স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-24

0
1405

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_24

পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে তিয়াসা ড্রয়িং রুমে আসে…. সবার তোরজোর দেখে বুঝা যাচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে… কিন্তু সেটা যে এতো তাড়াতাড়ি হবে এটা ভাবতে পারেনি তিয়াসা…।

তিয়াসা ড্রয়িং রুমের এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে… চোখের কোনে পানি ভর্তি হয়ে গেছে… দুচোখের পাতা এক করলেই পানি গড়িয়ে পরে যাবে গাল বেয়ে… তিয়াসা নিজের কাধে কারো স্পর্শ অনুভব করলো.. চোখ মুখ নরমাল করে পিছনে ফিরে দাড়ালো… তিয়াসার আব্বু দাঁড়িয়ে আছে… তিনিও যে তার মেয়ের কষ্টে তার থেকেও বেশি কষ্ট পাচ্ছে…।তিয়াসা কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তিনি ও পাশে বসলেন…তিয়াসার মাথায় হাত রেখে…

তিয়াসার আব্বু: আমাকে ক্ষমা করে দিস মা… আমি হয়তো তোর এতোদিন ধরে বুনা স্বপ্নটা পূরন করতে পারলাম না… আমার সাধ্যমত তোর সব ইচ্ছে পূরন করার চেষ্টা করেছি… কখনো তোর চোখে পানি আসতে দেইনি… এটা আমার নিজের কাছে প্রমিজ ছিল.. আমার মা টার সব ইচ্ছে আশা আমি ফুলফিল করবো…কখনো গাল বেয়ে বৃষ্টি নামতে দিবোনা… না চাইতেই সব দিবো.. কিন্তু আমি সেটা করতে পারিনি… তোর সব থেকে বড় ইচ্ছে আশাটাই যে পূরন করতে পারলাম না… সেই তো তোর চোখে অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে… হয়তো আল্লাহ তোর জন্য অন্য কিছু অন্য কাউকে ঠিক করে রেখেছিল…।

তিয়াসা: এভাবে কেনো বলছো আব্বু… দোষটা তো আমার.. আমার জন্য তোমাদের এতোটা ফেস লস হলো…হিউমিলায়াশন হতে হলো… আমার ভুল সিধান্ত ভুল মানুষকে ভালোবাসার দায় কেনো তোমরা নিবে…তোমাদের তো মুখ ফুটে বলতেও হয়নি তার আগেই তাকে তোমরা আমার জীবনে এনে দিতে চেয়েছিলে…কিন্তু সে হয়তো আমার জীবনে নয় অন্য কারো জীবনের সাথে নিজেকে জড়াতে চাই…!

তিয়াসার আব্বু: আমরা যে ডিসিশন নিয়েছি তোর ভালোর জন্যই… আমাদের ভুল বুঝিস না.. ওই ছেলেটাকে দেখিয়ে দে… তোর ইম্পর্টেন্ট ঠিক কতোটা..ওর মতো একটা ছেলে রিফিউজ করলে একশো টা ছেলে ওফার করবে…,।




,
প্রায় ১১টা বাজতে চললো তবুও দূরন্তর ঘুম থেকে উঠার নাম নেই… এতো বার ফোন আসছে.. ফোনের রিংটোনে তন্নী দূরন্তর রুমে আসে..দূরন্ত ভীবরে ঘুমাচ্ছে দেখে মনে হচ্ছে অনেক ক্লান্ত… আবারো ফোন বাজতেই তন্নী ফোনটা হাতে তুলে নেই…. ফোনের স্কিনে নবনী নামটা ভেসে আসে… ফোন রিসিভ করে তন্নী ফোনটা কানের কাছে নিতেই ওপাস থেকে….

নবনী: এই কি করছো তুমি বলো তো..? এতোবার ফোন দিচ্ছি ধরছো না যে… তার থেকেও বড় কথা দশটায় তো তোমার আসার কথা ছিল… নিশ্চয় ভুলে গেছো… আফ আউর টাইম এর মধ্যে চলে আসে… প্লেসটা তো জানোই সেখানেই আসবে ব্যাসসস….।

এক নাগারে এক দমে কথা গুলো বললো নবনী… ওর কথায় কতোটা অধিকার বোধ জোর ছিল সেটা যে কেউই বুঝতে পারবে… তন্নীর খুব খারাপ লাগছে কি করে তার ভাই এতো বদলে যেতে পারে… এতো দিনে একটু একটু করে দূরন্তর থেকে সবাই দূরে সরে গেছে… আজ তো তন্নীর দূরন্তর প্রতি কিছুটা ঘৃনাও জমে গেছে… কি করে পারলো একটা মেয়েকে এভাবে ঠকাতে… শুধু মেয়েটাকে নয় পুরো পরিবারকে..।

তন্নী ফোনটা জায়গায় রেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো…

তন্নীর মা: কি রে তোর ভাইয়া এখনো উঠেনি…?

তন্নী: প্লিজ মা… আমার ভাইয়া বলোনা…এটা ভাবতেও আমার কষ্ট হয়… আমার ভাইয়া এমনটা করতে পারে.. একটা বারো ভাবলো না এই সেইম ঘটনাটা যদি আমার সাথে ঘটতো তাহলে…।

তন্নীর মা: আমারো কি ভাবতে ভালো লাগে…যে আমাদের গর্ব ছিল সেই যে আমাদের মান সম্মান এভাবে ধুলোয় মিশিয়ে দিবে কে জানতো…
আচ্ছা ও কি ঘুম থেকে উঠেছে…?

তন্নী: উঠবে কি করে… দেখো হয়তো রাত জেগে ফোনে কথা বলেছে.. তাই তো এতো বেলা অবদি ঘুমাচ্ছে….!

তন্নীর মা: তার জন্যই কি..? নাকি শরীর খারাপ চোখ মুখ ও যেনো কেমন লাগে এদানিং…।

মা মেয়ের কথার মাঝে.. হাসি হাসি মুখে মাকে জড়িয়ে ..
দূরন্ত: না মা একদম ঠিক আছি এবং ফিট…।

তন্নী: হ্যাঁ দেখেই বুঝা যাই.. না হলে সবাই কে এতো কষ্ট দেওয়ার এনার্জি পাও কোথায় থেকে… ও হ্যাঁ তোমার নিউ নবনী ফোন করেছিল… তোমার নাকি দশটায় মিট করার কথা ছিল… এখন তো প্রায় ১.৩০ বাজে..তাড়াতাড়ি যাও যাও…



একটা বেঞ্চে একপাশ দূরন্ত আর এক পাশে নবনী বসে আছে… নবনী অনেকটা রেগে গেছে দূরন্তর লেট করে আসাতে…

দূরন্ত: ওকে স্যরি আর এমন হবেনা..এবার একটু রিলাক্স হও…

নবনী: আমার রাগ করাটা কি খুব অন্যায়…? তুমি কবে একটু কেয়ার ফুল হবে বলো তো…?

দূরন্ত: একজন হলেই হয় কেয়ার ফুল… যেখানে ফুল ই নেই সেখানে কেয়ার করে কি হবে বলোতো…??

নবনী:চলো তো আর একটাও কথা না…

নবনী দূরন্তর হাত ধরে এগোতে যাবে.. কিন্তু ঠায় সেখানেই বসে আছে…।

দূরন্ত: প্লিজ নবনী শুধু শুধু পাগলামি করো না… তুমি ডক্টর হয়ে যদি পাগলের মতো বিহেভ করো তাহলে তো তোমাকে মেন্টাল হসপিটালে এডমিট করতে হবে…।

নবনী: চুপ করো তো… শুধু শুধু বকবক করা…।

,
.
,
রাইসা তিয়াসার রুমে শাড়ি নিয়ে যাই তিয়াসাকে সাজাতে… কিন্তু তিয়াসা নরমাল ড্রেস পড়ে বসে আছে… রাইসা কে দেখে

তিয়াসা: ভাবি আমি রেডি… প্লিজ আমাকে শাড়ি টাড়ি পরতে বলো না…

রাইসা: তাই বলে এভাবে…??

তিয়াসা: কেনো দেখতে কি খুব খারাপ লাগছে…??

রাইসা: আরে না… তুমি তো হূর পরী..।তোমাকে যে ভাবে দেখবে সেভাবেই ইফফফ….

তিয়াসা: আচ্ছা ভাবি তোমার সব গল্প পরে শুনবো…!


তিয়াসা করিডোরের গ্রিল ধরে বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে… সেই একই ভঙিতে পাশে আরেকটি মানুষও দাঁড়িয়ে আছে… তফাৎ শুধু তিয়াসার দৃষ্টি বাহিরের দিকে আর পাশের মানুষটির দৃষ্টি তিয়াসার দিকে…! আর সেই মানুষটি হচ্ছে ইফরাদ..

দুজনের নিরবতা ভেঙে
ইফরাদ: আমি জানি তুমি আমায় এতো সহজে মেনে নিতে পারবেনা… আমি এটাও জানি তোমার এ বিয়েতে কোনো ফিলিংস নেই… আর আমাকেও হয়তো মেনে নিতে পারবেনা… কিন্তু আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো…

তিয়াসা: এসব বলা কি খুব জরুরী…?

ইফরাদ: স্যরি… আমি তোমাকে হার্ট করার জন্য কিছু বলিনি…।
আচ্ছা বিয়ের ডেট তো ফিক্সড… কবে শপিং এ যাবে তাই বলো… আমার খুব ইচ্ছে আমার হবু বউ কে নিয়ে বিয়ের শপিং করবো…

তিয়াসা: আপনি তো সব জানেনই.. তাহলে কেনো…

ইফরাদ: ডোন্ড বি আপসেটি তিয়াসা..বি নরমাল..প্লিজজজ…!

তিয়াসা: এতোই কি সোজা..? এতো তাড়াতাড়ি সব ভুলে যাওয়া…?

ইফরাদ: হুমমম আমি সেটা জানি… ভালোবাসা এমন’ই একটা জিনিস যা চাইলেও ভুলা যায়না.. তাকে ভুলা যায়না…যদি সত্যি কারের ভালোবাসা হয়..তাহলে জীবনের শেষ মূহুর্ত পযর্ন্ত তাকে পাবার লড়াই নিজের মনের মাঝে থেকেই যাই…হয়তো কিছুটা আমিও উপলব্ধি করতে পেলেছিলাম… আমি ভাবিনি শেষ মূহুর্তে এসে তাকে আমার জীবনে পাবো… এখনো সব আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে…

তিয়াসা: কি বলছেন এসব আপনি..কিছুই বুঝতে পারছিনা…!

ইফরাদ: যদি সেই সময় আর সুযোগ পাই তাহলে সবটা তোমায় কোনো একদিন বলবো… বিশ্বাস করো আমি এখন থেকে বিয়ের এক মূহুর্ত আগ পযর্ন্ত চাইবো কোনো মিরাক্কেল হোক..যে মিরাক্কেলে তুমি আর দূরন্ত এক হবে…।

চলবে…..

[ রিচেক দেয়নি বানান ভুল হলে ক্ষমা করবেন প্লিজ ]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে