স্বপ্ন?পর্ব_৭/৮/৯

0
803

স্বপ্ন?পর্ব_৭/৮/৯
#অনামিকা_সিকদার_মুন

.
.
.
নিশি হঠাৎ খেয়াল হয় যে অনুকে তো ও সেই টং দোকানে রেখে ভিজতে ভিজতে অনেকটা দূরে এসে পড়ছে। ওকে এখনি ফিরে যেতে হবে । অনু নিশ্চয় চিন্তা করছে। নিজের বোকামিতে নিজেই বিরক্ত হয়ে যায় নিশি। এমন ভুল ও করলো কিভাবে!!!! ফিরে যাওয়ার জন্য নিশি উল্টো দিকে ফিরে দৌড় লাগাতে যায় । আর তখনই কারো বুক গিয়ে ধাক্কা খায়। কার সাথে ধাক্কা লাগলো সেটা দেখার জন্য মাথা উচু করে মানুষটার মুখের দিকে তাকাতেই নিশি দেখে এক জোড়া চোখ । যার গভীর এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে । নিশি তাকিয়ে আছে পলকহীন ঐ চোখ জোড়ার দিকে । মনে মনে ভাবছে কে উনি?? এমন গভীর দৃষ্টিতে কেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে????

নিঝুমের এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে ওর স্বপ্নের মেয়েটি সত্যি ওর সামনে দাড়িয়ে । নিঝুমের ইচ্ছে করছিল ওর হাত দিয়ে একটু ছুঁয়ে দিতে মেয়েটিকে । ইচ্ছেটা পূরণ করতে নিঝুম ওর হাত তুলে সামনে দাড়িয়ে ওর স্বপ্নকন্যাকে ছুঁয়ে দিতে । নিঝুমের হাত কাঁপছে । নিশির গালে থেকে ওর হাত একটুখানি দূরে ঠিক তখনই নিঝুমের ফোন বেজে ওঠে । চমকে উঠে নিঝুম । পকেট হাতড়ে ফোন বের করে রিসিভ করতে করতে কল কেটে যায় । নিঝুম ফোন থেকে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে মেয়ে নেই । থ হয়ে দাড়িয়ে আছে নিঝুম । কোথায় গেলো মেয়েটা? এক্ষুণি তো এখানেই ছিল । পলকের মধ্যেই কোথায় গেলো মেয়েটা । নিঝুম ওর স্বপ্নকন্যাকে খুঁজতে শুরু করে ।

নিশি এক দৌড়ে এসে দারায় ঐ টং দোকানের সামনে । ওর বুকের হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে কয়েকগুণ । ওর মনে হচ্ছে ওর বুকের ধুকধুক ধুকধুক শব্দটা এত জোড়ে হচ্ছে যে ও স্পষ্ট সেটা শুনতে পারছে । বুকের বা পাশে হাত রেখে জোড়ে চেপে ধরে আছে নিশি । কেন এমন করছে ও সেটা ওর নিজেরই অজানা । নিশি ভাবছে, ওই ছেলেকে তো ও আগে কোনোদিন দেখে নি । তাহলে কিসের জন্য ওর বুকের ধুকপুকানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে । কেন নিজেকে শান্ত করতে পারছে না নিশি। নিশির চোখে এখনো ওই ছেলের চোখজোড়া ভাসছে । কেমন এক গভীর চাহনি । নিজের প্রিয়জনকে অনেক বছর না দেখে থাকলে হঠাৎ যদি তার সাথে দেখা হয় তখন যেমন তৃষ্ণার্ত দৃষ্টি নিয়ে সে তার প্রিয়জনকে দেখে ঐ ছেলের দৃষ্টিতে ছিল তেমন তৃষ্ণা । একই সাথে গভীর সেই চোখজোড়ায় যেন নিশি দেখেছিল ওর প্রতি এক সমুদ্র ভালোবাসা । অচেনা এক ছেলেকে এভাবে ভাবছে দেখে নিজেই অবাক হয়ে যায় নিশি । হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে নিশি । বিদুৎ বেগে ফিরে তাকায় পিছনে । তাকিয়ে দেখে অনু দাড়িয়ে । অনুর চেহারা দেকে মনে হচ্ছে অনুও কিছু একটা নিয়ে চমকে গেছে ।
অনু নিশিকে খুঁজতে খুঁজতে আবার এই টং দোকানের সামনে এসে দেখে নিশি কেমন এলোমেলো ভাবে দাড়িয়ে আছে । তাই অনু নিঃশব্দে এসে নিশি পাশে দাড়িয়ে নিশির কাঁধে হাত রাখে । তখন নিশি চমকে উঠে । নিশিকে ওভাবে চমকাতে দেখে অনুও চমকে গিয়েছিল । অনু নিজেকে সামলে নিশির দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,
—আপি না বলে কোথায় চলে গিয়েছিলি হ্যাঁ?? এভাবে না বলে কেন গেলি?? জানিস তোকে পাগলের মতো খুঁজছিলাম এতক্ষণ। এমন কেউ করে??
অনু খানিকটা রেগেই যায় । কারণ নিশিকে অনেকক্ষণ খুঁজেও যখন পাচ্ছিল না তখন অনুর আত্মা পর্যন্ত কাঁপছিল। যে হুট করে কোথায় গেল নিশি । যদি ওকে খুঁজে না পায় তখন কি হবে!!!!
নিশি কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। নিশিকে চুপ করে থাকতে দেখে অনু আর কিছু বললো না ভাবলো বাসায় গিয়ে জেনে নিবে । কারণ বৃষ্টিতে ভিজে এমনি নিশি কাঁপছে । না জানি আবার জ্বর চলে আসে । অনু নিশির হাত ধরে বললো,
—বাসায় চল আপি।
নিশি আর কোনো ‘রা’ ও করলো না । চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো অনুর পিছন পিছন যেতে লাগলো ।

এদিকে নিঝুম হন্য হয়ে খুঁজেও আর দেখে পেলো না ওর স্বপ্নকন্যাকে । একটু সময়ের মধ্যে কোথায় চলে গেলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না । নিশিকে খুঁজে না পেয়ে আবার গাড়ির মধ্যে এসে বসলো নিঝুম। এসে দেখে নীল গাড়িতে বসে আছে । নীলও নিঝুমের মতো কাক ভেজা হয়ে আছে । নিঝুমকে দেখে নীল বললো,
—কোথায় গিয়েছিলি ভাইয়া??
নিঝুম পাল্টা প্রশ্ন করলো,
—তুই এভাবে বৃষ্টির মধ্যে ছুটে কোথায় গিয়েছিলি?? এতবার ডাকলাম কোনো উত্তর না দিয়ে গটগটিয়ে হেটে কই চলে গেলি!!
নীল একটু নিচু স্বরে বললো,
—ঐ মেয়েটাকে আবার দেখেছিলাম ভাইয়া। তাই….
নিঝুম কোনো উত্তর দিল না । নীলের কথা শুনেও চুপ করে রইলো । কারণ ওর মনে তখন ঘুরছে অন্য কথা । ওর মনে তখন নিশির আনাগোনা চলছে। ভাবছে তার মানে ওর স্বপ্নকন্যাও তাহলে বাস্তবে আছে । নিঝুম মনে মনে বললো,
—তোমাকে আমি খুব জলদি খুঁজে বের করবো । কারণ তুমি আমার স্বপ্নকন্যা………..
.
.
.
চলবে???
(বি.দ্র. আজকের পর্বটা ছোট হয়ে গেছে জানি । তার জন্য সরি। পরের পর্ব বড় করে দেওয়া চেষ্টা করবো । ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন)
.
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৮
.
.
.
নিঝুম মনে মনে বললো,
—তোমাকে খুব জলদি খুঁজে বের করবো আমি । কারণ তুমি আমার স্বপ্নকন্যা ।
নিঝুম মনে মনে হাজারো ভাবনা ভেবে চলেছে । নিঝুমকে চুপচাপ দেখে নীল প্রশ্ন করে,
—কি হয়েছে ভাইয়া চুপ কেন তুই?
নিঝুম ছোট করে উত্তর দেয়,
—তোর মতো আমিও আমার স্বপ্নকন্যাকে খুঁজে পেয়েছি ।
এবার ঝটকা খাওয়ার পালা নীলের । নীলের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে নিঝুমের কথা শুনে । নিঝুমের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে নীল । আর নিঝুম ওর মতো গাড়ি ড্রাইভ করছে । ওর ঠোঁটের কোণ জুড়ে এক মুচকি হাসির রেখা ।
.
কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি একটু থামলেও পরে আবার মুষল ধারায় ঝরছে বৃষ্টি । এই বৃষ্টি সেই বৃষ্টি যা থামার নাম নেই । শুধু বৃষ্টি না তার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝড়ও উঠেছে বাহিরে । আর এই বৃষ্টি ভেজা রাত ঝড় তুলে দিয়েছে আরো একটি মনে । জানালার কার্টেন সরিয়ে দিয়ে গ্লাস হালকা খুলে গ্রিলের সাথে মাথা ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে নিশি । বৃষ্টির পানি ছিটে হালকা হালকা এসে আছড়ে পড়ছে নিশির মুখে আর নিশি চোখ বন্ধ করে সেই আছড়ে পড়া পানির শীতলতাকে অনুভব করছে । ওর মনে ক্ষণে ক্ষণে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যেবেলার সেই দৃশ্য । সেই গভীর চাহনি, সামনের চুল বেয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পড়া স্নিগ্ধ মুখখানি । কেমন করে তাকিয়ে ছিল নিশির দিকে । কাঁপা কাঁপা হাতও তুলছিল । দেখে মনে হচ্ছিল যেন ঐ কাঁপা কাঁপা হাতে আলতো করে ছুঁয়ে দিবে নিশির চিবুক । হঠাৎ নিশি দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে ফেলে । অজানা কোনো কারণে নিশির প্রচুর লজ্জা লাগছিল ।
রাত বাড়তে বাড়তে এখনো দু’টো বাজে । কিন্তু নিশির চোখের পাতায় ঘুমের ছিটে ফোঁটাও নেই । যেই নিশি রাত এগারোটা বাজতে না বাজতে ঘুমিয়ে কাদাকাদা হয়ে যায় সেই নিশি আজ রাত দু’টা পর্যন্ত জেগে আছে অথচ তার চোখে আজ ঘুম নেই । নিশির ঘুম আজ চুরি হয়ে গেছে । আজ নিশি না ঘুমিয়ে নিঝুম রাতের এই ব্যস্ত শহরের নিরবতার মাঝে বৃষ্টির ঝুমঝুম গান আর মাঝে মাঝে আকাশের গর্জন শুনে রাত পার করছে । এতে নিশি যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা খুঁজে পাচ্ছে । আবার অবাকও লাগছে এই ভেবে হঠাৎ আজ ওর কি হলো!! অনু সেই কখন ঘুমিয়ে গেছে । অনুর পাশ দিয়ে নিশিও শুয়েছিল । কিন্তু ঘুমাতে পারে নি । অনেকক্ষণ এপাশ ওপাশ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে উঠে এসে জানালার পাশে দাড়িয়েছে । কি জানি ভেবে একটা মুচকি হাসি ছিল নিশি । অতঃপর নিজেই নিজের মাথায় গাট্টা মারলো।

লাস্ট বার কফির মগে চুমুক দিয়ে মগটা বেড সাইড টেবিলে রাখলো নিঝুম । এতক্ষণ ধরে আঁকা স্কেচের পাতাটা হাতে তুলে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো কোথায় কোনো কমতি আছে কিনা । এটা নিঝুমের আঁকা একচল্লিশ নম্বর স্কেচ ওর স্বপ্নকন্যাকে নিয়ে । নিঝুমের আঁকাআকির হাত খুব ভালো । চাইলে প্রফেশনাল আর্টিস্টও হতে পারত । কিন্তু নিঝুম সেটা না করে বিজনেসটাকেই বেছে নিয়েছে । নিঝুর শখের বসে মাঝে মাঝে রং তুলি কিংবা শুধু পেন্সিল দিয়েই আঁকাআকি করে । কিন্তু গত দু’বছর ধরে নিঝুম শুধু একজনের ছবিই এঁকেছে । সেটা ওর স্বপ্নকন্যার । নিঝুমের নিশির নাম অজানা হওয়ায় ওর নাম দিয়েছে স্বপ্নকন্যা ।
এই স্কেচটাও ওর ফাইলের মধ্যে রেখে দিল নিঝুম । তারপর বসা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে গেলো । তখনও ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । নিঝুম চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল । চোখ বন্ধ করতেই নিঝুমের সামনে নিশি মুখটা ভেসে উঠে । নিশির কথা মনে পড়তেই নিঝুমের ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো । নিশি কথা ভাবতে ভাবতেই হালকা গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলো,

…এই মেঘলা দিনে একলা
……….ঘরে থাকে না তো মন
………….কাছে যাব কবে পাব
……ওগো তোমার নিমন্ত্রণ….

..এই মেঘলা দিনে একলা
……….ঘরে থাকে না তো মন
………….কাছে যাব কবে পাব
……ওগো তোমার নিমন্ত্রণ….

.
……যুঁথি বনে ওই হাওয়া
….করে শুধু আসা-যাওয়া ।।

…..হায় হায়রে দিন যায়রে
……ভরে আঁধারে ভুবন
……….কাছে যাব কবে পাব
…………..ওগো তোমার নিমন্ত্রণ..

.
……শুধু ঝড়ে ঝড়ো ঝড়ো
………..আজ বারি সারাদিন
……আজ যেন মেঘে মেঘে
…..হলো মন যে উদাসীন

……শুধু ঝড়ে ঝড়ো ঝড়ো
………..আজ বারি সারাদিন
……আজ যেন মেঘে মেঘে
…..হলো মন যে উদাসীন
.
….আজ আমি ক্ষণে ক্ষণে
………কী যে ভাবি আনমনে
…..তুমি আসবে ওগো হাসবে
….কবে হবে সে মিলন
………কাছে যাব কবে পাব
…………..ওগো তোমার নিমন্ত্রণ
.
.
ফজরের আজান দিচ্ছে । আজানের শব্দ কানে যাওয়ার সাথে সাথে অনুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো । আড়মোড়া ভেঙ্গে শোয়া থেকে উঠে সোজা হয়ে বসলো অনু । চোখ ডলে পাশে তাকাতেই দেখে নিশির শোয়ার জায়গাটা ফাঁকা পড়ে আছে । আঁতকে উঠল অনু । মনে মনে বলে উঠল, “আপি কোথায় গেল???”
নিশি কখনোই এত সকালে উঠে না । এমনকি ওয়াশরুমে যায় না । কারণ নিশি ঘুমালে ওর কোনো হুশ থাকে না । বেঁহুশের মতো পড়ে ঘুমায় । তাই নিশিকে দেখতে না পেয়ে অনু চিন্তায় পড়ে যায় । জলদি করে বিছানা থেকে নামতে যেয়ে খেয়াল করে নিশি নিচে জায়নামাজে সেজদারত অবস্থায় । অনু চোখ বড় বড় করে তাকায় নিশির দিকে । মাত্র ঘুম থেকে উঠেছে তাই হয়তো চোখে ভুল দেখছে ভেবে চোখ ভালো করে ডলে পুনঃরায় তাকায় নিশির দিকে । নাহ্ এবার সে একই দেখছে । কিন্তু অনুর প্রশ্ন হলো এটা কিভাবে সম্ভব!! কারণ নিশিকে আজ পর্যন্ত কোনোদিন অনু ফজরের নামাজের সময় উঠাতে পারে নি । চার ওয়াক্ত নামাজ নিশি কখনোই কাযা করে না । কিন্তু ফজরের নামাজ নিশি কখনোই ওয়াক্ত মতো পড়তে পারে না ঘুমের জন্য । আর আজ….!!!!!

নিশি নামাজ শেষ করে উঠে অনুর কাছে এসে একটা বড় করে হাসি দিলো । আর অনু তো আগের মতোই বিষ্ময়ভরা চোখ নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । অনুর ওভাবে তাকিয়ে থাকার কারণ নিশি বুঝতে পেরে অনুকে হালকা করে একটা ধাক্কা দিয়ে বলে,
—কিরে অনু কখন উঠলি?? আর এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন??
অনু আগের মতোই তাকিয়ে থেকে বললো,
—আপি তুই কি সত্যি উঠেছিস?? নাকি আমি এখনও ভুল দেখছি???
নিশি হেসে দিয়ে অনুর মাথায় একটা টোকা মেরে বলে,
—যা ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ আদায় করে নে । তোর সাথে কথা আছে । নামাজ শেষে বললো ।
অনু আর কোনো কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো ফ্রেশ হতে । অনু যেতেই নিশি মনে মনে বললো, ” ইসসসস আরেকবার যদি দেখা হত সেই ছেলেটার সাথে…… ”
একথা বলে আবার সাথে সাথেই নিশি বলতে লাগলো, ” নো নিশি……তোর হয়েছে টা কি বলতো??? এত ভাবছিস কেন অচেনা একজনকে নিয়ে ??? খবরদার আর ভাববি না । যাহহহহ্ ” নিশি নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিল……
.
.
.
চলবে???
(বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । )
.#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_৯
.
.
.
অনু যেতেই নিশি মনে মনে বললো, ” ইসসসস আরেকবার যদি দেখা হত সেই ছেলেটার সাথে…… ”
একথা বলে আবার সাথে সাথেই নিশি বলতে লাগলো, ” নো নিশি……তোর হয়েছে টা কি বলতো??? এত ভাবছিস কেন অচেনা একজনকে নিয়ে ??? খবরদার আর ভাববি না । যাহহহহ্ ” নিশি নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিল । নিশি একা একাই কথা বলছিল । এর মাঝেই অনু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে যে নিশি একা একা বিরবির করছে । নিশিকে এভাবে বিরবির করতে দেখে অনু বললো,
—কিরে আপি একা একা বিরবির করে কি বলছিস??
হঠাৎ কারো কথায় চমকে উঠে নিশি । অনুর দিকে ফিরে একটু তোতলাতে তোতলাতে বলে,
—ক…. কই ন.. না তো । কি…. কিছু না ।
অনু সন্দেহের দৃষ্টি নিয়ে নিশির দিকে তাকায় । কিন্তু কিছুই বললো না।
.
.
—এই অনু বাহিরে চল না।
নিশি ফিসফিস করে বললো । অনুও নিশির মতো ফিসফিসিয়ে বললো,
—আপিইইই প্লিজ ডিস্টার্ব করিস না । আমি কোথায়ও যাব না । তোর যেতে ইচ্ছে করলে তুই যা ।
—প্লিজ পিচ্চি চল না । প্লিইইজ….
নিশি আর অনু ক্লাসে বসে ক্লাস করছিল । কিন্তু কিছুক্ষণ না যেতেই নিশি বাহিরে যাওয়ার জন্য অনুকে সমানে খুঁচিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু অনুর এক কথা ও যাবে না । নিশির জন্য কখনোই শান্তি মতো ক্লাস করতে পারে না অনু । কিছু না কিছু একটা নিয়ে নিশি জ্বালাবেই । প্রফেসর লেকচার দিচ্ছে আর এদিকে নিশি অনুকে কোনি দিয়ে পেটে খোঁচাচ্ছে । নিশিকে থামাতে অনু এবার মিনতির স্বরে বললো,
—লক্ষী আপি এমন করিস না। প্রফেসর দেখলে আর রক্ষা নেই । কি কি বলে যে অপমান করবে তার কোনো ঠিক নেই ।
নিশি অনুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
—তাহলে আমার সাথে বাহিরে চল । নাহলে এটা প্রফেসরের টাকে ছুড়বো।
নিশির কথা শুনে অনু নিশির হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে যে নিশির হাতে কাগজ টাইপের কিছু একটা দিয়ে গোল করে বলের সেইপ বানানো । আর ওটার সাথে গোলানো লাল রং জাতীয় কিছু লাগানো । এটা যদি প্রফেসরের টাকে থুক্কু মাথা গিয়ে লাগে তাহলে রং ছিটে প্রফসরের মুখেও পড়বে । এটা ভাবতেই অনুর কাঁদতে ইচ্ছে করলো । আবার মনে হলো যে নিশি রং কোথা পেলো । তাই অনু নিশির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—তুই রং কোথায় পেলি আপি???
নিশি অনুর দিকে তাকিয়ে একটু ভাব নিয়ে বললো,
—ইউ হ্যাভ টু বুঝতে হবে । ইট’স আমি…..
বলে নিশি ব্যাগের ভিতর থেকে জল রংয়ের একটা কৌটা বের করে অনুকে দেখালো । অনু কপালে চাপড়াতে লাগলো । আর তা দেখে নিশি হেসে কুটি কুটি । এর মধ্যেই হঠাৎ প্রফেসর হুংকার দিয়ে উঠলো, “নিশি আর অনু” বলে । প্রফেসরের এত জোরে ডাক দেওয়ায় নিশির হাসি থেমে গেলো । নিশি আর অনু দু’জনেই চমকে উঠলো । একলাফে ওরা দুজন বসা থেকে উঠে দাড়ালো । নিশি আড়চোখে তাকিয়ে দেখে পুরো ক্লাসের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । আর অনু মাথা নিচু করে রেখেছে । অনু হালকা মাথা উচু করে দেখে প্রফেসর রাগী চোখে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে । বিশেষ করে অনুর দিকে । অনু বুঝে না এই প্রফেসরের সাথে ওর আগের জন্মে কোনো শত্রুতা ছিল কিনা । কারণ ক্লাসের অন্য কেউ মহা অপরাদ করে ফেললেও উনি মাফ করে দেন আর ওর বেলায় পান থেকে চুন খসলেই হয়েছে কাজ । এমন শাস্তি দেয় যেন ও মানুষ খুন করে ফেলেছে । অনু এসব আকাশ পাতাল ভাবনা ভাবছিল তখনই আবার কারো চিৎকারে ওর ভাবনার ছেদ ঘটে । কেঁপে ওঠে অনু ।
প্রফেসর চিৎকার করে বললো,
—আউট ফ্রম মাই ক্লাস ।
অনু অসহায় চোখ নিয়ে প্রফেসরের দিকে তাকালো । যদি একটু দয়া হয় আর কি সেই আশায়। কিন্তু তাতে বিশেষ কোনো লাভ হলো না । নিশি অনুর পাশে থেকে ফিসফিস করে বললো,
—এভাবে অপমান হয়ে বের হওয়ার থেকে আমি যখন বলেছিলাম তখন বের হলেই পারতি । আর যেখানে সেখানে এভাবে ভাবনার মাঝে ডুবে যাস না বোন আমার । তোর এই ভাবনায় ডুবে যাওয়ার জন্য স্যার এত ক্ষেপলো ।
অনু কিছু বললো না চুপ করে রইলো । নিশির উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে অনুর । কিন্তু কিছু বলতে পারছে না । যখন একা পাবে তখন মজা বুঝবে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো অনু । প্রফেসর আবার বললো,
—যাচ্ছো না কেনো?? গেট আউউউউটটটট….
অনু ব্যাগ নিয়ে নিয়ে বেঞ্চ থেকে বেরিয়ে এলো সাথে নিশিও বেরিয়ে এলো । যাওয়ার সময় নিশি দেখলো আযান মুখ টিপে হাসছে । এটা দেখে নিশি যাওয়া সময় আযানের মাথায় একটা গাট্টা মারে । আযান রাগি চোখে তাকায় নিশির দিকে । নিশি হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় । কিন্তু কি মনে করে আবার একটু ফিরে এসে রংয়ের সেই কাগজের বলটা আযানের মুখের দিকে ছুড়ে মারে । তারপরই দৌড় । আর এদিকে আযানের গায়ে রং ছিয়ে পুরো একাকার অবস্থা । আযান তো “নিশিইইইইইইইইইই” বলে চিৎকার করে উঠে । তখন প্রফেসর আযানকেও ক্লাস থেকে বের করে দেয় । আযান মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে । কারণ এই স্যারকে বললেও কোনো কাজ হবে না আযান সেটা ভালো করেই জানে। তাই কথা না বাড়িয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে যায় । ক্লাস থেকে বেরিয়ে এদিকে ওদিক নিশি আর অনুকে খু্ঁজতে লাগলো । এদিকে না পেয়ে আযান ভার্সিটির পিছনে পুকুর পাড়ে চলে গেল । ওখানে গিয়ে দেখে নিশি আর অনু ঠিকই আছে । কিন্তু অনু নিশিকে বকছে আর নিশি পাগলের মতো পেটে হাত দিয়ে খিলখিল করে হাসছে । আযানের আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিশি ওভাবে কেন হাসছে । আযান এগিয়ে গেলো নিশি আর অনুর কাছে । ওদের কাছে যেতে শুনতে পেল অনু বলছে,
—আপি তোর প্রবলেমটা কি বলতো?? একে তো এক ড্রামা করে ক্লাস থেকে বের করলি এখন আবার পাগলের মতো হাসছিস । কি হয়েছেটা কি তোর???
আযান অনুর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকায় অনু আযানকে দেখে নি । আযান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো ।
অনু জানে না যে নিশি আযানের কি হাল করেছে । কারণ নিশি যখন আযানের গায়ে রংয়ের বল ছুড়ে ছিল তখন অনু সেখানে ছিল না । অনু আগেই বেড়িয়ে গিয়েছিল ক্লাস থেকে ।
হাসতে হাসতেই নিশির চোখ গেল আযানের দিকে । আযানকে দেখে নিশির হাসি আরো বেড়ে গেলো । অনু নিশিকে পিছনের দিকে তাকিয়ে হাসির মাত্রা বাড়াতে দেখে নিশির দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনের দিকে তাকালো । পিছনে ফিরতেই আযানকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো অনু । একটা লাফ দিয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলো । ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা আযান । আযানের পুরো মুখে রং এমনভাবে লেগেছে যে ওকে দেখে চেনার কায়দা নেই । শার্টের মধ্যেই রং ছিটা লেগে আছে । আযানের এই অবস্থা দেখে অনু বললো,
—কিরে তোর এই হাল কেন? আজকে তো হলি না যে রং দিয়ে এ অবস্থা করেছিস । নাকি মুখ রংয়ের বালতিতে চুবিয়েছিস?
অনুর কথা শুনে আযান ফস করে উঠে অনুর হাতে ঐ রংয়ের কাগজের বল দিয়ে বললো,
—তোর গুনধর আপি এই অকাজ করেছে ।
অনুর বলটা দেখে আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নিশি ঠিক কি করেছে । অনু রাগি একটা দৃষ্টি নিয়ে নিশির দিকে তাকালো । অনুর এভাবে তাকানো থেকে নিশি চুপ করে সোজা হয়ে বসলো । কিন্তু হুট করেই অনু ফিক করে হেসে দিল । অনুকে হাসতে দেখে নিশি বুঝে গেলো যে অনুর রাগ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে । এবার নিশিও অনুর সাথে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো । অনু হাসতে হাসতে নিশির পাশে গিয়ে বসলো আর আযান অনুকে এভাবে হঠাৎ করে হাসতে দেখে বোকাবনে গেল । ও ভেবেছিল যে অনু হয়তো নিশির সাথে রাগ করবে । কিন্তু হলো কি!! উল্টোটা । আবার পর মুহুর্তে ভাবলো যে, ওদের দ্বারা এমন উল্টোটা আসা করা উচিত । সেটাই স্বাভাবিক । নিশি একটু বেশি হাসছিল । নিশিকে হাসতে দেখে আযান নিশির কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে মাথাটা টান দিয়ে এনে নিজের গালের সাথে নিশির গাল ঘসে রং লাগিয়ে দিলো । নিশি ঠিক পাঁচ সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে রইলো । আর তারপরেই বিকট এক চিৎকার দেয় । নিশির চিৎকারে আযান হতভম্ব হয়ে নিশিকে ছেড়ে দেয় । কারণ নিশি যেভাবে দিয়েছে যে কেউ মনে করবে আযান নিশিকে কিডনাপ করে নিয়ে যাচ্ছে আর নিশি বাঁচার জন্য চিৎকার করছে । অনু হাসতে হাসতে বলে,
—ওরে ড্রামা কুইন এবার থাম আর ড্রামা করিস না ।
নিশি আযানের পাশ থেকে উঠে গিয়ে অনুর হাত ধরে ওকে টেনে দাড় করাতে করাতে বললো,
—আচ্ছা থামলাম। চল ফুচকা খেতে যাব ।
অনু হাসতে হাসতেই বললো,
—হুম চল
নিশি আযানের দিকে ফিরে বললো,
—তোকে কি ইনভাইটেশন কার্ড দিতে হবে??
অনু নিশির কথা শুনে বললো,
—তোর চিৎকার শুনে ওর স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেছে । কিছুই চিনতে পারছে না । তাই এমন ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে । ওর কানের কাছে গিয়ে আরেকটা চিৎকার দেয়। দেখবি ও ঠিক হয়ে গেছে ।
অনুর কথা শনে আযান দ্রুত গতিতে দাড়িয়ে পড়লো ওদের সাথে যাওয়ার জন্য । কারণ দুনিয়ার সবাইকে বিশ্বাস করা গেলেও ওদের দু’জনকে বিশ্বাস করা যায় না। দেখা যাবে সত্যি সত্যি চিৎকার করে বসবে । আযানকে এভাবে দাড়াতে দেখে অনু আর নিশি আরেক দফা হেসে নিল ।
.
.
—নিহা এসবের কোনো মানে হয় না । আমার কাজ বাদ দিয়ে তুমি আমাকে নিয়ে এসেছ ফুচকা খেতে । তাও এমন জায়গায় । আজিব ।
নীল অনেকটা রাগ করেই বললো । নিহা হেসে বললো,
—হ্যা আনলাম । তোমার কাজের গুষ্টির তুষ্টি হোক ।
নীল আর কোনো কথা বললো না । কারণ বলেও কোনো লাভ হবে না । নিহাকে সেই স্কুল লাইফ থেকে চিনে নীল । স্কুলে থাকতে নিহার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছিল । সেই বন্ধুত্ব দিন দিন গাড় হয়ে বেস্টফ্রেন্ডের নাম ধারন করেছে । কিন্তু নিহার কাছে এই সম্পর্কের বাহিরেও অনেকটা ভাবনা নীলকে নিয়ে ।
নীল বিরক্ত হয়ে ফোনটা টিপছিল । কিন্তু হঠাৎ কারো খিলখিল হাসির শব্দে ফোন থেকে নজর সরিয়ে সেদিকে তাকাতেই নীলের দৃষ্টি স্থির হয়ে যায় । স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ।
অনু নিশি আর আযানের সাথে ফুচকার দোকানে এসে দাড়ায় । ওদের সাথে দুষ্টমি করতে করতেই খিলখিল করে হাসছিল । অনু তো জানে না যে একজোড়া চোখ ওর দিকে কত গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । জানলে হয়তো ওর হাসিরা থেমে যেত ।
নীল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে। তখনই………
.
.
.
চলবে??
(বি.দ্র. ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে