[সত্য ঘটনা অবলম্বনে] গল্পঃ শেষ ঠিকানা ( ২য় খন্ড )

0
2315

[সত্য ঘটনা অবলম্বনে]
গল্পঃ শেষ ঠিকানা ( ২য় খন্ড )

written by Nahid
………………………….
আমার কথা শুনে ওখানেই জ্ঞান হারায় মানছুর। তারপর শুরু হলো নতুন ঝামেলা, ধীরে ধীরে আমাদের চারপাশ ঘীরে অনেক ছাত্র ছাত্রী জামায়েত হওয়া শুরু হলো। আর মানছুরের বন্ধুরা আমাকে চেনেনা এরকম কথা বলা শুরু করলো। অথচ তারা সবাই আমাকে চেনে কারন তাদের সাথে আমার ফেসবুকে কথা হত। মানছুর আমি আর মানছুরের সব বন্ধু আমরা সবাই একটা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যুক্ত ছিলাম। যাই হোক এবার তার বন্ধুরা আমাকে রোহিঙ্গা বলা শুরু করে দিলো। আমি নাকি তাদের বন্ধুকে কোন স্প্রে বা ইনজেকশন দ্বারা অজ্ঞান করে দিয়েছি। এসব কথা শেষে একটু পানি নিয়ে এসে মানছুরের চোখে ছিটানি দিলে চোখ নড়ছিলো কিন্তু চোখ খোলেনি। বুঝে গেলাম সে ভান করছে। আমি বললাম তাকে হাসপাতালে নিতে কিন্তু তার বন্ধুরা আমাকে ভয় দেখাতে লাগে, আমাকে পুলিশে দেবে তো এইই সেই অনেক কথা। পরে একজন শিক্ষক এসে বললেন হতেও পারে তাদের বিয়ে হয়েছে। একজন মানছুর কে নিয়ে হাসপাতালে যাও। তারপর মানছুরের দুই বন্ধু হৃদয় আর মাসুদ ভাই ও আমি মানছুর কে নিয়ে কুমিল্লা চরমা হাসপাতালে যেতে পথমধ্যে হৃদয় আমাকে রিক্সা থেকে ঢাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলে রিক্সা থামিয়ে তাকে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিয়ে আমি ও মাসুদ ভাই মানছুর কে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। তারপর মাসুদ ভাই চলে এলো। আর জ্ঞান ফিরলে শুরু হয় নতুন কাহিনি..আমাকে হাত ধরে টেনে হাসপাতালের ছাদে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো..
মানছুরঃ হয় তুই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে মরবি নয়তো আমি মরব। কুমিল্লা বাসি জানুক তোর অত্যাচারে আমি আত্মহত্যা করেছি।
আমিঃ তুমি যদি চাও তবে তাই হবে। মরতে হলে দুজন একসাথেই মরব।
মানছুরঃ কিল্লাই আররর জীবনটা নষ্ট করলি কিল্লাই (কুমিল্লার ভাষায়)।
আমিঃ আমিতো তোমার জীবনটা নষ্ট করিনি মানছুর তুমি আমাকে ভালবেসেছো বলেই আমি তোমাকে ভালবেসেছি।
মানছুরঃ বাদ দে এসব তুই ছাদ থেকে লাফ দিবি চল।

হাসপাতাল টা ছিলো সাত তলা। ওপরে যেতেই একটা নার্স বাধা দিলো ছাদে যাওয়া নিষেধ। এই দিকে আমি আর হাটতে পারছিলামনা তবুও সেই সাত তলা থেকে দৌড়ে দোড়ে আমাকে নিচে নামালো। তারপর পুরো কুমিল্লা শহর সাঁড়ে পাঁচ ঘন্টা আমাকে হাটালো যেনো সে পালাতে পারে কিন্তু আমি তাঁর টি-শার্ট টা হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরে ছিলাম যার জন্য সে পালাতে পারছিলোনা। অবশেষে সে আমাকে নিয়ে যায় কুমিল্লা রেল স্টেশনে যেনো সে ট্রেনে করে কোথাও পালাতে পারে। স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা ২০-২৫ বার আমাকে নিয়ে হাঁটতে থাকে যেনো ট্রেন আসলেই পালাতে পারে। তারপর তার পায়ের জুতা দিয়ে আমার পায়ে সজোড়ে চাপ দিতে থাকে…
আমিঃ মানছুর আমার খুব ব্যাথা লাগছে এমন করছো কেনো??
ঃ তাহলে আমাকে ছাড় আমি চলে যায় তাহলে আর কষ্ট দেবোনা।
আমিঃ না আমি তোমাকে ছাড়বনা। মানছুর আমার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে একটু পানি খায়াওনা।
ঃ আমাকে ছেড়ে দে তুই যা খাইতে চাইবি সব খায়াবো শুধু আমাকে ছাড়।
আমিঃ না আমি তোমাকে ছাড়বনা। প্লিজ আমাকে একটু পানি খাওয়াও প্লিজ।
ঃ ওই যে ওই দোকানে গিয়ে কিনে আন।
আমিঃ আমি তোমাকে রেখে যাবোনা তাহলে তুমি চলে যাবে।
ঃ তাহলে পানি না খেয়ই থাক। আর যদি পানি খাইতে চাইছোস তাহলে জানবো তুই আমাকে ভালো বাসিস না।
আমিঃ না আমি তোমাকে ভালবাসি মানছুর।
ঃ তাহলে এখন থেকে কাল সকাল পর্যন্ত এক ফোটা পানি ও খাইতে পারবিনা এটাই তোর ভালবাসার প্রমাণ।
তারপর পানি না খেয়ে থাকতে থাকতে এমন অবস্থা হলো কারো কাছে পানি দেখলেই আমার এমন হতে লাগলো যমনটা, তেঁতুল দেখলে মানুষের হয়। কিন্তু সে আমাকে এক ফোটা পানিও খাইতে দেয় নাই। সপ নিজে পানি খেয়ে আমার সামনে বোতলের বাকি পানিটুকু ফেলে দিচ্ছিলো কিন্তু আমাকে দেয়নি।
আমিঃ মানছুর আমি আর পারছিনা প্লিজ আমাকে একটু খানি পানি খেতে দাও প্লিজ।
ঃ তুই শুধু আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চা তুই যা খাইতে চাইবি তাই তোকে কিনে খাওয়াবো।
আমিঃ আমি তোমাকে বিশ্বাস করে এসেছি আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবনা, তুমি না চাইলেও আমি তোমার সাথেই থাকবো। আমার সাথে এরকম টা করোনা প্লিজ। আজকে আমার মা বাবা আমার সাথে না দেখে এমন করছো মানছুর। যদি তোমার বোনের সাথে কেউ এমন করতো তোমার কেমন হত?? তুমি না হয় আমাকে রেখে সুন্দর দেখে আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করো, আমাকে আলাদা বাসায় রেখো তবুও তোমাকে ছাড়তে বলোনা প্লিজ!!???।
ঃ তোর আর আমার চেহেরা কি যায়?? তুই ই বল তোর কি চেহারা আর আমার কি চেহারা!!
আমিঃ তুমি তো আমাকে দেখেই এনেছো তাহলে এমন করছো কেনো মানছুর ??।
ঃ তুই এখান থেকে চলে যা।
আমিঃ না আমি তোমাকে ছেড়ে যাবনা। আমাকে একটু পানি খাওয়াও প্লিজ।
আমাকে তো পানি দিলোই না রেলের পাতে দুজন বসে ছিলাম আর আমি হাত দিয়ে টি শার্ট টি ধরে ছিলাম। হঠাৎ ওর কি হলো রেল লাইনে যে পাথর গুলো থাকে সেখান থেকে একটা পাথর নিয়ে সেই হাতে এত্ত জোড়ে আঘাত করে যে, আমি বুঝতে পারলাম আমার কাঠ নখ ছুটে গেছে। পরে অন্য হাত দিয়ে আবার ধরি আর হাতের আঙ্গুল থেকে রক্ত ঝড়তে থাকে।
আমিঃ মানছুর আমার হাতটা অনেক জ্বালা করছে একটু পানি দিবা হাতের রক্ত গুলো মুছবার জন্য।
ঃ না কোন পানি তোকে দেওয়া যাবেনা।
শেষ পর্যন্ত পানির পিপাসায় এমন হয়েছিলাম তার টি শার্টের কলার টা ধরে বললাম আমাকে পানি খাওয়াবা নাকি চিৎকার করে লোক জমা করে সব বলব??
তখন সে আমাকে পানি খাওয়ায়। তারপর আমাকে নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ব রোড যায় সেখানে তার মা বাবা দাড়ায় ছিলো। মানছুরের মা বলে….
ঃ এ মাইয়া তুমি আমার পোলার গেঞ্জী ধরে আছো কিল্লাই, ছাড়ো ওরে ও তো কিচ্ছু খাইনাই ওর ক্ষুধা লাগছে।
আমিঃ আমিও কিছু খাইনি ও ও কিছু খাইনি। ও খাইলে তবেই আমিও খাবে।
ঃ হুনো মোর কথা মুই কিতা কই।
আমিঃ না আমি ওকে ছাড়বোনা ও পালিয়ে যাবে।
মানছুরের বাবা বলে… আমি ওর বাবা এখানে থাকতেও তোমার বিশ্বাস হয়না??
পাশ থেকে মানছুরের এক বন্ধু বলে… কিরে মাইয়া তুই এহনো বুঝোসনি ও তোকে ভালবাসেনা ও তোকে ইউজ করছে!!
আমিঃ ও কি করছে সেটা জানিনা আমি ওকে ভালবাসি।
তারপর ওর মা বাবা আমার দুলাভাইকে ফোন দিয়ে অনেক আজে বাজে কথা বলে। আমি তাদের ছেলেকে জোড় করে বিয়ে করেছি, তাকে ব্ল্যাকমেইল করছি আরো অনেক কথা।
আমার দুলাভাইকে সব জানিয়ে রেখেছিলাম আগে থেকেই তাই দুলাভাই আমাকে বলে… যত কিছুই হোক আমি যেনো ছেলেটাকে না ছাড়ি। তখন আমার সাহস আরো দ্বীগুন হয়ে যায়। পরে তার এক ফুফাতো ভাইয়ের সি এনজি করে রওনা দেই আমরা। ভোর রাতে তার ফুফুর বাসাই পৌছে গেলাম। কিন্তু সকাল হতেই শুরু হয় আজব ঘটনা……
to be continue………
$tupid

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে