হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া পর্ব:6

1
8676

হারিয়ে যাওয়া পথ খুজে পাওয়া

পর্ব:6

লেখা –সুলতানা ইতি

আনুশা: ইচ্ছে করে এখন এই কলেজ থেকে চলে যাই,এই ছেলেটা যে ভাবে আমার পিচনে লেগেছে, তাতে বুঝতে পারছি এই কলেজ এ থাকলে শান্তি পাবো না, কিন্তু যাবো কোথায়?
অহ এই সময় আবার কে ফোন দিলো, ওও অন্নি
হ্যালো অন্নি কি খবর তোর

অন্নি: হুম আমি ফোন দিলেই খবর জানতে চাস,নিজে থেকে কখন ও ফোন করেছিস

আনুশা: প্লিজ অন্নি রাগ করিস না সময় পাই না আর আজ থেকে তো মোটে ও পাবো না জানিস প্রিন্সিপাল স্যার আর দুটো টিউশনি খুজে দিয়েছে আমায়

অন্নি: জানি আমি,এখন বল নতুন কলেজ নতুন ফ্রেন্ডস কেমন লাগছে

আনুশা: নতুন ফ্রেন্ডস মাই ফুট

অন্নি : রেগে যাচ্ছিস কেনো কি হইছে বল

আনুশা: কি হয়নি সেটা বল,তার পর অন্নিকে প্রথম থেকে সব কথা বললাম

অন্নি: ???????বলিস কিরে হুহুহুহুহুহুহুহুহু হা হা হা হা

আনুশা: অন্নি???????

অন্নি: ওকে ওকে আর হাসবো না,তবে ছেলেটি মনে হয় তোকে সত্যি লাভ করে রে

আনুশা: অন্নি তুই সব জেনে ও এই কথা বলছিস,ভালোবাসা সম্পর্ক। এই সবের প্রতি আমার বিশ্বাস নেই,ভালো বাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু আছে বলে ও আমার মনে হয় না

অন্নি: তুই থাম, পৃথিবীর সবাই কি এক রকম

আনুশা: প্লিজ অন্নি এখন তুই এটা বলিস না,যে আনু তুই ছেলেটার সাথে কথা বল

অন্নি: আমি ওটা বলছি না ছেলেটা তোকে পছন্দ করে এটা ছেলেটার প্রব্লেম তোর না, তুই এই সব নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিস কেনো

আনুশা: অন্নি তুই কি বলছিস ঐ ছেলের জ্বালায় আমি ঠিক মতো ক্লাস করতে পারছি না, আর তুই বলছিস আমি????,উফফগ অন্নি তুই ফোন রাখ তো আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে

অন্নি: ওকে রাখছি মাথা ঠান্ডা হলে ফোন করিস, আল্লাহ হাফেয,

আনুশা : মনে মনে অন্নি কে বকতে লাগলো
বাসায় এসে ও মুড অফ করে বসে আছে

আনুশার আম্মু: ভেবে ছিলাম মেয়েটা পড়া শুনা করলে সবার সাথে মিসবে আবার আগের মতো হয়ে উঠবে,এই তো দেখছি পুরোই উল্টা ও আর ও গম্ভির হয়ে যাচ্ছে কিছু জিজ্ঞাস করলে ও বলবে না

আনুশা: জীবন টা কেনো আমার এমন, যখন ই ভাবলাম এখন থেকে ভালো থাকবো ঠিক তখন ই একটা ঝড়ের পূর্বাশ দেখতে পাই,
না এই সব ভাবলে হবে না আমাকে পড়া শুনা করতে হবে আমাকে অনেক বড় হতে হবে কিছু কিছু মানুষ কে বুঝিয়ে দিতে হবে,তারা না থাকলে ও আমরা ভালো থাকতে পারি

এই ভাবেই কাটছে আনুশার দিন রাত,একটু আশার আলো আর অনেক হতাশা, কলেজ টিউশনি আর পড়া শুনা,আর তানভীর এর জ্বালাতন তো আছে ই★

আনুশা : রাতের শহর টা খুব ভালো লাগে বিশেষ করে যখন জানালা দিয়ে বাইরে দেখি, তখন বড় বড় দালান গুলোর জানালা দিয়ে জোনাকির আলোর মতো লাইটের আলো বের হয়ে আসে, চার দিকে অন্ধকার, আর জোনাকির আলোর মতো এই সামান্য আলোটা মন টা একদম মাতাল করে দেয়

আনুশার আম্মু: কিরে ঘর অন্ধকার করে বসে আছিস যে

আনুশা: মা ভালো লাগছে অন্ধকার, লাইট জালিয়ে ও না তো

আনুশা আম্মু: তা বললে কি আর হয়, আনু পড়তে বসবি না আজকে

আনুশা: আজ ভালো লাগছে না মা

আনুশার আম্মু: শুনো মেয়ের কথা, আর মত্র কয়েকটা দিন আছে পরিক্ষার আর মেয়ে বলে কি,আমি অতো কিছু বুঝি না লাইট জালিয়ে দিলাম পড়তে বস

আনুশা: উফফ মা একদম কিচ্ছু বুঝে না, কি আর করা যাই পড়তে বসি,পড়তে ও তো মন চায় না কি করি

হুম ঐ দিন যে ডায়েরী কিনেছি তাতে তো কিছু ই লিখিনি, আজ লিখবো,যেই ভাবে সেই কাজ ডায়েরী নিয়ে বসে পড়লাম,

?????ডায়েরি পাতা উল্টিয়ে মাথায় বাঁজ পড়লো,আমি তো এই টা কিনার পর থেকে সময়ের অভাবে কিছুই লিখিনি,তা হলে লিখা টা লিখলো কে,পড়ে দেখি তো কি লিখেছে

” আড়ালে যত দূরে হোক ঐ আকাশ
তবুও আমি তার নিচেই হাটি প্রতিদিন
যতো টা গভীরে আছে চোখের জ্বল,

তবুও আমি করি সেখানে নিজেকে ভিলিন
রাত শেষ যখন ট্রেনের শব্দে ভোর
কাটে না তখন হাজার সপ্নের ঘোর

খুজেছি তখন অজনা সুখ ঐ চোখে
কি যেন দেখি আমি ভিশন ও ভিবর “”

বাহ কবিতা টা তো খুব সুন্দর । কিন্তু এটা লিখলো কে,,কবিতা টা একদম সেই রকম,,,
না না না কি ভাবছি এই সব আমি, এই সব সুন্দর জিনিশ গুলো উপভোগ করা আমার জন্য নয়,????? রাগে ডায়েরী টা চুড়ে মারলাম,কোন ভাবে তানভীর এই লিখাটা লিখেনি তো, ও যদি লিখে থাকে, তা হলে ওর সাহস কি করে হয় আমার অনুমতি ছাড়া আমার ডায়েরী তে কিছু লিখার????
আনুশার আম্মু’ কিরে ডায়েরী টা পেলে দিলি কেনো

আনুশা:মা তুমি এখানে,?

আনুশার আম্মু : দেখতে এলাম তুই পড়ছিস কি না

আনুশা: দেখা হয়ে গেছে,এখন যাও তো আমাকে একা থাকতে দাও

আনুশার আম্মু: তোর কি হয়েছে বলবি আমাকে

আনুশা: কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি,এখন পড়বো তুমি যাও তো মা

আনুশার আম্মু: যাচ্ছি তুই রাগ করিস না
চলে এলাম মেয়েটার যে কি হয়েছে বুঝিনা,কতো হাসি খুশি চট পটে মেয়ে ছিলো আমার,আর এখন তো হাসতে ও ভুলে গেছে

আনুশা: খুব কান্না পাচ্ছে যতো এই সব ফালতু জিনিশ থেকে নিজে কে দূরে রাখতে চাই ততই কেনো কাছে চলে আসে এই সব, আর না,আর কয়েকটা দিনই তো, এক্সাম এর পর অন্য কোথায় ও চলে যাবো,তার আগে আমাকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে,
কিন্তু আজ কিছুতেই পড়াতে মন দিতে পারছি না,খুব রাগ হচ্ছে ইচ্ছে করে সব ভেঙে পেলে দি

তানভীর : কয়েক দিন পরে এক্সাম,কিন্তু কিছু তে ই পড়তে পারছি না, সারাক্ষন মনে হয় আনুশা আমার আসে পাশে আছে কেনো এমন হচ্ছে,আনুশা কে তো আমার ফিলিংস টা বুঝাতে ই পারছি না।মেয়েটা এমন কেনো বুঝি না,ইসস ও যদি আর ও আট দশটা মেয়ের মতো হতো,তানভীর না না আমাকে ভেংগে পড়লে চলবে না,আর ও কেন অন্য মেয়েদের মতো হবে, ওর এমন ভাব দেখেই তো ওর প্রেমে পড়েছি আমি

তানভীর এর আম্মু: কিরে তানভীর কি ভাবছিস এই পড়ন্ত বিকেল এ

তানভীর : আম্মু কিছু না তো ( শুনেছি আব্বু আম্মুর নাকি লাব ম্যারেজ, আর মা বাবা যেমন হয় ছেলে মেয়ে ও নাকি তাদের মতো হয়)

তানভীর এর আম্মু: তুই যতোই বলিস কিছু হয়নি আমি বুঝি কি লুকাচ্ছিস, বল।

আম্মু তুমি ও না কি লুকাতে যাবো বলো

তানভীরের আম্মু: দেখ বাবা তুই এখন ও এতো টা বড় হয়ে যাসনি যে আমি তোর না বলা কথা গুলো বুঝতে পারবো না

তানভীর : আমি আম্মুর দিকে অভাক চোখে তাকিয়ে আছি,আর ভাবছি মেয়েদের মনটা কতো কমল তা আমার আম্মু কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না আব্বুকে তো বুঝার মতো সময় পাইনি,উনি থাকে দেশের বাইরে দুই তিন বছর পরে একবার আসে কয়েক মাস থেকে আবার চলে যায়,এই আম্মু ই আমার সব

তানভীরের আম্মু : কিরে বলবি না মায়ের কাছে

আম্মু আমার কাছে এসে মাথায় বুলিয়ে দিতে দিতস জিজ্ঞেস করলো, আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম

আম্মু: জানিস তোর আব্বু যেদিন আমাকে প্রথম দেখে অনি নাকি আমাকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে পেলে,কিন্তু আম্মু প্রথম প্রথম পাত্তা দিতাম না

তানভীর : কেনো দিতে না আম্মু

আম্মু: তোর বড় আন্টির যখন বিয়ে হয় তখন দেখলাম তোর আংকেল তোর আন্টিকে কারনে, অকারনে বকতো মারতো সেই থেকে ছেলে দের আমার ভয় হতো,কিন্তু তোর আব্বু কে দেখে আর তোর আব্বুর ভালোবাসা দেখে, আমি বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে পৃথিবীতে সব মানুষ এক নয়

তানভীর : তার মানে আনুশার জীবনে কি এমন কিছু আছে? যে জন্য ও আমাকে বিশ্বাস করতে পারছে না

আম্মু: কিরে কি ভাবছিস,মেয়েটার নাম কি,?

তানভীর : অবাক হয়ে কোন মেয়ে আম্মু

আম্মু: এতো অবুঝ সাজছিস কেনো,এখন যে মেয়েটার কথা ভাবছিস আমি তার কথা ই জিজ্ঞেস করছি

তানভীর : তুমি কি করে বুঝলে আম্মু আমি এখন কারো কথা ভাবছি

আম্মু: বুঝবো না,আমি যে মা সন্তানের মনে কি চলছে আমি তো বুঝতে পারছি,

তানভীর : সত্যি আম্মু তুমি পৃথিবীর সেরা মা,আমার লক্ষি আম্মু

হয়েছে হয়েছে আর পাম মারতে হবেনা,আমার বউ মার নামটা তো বল

তানভীর : আম্মু ওর নাম আনুশা,ও সবার থেকে আলাদা আম্মু,সারাক্ষন পড়াশুনা করে,আর চুপ চাপ থাকে,

আম্মু: কোথায় থাকে বল আমাকে আমি ওর আম্মুর সাথে কথা বলবো

তানভীর : কোথায় থাকে জানি না কথা বলতে গেলে,কিছু বলার সান্স এ দেয়না এটা ওটার বাহানা করে চলে যায়

আম্মু: ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে,অনেক দেরি হয়ে গেছে আমি নাস্তা দিচ্ছি খেয়ে পড়তে বস,আর এখন এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে পেল

তানভীর : হুম
কি হুম আয় খাবি চল,আম্মু আমাকে টেনে নিয়ে গেলো

to be continue

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে