ভয়ংকর ভালবাসা শেষ পর্ব

0
1938

#ভয়ংকর_ভালবাসা।
#শতাব্দী_নাওয়ার।
#শেষ_পর্ব।

মনে মনে ভাবছি,
এখানেতো কোন বিয়ে বাড়ী দেখিনা।
বিয়ের কোন গেইটও দেখিনা।
এখানে গাড়ী থামলো কেন?
-আরফা নামো গাড়ী থেকে।(আভাস)

আভাসের এই কথা শুনে আমার কলিজা যেন শুকিয়ে যাচ্ছে…
-এখানে নামবো কেন?
-গাড়ী আর সামনে যাবেনা,রাস্তা ঠিক করছেতো সেই জন্য।
-আপনাদের বাসা কত দূর?কোথাও তো বিয়ের গেইট দেখিনা,বিয়ে বাড়ীও তো দেখিনা।
-আরে বাবা আরেকটু সামনে আমার বাসা,নামো তো গাড়ী থেকে আগে।

এই বলে আভাস আমার হাত ধরে গাড়ী থেকে নামালো।
এরপর আমার হাত শক্ত করে মুঠোয় নিলো,
-এবার চলো।
আমার বুকের ভেতরটায় যে কি হচ্ছিলো সেটা আমি কাউকে বুঝাতে পারবোনা।
মনে মনে ভাবছিলাম,ও আমাকে বাসায়ই নিয়ে যাবে তো?

এক হাত দিয়ে শাড়ী ধরে রেখেছি অন্য হাত আভাস ধরে রেখেছে।
কিছু দূর যাবার পর আভাস বলছে,
কোলেই নিতাম,মুরুব্বিরা পেছনে বাসে আছেন,উনারা এসে দেখলে নানান কথা বলবেন সেই জন্য কোলে নিলাম না,একটু কষ্ট করে হেঁটেই চলো প্লিজ।

কিছু দূর হেঁটে যাবার পর দেখি বিয়ে বাড়ী।যেন প্রাণটা ফিরে পেলাম।
বউ এসেছে বউ এসেছে বলে সবাই আমাকে বরণ করতে আসলো।
কেউ মিষ্টি এনে,কেউ পায়েস এনে,কেউ সেমাই এনে আমার মিষ্টি মুখ করছে।
সাথে আভাসকেও খাইয়ে দিচ্ছে।

আভাসের আপু আমাকে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
আমাকে আভাসের মায়ের রুমে বসানো হলো।
আশেপাশে সবাই আমাকে দেখছে।
আমি চুপ করে বসে আছি।
কিছু ক্ষণ পর আভাসের দুইটা বন্ধু এসে আমাকে বলে,
শেষমেস ভাবী হতেই হলো।
শুধু শুধু বন্ধু টাকে কষ্ট দিলে,শাস্তি দিলে।
আজ ও প্রতিশোধ না নিলেই হয়।
আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ করো।

কথা গুলো শুনে বুকের ভেতর টা আবারো কেঁপে উঠলো।
যদিই ও প্রতিশোধ নেয়।
তখন কি হবে আমার?

রুমে বসার পর থেকে আভাসকে আমি আর কোথাও দেখতে পেলাম না।
রাত হয়ে গেছে অনেক,
সবাই আমাকে খেতে বলছে।আমি লজ্জায় সবার সামনে খেতেও পারিনি।

পরে আমাকে ধরে আভাসের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।এত ক্ষণ ওর বন্ধু রা রুমটাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছিলো।
ওর ভাবীরা আমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে বাইরে চলে যায়।

এই প্রথম আমি ভয়ে কাঁপছি।
গলা শুকিয়ে যাচ্ছে,আভাস কি বলবে আমাকে।ও কি ওর কষ্টের শাস্তি দিবে আমাকে?প্রতিশোধ নিবে।
এই চিন্তা গুলো বার বার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।ওর ভালবাসা টা আবার সেই ভয়ংকর ভালবাসার রুপ নিবে নাতো?

রাত ১ টার সময় ওকে ওর বন্ধুরা রুমে ঢুকতে দেয়।
যেই পর্যন্ত ওর কাছ থেকে ৪০০০ টাকা না নিতে পেরেছে সেই পর্যন্ত ওকে রুমে ঢুকতে দেয়নি।

ও রুমে ঢুকতেই আমি কি করবো দিশা না পেয়ে কান্না শুরু করে দেই।

-এই এই কি হয়েছে?
কাঁদছো কেন তুমি?আম্মু আব্বুর কথা মনে পড়েছে?কালই তোমাকে আমি তোমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।
-মনে মনে বলি,আমি তো আপনার ভয়ে কাঁদছি।
-দেখো,কাঁদেনা প্লিজ।আজ কাঁদলে লোকে কি বলবে?সবাই ভাব্বে আমি তোমাকে মারছি,আরো পঁচা কথা বলবে।
প্লিজ কেঁদোনা।কেঁদোনা লক্ষী।
-আপনি কি আমাকে মারবেন?বা কোন শাস্তি দিবেন?(কেঁদে কেঁদে)
-কেন মারবো,কেন শাস্তি দিবো?
-ওই যে আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি বলে,বিয়েতে রাজি হইনি বলে।
-ওরে পাগলী,এত সাধনার পর,এত কষ্ট করে আমি আমার জানটাকে পেয়েছি ওকে কষ্ট দিতে?
এই ভয়ে কাঁদছো তুমি?আমার প্রাণ থাকতে একটা আঁচরও তোমার গায়ে কোন দিন লাগতে দেবোনা আমি।সেই আমি তোমাকে মারবো?
কি করে এমন অদ্ভুত কথা মাথায় আসে তোমার?

-সরি(কেঁদে কেঁদে)
-একবার জড়িয়ে ধরা যাবে?
থাক থাক ওই ভাবে তাকিওনা।সমস্যা নেই।
-জানো,আজ আমি অনেক খুশি।আল্লাহ্‌ আমাকে আমার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন।
আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
তোমাকে না পেলে এ জীবন মৃত বৃক্ষের মত হয়ে যেতো।
কত অপেক্ষার পর আজ আমি আমার জীবন টাকে পেলাম।খুব ভালবাসি তোমায় আমি আরফা।খুব ভালবাসি।আজ আমার এ জীবন ধন্য।

আচ্ছা তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।আবার সকাল সকাল উঠতে হবেতো।
-আমি খাটের এক পাশে শুলে তোমার প্রবলেম হবে?
-না।
-তবে আমি শুই?
-আচ্ছা।

আমরা দুজন দুদিকে ঘুরে শুয়ে পড়লাম।
আর মনে মনে আমি ভাবতে লাগ্লাম,কি ভুল টাই না আমি বুঝেছিলাম আভাসকে।
অথচ ও কত ভালো একটা ছেলে।

ভোর বেলা দেখি আভাস নামাজ পড়ছে।
নামাজ শেষে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,কখন উঠেছেন?
-এইতো কিছু ক্ষণ আগে।তোমাকে কত ডাকলাম।তুমি উঠলেনা।নামাজ পড়বেনা?
-দিনে পড়বো।
-দিনে পড়লে হবেনা,সব ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে এখন থেকে।ঠিক আছে?
-হুম।

আজ আমাদের বউ ভাত,
বউ ভাতের অনুষ্ঠান শেষে আমরা আমাদের বাসায় যাই।
ওখানেও সুন্দর করে বাসর ঘর সাজানো হয়েছে ফুল দিয়ে।

আমাদের বাসায় যেতেই আমাদের সবাই মিষ্টি মুখ করায়।
আম্মু আভাসকে এর মধ্যেই খুব আপন করে নিয়েছে।
আমার সাথে দেখা হতেই আম্মু বল্লো,
ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করিসনি তো?
-না।
-ওকে কষ্ট দিসনা কিন্তু।
ও তোর স্বামী,নইলে আল্লাহ্‌ নারাজ হবেন।
-হুম।

রাতে আভাস আম্মু আব্বু আর সবার সাথে অনেক গল্প করলো।
গল্প শেষে আমরা সবাই খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
আমার রুমটা দারুণ ভাবে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।

-আরফা,
-হুম।
-আই লাভ ইউ।
-আচ্ছা।
-শুধু আচ্ছা?
-ওকে।
-শুধু ওকে?
-ঠিকাছে।
-শুধু ঠিকাছে?
-বুঝলাম,
-বুঝলাম না?
-হি হি হি।
-আম্মু আব্বু অনেক ভালো।একদম আমার মনের মত।আমি সব সময় এমন একটা পরিবারই চেয়েছি।যারা আমাকে বুঝবে,আর আমাকে আপন করে নিবে।
-আর আমি?
-উম্ম তুমি,আছো ভালোই।
-আমি ভালোই?তারমানে খুব ভালো না?
-খারাপ তো বলিনি।কিন্তু আম্মু আব্বু বেশি ভালো।দেখোনা তারা আমাকে কত তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছেন।আর তুমি?
-আমি কি?
-নিয়েছো আপন করে?
-বিয়ে করেছিনা?
-ওটাতো সবার জোরাজুরিতে।
-আপনি জানেন?
-সব জানি।
-উঁহু সব জানেন না।
-কি জানিনা?
-এই যে এখন যে আমি জানি আপনি খুব ভালো।এটা কি আপনি জানেন?
-নাতো।তোমার কাছে আমি তাহলে ভালো হতে পেরেছি?থ্যাংক্স গড।
-আপনি আসলেই খুব ভালো।
-সেটা আমি জানি।
-কিইইই
-হা হা হা।
-পঁচা।
-হুম তোমার পঁচা।
-আচ্ছা।
-আর তুমি আমার পুঁচু।
একবার জড়িয়ে ধরি?
জড়িয়ে ধরা যাবে?
-হুম।
-এই রে আজ আমার বউ চোখ কপালে তুলেনি।

এই বলে আভাস আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
মনে হয়েছিলো পৃথিবীর সব টুকু সুখ যেন এই মানুষটার বুকে।
ভয়ংকর ভালবাসা টা রুপ নেয় পবিত্র ভালবাসায়।

এরপর কেটে যায় আমাদের বিবাহিত জীবনের অনেক গুলো বছর।

আমাদের বিয়ের ৭ বছর চলছে।আমাদের বিয়ের পর যারা বিয়ে করেছেন তারাও মা বাবা হয়ে গেছেন।শুধু আমরাই পারিনি আজো মা বাবা হতে।
আমি এখনো আভাসকে বাবা ডাক শোনাতে পারিনি।
কিন্তু ওর মুখে ওই একটাই কথা,
আল্লাহ্‌র যখন ইচ্ছে হবে তখন দিবেন।
আমরা কি মন্দ আছি বলো?
টুনাটুনির সংসার ভালোই তো আছি।
এইতো চলছে জীবন।
সবাই দোয়া করবেন,আমি যেন আভাসকে বাবা ডাক শোনাতে পারি।
আল্লাহ্‌ তায়ালা যেন আমার কোল ভরে দেন।সবাই ভালো থাকবেন।
আল্লাহ্‌ হাফেজ।

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে