স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-21

0
1444

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_21

তিয়াসা: আরে থাম…এতোই যখন তাড়া তাহলে ডিরেক্ট বললেই পারিস বিয়ে করতে চাস…

তন্নী: জ্বী না ম্যাম…এখন যদি বিয়ের কথা বলি বাড়িতে… আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে পিটাবে…।

তিয়াসা: হ্যাঁ সেটা করাই উচিত… তোর ওই আদার ব্যাপারি ইফাদ এর তো এখনো পড়াই শেষ হয়নি…

তন্নী: এই তুই ওকে আবার আদা ব্যাপারি বলছিস..?

তিয়াসা: না মানে সব কথার অর্ধেক বুঝে তো তাই আদার ব্যাপারি নামটা ম্যাচ হয়ে গেছে….

তন্নী: তিয়াসাআআআআ….

তিয়াসা: ভাবি হয়..ভাবি.. সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবা…।

তন্নী: বয়েই গেছে…হুহহহ….!

.
.
,,
.
.
পরের দিন সকাল নয়টায়….

চোখ ঢলতে ঢলতে তিয়াসা ফোনের পাওয়ার বাটনে ক্লিক করলো… নয়টা বেজে পনেরো মিনিট….।

ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসলো… কয়েক বার ফোন এসেছিলো… হয়তো দূরন্তই ফোন করেছিল… এতো বেলা অবদি ঘুমিয়েছে তিয়াসা তার মাঝে একবারো জাগনা পাইনি… আবার ফোন বেজে উঠলো… স্কিনে দূরন্তর নাম্বার…. ফোন রিসিভ করে…

তিয়াসা: হুমমম বলেন…

দূরন্ত: হুমমম বলেন মানে কি…?? এখনো বিছানায়’ই আছো… আর কদিন বাদে পরিক্ষা সেদিকে কি নজর আছে…??

তিয়াসা: আপনি আমায় কেনো এতো গুলো কথা শুনাচ্ছেন…? সব দোষ তো আপনার আর ঘুমের…

দূরন্ত: কিহহহ…?

তিয়াসা: জ্বী হ্যাঁ.. এতো রাত অবদি কথা বলেছি… সকালে ঘুমিয়ে সেটা রিকভার করেছি…।

দূরন্ত: ওকে.. পড়াটাও রিকভার করে নাও…।

তিয়াসা: খাবো না..? নাকি না খেয়েই পড়তে বসবো..?

দৃরন্ত: চুপচাপ ফ্রেস হয়ে খেয়ে আসো.. টাইম ২০ মিনিট… পড়তে বসার আগে টেক্সট করবে..।

তিয়াসা:কিপ্টার বাপ.. মাত্র ২০ মিনিট সময় দিলো..ফকিন্নি কোথাকার… আমি কম করে হলেও এক ঘন্টা সময় দিতাম…!

দূরন্ত:অলরেডি এক মিনিট হয়ে গেছে…

সাথে সাথে তিয়াসা ফোন কেটে ওয়াস রুমে চলে গেলো… বাধ্য মেয়ের মতো খেয়ে ধেয়ে এসে দূরন্ত কে টেক্সট করে পড়তে বসলো… দূরন্তর রিপ্লাই ছিলো শুধু..” ওকে ”

.

.
দেখতে দেখতে তিয়াসার পরিক্ষার দিন ঘনিয়ে আসছে… আর মাত্র পাচদিন পর… দূরন্ত আগে থেকেই তিয়াসার জন্য কলম কিনে রেখেছে.. এবং সেগুলো তন্নীর মাধ্যমে তিয়াসাকে দিয়েছে… সে নিয়ে তিয়াসার কিছুটা অভিমান হয়েছে…কারন দূরন্ত ওর সাথে দেখা করেনি.. এভেন কিছুদিন যাবৎ দূরন্ত তেমন ফোন বা টেক্সট ও করছে না….তবুও তিয়াসা নিজের মনকে সান্ত্বনা দিয়ে রেখেছে…হয়তো পড়ায় মনোযোগ নষ্ট হবে তাই….কিন্তু তিয়াসার ভাবনা ভুল প্রমাণিত হলো..কারন পরিক্ষা শেষ হয়ে গেছে প্রায় এক সপ্তাহ হতে চললো…কিন্তু দূরন্ত ক্রমশ তিয়াসা কে আগের থেকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করছে… যেটা তিয়াসা স্পষ্ট বুঝতে পারছে…. দূরন্ত কে কিছু জিঙ্গেস করলে ক্লিয়ারলি কিছু বলছে না… অযথা রাগারাগি করে..এতোদিন দূরন্তর সাথে কথা বলছে..কখনো দূরন্ত তিয়াসার সাথে জোর গলায় কথা বলেনি…কিন্তু কোনো কারন ছাড়ায় হঠাৎ করে দূরন্তর এমন বিহেভ তিয়াসা মেনে নিতে পারছেনা… দূরন্ত কোনো মেন্টাল স্ট্রেজে আছে এটা ভেবে তিয়াসা দূরন্ত কে কোনো প্রকার চাপ দেইনি বরং স্পেস দিয়েছে… তিয়াসার ধারনা দূরন্ত নিজে থেকেই তিয়াসা কে বলবে…. কিন্তু সেটা কি আদৌ হবে…??

.
.
তিয়াসা দূরন্ত কে কয়েকবার ফোন দিল..কিন্তু রিসিভ না করে কেটে দিলো… এতে তিয়াসা বেশ কিছুটা রেগে গেলো..কারন দূরন্ত যদি এতোটাও ব্যস্ত থাকে তাহলে রিসিভ করে বললেই তো হয় যে এখন ব্যস্ত আছি পরে কল ব্যাক করছি…কিন্তু এসব কিছু না করে কনটিনাউসলি তিয়াসা কে ইগনোর করে চলছে…

৩০ মিনিট পর দূরন্ত তিয়াসা কে কল ব্যাক করে… দূরন্তর ফোন পেয়ে তিয়াসা খুশি হয়ে ফোন রিসিভ করে…ফোন রিসিভ করতেই ওপাস থেকে ঝালালো কন্ঠে…

দূরন্ত: কি সমস্যা হ্যাঁ সব সময় ফোন দিতেই থাকো..?

তিয়াসা: সমস্যা টা আমার না আপনার.. কেনো এমন করছেন..? কি হয়েছে আপনার…??

দূরন্ত: কককি হবববে আমারর.. কিছুই হয়নি… তুমি কি বুঝতে পারোনা যখন তখন তোমার ফোন যাস্ট ডিসটার্ব লাগে আমার কাছে…

তিয়াসা: হ্যাঁ বুঝতে পারছি… কিন্তু সেটা কেনো.. কি কারনে আপনি আমাকে ডিসটার্ব ফিল করছেন…??

দূরন্ত: হ্যাঁ ঠিক এই কারনেই তোমাকে অসহ্য লাগে…

তিয়াসা: মমানে….?

দূরন্ত: এটাও একটা মেজর কারন… সব সময় ঘ্যানঘ্যান করবে.. তারপর সেটা এক্সপ্লেইন করে বললেও আবার প্রশ্ন করবে মানে… এমন একটা ভাব ধরো যেনো কিছুই বুঝো না…!

দূরন্তর থেকে এমন কথা শুনে তিয়াসা একদম বাকরুদ্ধ… এই দূরন্ত কে তিয়াসার কাছে বড্ডো অচেনা লাগছে… তিয়াসার চোখে অশ্রুধারা নেমে গেছে… তিয়াসা হাতের উল্টোপিঠে বারবার পানি মুছে… কিন্তু চোখের পানি বাদ মানছেনা. সে তার আপন গতিতে বয়েই চলছে…



সত্যি বলতে কাছের মানুষদের কাছ থেকে নূন্যতম অবহেলাও সহ্য করার ক্ষমতা থাকেনা… সেখানে বিগত কয়েক দিন গড়িয়ে সপ্তাহ হতে চললো.. দূরন্তর এমন অবহেলা সহ্য করে চলেছে তিয়াসা… কি কারনে দূরন্ত এমন করছে সেটা তিয়াসার কাছে দুয়াশা… তিয়াসার কোনো ভুলের কারনে যদি দূরন্তর এমন বদলে যাওয়ার কারন হয়.. তাহলে সেটা তিয়াসা অতিদ্রুত সুধরে নিবে… কিন্তু তার ও উপাই নেই কারন তিয়াসা তো বুঝতেই পারছেনা তিয়াসার ভুলটা কি আর কোথায়…? আর দূরন্ত ও তিয়াসার ভুলটা দেখিয়ে দিচ্ছে না….!

.
.

.
.
ক্লাসে তিয়াসা গালে হাত দিয়ে বসে আছে..তিয়াসাকে দেখতে বিষন্ন লাগছে… চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে.. রাতে ঘুমাইনি বরং কেদেছে…

তন্নী: কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো…??

তিয়াসা: কেমন দেখাচ্ছে…?

তন্নী: কেমন যেনো.. তুই কি কোনো কারনে আপসেট…??

তিয়াসা: না… এমনিই…

তন্নী: কি হয়েছে আমায় বল…

তিয়াসা: ওফফফফ কি বলবো… কিছু হলে তো বলবো…

বিরক্ত হয়ে কথাটা বললো..তন্নী আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো.. বেশ কিছুক্ষন ধরে তিয়াসা কে নোটিশ করছে… তিয়াসার যে প্রচণ্ডভাবে মন খারাপ সেটা তন্নী উপলব্ধি করলো…

ভার্সিটি শেষে তিয়াসা আর তন্নী ধীর পায়ে হেটে গেটের বাহিরে আসছে… তখন চোখ গেলো সামনে থাকা একটা ক্যাফে… যেখানে দূরন্তর পাশে বসে আছে একটি মেয়ে… দূরন্তকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মনটা বেশ ফুরফুরে… যে দূরন্ত কখনো ফোসকা খায়না… সে ফোসকা খাচ্ছে.. তিয়াসা নিজের হাতে ফোসকা নিয়ে দূরন্তর মুখের সামনে গেছে কয়েকবার তবুও খায়নি… এটা তিয়াসাকে বেশি হার্ট করেছে….

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে