মিসটেক প্রথম পর্ব

0
2227

গল্প- “মিসটেক”
প্রথম পর্ব
লেখা- মিশু মনি

মেজো আপা বাড়িতে আসার এক সপ্তাহের মাথায় দুলাভাই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দিলেন। প্রথমত কথাটা শুনে আমার গা ঝনঝন করে উঠেছিলো। ঠিক কি করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। পুরোপুরি দিশেহারা হয়ে গেলাম। আপু ডিভোর্সের কারণ স্বরূপ কিছুই জানালো না আমাদেরকে। বাবা মা চেয়েছিলেন আইনের সহায়তা নিতে, আপুর নিষেধের কারণে তা আর করা হয়ে উঠলো না। কাছের আত্মীয় স্বজন মিটিং বসাতে লাগলেন, আলোচনা সমালোচনা দুটোই চললো কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু হলো না। আপু সবার সামনে কেঁদে কেঁদে বললো, ‘আমি চাই বিয়েটা ভেঙে যাক। আপনারা আর কাঁদা মাখামাখি করবেন না। আমাদেরকে আমাদের মতো থাকতে দিন।’

এরপর আর এ নিয়ে কোনো কথা শোনা গেলো না। তবে পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে ঠিকই কানাঘুষা চলতে লাগলো। আপু সবকিছুকে সহ্য করেও নিজের ঘরে খুঁটির মতো পড়ে থাকতো। মাঝেমাঝে বাড়ি গেলে মনে হতো ওর মাঝে শুধু প্রাণটুকু কোনোমত টিকে আছে কিন্তু এটাকে বেঁচে থাকা বলে না।

আপার ডিভোর্সের দুই মাসের মধ্যেই নাজিয়ার সাথে আমার তুমুল ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। নাজিয়া আমার স্ত্রী, আমাদের প্রেমের বিয়ে। দেড় বছরের প্রেম ও এক বছরের একটা নান্দনিক সংসার ছিলো আমাদের। ও হুট করে রাগারাগি করে বাবার বাড়ি চলে যায় আর সবাইকে জানায়, সে আর আমার সাথে থাকতে চায় না। তার অভিযোগ, আমার শারীরিক অক্ষমতা আছে যার দরুণ সে আমার সাথে থেকে সন্তুষ্ট নয়। স্বভাবতই কোনো বাবা মা চাইবে না শারীরিক ভাবে অক্ষম কারো সাথে ছেলে বা মেয়েকে বিয়ে দিতে। আমি ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেলাম। কাউকে তো মুখে বলে কয়ে নিজের যৌনশক্তির প্রমাণ দেয়া সম্ভব না যেখানে নিজের এক বছরের বিবাহিত স্ত্রী এমন অভিযোগ জানায়। আমি শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকার পরও কিছুই করতে পারলাম না। নিরবে এই দায় মাথায় চেপে নাজিয়াকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম। কারণ স্ত্রী এরকম অভিযোগ জানালে তার সাথে জোর করে থাকতেও নিজের আত্মসম্মানে লাগে। সে হয়তো সত্যিই আমার সাথে থাকতে সন্তুষ্ট নয়। কিন্তু তখনও বুঝতে পারিনি, ভেতরে আসলে অনেক বড় একটা ঘাপলা ছিলো।

আমি নাজিয়াকে নিয়ে আলাদা থাকতাম। ডিভোর্সের পর বাড়িতে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দিলাম। একলা বাড়িতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাইতো। বাবা মা মাঝেমাঝে ফোন করে কান্নাকাটি করতেন। আত্মীয় স্বজন তাদেরকে নাকি নানান কথা শোনায়। একইসাথে দুই ভাইবোনের ডিভোর্স হয়ে যাওয়া, তাদের সংসারটাও এখন হুমকির মুখে। আমি সব শুনে নিশ্চুপ হয়ে থাকি। কি করার আছে আমার?

রীতিমতো ডিপ্রেশনে চলে গেলাম আমি। প্রতিটা রাত কাটতো ভয়াবহ নির্ঘুম, সিগারেটের পর সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে। এত অসহ্য লাগে। ইচ্ছে করে সবকিছু ভেঙেচুরে ফেলি। এতগুলো বছর কার জন্য এত ভালোবাসা পুষে রাখলাম? কাকে এত ভালো রাখলাম? নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর খুঁজে পাই না। যেখানে মেজো আপার মতো ভালো একটা মেয়ের সংসারটা কেন ভেঙে গেলো সেটাও আমার অজানা।

দুটো জামাকাপড় নিয়ে কক্সবাজার বেড়াতে গেলাম। অন্তত দু একদিন হাওয়া বদল করে যদি ভেতরে একটু শান্তি পাই। সেখানে গিয়ে সরাসরি যে দৃশ্য দেখলাম তা দেখে আমার রীতিমতো দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নাজিয়া আর মেজো দুলাভাই হাত ধরাধরি করে সৈকতের দিকে যাচ্ছে। নাজিয়ার মুখ ঢাকা, মাথায় হিজাব। তারপরও ওর হাঁটাচলা আর অঙ্গভঙ্গি দেখে আমার বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হলো না। বড়সড় ধাক্কা খেয়ে গেলাম আমি। নিজের চোখকেও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো। এ আমি কি দেখলাম! ভুল দেখিনি তো!

সৈকতে গিয়ে নাজিয়া পানিতে ঝাঁপাঝাপি করতে করতে একবার মুখ থেকে কাপড় সরে গেলো। তখন স্পষ্ট দেখতে পেয়ে আমার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। আর পারছিলাম না। দ্রুত হোটেলে ফিরে আসি। এক বসায় ছয়টা সিগারেট শেষ করে ভাবতে থাকি আমাদের অগোচরে কখন এসব ঘটলো? কিছুই বুঝতে পারিনি আমি। আপুর ব্যাপারে জানিনা তবে আমি ক্ষুণাক্ষরেও কখনো নাজিয়াকে সন্দেহ করতে পারি নি।

হিসাব মেলাতে বসলাম। গল্পের শুরুটা সম্ভবত আমাদের সাজেক ট্যুরে।

বৃহঃস্পতিবার রাত। আমি বাসায় ফিরে দেখি নাজিয়া ব্যাগ গুছিয়ে সাজুগুজু করে বসে আছে। মুখে কি মিষ্টি হাসি। নাজিয়া ঘুরতে খুব ভালোবাসে। আমি আবার ওসবের সময় একদমই পাই না। প্রাইভেট কোম্পানির চাকরি করি তো। নাজিয়া কয়েকদিন ধরেই আমার কাছে ঘ্যানঘ্যান করছিলো ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। আমার সময় হচ্ছিলো না। অবশেষে আজকের রাতে যাবো বলে কথা দিলাম। মেজো আপা শায়লা ও সুমন দুলাভাই বেশ ঘোরাঘুরি করেন। তাদের সাথে আমরাও যাচ্ছি। বাসে উঠে নাজিয়ার সে কি আনন্দ! আমি আনন্দিত হচ্ছিলাম ওর উচ্ছল মুখখানা দেখে। ভালোবাসার মানুষটার আনন্দ দেখার মাঝেও সুখ আছে।

সাজেকে গিয়ে আপু বেশ দামী শাড়ি ও গয়নাগাটি পরে ঘুরতে বের হলো। চেহারায় একটা সুখী সুখী ভাব। দুলাভাইয়ের বড় ব্যবসা আছে। বিদেশে ছিলেন পনেরো বছর। ওনার বাপ দাদারাও প্রবাসী। বাসায় বিশাল বাড়ি ও প্রচুর টাকা পয়সা, অর্থ সম্পত্তির গোডাউন বলতে গেলে। দুলাভাই দেশে ফিরে ব্যবসা শুরু করেছেন। বছর তিনেক যেতে না যেতে ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। তবে টাকা ওয়ালাদের সাথে গিয়ে আমি ফ্যাঁসাদে পড়ে গেলাম। রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে দুলাভাই আগেভাগে বিল দিয়ে বলেন, ‘আরে তুমি আমার শালা হও, দুলাভাই বেঁচে থাকতে তুমি ক্যান বিল দিবা? হা হা হা।’

আমিও ভাবলাম, সে দুলাভাই। বড় ভাইয়ের মতোই। দিচ্ছে যখন দিক না। নাজিয়া কিছু খেতে চাইলে আমার আগেই দুলাভাই টাকা বের করে চারজনের জন্যই অর্ডার দিতেন। এমনকি ছোটখাটো জিনিস কেনাকাটা করার সময়ও দুলাভাই তার দিলের উদারতা দেখাতেন।
রাত্রিবেলা কটেজে শুয়ে আছি, নাজিয়া আমাকে বললো, ‘দুলাভাইয়ের মনটা অনেক বড় তাই না? কিভাবে দুহাতে টাকা খরচ করে দেখেছো?’
‘হুম। আপুও কিন্তু এসবে বাঁধা টাধা দেয় না। আমার আপুও অনেক ভালো। তুমি হলে তো ঝগড়া বাঁধাই দিতা।’

নাজিয়া রেগে গেলো, ‘তারমানে তুমি বলতে চাইছো আমি তোমাকে টাকা খরচ করতে দেই না? রাগারাগি করি?’
‘করো ই তো। ধুর বাদ দাও না। আমি মজা করে বললাম। আমার কি খরচ করার মতো অত টাকা আছে নাকি?’
‘যাই বলো। খরচ করতে অত টাকা লাগে না। একটা মন থাকা লাগে।’

কথাটাকে আমি তেমন গুরুত্বের সাথে নিলাম না। গুরুত্ব দিলে আজকে নাজিয়ার সাথে একদফা ঝগড়া তো হবেই। কারণ এরকম বললে তো আমাকেই ছোট করা হয়। অথচ বেতন যা পাই সব নাজিয়ার হাতে এনে তুলে দেই। সে মনের সুখে টাকা খরচ করার পরও যদি আমাকে শোনায়, ‘টাকা খরচ করতে মন থাকা লাগে।’ আরে বাবা আমি টাকা পাবোই বা কোথায়, সব টাকা তো তাকেই রাখতে দেই। এমনকি অফিসের যাতায়াত ভাড়াটাও আমি নাজিয়ার কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে যাই।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমি আরেকটা সিগারেট ধরালাম। জায়গা বদল করে বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে এসে বসলাম। ভুল আমারও ছিলো। স্ত্রীর হাতে সবকিছু ছেড়ে দিতে নেই। একটা নিশ্বাস ছাড়লাম। সাজেকে আমাদের একটা রাতের ই ট্যুর ছিলো। এরমধ্যে অনেকদিন আপা আর দুলাভাইয়ের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই। হুট করে একদিন মা কল দিয়ে জানালো বাসায় চাচাতো বোনের বিয়ে। বড় আপা তার বাচ্চাকাচ্চা সহ এক সপ্তাহ আগে আসবেন। মেজো আপা, দুই বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন, ফুফুরা সবাই আসবেন। মোটকথা বাড়িতে একটা হৈ হুল্লোড় হবে। সব আত্মীয় স্বজন একত্রিত হওয়ার সুযোগ খুব একটা হয় না। এই সুযোগ মিস করে যেন আফসোস না করি। নাজিয়াকে বলতেই ও মুখ কালো করে বললো, ‘আমার তো গয়নাগাটি নেই তেমন একটা, আর ভালো শাড়িও নেই।’

আমি শাড়ির ব্যাপারটা মেনে নিলাম। আসলেই নাজিয়াকে আমি একটা ভালো শাড়ি কিনে পারি নি। বললাম, ‘গয়না তো বিয়ের গুলোই আছে। ওগুলো পরিও। আর শাড়ি নাহয় দুটো কিনে দিলাম।’
নাজিয়া তবুও মুখ কালো করে বললো, ‘ওগুলো গয়না হলো নাকি? অত ভারী গয়না আমি সবসময় পরবো? ধরো একদিন পরলাম, বিয়ের অনুষ্ঠানে। বাকি দিনগুলোর জন্য তো আমার একটা চেইন, দুটো চিকন চুড়ি দরকার ই। তাই না?’

আমি মাথা ঝাঁকালাম। এসবের ব্যাপারে আমার অত জানা নেই। বললাম, ‘একটা চেইন নিয়ে দেয়ার আমারও অনেক ইচ্ছে। কিন্তু হাতে তো টাকা নেই গো। এ মাসের ঘর ভাড়া এখনো বাকি।’

নাজিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘আচ্ছা সমস্যা নেই। আমি একটা ইমিটেশনের চেইন কিনে নেবো। আর কে দেখবে বলো আমাকে। থাক ওসব নিয়ে মন খারাপ কোরো না।’

আমি নাজিয়াকে দুটো নতুন শাড়ি কিনে দিলাম। একটা জামদানী, একটা কাতান। দুটোই ও নিজে পছন্দ করে কিনেছে। গাউসিয়া থেকে ঘুরে ঘুরে একগাদা শাড়ির ভেতর থেকে পছন্দ করেছে। শাড়ি দুটো আমারও বেশ পছন্দ হয়েছে। বাড়ি গিয়ে সেই হুল্লোড়। কত আত্মীয় স্বজন, কত মানুষ! মেজো আপাকে দেখলেই সবার থেকে আলাদা করা যায়। সে কি দামী শাড়ি, দামী গয়না গায়ে। কানের দুলে উন্নত ডিজাইন, গলায় জ্বলজ্বল করছে স্বর্ণের চেইন। চুল স্ট্রেইট করে কখনো ছেড়ে দিচ্ছে আবার কখনো বেঁধে রাখছে। বাহারী সাজসজ্জা তার। এক পোষাকে দুইবার দেখা গেলো না। আমি অবশ্য এতে খুশিই হলাম। আমার বাবা তার আভিজাত্য মানেন সবসময়। নিজের জায়গা জমি অগাধ, সেরকম জামাইও বেছে নিয়েছেন। অবশ্য আমি হয়েছি একটু একরোখা। বাবার জমির ওপর আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। অতিরিক্ত কোনোকিছুই আমার ভালো লাগে না। তবে বোনের সুখ দেখতেও ভালো লাগে। বড় আপা তার দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে দারুণ সুখে আছেন। তার অত অভিজাত জামাকাপড় আর অলংকার না থাকলেও চেহারায় সুখের ভাবটা প্রকাশ পায়। বাচ্চাগুলো সারাদিন মামা মামা করে আশেপাশে ঘুরঘুর করে। আমার এতেই আনন্দ। তবে নাজিয়াকে দেখে বুঝতে পারি, ওর মনটা খারাপ। আমার বাবার বাসায় সবাই মোটামুটি দামী জামাকাপড় আর লোক দেখানো সাজসজ্জা করতে অভ্যস্ত। কিন্তু বাপের টাকায় ফুটানি যে আমি একেবারে অপছন্দ করি। নাজিয়া এটা জেনেই আমাকে বিয়ে করেছে। তাই মুখের ওপর কিছু বলতেও পারে না। তবুও ওর মনটা যে ভেতরে ভেতরে হা হুতাশ করে সেটা বুঝতে আমার অসুবিধা হলো না।

আমি এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে আঠারো হাজার টাকা দিয়ে নাজিয়ার জন্য একটা স্বর্ণের চেইন কিনে আনলাম। নাজিয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘কই পাইলা এত টাকা?’ আমি বললাম, ‘আরে অফিসে একটা একটা একাউন্টে প্রতিমাসে কিছু জমাই বলেছিলাম না? ওখান থেকে স্যারকে বলে কিছু টাকা তুললাম।’

নাজিয়া মুখে বললো, ‘কি যে করো না তুমি। পাগল একটা। কি দরকার ছিলো এটার? মিছেমিছি।’

মুখে কথাটা বললেও ওর চেহারার উজ্জ্বলতাই বলে দিলো চেইনটা পেয়ে সে আসলে কতটা খুশি হয়েছে। আমি ওর আনন্দ দেখে বরাবরই আনন্দ পাই। ওকে ঘরে এনে জাপটে ধরে বললাম, ‘বউ আই লাভ ইউ।’ নাজিয়া আমাকে একটা ছোটখাটো মাইর বসিয়ে দৌড়ে পালায়। আবার খানিক পরেই দৌড়ে এসে বলে, ‘আই লাভ ইউ টু শিহাব। আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তুমি খুব ভালো।’

বিয়েতে সবাই দিব্যি আনন্দ করছে। বড় দুলাভাই ও মেজো দুলাভাই কনের বিয়ের কেনাকাটার সাথে গিয়েছিলেন। ওনারা দুজনে ভাগাভাগি করে বাড়ির সব বউদের জন্য শাড়ি কিনে এনেছেন। আমার মায়ের জন্য দামী জামদানী, চাচাতো ভাইয়ের বউয়ের জন্যও ভালো শাড়ি এনেছেন। আমি মনেমনে আন্দাজ করলাম নিশ্চয় নাজিয়ার জন্যও এনেছে। বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলাম।

কিন্তু শাড়ি দেখে আমি রীতিমতো অবাক। নাজিয়া বললো ওটার দাম নাকি বারো হাজার টাকা। আমি বিস্ময় লুকাতে পারলাম না। মায়ের শাড়ির দাম বড়জোর চার হাজার হবে। বাকিদের শাড়িও তিন হাজারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে নাজিয়ার শাড়ির দাম বারো হাজার টাকা, বিষয়টা অবাক করার মতোই। আমি শুধু জানতে চাইলাম, ‘এত দামী শাড়ি কেন তোমার জন্য?’

নাজিয়া বললো, ‘আরে আমি কি জানতাম নাকি এটার এত দাম। আমি তো জাস্ট শাড়িটা পছন্দ করছি। দুলাভাই বললো এটা প্যাকেট করে দেন। আমি দাম শুনে বারবার করে বললাম অন্য একটা নিবো। দুলাভাই বললো, যেটা পছন্দ হইছে সেটাই নেন। দাম নিয়ে ভাব্বেন না তো ভাবী। আর কি বলি বলো? জোর করে নিয়া দিলো।’

আমি স্বীকার করি মেজো দুলাভাইয়ের মনটা বড়। সব টাকাওয়ালা এত বেশি খরচ করে না যতটা দুলাভাই করে। কিন্তু তারপরও শাড়ির এত দাম শুনে আমার মনটা কেমন যেন করছে। মনেমনে ভেবে রাখলাম, আমার হাতে টাকা এলে মেজো আপাকে একটা দামী কিছু গিফট করবো। তাহলে শোধবোধ হয়ে যাবে।

নাজিয়া বড় দুলাভাইকে বড় ভাইয়া ডাকে। অনেক শ্রদ্ধাও করেন ওনাকে। আর মেজো দুলাভাইকে দুলাভাই ডাকে। নাস্তা নিয়ে গেলে দুই দুলাভাইয়ের জন্যই নিয়ে যায়। দুজনকেই সমান খাতির সম্মান করে। এরমধ্যে কিভাবে যে মেজো দুলাভাইয়ের সাথে জড়িয়ে গেলো আমি বুঝতেও পারিনি। মাথাটা আবার চক্কর দিচ্ছে। আবার উঠে জায়গা বদল করে রুমে চলে আসলাম। ভাবলাম, কালকেই বাড়ি যাবো। আপাকে নিয়ে আলাদা করে বসবো। নিশ্চয় ও কিছু আন্দাজ করেছিলো। সবকিছু তো এভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে না।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে