বৃষ্টি ভেজা রাত পর্ব-০৩

0
2011

#বৃষ্টি_ভেজা_রাত💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖

#পর্বঃ__৩

বাসর ঘরে বসে আছে বৃষ্টি। পুরু রুমটায় ফিনফিনে নিরবতা বিরাজ করছে। বাইরে লোকজনের কোলাহল কানে আসছে তার। বধু সেজে সেই তিন চার ঘন্টা ধরে বসে আছে এই ঘরে। রাতের আসার কোনো নাম গন্ধও নেই। কি থেকে কি হয়ে গেলো তার জীবনটা? যেনো প্রকৃতির মতো একটা ঝড় এসে এলো মেলো করে দিয়েছে তাকেও। গতকাল এই সমটায়ও তার চিন্তা ধারা ছিলো সম্পুর্ন ভিন্ন। আর আজ তার নিয়তি তাকে কোথায় এনে দার করালো। গতকাল পর্যন্ত যাকে ভাইয়া বলে সম্মোধন করেছে আজ কিনা সেই লোকটারই স্ত্রী সে।
ভয় যেনো পিছু ছারছেনা তার। এভাবে বিয়ে হলো তাদের। আরেকজনের জন্য সাজানো ঘরটাতে সে আজ নিজে বৌ সেজে বসে আছে। কিন্তু এই সাজে নেই কোনো মুগ্ধতার আভাস ও। কারণ এটা যে তার জন্য সাজানো হয়নি।
এসির মাঝেও ঘামাচ্ছে বৃষ্টিকে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আছে। রাত কেনো আসছেনা। আসবে কিনা তাও সন্দেহ। ছয় বছরের রিলেশন থাকার শর্তেও বর্ষা যে ধোকাটা দিলো তাকে। তাতে সে ঠিকটাক আচরণ করবেনা এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেনো বর্ষা এমন করলো? ভালোবাসার থেকে কি অর্থটাই বড় হয়ে গেলো তার কাছে। সম্মান বাচাতে রাতের হাতে তুলেদিয়েছে তাকে পরিবারের সবাই। বাবা কতো সুন্দরেই বলে দিয়েছে, অনেক সুখি হবি তুই। কিন্তু ভালোবাসা যেখানে থাকবেনা সেখানে আদৌ সুখ মিলবে?

দরজা নারানোর আওয়াজ পেয়ে একটু নরে চরে বসলো বৃষ্টি। মুহুর্তেই যেনো এক ভিন্ন অনুভুতি হানা দিলো মনে। পিট পিট করছে বুকের ভেতরটা।
রুমে প্রবেশ করলো রাত। বড় ঘোমটা টেনে বিছানায় বসে আছে বৃষ্টি। এক পা এক পা করে বিছানার পাশে এসে দাড়ালো রাত। কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। চক্ষু জোড়া লাল বর্ণ ধারণ করে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে একটু আগে কেদেছে সে, প্রচুর কেদেছে। আঘাতের কান্না নয় এটি, প্রিয়জন হারানোর কান্না এটা। হৃদয় ভাঙার আর্তনাৎ।
কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে বারান্দায় চলে গেলো রাত। সিগারেটের পেকেট টা খুলে একটা সিগারেট মুখে তুলে নেয় সে। এক দলা ধোয়ার সাথে একনাগারে কাশির শব্দ কানে এলো বৃষ্টির। এক নিয়মে বসে আছে সে। বর্ষা কতো কষ্টই না দিয়েছে তাকে। একের পর এক সিগারেটে কাশির শব্দটা ভারি হয়ে এলো রাতের। আর চোখে বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে বৃষ্টি। তার স্বপ্নের রাতটা কি এমনই লেখা ছিলো তার ভাগ্যে? এই রাত নিয়ে কতো স্বপ্নই বুনা ছিলো মনে। আর আজ? একেই বলে ভাগ্যের লিখন।

একের পর এক সব সিগারেট শেষ করে বারান্দা থেকে ঢুলতে ঢুলতে রুমে প্রবেশ করলো রাত। আগে কখনো সিগারেট মুখে তোলেনি সে। আজ হটাৎ হওয়ায় মাথাটা ধরে গিয়েছে তার।
রুমে এসেই এক ঝাটকায় হাতটা ধরে খাট থেকে নামিয়ে নিলো বৃষ্টিকে। চক্ষু জোড়া লাল করে তাকিয়ে আছে বৃষ্টির দিকে। মাথা নিচু করে রাতের সামনে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি।
– তোর মতো মেয়ের কোনো যোগ্যতাই নেই এই বিছানায় বসার। ওরে বাবা অনেক সেজেছিসও দেখছি। তোকে আমি বিয়ে করে এনেছি তার অর্থ এই নয় যে, আমি সব ভুলে তোর সাথে ঢেং ঢেং করে সংসার করা শুরু করবো। নেভার, তোকে আমি বিয়ে করেছি মাত্র ওই ফ্যামিলিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বাসর করতে আসছে। বাসর।
দত খটমট করতে করতে সাজানো রুমের সব ফুল ছিরে ফ্লোড়ে ফেলে দিতে থাকে রাত। রুমে থাকা সকল কাঁচের জিনিস গুলো একে একে ফ্লোড়ে ছুরে ফেলছে রাত। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁচের টুকরো ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে সারা রুমে। বৃষ্টির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
– এখনো দাড়িয়ে আছিস কেনো। গেট আউট ফ্রম মাই রুম।
রাতের ধমকে কিছুটা কেপে উঠে বৃষ্টি। কাপা গলায় বলে উঠে,
– এতো রাতে কোথায় যাবো? এখানে কাওকেই তো চিনিনা আমি।
ঠাস করে একটা চর পরে যায় বৃষ্টির গালে।
– যেখানে যাবি যা, প্রয়োজনে জাহান্নামের চৌরাস্তায় যা। তবুও আমার সামনে থেকে সর। তোকে যতই দেখছি ততোই মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার। কাওকে চিনিস না তো আমাকে ভালো করে চিনিস যে ঢেং ঢেং করে বাসর করতে চলে এলি? আর সেইদিন তোর উপর দয়া দেখিয়েছিলাম তাই বলে আমি অতটাও মোহান নই।
গালে হাত দিয়ে এখনো নিশ্চুপ হয়ে দাড়িয়ে আছে বৃষ্টি। শুধু এবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে পানি। বুকের ভেতরটা দুমরে মুচরে যাচ্ছে রাতের প্রতিটা কথায়।
রাত এবার ঠান্ডা মাথায় বলে উঠে,
– ওহ্, এখন তো তুই আমার বৌ। বের করে দিলেও লোকে খারাপ ভাববে। আজ থেকে ওই সোফাটাই তোর বিছানা। এই খাটের ত্রি-সীমানায়ও আসার চেস্টা করবিনা। মনে রাখবি তুই আমার বৌ শুধু মাত্র নামে।
ক্লান্তি নিয়ে এলো মেলো বিছানায় সুয়ে পরে রাত। বৃষ্টি এখনো ঠায় দাড়িয়ে অশ্রু বিশর্জন দিচ্ছে ওখানে। তখনি চোখ পরলো, একটি সোনালি রঙের ছোট মাছ পানির জন্য মেঝেতে ছটপট করছে। তার থাকার পাত্রটাও যে একটু আগে মেঝেতে ফেলে টুকরু টুকরু করে ফেলেছে রাত। গাল থেকে হাত সরিয়ে মাছটাকে তুলে নিলো বৃষ্টি। মাছটাকে বাচানোর জন্য আশেপাশে তাকায় সে। মনে হচ্ছে আজ মাছটাও তার মতো অসহায়।
,
,
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো বৃষ্টি। শেষ রাতের দিকে হালকা চোখ লেগে এসেছিলো তার। সকালে আবার ঘুম ভেঙে যাওয়ায় শরিরটা ভার হয়ে ছিলো। তাই ফ্রেশ হয়ে একটা নীল রঙের শাড়ি পরে সে। রাত এখনো বেগোরে ঘুমাচ্ছে। পর্দা সরিয়ে দিতেই সকালের নব সূর্যের মিষ্টি কিরণে কিছুটা মুখে এসে পরছে তার। স্নিদ্ধ চুলে ও ফর্সা মুখ সোন্দর্য যেনো আরো বেড়ে উঠেছে রাতের মধ্যে। বারান্দায় ছোট চেয়ারটায় ফ্যাকাসে মুখ করে বসে রইলো বৃষ্টি। তাকিয়ে আছে বাইরে রাঙা প্রভাতের কিরণে মেতে উঠা প্রকৃতির দিকে।

ঘুম ভাঙায় ফ্রেশ হয়ে ছাদে গিয়ে দোলনাটায় বসে রইলো রাতের ছোট বোন আরশি। মা আর চৈতি মিলে নিচে সবার জন্য নাস্তা তৈরি করছে। আরশি দোলনায় বসে গুন গুন করে গান গাইছে তখনি কেও একজন এসে একটা চটি মারে তার মাথায়। রাগে দাত মুখ খিচকে পেছন তাকিয়ে দেখে রিদ ভাইয়া একটা দাত কেলানো হাসি দিয়ে তার পাশে এসে বসলো। রিদ তার মামাতো ভাই। লোকটা চরম বিরক্তিকর। তার থেকে চার বছরের বড়। রাত ও রিদ সম বয়সি। দুজনের মাঝে মামাতো ফুফাতো ভাইয়ের চেয়ে বন্ধুত্বটাই গভির। এই রিদকে দেখলেই রাগটা চরম পর্যায়ে চলে যায় আরশির। কারন তার পেছনে একবার পরলে নাকানি চুবানি খাইয়ে তারপর ছারবে।
রিদ একটা হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,
– এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? খুব সুন্দর লাগছে বুঝি আমায়? লাগারই কথা শশুর মশাইয়ের একমাত্র জামাই বলে কথা। বাই দ্যা ওয়ে, এভাবে তাকিয়ে থাকিসনা এই অবলা ছেলেটার প্রেমে পরে যাবি।
আরশি একটু গাল মোচরে বলে উঠে,
– এ্যা,, এভাবে তাকিয়ে তাকিস না প্রেমে পরে যাবি!! তোমার মতো সাইকোর প্রেমে পরবো আমি? হুহ্।
– কি আমি সাইকো? তুই আমার ফুফা ফুফির এক মাত্র জামাইকে সাইকো বলতে পারলি?
আরশি এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো রিদের দিকে।
রিদ আবারও বলে উঠে,
– ওসব বাদ দে, শুনলাম ইদানিং কলেজের বেশ কিছু ছেলের সাথে ভাব জমিয়েছিস। কারা ওরা?
– তোমাকে বলবো কেনো? তুমি কে? আর ওরা হলো আমার নতুন ফ্রেন্ড।
– দেখিস উল্টোপাল্টা কিছু করলে আমার শশুরেরই কপাল পুরবে।
– তুমি তো আন ম্যারিড তাহলে তোমার শশুর আসলো কোথা থেকে? আর আমি কিছু করলে তোমার শশুরের কপাল পুরতে যাবে কেনো?
– কারণ তার মেয়ে, আমার মতো হেন্ডসাম ছেলে রেখে আরেকজনের দিকে চোখ দেওয়া, তাহলে আমি কি চেয়ে থাকবো। তাই আমার শশুরের কপালই তো পুরবে।
– তোমার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছিনা আমি।
রিদ এবার আরশির নাক টেনে দিয়ে বললো,
– বুঝবি বুঝবি সময় হলে সবই বুঝবি। আমার এতো চালাক শশুরের মেয়ে হয়ে তুই কিভাবে এতো মাথামোটা হলি সেটাই বুঝতে পারিনা আমি।
বলেই চায়ের কাপটা নিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে নিচের দিকে হাটা ধরলো রিদ।
চোখ দু,টি বড় বড় করে রিদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে আরশি। মনে হচ্ছে এক্ষুনি চোখ দুটি বেড়িয়ে আসবে।
“তার মানে ওনি এতোক্ষন আমার বাবাকেই ইনডিরেক্টলি শশুর শশুর বলে সম্মোধন করে গেলেন?
,
,
আরশি বেশ কিছুক্ষন ধরে ডাকছে রুমের বাইরে থেকে। বৃষ্টি বারান্দা থেকে এলো রুমে। রাত এখনো ঘুমের দেশে। কিছুক্ষন স্তব্দ হয়ে চেয়ে আছে বৃষ্টি। এই মানুষটাকে কতোইনা কষ্ট দিয়েছে আপু। এই মানুষটা যে তার স্বামী এটা এখনো অবিশ্বাস্য তার কাছে। তবুও হাজার হোক এখন এটা আমার সদ্য বিয়ে করা স্বামী। আচ্ছা আমি চাইলে কি তাকে আগের সাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারিনা? আর আমি তার জীবন ঘুচিয়ে দিবোই বা কোন অধিকারে? কারন সে তো গত কাল বলেই দিয়েছে, তার স্ত্রী হওয়ার জোগ্যতা আমার নেই। নামেই মাত্র আমি তার স্ত্রী, অন্যথায় নয়।

To be continue…………

~~ ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে