স্বপ্ন?পর্ব_১৩/১৪/১৫

1
720

স্বপ্ন?পর্ব_১৩/১৪/১৫
#অনামিকা_সিকদার_মুন

.
.
ম্যাসেজ অপেন করতেই আবার চমকে উঠলো অনু ।
“nil aparajita ekhono ghumao ni j??”
এমন ম্যাসেজ কে দিতে পারে সেটা ঠিক খুঁজে বের করতে পারলো না অনু । নীল অপরাজিতা…..এই নামটা কি করে জানলো!!! আর এতরাতে কে-ই বা এমন ম্যাসেজ দিচ্ছে । এসব ভাবতে ভাবতেই প্রথমে অনুর মনে এলো আযানের নাম । হয়তো আযান দুষ্টমি করে দিয়েছে । আবার পরক্ষণেই ভাবলো কিন্তু আযান তো এই নামটা জানে না । তাহলে কে?? অনু ফোন হাতে নিয়েই এসব ভাবছে তখনই আবার আরেকটা ম্যাসেজ আসে ঐ নাম্বার থেকে ।
-” vabcho to ami k? ami k eta vebe luv nei…..jokhon shomoy hobe ami nijei tmr samne ashbo….ghumiye poro mishti anu…..tata ”
এবার অনু একটু না অনেক বেশি অবাক হলো । যে ম্যাসেজ দিয়েছে সে কি করে জানলো? যে আমি তার কথা ভাবছি । আজ আর অনুর ঘুম হবে না সেটা অনু ভালো করেই বুঝে গেছে । তাই আর ঘুমানোর চেষ্টাও করলো না । বসে বসে ভাবতে লাগলো যে কে এই লোক ।
“আপিটাও নেই, ধ্যাত ভাল্লাগে না ।” মনে মনে বললো অনু । নিশির সাথে অনু আজ ঝগড়া করেছে । তাই নিশি রাগ করে অনুর সাথে থাকবে না বলে মায়ের রুমে চলে গেছে । তাই অনু আজকে রুমে একা । বাকি রাতটা হয়তো অনুর ভাবতে ভাবতেই কাটবে ।
.
নিশি পা টিপে টিপে মায়ের রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে সোফার উপর ধপাস করে বসে পড়লো । তারপর বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিল । টিভি ছাড়তে গিয়েও ছাড়লো না । সোফার উপরে শুয়ে পড়লো । রাতে অনুর সাথে ঝগড়া করে রুম থেকে বেরিয়ে এসে কি বড় ভূল যে করেছে সেটা নিশি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে । কারণ নিশির নিজের বেডরুম আর পাশে কোলবালিশ হিসেবে অনুকে না পেলে চলেই না । তাই রাগ করাটা ঠিক হয় নি নিশির । এখন কষ্টে নিজের কপাল নিজেরই চাপড়াতে ইচ্ছে করছে নিশির । আবার রুমে যাবে সেটাও পারছে না । যদি অনু ওর মজা নেয় তখন । তাতে নিশির রাগ আবার বাড়বে । তার থেকে ভালো যাবেই না । সোফা শুয়েই রাত কাটাবে । পরক্ষণেই নিশি আবার ভাবলো, “রাতটা না হয় রাগ করে সোফায় কাটাবো কিন্তু সকালে!!!! তখন কি করবো । আমার সব কিছুতেই যে অনু অভ্যাস হয়ে গেছে । এখন কি করবো??? ” নিশি আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো । পরে আবার ভাবলো যা হবার কাল হবে । এখন সেগুলো নিয়ে ভেবে মাথা খারাপ করবে না । নিশির
ঘুম আসছিল না । তাই নিশি ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করলো । সেই সকালে একবার ফেসবুকে ডুকেছিল । পর সারাদিনে আর সময় পায় নি । নিশি ফেসবুক স্ক্রল করছিল । হঠাৎ কি মনে করে নিশি ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট কারা কারা পাঠিয়েছে সেটা চেক করতে লাগলো । হঠাৎ একটা আইডির উপর চোখ পড়তেই নিশির চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় ।
-“এই যে সেইদিনের ছেলেটা । উনি আমার আইডি পেলো কিভাবে!!” মনে মনে বললো নিশি । নিঝুম নিশিকে ফ্রেন্ডরিকুয়েষ্ট দিয়েছে । কিন্তু সেটা নিশির একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না । ফেক আইডি নাকি সেটা চেক করার জন্য নিশি নিঝুমের আইডিতে ডুকে । পুরো প্রোফাইল চেক করে । কিন্তু প্রোফাইল দেখে মনে হয় নি যে এটা ফেক আইডি । নিশি এখন থ মেরে বসে আছে । নিশির মনে পড়ে গেলো সেদিন রাতের কথা । দুটো চোখ যা গভীর চাহনি নিয়ে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে । বৃষ্টির পানি টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছিল সেই মুখটায় । আবছা আলোয় সেই মুখটা বড়ই মায়াবী লাগছিল নিশির কাছে । ছেলেদের চেহারায়ও বুঝি এত মায়া থাকে? সে যখন কাঁপা কাঁপা হাতটা নিশির মুখের দিকে তুলছিল তখন নিশির হৃদস্পন্দন যেন থেমেই যাচ্ছিল । স্বপ্নের মতো লাগছিল নিশির । মনে হচ্ছিল এই বুঝি স্বপ্নটা ভাঙ্গবে । নিশি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিল না । তাই সেদিন এলোমেলো ভাবে দৌড়ে চলে এসেছিল সেখান থেকে । মুহুর্তের মধ্যেই নিশির চোখে সেই রাতের কাহিনীগুলো ভেসে উঠলো । নিজের অজান্তেই হেসে উঠলো নিশি । আবার হুট করেই নিশির খেয়াল হতেই মনে মনে বললো,
-“আজব আমি হাসছি কেনো!!!”
.
নিশি নিঝুমের ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা এক্সেপট করে । নামটা দেখে নিশি একটু খুশি হয় । কারণ নিঝুম নামটা নিশির খুব পছন্দের । কেনো সেটা নিশি জানে না । হয়তো নিজের নামের সাথে মিল খুঁজে পায় বলে । নিঝুমের আইডিত নামের পাশে সবুজ আলো জ্বলছে তার মানে এক্টিভ আছে । নিশি কি মনে নিঝুমকে নক দিতে গিয়েও দিল না ।
অনু রুম থেকে বেরিয়ে পানি নেয়ার জন্য ড্রয়িংরুমের পাশ দিয়ে যেতেই দেখে নিশি সোফায় শুয়ে ফোন টিপছে । নিশিকে সোফায় দেখে অনু হেসে দিল । কারণ প্রতিবার যখন নিশি অনুর সাথে ঝগড়া করে তখন মায়ের রুমে যায় ঘুমাতে । যায় ঠিকই কিন্তু সেদিন আর নিশির ঘুম হয় না । কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে যখন চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারে না তখন উঠে চলে আসে । আর ড্রয়িংরুমে সোফায় শুয়ে থাকে । কিন্তু নিজের রুমে যায় না । তখন যদি অনু জোড় করে একটু তবে যায় । আজও তেমনি বসে আছে নিশি । অনু পানি আনতে যাওয়ার সময় নিশি অনুর দিকে আড়চোখে তাকায় । কিন্তু কিছু বলে না । অনু পানি নিয়ে সোজা রুমে চলে যায় । নিশির সাথে কোনো কথাই বলে নি । অনুকে ওভাবে চলে যেতে দেখে নিশি আহত দৃষ্টিতে অনুর যাবার পানে তাকিয়ে থাকে । মনে মনে আশা করে হয়তো অনু উল্টো ঘুরে এসে ওর সাথে কথা বলবে । কিন্তু তার কিছুই যখন নিশি হতে দেখে না তখন গাল ফুলিয়ে উঠে বসে থাকে । ওদিকে অনু রুমে গেলেও দরজা না লাগিয়ে মাথা খানিকটা বের করে উঁকি দিয়ে দেখে নিশির কান্ড । নিশিকে ওভাবে গাল ফুলাতে দেখে অনু ফিক করে হেসে দেয় । আবার নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে যাতে ওর হাসির শব্দ না হয় । আরো কিছুক্ষণ অনু আড়ালে থেকেই নিশির কান্ড দেখতে লাগলো । নিশি একবার উঠে দাড়াচ্ছে । একবার বসছে । আবার শুয়চ্ছে । তো কখনো থুম ধরে বসে থাকছে । নিশির এমন কান্ড দেখে অনু আর থাকতে পারলো না । ড্রয়িংরুমে নিশির কাছে গেলো । অনুকে আসতে দেখে নিশি এমন একটা ভাব নিল যে ও অনুকে দেখতেই পায় নি । অনু গিয়ে নিশির পাশে সোফায় বসে ও অনুকে দেখতেই পায় নি । অনু গিয়ে নিশির পাশে সোফায় বসে পড়ে । নিশি চুপ করে আছে । অনুও কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-আপি রুমে চল ।
নিশি কোনো উত্তর দিল না । নিশিকে চুপ থাকতে দেখে অনু নিশির হাত ধরে ঝাঁকিয়ে আবারো বললো,
-আপিইইই কিছু বলেছি আমি । শুনছিস না কেনো?
নিশি এবার মুখ খুললো,
-না আমি যাব না । এখানেই ঠিক আছি আমি ।
অনু নিশির হাত উঠিয়ে আঙ্গুলে মৃদু করে একটা কামড় দিল । আর নিশি জোড়ে বলে উঠলো,
-অইইইইইই কি করিস এগুলা?? কামড় দিস কেনো? ব্যাথা লাগে না বুঝি??
-বেশ করেছি কামড় দিয়েছি । বেশি কথা বললে আবার দিব ।
নিশি রাগ দেখিয়ে বললো,
-আর আমি বুঝি তোকে ছেড়ে দিব? ছাড় আমাকে ।
নিশিকে রাগ হতে দেখেই অনু নিশির গলা আলতো করে জড়িয়ে ধরেছিল । অনু বাচ্চাদের মতো আল্লাদী কণ্ঠে বললো,
-না ছাড়বো নাআআআআ ।
নিশি আড়চোখে অনুর দিকে তাকালো । মনে মনে অনুর কথায় খুশি হলেও মুখে বললো,
-অনুওওওও ছাড় প্লিজ ।
-যাহ ছেড়ে দিলাম ।
বলে অনু নিশিকে ছেড়ে দিল ।
-তুই রুম ভরে পায়চারি কর । একবার বস আরেকবার উঠ । গাল ফুলিয়ে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাক তাও আর আসবো না । হাহ্ ।
এই কথা বলতে বলতে অনু বসা থেকে উঠে রুমের দিকে যেতে লাগলো । আর নিশি অনুর কথা শুনে হা করে আছে ।
-“তার মানে এতক্ষণ আমি কি করেছি সেগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে অনু সব দেখেছে ।” মনে মনে বললো নিশি । একলাফ দিয়ে বসা থেকে উঠলো নিশি । তারপর অনুর পিছন পিছন দৌড় লাগালো । অনুর আগেই দৌড়ে নিশি রুমে ঢুকে একেবারে খাটের উপর লাফ দিয়ে উঠে শুয়ে পড়ে । আর অনু হাসতে থাকে নিশির পাগলামো দেখে ।
.
.
নিঝুম খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে খুব গভীর মনোযোগ দিয়ে ল্যাপটপে নিশির ছবি দেখছিল এক এক করে । খুটিয়ে খুটিয়ে দেখা যাকে বলে । ছবির সাথে ওর স্বপ্নকন্যাকে মিলিয়ে দেখছিল নিঝুম । আর ভাবছিল অবশেষে ও ওর স্বপ্নকন্যাকে খুঁজে পেলো ।
-“নিশি”
নিঝুম নিশির ছবির দিকে তাকিয়ে থেকেই মুচকি হেসে মনে মনে নিশির নাম উচ্চারণ করলো । ঠিক তখনই ওর নোটিফিকেশনের এলার্ম বেজে উঠে । নিঝুম তাড়াহুড়া করে নোটিফিকেশন চেক করতেই ওর মুখ জুড়ে হাসির রেখা ছড়িয়ে পড়লো । নিশি ওর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপট করেছে । আর এটাই নিঝুমের ঐ মায়াভরা মুখটায় হাসি ফুটিয়ে তুলেছে । সাহস করে নিশিকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালেও তখন ওকে অনলাইনে দেখেও নক দেওয়ার সাহস হয় নি নিঝুমের । কিন্তু যতক্ষণ নিশির আইডির পাশে সবুজ আলো জ্বলছিল ততক্ষণ নিঝুম নিশির আইডির দিকে অপলক তাকিয়ে ছিল । ছিল এক অপেক্ষায় । অজানা কোনো এক আশা বার বার নিঝুমের মনে কড়া নেড়ে বলছিল, “যদি তোকে নিজে থেকে নক দেয়!! অপেক্ষা কর নিঝুম । ” তাই নিঝুম অপেক্ষায় ছিল । আর মনে মনে ভাবছিল,
-“নিশি কি আমাকে চিনতে পেরেছে? ওর কি মনে আছে সেদিন রাতের কথা……
.
.
.
চলবে?
(বি.দ্র. ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


#স্বপ্ন ?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_১৪
.
.
অজানা কোনো এক আশা বার বার নিঝুমের মনে কড়া নেড়ে বলছিল, “যদি তোকে নিজে থেকে নক দেয়!! অপেক্ষা কর নিঝুম । ” তাই নিঝুম অপেক্ষায় ছিল । আর মনে মনে ভাবছিল,
-“নিশি কি আমাকে চিনতে পেরেছে? ওর কি মনে আছে সেদিন রাতের কথা? ”
.
সময় এমন একটা জিনিস যেটা কখনো ধরে রাখা যায় না । একটু একটু করে বয়ে যেতে যেতে পার হয়ে যায় প্রায় দু’মাস । এর মধ্যে ওরা অনেকটা বন্ধুর মতো হয়ে গেছে । নিশির সাথে এই মধ্যে অনেকবারই নিঝুমের সাথে দেখা হয়েছে । কিন্তু কেউই কখনো কারো সাথে কথা বলে নি । বলতে গেলে নিশিই বলে নি । দেখা হলে শুধু চোখে চোখ পড়াটুকু পর্যন্ত শেষ । নিঝুম নিশির সাথে কথা বলতে চাইলেও নিশি পালিয়ে যেতো । সেদিনের বৃষ্টি ভেজা রাতের কথা আজও নিশি মনে গেঁথে আছে । নিঝুমকে দেখলেই নিশি সেকথা যেন আরো বেশি মনে পড়ে যায় । আর তখন লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় নিশি । তাই তো নিঝুমের সাথে দেখা হলেই নিশি পালিয়ে যায় । কিন্তু ফেসবুকে প্রতিদিনই কথা হয় ওদের । কখনো বা ফোন কলে । শুধু দেখা হলেই পালিয়ে বেড়ায় মেয়েটা । এই তো দিন দুয়েক আগের কাহিনী । নিঝুম অনেক বলে কয়ে নিশিকে রাজি করায় দেখা করার জন্য । কথা ছিল যে নিঝুম ভার্সিটি থেকে পিক করবে নিশিকে । তারপর কোথাও একটা যেয়ে বসে কথা বলবে । কিন্তু কিসের কি!!! নিশি ভার্সিটিতে গিয়ে ভুলেই গেলো সেকথা । আর আযান অনুর সাথে আড্ডায় মেতে উঠে প্রতিদিনের ন্যায় । ওদের সাথে আড্ডা দিতে বসলে দিন দুনিয়া ভুলে যায় নিশি । আজও তার ব্যাতিক্রম কিছু হয় নি । নিশি ক্যাম্পাসে বসেই আড্ডা দিচ্ছিল । তখন নিশির পিছনে গিয়ে দাড়ায় নিঝুম । নিশি তখনও আড্ডায় মত্ত । অনু নিশির পিছনে নিঝুমকে দেখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিঝুম ইশারায় মানা করে আর আগের মতোই আড্ডা চালিয়ে যেতে বলে । এদিকে যতই বলুক অনুর বার বার পিছনে চোখ চলে যাচ্ছে নিঝুমের দিকে । আর মুচকি হেসে যাচ্ছে অনু । নিশি বার বার অনুকে পিছনে তাকাতে দেখে বলে উঠে,
-ঐ বার বার পিছনে কি দেখিস?
অনু এমন কিছু করে নি ভান করে বললো,
-ক….কই কিছু না তো ।
-তো বার বার পিছনে তাকাচ্ছিস কেনো?? কি এমন আছে পিছনে…
বলেই নিশি পিছন দিকে ফিরতেই দু’টো পা দেখতে পায় । পায়ের মালিককে দেখতে মাথা উঁচু করে উপরের দিকে তাকাতেই যেন নিশি কারেন্টের শক খেল । চোখ দু’টো বড় বড় করে তাকায় নিশি । মনে মনে বলে,
-” একি নিঝুম কই থেকে আসলো!! ”
নিশি বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গেলে ।
নিঝুম বুকের উপর হাত বটে দাড়িয়ে আছে । আর মুচকি মুচকি হাসছে । নিশির চেহারা দেখে নিঝুমের প্রচুর হাসি পাচ্ছে । মেয়েটা পুরো ভড়কে গেছে । কাউকে ভড়কে দিতে পারলে নিঝুমের কেনো জানি ভালো লাগে । কেউ ভড়কে গেলে তার মুখটা তখন দেখার মতো হয় ।
নিঝুম কিছু কিছু বলতে যাবে তার আগে নিশি এমন একটা কাজ করলো যে এবার নিঝুম ভড়কে গেলো । শুধু নিঝুম না সাথে অনু আযান ওরাও ভড়কে যায় । যখন নিঝুম কিছু বলার জন্য আগায় তখন নিশি দু’পা পিছিয়ে যায় । তারপর উল্টো দিকে ঘুরে এক দৌড় দিয়ে ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে যায় । পিছে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে তিনজন । কিন্তু কিছুক্ষণ পড়ে অনু আর আযান খিলখিল করে হেসে উঠে । কিন্তু নিঝুম তখনো শকড্ হয়ে আছে । নিশি অনু আর আযানকে নিঝুমের সম্পর্কে, ওর সাথে কিভাবে পরিচয় সব বলেছে । তাই ওরা নিঝুমকে চিনে ।
নিশি তো এভাবেই পালিয়ে বেড়ায় নিঝুমের থেকে । আর এভাবেই চলছে নিঝুম নিশির দিন ।
.
এই দু’মাসে নিশি আর নিঝুমের বন্ধুত্ব কথাবার্তা হলেও অনুর নীলের সাথে তেমন কখনো কথা হয় নি । একই শহরে একই রাস্তায় চলাফেরা করে সেই সুবাদে নীলের সাথে অনুরও প্রায়ই দেখা হয় । কিন্তু কথা হয় না । আর সাথে নিশি থাকলে তো আর কোনো কথাই নেই । নিশি কোনো না কোনো ভাবে নীলের সাথে ঝগড়া বাঁধাবেই । প্রতিবারই নীল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে নিশিকে । কারণ ও চায় না নিশির সাথে ওর কোনো প্রকার ঝগড়া লাগুক । কিন্তু নীল এড়িয়ে গেলে কি হবে নিশি তো আর এড়িয়ে যায় না । এজন্য অনুর নীলের সাথে ঠিক কথা বলা হয়ে উঠে নি । অনুর সাথে নীলের দেখা হলে নীল অনুর অগোচরেই আড়চোখে দেখে নেয় অনুকে । ঠিক তেমনটা করে অনুও ।
তবে সেইদিন রাতে ঐ আননোন নাম্বার থেকে প্রতিরাতেই ম্যাসেজ আসে । যেগুলো দেখলে অনু অবাক হওয়ার চূড়ায় পৌঁছে যায় । অনু যদি ম্যাসেজের রিপ্লাই দেয় তবে সেও দিতে থাকে । কথা চলতে থাকে । আর অনু যদি কল দেয় তাহলে কল রিসিভ হয় ঠিকই কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো কথা আসে না । এমনকি একটা টু শব্দও আসে না । অনু অনেকবার ম্যাসেজে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে,
– “কে আপনি? ”
কিন্তু এর উত্তর অনু পায় নি । অনুর মনে মনে অনেক ভাবে । কিন্তু এত ভেবেও কুল কিনারা পায় না । খুঁজে পায় নি যে কে ওর সাথে এভাবে আড়ালে থেকে কথা বলে যাচ্ছে……..
.
.
.
চলবে??
(বি.দ্র. আজকের পর্ব ছোট হয়ে গেছে জানি । তার জন্য সরি । ইনশাল্লাহ পরবর্তী পর্ব বড় করে দিব ।
ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

#স্বপ্ন ?
#অনামিকা_সিকদার_মুন
#পর্ব_১৫
.
.
.
– “কে আপনি? ”
কিন্তু এর উত্তর অনু পায় নি । অনুর মনে মনে অনেক ভাবে । কিন্তু এত ভেবেও কুল কিনারা পায় না । খুঁজে পায় নি যে কে ওর সাথে এভাবে আড়ালে থেকে কথা বলে যাচ্ছে । অনুর কাছে সে ধোঁয়াশা হয়েই রইল । এভাবে নীলের সাথে লুকোচুরি দেখা আর সেই অচেনা লোকটি কে এই ভেবে যাচ্ছে অনুর দিন ।
.
রাতে খাওয়া দাওয়ার পর টেবিল গোছাচ্ছে অনু । আর নিশি ডায়নিংয়ের একটা চেয়ারে মুখ গোমড়া করে বসে আছে । ওদের মা খাওয়া শেষ করেই রুমে চলে গেছেন । উনার সকালে ক্লাস আছে । তাই উনি তাড়াতাড়ি চলে গেছে । অনু নিশির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে আর মুচকি হেসে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে । নিশি মুখ গোমড়া করে বসে থাকার কারণ অনু অনেকবার জিজ্ঞাসা করেছে । কিন্তু নিশি কোনো উত্তর না দিয়ে আগের মতোই বসে আছে । যদিও অনু জানে যে নিশির কি হয়েছে তাও অনু নিশির মুখ থেকেই শুনতে চাচ্ছে । তাই অনু কিছু জানে এমন ভান করে বারবার নিশিকে জিজ্ঞেস করে । অনেক সময় পর নিশি মাথা তুলে অনুর দিকে মায়া ভরা ছলছল দৃষ্টিতে তাকায় । নিশির চোখ দু’টোতে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে । মনে হচ্ছে এই বুঝি বাঁধ ভেঙ্গে দু’চোখ ছাপিয়ে শুরু হবে বৃষ্টির বর্ষণ । এবার অনুরও খারাপ লাগতে শুরু করলো । কারণ অনু আর যাই করুক না কেনো নিজের বোনের চোখে পানি ও সহ্য করতে পারে না । অনু নিশিকে কতটা ভালোবাসে সেটা প্রকাশ করে না । কিন্তু আড়াল থেকে সবসময়ই নিশিকে আগলে রাখে অনু । নিশির চোখে পানি দেখে অনু নিজে থেকেই নিশিকে বলতে যাবে তখন অনু বলার আগেই নিশি বলতে শুরু করলো,
-নিঝুম আমার সাথে রাগ করেছে রে । আমার সাথে আর কখনো কথা বলবে না বলেছে । আচ্ছা অনু তুই-ই বল আমার কি দোষ!!! আমি কি ইচ্ছে করে এমন করি ।
বলেই নিশি শব্দ করে কেঁদে উঠে । নিশির মনে এতক্ষণের জমে থাকা মেঘ এবার চোখ দিয়ে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে লাগলো বাঁধ ভেঙে । অনু নিশি কাছে গিয়ে নিশিকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে । অনু জড়িয়ে ধরায় নিশি যেন আশ্রয় খুঁজে পায় কান্নার । তাই ওর কান্নার বেগ বেড়ে যায় । কাঁদতে কাঁদতে নিশি বলে,
-ওর সামনে যেতেই আমার লজ্জা লাগে । অনেক সময় কথা বলতেও লজ্জা লাগে । ওর তো সেটা বোঝা উচিত । কিন্তু তা না করে ও আমার সাথে উল্টো রাগ করে । আমার যে কষ্ট লাগে সেটা কি ঐ বজ্জাত ছেলে বোঝে না?? ক্যান বোঝে না?? ওর মাথা ফাটিয়ে ফেলবো আমি…হাতে কামড় দিব । ছাড়পোকা ওর বিছানায় ছেড়ে দিয়ে আসবো । ধাক্কা দিয়ে ম্যানহলে ফেলে দিব ।
নিশি একটানে বলেই যাচ্ছে থামছে না । এটা নিশির অভ্যাস । তবে এমনটা শুধু অনুর সাথে করে নিশি । নিশি কখনো কাঁদলে অনু এসে নিশিকে জড়িয়ে ধরে আর নিশি বাচ্চাদের মতো উল্টো পাল্টা বলে বলে কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তোলে । অনুর তখন খারাপ লাগলেও ওর বড় বোনের এমন বাচ্চামো কথা বার্তা আর ঠোট ফুলিয়ে কান্না দেখে সেই খারাপ লাগার মধ্যেও হাসি পায় । তেমনি এখনও অনুর হাসি পেলো । কিন্তু অনু হাসলো না । হাসি চাপা দিয়ে অনু নিশির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-তা আপি এগুলো করার জন্য তো তোকে নিঝুম ভাইয়ার সামনে যেতে হবে । না গেলে কিভাবে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলবি?
নিশি কিছুক্ষণ চুপ করে কি যেন ভাবলো । তারপর মাথা তুলে অনুর দিকে তাকালো । অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
-তাই তো!!!
-হুম তো এখন কি করবি? যা যা বললি নিঝুম ভাইয়াকে তো তার কিছুই করে পারবি না ।
-আমি দেখা করবো নিঝুমের সাথে ।
নিশি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো ।
-সত্যি বলছিস আপি?
অনু অনেক খুশি হয়ে বললো । নিশি ছোট্ট করে উত্তর দিল,
-হুম ।
অনু এবার নিশির পেছনে গিয়ে একটু নিচু হয়ে নিশির গলা জড়িয়ে ধরলো । কিছুক্ষণ পর নিশির গলা ছেড়ে দিয়ে বললো,
-আপি ঘুমাতে চল ।
নিশিও আর কথা না বাড়িয়ে উঠে অনুর সাথে গেল ।
.
-আপি ঘুমা না । আর কত কথা বলবি ।
-যতক্ষণ আমার ঘুম না আসবে ।
অনু বসে আছে । আর নিশি অনুর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে । আধঘন্টা ধরে নিশি এভাবেই অনুর কোলে শুয়ে আছে । আর নানান কথা বলছে । হঠাৎ করে অনু নিশিকে প্রশ্ন করলো,
-আপি…
-হু
-তুই নিঝুম ভাইয়াকে ভালোবাসিস?
অনুর প্রশ্ন শুনে থ হয়ে গেলো নিশি । অনুর কোলে শুয়ে থেকেই অনুর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকালো । আর অনু অধীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো নিশির মুখপানে ওর করা প্রশ্নের উত্তর পাবার আশায় । নিশি অনেকক্ষণ ওভাবেই ফ্যালফ্যাল করে অনুর দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর হুট করেই লাজুক একটা হাসি দিয়ে অনুর কোল থেকে মাথা সরিয়ে বালিশে মাথা রেখে পাশ ফিরে শুয়ে পড়তে পড়তে বললো,
-আমার ঘুম পাচ্ছে অনু । আমি ঘুমালাম । তুইও ঘুমিয়ে পড় । জেগে থাকিস না ।
অনুও আর কিছু বললো না । কারণ ও নিশির মুখের লাজুক হাসিটা ঠিকই খেয়াল করেছে । নিশির মুখের হাসিটাই অনুর প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিয়েছে । অনু বিছানা থেকে নেমে রুমের লাইট বন্ধ করে দিল । তারপর পড়ার টেবিলে গিয়ে টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে পড়তে বসে গেল । পড়ার মাঝেই একবার তাকিয়ে দেখলো নিশি ঘুমিয়ে পড়েছে । প্রায় দু’ঘন্টার মতো পড়ার পরে অনু ফোন হাতে নিয়ে দেখলো দু’টা পঞ্চান্ন বাজে । প্রায় তিনটাই বাজে । কি মনে করে অনু ম্যাসেজ বক্সে ঢুকে সেই অচেনা ব্যাক্তির পাঠানো সবগুলো ম্যাসেজ পড়তে লাগলো । ম্যাসেজগুলো মনে মনে পড়তে পড়তে অনু ভাবে,
– “তিনটা বাজে প্রায় । আর আজ একটা ম্যাসেজও পাঠালো না যে!!! ”
হঠাৎ-ই অনুর মনে হলো,
-“অসুস্থ টসুস্থ নাকি । নিজে থেকে কি ম্যাসেজ দিব? দেয়াটা কি ঠিক হবে? ”
এক দোটানায় পড়ে গেলো অনু । দিবে কি দিবে না করতে করতে একটা ম্যাসেজ লিখেই ফেললো । সেন্ড বাটনে ক্লিক করতে গিয়েও ক্রস বাটনে ক্লিক করে ম্যাসেজ কেটে ডিসকাস্ট করে দিল । ফোন রেখে দিতে যাবে এমন সময় ফোনটা ভাইব্রেট করে উঠলো । তার সাথে সাথে অনুর বুকের ভিতরেও ধুক করে উঠলো । ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই অজানা কোনো কারণে ওর হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে দৌড়াতে শুরু করলো । তার সাথে অনুর চোখ দু’টো স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বড় হয়ে গেলো । কারণ ঐ অচেনা ব্যাক্তিটিই অনুকে কল দিয়েছে । অনুর যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না । যেই লোককে কল দিলেও ধরে না বা ধরেও কথা বলে না সে কিনা নিজে কল দিয়েছে । তাই বিশ্বাস করতে করতে কষ্ট হচ্ছে অনুর । অনু একবার দু’হাতে চোখে ডলে নিল । তারপর আবার তাকালো । দেখলো না ও ঠিকই দেখেছে । ততক্ষণ বেজে বেজে কেটে গেছে । অনুর যেন তখন জ্ঞান ফিরলো । অনু কল ব্যাক করবে তার আগেই ফোনটা আবার বেজে উঠলো । আবার ফোন আসতেই অনুর হাত কাঁপতে লাগলো । কেনো কাঁপছে সেটা অনুর অজানা । কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলো অনু । রিসিভ করে কাঁপা গলায় বললো,
-হ্যালো ।
ওপাশ থেকে আগের মতোই নিরবতা । কোনো শব্দ নেই । প্রায় দু’মিনিটের মতো দুপাশের দুই ব্যাক্তিই চুপ । অন্যান্য দিন অনু কল দিয়েই দু’চারটা ঝাড়ি দিয়ে বসে । কিন্তু আজ আর অনু সেটা পারছে না । আজ যেন অনুর গলায় সব কথা দলা পাকিয়ে আছে । তাই অনুর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না ।
-কি ব্যাপার আজ তুমি চুপ যে?
ওপাশ থেকে হঠাৎ কথা শুনতে পেল অনু । কন্ঠটা শুনেই অনু কেঁপে উঠে চোখ বন্ধ করে ফেললো অনু । অনুর ভেতরে যেনো ভুমিকম্প হয়ে যাচ্ছে । অনু নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করলো । এই কাজটা এই মুহুর্তে অনুর কাছে অনেক কঠিন মনে হচ্ছে । অনুর কেনো জানি মনে হচ্ছে এই কন্ঠটা ওর খুব চেনা । কোথাও না কোথাও শুনেছে । কিন্তু কোথায় শুনেছে সেটা মনে করতে পারছে না ।
ওপাশ থেকে আবার চুপ । অনেকক্ষণ পরে সে বললো,
-অনু আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই ।
.
.
প্রায় একঘন্টার মতো সময় ধরে অপেক্ষা করছে অনু । কিন্তু যার অপেক্ষায় বসে আছে তার আসার নামগন্ধ নেই । কেমন এক অস্থিরতা কাজ করছে অনুর ভেতরে । সাথে ভয়ও । আর মাথায় ঘুরছে হাজার রকমের চিন্তা ।
ঘড়ির দিকে তাকালো অনু । এই পর্যন্ত যে কতবার ঘড়ির দিকে তাকিয়েছে হিসেব নেই ।
– “এত অস্থির লাগছে কেনো!!! আজব!! ”
মনে মনে বললো অনু । নিজের উপর নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলো অনু । পাশে ঘড়ির দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই অনু যেন বরফ হয়ে গেলে । বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো অনু…..
.
.
.
চলবে?
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে