“বখাটে বউ”(পর্ব-১)

2
3122

“বখাটে বউ”(পর্ব-১)

পাশের বাসায় নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে। সাথে আছে তাদের হ্যান্ডসাম হাদারাম ছেলে। শুনলাম তার আশপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করলেও নাকি সে মেয়েদের দিকে তাকায় না। আর এই সব খবর আমার কাছে পৌছে দেয় আমার রিপোর্টার যুথী।
আল্লাহর কৃপায় আমার বেলকোণ বারান্দা আর তার বেলকোণ বারান্দা মুখোমুখি। দূর্ভাগ্যবসত সে এদিকের জানালার পর্দা সরায় না আর বারান্দার দরজাও খুলে না। সব মিলে আমি জানিই না যে পাশের বাসার ঐ রুমটাতে কেউ থাকে।
গত সপ্তাহে যুথী এসে বললো-
__”জানেন বন্ন আফা পাশের বাসায় মনকয় নতুন ভাড়াট্টি আইচে। একটা হ্যানচাম যুবক পোলাও আছে তাগো।”
__”তুই জানলি কি করে?”
__”দুই দিন ধইরা বৈকালে হেরে ছাদে বইসা থাকতে দেখি। তাই বুঝলাম।”
__”ওহ তাই?”
__”আপ্নে তারে বারান্দায় দ্যাখেন নাই?”
__”না তো।”
__”দ্যাখবেন কি কইরা? হেই ব্যাডা তো কারো দিকে তাকায় না।”
__”তুই জানলি কি করে?”
__”আমি ছাদে কাপড় উঠাইতে গিয়া তারে দেইখা কু কু শব্দ করচি মেলাক্ষণ কিন্তু ব্যাডায় একবারও তাকাইলো না।”
আমি অবাক হয়ে বললাম-
__”কু কু করেছিস কেনো?”
সে লাজুক মুখ করে মুখ নুইয়ে বললো-
__”কু কু হইলো কোকিল পাখির ডাক তাই। ভাবচিলাম পাখি ভাইবা যদি একবার তাকায়।”
ওর কথা শুনে আমি হা করে তাকিয়ে থেকে বললাম-
__”এত দিন জানতাম কুহু কুহু হলো কোকিলের ডাক। আজকেই প্রথম জানলাম কু কু হলো কোকিলের ডাক। তা কোকিল পাখি তুই তার তাকানো নিয়ে পড়েছিস কেনো?”
__”সব খবর আপ্নেরে দিমু তাই।”
__”সব খবর দেয়া হয়েছে এখন তুই যা। আমি দেখছি।”
__”ঐ ব্যাডা মনকয় আপ্নের দিকেও তাকাইবো না।”
__”কে বললো তোকে?”
আমি বড় বড় চোখে তার দিকে তাকাতেই সে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো-
__”কেউ না আফা, আমি যাই কাম আছে।”
কথাটা বলেই সে দ্রুত প্রস্থান করলো। ও ছেলের তাকানো নিয়ে আমার কোনোই মাথা ব্যাথা নেই। তাকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করবো ডিসিশন ফাইনাল। আমি আইডিয়া খুঁজতে শুরু করলাম।
অনেক ভেবে ভেবে বের করলাম গান বাজিয়ে জ্বালাবো। আনন্দদায়ক ঘটনা হলো আমি ফুল সাউন্ডে গান বাজাই। কিন্তু তাতেও তার কোনোই প্রতিক্রিয়া নেই। তাই ভাবলাম ডোজ বাড়াতে হবে। আর সে কারণেই নিজেই গান গাওয়া শুরু করলাম। আমি ওদের বেলকোণের দিকে মুখ করে জোরে জোরে গাই-
“মেরি সামনে ওয়ালি খিড়কি ম্য এক চাঁদকা টুকরা রেহতাহ্য। আফসোস হ্য হো হামছে কুচ উখরা উখরা রেহতাহ্য….”

এটা ছেলেদের গান হয়েছে তো কি হয়েছে? গান তো গানই। গান যদি মনের কথা বলে তবে সেটা গাওয়াই যায়।
সকালে উঠে দরজা জানালা খুলে গান শুরু করি। বেকুবটা কানে শুনে না নাকি কে জানে! আমি তো এক রকম চিল্লিয়ে গান গাই। মূলত এটা এক প্রকার ইফটিজিং। আর এটা করতে আমার খুব ভাল্লাগে। কয়েক দিন ধরে খালি গলায় গান গেয়েও যখন ফলাফল পেলাম না তখন মনে হলো খালি গলার গান হয়তো তার ভালো লাগে না তাই সে জানালার পর্দাও হয়তো সরায় না। বাধ্য হয়েই আব্বুকে বললাম-
__”আব্বু আমার একটা হারমোনিয়াম লাগবে।”
আব্বু অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-
__” হারমোনিয়াম কি করবি?”
আমি করুণ অসহায় মুখ করে বললাম-
__”গান গাইবো।”
__”কিহ? কোনো কালেও তো তোকে গান গাইতে দেখিনি হঠাৎ গান গাইবি কেনো?”
__”পাশের বাসার ছেলেটা খালি গলার গান পছন্দ করে না, সে জন্য হয়তো বাইরেও আসে না। তাই হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইবো।”
আব্বু মুচকি হেসে বললেন-
__”বলিস কি? ও ছেলে কানে শোনে তো?”
__”কি জানি!”
__”তাকে দেখলি কোথায়?”
__”এখনো দেখিনি, যুথী বললো পাশের বাসায় নাকি হ্যান্ডসাম একটা হিরো এসেছে আর সে নাকি কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না।”
আমার কথা শুনে আব্বু যে বেশ খানিকটা অবাক হলেন তা তার চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। কাজের বুঁয়া খবর দিয়েছে আর সেটা না দেখেই গান শুরু করেছি আবার হারমোনিয়াম কিনেও চাইছি। অবাক না হলে হয়তো আমিই অবাক হতাম। আব্বু বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন-
__”না দেখেই গান শুরু করে দিলি আবার হারমোনিয়ামও চাইছিস?”
আমি রেগে গিয়ে বললাম-
__”এতো কথা রাখো তো! কিপ্টার মতো কথা বলো কেনো? একটা জিনিস চাইছি আর সেটা দেবার নামে খোঁজ নাই পুলিশের মতো জেরা করে চলেছো! লাগবে না হারমোনিয়াম।”
__”রেগে যাচ্ছিস কেনো? আমি চাই তোর মিশন সাকসেস হোক। ঠিক আছে আজকেই তোর হারমোনিয়াম পেয়ে যাবি।”
আমি ফিক করে হেসে বললাম-
__”গুড বয় একটা।”
__”এই বয়সে আমাকে বয় বলিস না, তোর মা শুনে ফেললে আমার সাথে নানী গিরি শুরু করবে। তখন আমাকে উদ্ধার করার জন্য কেউ থাকবে না।”
আব্বুর কথা শুনে হাহা করে হেসে ফেললাম। সাথে আব্বুও হাসলেন। আমার বাবা হলেন পৃথিবীর সেরা বাবা। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার সব বখাটেপনাতে আব্বুর প্রশ্রয় আছে। এমন বাবা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার আর আমি নিঃসন্দেহে সৌভাগ্যবতী।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share


বিকেলে আব্বু হারমোনিয়াম কিনে আনলেন। আমি তো ভীষণ খুশি। এবার দেখি ফলাফল কি আসে!
পরের দিন সকালেই হারমোনিয়াম নিয়ে গান শুরু করলাম। যদিও হারমোনিয়ামের সুর আর আমার গানের সুর সম্পূর্ণ আলাদা তবুও আমি খুব খুশিতে আছি। গান ধরলাম-
“তোমাকে চাই আমি আরো কাছে তোমাকে বলার আরো কথা আছে
বলতে পারি না মুখে তওবা তওবা
দিলে জখম হলো উহু আহা…”

এই টুকু গাইতেই কি যেন শুনলাম। সামনে মুখ তুলে তাকাতেই দেখি কাঙ্ক্ষিত সেই হ্যান্ডসাম হাদারাম দাড়িয়ে আছে। ওয়াও কি ক্যারামতি হারমোনিয়ামের! আমি তো খুশিতে বাকবাকুম। ছেলে পুরাই আগুন আগুন দেখতে। আমি হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকলাম। যদিও তার সৌন্দর্যে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। সামনের রুমে যে ছেলে থাকবে তাকে জ্বালানোটা হলো আমার প্রতিবেশীগত অধিকার। সে ছেলে কুৎসিত হোক বা হ্যান্ডসাম। সে সামনে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমিও তার দিকে হতবাক হয়ে তাকিয়ে এসব হাবিজাবি ভাবছি। কি ভাবে যে শুরু করবো সেটা ভেবেই কুল কিনারা পেলাম না। আমি যখন কিনারা খুঁজতে ব্যস্ত তখন সে চিৎকার বললো-
__”রোজ সকালে উঠে চিৎকার করেন, পাশে প্রতিবেশীদের যে প্রবলেম হয় সেই সেন্স টুকু নেই আপনার?”
আমি হা করে কিছুক্ষণ তার দিকে চেয়ে থেকে তারপর হা বন্ধ করে বললাম-
__”এসব সেন্স টেন্স আমি সাথে রাখি না। এসব বর্ণর জন্য নয়। এসব কথা বাদ দিয়ে বলুন আপনার নাম কি?”
সে অবাক হয়ে বললো-
__”হোয়াট?”
আমি মুচকি হেসে বললাম-
__”বানান করে বলবো হিরোটা?”
সে রেগে গিয়ে বললো-
__”ফালতু কথা রেখে আপনার এই কা কা বন্ধ করুন। আপনার কা কা আমার কানে এসে আমার ঘুমের প্রবলেম করে।”
আমি মুখ ভেঙচি কেটে বললাম-
__” রাখুন আপনার ঘুমের প্রবলেম। নাম না বললে তো কা কা শুনতেই হবে হ্যান্ডসাম। নাম বলো কুহু কুহু শোনাবো।”
সে আমার কথা শুনে আরো রেগে গিয়ে বললো-
__”বখাটে মেয়ে একটা।”
কথাটা বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সে রুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলো। মুখের সামনে দরজা বন্ধ করে এতো বড় অপমান বর্ণকে? বর্ণ এর শোধ নিয়েই ছাড়বে। আমি নিজেও আমাকে বখাটেই মনে করি। তাই তার কথায় আই ডোন্ট কেয়ার। আমার সাথে রাগ দেখানো মানেই হলো নিজে ইনভাইট করে বিপদ ডেকে এনে জীবনের সাড়ে বারোটা বাজানো। আমি জোরে জোরে বললাম-
__”বখাটের দেখছো কি চাঁন্দু? তোমার জীবন তেজপাতা বানিয়ে তবেই ছাড়বে বর্ণ।”

আমি গান বন্ধ করলাম না। প্রতিদিন নিয়ম করে আমি গান গাই। নিজেকে আজকাল গায়িকা মনে হয়। কিন্তু ঐ হাদারামটা কিছুতেই সামনে আসে না। সামনে না এলে তো জ্বালানোর সুবিধা হয় না। একদিন বিকেলে যুথী দৌড়ে এসে বললো-
__”বন্ন আফা ঐ বান্দর উপ্রে বইসা আছে।”
আমি অবাক হয়ে বললাম-
__”বানর কোথা থেকে এলো? আমাদের এলাকায় তো কোনো জঙ্গল নেই। নাকি সুন্দরবন থেকে লাফ দিয়ে উত্তরবঙ্গে এলো?”
__”আরে আফা পাশের বাসার ঐ বান্দরডার কথা কইতাছি।”
__”পাশের বাসার ওরা বানর পোষে? ওয়াও দারুণ তো। তাহলে তো একদিন বানর দেখার উছিলায় ওদের বাসায় যাওয়াই যায়।”
__”বান্দর পোষবে ক্যা? হেই ব্যাডা তো নিজেই একটা বান্দর।”
__”মানে? কোন্ পোলা বান্দর ওহ স্যরি বানর?”
__”যে পোলারে গান শুনান হেই পোলার কথা কইতাছি।”
__”ওহ তাই বল। তো তাকে বান্দর বলছিস কেনো?”
__”নাম না জানলে কি কমু কন? আমি তারে হ্যানচাম কইলে তো আপনে মাইন খাইবেন।”
__”হ্যানচাম না, ওটা হ্যান্ডসাম হবে। আর মাইন না, ওটা মাইন্ড হবে।”
__”ঐ হইলো আফা। ইহা বানান মিচতেক।”
__”মিচতেক না মিস্টেক হবে। ইংরেজী পারিস না তাহলে বলতে যাস কেনো? মাথাটা খেয়ে নিলি! যা তো এখন।”
__”আপ্নে উপ্রে যাইবেন না?”
__”যাবো। এখন তুই যা।”

আমি যুথির সাথে কথা শেষ করে ছাদে গেলাম। ছাদে উঠতেই দেখি হিরোটা চেয়ার পেতে বসে থেকে বই পড়ছে। ওহ্! আমার কি যে খুশি লাগছে! তাকে জ্বালাতে আমার ঈদ ঈদ লাগে।
আমি একটা কাশি দিয়ে মুচকি হেসে বললাম-
__”হিরো তোমার নামটা বলো।”
সে চমকে উঠে পেছনে ফিরে তাকালো।
আমি হাসি হাসি মুখ করে বললাম-
__”আমাকে চিনতে পারছো না হিরো? আমি সেই গায়িকা, বর্ণিতা।”
সে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো-
__”চিনেছি।”
__”ভেরী গুড। এখন ঝটপট তোমার নামটা বলে ফেলো।”
__”নাম শুনে কি করবেন?”
__”নাম কাগজে লিখে পানিতে চুবিয়ে সেই পানি খাবো ডার্লিং।”
__”আচ্ছা আপনি আমাকে এতো বিরক্ত কেনো করেন? আমি তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি।”
__”বখাটে ছেলেরা পথে ঘাটে নিরিহ মেয়েদের কেনো বিরক্ত করে? মেয়ে গুলো কি তাদের বাড়িতে গিয়ে ক্ষতি করে এসে ছিল?”
__”আপনি আসলেই একটা যা তা।”
__”কেমন যা তা?”
__”বখাটে যা তা।”
__”ডার্লিং এসব ছেড়ে বলো তোমার নাম কি?”
সে রেগে চোখ লাল করে বললো-
__”একটা মেয়ে হয়ে এসব বলতে আপনার লজ্জা করে না?”
আমি ইনোসেন্ট মুখ করে বললাম-
__”কি বললাম? আর ভাষার গায়ে কি মেল ফিমেল লেখা আছে?”
__”কি সব ভাষা ছিঃ।”
__”এসব ছেড়ে নাম বলো ডার্লিং।”
__”বলবো না।”
কথাটা বলেই সে হনহন করে নিচে চলে গেলো। আর হাসতে হাসতে আমার পেট ব্যাথা হয়ে গেলো। আমি চিল্লিয়ে বললাম-
__”ডার্লিং এমন করে আমার পেট ব্যাথা করে দিলে? তোমার কিন্তু ভালো হবে না, এটা বর্ণর ভবিষ্যৎ বাণী।”

বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।

পরের পর্ব আগামীকাল….
Written by- Sazia Afrin Sapna

2 মন্তব্য

  1. এই নিয়ে গল্পটা আমার ২ বার পড়া হবে। গল্পটা আসলেই খুবই সুন্দর। তা সে কাল্পনিক হোক আর যাই হোক……।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে