স্পর্শের_বাহিরে_তুমি Part-14

0
1637

#স্পর্শের_বাহিরে_তুমি
#আদরিতা_জান্নাত_জুঁই
#part_14

তিয়াসা কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারছে..এটা কোন আপদ হতে পারে…

তিয়াসা: এই আপনি কোথায় থেকে উদয় হলেন এখানে..?
বনে জনে জঙ্গলে যেখানেই যাই বাবা লোকনাথ এর মতো আপনাকে দেখতে পাই…।

দূরন্ত: আরেব্বাস এটাই তো মনের মিল.. তুমি এখানে আর আমিও…আর তুমি আমাকে না দেখেই আইডেন্টি করে ফেললে…একেই তো বলে…
দূরন্তকে কথাটা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে….

তিয়াসা: আরে থামেননন…আপনি এখানে কি করতে এসেছেন…??

দূরন্ত:প্রেম করতে…,।

তিয়াসা: মানে…?
ভ্রুু কুচকে জিঙ্গেস করলো…!

দূরন্ত এগিয়ে গিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই তন্নী গিয়ে সেতুর পাশের চেয়ারে বসলো…দূরন্ত চেয়ারে আরাম করে বসে…এক গ্লাস পানি খেয়ে টিস্যু দিয়ে মুখ মুঝতে মুজতে: তোমরা কিসের জন্য এসেছো…?

তিয়াসা:অবশ্যই প্রেম করতে নয়…।

দূরন্ত:সেইম আমিও…!

তিয়াসার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা গুলো বলছে দূরন্ত…

তন্নী: হোয়াট এ প্রেজেন্ট সাইপ্রাইজ স্যার…

দূরন্ত বা তিয়াসা কিছু বলার আগে…

সেতু: এই তুই সত্যিই কি সারপ্রাইজ হয়েছিস…?

তন্নী: কি বলতে চাচ্ছিস তুই…আমি স্যার কে ইনভাইট করে এখানে ডেকেছি…?

সেতু: আমার কেমন যেনো ডাউট হচ্ছে…

তন্নী আর সেতু কথা গুলো ফিসফিসিয়ে বলছে… তিয়াসার ঠিক পাশের চেয়ারটাতে দূরন্ত বসেছে… বারবার তিয়াসা আর দূরন্তর চোখে চোখ পরছে… তিয়াসা কিছুটা আন ইজি ফিল করছে এই ভাবে দূরন্তর তাকিয়ে থাকাতে… এবার তো দূরন্ত আরেক দাপ এগিয়ে গালে হাত দিয়ে বিভোর দূষ্টিতে তাকিয়ে আছে….পাশে তাকিয়ে খেয়াল করলো সেতু আর তন্নী কোনো বিষয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে…

তিয়াসা: এই হ্যাবলা কান্তর মতো তাকিয়ে আছেন কেনো…??

তিয়াসার কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে…
দূরন্ত: তাতে তোমার কি হুমম…??

তিয়াসা: মাথার সব তার কি ছিড়ে গিয়েছে…আমার দিকে তাকিয়ে আছেন..আবার আমাকেই বলছেন তাতে তোমার কি…ওরা কি ভাবছে বলুন তো…??

দূরন্ত: আমি কি করে বলবো ওরা কি ভাবছে…

তন্নী সেতুর দিকেই তাকিয়ে বললো: না না আমরা কিছু ভাবছি না…তোমরা কথা বলো…।

তন্নী এমন ভাবে অন্য পাশ ফিরে কথাটা বললো…যাতে তিয়াসা আর দূরন্তর দিকে তাকালে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে…।

অবশেষে সবার অপেক্ষার অবসান… সবার সামনে এখন সবার পছন্দের খাবার….

সেতু: স্যার শুরু করেন…।

দূরন্ত: ওকে…তোমরাও খাও…।

অলরেডি সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে…তিয়াসা গালে হাত দিয়ে বসেই আছে…

দূরন্ত: খাইয়ে দিতে হবে….???

দূরন্তর কথা শুনে তিয়াসা বড় বড় করে দূরন্তর দিকে তাকালো…

দূরন্ত: মনে হয় চোখ দিয়েই গিলে খাবে আমাকে… সেটা না হয় পরে করো…আগে খেয়ে নাও..!

তিয়াসা:হুমম খাচ্ছি…আচ্ছা আপনার ও কি বিরিয়ানী আর আইসক্রীম ফেবারিট খাবার….।

দূরন্ত: হ্যাঁ…তোমার কোনো সমস্যা…??

তিয়াসা: জ্বী না..




তিয়াসা আইসক্রীম খাচ্ছে আর দূরন্ত ড্যাবড্যাবে তাকিয়ে আছে…তিয়াসা একবার নিজের দিকে তো আরেকবার আইসক্রীম এর তাকাচ্ছে…।

তিয়াসা: আমার আইসক্রিম এর দিকে নজর কেনো দিচ্ছেন…? আপনার আইসক্রিম টাতো গলে যাচ্ছে…..ওইটা খান হুহহ….

দূরন্ত কোনো কথা না বলেই আইসক্রীম খেতে লাগলো…তাও আবার তিয়াসার দিকে তাকিয়েই…।
তিয়াসার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই এখন..সে ব্যস্ত আইসক্রিম খেতে…।

কিছুক্ষন পর তিয়াসা সামনের দিকে তাকিয়ে ফিকক করে হেসে দেই…

কোনো কারন ছাড়া তিয়াসার হাসিতে অবাক হয়ে সেতু আর তন্নী তাকিয়ে থাকে…।আর তিয়াসা সে তো হেসেই যাচ্ছে…।

তন্নী: এই পাগল হলি নাকি…? হাসছিস কেনো..??

তিয়াসা: আমি পাগল হয়নি…আমার সামনে একটা পাগল বসে আছে…তাই হাসছি… তুই যদি হাসতে চাস তো সামনের দিকে তাকা…।

তিয়াসার কথায় তন্নী ও সেতু দুজনেই সামনের দিকে তাকায় এবং দুজনেই হেসে দেই…তবে সেটা মুখ টিপে…।

এতোক্ষনে সবার এক্সপ্রেশন দূরন্তর চোখে পরলো…

দূরন্ত: কি হয়েছে..হাসছো কেনো সবাই আমার দিকে তাকিয়ে…?

সেতু: আসলে স্যার…আপনি এখনো আইসক্রীম খেতে পারেন না.. বাচ্চাদের মতো করে মুখের আশেপাশে লাগিয়ে ফেলেছেন..!

দূরন্ত: কিহহহ…?

তন্নী: হ্যাঁ ভাআআ….. স্যার প্লাস ভাইয়া…ঠোটের নিচে আপনার আইসক্রীম লেগে গেছে…।

তিয়াসা: এই তোর কোন জন্মের ভাই লাগেরে হ্যাঁ…কই আমি তো ভাইয়া বলে ডাকি না…

তন্নী: তোর কোন দুঃখে ভাইয়া হতে যাবে…ভাইয়া তো হয় আমাদের…

দূরন্ত টিস্যু নিয়ে লেগে থাকা আইসক্রীম মুছার চেষ্টা করছে…কিন্তু এদিক ওদিক মুছতেছে..আসল জায়গার ধারে কাছেও যাচ্ছেনা…।

তিয়াসা: হচ্ছে না তো… বা পাশে…

দূরন্ত একবার উপরে মুছতেছে তো আরেকবার নিচে…

তিয়াসা: এই তন্নী তোর ভাইয়াকে একটু হেল্প কর না…

তন্নী:আমার বয়েই গেছে…তুই হেল্প কর মন চাইলে আরো কিছু কর…

তিয়াসা: খুব তো ভাইয়া ভাইয়া করিস..কাজের সময় লবডঙ্কা..

তন্নী:তুই এতো কাজ পারিস তুই কর…আমাকে ডিস্টার্ব করিস না…।

তিয়াসা তন্নী কে একটা ভেংচি কেটে আবার খাওয়া শুরু করলো…তখনো দূরন্ত ট্রাই করেই যাচ্ছে মুছার জন্য… তিয়াসা দূরন্ত কে ইন্সট্রাকশন দিতে দিতে ক্লান্ত…
অবশেষে তিয়াসা উঠে গিয়ে দূরন্তর ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা আইসক্রীম মুছে দিলো…দূরন্তর এতো কাছে গিয়ে তিয়াসার হার্ট বিট বেড়ে গেছে…তন্নী এই মূহুর্ত টা ফোনের ক্যামেরাই বন্দি করে নিল…ফোনের ফ্ল্যাশ লাইট এ তিয়াসা নিজের চেয়ারে এসে বসলো…আর বসেই তন্নীকে চিমটি কাটলো…

তিয়াসা: দেখ তোরা কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস…

তন্নী: হ্যাঁ তাতো দেখলামই…।



যদিও পেমেন্ট করার কথা ছিল তন্নীর..কিন্তু সব পেমেন্ট দূরন্ত করে দিয়েছে…।।

তিয়াসা গাড়িতে বসে আরেক দফা অবাক…কারন গাড়ির সিটের মধ্যে র‍্যাপিং পেপারে মোরানো একটা বক্স এর মতো লাগছে…

তিয়াসা র‍্যাপিং পেপার খুলে আরো চমকে গেলো… কারন এক বক্স চকোলেট এবং বক্সের উপর লিখা..
” ভালোবাসি প্রিয় ”

তিয়াসার ঠোটের কোনো হাসি ফুটে উঠেছে.. কারন ও সিউর এটা দূরন্তর কাজ…।

ভাবতে ভাবতেই দূরন্তকে ফোন দিলো… দূরন্তর মোবাইলের স্কিনে তিয়াসার নাম্বার টা দেখে প্রশান্তির হাসি দিলো… ফোন রিসিভ করে..

দূরন্ত: দশ মিনিট ও হয়নি এখনো.. তার আগেই আমাকে মিসিং ফিল করছো..

তিয়াসা: উটকো চিন্তা ভাবনা বাদ দেন…. এগুলো কেনো দিয়েছেন…?

দৃরন্ত: কোন গুলো…??

তিয়াসা: ঢং করবেন না একদম… সত্যি করে বলেন…!

দূরন্ত:ঢং সেটা তো মেয়েদের জিনিস মেয়েরা করে… কিসের কথা বলছো তুমি..।

তিয়াসা: কিসের কথা আবার এই যে চকোলেট… এগুলো কেনো গাড়ি তে রেখে দিয়েছেন..? আপনি কি ভেবেছিলেন আমি বুজতে পারবো না…

দূরন্ত মনে মনে: চকোলেট…? আমি তো দেইনি..তাহলে..? আর পাগলিটা ভাবছে হয়তো আমি রেখে আসছি…।

দূরন্তকে চুপ দেখে…
তিয়াসা: কি হলো..? নিশ্চয় ভাবছেন আমি কেমনে বুঝলাম…।

দূরন্ত: সত্যি বলছি আমি তোমার গাড়িতে চকোলেট রাখিনি…

তিয়াসা: দেখুন মিথ্যা কথা বলবেন না… সত্যি টা কনভেস করতে শিখুন…

দূরন্ত: আরে সত্যিই বলছি আমি রাখিনি… আমি যদি রাখতাম তাহলে অবশ্যই কনভেস করতাম… বিশ্বাস করো আমি রাখিনি…।

তিয়াসা: হুমম আমি আপনাকে বিশ্বাস করি… কিন্তু এই বক্সটাই বা কে দিলো..আরর….

দূরন্ত: আর কি তিয়াসা বলো… থামলে কেনো…আর শুনো ওই বক্স থেকে একটা চকোলেট ও তুমি খাবেনা কিন্তু… বিকেলেই তোমার জন্য চকোলেট পাঠাবো…তবুও….

দূরন্তর কথা শুনে তিয়াসা হেসে ফেললো… কারন দূরন্তর কথা গুলো ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য…কিন্তু দূরন্ত সেটা তিয়াসার উপর প্রয়োগ করছে..।

তিয়াসা: আচ্ছা খাবো না… আর আমি বাচ্চা না বুঝলেন.. যে এই চকোলেট খাবো না বলে বিকেলেই আমার জন্য চকোলেট পাঠাতে হবে…!

দূরন্ত: আচ্ছা ঠিক আছে… কি যেনো একটা বলছিলে তখন…পুরো কথাটা শেষ করো..!

তিয়াসা: না মানে.. বক্স এর উপরে ভালোবাসি প্রিয়া লিখা ছিল। তাই ভেবেছিলাম হয়তো আপনি…।

তিয়াসার কথা শেষ হওয়ার আগেই দূরন্ত ফ্রিজড হয়ে গেছে…কারন দূরন্তর না বলা কথাটা তিয়াসা বুঝে গেছে …

দূরন্ত: তুমি যেটা ভেবেছিলে..ধরো সেটা আমিইই করেছি..তাহলে এখন তার ফিডব্যাক চাই….।

তিয়াসা: মমমমানে…..??

আসলে তিয়াসা নিজের বলা কথায় নিজেই ফেসে গেছে… আর দূরন্ত তো সেই দূরন্তবাঝ… কোন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে পেচিয়ে সেই কথার ফাদে ফেলে দিলো তিয়াসা কে…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে