স্বপ্ন?পর্ব_১৯/২০/২১
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_১৯
.
.
.
-সামনের তাকিয়ে গাড়ি চালান । এত জলদি মরার শখ নেই আমার ।
চুলগুলো সরাতে সরাতে বললো অনু । অনুর কথা শুনে মনে মনে হাসলো নীল । একটু খারাপও লাগলো অনুর চুল সরিয়ে নেওয়ায় । কি এমন হতো চুলোগুলো ওভাবে অবাধ্য হয়ে উড়তে দিলে । কিন্তু মুখে কিছুই বললো না । আচমকা নীল গাড়ি ব্রেক করলো । এতে বেশ হকচকিয়ে গেল অনু । ভাবতে লাগলো যে হঠাৎ নীল এভাবে গাড়ি ব্রেক করলো কেনো!! ওর কোনো কথায় কি মাইন্ড করলো নাকি!! অনু পাশ ফিরে নীলের দিকে তাকায় । দেখে নীলও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । অনু কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীল বললো,
–নামো…
–কি….না মা..মানে…
অনু আমতা আমতা করে বললো । নীল অনুকে এভাবে কথা বলতে দেখে হেসে দিয়ে বললো,
–গাড়ি থেকে নামতে বললাম । নাকি তোমার গাড়িতেই বসে থাকার ইচ্ছে আছে ।
অনু আর কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে দাড়ায় । হঠাৎ দেখে যে একটা অচেনা জায়গায় দাড়িয়ে আছে ও । জায়গায়টা গ্রাম্য এলাকা মনে হচ্ছে । এতক্ষণ অনু খেয়ালই করে নি যে ওকে কোথায় নিয়ে আসছে নীল । ও যদিও গাড়ির জানলা দিয়ে বাহিরের দিকে মুখ করে ছিল কিন্তু ওর নজরটা নীলের দিকেই ছিল । কি-ই বা করবে!! নীলের দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারছিল না যে । ডার্ক ব্লু শার্ট, হোয়াইট ব্লেজার, হোয়াইট প্যান্টে ওকে এত অসাধারণ লাগছিল যে বার বার তাকাতে ইচ্ছে করছিল । তার উপর ওর ঠোঁট কেমন হালকা কমলা রংয়ের দেখাচ্ছিল । দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে কোনো দিন স্মোকিংয়ের ধারে কাছেও যায় নি । সবচেয়ে বেশি যেটা অনুর নজরে পড়ছিল সেটা হচ্ছে নীলের বাম গালের ঠিক মাঝ বরাবর একটা ছোট্ট তিল । তিলের উপর অনুর একটা দূর্বলতা আছে । তিল ওর কাছে এত ভালো লাগে যে মাঝে মাঝে নিজের হাতের তিলের দিকে তাকিয়ে থাকে । খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে । নীল যখন ড্রাইভ করছিল তখন ওকে দেখতে গিয়ে হঠাৎ-ই ওর তিলটা নজরে পড়ে । অনুর ইচ্ছে করছিল আলতো করে তিলের উপর ছুঁয়ে দিতে । কিন্তু সেটা কোনোভাবেই করা সম্ভব না । আর সরাসরি তাকিয়ে দেখতেও পারবে না । তাই আড়চোখেই তাকিয়ে ছিল নীলের দিকে ।
আশেপাশে চোখ বুলিয়েও যখন অনু চিনতে পারলো না যে ও কোথায় আছে তখন পিছন ফিরে নীলের দিকে তাকিয়ে ভ্রুজোড়া কুঁচকে বলে,
–এটা কোথায় নিয়ে এসেছেন?? আমি বাসায় যাবো বলেছিলাম । মা আপি চিন্তা করবে আমার জন্য । এখানে কেনো নিয়ে এলেন আমায়??? আমি এক্ষুনি বাসায় যাব ।
একথা বলে অনু চলে যেতে চাচ্ছিল তখন নীল ওর সামনে এসে দাড়িয়ে বাঁধা দিয়ে বলে,
–তোমার আপুই এখনো বাসায় যায় নি । আর তোমার মা-কে নিশ্চয় তুমি বলো নি যে তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসছো? তাহলে উনি ভেবেই নিবেন তুমি ভার্সিটিতে আছো । সো অযথা টেনশন করো না ।
বলে নীল একটা মুচকি হাসি দিল । নীলের ঐ হাসিটার মাঝে মনে মনে অনু ডুবে গেলেও বাহিরে সেটা প্রকাশ করলো না । উল্টো আরো সরু চোখে নীলের দিকে তাকিয়ে রইলো । অনুকে সরু চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে নীল ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
–আপি এখনো বাসায় যায় নি সেটা আপনি জানলেন কিভাবে?
নীল একটা বাঁকা হাসি দিল । বললো,
–চলো ঐ দিকটায় যাই ।
কথা এড়িয়ে যাওয়ায় অনুর রাগ সপ্তম আসমানে উঠে যায় । কারণ এর আগেও কয়েকবার একথা জিজ্ঞেস করেছে অনু । আর প্রতিবারই নীল কথাটা এড়িয়ে গেছে । কিন্তু রাগটা প্রকাশ করে নি ও । নিজের মাঝেই চাপা দিয়ে ফেলে । নীলের পেছন পেছন গেলো অনু ।
.
বাচ্চাদের মধ্যে বসে ওদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে হাসছে আর গল্প করছে নিশি । আর ওর দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে নিঝুম । বাচ্চাদের সাথে পুরোপুরি মিশে গেছে মেয়েটা । ওকেও এখন বাচ্চাই লাগছে । প্রথমে নিশি যখন ওকে এখানে নিয়ে আসছিল ও বুঝে উঠতে পারছিল না যে ওকে নিয়ে নিশি ঠিক কোথায় যাচ্ছে । আসার সময় নিঝুম ওর গাড়িতে করে আসতে চাইলে নিশি না করে আর বলে যে গাড়িতে না ও রিকশায় করে যাবে । নিশির কথা শুনে অবাক হয়ে যায় নিঝুম । গাড়িতে করে আরামে যেতে পারবে সেটা বাদ দিয়ে কিনা মেয়েটা রিকশা করে যাবে । এমনটাও কেউ করে!! জানা ছিল না নিঝুমের । পুরো বাচ্চামো স্বভাবে ভরা নিশি ।
শেষে নিশির কথা মেনে রিকশাতে করেই ওর সাথে যায় নিঝুম । কোথায় যাচ্ছে জানতে চাইলে নিশি উত্তর দেয় গেলেই জানতে পারবেন । এই অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই নিশি অনেকটা ফ্রি হয়ে যায় নিঝুমের সাথে । টুকটাক দুষ্টুমিও করে । কিন্তু নিঝুম যখন দুষ্টুমি করে পাল্টা জবাবটা দেয় তখন নিশির দুষ্টুমিভরা চোখ থেকে দূষ্টুমি হারিয়ে গিয়ে সেখানে এসে ভর করে একরাশ লজ্জা । গাল জুড়ে ছড়িয়ে যায় গোলাপি আভা । আর ঠোঁট জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মিষ্টি এক লাজুক হাসি । যখন নিশি লজ্জা পায় তখন ও মাথাটা নিচু করে ফেলে । নিঝুমের কাছে নিশির লজ্জা মাখা হাসিটা বেশি সুন্দর লাগে । ওদের অনেকবার দেখা হয়েছে । আবার আরেক হিসেবে এটাই ওদের প্রথম দেখা ।
নিঝুম বুকের উপর হাত বটে এক কোণায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিশিকে দেখছিল । নিশি ওকে নিয়ে একটা অনাথ আশ্রমে আসে । যখন নিশি গেট দিয়ে ঢুকছিল একটা বাচ্চা ওকে দেখে “নিশুমনি” বলে চিৎকার দেয় । দৌড়ে এসে নিশিকে জড়িয়ে ধরে । ততক্ষণে আরো বাচ্চারা বেরিয়ে এসে নিশিকে ঘিরে ধরে । নিশি ওদের সবাইকে জড়িয়ে নেয় নিজের কাছে । এটা যেন নিশির আরেকরূপ। যেটা সম্পর্কে জানা ছিল না নিঝুমের । ও শুধু অবাক গয়ে দেখছিল নিশিকে ।
নিঝুম দাড়িয়ে দাড়িয়ে নিশির কথাই ভাবছিল । হঠাৎ দেখে নিশি ওকে হাত নেড়ে ইশারায় ডাকছে কাছে যেতে । নিশির ডাক দেওয়াতে নিঝুম ওর কাছে গেল । নিঝুম নিশির পাশে গিয়ে দাড়াতেই নিশি ওকে ওর পাশে বসতে বলে । নিঝুম একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওর পাশে বসে পড়ে ।
-নিশুমনি উনি কে?
হঠাৎ একটা বাচ্চা নিশির হাত ধরে জিজ্ঞেস করে ।
-এটা তোদের একটা ভাইয়া হয় ।
নিশি বাচ্চাটার নাক টেনে দিয়ে বলে । তখন আরেকটা বাচ্চা চোখ বড় বড় করে বলে,
-উনি কি আমাদের দুলাভাই হয়?
এই কথা শুনে নিশির মুখের হাসি উড়ে গেল । নিশি পুরোই শকড্ । একমিনিটের জন্য পুরোপুরি থমকে যায় ও । হঠাৎ করেই মাথা নিচু করে ফেলে । মাথা তুলতে পারছে না লজ্জায় । যদি নিঝুমের চোখে চোখ পড়ে যায় । তখন!! এমনিতেই লজ্জায় ওর যায় যায় অবস্থা । তার উপর যদি নিঝুমের চোখে চোখ পড়ে যায় তাহলে যায় যায় থেকে পুরো শেষ হয়ে যাবে লজ্জায় । তাই নিশি মাথা উঠাচ্ছিল না । কিন্তু বাচ্চাগুলো কে বলতে হবে নিঝুম কে!!! নাহলে পরে যখন আসবে ওকে পুরো পাগল বানিয়ে ফেলবে । তাই নিশি মাথা উঠালো । কিন্তু নিঝুমের দিকে তাকালো না । যে বাচ্চাটা ওকে প্রশ্ন করেছিল ওর চিবুকটা ধরে বললো,
-ওরে পাকনি বুড়ি এটা আমার বন্ধু হয় । বুঝলি??
বাচ্চাটা কি বুঝলো কে জানে । হঠাৎ-ই খিলখিল করে হাসতে শুরু করে দেয় ও । তারপর ওর সাথে তাল মিলিয়ে এক এক করে সবাই হেসে দেয় । ওদের সবাইকে একসাথে হাসতে দেখে আবার লজ্জা পেতে শুরু করে নিশি । একদম মিইয়ে যেতে লাগলো মেয়েটা ।
এদিকে নিঝুম বেশ মজা পাচ্ছে বাচ্চাদের কান্ড দেখে । কিন্তু যখন হুট করে ও দুলাভাই কিনা জিজ্ঞেস করেছিল তখন ওরও কেমন জানি একটু লজ্জা লাগছিল । আর যখন দেখলো নিশি লজ্জায় রংধনু হতে শুরু করেছে তখন একদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল নিঝুম ।
.
নৌকায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে অনু । ওর পা ছুঁয়ে যাচ্ছে ঠান্ডা শীতল পানি । বিশাল ঝিলের মাঝে দিয়ে নৌকাটা যাচ্ছে । নদীর থেকে একটু ছোট হবে ঝিলটা । ঝিলের এখানে ওখানে কচুরিপানা দেখা যাচ্ছে । অনু মুচকি হেসে দেখে যাচ্ছে চারপাশ । ভালো লাগার সবচেয়ে সুন্দর একটা মুহূর্ত মনে হচ্ছে ওর কাছে ।
ঢাকা আশুলিয়া পার হয়ে বিরুলিয়ার পাশে একটা গ্রামে অনুকে নিয়ে এসেছে নীল । কোনো একভাবে নীল জানতে পেরেছিল যে অনুর গ্রামে ঘুরা খুব পছন্দ । তাই ওকে নিয়ে এখানে এসেছে । একটা নৌকা ভাড়া করে ওকে নিয়ে উঠেছে কিছু সুন্দর মুহুর্ত উপহার দেয়ার জন্য । অনুর মুখের হাসিটাই বলে দিচ্ছে যে ওর যেটা চেয়েছিল সেটা ও পেরেছে । অনুর এই হাসি মুখটাই খুব করে দেখতে চাইছিল নীল ।
অনু হঠাৎ কি মনে করে পাশ ফিরে নীলর দিকে তাকায় । দেখে ওর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । নীলকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনুর বুকের ভিতর ধুক করে উঠে । স্পন্দনের গতিও যেন বেড়ে যাচ্ছিল । নীলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয় অনু । মাথা নিচু করে বলে,
–সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে । এবার ফিরে যেতে হবে । চলুন ।
নীল আর কোনো উত্তর দেয় নি । শুধু একটু মুচকি হেসেছিল । নীলের সেই হাসি দেখে অনু মনে মনে বললো,
— “এভাবে হাসছেন কেনো উনি!!! উনি কি আবারও আমার মাইন্ড পড়ছেন নাকি!!! ”
.
প্রায় বিকালের পরেও অনেক সময় পর্যন্ত ওরা আশ্রমে ছিল । সন্ধ্যার একটু আগ মুহুর্তে ওর ওখান থেকে বেরিয়ে আসে । ফিরে আসার সময়ও নিশি রিকশায় করেই যেতে চেয়েছিল কিন্তু নিঝুম সেটা দেয় নি । তাই বাধ্য হয়েই গাড়িতে করে আসতে হয়েছে নিশিকে । আসার পথে গাড়িতে টুকটাক গল্প করছিল ওরা । নিশির বাসায় সামনে আসতেই গাড়ি থামায় নিঝুম ।
ঠিক একই সময় নীলও অনুকে নিয়ে নিঝুম যে রাস্তা দিয়ে এসেছে তার উল্টো রাস্তা দিয়ে এসে অনুর বাসার সামনে গাড়ি থামায় । অনু আর নীল আগে গাড়ি থেকে নামে । তখন নিশিও নিঝুমের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে নামে । গাড়ি থেকে নেমে ফিরতেই অনু নিশি নীল নিঝুম মুখোমুখি পড়ে । নিশি প্রথমে অনুকে দেখে অবাক হয়ে তাকায় । কিন্তু পাশে নীলকে দেখতেই চোখ বড় বড় তাকায় । নিশি যেন আকাশ থেকে পড়েছে নীলকে দেখে । সাথে সাথেই……….
.
.
.
চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২০
.
.
.
অনু আর নীল আগে গাড়ি থেকে নামে । তখন নিশিও নিঝুমের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে নামে । গাড়ি থেকে নেমে ফিরতেই অনু নিশি নীল নিঝুম মুখোমুখি পড়ে । নিশি প্রথমে অনুকে দেখে অবাক হয়ে তাকায় । কিন্তু পাশে নীলকে দেখতেই চোখ বড় বড় তাকায় । নিশি যেন আকাশ থেকে পড়েছে নীলকে দেখে । সাথে সাথেই নিশি চিৎকার করে উঠে,
–আপনিইইইইইই….
নিশি প্রায় দৌড়ে গিয়ে নীল অনুর সামনে দাড়ায় । অনু তো পারছে না কাঁদতে । মনে মনে বললো,
— “আল্লাহ এখনই আপির সামনে পড়া লাগলো!!! আল্লাহ বাঁচাও!! ”
কিন্তু মুখের রিয়েকশন এমন দিলো যে কিছুই হয় নি । নিশি নীলের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
–তুই এই বেত্তমিজ লোকের সাথে কি করছিস? কই গিয়েছিলি তুই??
অনু স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিল,
–বাসায় চল আপি । পরে সব শুনিস ।
নিশি হুংকার দিয়ে উঠলো । বললো,
–একদম না এক্ষুণি বলবি তুই আমাকে ।
তারপর নীলর দিকে তাকিয়ে ওকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–আর আপনি!! আপনাকে কতবার বলেছি আমাদের থেকে দূরে থাকতে । বাট আপনি ঘুরে ফিরে আমার সামনেই পড়েন । কি ভাবেন কিছু বুঝি না । আপনি আস্ত একটা বদ । বদের নানা আপনি । আপনাকে দেখলে আমার বুড়িগঙ্গা নদীর কথা মনে পড়ে । ইচ্ছ করে আপনাকে বুড়িগঙ্গার পঁচা পানিতে চুবাতে । তাহলে যদি আপনার বদগুলো কাটে ।
নীল কিছু বললো না । চুপচাপ নিশির দিকে তাকিয়ে আছে শান্ত দৃষ্টিতে । এটা দেখে নিশি আরো ক্ষেপে গেলো । ও একা একা কথা বলছে আর ওকে কিনা কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না । নিশি আবার বলতে লাগলো,
–ঐ ঐ ঐ এমনে ড্যাব ড্যাব কইরা কি দেখোস হ্যা?? চোখ গুলা তুইল্লা লামু এক্কারে । একবার আমার দিকে তাকায় থাকস তো আরেকবার আমার বোনের দিকে তাকায় থাকস । কি পাইছোস হ্যা ??
নিশি রাগে ফুঁসছে । নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । এই একদিনে নিশির কতগুলো রুপ যে ও দেখলো । কখনো লজ্জায় রংধনু হয়ে যায় । তো কখনো ঝর্ণার উছলে পড়া উচ্ছল ধারার মতো খিলখিল শব্দ করে হৃদয় কাঁপানো হাসি হাসে । আবার কখনো বাচ্চাদের মতো হয়ে যায় । কখনো হয় মায়াবতী । এখন আবার আরো একরূপ দেখছে । রাগে অগ্নিশর্মা হওয়া নিশি মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে । সেই সাথে অদ্ভুত শব্দে অদ্ভুত কথা বলছে । হা করে আছে নিঝুম । আর অনু ভাবছে নিশিকে কি করে থামাবে । নিশির যে এখন রাগের পারদ তরতর করে বেড়ে গেছে । সেটা আরো বাড়বে তা নিশির তুই তোকারি দেখেই অনু বুঝে গেছে । নিশি রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না । ওর রাগ খুব বেশি । অনু ভাবছিল কি করে নিশিকে এখান থেকে নিয়ে যাবে । এদিকে নিশি থেমে নেই । ও বলেই যাচ্ছে । নিঝুম নিশির সাথে কথা বলার কোনো সাহস পাচ্ছে না । নীল বিড়বিড় করে বললো,
–এই ধানি লঙ্কাকে ভাই কিভাবে ভালোবাসলো!!!
–অইইই বিড়বিড় কইরা কি কস?? জোড়ে ক…
নিশি চিৎকার করে বললো । নিশিকে থামানোর কোনো উপায় না পেয়ে অনু নীলের একটু কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললো,
–আপনি চলে যান । আপিকে নাহলে সামলানো যাবে না ।
নীল অনুর দিকে তাকালো । রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের আলো এসে অনুর মুখে পড়ছে । সামনের কাটা চুলগুলো কপালে হালকা এলো পড়ে আছে । মৃদু আলোয় অনুর মুখের মায়াবী ভাবটা যেন আরো ফুটে উঠেছে । নিশির দিকে তাকিয়ে আছে অনু । এই মুহুর্ত আরো একবার অনুর মায়ায় ডুবে গেলো নীল । খুব ইচ্ছে করছে অনুকে এভাবেই সারারাত ভর দেখতে । ওর মায়ায় সাগরে বার বার ডুব দিতে । নীল অনুর দিকে তাকিয়ে থেকেই চুপচাপ সেখান থেকে সরে গাড়িতে উঠে পড়লো । তারপর গাড়ি র্স্টাট দিয়ে চলে গেল । পিছে নিশি নীলকে চলে যেতে দেখে চুপ হয়ে যায় । নীল যখন চলে যাচ্ছিল তখন অনু একবার মাত্র ফিরে নীলের দিকে তাকিয়ে ছিল । কয়েক সেকেন্ডের জন্য । তারপর সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিশির দিকে তাকায় । নিঝুমের দিকেও নজর পড়ে অনুর । জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে অনু বললো,
–সরি নিঝুম ভাইয়া ।
নিঝুম অনুর দিকে তাকিয়ে ভদ্রতা সূচক হাসি দিল । বললো,
–ইট’স ওকে ।
–বাসায় আসতে বলবো না । কারণ আমি জানি আপনাকে বললে আপনি বলবেন আজ না অন্যদিন ।
নিঝুম অনুর কথা শুনে হেসে ফেললো । কিন্তু কোনো উত্তর দিল না । অনুও মিষ্টি করে হাসলো । তারপর নিশির দিকে তাকিয়ে বললো,
-বাসায় আয় আপি ।
একথা বলে অনু আর একসেকেন্ডও সেখানে দাড়ায় নি । হনহন করে বাসার ভিতরে ঢুকে পড়লো । নিশি বোকার মতো অনুর যাবার পানে তাকিয়ে রইলো ।
-ভিতরে যাও নিশি ।
কারো কথায় নিশি সেদিকে ফিরে তাকালো । দেখলো নিঝুম । নিশি মনে মনে প্রচুর অসস্থিতে পড়ে গেল । নিজের রাগটাকে ও কেনো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না । নিঝুমের সামনে কেমন করলো ও একটু আগে । ভাবতেই ওর কেমন জানি লাগছে । নিশি কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না । কি দিয়ে শুরু করবে বা কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না । সব কথা যেন ওর গলায় এসে আটকে যাচ্ছে । নিঝুম হয়তো নিশির অবস্থাটা বুঝতে পারলো । তাই বললো,
–আমি কিছু মনে করি নি নিশি । তোমার অসস্থিবোধ করার কোনো প্রয়োজন নেই । ভিতরে যাও । রাতে কথা হবে ।
নিশি নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বললো,
–সরি নিঝুম । আমি আসছি ।
নিশি চলে গেলো । ও চলে যাওয়ার পরও নিঝুম কিছুক্ষণ সেখানে রইলো । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে এলো । গাড়িতে বসে ভাবতে লাগলো,
— ” এরা দু’বোন দুরকমের । নিশওর মধ্যে বাচ্চামো স্বভাবটাই বেশি । অন্যদিকে অনু খুব ম্যাচিউর । একটু আগে কি সুন্দর করে সামলে নিলো বিষয়টা । প্রথমে যখন হাসি দিয়েছিল আমার দিকে তাকিয়ে তখন হাসিটা জোর করে দেয়া । কিন্তু বোঝবার উপায় নেই । সহজে কেউ ধরতে পারবে না । আবার যাওয়ার সময় কি সুন্দর মিষ্টি করে হাসি দুয়ে গেলো । অথচ ওর জায়গায় অন্য কেউ হলে মুখটা আষাঢ় মাসের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হয়ে যেত । নিজেকে খুব সুন্দর আড়াল করে ঘুছিয়ে রাখতে জানে মেয়েটা । কিন্তু নিশি তার পুরোই উল্টো । নিশি অনুর বড় হলেও মনে হয় নিশিই ছোট ৷
সারাদিনে সব কাহিনী এক এক করে মনে করতে লাগলো নিঝুম । আর আনমনেই হাসতে লাগলো ।
.
.
রাত একটা বেজে পঁচিশ মিনিট । একটু আগেই শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছে অনু । টাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে নিশির দিকে তাকালো । ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা । কি নিঃপাপ লাগছে ওকে । কে বলবে কয়েক ঘন্টা আগে এই মেয়ে তুলকাম কাহিনী করে পড়ে একা একাই কান্নাকাটি করে অস্থির হয়ে গিয়েছিল বাচ্চাদের মতো । এখন আবার বাচ্চাদের মতোই একটা বালিশ জড়িয়ে গুটিশুটি মেরে ঘুমুচ্ছে । অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় চলে গেল টাওয়াল মেলে দিতে । বারান্দা তেকে চলে আসতে গিয়েও কি মনে করে রেলিংয়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো । আকাশটা বেশ পরিষ্কার । বিশাল এক চাঁদ উঠেছে । কোথায় কোথায় একটু মেঘের ছোয়া দেখা যাচ্ছে । হঠাৎ সেই মেঘ ভেসে এসে ক্ষণিকের জন্য চাঁদটাকে আড়াল করে দিয়ে আবার সরে যাচ্ছে । চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় ভরে গেছে পুরো পৃথিবী । মৃদু মন্দ বাতাসও বইছে । অনুর রুমে যেতে ইচ্ছে করছে না । ইচ্ছে করছে জোৎসনা বিলাশ করতে । অনু হেলান দিয়ে দাড়ালো । আকাশের ঐ চাঁদের দিকে তাকিয়েই গাইতে শুরু করে,
.
.
…..চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে,
……..উছলে পড়ে আলো ।
..ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ।
…..চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে
.
.
…..পাগল হাওয়া বুঝতে নারে,
……ডাক পড়েছে কোথায় তারে-
……পাগল হাওয়া বুঝতে নারে,
……ডাক পড়েছে কোথায় তারে-
….ফুলের বনে যার পাশে যায়
…তারেই লাগে ভালো ।
..ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ।
…..চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে
.
.
…নীল গগনের ললাটখানি চন্দনে আজ মাখা,
…..বাণীবনের হংসমিথুন মেলেছে আজ পাখা ।
…..পারিজাতের কেশর নিয়ে
…….ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ ।
…..পারিজাতের কেশর নিয়ে
…….ধরায়, শশী, ছড়াও কী এ ।
….ঈন্দ্রপুরীর কোন্ রমণী বাসরপ্রদীপ জ্বালো ।
….ও রজনীগন্ধা, তোমার গন্ধসুধা ঢালো ।
…..চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে…….
.
গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ চোখ পড়লো নিচের দিকে । একটা চেনা মুখ দাড়িয়ে । খুব স্পষ্ট আবার অস্পষ্ট । অনু একবার ভাবলো হয়তো ওর চোখের ভুল । তাই আবার ভালো করে তাকালো । নাহ দেখলো এখনো ঠিক আগের মতোই । অনু ঠিক কেমন রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারলো না । শুধু অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
–নীল……..
.
.
.
চলবে??
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#স্বপ্ন?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_২১
.
.
.
গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ চোখ পড়লো নিচের দিকে । একটা চেনা মুখ দাড়িয়ে । খুব স্পষ্ট আবার অস্পষ্ট । অনু একবার ভাবলো হয়তো ওর চোখের ভুল । তাই আবার ভালো করে তাকালো । নাহ দেখলো এখনো ঠিক আগের মতোই । অনু ঠিক কেমন রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারলো না । শুধু অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,
–নীল…..
নীল নিচে থেকে তাকিয়ে আছে অনুর দিকে । তাকিয়ে দেখছে ওর মায়াবতীকে । হুম ওর মায়াবতী । এই দু’মাসে ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল যে ও অনুকে ভালোবাসে । আর আজ অনুর থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছে ও শুধু অনুকে ভালোইবাসে না…. খুব খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছে এই মেয়েটাকে । আড়ালে থেকে কথা বলতে বলতে কোন চুপিসারে যে এই মেয়েটার নামে নিজের মনটা লিখে দিয়েছে বুঝতেই পারে নি ।
আজ বিদায় নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পরই খুব অস্থির লাগতে শুরু করে । মনে হচ্ছিল কি যেন ওর কাছে নেই। কি জানি হারিয়ে ফেলছে । তাইতো কিছুদূর গিয়েও আবার ফিরে এসেছিল অনুকে আবার দেখতে । ছুটে এসেছে ওকে নিজের মনের কথা বলতে । কিন্তু এসে আর অনুর সাথে দেখা হয় নি । তাই অনুর রুমের বারান্দা বরাবর নিচে দাড়িয়ে ছিল । অনু যদি একবার আসে । যদি ওকে একবার দেখতে পায় সেই আশায় । অপেক্ষা করতে করতে কখন যে রাত একটা বেজে গেছে বুঝতেই পারে নি নীল । অবশেষে ওর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অনুকে দেখতে পায় নীল । চাঁদের আলোয় স্পষ্ট ওকে দেখতে পারছিল নীল । ওর টাওয়াল মেলে দেওয়া দেখে বুঝতে পারে যে মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে মেয়েটা । কিছুক্ষণ আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে ছিল । রাত গভীর । শুনশান চারিপাশ । তাই অনু যখন গান গাইছিল তখন ওর গান পুরোপুরি শোনা না গেলেও সুরটা ঠিকই ভেসে আসছিল নীলের কানে । অপলক তাকিয়ে ছিল নীল । দূর থেকে দেখছিল ওর মিষ্টি অনুকে । চাঁদের আলোয় ওর স্নিগ্ধতা যেন ছড়িয়ে পড়ছিল । হঠাৎ করেই যখন অনু ওর দিকে তাকিয়েছিল ঠিক এক সেকেন্ডের জন্য ওর হার্টবিট মিস হয়ে গেছিল । পুরোপুরি থমকে গেছিল ও । তাকিয়ে দেখলো অনু ওকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
–এখানে কি করছেন??
নিশ্চুপ হয়ে আছে নীল । কি উত্তর দিবে!!! জানা নেই ওর!!! হঠাৎ ওর কি হলো কে জানে । অনুকে ও ইশারায় বললো নিচে নামতে । অনুকে একবার বলতেই ও আসছি বলে ইশারা করলো ।
অনু নীলকে নিচে দেখে অবাক হয়ে যায় । এতরাতে নীল এখানে কেনো!! উনি কি বাসায় যায় নি নাকি?? অনু ইশারায় নীলকপ তাই জিজ্ঞেস করে যে এখানে কেনো উনি । এটা জিজ্ঞেস করতেই উনি নিচে যাওয়ার জন্য বলে। অনুও কি মনে করে আসছে বলে দেয় । বারান্দা থেকে রুমে গিয়ে দেখে নিশি পুরোপুরি ঘুমে । পা টিপে রুম থেকে বেরিয়ে দরজা ভেজিয়ে দেয় । তারপর নিঃশব্দে মেইন ডোর খুলে বেরিয়ে নিচে চলে যায় । নিচে নামতেই দেখে নীল দাড়িয়ে । হয়তো ওর অপেক্ষায়তেই । গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যেতে লাগলো নীলের দিকে ।
নীল অপলক তাকিয়ে আছে । অনু গায়ে একটা শাল পেচিয়ে এসেছে । চুলগুলো পিঠ জুড়ে এলোমেলো হয়ে আছে । ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নীল । অনু যে ওর সামনে এসে দাড়িয়ে আছে সে কেয়াল ওর নেই । ও তো ব্যস্ত অনুকে দেখায় । চাঁদের আলো অনুর মুকে পড়ায় ওর মুখটা বেশিই মায়াবী দেখাচ্ছে । নীলের খুব ইচ্ছে হলো অনুর চিবুকটা হাতে মাঝে নিচে ওর চোখজোড়ায় চোখ রাখতে।
–আপনি এতরাতে এখানে কি করছেন??
অনুর কথায় নীলর ভাবনার সুতো কাটল । বললো,
-না মানে….এ…. এমনিই…
অনুর নীলের কথাটা একদমই বিশ্বাস হলো না । এমনি এমনি কেউ এতরাতে কারো বাসার নিচে দাড়িয়ে তাকে না সেটা ও খুব ভালো করেই জানে । অনু কিছু বলতে যাচ্ছিল তখন নীল বলে উঠলো,
–অনু শোনো…
–হুম বলুন
নীল অনুর থেকে লুকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো । তারপর হুট করেই অনুর চিবুক আঁজলা করে ধরে বললো,
–ভালোবাসি তোমাকে…… ঘুরিয়ে পেচিয়ে কথা বলতে জানি না আমি । তাই সোজাসাপটা বললাম । আমি তোমাকে ভালোবাসি অনু……
.
.
.
চলবে??
(বি.দ্র. আজকের পার্টটা ছোট হয়ে গেছে জানি । তার জন্য সরি । লিখার সময় পাই নি । তাই যতটুকু লিকা হয়েছে ততটুকুই দিয়ে দিলাম । ইনশাল্লাহ পরের পার্ট বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন ।
.