাবে এমন সময় লাফিয়ে স্নেহা তাড়াতাড়ি বাইকে উঠে বসে। জীবনে ফার্স্ট টাইম বাইক নামক জিনিসটা উঠেছে। ভয় ওর হাত পা কাঁপছে।
স্নেহা উঠতেই আদ্র গাড়ি থামিয়ে দেয়। না হলে স্নেহা পড়ে যাবেও ভালো করে বসে নাই।
কি ব্যাপার তুমি না বলে যাবে না আমার বাইকে উঠবে না। কিন্তু এটা কি হলো?
দেখুন এখন কথা বলেন না প্লিজ তাড়াতাড়ি ফার্মাসিতে চলুন।
কিছু টা নরম হয় কথাটা বলল স্নেহা। এখন রেগে কথা বলে লাভ নাই এর হেল্প আমার দরকার খুব দরকার।
আদ্র আর কিছু বলল না বাইকে স্টার্ট দিল। কিছুদূর যেতেই, স্নেহা চিৎকার করে উঠল,
সাথে সাথে আর্দ্র রেগে বাইক থামালো তারপরে কঠিন চোখ মুখ করে স্নেহা দিকে তাকালো,,
“কি হলো এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো?”
প্লিজ একটু আস্তে চালান। আমিতো পড়ে যাচ্ছিলাম আর একটু হলেই ঠাস করে নিচে পরে যেতাম।
আদ্রর স্নেহার দিয়ে তাকিয়ে দেখে স্নেহা কিছুই ধরে বসে নাই। এবার আরো রেগে যায়,
“ইউ স্টুপিড গার্ল, তুমি চোখে দেখো না বাইক না ধরে বসলে তো পরবাই। ”
“কি ধরে বসবো এই পাশে তো ধরেছিলাম। আমি আজি ফাস্ট বাইকে উঠেছি প্লিজ একটু সাবধানে যাবেন আস্তে আস্তে চালান।”
“যতসব ঝামেলা।”
“দেখুন একদম আমাকে ঝামেলা বলবেন না।আপনি কিন্তু অফার করেছিলেন বাইকে উঠার জন্য আমি আপনার কাছে অনুরোধ করে বাইকে উঠতে।”
“ভুল করেছি।এবার দয়া করে আমার কাঁধে হাত রাখে। শক্ত করে ধরে রাখেন হ্যান্ডেল।”
“কে আমি আপনার কাঁধে হাত রাখবো অসম্ভব।”
“ওকে ধরতে হবে না আমি আমার মতো চালাই তুমি যেভাবে যা ইচ্ছা ধরা পড়ে গেলে পরো । আই ডোন্ট কেয়ার!!”
বলে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাইক চালাতে লাগলো। আল্লাহ মনে হচ্ছে পড়ে যাব। এত নরডছি পড়লে আমি শেষ। পাশের হ্যান্ডেল দুই হাত দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে আছি।তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছিনা ইচ্ছে করে মনে হয় বাইক স্টার্ট জোরে ছেড়ে দিয়েছে। শয়তান খচ্চর লোক বাধ্য হয়ে ডান হাতটা আদ্রর কাঁধে ধরে আবার সরিয়ে নিলাম। পরবর্তীতে আবার ঝাকিতে পড়ে যাওয়ার মত হলে শক্ত করে কাঁপ চেপে ধরলাম। অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওইভাবে আসতে হল। ফার্স্ট টাইম কোন ছেলেরা এত কাছে বসে আছি। কেমন কেমন যেন লাগছে?
আদ্রর শরীরের সাথে ঘেসে বসে আছি। কোন ছেলেরা এত কাছে বসে থাকলে যে কোন মেয়েরই এমন লাগবে অস্বস্তি বোধ হচ্ছে। মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কেমন লজ্জা লাগছে এখন। হঠাৎ আদ্রর বাইকের আয়না চোখ পরল আদ্র আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিল। আর আয়নায় আমার মুখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।সাথে সাথে অন্য দিকে তাকায় কেমন যেন
লাগছিল আদ্রর চোখ মুখ।
আর একবার ওই দিকে তাকায় না সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে থাকি। একটু পরে ফার্মেসীর সামনে এসে গাড়ি থামায় আদ্রর।
ফার্মাসি তে পৌঁছে আমার ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে ওঠে। আদ্র সাথে আগের সব রাগ নিমিষেই সব শেষ হয়ে যায়। খুরিয়ে খুরিয়ে তাড়াতাড়ি ওষুধ কিনে নেই।
ওষুধ নিয়ে একটা বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বাইরে আসতে দেখে আদ্র ফার্মেসিতে ডুকছে। ব্রু কুঁচকে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আদ্র কি ওষুধ কিনতে এসেছে। হয়তোবা! স্নেহা হাঁটতে লাগে।
এখন তাড়াতাড়ি বাসায় পৌছতে হবে। কিন্তু বেশি দূর যেতে পায়না আবার আদ্র সামনে এসে স্নেহা বাইকে উঠতে বলে।
স্নেহা সাথে সাথে না করে দেয়।এবার আর যাবে না। ওই ভাবে খুব অস্বস্তি লাগছিল আদ্রর সাথে এভাবে এতো কাছাকাছি আসলে বুকের ভেতরটা প্রচন্ড রকম লাফাতে থাকে।
কিন্তু অদ্ভুত বিষয় এবার আদ্র আমাকে জোর করে না। একবার আমার দিকে তাকিয়ে বাইক থেকে নেমে আসে। হতবাক হয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। নেমে আসছে কেন? আমার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়ে হঠাৎ আমার হাত টেনে নেয়।
আচমকা দুই হাত টেনে ধরায় শরীরে মনে হয় কারেন্টের শক খেলাম। এভাবে হুট হাট হাত ধরায় প্রচন্ড অসুস্থি ফিল করি আমি। কিছু বলতে যাব তার আগে আমার হাতে আদ্রর একটা মলম দেয়। হাঁ করে মলম এর দিকে তাকিয়ে আছে এটা তো ব্যথার মলম।
“এটা….
কথার মাঝে থামিয়ে দেয়,,
“ব্যথার স্থানে লাগিয় দুদিনে ঠিক হয়ে যাবে। আসি বাই।”
আর কিছু না বলে সোজা বাইকে উঠে শো করে চলে যায়। আমি হতভম্ব হয়ে আদ্র যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছি আচমকা কথাটা আমি মেনে নিতে পারছিনা। আমার ব্যথার জন্য আদ্র মলম কিনে দিল। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে মলম টার দিকে। এদিকে আদ্রর বাইক আস্তে আস্তে মিলিয়ে গেল।
আমি এক কদম এগিয়ে যাব হঠাৎ একটা অটো আমার সামনে এসে দাঁড়ায় আর আমাকে গাড়িতে উঠে তে বলে।
“আমি যাব। আপনি চলে যান।”
“কেন মা আসো তোমাকে তোমার বাসায় পৌঁছে দেই।”
“না আমার কাছে কোন টাকা নাই। আমি হেঁটে চলে যেতে পারবো।”
“আমারে টাকার কি বলছো? তোমার ভাড়া দেওয়া আছে চলো আমার সাথে।”
“ভাড়া দেওয়া আছে মানে? ভাড়া কিভাবে দেয়া হলো? আমি তো আপনাকে কখনো বাড়তি টাকা দেয়নি।”
“তুমি তো দেও নাই অন্য একজন দিয়ে দিয়েছে তাড়াতাড়ি চলো।”
“অন্য একজন কে দিছে?”
হঠাৎ আদ্রর কথা মনে পড়লো ওই কি তাহলে!
“তাড়াতাড়ি কর আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
স্নেহা গাড়িতে উঠে বসে। সারা রাস্তা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসে।
বাসায় এসে দেখি বাবা উঠে নাই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলি। হালকা কিছু তৈরি করে বাবার রুমে গিয়ে বাবাকে দেখিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিই।
আজকে আর ভার্সিটিতে যাব না বাবা এভাবে একা রেখে।
সারাদিন বাবাকে নিয়ে রুমে কেটে গেল দুইবার রায়াকে নিয়ে এসেছিল রানি সাথে রুনা আপু ও এসেছিলো।
বাবাকে দেখে গেছে।
সারাদিন আদ্রর মলম কিনে দেওয়ার অটো পাঠানো নিয়ে চিন্তা করেছি। এসব কেন করল আর হঠাৎ ই বা কেন এলো? সাত সকালে সে জানলো কিভাবে আমি এখানে আছি।
কাল জিজ্ঞেস করবো। রাতে আবার অন্তরা ফোন দিয়েছিল ভার্সিটিতে কেন যায়নি সেটা জানার জন্য। ওকে সব বললাম।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৮
“একটা সত্যি কথা বলেন তো আপনি?”
আচমকা স্নেহার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে পেছনে ঘুরে তাকাল আদ্রর। আদ্র বাইকের উপর বসে ফোনে বাড়িতে কথা বলছিলো।
এইসময় হঠাত স্নেহার কন্ঠ কানে আসে।
তাকিয়ে দেখে স্নেহা ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
ও সামনে তাকিয়ে ফোন নিয়ে কিছু একটা বলে ফোন কেটে পকেটে রেখে ।স্নেহার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় বাইকে থেকে নেবে।
সোজাসুজি স্নেহার মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করে,
“কি কথা?”
স্নেহা এমন প্রশ্নের জন্য রেডি ছিল। জিজ্ঞেস করতেই বলতে লাগে,
“কালকে আপনি ওইখানে কি করছিলেন? আর আপনি জানলেন কিভাবে বাবা অসুস্থ আমি ফার্মেসিতে যাব।”
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আদ্রর মুখের দিকে। সারারাত এই একটা কথায় স্নেহ মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে। আদ্রর বাসা কোনদিকে সেটা জানে না আদ্রর। আর আদ্র কোথায় থেকে বোর সামনে চলে এলো আর মামা যে অসুস্থ আমি তার জন্য ফার্মেসিতে যাচ্ছি সেটা আবার কিভাবে জানলো।
ওর মাথায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কোন উত্তর পাচ্ছে না। তারপর আমাকে এই বা এতো হেল্প করলো কেন? কালকে আবার অটো রেখে এসেছিল।
আদ্র কিছুই বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে মানে আমার প্রশ্নের থেকে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু নিজের ফোন আবার করে নিয়েছে।
প্রচন্ড রাগ হল আমার ফোনটা তো কেটে এসেছিলি কথা শোনার জন্য । এখন উত্তর না দিয়ে আবার ফোন কানে নিয়েছিস কেন?
তবু চুপ করে রইলাম,
ফোন কাটতেই আবার জিজ্ঞেস করলাম….
“কি হলো বলেন? আপনি কাল সকালে আমার সামনে কিভাবে গেলেন। আর আপনি জানেন কিভাবে আমি ওইখানে আছি। আপনি কি আমাকে ফলো করছেন।”
কথাটা শুনেই আদ্র হা হা করে হেসে উঠলো। তীক্ষ্ণদৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি হাসার কি বললাম এভাবে গলা ফাটিয়ে হাসছে কেন?
“কি হলো আপনি হাসছেন কেন? আমিতো আপনাকে একটা সিম্পল কোশ্চেন করেছি।”
“লাইভ সিরিয়াসলি! আমি তোমাকে ফলো করব কেন? কে তুমি? তোমাকে আমি ফলো করতে যাব কোন দুঃখে? এমন ভাবনা তোমার মাথায় আসলো বা কি করে?”
বলে আবার হাসতে লাগল।
আদ্র কথায় আমি নিজে হতদম্ব হয়ে গেলাম। প্রতিটা কথা আমাকে প্রচন্ড ভাবে অপমান করল।আমি কি এমন বলেছি এটা তো স্বাভাবিক একটা প্রশ্ন করেছি? এমন সাত সকালে সবাই নিজের বাসায় থাকব আর সে বাসা ছেড়ে আমার সামনে এলো এটা যার সাথে হবে সেই এমনটা ভাববে। এই একটা প্রশ্ন করার জন্য এভাবে কেউ অপমান করে। ভালোভাবে বললেও তো হতো আসলেই এই ছেলেটা শয়তান, হনুমান , বাঁদর একটা। নিজের মনের কথাটা ভাবলাম রাগী ফুসফুস করতে লাগলাম। কিন্তু সামনে কিছু বলতে পারলাম না।
“এভাবে হাসার কি আছে? একদম আমাকে অপমান করে কথা বলবেন না। আমি কি এমন বলেছি। সত্য বলেছি। আপনি আমাকে ফলো না করলে জানলেন কিভাবে আমি তখন ওই রাস্তায় ছিলাম।”
“তোমাকে ফলো করব কি জন্য?আর তুমি ভাবছো আমি তোমার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম এটা নিছকই তোমার ভুল ধারণা।আমি তোমার জন্য না নিজের দরকারে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ রাস্তায় তোমাকে ওরকম পাগলের মত বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে তোমার সামনে গিয়ে ছিলাম।”
পাগলের মত বসে থাকতে কথাটা শুনে আমি রেগে উঠলাম,,,
‘কি বললেন আপনি আমি পাগলের মত বসে ছিলাম?”
দাঁতে দাঁত চেপে কথাটা বললাম… আমার কথা শুনে শয়তান রূপটা বললা..
“অবশ্যই ওভাবে রাস্তায় বসে থাকতে দেখলে যে কেউ পাগলই ভাববে।আমিতো প্রথমে পাগলই ভাবছিলাম। পরে যখন মুখটা চেনা চেনা লাগলো তখন কৌতুহল নিয়ে জানার জন্য জিজ্ঞেস করলাম।”
“একদম আমাকে পাগল বলবেন না। আমি নিজের ইচ্ছায় এভাবে বসে ছিলাম না।আমি তো পড়ে গিয়েছিলাম। কতটা ব্যথা পেয়েছি জানেন। আর আপনি কি না আমাকে পাগল বলছেন?”
“আমার যা মনে হয়েছে আমি তাই বললাম।”
“আচ্ছা সেসব না হয় বুঝলাম এখন বলেন? আপনি তাহলে আমাকে সাহায্য করলেন কেন?ফার্মাসিতে নিয়ে গেলেন ও আচ্ছা আপনি জানেন কিভাবে আমি ফার্মেসিতে যাব?”
কথাটা বলেই ভ্রু কুঁচকে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইলাম।
“কি হলো বলেন?”
আদ্রর মুখটা কেমন জানি থমথমে লাগছে।প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর তো দ্রুতগতিতে দিয়ে দিছিলো এখন একটু নিশ্চুপ।
আমি কিছু বলতে যাব তখনই আদ্র বলল….
“সে আমি তোমার মুখ দেখে বলেছি।”
“আমার মুখ দেখে।”
চমকে কথাটা বললাম।
“হ্যাঁ।”
“আমাকে পাগল পেয়েছেন। আমার মুখ দেখে আপনি কিভাবে বুঝবেন আমি কোথায় যাব না যাব। সত্যি করে বলুন?”
“সত্যি কথা আবার কি বলবো? তুমি যেভাবে চোট পেয়েছিলে তাতেই বোঝা গেছিল তোমার ফার্মেসিতে যাওয়ার দরকার এজন্য তো ফার্মাসিতে নিয়ে গেলাম।”
“এ্যা”
কথাটা শুনে স্নেহা এতোটায় অবাক হল যে ওর মুখ হা হয়ে গেছে। হা করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। এমন প্রশ্নের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না।ওর এই কথাটা একবারের জন্য মাথায় আসেনি।
“কি হলো এমন হা হয়ে গেলে যে?”
“না মানে আসলে,
“তোমার না মানে আসলে তোমার কাছে রাখো । আই এম বিজি। তোমার ফালতু কথা ফালতু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আমি বসে থাকতে পারবো না।তুমি ভেবেছিলাম তোমাকে ফলো করছি তোমার মত মেয়েকে আমি ফলো করবো এটা ভাবাও হাস্যকর ব্যাপার।”
বলে বুকের কাছ থেকে সানগ্লাস বের করে চোখে দিয়ে গট গট করে চলে গেলে। আমি হতবম্ভ হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম।
“কিরে এমন চুপচাপ বসে আছিস কেন?”
“এমনি তুই কখন এলি?”
“এইতো, এখনই কাল আসিস নি কেন?”
“বাবা অসুস্থ আজকে জ্বর আছে তবুও ওই ভাবে রেখে এসেছি। দুইটা ক্লাস করে চলে যাব।”
“আঙ্কেল অসুস্থ তা হলে তার সাথে যাবনি আঙ্কেলকে দেখে যাব।”
“তার দরকার নাই। তুই সবগুলো ক্লাস করিস তোর কাছ থেকে নিতে হবে নোট। আব্বু এখন অনেকটা সুস্থ কালকে বেশি ছিল আজকে একটু কম।”
“আচ্ছা তাহলে কালকে সকালে ভার্সিটিতে আসার আগে যাবনি।”
“আচ্ছা।”
ভার্সিটির শেষ করে বাসায় আসলাম।আগে চলে এসেছি সবগুলাই ক্লাস করিনি বাসায় এসে রান্না করে খাইলাম। বাবাকে খাইয়া ওষুধ খাইয়ে দিলাম। জ্বরটা আবার বেরেছে। কিন্তু বাবার কাছে থাকতে পারছিনা এখন টিউশনে যেতে হবে। কালকে যেতে পারি নাই বাবার অবস্থা বেশি খারাপ ছিল।
সময় হতে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে রওনা হলাম ।তার আগে চাবিটা দিয়ে গেলাম রুনা আপু কে যাতে একটু পরে বাবাকে একটু দেখে আসতে পারে।
টিউশনি তে এসে একটু কটু কথা শুনতে হলো। কাল আসোনি মাত্র এক সপ্তাহ পরেই একদিন মিস করেছি। সে নিয়ে নানা কথা শোনালো চুপচাপ তার কথা শুনলাম। খারাপ লাগলেও কিছু বলতে পারলাম না।
কথাগুলো হজম করে পড়াতে মন বসালাম।
পড়ানো শেষ হতেই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলাম।
চারদিন বাবা রইল।চারদিন খুব দুশ্চিন্তায় কেঁটেছে অবশেষে বাবার জ্বর ছেড়েছে।
আজকে ব্যাংকে থেকে 2000 টাকা উঠিয়েছি। বাবার ঔষধ আনতে হবে নিয়মিত ওষুধ না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। টিউশনির টাকা তো এখনই পাবো না কেবল মাত্র 14 দিন পরানো হল। এই মাসটা টাকা উঠিয়ে চলতে হবে।ব্যাংকে বেশি টাকা নাই 10000 মতো আছে টাকাগুলো বাবার ওষুধ এ খালি খরচ করি।
ফার্মেসি তে গিয়ে ওষুধ কিনে আনলাম। তারপর সোজা বাসা। বাসায় আসতেই রানী রায়া কে কোলে নিয়ে আমার রুমে ঢুকলো । উপরের ওর সাথে দেখা।
রানী কে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম,,
কি ব্যাপার রানি মুখে। খুব হাসি খুব ভালো আছে দেখছি।
“হ আপা আমি তো খুব ভালা আছি। সব আপনের লিগা হয়ছে।”
“আমার জন্য কিছু হয়নি রানী। তোমার ভাগ্যে ছিল বিধায় তুমি এখানে আসতে পেরেছো।”
“আপনে সেদিন না আনলে তো রাস্তায় না খেয়ে মরতাম।”
“এসব কথা আর বলবা না। রুনা আপু কি করছে?”
“আপা তো দুধ জাল দিতাছে।”
“আচ্ছা তুমি আসো ভেতরে আসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
“আইচ্ছা।”
ফ্রেশ হয়ে এসে বাবার সাথে একটু দেখা করে। রায়া কে একটু কুলে নিলাম। তারপর রান্না ঘরে গেলাম আমার সাথে রানী এলো।
দেখতে দেখতে এক মাস চলে গেল। সময়টা মোটামুটি ভালই যাচ্ছে টিউশনির বেতন ও পেয়েছি।
ঠিকমতো ভার্সিটিতে যাওয়া আসা করি। যারা আমাকে দেখতে পারে না তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখি।
ক্লাস টাইমে ভার্সিটিতে ক্লাস করি অন্তরের সাথে হালকা আড্ডা আবার ক্লাস শেষ হলেই সোজা টিউশনিতে চলে যায় তারপরে বাসা।
এভাবে আমার রুটিন চলছে। এর আর আদ্রর সাথে তর্ক বিতর্ক হয় নাই।নিজে থেকে তাকে সবসময় এরিয়ে চলেছি দূর থেকে দেখেছি সে আমার সাথে আর কথা বলতে আসে নাই।
আজকে দু’দিন হলো আমি ভার্সিটিতে যাইনা টিউশনিতে যেতে পারি নাই। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে উপায় নাই। কারণ সকাল থেকে মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা হয়েছিল সেখান থেকেই খাট পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে বিছানায় পড়ে আছি। রুনা আপু খাবার দিয়ে যায়। রানি এখন আমার সাথে থাকে। দেখাশোনা করার জন্য রুনা আপু থাকতে বলেছে। অন্তরা আসছিল আজকে বিকেলে দেখা করতে।
রাত 11 টা মতো বাজে।
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছি।
হঠাৎ রিংটোন বেজে উঠল। এত রাতে ফোন বাজতে কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। সচরাচর আমার ফোনে ফোন আসে না খুব একটা। রাতে আটটার অন্তরার ফোন ও ছাড়া আমাকে আর ফোন দেয়ার মত কেউ নাই।
গ্রাম থেকে এক ফ্রেন্ড সপ্তাহ মাসের একটা-দুইটা ফোন দেয়।
কিন্তু এখন কে ফোন দিচ্ছে ভয়ে আমি ফোন হাতে নিছি না। অনবরত ফোন বেজে যাচ্ছে তাই ভয় ডর ভুলে ফোন হাতে নিল।যদি কেউ দরকারে ফোন দিয়ে থাকি। বিশেষ করে অন্তত দিতে পারে কোন দরকারে।
নাম্বার দেখে বিরক্ত হলে একটা অচেনা নাম্বার এটা আবার কার নাম্বার। কিছুটা ভয় পেল।
ধরার সাহস হলো না ফোনটা ধরলে না। ফোনটা কেটে গেল। ফোন কাটতে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। মনে হয় বড় কোন বিপদ নিজের সরিয়ে দিল।
অনেকদিন আগে ওর ফোনে উল্টাপাল্টা নাম্বার থেকে ফোন আসতো। তারা বাজে কথা বলতে ফোন দিয়ে আবার রং নাম্বার বলে কেটে দিত। আজকে কি বাজে কথা বলবে। এরকম রং নাম্বারে ফোন না ধরার ভালো।
ফোন রেখে দিলাম দেখলাম তিনবার ফোন এসেছে। আমার ভাবনার মাঝে তিনবার ফোন কখন চলে এলো। কিছুই বুঝতে পারলাম না থাক বাঁচা গেছে।
নিশ্চিন্ত হয়ে চোখ বন্ধ হয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলাম।কিন্তু আমার কপাল খারাপ ঘুমাতে দিল না আবার টোন করে শব্দ হলো।
কিন্তু এটা ফোনে শব্দ না মেসেজের শব্দ। মেসেজটা না দেখি ফোনটা সাইলেন্ট করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে।
ফোন হাতে নিলাম কয়টা বাজে দেখার জন্য। ফোন হাতে নিয়ে আমার চোখ কপালে উঠে গেল। ফোনে না হলেও 20 টা কল দশটা মেসেজ।
হন্তদন্ত হয়ে উঠে বসলাম।
আল্লাহ এতো ফোন কে দিল আমাকে সেটা দেখার জন্য কল লিস্টে গিয়ে দেখি। সেই অচেনা রং নাম্বার থেকে।
আর প্রতিটা মেসেজের একটা কথাই ফোন না ধরলে খবর আছে, ফোন ধরো ফোন, ধরতে বলছি।
চলবে♥️
#অচেনা_শহর💖
#লেখিকা:– তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:— ১৯
“কিরে তোর মুখটা এমন হয়ে আছে কেন?”
অন্তরার প্রশ্নে স্নেহা চমকে তাকালো।
“কি রে ভয় পেলি নাকি।”
মাথা নেড়ে না বলল।
“তাহলে চমকালি কেন?”
“চুপ কর তো ভাল লাগছেনা।”
“কি হয়েছে সত্যি করে বল?”
স্নেহা ভাবছে ফোন এর কথাটা অন্তরাকে বলবে নাকি। আবার পরক্ষণেই ভাবনা বাদ দিল। থাক আরতো ফোন দেয়নি। মা ফোন মেসেজ রাতে দিয়েছিল। সকালে সব কিছু দেখে আমি চমকে গেছিলাম। ভয় ও পেয়েছিলাম তার জন্য অনেক কিন্তু সকালে আর ফোন আসে নাই।
তাই সবকিছু বাদ দিয়ে রেডি হয়ে ভার্সিটিতে আসি তারপরে ক্লাস রুমে বসে থাকি চুপ করে। আর একটা জিনিস আমার খেয়াল হয়। গেট দিয়ে মাঠ পেরোতে একবার আদ্রদের দিকে আমার চোখ যায়। আদ্র সবার সাথে কথা বলছে আর কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।
সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দ্রুত পায়ে ক্লাসে চলে আসি।
আনমনে বসে ছিলাম।
তারপরে হঠাৎ অন্তরা এই প্রশ্ন।
“কিরে তোর মত মুড এত অফ কেন? কি এত ভাবনা চিন্তা করছিস?”
“কিছু না কি আবার ভাববো?”
“আচ্ছা এখন তোর শরীর ঠিক আছে তো।”
“হ্যাঁ।”
“আঙ্কেল কেমন আছে?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”
অন্তরের সাথে কথা বলতে বলতে ক্লাসমেট টাইম হয়ে যায়।
দুজনে ক্লাস করে একসাথে ভার্সিটি থেকে বের হই।
এখান থেকে সোজা টিউশনিতে যাব। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি। অন্তরা আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।
“স্নেহা, চল ফুচকা খাই।”
” আমি খাব না। তুই খা।”
“ধুর একা খেতে ভালো লাগে নাকি। তোকে প্রতিদিনই বলি আর তুই প্রতিদিনই এক কথা বলিস।”
“আমার ফুচকা পছন্দ না। তুই খা না আমার জন্য কেন তুই খাস না।”
“আজকে তোর কোন কথাই শুনছি না। চলতো ফুচকা খাবে আমার সাথে। আজকে তোকে খেতেই হবে।”
অন্তর আমার কথা না শুনে টেনে ফুচকাওয়ালা সামনে নিয়ে গেল।
ফুচকা আমার পছন্দ না এমন না।আমাদের গ্রামেও ফুচকা পাওয়া যেত দুই তিনবার খেয়েছিলাম খেতে খুব টেস্টি।কিন্তু হাত দিয়ে বাড়তি টাকা না থাকায় এখন ইচ্ছে থাকলেও খায় না। এ জন্য প্রতিদিন অন্তরাকে বলি আমার ফুচকা পছন্দ না।
আমার সাথে রাগারাগি করে প্রতিদিন চলে যায়। একা খেতে বললে কখনোই খায় না। আজকে ও তাই হলো কিন্তু জোর করে আমাকে নিয়ে গেল। এখন টাকা পাব কোথায়? হাতে মাত্র 10 টাকা আছে। এই টাকা ভাড়া দিয়ে টিউশনিতে যেতে পারবো আসার সময় হেঁটে আসতে হবে। পা ব্যথা হয়ে যায় কিন্তু কিছু করার নেই তাড়াতাড়ি না গেলে রাগারাগি করে এজন্য যাওয়ার সময় গাড়িতেই যায়। যাতে লেট না হয়।
আসার সময় হেটে সময় করে চলে আসি। বেলা থাকে পড়া শেষ এজন্য আসতে আসতে এক ঘন্টা লাগে। সন্ধ্যার আগেই বাসায় পৌঁছাতে পারি।
“অন্তরা হাত ছার। আমি খাব না বললাম তো। তবুও টেনে আনলি কেন?”
“আজকে তোকে খেতেই হবে পছন্দ না হোক তবু ও খেতে হবে।আমার জন্য প্লিজ!!”
অসহায় মুখ করে কথাটা বললো অন্তরা মায়া হলো খুব কিন্তু…
“কিন্তু আমার তো বারতি টাকা নাই। তুই খা আমি তোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকি।”
“টাকার জন্য তার মানে তুই এতখন না করছিলি?”
“না আসলে…
“চুপ । আমি কি তোকে একবারও বলছি তুই টাকা দে। তুই আমার সাথে খাবি এইজন্য তুই তারমানে প্রতিদিন না করিস। শাকচুন্নি তুই আমাকে নিজের ফ্রেন্ড মনে করিস না তাই না।”
“আসলে তা না। প্লিজ রাগ করিস না। নিজের অসহায়ত্বের কথা আসলে কাউকে বলতে খারাপ লাগে।”
“তুই আমাকে কাউকে বানিয়ে দিলি আমাকে তুই আপন মনে করিস না তাই না। একথা বললে কি হতো আমি কি তোকে বুঝতাম না।”
“আচ্ছা সরি কান ধরছি প্লিজ রাগ করিস না।”
“অন্তরা প্রচন্ড রেগে গেছে।অনেক কষ্টে ওর রাগ কমালাম তার সর্ত ওর সাথে আমাকে ফুচকা খেতে হবে।”
কি আর করব না রাজি হয়ে গেলাম। অনেকদিন পর ফুচকা খাচ্ছি । ঝাল করে আমার পছন্দ না কিন্তু অন্তরা খুবই পছন্দ ওই জন্য আমাকে কেউ ঝাল করে খেতে হচ্ছে। বরাবরই আমি ঝাল পছন্দ করিনা। ঝাল খেতে পারিনা ছোট থেকেই। কিন্তু অন্তরা এখানে এসেই বলেছে ঝাল করে ফুচকা দিতে। ওর নাকি ঝাল করে ফুচকা পছন্দ।
আমি না করি নাই কিছু বলতে পারিনাই।
ফুচকার দিকে তাকিয়ে আছে মরিচগুলো মনে হয় গুলিয়ে দিয়েছে। টকটকে লাল হয়ে আছে। ফুসকা দেখে একটা ঢোক গিললাম…
“কিরে খাচ্ছিস না কেন? তুই কিন্তু বলেছিস খাবি।”
“হ্যাঁ খাচ্ছি।”
বলেই একটা ফুচকা নিয়ে মুখে দিলাম। প্রচন্ড ঝাল অনেক কষ্টে গিললাম।
“অন্তরা আর খাব না তুই খা।”
“কি বললি তুই খাবি না।আজকে যথি তুই সবগুলো ফুসকা না খাস। তাহলে আর কোনদিন তোর সাথে আমি কথা বলব না।”
“দেখ আমার না প্রচুর…”
“নো এক্সকিউজ আমি জানি তুই এখন নানান বাহানা বানাবি না খাওয়ার জন্য।”
আমার যে প্রচুর জ্বর লাগছে। এটা আমি খেতে পারব না। সেটাও অন্তরা শুনতে রাজি নয়। অসহায় মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।ওর একটা কথা না খেলে আমার সাথে আর কথা বলবে না।
চুপচাপ খেতে লাগলাম। এতো ঝাল গলা জ্বলে যাচ্ছে কান দিয়ে মনে হয় ঝাল বের হচ্ছে।
চোখ বন্ধ করে নিচু গপাগপ খাচ্ছিলাম।এখন আর খাওয়া সম্ভব না। আরেকটা আমি খেতে পারব না। অন্তরার দিকে তাকিয়ে যে পানি চাইবো তাও হলো না।
অন্তরা ফুচকার প্লেট নিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের সাথে ঝগড়া করছে।
ওকে ডাকছি কিন্তু ওর কানে কথা যাচ্ছে না। আর যাবেই বা কি করে যেভাবে চিৎকার করে কথা বলছে।
ফুচকাওয়ালার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“চাচা পানি হবে।”
“না তো মা পানি তো নাই। তোমার মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে ।তুমি কি ঝাল খেতে পারো না?”
“না চাচা আসলে অন্তরা এত জোর করলো তাই খেলাম এখন তো ঝালে আমি মরে যাচ্ছি মনে হয়।”
ঝালে চোখ দিয়ে নাক দিয়ে পানি পড়ছে। হঠাৎ কেউ পানির বোতল আমার সামনে ধরল।আমি কে ধরল কিছু না দেখে আগে বোতলটা নিয়ে পানি ঢকঢক করে খেতে লাগলাম।
পানি খেয়ে কমছে না।আমি পাঁচ মিনিটের মতো পানি খেতে খেতে অর্ধেকের বেশি খেয়ে ফেলেছি। আস্তে আস্তে ঝালে পরিমাণ টা মনটা হালকা কমে এলো। এবার আমার মাথায় এলো আমাকে পানি দিল কে?
সামনে তাকিয়ে দেখি আদ্র হাতে বোতলের মুখা নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হিংস্র ভাবে তাকিয়ে আছে যা দেখি আমি একটা শুকনা ঢোক গিললাম।
চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে তাকিয়ে আছে মনে হয় চোখ দিয়ে আমাকে ভষ্স করে দেবে।
“আপ ..নি”
আমি কথা বলতে চেচিয়ে বলে উঠলো,,
“ইডিয়েট গার্ল যেটা খেতে পারো না সেটা কেন খেয়েছ হ্যা। এতটা কেয়ারলেস কেউ হতে পারে আমার জানা ছিল না। ঝাল খেতে পারো না সেই ঝাল খেয়ে নিজের কি অবস্থা করেছে একবার দেখেছো।”
অবাক দৃষ্টিতে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি। চিৎকার করে বলছে ঠিকই। কিন্তু কথা বলার সময় আমার জন্য চিন্তিত ওঅস্থিরতা দেখছি। আচ্ছা আমাকে নিয়ে চিন্তা কিন্তু না কেন আমার যা খুশি হোক এতে তার কি?
মনের কথা মনেই রইল। বলার সাহস হলো না। এমন ভাবে চিৎকার করে কথাগুলো বলছে। আমি কিছু বলতে পারলাম না ।
“কি হলো এমন হা করে তাকিয়ে আছো কেন?বোতল দিতে বলছি না!”
এবার আমার ধ্যান ভাংলো আমি তো আদ্রর কে নিয়ে ভাবনার জগতে পা দিয়ে দিচ্ছিলাম। আদ্র কি বলেছি আমি কিছুই শুনিনাই। এবার শুনতেই কাঁপা কাঁপা হাতে বোতলটাকে এগিয়ে দিলাম।
কটমট চোখে আমার দিকে তাকিয়ে।বোতলটা নিজের হাতে নিয়ে দুই কদমে গিয়ে কি মনে করে আবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
“আর যেন এমন কেয়ারলেস হতে না দেখি। কথাটা মাথায় রেখো।”
বলেই বড় বড় পা ফেলে বোতল নিয়ে চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। কি থেকে কি হলো সব মাথার উপর দিয়ে গেল। আচমকা আদ্রর এখানে আসা আবার চলে যাও।আমার বিপদ হলে কি এই একজন কি সবসময় আমার সামনে আসতে হবে। কিছুই বুঝিনা।
আদ্র নিজের মত চলে গেল একবার ও পেছনে চাইলো না।
এর মাঝে অন্তরাও চলে এসেছে।
ও কিছু টা শুনেছি মনে হয়।
আমার কাছে এসে সরি বললো আমি মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলাম। ওর জন্য সবকিছু হয়েছে।ওর জন্য এতগুলো কথা শুনতে হলো আদ্রর কাছে।
অন্তরা বিল দিয়ে স্নেহার পিছনে আসবে তারা আগেই স্নেহা গাড়িতে উঠে চলে গেল।
অন্তরা ফুচকাওয়ালা থেকে শুনতে পেয়েছে স্নেহা ঝালের জন্য কি হয়েছিল। সবসময় নিজেক গিল্ট ফিল করতে লাগলো। ইস আমার একটু বোঝা উচিত ছিল।
মন খারাপ করে ফুচকাওয়ালার সামনে দাঁড়িয়ে রইল।
“কি ব্যাপার ম্যাডামের মন খারাপ নাকি?একটু আগেই তো আমার সাথে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করছিলে। বাপরে বাপ এত ঠান্ডা হয়ে গেলে কিভাবে? একটু সময়ের মাঝে।”
ব্রু কুচকে অবাক হয়ে কথাটা বলল হৃদয়।
“কি হলো ম্যাডাম এখন কথা বলবেন না নাকি।”
“দেখুন আমার মনটা এখন এমনিতেই খারাপ। আপনি আমাকে একদম রাগানোর চেষ্টা করবেন না।”
“আরে আরে তোমাকে আমি রাগাবো কেন? আমার সব কথাই তুমি শুধু রাগ খুঁজে পাওনি কি শুধু। ভালোবাসা খুঁজে পাওনা। আমি তো তোমার সাথে রাগারাগি ঝগড়াঝাঁটি করতেই চাইনা। শুধু ভালোবাসার কথা বলতে চাই কিন্তু তুমি তো বলতে দাও না।”
“আপনি আসলে একটা ছ্যাসড়া। বলছি আমার মন খারাপ তাও আপনি আবার আজেবাজে কথা বলছেন।”
“এইসব কথা তোমার আজে বাজে মনে হচ্ছে।আমি তো ভালো কথা বলছি।”
“আপনি কিন্তু….
রেখে চিৎকার করে কথাটা বললাম অন্তরা।
” ওকে, ওকে বলছি না। এবার বল কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ কি জন্য?”
অন্তরার কি হলো কে জানে ও ভালো ভাবে সব খুলে বলল হৃদয় কে। কেন বলল নিজেও জানেনা। হৃদয় অবাক হয়ে অন্তরার মুখের দিকে তাকিয়ে ঠান্ডা মেজাজে কথা শুনছিলো।
“ও বুঝতে পেরেছি। আজকে ত আর তাকে পাবে না কালকে আসলে সরি বলে দিও। দেখ ক্ষমা করে দিবে। চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।”
অন্তরা হৃদয়ের সাথে চলে গেল বাসায়। এই ফাস্ট ওরা ঝগড়া ছাড়া এক ঘণ্টা কাটালো।
অন্তরা বাসার সামনে আসতেই।ওকে নামিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেল হৃদয়।
অন্তরা ও কেন জানি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হৃদয়ের গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইল। যতখন গাড়িটা দেখা গেলে ওই ভাবে তাকিয়ে রইল। আস্তে আস্তে গাড়িটা অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর গেট লাগিয়ে ভেতরে চলে গেল।
অন্তরার বাবা একটা বেসরকারি কোম্পানিতে জব করে। ওরা তিন বোন। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে তার নাম অহনা। একটা ছেলে আছে ছোট দুই বছরের। মেজ অন্তরা। আর ছোট বোন এবার ক্লাস নাইনে পড়ে। নাম অলি।
বাসায় ঢুকতেই অলি হামলে পড়ল ওর উপর।
“কিরে এমন হাসছিস কেন?”
“আপু নিচের ছেলেটা কেরে?”
কথাটা শুনতে ই অন্তরা থতমত খেয়ে গেল।
হৃদয় কে তাহলে অলি দেখে ফেলেছে। এখন কি হবে ও যদি আব্বু আম্মুকে বলে দেয়। ভয় ভয় চোখে তাকিয়ে আছে অলির দিকে।
“কি দে খে ছিস কো ন ছে লে আমার সাথে তো কোন ছেলে আসে নাই।”
তোতলাতে তোতলাতে কথাটা বললাম।
“মিথ্যা বলে লাভ নাই আপু। আমি দেখেছি নিচে একটা ছেলে তোমাকে অটো থেকে নেমে বিদায় জানানোর চলে গেছে। তুমি সেখানে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলে তার দিকে যাওয়ার দিকে। কি ঠিক বলছি না?”
সাথে সাথে কেশে উঠলো অন্তরা । হৃদয়ের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই ঠিক কিন্তু। যদি আমাদের বাসায় কোন ছেলে আমার সাথে এসে ছিল এটা জানতে পারে তাহলে। তাহলে বাবা নিশ্চিত আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলবে।কারণ এমনিতে বাবা পড়াতে চেয়েছিল না ভেবেছিল অনার্স উঠলেই বিয়ে দিয়ে দিবে।
এক প্রকার জোর করে লেখাপড়া করছি। এখন সব আশায় জল ঢেলে দেই ওই শয়তানটা। না কিছু তো একটা করতে হবে। যেভাবেই হোক অলির মুখ বন্ধ করতে হবে।
“কি বাবা মাকে বলবো তুমি এখন প্রেম করো লেখাপড়া বাদ দিয়ে।”
“লক্ষ্মী বোন আমার। বাবা মাকে কিছু বলিস না প্লিজ তুই যা চাবি তাই দিব।”
অলি মনে মনে এটাই চাইছিল মনে মনে বলে এইতো লাইনে আইছো। তা ওএকটু বাজিয়ে নেই।
“না না আমাকে ঘুষি দিয়ে লাভ নাই। কথাটা তো আমি বাবা-মাকে বলবোই।যে তুমি একটা ছেলের সাথে প্রতিদিন গাড়ি করে আস। সে তোমাকে বাই বলে তুমি ও তাকে বাই বলো। তারপর ইদানিং তো তুমি ফোনে কার সাথে কথা বল। রাতে আমি সব শুনেছি।”
ওরে আল্লাহ এই মাইয়া বলে কি?রাতে মাঝে মাঝে হৃদয় ফোন দেয় ওর সাথে ঝগড়া করি কিন্তু তো ও ঘুমে থাকে কিন্তু এখনতো দেখছি সে আমার পেছনে পুলিশের মত চোখ কান খোলা রেখে নজর রাখে।
“লক্ষী সোনা বোন আমার। প্লিজ বলিস না তার বিনিময় কি চায় তাই বল।”
“আচ্ছা একটা শর্তে আমি মুখ বন্ধ রাখতে পারি।”
সাথে সাথেই অন্তরা জিজ্ঞেস করে, “কি শর্ত তাড়াতাড়ি বল?”
“আমাকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে আর একটা বড় মেকআপ বক্স কিনে দিতে হবে।”
বড় বড় চোখ করে অলির দিকে তাকিয়ে আছি।
“কি হলো পারবে তাহলে আমার মুখ বন্ধ থাকবে।
না হলে যাই বলে আসছি আম্মু কে।”
“আচ্ছা আচ্ছা এখন টাকা নাই হাতে। কয়েকদিন পর।”
“আচ্ছা।”
বলে চলে গেল অন্তরা।
রাতে আর হৃদয় ফোন দেইনি ।ফোন দিলে ওর উপর রাগ ঝারতো ওর জন্য এত কিছু হয়েছে?
পরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে। স্নেহাকে আগে সরি বললাম। সে কি রাগ স্নেহার অনেক কষ্টে রাগ কমানোর চেষ্টায় সফল হলাম।
তারপরও কে ক্লাসে রেখে আমি হৃদয় কে খুঁজতে বেরিয়ে হৃদয়কে পেয়েও গেলাম।
“এই যে শুনুন আপনার সাথে আমার জরুরী কথা আছে।”
“আরেব্বাস, আমার সাথে তোমার জরুরী কথা আছে। রিয়েলি, আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না।”
“একদম ন্যাকামো করবেন না। আমি আপনার ন্যাকা কথা শোনার জন্য আসিনাই।”
“আচ্ছা বলো কি জরুরী কথা তার আগে বল কেমন আছো?”
“ইউ আপনার জন্য ভালো থাকা যায় নাকি।অসম্ভব কালকে আপনি আমার সাথে বাসায় গিয়েছিলেন সেই টা আমার ছোট বোন দেখে ফেলেছে। আর এখন সেইটা নিয়ে ভেবেছি আমার সাথে আপনার কোন সম্পর্ক আছে।তাই নিয়েও আমাকে শর্ত দিয়েছে ওকে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে। আর বড় একটা মেকআপ বক্স কিনে দিতে হবে। যদি না দেই তাহলে আমাকে সব আব্বু আম্মু কে বলে দেবে।”
“ওই ব্যাপার আচ্ছা যাও তোমার হয়ে আমি না হয় সব করলাম।”
“মানে।”
“এই ধরো। তোমার বোনের ডিমান্ড না হয় আমি পূরণ করলাম। আমার জন্য যেহেতু সমস্যা হয়েছে আমি সলভ করে দিলাম।”
চোখ ছোট ছোট করে অন্তরা হৃদয়ে দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদয়ের ঠোটের মুচকি হাসি।
“কি আমার অফারটা পছন্দ হয়েছে?”
চলবে♥️