শিরোনামহীন পর্বঃ৬

0
1316

শিরোনামহীন
সৌরভে_সুবাসিনী(moon)
পর্বঃ৬

“ভেবেছিলাম রাত-দুপুরে পেত্নীর দেখা মিলবে কিন্তু এ তো আকাশ থেকে তারা খসে পড়েছে।”

কাছাকাছি কারো বলিষ্ঠ, স্পষ্ট, হিমশীতল কন্ঠস্বর কানে আসতেই কেমন একটা ঠান্ডা অনুভূতি হলো আনতারার।পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে তার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছেন ভাই?কবে এলেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ্! বেশ ভালো। এলাম তো গত পরশু। তবে তুই এই অবস্থায় এখানে কেনো?”

মুচকি হেসে আনতারা জবাব দিলো,

“কোন অবস্থায় ভাই?আমি তো বেশ আছি। ”

“তুই মা হতে চলেছিস। এভাবে রাত-দুপুরে এখানে আসা উচিৎ না।”

“কেনো? আপনিও কি জ্বীন-ভূতে বিশ্বাসী হয়ে গেছেন?”

“জ্বীন-ভূত ছাড়া আরো অনেক কিছু আছে তারা। হঠাৎ পা ফসকে গেলো? তখন? বাচ্চাটার ক্ষতি হবে। এবার বল তো, গ্রামের মেয়েরা কি অবাক হওয়া ছেড়ে দিয়েছে?”

“কেনো বলুন তো!”

“তোর প্রেগ্ন্যাসির খবর জানি, এটা নিয়ে তুই অবাক হলি না যে? তোর তো চমকে যাওয়া উচিৎ ছিলোরে…… ”

“গত পরশু এসেছেন, আপনি ভাই ডাক্তার মানুষ। উপজেলায় হয়তো গিয়েছিলেন, ডাক্তার আপা বলেছেন হয়তো। তাই জেনেছেন।”

“গ্রেট, এজন্যই বলতাম তোর হায়ার স্টাডির জন্য গ্রাম থেকে বের হওয়া উচিৎ ছিলো।শুধু সাবেতের বিদেশ যাওয়াটা তোর সফলতার দ্বার খোলার আগেই বন্ধ করে দিলো।যাই হোক,সবটা শুনেছি। তুই সাবেতের সাথে কথা বলেছিস?
দ্যাখ, হাতের কিন্তু দু পিঠ। এক পিঠের খবর জানলে পুরো হাতের খবর পাওয়া যায় না। হাত ভালো আছে কি না এজন্য তোকে দুই পিঠের খবর নিতে হবে। ”

প্রতিউত্তরে আনতারা কিছুই বলেনা। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বকুল গাছে ঝুলানো সদ্য মালার দিকে।
মাহিরও আর কোন কথা বললো না।মেয়েটার প্রতি মায়া কাজ করছে না তার।তবে এসময় তো তার আনতারার জন্য কষ্ট বা দুঃখ হওয়া উচিৎ। একজন মানুষ হিসেবে,এলাকার বড় ভাই হিসেবে। অথচ হচ্ছে না।জাগতিক কোন কষ্ট ইদানীং মাহির কে স্পর্শ করতে পারে না। আচ্ছা? মায়া নামক অনুভূতি কি ধীরেধীরে বিলুপ্ত পাচ্ছে তার মন-মস্তিষ্ক থেকে?

নিজের রুমে বসে সিগারেট ধরিয়ে আপনমনে টেনে যাচ্ছে সাব্বির।
জাগতিক কাজকর্মের প্রতি বড্ড অনীহা জন্মেছে আজ-কাল।নিজেকে নিম্ন শ্রেণীর প্রানী মনে হচ্ছে। মায়ের কসমের জন্য আজ সে খুব বাজে একটা কাজ করতে বাধ্য হয়েছে।আনতারার ফোন থেকে আউটগোয়িং কল সিস্টেম অফ করে দিয়েছে, সাথে সাবেতের নাম্বার ব্লক।সাবেত পারবে না আনতারা কে কল দিতে, তবে আনতারা চাইলে কল দিতে পারতো কিন্তু আউট গোয়িং সিস্টেম অফ করে দেওয়ায় আনতারাও পারবে না কল দিতে।
হাতের সিগারেটের ফিল্টার প্রায় পুড়ে শেষ। সিগারেটের ফিল্টার ফেলে পুনরায় আবার একটা জ্বালিয়ে নিলো সাব্বির।

এক মনে তাকিয়ে আছে ল্যাপটপের দিকে। প্রানীবিজ্ঞানের ছাত্র সাব্বির।মাস্টার্স শেষ করে বাড়িতে এসেছে, পাশের কলেজে পার্ট টাইম
লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে, বিসিএস করার ইচ্ছে আছে। তার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ল্যাপটপের সার্চবারে আজ একটি অদ্ভুত বিষয় নিয়ে সার্চ করলো সাব্বির। মরুভূমির জাহাজ উট জীবন্ত সাপ গলাধঃকরণ করে। হোক না সে বিষাক্ত। এটা কি সত্যি?

সার্চ করতেই অনেক লেখাই সামনে এলো, তবে চোখ আটকে গেলো কোর-আন শরীফে এ বিষয়ক তথ্য দেওয়া আছে এমন একটি পোস্টে।
কৌতুহল বশত সেখানে ক্লিক করে পড়তে লাগলো সে।

উট সাপ খায় কেন?

এ বিষয়ে কোর-আন ও বিজ্ঞানের আলোকে অত্যন্ত চমৎকার কিছু তথ্য —

পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন জায়গায় প্রাণী জগতের বর্ণনা এসেছে। পবিত্র কোর-আনে সুরা ইউসুফে উট নিয়ে আলোচনা আছে।

উট এমন এক প্রাণী যেটির বৈশিষ্ট্য অন্যান্য প্রাণী থেকে একটু ভিন্ন ও উদ্ভুত। পবিত্র কোর-আন শরীফে উটের একটি রোগের আলোচনা আছে, যে রোগ হলে উট একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উট শুধু সুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞগন উটের এ রোগের ব্যপারে গবেষণা করে কোন উৎস বা কারন ব্যাখ্যা করতে পারেননি।

এবং রোগের নাম হলো হায়াম।

অনেকে আবার এ বিষয়ে না জেনেই উটের উপর নানা ধরনের জুলুম করা শুরু করে দেয়। কিন্তু আল্লাহ্ তা’আলা উটের “হায়াম” নামক এ রোগের শেফা রেখেছে পবিত্র কোর-আনে। এর মহাঔষধ হচ্ছে একটি জীবিত সাপ খাইয়ে দেওয়া।

অনেক সময় উট নিজে নিজেও তা খেয়ে থাকে। উটটি যখন সাপটিকে গিলে ফেলে এ অবস্থায় প্রচন্ড তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এবং ৮ ঘন্টা এ অবস্থায় থাকে। তখন উটের চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি প্রবাহিত হতে থাকে।

উটের চোখ থেকে যে পানি বের হতে থাকে সেই পানি খুবই মূল্যবান পানি। কেননা এ পানি অন্য পানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

এ চোখের পানিকে তিরয়াক বলা হয়।

” তিরয়াক” এমন এক মহাঔষধ যা কিনা যে কোন প্রাণীর বিষকে নষ্ট করার জন্য উপযোগী। মূল্যবান “তিরয়াক” অনেক কষ্টে তৈরী করা সম্ভব এবং ব্যয়বহুল ও বটে।

“তিরয়াক” হচ্ছে উটের সেই চোখের পানি। যা বিষক্রিয়া নষ্ট করার চিকিৎসায় কার্যকরী। এ চোখের পানিকে ছোট চামড়ার থলেতে সংরক্ষন করে রাখা যায়।

[উটের পিপাসার এ রোগটিকে কোর-আন মাজিদে জাহান্নামীদের শাস্তির সাথে তুলনা করে বয়ান করা হয়েছে যার অর্থ কিছুটা এমন (অতঃপর তার উপর গরম পানি টগবগ করতে থাকবে আর পানকারী পিপাষায় উটের মত সে পানি পান করবে)

তোমরা অবশ্যই ভক্ষণ করবে যাক্কুম বৃক্ষ থেকে,
[সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৫২ ]

অতঃপর তা দ্বারা উদর পূর্ণ করবে,
[সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৫৩ ]

অতঃপর তার উপর পান করবে উত্তপ্ত পানি।
[সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৫৪ ]

পান করবে পিপাসিত উটের ন্যায়।
[সুরা ওয়াক্বিয়া ৫৬:৫৫ ]

উট সাপের বিষে পানি পান করতে থাকে আর জাহান্নামীরা টগবগ করে সিদ্ধ হতে থাকা পানি পান করতে থাকবে।

এ জন্যই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এক শ্বাসে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন।

তিনি এরশাদ করেন “উটের মত এক শ্বাসে পানি পান করিও না, বরং তিন শ্বাসে তা তোমরা পান করো।”

পড়া শেষে মুচকি হাসে সাব্বির। অবাক বা চমকিত হয়নি সে। কারণ কোর-আন শরীফ এমন একটি জ্ঞানের ভান্ডার যেখানে সকল মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের শেফার তরকিব দেওয়া রয়েছে।

রাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই দুচোখে ঘুম নেমে এলো আনতারার।
সারাদিনের দুর্বলতা জেকে বসেছে দুচোখের আঁখি পল্লবে।
গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে আনতারা।হঠাৎ দরজায় দুমদাম শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো তার। কেউ দরজায় অনবরত কড়া নেড়েই চলেছে। শাড়ির আঁচল ঠিক করে ঘুম ঘুম চোখে আনতারা এগিয়ে যায় দরজার দিকে।
দরজা খুলে আধোঘুম-আধো জাগরণে দেখলো,
সাবেত দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। চোখে মুখে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে সাবেতের।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে