মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দে শুক্রবারে ঘুম ভাঙ্গল।

0
804

মোবাইলে মেসেজ আসার শব্দে শুক্রবারে ঘুম ভাঙ্গল। ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম ছোটছেলের স্কুল থেকে মেসেজ ” পেরেন্টস্ ডে” । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, সাথে সাথেই স্ত্রীকে ঘুম থেকে তুললাম।

– দেখেছ, পেরেন্টস্ ডে কালকে। ওরা বলে যে কোন পরীক্ষা নেয় না, নিশ্চয়ই পরীক্ষা নিয়েছে, সেটা নিয়েই কথা শুনাবে।

– আগে থেকেই কেন অনুমান করছ, অন্য কিছুও তো হতে পারে।

– কি হবে, প্যারেন্টস্ ডেতে কি হয় সেটা তো জানিই। বলবে আপনার বাচ্চা এরকম, সেরকম, ওর যত্ন নিয়েন ইত্যাদি ইত্যাদি।

– এত রিয়্যাক্ট করছ কেন? কালকে গেলেই তো বোঝা যাবে।

পরেরদিন চলে আসলাম স্কুলে। হেডমাষ্টার সাহেব সব গার্জিয়েনের সাথে আলাদা আলাদা কথা বলছেন। হেডমাষ্টারের রুম থেকে বেশিরভাগ গার্জিয়েনের কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে বের হতে দেখে একটু ভড়কে গেলাম। অবশেষে আমাদের ডাক আসল।

– কেমন আছেন আপনারা?

-জ্বি, ভাল। একটু টেনশনে আছি। বাচ্চাটা কেমন করছে?

– বাচ্চার চিন্তা আমাদের, আপনাদেরকে বাচ্চার রিপোর্ট নিয়ে কিছু বলার জন্য ডাকিনি।

– তাহলে?

– আজকে পেরেন্টস্ রিপোর্ট কার্ড পাবেন আপনারা।

– পেরেন্টস্ রিপোর্ট কার্ড? সেটা আবার কি?

– আমরা আপনার বাচ্চাকে প্রতিদিনই জিগ্গেস করি বাসায় বাবা মার সাথে কি করেছে, যেভাবে আপনারা স্কুলে কি করেছ জানতে চান সেভাবে। আপনার বাচ্চার গত তিনমাসের বাসার রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করেছি আমরা। এখন সেটা নিয়েই কথা বলব আপনাদের সাথে। কি, তৈরী তো?

এসির মধ্যে বসে থেকেও একটু একটু ঘামছি এখন, গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে। কাঁপা কাঁপা গলায় কোনমতে বললাম, জ্বি, বলেন।

– বাচ্চারা অবজার্ভেশন থেকে শেখে। গত তিনমাসে আপনি এমন কি করেছেন যেটা বাচ্চা অবজার্ভ করে শিখেছে?

– অনেক কিছুই তো করেছি, কিন্ত বাচ্চা কি শিখেছে সেটাতো বলতে পারব না।

– বাচ্চা শিখেছে বাহির থেকে এসে হাত-মুখ ধুতে হয়। বাচ্চাকে এটা শেখানোর জন্য আপনাদেরকে অভিনন্দন।

– ধন্যবাদ।

– বাচ্চা আরো শিখেছে, হাত-মুখ ধুয়ে ছেলেদের টিভি দেখতে হয় এবং মোবাইলে ব্যাস্ত থাকতে হয় আর মেয়েদের রান্নাঘরে ঢুকে রান্না করতে হয় আর মাঝে মাঝে মোবাইল দেখতে হয়।

– কি বলছেন?

– এটা আপনার বাচ্চার কাছ থেকেই পাওয়া তথ্য। দেখেন বাচ্চারা ন্যাচারাল লার্নার। ওরা আশপাশের বিভিন্ন জিনিস দেখে শিখে, কাজ করে শেখে, কল্পনা করে শেখে, আবিস্কার করে শেখে, অনুসন্ধান করে শেখে, ইনফরমেশন কালেকশন করে শেখে আর নলেজ শেয়ারিং করে শেখে। আর এই সবকিছুই তারা তাদের পেরেন্টস্ দের গাইডেন্সে করতে পছন্দ করে। আপনারা যদি বাচ্চাদের সাথে কথা না বলেন, তাদের সাথে গল্প না করেন, নতুন কিছু করতে উৎসাহ না দেন তাহলে ওদের মধ্যে সৃজনশীলতা কিভাবে আসবে?

– দেখুন, আগামি দিনে কি হবে আমরা কেউ জানিনা। তবে একটা জিনিস আমরা জানি, আগামি পৃথিবীতে ক্রিয়েটিভিটি এবং লিটারেসি সমান গুরুত্বপূর্ন হবে। স্কুল আপনার বাচ্চাকে লিটারেসি অর্জন করতে সাহায্য করবে কিন্ত ক্রিয়েটিভিটি অর্জন করতে হলে তাকে সেরকম একটা পরিবেশ দিতে হবে, স্কুলে এবং বাড়িতেও। আশা করি আপনাদের সহযোগিতা আমরা পাব। কি, পাব না?

হেডমাষ্টার সাহেবকে কথা দিয়ে আসলাম। জীবনে কোন একাডেমিক পরীক্ষায় ফেল করেছি বলে মনে পড়ে না অথচ অদৃশ্য প্যারেন্টস্ রিপোর্ট কার্ডটা কত সহজে আমাকে ফেল্টু বানিয়ে দিল আজকের জন্য!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে