মন ফড়িং ৪৪.

0
2800

মন ফড়িং ৪৪.

কখন যে নিদ্র গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ঠিক মনে নেই। ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোনে। দেয়ালের রেডিয়াম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। ঠিক ৩ টা ১০ বাজে। এতো রাতে কে ফোন দিলো?
নাম্বার দেখে নিদ্রের বিরক্ত লাগলো। মেয়েটা তার পিছু ছাড়ছেনা কেনো? নীলিমা জানে সে বিবাহিত এবং অদ্রিকে সে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তারপরও যদি এভাবে পিছু লাগে। উফফ কিছু একটা করতে হবে এই মেয়ের।
সকাল ৮ টার দিকে নাজমুল অদ্রিকে নিয়ে ডাঃ নীলুফারের চেম্বারের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। নিদ্র যেতে চেয়েও পরে আর যায়নি। নাজমুল সাহেবও বেশি একটা জোরাজোরি করেননি।
অদ্রি নাজমুল সাহেব যা বলছেন তাই করছেন। অদ্রিকে এমন রোবটের মতো আচরণ করতে দেখে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেলেন নাজমুল সাহেব। তার নিজের সাংসারিক জীবন সুখের ছিলোনা। নিদ্রেরও তাই হলো। মেয়েটা বেঁচে থাকলেও নিদ্র শান্তি পাবেনা, মরে গেলেও পাবেনা। বাঙালির এই একটাই সমস্যা। এরা প্রচণ্ড আবেগী হয়ে থাকে। এদিক থেকে ইংরেজরা, আমেরিকানরা অনেক কঠোর। একজন গেছে আরেকজন আসবে। একজনকে নিয়ে তারা পড়ে থাকেনা। ইমোশন, লাভ কোনোকিছুরই স্থায়িত্ব নেই – হয়তোবা তারা এটা বেশ মানে।
নীলুফারের চেম্বারে ঢোকার আগে অদ্রি অস্ফুট স্বরে কিছু একটা বলল। নাজমুল সাহেব ঠিক বুঝতে পারলেননা।

প্রতি সপ্তাহে দুইবার কাউন্সিলিং আর রেগুলার মেডিসিন এর মাধ্যমে ট্রিটমেন্ট চলছে অদ্রির। আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। নিদ্রের সাথে টুকটাক গল্প করে। রীতার কাজে নিজ থেকেই সাহায্য করতে যায়। মাঝেমধ্যে নিজেই রান্নাবাড়া করে। নাজমুল সাহেব তার পুরানো বন্ধুদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করে সময় কাটাচ্ছেন। আসমা জামান সেই যে তার ভাইয়ের বাড়ি গেছেন আর ফেরার নামই নেই। নাজমুল সাহেব অনেক বার ফোন দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আসমা জামান খুবই যত্নে তা এড়িয়ে গেছেন। তার বিনা অনুমতিতে নিদ্রের বিয়ে দেয়ার শাস্তি এটা।
নিদ্র বসার রুমে বসে টিভি দেখছে। নাজমুল সাহেব বেশ ব্যস্ত হয়ে নিদ্রের পাশে বসলেন৷ নিদ্র কিছুটা বুঝতে পেরে বাবাকে জিজ্ঞেস করল
– কিছু বলবে?
– হ্যাঁ, তোর কি এখানে সেটেল্ড হওয়ার ইচ্ছা নাকি অদ্রিকে নিয়ে ইউকে তে সেটেল্ড হবি?
– আমার আর ওখানে যাবার ইচ্ছা নাই। এখানে কিছু একটা করে পেট চালানো যাবে।
– মাই ডিয়ার সন এটা বাংলাদেশ। এখানে দারোয়াবের চাকরিতেও অনার্স পাশ + ঘুষ লাগে।
– আমি দারোয়ানের চাকরি করতেও যাচ্ছিনা।
– তাহলে করবিটা কী?
– রংমিস্ত্রির কাজ করবো।
– তুই আমার মানসম্মান সব খাবি।
– বাবা, খাবারের কি অভাব আছে নাকি যে শেষ মেষ তোমার মানসম্মান খাবো।
– নিদ্র আ’ম সিরিয়াস।
– তুমি আর,আমি মিলে ছোটো খাটো বিজনেস করা যাবে। তুমি আপাতত এ দেশে থাকার ব্যবস্থা করো।
– ব্যবস্থা বলতে দুজনের এনআইডির জন্য এপ্লাই করতে হবে।
– ইউকে গভরমেন্ট থেকে ইনফরমেশন বা ডকুমেন্টের প্রয়োজন হবেনা?
– আসলামের সাথে কথা বলে দেখতে হবে। ও বাংলাদেশ পুলিশে আছে। ওর এসব আইনি ব্যাপারে জানা থাকার কথা আর হেল্পও করতে পারবে।
নিদ্রের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
– বাবা, তার সেল নাম্বারটা দেয়া যাবে?
– তা যাবে কিন্তু কেনো?
– একটু দরকার।

নিদ্র আসলামের নাম্বার নিয়ে রাখলো। সন্ধ্যার দিকে তার কাজটা সেড়ে অদ্রির কাছে এসে বসলো। অদ্রি আদার খোসা ছাড়াচ্ছিল। নিদ্র অদ্রির ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলল
– আপনি খুব ব্যস্ত?
অদ্রি হেসে বলল
– কেনো শুনি?
অদ্রির কোমড় জড়িয়ে ধরে নিদ্র বলল
– আদা রাখুন, নিদ্রের কথা শুনুন।
আদা রেখে নিদ্রের গলা জড়িয়ে ধরে অদ্রি বলল
– এখন কিছুই সম্ভব না নিদ্র।
– কিন্তু কেনো?
– কারণ ছোট নিদ্র আসছে।
নিদ্র কথাটা বুঝতে না পারায় বোকা বোকা চেহারা করে জিজ্ঞেস করলো
– ঠিক বুঝলাম না। বাসায় তো কোনো ছোট বাচ্চা দেখলাম না। আশেপাশের কারো বাচ্চার নাম নিদ্র?
অদ্রি নিদ্রের গালে চুমু দিয়ে বলল
– আমি প্রেগন্যান্ট নিদ্র।
নিদ্র অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বলল
– এতদিন বলেন নাই কেনো?
– আজকেই জেনেছি আমি।
– বাবাকে জানাতে হবে, দাদীকে জানাতে হবে। আমার আনন্দ হচ্ছে অনেক। আমার বাচ্চা হবে। নরম নরম হাত, তুলতুলে নরম গাল। উফফ অদ্রি আপনি আমাকে পাগল বানিয়ে দিবেন দেখছি।
অদ্রি ধীরে ধীরে বললো
– রাতে বিরিয়ানি রান্না হবে দেখেই আদা ছুলে রাখছি।
– আপনাকে কিছুই করতে হবেনা। সম্পূর্ণ রেস্ট নিবেন। আমি আর রীতা খালা মিলে রান্না করবো।
– আমি নিজ হাতে আপনার জন্য রান্না করবো।
– না।

রাতে খাবার টেবিলে নিদ্র নাজমুল সাহেবকে সুসংবাদ জানাল। নাজমুল সাহেব বাচ্চাদের মতো কাঁদতে শুরু করলেন। বাম হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বললেন
– এতো আনন্দ আমি কই রাখবো!

অদ্রির প্রেগন্যান্সির ফার্স্ট চেকাপ করানো হলো। সব রিপোর্ট ভালো তবে অদ্রিকে প্রচুর ফল আর শাকসবজি খেতে হবে। প্রেগন্যান্সির টাইমে যেমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হয় তার একটা চার্ট নাজমুল সাহেব কিনে এনেছেন।
অদ্রি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল এক মগ গরম দুধ নিয়ে। নিদ্র এতো কেয়ার করছে তার। আগেও করতো এখন মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিয়ম করে দুধ, ডিম, ফল খাওয়াচ্ছে। খেতে গেলে কেমন গা গুলিয়ে আসে তারপরও তাকে খেতে হচ্ছে। ডিম সেদ্ধ খাওয়ার পরপরই বমি করে পুরোটা উপড়ে দেয় অদ্রি। তারপরও নিদ্র হাল ছাড়ছেনা।
নিদ্র পেছন থেকে অদ্রিকে জড়িয়ে ধরে বলল
– চলুন একটু ভালোবাসাবাসি করা যাক।
– উঁহু, বারণ আছে।
– কে বারণ করেছে?
– আম্মুকে বলতে শুনেছি এইসময় স্বামী সঙ্গ পরিত্যাগ করতে হয়। তা নাহলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়।
– না, আমি আপনার ডাক্তারের সাথে এই নিয়ে কথা বলেছি। উনি বলেছেন আমরা লেবার পেইন ওঠার আগেও সেক্স করতে পারবো।
– সত্যিই নাকি ওর কোনো ক্ষতি হবে?
– না কোনো ক্ষতি হবেনা। আমি বলি আপনি শুনুন। সহবাসের সময়ের স্বাভাবিক নড়াচড়া গর্ভের শিশুর কোনো ক্ষতি করে না। গর্ভের শিশু তলপেট এবং জরায়ুর শক্ত পেশী দিয়ে সুরক্ষিত থাকে। আর আপনার শিশু অ্যামিনিওটিক স্যাকের মধ্যে অবস্থান করে যা তাকে সুরক্ষিত রাখে।
এছারাও জরায়ুর মুখ মিউকাস প্লাগ দ্বারা সীল করা থাকে যা শিশুকে ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করে। সহবাসের সময় পুরুষেরে গোপনাঙ্গ নারীর গোপনাঙ্গ পর্যন্তই প্রবেশ করে। তা গর্ভের শিশু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। তাই গর্ভের শিশুর ক্ষতির আশঙ্কা থাকেনা।
সহবাসের পর অর্গাজম হলে বাচ্চার নড়াচড়া বৃদ্ধি পেতে পারে। এটা হয় অর্গাজমের পর আপনার হার্টবিট বেড়ে যাওয়ার কারণে, সহবাসের ফলে বাচ্চার কোন অসুবিধার কারণে নয়। অর্গাজমের কারণে জরায়ুর পেশীতে মৃদু সংকোচন (কন্ট্রাকশন) হতে পারে।
তবে তা ক্ষণস্থায়ী এবং ক্ষতিকর নয়। যদি গর্ভধারণের সবকিছু স্বাভাবিক থাকে তবে অর্গাজমের কারণে হওয়া সংকোচনের ফলে গর্ভপাত বা প্রসব বেদনা শুর হয়না। সুতরাং নিচের সমস্যাগুলি না থাকলে গর্ভাবস্থায় সহবাস করলে কোনো সমস্যা নেই।
অদ্রি নিদ্রের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল
– অনেক দিন আপনার আদর পাওয়া হয়না। আজকে অনেক সময় ধরে আদর করবেন। ঠিক আছে?

চলবে……

~ Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে