হলুদ খাম ১১.

1
1943

হলুদ খাম ১১.

কতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নেই। ঘুম ভাঙলো দরজায় ঠকঠক শব্দে। দরজা খুলে অল্পবয়সী মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললাম

– কিছু বলবে?

মেয়েটা বিরক্ত নিয়ে বলল

– এতো ঘুমান ক্যান আপনি? কতক্ষণ ধরে দরজায় শব্দ করতাছি। 

– না মানে ক্লান্ত ছিলাম তো, তাই আরকি! 

– দাদীভাই আপনাকে ডাকতাছে। 

দাদীভাই টা আবার কে? জিজ্ঞেস করে দেখবো? অরিত্রের চাচী হবেন। তাছাড়া তো বাসায় আর কারো উপস্থিতির কথা শুনলাম না।

– দাদীভাই টা কে?

মেয়েটা দ্বিগুণ বিরক্তি নিয়ে বলল

– অরিত্র চাচার ছোটো চাচী। 

– ওহ আচ্ছা। কিন্তু কেনো ডেকেছেন?

– আপনাগো সবার জন্য নাস্তা বানানো হয়েছে। কিন্তু কেউই নাই আপনি আর…. 

 

চোখে এখনো ঘুম লেগে আছে। আর একটু ঘুমাতে পারলে ভালো হতো। মাথাটা ভার ভার হয়ে আছে। ঘুমালে মাথাটা হালকা হতো। তাই মেয়েটার কথার মধ্যেই বললাম

– তাহলে সবাই আসুক তারপর না হয় যাবো। 

– কেউ নাই বইলাই আপনারে ডাকছে। 

মেয়েটা দ্রুত চলে গেলো। দরজা আটকে বিছানা জুড়ে থাকা ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে নিলাম। চুল গুলো আঁচড়ে খোঁপা করে নিতেই মোবাইল বেজে উঠলো। 

ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বাবার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। 

– কীরে এখন কী করছিস?

– এইতো বাবা ঘুম থেকে উঠলাম। 

– বেড়াতে গিয়ে কেউ ঘুমায়?

– বাবা অনেক ক্লান্ত লাগছিলো। 

– তোর মা কথা বলতে চায়। নে কথা বল। 

মা রিনরিনে কণ্ঠে বলল

– কীরে ওখানে গিয়ে তো আমাকে ভুলেই গেছিস! 

– মা কীযে বলো তুমি। তুমি কেমন আছো? 

– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। 

– শোন শাড়ী পড়বি সুন্দর করে আর সাজগোজ করবি৷ খ্যাত সেজে ঘুরে বেড়াবি না। এতো শখ করে তোর বাবা আর মেজোটা মিলে এতো শপিং করলো আর তুই যদি না ব্যবহার করিস তাহলে কেমন হলো?

– সেজেগুজে কী হবে বলো?

– বয়স তো কম হলোনা, বিয়ে হওয়া লাগবেনা? স্কুল লাইফ শেষ, কলেজ লাইফ শেষ, ভার্সিটি লাইফও শেষ। এখন জব করছিস। বয়স তো কম হলোনা তাই না? তোর সাথের শম্পার মেয়েটার চার বছরের মেয়ে আছে আর তোর?

– চেহারা ভালো না হলে সেজেগুজে কী হবে?

– কে বলেছে আমার নীলুর চেহারা ভালো না? আমার জন্যই তো তোর খ্যাত অবস্থা। সংসার জীবনটা বিছানায় কাটিয়ে দিলাম আর মেয়েটার উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দিলাম। নিজের খেয়াল রাখবে নাকি সংসারের? 

বাবার কণ্ঠও শোনা যাচ্ছে। বাবা কিছু একটা বলছেন তবে ঠিক বুঝতে পারলাম না। 

– আচ্ছা মা আমি সেজেগুজে থাকবো। এখন চুপ করো তো। আর মেজো, ছোটো কী করছে?

– ওরা টিভিতে এনিমেশন মুভি দেখছে। 

– বুয়া ঠিকঠাক ভাবে আসছে তো?

– হ্যাঁ আসছে, আসবেনা কেনো? মাস গেলে যে মোটা অংকের টাকা ব্যাগে ঢোকায়! 

– মা তার খাটুনিও তো কম না। কতো যত্ন করে সে প্রত্যেকটা কাজ করে কখনো খেয়াল করেছো?

– এইজন্যই তো বেতন বেশি। 

– আচ্ছা মা রাতে কথা বলি? এখন একটু নিচে নামতে হবে। 

– আচ্ছা যা। এখন থ্রিপিস পরছিস নাকি শাড়ী? 

– থ্রিপিস। 

– এখনই শাড়ী পরবি আর ছবি পাঠাবি। 

তোর যে অবস্থা তাতে নাতী নাতনীর মুখ দেখতে পারবো কিনা সন্দেহ। 

মা’র বলা লাস্টের কথাটা শুনে মনটা বেশি রকমের খারাপ হয়ে গেলো।তখন যদি একটু স্মার্ট আর ফ্যাশন-সচেতন হতাম তাহলে এতোদিন এক বাচ্চার মা হয়েই যেতাম।

 সময় খুব নিষ্ঠুর! ফেলে আসা অতীতকে সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাখে মনকে। 

মায়ের কথামতো লাগেজ থেকে অফ হোয়াইট হাফ সিল্কের শাড়ীটা বেছে নিলাম। 

নিচে নামার সময় খেয়াল করলাম আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা ভার ভার হয়ে আছে। অসহ্যকর! নাস্তা না খেলে হবেটা কি শুনি?

অরিত্রের চাচীকে দেখে রীতিমতো আমি হতভম্ব। ভেবেছিলাম ৬০-৭০ বছরের বৃদ্ধা নারী হবেন যার চুল হবে সাদা কালোর মিশ্রণ। মুখের চামড়া ঝুলে থাকবে আর পোশাক আশাকে একটা গ্রাম্য ভাব থাকবে। কিন্তু হলো উল্টো! 

আমি তার দিকে হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকাতে তিনি হেসে বললেন 

– আমার বয়স ৬৮ বছর বুঝেছো নীলুফার? 

– বিশ্বাস হচ্ছেনা চাচী। 

– বিশ্বাস পরে করে নিও। আমি নিজ হাতে তোমাদের সবার জন্য নাস্তা বানিয়েছি। কিন্তু কেউই নেই তুমি আর অনুজ ছাড়া। 

রাবুকে দিয়ে অনুজের জন্য পাঠালাম আর তোমাকে জোরজবরদস্তি করে নিচে নামালাম। 

– না না চাচী আমি এমনিতেই নিচে নামতাম। 

– চাচী সব বুঝে বুঝেছো নীলুফার? 

অল্পবয়সী মেয়েটার নাম রাবু। রাবু ট্রে-তে করে দুটো বাটিতে সেমাই পিঠা নিয়ে এলো। চাচী মুখে হাসি নিয়ে বললেন

– তোমরা খুব সম্ভব এটাকে সেমাই পিঠা বলো। আমাদের এখানে সৈ পিঠা বা নাস্তা বলে। 

– এইজন্যই রাবু বারবার নাস্তা নাস্তা বলছিলো?

– হ্যাঁ। নীলুফার তোমার চুল গুলো ভারী সুন্দর। খোঁপা খুলে দাও। দারুণ লাগবে। 

অফ হোয়াইট শাড়ীতে তোমাকে দারুণ লাগছে। একটু অপেক্ষা করো। 

চাচী তার ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে কালো রঙের টিপ এনে আমাকে পরিয়ে দিলেন। 

– এবার পরিপূর্ণ লাগছে। 

সন্ধ্যা নামা শুরু করেছে। নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। চাচী কী একটা কাজে ছাদে গেছেন। আমিও সুযোগ বুঝে চলে এসেছি। আমার রুমের সামনে অনুজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। চিরকালের সেই গম্ভীর মুখ। অদ্ভুত মানুষ। 

রুমের সামনে এসে দরজা খোলার জন্য হা বাড়াবো তখন অনুজ পাশ থেকে বললেন

– আপনি ম্যাসেজের রিপ্লাই কেনো দিচ্ছেন না?

– কোন ম্যাসেজ? 

অনুজ আমার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে বললেন

– ম্যাসেজ যদি না পড়েন, অনলাইনে যদি নাই আসেন তাহলে মোবাইল রেখে লাভ কী? 

– মানে কী বুঝাতে চাচ্ছেন?

– খুব সোজা, মোবাইলটা আমি আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলবো। 

– আমার মোবাইল আপনি ভাঙবেন কেনো? 

– তাহলে আপনিই ভাঙুন। 

– আমিই বা ভাঙবো কেনো?

– কারণ একজন মানুষ আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে আপনি তাকে সুযোগ দিচ্ছেন না। 

– আমি তার সাথে কথা বলতে চাইনা। 

– কিন্তু বলতে হবে। 

– আমি আপনার বস মাথায় রাখবেন। 

– সেটা অফিস টাইমে। 

ধুর এ-র সাথে কথা বাড়ানোই বিপদ। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যাবো তখন অনুজ আমার হাত টেনে ধরে বললেন

– আপনি আমার সাথে এখনই কথা বলবেন। আমি মোবাইলে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনি তো সেই সুযোগ দিলেন না। তাই এখন বোঝাপড়া যা হবে সামনা-সামনি হবে। 

আমি ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললাম 

– কিন্তু আমার হাত টা তো ছাড়ুন। তারপর না হয় কথা বলা যাবে। 

চলবে….

~ Maria Kabir 

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে