শুধু তুই Part-16

0
1851

#শুধু তুই#
#Part_16(Extra)
Writer_ Raidah Islam Nova

আরোশ ভ্রু কুঁচকে আইভির দিকে তাকিয়ে আছে। আইভি এক মনে কি যেনো খুব মনোযোগ দিয়ে ভাবছে।আইভির মুখের সামনে তুড়ি বজালো।

আরোশঃ আইয়ু বেবস্ কী ভাবছো?দাঁড়াও তোমাকে একটা জিনিস দেখাচ্ছি।
আমিঃ কচুপোড়া, একটা জিনিস দেখাতে আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন।তা কোন পাগলা গারদ থেকে ছুটে এসেছেন আপনি?
আরোশঃ হোয়াট আমি পাগলা গারদ থেকে আসবো কেন?আমি জার্মান থেকে আজ ফিরেছি।

আরোশকে দেখে আমার একটু ও ভয় করছে না।আমি বুঝে গেছি যদি কিছু করার হতো এতক্ষণে করে ফেলতো।তাই আমি পায়ের ওপর পা তুলে আরাম করে বসলাম।বিরক্তির সাথে হাই তুলে জিজ্ঞেস করলাম।
আমিঃ তা জার্মানে কি পাগলা গারদ নেই?
আরোশঃ আছে।
আমিঃ সেখান থেকে যে আপনি পালিয়ে এসেছেন সেটা কি ঐ পাগলা গারদের কতৃপক্ষ জানে?
আরোশঃ হোয়াট?
আমঃনা জানলে আমি জানিয়ে দিতাম আর কি??

আরোশঃ তুমি আমাকে কি ভাবে?( রেগে)
আমিঃ মেন্টালি রোগী।
আরোশঃ তুমি জানো আমি কোথা থেকে এসেছি?
আমিঃ পাগলা গারদ থেকে।
আরোশঃ তুমি জানো আমি কে??
আমিঃ পাগল।
আরোশঃ তুমি নিজেকে কী ভাবো??
আমিঃ গুড গার্ল।
আরোশঃ আমাকে তোমার কী পাগল মনে হয়?(রেগে)
আমিঃ এই কথায় কোনো সন্দেহ নেই।

এক মনে ডোন্ট ওয়ারি ভাব নিয়ে কথাগুলো বললাম।আমি মিটমিট করে হাসছি আর আরোশ রাগে লুচির মতো ফুলছে। বেশ রাগানো হয়েছে। আরোশ চোখ মুখ শক্ত করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।

আরোশঃ বাই দ্যা ওয়ে।আমি তোমাকে কিছু ছবি ও ভিডিও দেখাতে চাই। তোমার সাথে খুচরা আলাপ করার সময় নেই।

কথাগুলো বলে আরোশ ফোন থাকা কিছু ছবি দেখালো।যাতে ফারিশ একটা মেয়েকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কোনটায় একটা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে।অনেকগুলো মেয়ের সাথে ছবি।
আরোশঃ ফারিশ একটা চরিত্র হীন ছেলে।ওর অনেক মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলো।তোমাকে আমি আরো অনেক প্রমাণ দেখাতে পারি।

ওর কথা শুনে ও ছবি দেখে আইভি এমন ভাব করলো যে ওর মনটা বিষিয়ে গেছে।সব ইচ্ছা,আকাংক্ষা,স্বপ্ন সব ভেংগে চুরমার হয়ে গেছে। কিন্তু মনে মনে মিটিমিটি হাসছে।

আমিঃ আমাকে তুমি বোকা পেয়েছে। এই ছবিগুলো যে ইডিট করা তা আমি ১ম দেখেই বুঝতে পেরেছি। কিন্তু তা তো তোকে বুঝতে দেওয়া যাবে না।আমি এমন ভাব করবো যে আমি তোর সব কথা বিশ্বাস করেছি।আমাকে চেনো না চান্দু।বিদেশে এমনটা অহরহ ঘটে।আর ফারিশ এমনটা কখনও করতে পারে না।আমার বিশ্বাস আছে ওর ওপর।আর যদি ফারিশ এমনটাও করে তাতে তোর কি?তোর বাপের টাকায় করে নাকি?( মনে মনে)

ফারিশের নামে নানা মিথ্যা কথা বানিয়ে বানিয়ে বললো আরোশ।তাতে আইভির মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ প্রবেশ করলো না।আরোশকে ওর ফাঁপরবাজ ছারা অন্য কিছুই মনে হচ্ছে না।কেন জানি ওর বিশ্বাস হচ্ছ ফারিশ এমন কাজ জীবনেও করি নি।আর আরোশ মিথ্যাবাদী।আরো নানা আজগুবি কথা বললো আরোশ।ওর এসব ফাউল কথাবার্তা খুব বিরক্তির সহিত শুনলো আইভী।কিন্তু তার কিছুই আরোশকে বুঝতে দিলো না।এমন ভাব করলো যে ও সব কিছু সরল মনে বিশ্বাস করে নিয়েছে।গাড়ি তেও আরেকদফা বকবক করে আইভী কান পচিয়ে ফেলেছে আরোশ। আইভি চুপচাপ সব শুনে যাচ্ছে।

আরোশঃ আমি সাকসেস হয়ে গেছি।আইভি আমার সব কথা বিশ্বাস করেছে।এখন হাজার চেষ্টা করলেও ফারিশ তার প্রীয়সীকে নিজের করতে পারবে।আর আমি ততদিনে আইভীকে পটিয়ে বিদেশ পারি দিবো।
( মনে মনে বলে শয়তানি হাসি দিলো )

ফ্লাশবেক এন্ড……….

এশা দুই গালে হাত দিয়ে মনোযোগ সহকারে আইভির কথা শুনছিলো।ফোনের রিংটোনের আওয়াজে দুজনের হুশ ফিরে এলো।
আমিঃ এশু তোর ফোন এসেছে।
এশাঃ আমার না তোর এসেছে।
আমিঃ এই অবেলায় আমায় কে ফোন করবে?
এশাঃ ধরে তো দেখ।

আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম আননোন নাম্বার। ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করতেই ওপর পাশের ব্যাক্তিটা ধমকে উঠলো।
ফারিশঃজলদী নিচে নেমে এসো।আমি তোমাকে দুই মিনিট সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে না আসলো আমি চলে আসবো।
আমিঃ কে আপনি? আমি নিচে কেন আসবো?
ফারিশঃ আমাকে চিনতে কষ্ট হচ্ছে টুনটুনি পাখি। নিচে আসো আমি তোমাদের বারান্দায়র নিচে দাঁড়িয়ে আছি।অলরেডী ৩০ সেকেন্ড চলে গেছে।

আমি ভয়ে ভয়ে বারান্দায় গিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ফারিশকে দেখতে পেলাম। ফারিশ চোখ মুখ লাল করে নিচে দাঁড়িয়ে আছে।ফর্সা মুখটা টকটকে লাল হয়ে আছে।ওকে এভাবে দেখে আমার ভয়ে হাত-পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে।
ফারিশঃ বারান্দায় দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে নেমে আসবে নাকি আমি আসবো।তোমার হাতে আর ৪০ সেকেন্ড সময় বাকি আছে।
আমিঃ চাচ্চু- চাচি বকবে এই সময়ে নিচে গেলে।
ফারিশঃ আমি কিছু জানি না।তুমি কিভাবে আসবে, কি করবে তোমার ব্যাপার।
আমিঃ আসছি।( ভয়ে ভয়ে)

চাচ্চু রুমে টিভি দেখছে। চাচী ওয়াসরুমে গেছে এই সুযোগে আমি আস্তে করে সদর দরজা খুলে সিরি বেয়ে নিচে নামছি আর দুরুদ শরীফ পরছি। আজকে আমার গাল আবার হবে লাল।

???

ঠাসসসসসস — নিচে নামতে না নামতেই আমার গালে একটা পরলো।গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে মেরেও ফারিশের রাগ কমেনি।পেছন দিকে ঘুরে ফোঁস ফোঁস করছে।আমার দিকে ঘুরে এগিয়ে এলো।আমার বাহু দুটো জোরে ঝাঁকি দিয়ে বললো।

ফারিশঃ তোমার ধারণা আছে আমি তোমাকে কোথায় কোথায় খুঁজেছি।আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম।এক মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।আমার পুরো পৃথিবী ঘুরছিলো।আমি কোথায় যাবো, কি করবো,কোথায় খুঁজবে এসব ভেবে নিজের চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিলো।সত্যি এশা যদি সেই মুহূর্তে ফোন করে তোমার কথা না বলতো তাহলে আমি কিছু একটা করে বসতাম।তাতে তোমার কি? আমি মরে গেলেই তোমার কি? তুমিতো আমার অনুভুতি গুলো বোঝার চেষ্টা ও করো না।

আমার বাহু ছেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখ দুটো টলমল করছে। এখনি চোখের থেকে বৃষ্টি পরবে।চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে আছে।টুপ করে চোখের পানি পরতে বাকি।বারান্দা থেকে এশু চিৎকার করে উঠলো।

এশাঃ ভাইয়া,একটায় কাজ হবে না।কানের নিচে কষিয়ে দুটো মারেন।আমি আপনার জায়গায় থাকলো গাল দুটো থাপ্পড়িয়ে লাল করে ফেলতাম।দেন আরো দুটো।না না, চারটা।জীবনে যেনো আর এরকম কাজ না করে।হারামী,তোকে খুঁজতে খুঁজতে আমাদের জান যায় যায় অবস্থা।
আমিঃ ??
এশাঃ আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই।যা সত্যি তা বলেছি।ফারিশ ভাইয়ার জায়গায় আমি থাকলে তোর গাল আমি মেরে খাল বানিয়ে ফেলতাম।
জনঃ আমি আসবো নাকি এশু মনি।তোমার গালকে খাল বানাতে।আমি কিন্তু এখানেই আছি।

জন গেইটের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এশার কথা শুনে উত্তর না দিয়ে পারলো না।

এশাঃ এই বাঁদর আবার কোথা থেকে এলো?
জনঃ আমি এখানেই ছিলাম।
এশাঃ ফারিশ ভাইয়া,আপনি আরো দুটো চড় মারুন না।আমারটা আপনি দিয়ে দিন প্লিজ। আসলে…….

বাকি কথাগুলো বলার আগে এশা ফারিশের দিকে তাকালো।ফারিশ ওর দিকে খাইয়া ফেলামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।ওকে সামনে পেলে এখন চিবিয়ে খাবে।এশা বড়সড় একটা ঢোক গিলে সেখান থেকে সটকে গেলো।বেশিখন থাকলে বাকি চড়গুলো না ওর গালেই পরে।এশা চলে যেতেই জন ও সেখান থেকে সরে এলো।ফারিশ ও আইভীকে একা ছারা দরকার।ফারিশ আজ যেমন পাগলামি করেছে আইভী কে না পেয়ে।ওদেরটা ওরা বুঝুক।জন এসেছিলো এশাকে এক পলক দেখতে। ওর দেখা হয়ে গেছে।

আমি ভয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।ফারিশ কিছু বলছে না।পেছন ঘুরে হাত মুঠো করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আমি আবারও ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পাচ্ছি। কিন্তু ফারিশ আমাকে অবাক করে দিয়ে সামনে এসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আমি অবাক হয়ে সামনে তাকিয়ে আছি।ও এমনটা করবে তা আমি ভাবিনি।এতটা শক্ত করে ধরেছে যে, ছারলেই আমি ওকে ছেরে চলে যাবো।কিছু সময় পর আমার কাঁধে ঠান্ডা কিছুর অনুভব করলাম।আমি বুঝতে পারলাম ফারিশ আমার কাঁধে মুখ গুঁজে কাঁদছে। আমি আস্তে করে কাঁপা কাঁপা গলায় ডাকলাম।

আমিঃ ফা-রি-শ,ফা- রি- শ।
ফারিশঃ হু( কাঁদতে কাঁদতে)
আমিঃ আমি সরি।আমি ভাবি নি আপনি এতোটা পাগল হয়ে যাবেন আমাকে না পেয়ে।
ফারিশঃ আমার মনে হচ্ছিল আমার পৃথিবী থমকে গেছে।তুমি চির জীবনের মতো হারিয়ে গেছো আমার জীবন থেকে। আমি সত্যি তোমায় ছারা বাঁচবো না।আমি বেঁচে আছি শুধু তোমার কারণে।আমার
#শুধু তুই #।যেদিন তোমার সাথে ১ম দেখা হয়েছিলো সেদিন আমি নিজেকে শেষ করে দিতে এসেছিলাম।আত্মহত্যা করতে চাইছিলাম।কিন্তু তোমায় দেখে আমি বেঁচে থাকার আলো খুজে পেয়েছি।তোমায় দেখে মনে হয়েছে না আমি বাঁচবো। আমার #শুধু তুই # টার জন্য হলেও আমার বাঁচতে হবে।অনেক ভালবাসি তোমায়।জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। আর পেতে চাই না।প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না।তাহলে সহ্য করতে পারবো না।যদি আমসয় সত্যি সেদিন নিজেকে শেষ করে দিবো।

আমি নির্বাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমার বলার কোনো ভাষা নেই। ফারিশ আমাকে ছেড়ে পেছনে ঘুরে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।একটা মানুষ আমাকে এতোটা ভালোবাসে।যে কি না আমার জন্য মরণের হাত থেকে ফিরে এসেছে।আমি পেছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরলাম।ফারিশ খুব অবাক ও খুশি হলো।আমি মনে মনে বললাম—–

আমি ও যে আপনাকে খুব ভালোবাসি।কিন্তু এই জন্য বলি না যদি আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলি।তাহলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমাদের ভালবাসার শেষ পরিনতি কি হবে সেটা একমাত্র আল্লাহ জানে।আমি যে আল্লাহের কাছে রোজ আপনাকে চাই। আল্লাহ কি আমাদের কবুল করবে?বাবা কি আমাদের মেনে নিবে? আমি কিছু ভাবতে পারছি না।চোখ ভিজে আসছে আমার।

ফারিশকে ছেরে দিলাম।নিজের কাছে লজ্জা করছে।আমি ওকে জরিয়ে ধরে ছিলাম।এক দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেলাম।ফারিশ মুচকি হাসতে হসতে গেইট দিয়ে বের হয়ে গেলো।

পরের দিন……

আইভী, আরোশের ব্যাপারটা ফারিশের কাছে বলবে বলবে করে ভুলে গেলো।বিকেলে আইভী বসে বসে মোবাইল টিপছে। এমন সময় একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলো।ফোনটা পেয়ে আইভী তারাহুরো করে কোনো রকম করে বোরকাটা পরে হিজাব বাঁধতে বাঁধতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল।এশা হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে
রইলো।
এশাঃ কাউকে কিছু না বলে কোথায় গেলো আইয়ু?
এতো তারাহুরো করলো কেন? কি হয়েছে? আমি তো কিছুই বুঝলাম না। সব আমার মাথার ওপর দিয়ে গেল।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে