অচেনা মানুষের মাঝে পর্ব-০৪

0
905

#অচেনা_মানুষের_মাঝে
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৪

সামান্তার এমন আকাশ পাতাল ভাবনার মাঝেই তিথির কন্ঠ কানে এলো তার। তিথি তাকেই ডাকছে। তিথি কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে ছাউনির মাঝে।

সামান্তা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে এগিয়ে গেল ছাউনির দিকে। তিথি রাগ দেখিয়ে বলল “এই বৃষ্টির মধ্যে ভিজলে যদি জ্বর আসে তখন কি করবি।”

সামান্তা মাথা নিচু করে সব শুনতে লাগলো। তিথির কথার মাঝেই সামান্তার পরপর দুইটা হাঁচি পড়লো। তিথি আর দেড়ি না করে সামান্তা আর রেদওয়ানকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে এলো।

সামান্তাকে সোফায় বসিয়ে ওর মাথা মুছিয়ে দিতে লাগলো। সামান্তা বুঝতে পারছেনা এতো কম সময় মানুষ দুটো কিভাবে তাকে এতোটা আপন করে নিলো। যেখানে নিজের আপনজন দূরে সরিয়ে দিলো।

————

সামান্তার জ্বর এসেছে। সামান্তাকে জলপট্টি দিচ্ছে তিথি। রেদওয়ান গুটিসুটি মেরে বোনের মাথার কাছে বসে আছে। চোখমুখ ছোট হয়ে আছে বাচ্চাটার।

রেদওয়ান রুমে প্রবেশ করতেই ওর পিছু পিছু রুমে প্রবেশ করলো আয়ান।

আয়ানকে আসতে দেখে তিথি বসা থেকে উঠে গেল। অস্থির কন্ঠে বলল “দেখ তো আয়ান কি হলো মেয়েটার!”

আয়ান সামান্তার জ্বর চেক করে নাপা খাইয়ে দিলো। আর কোনো সমস্যা নেই বলে জানালো।

রাশেদ আর তিথি সস্থির নিশ্বাস নিলো। আয়ান এবার চোখ ছোট ছোট করে গম্ভীর কন্ঠে তিথি আর রাশেদকে উদ্দেশ্য করে বলল
“ছোট আম্মু ছোট আব্বু তোমরা হঠাৎ এতো বড় মেয়ে দত্তক নিতে গেলে কেন! আর তোমাদের বিয়ের মাত্র তিনবছর হয়েছে। চিকিৎসা করলে বাচ্চা হয়ে যাবে। আর বাচ্চা যদি দত্তক নিতেই তাহলে একদম ছোট ছোট যে বাচ্চা পাওয়া যায় সেগুলো নিতে। আর দুটো বাচ্চা একসঙ্গে কেন দত্তক নিলে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা। একটু বুঝিয়ে বলবে আমায় তোমরা।”

আয়ানের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল রাশেদ। তিথিকে রেদওয়ান আর সামান্তার খেয়াল রাখতে বলে আয়ানকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেল রাশেদ।

———-

রাশেদ আর আয়ান বসে আছে আয়ানের রুমে। আয়ান চোখ ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে আছে রাশেদের দিকে। রাশেদ বলা শুরু করলো

“তোর দাদার দুটো বউ ছিল। তোর দাদি মানে আমার আর তোর বাবার মা ছিল তোর দাদার দ্বিতীয় বউ। আর বড় মার ছিল দুই মেয়ে। আব্বু আরেকটা বিয়ে করায় বড়মা এই সংসার ত‍্যাগ করে চলে যায়। তুই তো জানিস আমি তোর বাবার বারো বছরের ছোট। আমি এগুলো বিষয়ে জানতাম। কিন্তু একদিন আমার ব্লাডের প্রয়োজন হয়। সেইদিন বড়মার বড় মেয়ে অর্থাৎ রাইমা আপা সেইদিন আমাকে ব্লাড দিয়ে বাঁচায়। আবার আমরা যখন বিজনেস এ লস খাই । তখনও রাইমা আপা নিজের হাতের গহনা খুলে দেয় সাহায্যের জন‍্য। ওনি আমাদের ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ করতেন। আর রাইমা আপার মেয়ে হচ্ছে সামান্তা।”

আয়ান অবাক কন্ঠে বলল “ছোট আব্বু তুমি এগুলো কি বলছো!”

রাশেদ শান্ত চোখে তাকালো আয়ানের দিকে। তারপর ‍বলল “হুম যা বলছি তা সত্যি। রাইমা আপার চেহারার সঙ্গে সামান্তার চেহারার অনেকটাই মিল বলে আমি খোঁজখবর নিয়ে সবকিছু জানতে পারি। তাই ওদের নিরাপত্তার কথাভেবে আর সবটা পর্যবেক্ষণ করে আমি তিথিকে বলে ওদের দত্তক নেই। আর তিথির ও মেয়ের শখ ছিল। আর তুই তো জানিস তিথি কখনো মা হতে পারবেনা। তাই আর…”

আয়ান গালে হাত রেখে বলল “ওহ বুঝলাম। তাহলে ওরা আমার ফুপাতো ভাইবোন। তা আব্বু আম্মুকে জানিয়েছ।”

রাশেদ শান্ত সুরেই বলল “হুম জানিয়েছি সব ভাইয়া ভাবিকে। তারাও খুশি হয়েছে। তোর ছোট ভাইটাও খেলার সাথি পাবে। ভালোই হলো।”

আয়ান গালে হাত দিয়ে কি যেন একটা ভাবতে ভাবতেই “হুম” বলল।

——————-

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেঙে গেল সামান্তার। সামান্তা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকাতেই তিথির ঘুমন্ত মুখটা ভেসে উঠলো সামান্তার চোখের সামনে। সামান্তা মুচকি হাসলো। রেদওয়ান গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। শরীরটা দুর্বল লাগছে খুব সামান্তার। আস্তে করে তিথির হাত নিজের ‍গায়ের উপর থেকে সরিয়ে উঠে পড়লো সামান্তা। ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

—————

ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রুমে রাশেদ আর আরেকটা ছেলেকে দেখতে পেল সামান্তা। তিথিও উঠে পড়েছে। সামান্তা কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইলো ছেলেটির দিকে। রাশেদ হেসে সামান্তাকে উদ্দেশ্য করে আয়ানকে দেখিয়ে বলল “ও আমার বড় ভাইয়ের ছেলে আয়ান আহমেদ। তোর বড় ভাই হয়।”

সামান্তা আলতো হেসে সালাম দিলো আয়ানকে। আয়ানও তার উত্তর দিয়ে বলল “এখন কেমন আছো? জ্বর কমেছে?”

সামান্তা হ‍্যাঁবোধক মাথা নাড়ালো। আয়ান চলে গেল রুম থেকে। রাশেদ সামান্তাকে রুমেই থাকতে বলল। তিথি তার খাবার আনতে নিচে গেছে তাও জানিয়ে গেলেন।

সামান্তা রেদওয়ানের পাশে বসে ওর চুলগুলো বুলিয়ে দিলো। মুচকি হেসে ঠোঁট ছোঁয়ালো রেদওয়ানের কপালে। উঠে গিয়ে বারান্দার গ্লাস সরিয়ে দাড়ালো বারান্দায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে। একটু আগেই রোদ ছিল। এখন আবার বৃষ্টি। আকাশে নানা রঙ নানা সময়। সামান্তা একদৃষ্টিতে দেখতে লাগল বৃষ্টি।

তিথি সামান্তাকে টেনে রুমে নিয়ে এলো। আর বলল “তোর না জ্বর এসেছে তুই কেন বারান্দায় গেছিস। আয়ান ঔষধ দিলো বলেই রাতের মধ্যেই জ্বরটা নেমে গেছে। এখন যদি আবার আসে তখন।”

সামান্তা আনমনা হয়ে বলল “কি আর হবে কিছু হবেনা।”

তিথি এবার রাগী কন্ঠে বলল ” পাগল হয়ে গেছিস। কতটা কষ্ট পাবি বল তো। এখন কোনো কথা না নাস্তা করে নে। আমি রেদওয়ানকে ফ্রেশ করে খাইয়ে দিচ্ছি। এসে যেন দেখি খাবার শেষ।”

সামান্তাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে টেবিলে রাখলো খাবারের প্লেটটা। সামান্তা দেখলো একটা ডিম একগ্লাস দুধ আর কিছু ফল। সামান্তা কপালে ভাঁজ ফেলে বলল “আন্টি আমি এগুলো খাবোনা।”

তিথি দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামান্তার পাশে বসলো। দুধের গ্লাসটা সামান্তার মুখের সামনে ধরে বলল ” তোকে খেতেই হবে। এমনি শরীরটা দুর্বল হয়ে পড়েছে জ্বরের কারণে। আর আন্টি না এমন থেকে আমাকে আর রাশেদকে মামুণি আর বাবাই বলে ডাকবি। ঠিক আছে।”

সামান্তার চোখ ছলছল করে উঠলো। তবুও ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বলল “আম্মুও না আমাকে এমন জোর করে খাইয়ে দিতো আর এমন করেই বকাবকি করতো।”

তিথি বুঝতে পারলো সামান্তার মনের কথা। সামান্তার মাথা টেনে বুকে জরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো তারপর বলল “এখন খেয়ে নে তো। বিকেলের মধ্যেই আবার তোর বড় আব্বু বড় আম্মু চলে আসবে।”

সামান্তা জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকালো তিথির দিকে। তিথি হেসে বলল “আয়ানের মা বাবা আসছে। তারা কিছু কাজে গ্রামে গিয়েছিল আজ ফিরবেন।”

সামান্তা ছোট করে বলল “ও”

তিথি সব সার্ভেন্টকে দিয়ে বিভিন্ন পদের রান্না করাচ্ছে। আর সামান্তা খাবার টেবিলের একটা চেয়ারে বসে সব দেখছে। সামান্তা সাহায্য করতে চেয়েছিল কিন্তু তিথি ধমক দিয়ে বসিয়ে রেখেছে ওকে। রেদওয়ান খেলা করছে পাশেই।

হঠাৎ

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে